সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিশু তিনি যেভাবে জীবনযাপন করেছিলেন

যিশু তিনি যেভাবে জীবনযাপন করেছিলেন

যিশু তিনি যেভাবে জীবনযাপন করেছিলেন

“আমার খাদ্য এই, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, যেন তাঁহার ইচ্ছা পালন করি ও তাঁহার কার্য্য সাধন করি।”—যোহন ৪:৩৪.

উপরোক্ত কথাগুলো যিশু যে-প্রেক্ষাপটে বলেছিলেন সেটা প্রকাশ করে যে, তাঁর জীবনের প্রধান বিষয় কী। যিশু ও তাঁর শিষ্যরা সারাটা সকাল পার্বত্য দেশ, শমরিয়ার মধ্যে দিয়ে যাত্রা করেছিল। (যোহন ৪:৬) এতক্ষণে যিশুর নিশ্চয় খিদে পেয়েছে বলে মনে করে, শিষ্যরা তাঁকে কিছু খাবার খেতে বলেছিল। (যোহন ৪:৩১-৩৩) তাঁর উত্তরে, যিশু সংক্ষেপে তাঁর জীবনের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জানিয়েছিলেন। তাঁর কাছে, খাওয়ার চেয়ে ঈশ্বরের কাজ করা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কথায় ও কাজে উভয়ভাবেই, যিশু তাঁর জন্য ঈশ্বরের যা ইচ্ছা ছিল, সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করেছিলেন। এটার অন্তর্ভুক্ত কী ছিল?

ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করা ও শিক্ষা দেওয়া যিশুর সারাজীবনের কাজ সম্বন্ধে বাইবেল এই বলে ব্যাখ্যা করে: “যীশু সমুদয় গালীলে . . . উপদেশ দিলেন, রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিলেন।” (মথি ৪:২৩) যিশু কেবল অন্যদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার বা ঘোষণাই করেননি। তিনি লোকেদেরকে শিক্ষাও দিয়েছিলেন অর্থাৎ তিনি নির্দেশনা দিয়েছিলেন, ব্যাখ্যা করেছিলেন এবং উপযুক্ত যুক্তির দ্বারা প্রত্যয়ী করেছিলেন। রাজ্যই ছিল যিশুর বার্তার মূল বিষয়।

সমগ্র পরিচর্যায় যিশু তাঁর শ্রোতাদের শিক্ষা দিয়েছিলেন যে, ঈশ্বরের রাজ্য কী এবং তা কী সম্পাদন করবে। ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে নীচের সত্যগুলো ও সেইসঙ্গে শাস্ত্রীয় পদগুলো লক্ষ করুন, যেগুলো রাজ্যের বিষয়ে যিশু যা বলেছিলেন তা আমাদের জানায়।

▪ ঈশ্বরের রাজ্য হল এক স্বর্গীয় সরকার এবং যিশু হলেন সেই ব্যক্তি যাঁকে যিহোবা রাজা হিসেবে নিযুক্ত করেছেন।—মথি ৪:১৭; যোহন ১৮:৩৬.

▪ রাজ্য ঈশ্বরের নামকে পবিত্রীকৃত করবে এবং যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও তাঁর ইচ্ছাকে পূর্ণ করবে।—মথি ৬:৯, ১০.

▪ ঈশ্বরের রাজ্যের শাসনের অধীনে সমগ্র পৃথিবী এক পরমদেশে রূপান্তরিত হবে।—লূক ২৩:৪২, ৪৩, NW.

▪ শীঘ্র ঈশ্বরের রাজ্য আসবে এবং পৃথিবীর জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছাকে পূর্ণ করবে। *মথি ২৪:৩, ৭-১২.

পরাক্রম কাজগুলো সম্পাদন করা যিশু মূলত একজন “গুরু” বা শিক্ষক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। (যোহন ১৩:১৩) কিন্তু তাঁর সাড়ে তিন বছরের পরিচর্যার সময়ে তিনি বেশ কিছু পরাক্রম কাজও সম্পাদন করেছিলেন। এই কাজগুলো অন্ততপক্ষে দুটো উদ্দেশ্য সাধন করেছিল। প্রথমত, এগুলো এটা প্রমাণ করতে সাহায্য করেছিল যে, বাস্তবিকই ঈশ্বর তাঁকে পাঠিয়েছিলেন। (মথি ১১:২-৬) দ্বিতীয়ত, এগুলো তিনি ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা হিসেবে ভবিষ্যতে এমনকী আরও ব্যাপক মাত্রায় যা করবেন, সেটার এক পূর্বাভাস দিয়েছিল। তিনি যে-অলৌকিক কাজগুলো সম্পাদন করেছিলেন, সেগুলোর কয়েকটা লক্ষ করুন।

▪ তিনি উত্তাল সমুদ্রকে শান্ত করেছিলেন এবং প্রবল বাতাসকে থামিয়েছিলেন।—মার্ক ৪:৩৯-৪১.

