সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার সাক্ষিরা সর্বধর্মসমন্বয়কে কীভাবে দেখে থাকে?

যিহোবার সাক্ষিরা সর্বধর্মসমন্বয়কে কীভাবে দেখে থাকে?

আমাদের পাঠক-পাঠিকাদের জিজ্ঞাস্য . . .

যিহোবার সাক্ষিরা সর্বধর্মসমন্বয়কে কীভাবে দেখে থাকে?

ওয়ার্ল্ড ক্রিস্টিয়ান এনসাইক্লোপিডিয়া অনুসারে, “বিশ্বব্যাপী” প্রায় “১০,০০০ স্বতন্ত্র ধর্ম রয়েছে।” যেহেতু সেগুলোর মধ্যে সংঘাত নিদারুণ যন্ত্রণা নিয়ে এসেছে, তাই অনেক উপাসকের কাছে সর্বধর্মসমন্বয়ের ধারণা আশা নিয়ে আসে। তারা বিশ্বাস করে যে, এক বিভক্ত জগতে এটা শান্তি ও একতা নিয়ে আসতে পারে।

বাইবেল একতাকে উৎসাহিত করে। প্রেরিত পৌল খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে মানব দেহের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, যেটার প্রত্যেকটা অঙ্গ “যথাযথ সংলগ্ন ও সংযুক্ত” রয়েছে। (ইফিষীয় ৪:১৬) একইভাবে, প্রেরিত পিতর তার সহবিশ্বাসীদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: ‘তোমরা সকলে সমমনা হও।’—১ পিতর ৩:৮.

প্রাথমিক খ্রিস্টানরা বহু সংস্কৃতির ও বহু ধর্মের এক জগতে বাস করত। তবুও, বিভিন্ন ধর্মের মিশ্রণ সম্বন্ধে লেখার সময় পৌল জিজ্ঞেস করেছিলেন: “অবিশ্বাসীর সহিত বিশ্বাসীরই বা কি অংশ?” ‘অবিশ্বাসী’ শব্দটির দ্বারা পৌল যারা সত্য খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সদস্য নয় তাদের সকলকেই নির্দেশ করেছিলেন। এরপর তিনি খ্রিস্টানদের সাবধান করেছিলেন, “তোমরা তাহাদের মধ্য হইতে বাহির হইয়া আইস।” (২ করিন্থীয় ৬:১৫, ১৭) স্পষ্টতই, পৌল সর্বধর্মসমন্বয়ের বিরুদ্ধে কথা বলছিলেন। কেন তিনি তা বলেছিলেন?

প্রেরিত পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, একজন সত্য খ্রিস্টান ও যিনি সত্য খ্রিস্টান নন, তাদের মধ্যে আধ্যাত্মিক সাহচর্য হবে অসম যোঁয়ালির মতো অর্থাৎ অনুপযুক্ত। (২ করিন্থীয় ৬:১৪) এটা শুধু খ্রিস্টীয় বিশ্বাসের ক্ষতিই করতে পারে। পৌলের উদ্‌বেগগুলো একজন বাবার উদ্‌বেগগুলোর মতোই ছিল যিনি জানেন যে, তার প্রতিবেশী এলাকার কিছু ছেলেমেয়ে খারাপ আচরণ করে। একজন চিন্তাশীল বাবা হিসেবে, তার সন্তানের কার সঙ্গে খেলা উচিত সেই বিষয়ে তিনি বিজ্ঞতার সঙ্গে সীমা নির্ধারণ করেন। তার সীমাবদ্ধতাগুলো হয়তো অপছন্দজনক হতে পারে। কিন্তু, কিছু কিছু পরিস্থিতিতে, পৃথক থাকা তার সন্তানকে খারাপ প্রভাবগুলো থেকে সুরক্ষা করবে। একইভাবে, পৌল জানতেন যে, অন্যান্য ধর্ম থেকে পৃথক থাকা খ্রিস্টানদেরকে সেগুলোর ক্ষতিকর অভ্যাসগুলো থেকে সুরক্ষা করবে।

অন্যান্য ধর্ম থেকে খ্রিস্টানদের পৃথক থাকা উচিত এ কথা বলার দ্বারা পৌল যিশুকে অনুকরণ করছিলেন। যদিও যিশু লোকেদের মাঝে শান্তি নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন কিন্তু তিনি সর্বধর্মসমন্বয় অনুশীলন করেননি। অনেক ধর্মীয় দল, যেমন ফরীশী এবং সদ্দূকীরা, যিশুর পার্থিব পরিচর্যাকালে সক্রিয় ছিল। বস্তুতপক্ষে, এই ধর্মীয় দলগুলো যিশুর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সংঘবদ্ধ হয়েছিল ও এমনকী তাঁর মৃত্যুর ষড়যন্ত্র করেছিল। অন্যদিকে, যিশু তাঁর অনুসারীদের ‘ফরীশী ও সদ্দূকীদের শিক্ষা হইতে সাবধান থাকিতে’ নির্দেশ দিয়েছিলেন।—মথি ১৬:১২.

আজকের দিন সম্বন্ধে কী বলা যায়? সর্বধর্মসমন্বয়ের বিরুদ্ধে বাইবেলের সাবধানবাণী কি আজও প্রযোজ্য? হ্যাঁ, তা প্রযোজ্য। কারণ, সর্বধর্মসমন্বয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাস একতাবদ্ধ হতে পারে না, ঠিক যেমন একটা পাত্রে তেল ও জল শুধুমাত্র রেখে দিলেই সেগুলো মিশে যায় না। উদাহরণস্বরূপ, যখন বিভিন্ন ধর্মের লোকেরা একত্রিত হয়ে শান্তির জন্য প্রার্থনা করে, তখন তারা কোন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে? খ্রিস্টীয়জগতের ত্রিত্বের ঈশ্বর? হিন্দু ধর্মের ব্রহ্মা? বুদ্ধ? অথবা অন্য কারো কাছে?

ভাববাদী মীখা ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন যে, “শেষকালে” সমস্ত জাতির লোকেরা বলবে: “চল, আমরা সদাপ্রভুর পর্ব্বতে, যাকোবের ঈশ্বরের গৃহে গিয়া উঠি; তিনি আমাদিগকে আপন পথের বিষয়ে শিক্ষা দিবেন, আর আমরা তাঁহার মার্গে গমন করিব।” (মীখা ৪:১-৪) এর ফল হবে বিশ্বব্যাপী শান্তি ও একতা, যা সমস্ত বিশ্বাস কোনোভাবে সংঘবদ্ধ হয়েছে বলে নয় বরং সমস্ত লোক এক সত্য বিশ্বাসকে গ্রহণ করেছে বলে। (w১০-E ০৬/০১)

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

২০০৮ সালে এক সর্বধর্মসমন্বয় সম্মেলনে বিশ্বের প্রধান ধর্মগুলোর সদস্যরা

[সৌজন্যে]

REUTERS/Andreas Manolis