সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

‘তিনি প্রভুকে প্রশমিত করলেন’

‘তিনি প্রভুকে প্রশমিত করলেন’

ঈশ্বরের নিকটবর্তী হোন

‘তিনি প্রভুকে প্রশমিত করলেন’

“আমি নিজেকে একেবারে অযোগ্য বলে মনে করতাম,” একজন ব্যক্তি বলেছিলেন, যিনি ঈশ্বরীয় শিক্ষায় মানুষ হয়ে ওঠার পর সেই নীতিগুলো পরিত্যাগ করেছিলেন। তিনি যখন তার জীবনকে পরিবর্তন করার জন্য পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছিলেন, তখন তিনি এই ভয় পেয়েছিলেন যে, ঈশ্বর তাকে ক্ষমা করবেন না। কিন্তু, এই অনুতপ্ত পাপী ব্যক্তি ২ বংশাবলি ৩৩:১-১৭ পদে লিপিবদ্ধ মনঃশি সম্বন্ধে বাইবেলের বিবরণ থেকে আশা লাভ করেছিলেন। আপনি যদি কখনো অতীতের পাপগুলোর কারণে নিজেকে অযোগ্য বলে মনে করেন, তাহলে আপনিও হয়তো মনঃশির উদাহরণ থেকে সান্ত্বনা লাভ করতে পারেন।

মনঃশি ঈশ্বরভয়শীল পরিবারে মানুষ হয়েছিলেন। তার বাবা হিষ্কিয় ছিলেন যিহূদার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রাজাদের মধ্যে একজন। ঈশ্বর তার বাবা হিষ্কিয়ের আয়ু অলৌকিকভাবে বাড়িয়ে দেওয়ার প্রায় তিন বছর পর মনঃশির জন্ম হয়েছিল। (২ রাজাবলি ২০:১-১১) কোনো সন্দেহ নেই যে, হিষ্কিয় এই ছেলেকে ঈশ্বরের করুণার ফল স্বরূপ প্রাপ্ত এক উপহার হিসেবে দেখেছিলেন এবং তার হৃদয়ে বিশুদ্ধ উপাসনার প্রতি প্রেম গেঁথে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, ঈশ্বরভয়শীল বাবা-মার সন্তানরা সবসময় তাদের বাবা-মার উদাহরণ অনুসরণ করে না। মনঃশির ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটেছিল।

মনঃশি যখন তার বাবাকে মৃত্যুতে হারিয়েছিলেন, তখন তার বয়স ১২ বছরের বেশি নয়। দুঃখের বিষয় যে, মনঃশি “সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা মন্দ, তাহাই . . . করিতেন।” (১, ২ পদ) সেই অল্পবয়সি রাজা কি এমন পরামর্শদাতাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন, যাদের সত্য উপাসনার প্রতি কোনো সম্মানই ছিল না? বাইবেল তা জানায় না। এটি আমাদের যা জানায় তা হল, মনঃশি জঘন্য প্রতিমাপূজা ও নিষ্ঠুরতার দিকে ঝুঁকে গিয়েছিলেন। তিনি মিথ্যা দেব-দেবীর বেদি স্থাপন করেছিলেন, নিজের সন্তানদের উৎসর্গ করেছিলেন, প্রেতচর্চা করেছিলেন এবং যিরূশালেমে যিহোবার মন্দিরে খোদিত প্রতিমা স্থাপন করেছিলেন। একগুঁয়ে মনঃশি সেই যিহোবা ঈশ্বরের কাছ থেকে বার বার প্রাপ্ত সাবধানবাণীকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, যাঁর অলৌকিক কাজের কারণে তার জন্ম হয়েছিল।—৩-১০ পদ।

অবশেষে, যিহোবা মনঃশিকে বাবিলের বন্দিত্বে যাওয়ার অনুমোদন দিয়েছিলেন। সেখানে বন্দি থাকাকালীন মনঃশি নিজের কাজ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি কি তখন বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার শক্তিহীন, নিষ্প্রাণ প্রতিমাগুলো তাকে সুরক্ষা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছে? তিনি কি তার ঈশ্বরভয়শীল বাবা ছোটোবেলায় তাকে যে-বিষয়গুলো শিক্ষা দিয়েছিলেন, সেগুলো স্মরণ করেছিলেন? যা-ই হোক না কেন, মনঃশি তার মনোভাব পরিবর্তন করেছিলেন। বিবরণ বলে: ‘তিনি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে বিনতি করিলেন [“প্রভুকে প্রশমিত করলেন,” বাংলা জুবিলি বাইবেল], ও . . . আপনাকে অতিশয় অবনত করিলেন। এইরূপে তাঁহার কাছে প্রার্থনা করিলেন।’ (১২, ১৩ পদ) কিন্তু, এইরকম জঘন্য পাপগুলো করেছেন এমন একজন ব্যক্তি কি সত্যিই ঈশ্বরের কাছ থেকে ক্ষমা লাভ করতে পারেন?

মনঃশির অকৃত্রিম অনুতাপ যিহোবার হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। ঈশ্বর, করুণা লাভের জন্য করা তার মিনতি শুনেছিলেন এবং “তাঁহাকে পুনর্ব্বার যিরূশালেমে তাঁহার রাজ্যে আনিলেন।” (১৩ পদ) মনঃশি তখন তার অনুতাপের প্রমাণ হিসেবে তার ভুলগুলো সংশোধন করার জন্য যথাসাধ্য করেছিলেন, তার রাজ্য থেকে প্রতিমাপূজা দূর করেছিলেন এবং লোকেদের “সদাপ্রভুর সেবা করিতে” জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন।—১৫-১৭ পদ।

আপনি যদি অতীতের পাপগুলোর কারণে নিজেকে ঈশ্বরের ক্ষমা লাভ করার অযোগ্য বলে মনে করেন, তাহলে মনঃশির উদাহরণ থেকে উৎসাহ লাভ করুন। এই বিবরণ ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্যের অংশ। (রোমীয় ১৫:৪) স্পষ্টতই, যিহোবা চান যেন আমরা জানি যে, তিনি “ক্ষমাবান্‌” বা ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত। (গীতসংহিতা ৮৬:৫) তাঁর কাছে পাপ নয় বরং পাপী ব্যক্তির হৃদয়ের অবস্থা গুরুত্বপূর্ণ। একজন পাপী ব্যক্তি যিনি অনুতপ্ত হৃদয়ে প্রার্থনা করেন, তার মন্দ কাজ পরিত্যাগ করেন এবং যা সঠিক তা করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেন, তিনি হয়তো ‘প্রভুকে প্রশমিত করতে’ পারেন, যেমনটা মনঃশি করেছিলেন।—যিশাইয় ১:১৮; ৫৫:৬, ৭. (w১১-E ০১/০১)