পারিবারিক সুখের চাবিকাঠি নতুন বাবা-মা হওয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো
পারিবারিক সুখের চাবিকাঠি
পারিবারিক সুখের চাবিকাঠি নতুন বাবা-মা হওয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো
চার্লস: * “মেরি ও আমি আমাদের নবজাত মেয়ের জন্মে খুবই রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম। কিন্তু তার জন্মের পর, আমি প্রথম কয়েক মাস ভালো করে ঘুমাতেই পারিনি। সর্বোত্তমভাবে তার যত্ন নেওয়ার ও তাকে প্রতিপালন করার বিষয়ে আমরা অনেক পরিকল্পনা করেছিলাম কিন্তু সেগুলো শীঘ্র ভেস্তে গিয়েছিল।”
মেরি: “আমাদের বাচ্চার জন্ম হওয়ার সঙ্গেসঙ্গে, আমার জীবনের ওপর আমার আর কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। হঠাৎ করেই, সমস্তকিছু যেন শিশুর বোতলের, ডায়পার পালটানোর অথবা তাকে চুপ করানোর চেষ্টা করার ওপর কেন্দ্রীভূত থাকত। এটা বিরাট ধরনের রদবদল ছিল। চার্লসের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্কে ফিরে আসতে অনেক মাস লেগে গিয়েছিল।”
অনেকে এই বিষয়ে একমত হবে যে, সন্তান হওয়া হল জীবনের সবচেয়ে আনন্দদায়ক এক বিষয়। বাইবেল সন্তানদেরকে ঈশ্বরদত্ত এক “পুরস্কার” হিসেবে বর্ণনা করে। (গীতসংহিতা ১২৭:৩) চার্লস ও মেরির মতো নতুন বাবা-মারা এও জানে যে, সন্তানরা বৈবাহিক জীবনে অপ্রত্যাশিতভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আসতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একজন নতুন মা হয়তো তার সন্তানের প্রতি বেশি মনোযোগ দিতে এবং এটা দেখে আশ্চর্য হতে পারেন যে, কীভাবে তিনি সেই নবজাতের ছোটোখাটো প্রয়োজনের প্রতি সাড়া দেন। আর নতুন বাবা হয়তো তার স্ত্রী ও বাচ্চার মধ্যে গড়ে ওঠা বন্ধন দেখে বিস্মিত হতে পারেন, কিন্তু সেইসঙ্গে তিনি হয়তো হঠাৎ করে উপেক্ষিত হওয়ার ব্যাপারে দুশ্চিন্তা করতে পারেন।
বস্তুত, প্রথম সন্তানের জন্ম হয়তো বৈবাহিক জীবনে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। বাবা-মা হওয়ার বিভিন্ন চাপের কারণে একজন ব্যক্তির আবেগগত দিক দিয়ে নিরাপত্তাহীনতা ভোগ করার বিষয়টা এবং এক দম্পতির অমীমাংসিত বিষয়গুলো উত্থাপিত হতে, প্রকাশ পেতে ও বেড়ে যেতে পারে।
নবজাত শিশুর যখন তাদের বেশি মনোযোগের প্রয়োজন, তখন কীভাবে নতুন বাবা-মারা সেই প্রথম ব্যস্ত কয়েক মাসের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে? কীভাবে দম্পতিরা তাদের অন্তরঙ্গতাকে বজায় রাখতে পারে? কীভাবে তারা সন্তান প্রতিপালন করার বিষয়ে যেকোনো মতপার্থক্যকে মীমাংসা করতে পারে? আসুন আমরা সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর প্রত্যেকটা পরীক্ষা করে দেখি এবং বিবেচনা করি যে, কীভাবে বাইবেলের নীতিগুলো এক দম্পতিকে সেগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করতে পারে।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা ১: জীবন হঠাৎ করে সেই শিশুর ওপরই কেন্দ্রীভূত হয়ে ওঠে।
এক নবজাত শিশু তার মায়ের সময় ও চিন্তাভাবনাকে কেড়ে নেয়। তিনি হয়তো তার বাচ্চার যত্ন নেওয়ার সময় আবেগগতভাবে
এক গভীর পরিতৃপ্তি লাভ করেন। কিন্তু একই সময়ে, তার স্বামী হয়তো উপেক্ষিত হচ্ছে বলে বোধ করতে পারেন। ম্যানুয়েল, যিনি ব্রাজিলে বাস করেন, তিনি বলেন: “আমার স্ত্রীর মনোযোগ আমার থেকে সরে গিয়ে আমাদের বাচ্চার দিকে চলে যাওয়ার বিষয়টা মেনে নেওয়া আমার কাছে সবচেয়ে কঠিন ছিল। এর আগে, শুধু আমরা দুজনেই ছিলাম আর এরপর হঠাৎ করে শুধুই আমার স্ত্রী ও বাচ্চা।” কীভাবে আপনারা এই বিরাট পরিবর্তনের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারেন?▪ সফল হওয়ার এক চাবিকাঠি: ধৈর্যশীল হোন। “প্রেম চিরসহিষ্ণু, প্রেম মধুর,” বাইবেল বলে। প্রেম “স্বার্থ চেষ্টা করে না, রাগিয়া উঠে না।” (১ করিন্থীয় ১৩:৪, ৫) যখন একটা নতুন বাচ্চার জন্ম হয়, তখন এই পরামর্শকে কাজে লাগানোর জন্য স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই কী করতে পারে?
