আপনার কিশোরবয়সি সন্তান যখন আপনার ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে সন্দেহ করে
পারিবারিক সুখের চাবিকাঠি
আপনার কিশোরবয়সি সন্তান যখন আপনার ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে সন্দেহ করে
তারা যখন পরিপক্ব হয়, তখন অনেক অল্পবয়সি তাদের বাবা-মার ধর্মকে গ্রহণ করা বেছে নেয়। (২ তীমথিয় ৩:১৪) কিন্তু, কেউ কেউ তা করে না। আপনার বড়ো হতে থাকা সন্তান যদি আপনার ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে সন্দেহ করতে শুরু করে, তাহলে আপনি কী করতে পারেন? যিহোবার সাক্ষিরা কীভাবে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মোকাবিলা করে, এই প্রবন্ধটি তা নিয়ে আলোচনা করে।
“আমি আমার বাবা-মার ধর্ম আর মেনে চলতে চাই না। আমি তা মেনে চলা বন্ধ করতে চাই।”—১৮ বছর বয়সি করা। *
আপনি এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী যে, আপনার ধর্ম ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্য শিক্ষা দেয়। আপনি বিশ্বাস করেন যে, বাইবেল জীবনের সর্বোত্তম পথের বিষয়ে শিক্ষা দেয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই, আপনি আপনার মূল্যবোধগুলো আপনার সন্তানের মধ্যে গেঁথে দেওয়ার চেষ্টা করেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭) কিন্তু, বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার সন্তান যদি আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, তাহলে কী? সে আগে আগ্রহের সঙ্গে যে-বিশ্বাস গ্রহণ করেছিল বলে মনে হয়, সেটার বিষয়ে-ই যদি সন্দেহ করতে শুরু করে, তাহলে কী?—গালাতীয় ৫:৭.
তা যদি ঘটে থাকে, তাহলে এই উপসংহারে আসবেন না যে, একজন খ্রিস্টান বাবা অথবা মা হিসেবে আপনি ব্যর্থ হয়েছেন। অন্যান্য বিষয়ও এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, যেমনটা আমরা দেখব। কিন্তু এটা জেনে রাখুন যে: আপনি আপনার কিশোরবয়সি সন্তানের সন্দেহ করার বিষয়টাকে যেভাবে মোকাবিলা করেন, সেটাই হয়তো নির্ধারণ করে দিতে পারে যে, সে আপনার বিশ্বাসের আরও নিকটবর্তী হওয়া বেছে নেবে নাকি তা থেকে দূরে সরে যাওয়া বেছে নেবে। আপনি যদি এই বিষয়টা নিয়ে আপনার কিশোরবয়সি সন্তানের সঙ্গে লড়াই করা শুরু করেন, তাহলে আপনি এমন এক কঠিন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বেন, যে-যুদ্ধে আপনার পরাজয় প্রায় নিশ্চিত।—কলসীয় ৩:২১.
প্রেরিত পৌলের পরামর্শে মনোযোগ দেওয়া আরও ভালো হবে। তিনি লিখেছিলেন, ‘যুদ্ধ করা প্রভুর দাসের উপযুক্ত নহে; কিন্তু সকলের প্রতি কোমল, শিক্ষাদানে নিপুণ, সহনশীল হওয়া উচিত।’ (২ তীমথিয় ২:২৪, ২৫) আপনি যে “শিক্ষাদানে নিপুণ” কীভাবে আপনি নিজে তা দেখাতে পারেন, যদি আপনার কিশোরবয়সি সন্তান আপনার বিশ্বাস নিয়ে সন্দেহ করে?
