সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

তিনি “মনুষ্য-সন্তানদের অন্তঃকরণ” জানেন

তিনি “মনুষ্য-সন্তানদের অন্তঃকরণ” জানেন

ঈশ্বরের নিকটবর্তী হোন

তিনি “মনুষ্য-সন্তানদের অন্তঃকরণ” জানেন

২ বংশাবলি ৬:২৯, ৩০

আমাদের মধ্যে কে না জীবনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সমস্যাগুলোর দ্বারা ভারগ্রস্ত বোধ করেননি? কখনো কখনো, এরকম মনে হতে পারে যে, এমন কেউ-ই নেই যিনি, আমরা যে-সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হই অথবা আবেগগত যে-যন্ত্রণা অনুভব করি, তা সত্যিই বুঝতে পারেন। কিন্তু, এমন একজন আছেন যিনি পুরোপুরিভাবে আমাদের অনুভূতিগুলোকে বোঝেন—যিহোবা ঈশ্বর। আমরা ২ বংশাবলি ৬:২৯, ৩০ পদে পাওয়া শলোমনের কথাগুলোতে সান্ত্বনা খুঁজে পেতে পারি।

সাধারণ কাল পূর্ব ১০২৬ সালে যিরূশালেমে মন্দির উদ্‌বোধন করার সময়ে শলোমন প্রার্থনা করছেন। শলোমন, সম্ভবত ১০ মিনিট দীর্ঘ তার এই প্রার্থনায় অনুগত, প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণকারী এবং প্রার্থনা শ্রবণকারী ঈশ্বর হিসেবে যিহোবার প্রশংসা করেন।—১ রাজাবলি ৮:২৩-৫৩; ২ বংশাবলি ৬:১৪-৪২.

শলোমন ঈশ্বরের কাছে তাঁর উপাসকদের অনুরোধ শোনার জন্য মিনতি করেন। (পদ ২৯) যদিও শলোমন অনেক দুর্দশার বিষয় উল্লেখ করেন (পদ ২৮), কিন্তু তিনি ইঙ্গিত করেন যে, প্রত্যেক উপাসক “আপন আপন মনঃপীড়া” জানে ও “মর্ম্মব্যথা” অনুভব করে। একজন ব্যক্তি হয়তো কোনো একটা কারণে দুঃখার্ত হতে পারে যেখানে অন্য একজন হয়তো একেবারে ভিন্ন একটা কারণে দুঃখার্ত হতে পারে।

কারণ যা-ই হোক না কেন, ঈশ্বরভয়শীল ব্যক্তিদের তাদের বোঝা একাকী বহন করার প্রয়োজন নেই। প্রার্থনা করার সময়, শলোমনের মনে ব্যক্তিবিশেষ হিসেবে সেই উপাসকের কথা মনে ছিল যিনি হয়তো আন্তরিক প্রার্থনায় যিহোবার নিকটে আসার সময় ‘অঞ্জলি বিস্তার’ করার জন্য পরিচালিত হবেন। * খুব সম্ভবত শলোমন স্মরণ করেন যে, তার বাবা দায়ূদ যখন খুবই দুঃখার্ত ছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন: “তুমি সদাপ্রভুতে আপনার ভার অর্পণ কর।”—গীতসংহিতা ৫৫:৪, ২২.

সাহায্যের জন্য আন্তরিক অনুরোধগুলোর প্রতি যিহোবা কীভাবে সাড়া দেবেন? শলোমন যিহোবার কাছে মিনতি করেন: “তুমি তোমার নিবাস-স্থান স্বর্গ হইতে তাহা শুনিও, এবং ক্ষমা করিও, এবং প্রত্যেক জনকে স্ব স্ব সমস্ত পথ অনুযায়ী প্রতিফল দিও।” (পদ ৩০) শলোমন জানেন যে, “প্রার্থনা-শ্রবণকারী” তাঁর উপাসকদের জন্য শুধু দলগতভাবেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে ব্যক্তিবিশেষ হিসেবেও চিন্তা করেন। (গীতসংহিতা ৬৫:২) যিহোবা প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদান করেন, যার অন্তর্ভুক্ত হল সেই পাপীকে ক্ষমা করা যিনি সর্বান্তঃকরণে ঈশ্বরের কাছে ফিরে আসেন।—২ বংশাবলি ৬:৩৬-৩৯.

কেন শলোমন এই বিষয়ে নিশ্চিত যে, যিহোবা অনুতপ্ত উপাসকের অনুরোধগুলোর প্রতি সাড়া দেবেন? প্রার্থনা করে চলার সময় শলোমন বলেন: “তুমি [সদাপ্রভু] ত তাহাদের অন্তঃকরণ জান; কেননা একমাত্র তুমিই মনুষ্য-সন্তানদের অন্তঃকরণ জ্ঞাত আছ।” যিহোবা সেই মনঃপীড়া ও মর্মব্যথা সম্বন্ধে জানেন, যা হয়তো প্রত্যেক বিশ্বস্ত উপাসক তাদের হৃদয়ে অনুভব করে আর সেই ব্যক্তির দুর্দশা তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ।—গীতসংহিতা ৩৭:৪.

আমরা শলোমনের প্রার্থনা থেকে সান্ত্বনা লাভ করতে পারি। সহমানবরা হয়তো আমাদের অন্তরস্থ অনুভূতিগুলোকে—আমাদের “আপন আপন মনঃপীড়া” ও “মর্ম্মব্যথা”—পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারে না। (হিতোপদেশ ১৪:১০) কিন্তু যিহোবা আমাদের হৃদয় জানেন এবং আমাদের জন্য গভীরভাবে চিন্তা করেন। প্রার্থনায় তাঁর কাছে আমাদের হৃদয় উজাড় করে দেওয়া আমাদের বোঝাকে বহন করার জন্য সহজ করে দিতে পারে। “তোমাদের সমস্ত ভাবনার ভার তাঁহার উপরে ফেলিয়া দেও;” বাইবেল বলে, “কেননা তিনি তোমাদের জন্য চিন্তা করেন।”—১ পিতর ৫:৭. (w১০-E ১২/০১)

[পাদটীকা]

^ বাইবেলের সময়ে, ‘অঞ্জলি বিস্তার করা’ অর্থাৎ হাতের তালু ওপরের দিকে রেখে হাতদুটো ওপরে তুলে ধরা প্রার্থনা করার এক ভঙ্গি ছিল।—২ বংশাবলি ৬:১৩.