সন্তান প্রসব করার ফলে একজন স্ত্রীলোকের ওপর যে-ধরনের শারীরিক ও মানসিক প্রভাব পড়ে, সেটার বিষয়ে একজন বিজ্ঞ স্বামী নিজেকে প্রশিক্ষিত করার দ্বারা তার স্ত্রীর প্রতি তার ভালোবাসার প্রমাণ দেন। তিনি যদি তা করেন, তাহলে তিনি উপলব্ধি করতে পারবেন যে, কেন তার স্ত্রী হয়তো হঠাৎ হঠাৎ মেজাজ পালটানোর প্রবণতা দেখান। * অ্যাডাম, যিনি ফ্রান্সে বাস করেন ও ১১ মাস বয়সি এক মেয়ের বাবা, তিনি স্বীকার করেন: “আমার স্ত্রীর হঠাৎ হঠাৎ মেজাজ পালটানোর সঙ্গে মোকাবিলা করা আমার পক্ষে কখনো কখনো কঠিন হয়ে ওঠে। কিন্তু আমি মনে রাখার চেষ্টা করি যে, তার বিরক্তি আসলে নির্দিষ্টভাবে আমার প্রতি নয়। বরং, এটা হল আমাদের নতুন অবস্থার কারণে সৃষ্ট হওয়া নতুন নতুন চাপের প্রতি এক প্রতিক্রিয়া।”
আপনার স্ত্রী কি কখনো কখনো তাকে সাহায্য করার জন্য আপনার প্রচেষ্টাকে ভুল বোঝেন? যদি তাই হয়, তাহলে সঙ্গেসঙ্গে বিরক্ত হবেন না। (উপদেশক ৭:৯) এর পরিবর্তে, ধৈর্যশীল হোন এবং নিজের চেয়ে তার প্রয়োজনগুলোকে প্রথমে রাখার চেষ্টা করুন আর এর ফলে আপনি হতাশ হওয়াকে এড়াতে পারবেন।—হিতোপদেশ ১৪:২৯.