বিচক্ষণ হোন
প্রথমত, আপনার কিশোরবয়সি সন্তানের এইরকম দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করার পিছনে যে-কারণগুলো থাকতে পারে, সেগুলো নির্ণয় করার চেষ্টা করুন। উদাহরণস্বরূপ:
▪ সে কি খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে একাকী ও বন্ধুহীন বলে মনে করে? “যেহেতু আমি বন্ধুবান্ধব পেতে চেয়েছিলাম, তাই আমি বেশ কিছু সহপাঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছিলাম আর তা বছরের পর বছর ধরে আমার আধ্যাত্মিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বিশেষ করে কুসংসর্গের কারণে আমি আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম আর
এখন আমি সেগুলোর জন্য খুব অনুশোচনা করি।”—১৯ বছর বয়সি লিনর।▪ তার কি আত্মবিশ্বাসের অভাব রয়েছে, যেটা তাকে তার বিশ্বাস সম্বন্ধে কথা বলা কঠিন করে তোলে? “আমি যখন স্কুলে পড়তাম, তখন আমি আমার সহপাঠীদের কাছে আমার বিশ্বাস সম্বন্ধে কথা বলতে ইতস্তত বোধ করতাম। আমি এই ভেবে ভয় পেতাম যে, তারা হয়তো আমাকে অদ্ভুত বা অতিধার্মিক বলে মনে করবে। যে-ছেলেরা ভিন্ন প্রকৃতির হতো, তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করা হতো আর আমি চাইনি আমার প্রতি সেটা ঘটুক।”—২৩ বছর বয়সি রামন।
▪ সে কি খ্রিস্টীয় মানগুলো অনুসারে জীবনযাপন করার দায়িত্বের ফলে ভারগ্রস্ত বোধ করে? “আমার মনে হয় যেন অনন্তজীবনের বিষয়ে বাইবেলের প্রতিজ্ঞা এমন কিছু যা কোনো লম্বা সিঁড়ির উঁচুতে রয়েছে আর আমি এমনকী এর ধাপগুলোতে পা-ও রাখিনি; আমি সেগুলো থেকে অনেক অনেক দূরে রয়েছি। সেই সিঁড়িতে ওঠার ভয় এতই বেশি যে, আমি আমার বিশ্বাস পরিত্যাগ করার কথা বিবেচনা করেছি।”—১৬ বছর বয়সি রেনে।
কথা বলার দ্বারা জানার চেষ্টা করুন
আপনার কিশোরবয়সি সন্তান হয়তো কোন প্রধান সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে? তা খুঁজে বের করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে, তাকে জিজ্ঞেস করা! কিন্তু খেয়াল রাখুন যে, আলোচনা যেন তর্কবিতর্কে পরিণত না হয়। এর পরিবর্তে, যাকোব ১:১৯ পদের পরামর্শ অনুসরণ করুন: ‘শ্রবণে সত্বর, কথনে ধীর, ক্রোধে ধীর হউন।’ তার প্রতি ধৈর্য ধরুন। ‘সম্পূর্ণ সহিষ্ণুতা ও শিক্ষাদানকে [‘শিক্ষাদানের কৌশলকে,’ NW]’ কাজে লাগান, ঠিক যেমনটা আপনি পরিবারের বাইরের কোনো ব্যক্তির প্রতি করবেন।—২ তীমথিয় ৪:২.
উদাহরণস্বরূপ, আপনার কিশোরবয়সি সন্তান যদি খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দিতে না চায়, তাহলে জানার চেষ্টা করুন যে, কোনোকিছু তাকে উদ্বিগ্ন করছে কি না। কিন্তু ধৈর্য সহকারে তা করুন। নীচের দৃশ্যে বাবা কিশোরবয়সি সন্তানের হৃদয়ে পৌঁছাতে সফল হননি।
ছেলে: সভাগুলোতে যেতে আমার আর ভালো লাগে না।
বাবা: [রাগান্বিত স্বরে] যেতে ভালো লাগে না, মানে তুমি কী বলতে চাচ্ছো?
ছেলে: সভাগুলো আমার কাছে একঘেয়ে লাগে!
বাবা: ঈশ্বরের বিষয়েও কি তুমি তা-ই মনে করো? তাঁকেও কি তোমার একঘেয়ে বলে মনে হয়? এটা খুবই খারাপ বিষয়! তুমি যতদিন আমাদের বাড়িতে থাকবে, তুমি আমাদের সঙ্গে যাবে—তা তোমার ভালো লাগুক বা না লাগুক!
