সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেন এত বেশি?

প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেন এত বেশি?

প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেন এত বেশি?

সংবাদগুলোতে দুর্যোগের খবর খুব বেশি থাকে বলে মনে হয়। আগের চেয়ে এখন আরও বেশি লোক একটার পর একটা দুর্যোগের শিকার হচ্ছে। বেলজিয়ামের দ্য সেন্টার ফর রিসার্চ অন দি এপিডেমিওলজি অভ্‌ ডিজাস্টারস্‌ জানায় যে, কেবল ২০১০ সালেই ৩৭৩টা দুর্যোগ ঘটেছিল আর এর ফলে অন্ততপক্ষে ২,৯৬,০০০ জন লোক মারা গিয়েছিল।

এ ছাড়া দুর্যোগগুলো সম্বন্ধে যে-রিপোর্টগুলো করা হয়েছে, বিগত কয়েক দশক ধরে সেগুলোর সংখ্যাও লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে প্রতি বছর ৩০০টার মতো দুর্যোগের বিষয়ে রেকর্ড করা হয়েছে। কিন্তু, ২০০০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে বছরে গড়ে ৪০০-র কাছাকাছি দুর্যোগের বিষয়ে রেকর্ড করা হয়েছে। সম্ভবত আপনিও তাদের মধ্যে রয়েছেন যারা চিন্তা করে, ‘কেন এখন এত বেশি দুর্যোগ?’

যদিও লোকেরা প্রায়ই এই ধরনের দুর্যোগগুলোকে “ঈশ্বরের কাজ” বলে নির্দেশ করে কিন্তু আসলে তা ভুল। যে-দুর্যোগগুলো আজকে অনেক লোককে আঘাত করে, সেগুলোর জন্য ঈশ্বর দায়ী নন। তবে, বাইবেল ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিল যে, আমাদের সময়ে বিভিন্ন দুর্যোগ ঘটবে। উদাহরণস্বরূপ, মথি ২৪:৭, ৮ পদে আমরা যিশুর এই কথাগুলো পড়ি: “স্থানে স্থানে দুর্ভিক্ষ ও ভূমিকম্প হইবে। কিন্তু এ সকলই যাতনার আরম্ভ মাত্র।” কেন যিশু এই ঘটনাগুলো সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন এবং আমাদের জন্য সেগুলো কী অর্থ রাখে?

ঈশ্বরের পুত্র যিশু, তাঁকে করা এই প্রশ্নের উত্তরে কথাগুলো বলেছিলেন: “যুগান্তের চিহ্ন কি?” (মথি ২৪:৩) ওপরে উল্লেখিত দুর্দশাগুলোর মতো বিভিন্ন ঘটনা ঘটবে বলে তিনি বলেছিলেন। এরপর তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যটি করেছিলেন: ‘তোমরা যখন এই সকল ঘটিতেছে দেখিবে, তখন জানিবে, ঈশ্বরের রাজ্য সন্নিকট।’ (লূক ২১:৩১) তাই, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো আমাদের জন্য বিরাট অর্থ রাখে। সেগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের এক সময়কে নির্দেশ করে, যা একেবারে নিকটে।

যে-কারণগুলোর জন্য দুর্যোগগুলো ঘটে থাকে

কিন্তু, এখনও অনেক লোক জিজ্ঞেস করে, ঈশ্বর যদি দুর্যোগগুলোর জন্য দায়ী না-ই হন, তাহলে এর জন্য কে অথবা কী দায়ী? উত্তরটি আমরা কেবল তখনই বুঝতে পারব, যদি আমরা বাইবেলে উল্লেখিত একটা গুরুত্বপূর্ণ সত্যকে উপলব্ধি করি: “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।” (১ যোহন ৫:১৯) এই পদ প্রকাশ করে যে, জগতের দুর্দশামূলক অবস্থার জন্য ঈশ্বর দায়ী নন কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তাঁর শত্রু, ‘সেই পাপাত্মা’ বা দুষ্ট ব্যক্তি—অন্যভাবে বললে, বাইবেলে যাকে “দিয়াবল” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সেই ব্যক্তিই—দায়ী।—প্রকাশিত বাক্য ১২:৯, ১২.