অন্য দিকে, একজন বিচক্ষণ স্ত্রী তার স্বামীকে তার নতুন ভূমিকা পালন করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করবেন। তিনি তাকে সন্তানের যত্ন নেওয়ায় জড়িত করবেন, কীভাবে ডায়পার পালটাতে হয় বা দুধের বোতল প্রস্তুত করতে হয় তা ধৈর্যের সঙ্গে দেখিয়ে দেবেন—যদিও প্রথম প্রথম স্বামী হয়তো একটু-আধটু উলটোপালটা করতে পারেন।
এলেন নামে ২৬ বছর বয়সি একজন মা উপলব্ধি করেছিলেন যে, তিনি তার স্বামীর সঙ্গে যেভাবে আচরণ করতেন, তাতে তার কিছু রদবদল করার প্রয়োজন ছিল। তিনি বলেন, “বাচ্চাকে দেখাশোনা করার ব্যাপারে আমাকে আমার নিয়ন্ত্রণ করার প্রবণতাকে কমাতে হয়েছিল।” “আর সেইসঙ্গে আমার নিজেকে মনে করিয়ে দিতে হয়েছিল যে, আমার স্বামী যখন শিশুর যত্ন নেওয়া সম্বন্ধীয় আমার পরামর্শগুলোকে প্রয়োগ করার চেষ্টা করেন, তখন আমি যেন বেশি খুঁতখুঁতে না হই।”
এটা করে দেখুন: স্ত্রীরা, আপনার স্বামীরা যদি সন্তান যত্ন নেওয়ার কোনো কোনো কাজ আপনার চেয়ে অন্যভাবে করেন, তাহলে তার সমালোচনা করা অথবা স্বামীর করা কাজটাকে পুনরায় করার প্রবণতাকে প্রতিরোধ করুন। তিনি যতটুকুই করুন না কেন, তার প্রশংসা করুন আর এর ফলে আপনি তার আস্থাকে বাড়িয়ে তুলবেন এবং আপনার যে-সমর্থনের প্রয়োজন, তা প্রদান করতে তাকে উৎসাহিত করবেন। স্বামীরা, অপ্রয়োজনীয় কাজগুলোকে বাতিল করুন যাতে বিশেষ করে বাচ্চা জন্মানোর পর প্রথম কয়েক মাস, আপনার স্ত্রীকে সাহায্য করার জন্য আপনার হাতে যতটা সম্ভব বেশি সময় থাকে।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা ২: দম্পতি হিসেবে আপনাদের সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়ে।
এক টানা না শোয়ার এবং অপ্রত্যাশিত সমস্যাগুলোর কারণে ক্লান্ত হওয়ার ফলে অনেক নতুন বাবা-মার পক্ষে ঘনিষ্ঠ থাকা কষ্টকর হয়ে ওঠে। ফ্রান্সের একজন মা ভিভিয়েন, যার দুটো বাচ্চা রয়েছে তিনি স্বীকার করেন: “প্রথম প্রথম, আমি একজন মা হিসেবে আমার দায়িত্ব নিয়ে এতই ব্যস্ত ছিলাম যে, আমি স্ত্রী হিসেবে আমার ভূমিকাকে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।”
অন্যদিকে, একজন স্বামী হয়তো এটা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হতে পারেন যে, তার স্ত্রীর গর্ভবতী হওয়া—শারীরিক ও মানসিক, উভয়ভাবেই—তাকে অনেক প্রভাবিত করেছে। আগে আপনারা দুজনে মানসিক ও যৌনভাবে ঘনিষ্ঠ থাকার জন্য যে-সময় ও শক্তি ব্যয় করতেন, তা এক নবজাত শিশু কেড়ে নিতে পারে। তাহলে, কীভাবে এক দম্পতি এই বিষয়টা নিশ্চিত করতে পারে যে, তাদের অসহায়, প্রিয় শিশু যেন এমন এক প্রতিবন্ধক না হয়ে ওঠে যে তাদেরকে একে অপরের থেকে দূরে করে দেয়?
▪ সফল হওয়ার এক চাবিকাঠি: একে অপরের প্রতি প্রেমকে শক্তিশালী করুন। বিবাহ সম্বন্ধে বর্ণনা করতে গিয়ে আদিপুস্তক ২:২৪) যিহোবা ঈশ্বর চেয়েছিলেন যে, পরিশেষে ছেলেমেয়েরা যেন সাথির প্রতি আসক্ত থাকার জন্য তাদের বাবা-মাকে ত্যাগ করে। এর বিপরীতে, ঈশ্বর আশা করেন যে, স্বামী ও তার স্ত্রীর একাঙ্গ বন্ধন যেন সারাজীবন স্থায়ী থাকে। (মথি ১৯:৩-৯) কীভাবে এই বিষয়টা উপলব্ধি করা এমন এক দম্পতিকে সঠিক অগ্রাধিকারগুলো বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে যাদের নবজাত শিশু রয়েছে?