ঈশ্বর চান বাবা-মারা যেন তাদের সন্তানদেরকে তাঁর বিষয়ে শিক্ষা দেয় এবং সন্তানরা যেন তাদের বাবা-মার বাধ্য হয়। (ইফিষীয় ৬:১) কিন্তু, আপনি চান আপনার সন্তান যেন অন্ধের মতো আপনার আধ্যাত্মিক তালিকা অনুসরণ করার এবং অনিচ্ছুকভাবে খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যাওয়ার চেয়ে আরও বেশি কিছু করে। যদি সম্ভব হয়, তাহলে আপনি চাইবেন সেইসঙ্গে যেন তার মন ও হৃদয়ও যায়।
এটা সম্পন্ন করার আরও ভালো সুযোগ আপনার থাকবে, যদি আপনি তার মনোভাবের ওপর প্রভাব ফেলছে এমন কোনো প্রধান সমস্যাকে নির্ণয় করতে পারেন। এই বিষয়টা মনে রেখে, কীভাবে ওপরোক্ত কথোপকথনকে আরও ভালোভাবে পরিচালনা করা যেতে পারত, তা বিবেচনা করুন।
ছেলে: সভাগুলোতে যেতে আমার আর ভালো লাগে না।
বাবা: [শান্তভাবে] কেন ভালো লাগে না?
ছেলে: সভাগুলো আমার কাছে একঘেয়ে লাগে!
বাবা: এক বা দু-ঘন্টা বসে থাকাটা একঘেয়ে বলে মনে হতে পারে। এই ক্ষেত্রে কোন বিষয়টা তোমার সবচেয়ে কঠিন বলে মনে হয়?
ছেলে: আমি জানি না। আমার মনে হয়, আমি অন্য কোথাও থাকলে আরও ভালো হতো।
বাবা: তোমার বন্ধুবান্ধবও কি তা-ই মনে করে?
ছেলে: বলতে পারো, এটাই হল আমার সমস্যা! আমার কোনো বন্ধু নেই—অন্ততপক্ষে এখন আর নেই। যখন থেকে আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে, তখন থেকে আমার মনে হয় যেন কথা বলার মতো আর কেউ নেই! অন্যরা সবাই মজা করছে। আমার এতো একা লাগে!
কিশোরবয়সি সন্তানকে খোলাখুলিভাবে কথা বলতে দেওয়ার দ্বারা ওপরোক্ত দৃশ্যের বাবা কেবল প্রধান সমস্যাকে—এই ক্ষেত্রে একাকিত্বকে—নির্ণয় করেননি, কিন্তু সেইসঙ্গে আস্থাও গড়ে তোলেন আর এভাবে আরও আলোচনার পথ খোলা রাখেন।—প্রবন্ধের সঙ্গে দেওয়া “ধৈর্য ধরুন!” শিরোনামক বাক্সটা দেখুন।
পরবর্তী সময়ে যে-অল্পবয়সিরা তাদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারত এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো কাটিয়ে ওঠে, তারা স্বভাবতই নিজেদের ও তাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে আরও ভালো বোধ করবে। রামনের বিষয় বিবেচনা করুন, যার সম্বন্ধে আগে উল্লেখ করা হয়েছে, সে স্কুলেতে নিজেকে একজন খ্রিস্টান হিসেবে পরিচয় দিতে ইতস্তত বোধ করত। পরিশেষে, রামন বুঝতে পেরেছিল যে, তার বিশ্বাস সম্বন্ধে কথা বলা, সে যতটা অপ্রীতিকর বলে কল্পনা করেছিল ততটা নয়—এমনকী যখন এর ফলে তাকে উপহাস করা হয়েছিল। সে বর্ণনা করে:
“একবার স্কুলে একটা ছেলে আমার ধর্মের কারণে আমাকে নিয়ে মজা করছিল। আমি সত্যিই ঘাবড়ে গিয়েছিলাম আর আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, পুরো ক্লাস তা শুনছিল। এরপর আমি আলোচনাটা ঘুরিয়ে দেওয়ার এবং তার বিশ্বাস সম্বন্ধে তাকে জিজ্ঞেস করব বলে ঠিক করেছিলাম। এটা দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে, সে এমনকী আমার চেয়েও বেশি ঘাবড়ে গিয়েছিল! তখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, অনেক অল্পবয়সির ধর্মীয় বিশ্বাস রয়েছে কিন্তু তারা সেগুলোর বিষয়ে বোঝে না। অন্ততপক্ষে, আমি আমার বিশ্বাস সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করতে পারি। সত্যি বলতে কী, বিশ্বাস সম্বন্ধে কথা বলার বিষয়টা যখন আসে, তখন আমার সহপাঠীদেরই অপ্রস্তুত হওয়া উচিত—আমার নয়!”