তার নিজ স্বার্থপর লক্ষ্যের দ্বারা পরিচালিত হয়ে ঈশ্বরের এই শত্রু লোকেদেরকে পরিত্যাজ্য হিসেবে গণ্য করে। যেহেতু সমস্ত জগৎ তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তাই সে সেই একই মনোভাব মানবজাতির মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছে। বস্তুতপক্ষে, এই বিষয়টা বাইবেল “শেষ কালে” লোকেরা “আত্মপ্রিয়, অর্থপ্রিয়, আত্মশ্লাঘী, অভিমানী” হবে এই ভবিষ্যদ্‌বাণী করার দ্বারা উল্লেখ করে। (২ তীমথিয় ৩:১, ২) তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, দিয়াবল বিশ্বব্যাপী এমন এক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, যা এগুলো এবং অন্যান্য মন্দ গুণকে বৃদ্ধি করছে। সে স্বার্থের জন্য ও লোভবশত শোষণ করাকে উসকে দেয়, যা প্রায়ই লোকেদের ক্ষতি নিয়ে আসে।

কীভাবে আজকের লোভী সংগঠন দুর্যোগগুলোর পিছনে ইন্ধন জোগাচ্ছে? বিশ্বব্যাপী দুর্যোগ সম্বন্ধে রাষ্ট্রসংঘের একটা রিপোর্ট জানায়: ‘লোকেরা প্রায়ই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে, যেমন বন্যা কবলিত এলাকায় বসতি স্থাপন করছে। এ ছাড়া, বনভূমি নিধন ও জলাজমি নষ্ট করার ফলে বিভিন্ন বিপর্যয় প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে পরিবেশের ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই সমস্ত বিপদগুলো ছাড়া, মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে গ্রিনহাউস গ্যাসের বৃদ্ধির ফলে বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া পরিবর্তনের এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে।’ যদিও ‘মানুষের এই কর্মকাণ্ডের’ বেশিরভাগকেই অর্থনৈতিক অগ্রগতি বলা হয়ে থাকে, কিন্তু বাস্তবে এটা হল স্বার্থপর ও লোভী মনোভাবের কাজ, যা জগতে ছেয়ে রয়েছে।

ফল স্বরূপ, এখন অনেক বিশেষজ্ঞ বুঝতে পারে যে, মানুষের অবাধ কর্মকাণ্ড, ঘটে যাওয়া দুর্যোগগুলোর মারাত্মক প্রভাবকে বৃদ্ধি করেছে। আসলে, দুর্যোগগুলোকে আরও খারাপ করে তুলছে এমন এক সংগঠনকে সমর্থন করার দ্বারা মানুষ দিয়াবলের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে।

তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, মানুষের অবিবেচনাপূর্ণ কর্মকাণ্ডের ফলে অনেক দুর্যোগ ঘটছে। কিছু কিছু বিপর্যয় অতটা ধ্বংসাত্মক হতো না, যদি সেগুলো সেই জায়গাগুলোতে না ঘটত, যেখানে সেগুলো ঘটেছে। বিশ্বের অনেক জায়গায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর প্রভাব দুষ্ট লোকেদের কর্মকাণ্ডের ফলে অথবা বিরাট সংখ্যক লোক আর্থিক ও সামাজিক অসমতা, যা আজকে জগতে সাধারণ বিষয়, সেটার ফল স্বরূপ ঝুঁকিপ্রবণ এলাকাগুলোতে বাস করতে বাধ্য হচ্ছে বলে আরও খারাপ হয়েছে। অবশ্য কিছু লোক, নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির ভুলের অথবা অসতর্ক হওয়ার কারণে নয় কিন্তু “সকলের প্রতি কাল ও দৈব ঘটে” বলে দুর্যোগগুলো ভোগ করে থাকে।—উপদেশক ৯:১১.

কারণ যা-ই হোক না কেন, আপনি যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হন, তাহলে কীভাবে আপনি সেটার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারেন? যখন দুর্দশাগুলো ঘটে, তখন সেগুলোর প্রভাবকে হ্রাস করার জন্য কী করা যেতে পারে, এখন আমরা তা পরীক্ষা করে দেখব। (w১১-E ১২/০১)

[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঘন জনবসতি

[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

বনভূমি নিধন

[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

দূষণ

[৫ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

বাম দিক: © Mark Henley/Panos Pictures

মাঝখানে: © Jeroen Oerlemans/Panos Pictures