বাইবেল জানায়: “মনুষ্য আপন পিতা মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং তাহারা একাঙ্গ হইবে।” (ভিভিয়েন, যার কথা আগে উল্লেখ করা হয়েছে তিনি বলেন: “আমি আদিপুস্তক ২:২৪ পদের কথাগুলো নিয়ে চিন্তা করেছিলাম এবং সেই পদটি আমাকে এটা উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে যে, আমি আমার সন্তানের সঙ্গে নয় কিন্তু আমার স্বামীর সঙ্গে ‘একাঙ্গ’ হয়েছি। আমি আমাদের বিয়েকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছিলাম।” দুই বছর বয়সি একটি মেয়ের মা টারিসা বলেন: “আমি যদি আমার স্বামী থেকে দূরত্ব অনুভব করতে শুরু করি, তাহলে এমনকী প্রতিদিন অল্পক্ষণের জন্য হলেও, তার প্রতি আমার পূর্ণ মনোযোগ দেওয়ার জন্য আমি তৎক্ষণাৎ প্রচেষ্টা করি।”
আপনি যদি একজন স্বামী হন, তাহলে বিয়েকে শক্তিশালী করার জন্য আপনি কী করতে পারেন? আপনার স্ত্রীকে বলুন যে, আপনি তাকে ভালোবাসেন। কোমলতাপূর্ণ কাজের মাধ্যমে আপনার কথাগুলোকে প্রমাণ করুন। আপনার স্ত্রী হয়তো বোধ করতে পারে, নিরাপত্তাহীনতার এমন যেকোনো অনুভূতিকে দূর করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করুন। ৩০ বছর বয়সি একজন মা সারা বলেন: “একজন স্ত্রীর অনুভব করা প্রয়োজন যে, তাকে এখনও মূল্যবান বলে গণ্য করা ও ভালোবাসা হয়, এমনকী যদিও তার শরীর তার গর্ভবতী হওয়ার আগে যেমন ছিল তা নেই।” অ্যালেন, যিনি জার্মানিতে বাস করেন এবং দুই ছেলের বাবা, তিনি আবেগগত সমর্থন জোগানোর প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছেন। তিনি বলেন: “আমার স্ত্রী যখন মনমরা থাকে, তখন আমি সবসময় তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।”
এটা ঠিক যে, বাচ্চার জন্ম এক দম্পতির যৌন সম্পর্কে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই, একজন স্বামী ও স্ত্রীর একে অপরের প্রয়োজনগুলোর বিষয়ে আলোচনা করা দরকার। বাইবেল জানায় যে, দম্পতির “উভয়ে একপরামর্শ” হয়ে যৌন সম্পর্কে পরিবর্তনগুলো আনা উচিত। (১ করিন্থীয় ৭:১-৫) এর জন্য ভাববিনিময় করা দরকার। আপনার বড়ো হয়ে ওঠা অথবা সাংস্কৃতিক পটভূমির ওপর নির্ভর করে, আপনি হয়তো আপনার সাথির সঙ্গে যৌনতার বিষয়গুলো সম্বন্ধে কথা বলতে দ্বিধাবোধ করতে পারেন। কিন্তু, এক দম্পতি যখন বাবা-মা হওয়ার দায়িত্বগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়, তখন এই ধরনের আলোচনা খুবই জরুরি। সহমর্মি, ধৈর্যশীল ও সৎ হোন। (১ করিন্থীয় ১০:২৪) এভাবে, আপনি ও আপনার সাথি ভুল বোঝাবুঝিকে এড়িয়ে চলবেন এবং একে অপরের প্রতি আপনাদের ভালোবাসাকে গভীর করবেন।—১ পিতর ৩:৭, ৮.
এ ছাড়া, উপলব্ধি প্রকাশ করার দ্বারা এক দম্পতি একে অপরের জন্য তাদের যে-ভালোবাসা রয়েছে, সেটাকে আরও গভীর করতে পারে। একজন বিজ্ঞ স্বামী উপলব্ধি করবেন যে, একজন নতুন মা যে-অনেক কাজ করেন, সেগুলো অলক্ষিত থেকে যায়। ভিভিয়েন বলেন: “দিনের শেষে, আমি প্রায়ই মনে করি যে, আমি যেন কিছুই করিনি—এমনকী যদিও আমি বাচ্চার যত্ন নেওয়ার কাজে সবসময় ব্যস্ত থেকেছি!” ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও, একজন বিচক্ষণ স্ত্রী পরিবারের প্রতি তার স্বামীর অবদানকে তুচ্ছ না করার ব্যাপারে সতর্ক হবেন।—হিতোপদেশ ১৭:১৭.