▪ তিনি অন্ধ, বধির এবং খঞ্জসহ অসুস্থ লোকেদের সুস্থ করেছিলেন।—লূক ৭:২১, ২২.

▪ তিনি অল্প খাবারকে অনেক খাবারে পরিণত করেছিলেন আর এভাবে ক্ষুধার্ত জনতাকে খাইয়েছিলেন।—মথি ১৪:১৭-২১; ১৫:৩৪-৩৮.

▪ অন্ততপক্ষে তিনটে ঘটনায়, তিনি মৃতদের জীবনে পুনরুত্থিত করেছিলেন।—লূক ৭:১১-১৫; ৮:৪১-৫৫; যোহন ১১:৩৮-৪৪.

এই ধরনের একজন শক্তিশালী রাজার শাসনাধীনে পৃথিবীতে জীবন কেমন হবে, তা একবার কল্পনা করুন!

যিহোবা ঈশ্বরের ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করা যখন অন্যদেরকে যিহোবা সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার বিষয়টা আসে, তখন ঈশ্বরের নিজ পুত্র, যিনি যিশু খ্রিস্ট নামে পরিচিত হয়েছিলেন, তাঁর চেয়ে যোগ্য আর কেউ নেই। “সমুদয় সৃষ্টির প্রথমজাত” হিসেবে যিশু স্বর্গে যিহোবার সঙ্গে অন্য যেকোনো আত্মিক প্রাণীর চেয়ে অনেক বেশি সময় ধরে ছিলেন। (কলসীয় ১:১৫) পিতার চিন্তাধারা বোঝার এবং তাঁর ইচ্ছা, মান এবং পথগুলোর বিষয়ে শেখার জন্য তিনি যে-সুযোগগুলো পেয়েছিলেন, সেই বিষয়ে চিন্তা করুন।

যিশু উপযুক্তভাবেই বলতে পেরেছিলেন: “পুত্ত্র কে, তাহা কেহ জানে না, কেবল পিতা জানেন; আর পিতা কে, তাহা কেহ জানে না, কেবল পুত্ত্র জানেন, আর পুত্ত্র যাহার নিকটে তাঁহাকে প্রকাশ করিতে মানস করেন, সে জানে।” (লূক ১০:২২) একজন মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু ইচ্ছুকভাবে—হ্যাঁ, উৎসুকভাবে—প্রকাশ করেছিলেন যে, তাঁর পিতা আসলে কেমন। যিশু এক অতুলনীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কথা বলেছিলেন এবং শিক্ষা দিয়েছিলেন; তিনি সেই স্মৃতিগুলোকে কাজে লাগিয়েছিলেন, যেগুলো তিনি আত্মিক রাজ্যে এবং পরাৎপর ঈশ্বরের মহিমাময় উপস্থিতিতে থাকার সময় সরাসরি অর্জন করেছিলেন।—যোহন ৮:২৮.

স্বর্গে তাঁর পিতার কাছ থেকে যিশু যা শিখেছিলেন, পৃথিবীতে থাকাকালীন তা তিনি এমনভাবে প্রকাশ করেছিলেন যাতে পৃথিবীর সাধারণ মানুষেরা তা সঙ্গেসঙ্গে বুঝতে ও সহজেই প্রয়োগ করতে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ যে-দুটো উপায়ে যিশু তাঁর পিতাকে প্রকাশ করেছিলেন, সেগুলো বিবেচনা করুন।

▪ যিশু তাঁর শিক্ষায় যিহোবা সম্বন্ধে সত্য—তাঁর নাম, তাঁর উদ্দেশ্য এবং তাঁর পথ সম্বন্ধে—জানিয়েছিলেন।—যোহন ৩:১৬; ১৭:৬, ২৬.

▪ যিশু তাঁর কাজের দ্বারা যিহোবার ব্যক্তিত্বের অনেক উত্তম দিক প্রকাশ করেছিলেন। যিশু তাঁর পিতার ব্যক্তিত্বকে এতটাই নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত করেছিলেন যে, বাস্তবিকই তিনি বলতে পেরেছিলেন: ‘তোমরা যদি জানতে চাও আমার পিতা আসলে কেমন, তাহলে কেবল আমাকে দেখ।’—যোহন ৫:১৯; ১৪:৯.

যিশু যেভাবে জীবনযাপন করেছিলেন, তা জেনে আমরা অবাক হই। আমরা যদি পরীক্ষা করে দেখি যে, কেন তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন এবং আমরা যা শিখি সেটার সঙ্গে মিল রেখে যদি কাজ করি, তাহলে আমরা প্রচুর উপকার লাভ করতে পারব। (w১১-E ০৪/০১)

[পাদটীকা]

^ ঈশ্বরের রাজ্য এবং কীভাবে আমরা জানি যে, তা শীঘ্র আসবে সেই সম্বন্ধে আরও জানার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়? বইয়ের “ঈশ্বরের রাজ্য কী?” শিরোনামক ৮ অধ্যায়টি এবং “আমরা কি ‘শেষ কালে’ বাস করছি?” শিরোনামক ৯ অধ্যায়টি দেখুন।