এটা করে দেখুন: মায়েরা, যদি সম্ভব হয়, তাহলে আপনার বাচ্চা ঘুমানোর সময় একটু ঘুমিয়ে নিন। এভাবে, “আপনাদের ব্যাটারিকে রিচার্জ” করার দ্বারা আপনারা আপনাদের বৈবাহিক জীবনের জন্য আরও শক্তি লাভ করবেন। বাবারা, যখনই সম্ভব বাচ্চাকে খাওয়ানোর বা তার ডায়পার পালটানোর জন্য রাতে উঠুন, যাতে আপনাদের স্ত্রীরা বিশ্রাম নিতে পারে। তার উদ্দেশে একটা নোট রেখে যাওয়া, তাকে টেক্সট মেসেজ পাঠানো বা টেলিফোনে তার সঙ্গে কথা বলার দ্বারা আপনার সাথির প্রতি আপনার ভালোবাসাকে নিয়মিতভাবে শক্তিশালী করুন। এক দম্পতি হিসেবে, একে অপরের সঙ্গে কথাবার্তা বলার জন্য সময় করে নিন। কেবল আপনার বাচ্চার সম্বন্ধেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে একে অপরের সম্বন্ধেও কথা বলুন। আপনার সাথির সঙ্গে আপনার বন্ধুত্বকে দৃঢ় করুন আর তাহলে
আপনি বাবা-মা হওয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর সঙ্গে আরও ভালোভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হবেন।প্রতিদ্বন্দ্বিতা ৩: সন্তান প্রতিপালন করার ব্যাপারে আপনাদের মতপার্থক্যগুলো।
এক দম্পতি লক্ষ করতে পারে যে, তাদের পটভূমির কারণে তাদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। আসামি নামে জাপানের একজন মা ও তার স্বামী কাতসুরো এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছিল। আসামি বলেন: “আমার মনে হয়েছিল যে, কাতসুরো আমাদের মেয়ের প্রতি খুব বেশি সদয় ছিল অথচ সে মনে করেছিল যে, আমি মেয়ের প্রতি খুব বেশি কঠোর।” কীভাবে আপনি একে অপরের বিরুদ্ধে আচরণ করা এড়িয়ে চলতে পারেন?
▪ সফল হওয়ার এক চাবিকাঠি: আপনার সাথির সঙ্গে ভাববিনিময় করুন এবং একে অপরকে সমর্থন করুন। বিজ্ঞ রাজা শলোমন লিখেছিলেন: “অহঙ্কারে কেবল বিবাদ উৎপন্ন হয়; কিন্তু যাহারা পরামর্শ মানে, প্রজ্ঞা তাহাদের সহবর্ত্তী।” (হিতোপদেশ ১৩:১০) সন্তানদের বড়ো করে তোলার ব্যাপারে আপনার সাথির পদ্ধতি সম্বন্ধে আপনি কতটুকু জানেন? সন্তান প্রশিক্ষণদানের নির্দিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা না করে, আপনি যদি বাচ্চার জন্মানো পর্যন্ত অপেক্ষা করেন, তাহলে আপনি হয়তো দেখবেন যে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে সফলভাবে মোকাবিলা করার পরিবর্তে আপনাদের একে অপরের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, এই প্রশ্নগুলোর কোন উত্তরগুলোর বিষয়ে আপনারা একমত হয়েছেন: “কীভাবে আমরা আমাদের সন্তানকে ঠিক মতো খাওয়ার ও ঘুমানোর অভ্যাস সম্বন্ধে শিক্ষা দিতে পারি? রাতে বাচ্চা কাঁদলেই কি আমাদের সবসময় তাকে কোলে তুলে নেওয়া উচিত? কীভাবে আমাদের সন্তানকে পটি ব্যবহার করার বিষয়ে আমাদের শিক্ষা দেওয়া উচিত?” স্পষ্টতই, আপনারা যে-সিদ্ধান্তগুলো নেন, সেগুলো অন্য দম্পতিদের থেকে ভিন্ন হবে। দুই সন্তানের বাবা ইথেন বলেন: “আপনারা দুজনেই যাতে একমত হোন তার জন্য বিষয়গুলো নিয়ে আপনাদের একে অপরের সঙ্গে কথা বলা দরকার। তাহলেই, আপনারা একসঙ্গে আপনাদের সন্তানের প্রয়োজনগুলোর প্রতি সাড়া দিতে পারবেন।”
এটা করে দেখুন: বাবা-মা হওয়ার সেই পদ্ধতিগুলো সম্বন্ধে চিন্তা করুন, যেগুলো আপনাকে বড়ো করে তোলার সময় আপনার বাবা-মা ব্যবহার করেছিল। আপনাদের সন্তানকে বড়ো করে তোলার সময়, আপনারা আপনার বাবা-মার কোন মনোভাব ও আচরণকে অনুকরণ করবেন, তা স্থির করুন। এ ছাড়া যদি থাকে, তাহলে কোন মনোভাব ও আচরণকে আপনি পুনরাবৃত্তি করাকে এড়িয়ে চলতে চান, সেটাও স্থির করুন। আপনি যে-উপসংহারে আসেন, আপনার সাথির সঙ্গে সেটা আলোচনা করুন।
একজন সন্তান বৈবাহিক জীবনে এক উত্তম প্রভাব ফেলতে পারে
দুজন অনভিজ্ঞ আইস স্কেটারের যেমন বরফের ওপর তাদের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সময় ও ধৈর্যের প্রয়োজন, একইভাবে বাবা-মা হিসেবে আপনাদের নতুন ভূমিকার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য আপনাদের সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু পরিশেষে, আপনারা আত্মবিশ্বাস অর্জন করবেন।
সন্তান প্রতিপালন করা, আপনাদের বিবাহে আপনাদের প্রতিশ্রুতিকে পরীক্ষায় ফেলবে এবং একে অপরের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ককে চিরকালের জন্য পরিবর্তন করবে। কিন্তু, এটা আপনাদেরকে মূল্যবান গুণগুলো গড়ে তুলতেও সুযোগ করে দেবে। আপনারা যদি বাইবেলের বিজ্ঞ পরামর্শ কাজে লাগান, তাহলে আপনাদের অভিজ্ঞতা কেনেথ নামে এক বাবার মতোই হবে। তিনি বলেন: “সন্তানদের বড়ো করে তোলা আমার স্ত্রী ও আমার ওপর এক উত্তম প্রভাব ফেলেছিল। আমরা এখন অতটা আত্মকেন্দ্রিক নই এবং আমরা আরও বেশি প্রেমময় ও উপলব্ধিপরায়ণ হয়ে উঠেছি।” নিশ্চিতভাবেই, এই ধরনের পরিবর্তনগুলোকে এক বৈবাহিক জীবনে স্বাগত জানানো হয়। (w১১-E ০৫/০১)
[পাদটীকাগুলো]
^ এই প্রবন্ধে নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।
^ অনেক মা সন্তান প্রসব করার পরের সপ্তাহগুলোতে ক্ষণিকের জন্য হতাশায় ভোগে। কেউ কেউ আবার এর চেয়েও গুরুতর অবস্থায় ভোগে, যেটাকে বলা হয় প্রসবোত্তর হতাশা (পোস্টপার্ট্যাম ডিপ্রেশন)। কীভাবে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে শনাক্ত করা এবং সেটার সঙ্গে মোকাবিলা করা যায়, সেই সম্বন্ধে তথ্যের জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত ২০০২ সালের ২২ জুলাই সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকায় “প্রসবোত্তর হতাশার সঙ্গে লড়াইয়ে আমি জয়ী হয়েছি” এবং ২০০৩ সালের ৮ জুন সচেতন থাক! (ইংরেজি) পত্রিকায় “প্রসবোত্তর হতাশাকে বোঝা” শিরোনামের প্রবন্ধগুলো দেখুন। এই প্রবন্ধগুলো www.watchtower.org-তে অনলাইনে পড়া যেতে পারে।
নিজেকে জিজ্ঞেস করুন . . .
▪ গত সপ্তাহ ধরে, আমি আমার সাথিকে এটা দেখানোর জন্য কী করেছি যে, পরিবারের জন্য সে যা করে সেটাকে আমি উপলব্ধি করি?
▪ শেষ কবে আমি আমার সাথির সঙ্গে মন খুলে কথা বলেছি, যা সন্তান প্রতিপালন করার ওপর কেন্দ্রীভূত ছিল না?