এটা করে দেখুন: আপনার কিশোরবয়সি সন্তানকে এ কথা জিজ্ঞেস করার দ্বারা তার কাছ থেকে জানার চেষ্টা করুন যে, খ্রিস্টান হওয়ার কারণে সে কেমন বোধ করে। তার নিজের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে উপকারিতাগুলো কী? কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো রয়েছে? উপকারিতাগুলো কি প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর চেয়ে বেশি? যদি তা-ই হয়, তাহলে কীভাবে? (মার্ক ১০:২৯, ৩০) আপনার কিশোরবয়সি সন্তান একটা কাগজে দুটো কলামে তার চিন্তাধারাগুলো লিখে রাখতে পারে—বাঁদিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো ও ডানদিকে উপকারিতাগুলো। কাগজে লিখে রাখা বিষয়গুলোকে তার মূল্যায়ণ করা হয়তো আপনার কিশোরবয়সি সন্তানকে তার সমস্যাকে শনাক্ত করতে এবং সেটার সমাধান খুঁজে বের করতে সাহায্য করতে পারে।
আপনার কিশোরবয়সি সন্তানের “পরিণামদর্শিতা”
বাবা-মা ও বিশেষজ্ঞরা দেখেছে যে, ছোটোরা যেভাবে চিন্তা করে এবং কিশোরবয়সি সন্তানেরা যেভাবে চিন্তা করে, সেটার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। (১ করিন্থীয় ১৩:১১) ছোটোরা যেখানে সাধারণত একতরফা, হয় পুরোপুরি ভালো না হয় পুরোপুরি খারাপ বলে চিন্তা করে, সেখানে কিশোরবয়সিরা বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যুক্তি করে। উদাহরণস্বরূপ, একটা ছোটো বাচ্চাকে শেখানো যেতে পারে যে, ঈশ্বর সমস্তকিছু সৃষ্টি করেছেন। (আদিপুস্তক ১:১) কিন্তু একজন কিশোরবয়সি সন্তান হয়তো এই ধরনের প্রশ্নগুলো নিয়ে তর্ক করতে পারে যেমন: ‘কীভাবে আমি জানব যে, একজন ঈশ্বর রয়েছেন? কেন একজন প্রেমময় ঈশ্বর মন্দতা থাকতে দিয়েছেন? ঈশ্বর সবসময়ই অস্তিত্বে রয়েছেন, তা কীভাবে সত্য হতে পারে?’—গীতসংহিতা ৯০:২.
আপনি হয়তো মনে করতে পারেন যে, এই ধরনের প্রশ্ন করা আপনার অল্পবয়সি সন্তানের বিশ্বাসের ক্ষেত্রে এক ধাপ পিছিয়ে যাওয়াকে নির্দেশ করে। কিন্তু বাস্তবে, তা এক ধাপ এগিয়ে যাওয়াকে নির্দেশ করতে পারে। সর্বোপরি, প্রশ্ন করা একজন খ্রিস্টানের আধ্যাত্মিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ দিক হতে পারে।—প্রেরিত ১৭:২, ৩.
অধিকন্তু, আপনার কিশোরবয়সি সন্তান তার “পরিণামদর্শিতা” বা চিন্তা করার ক্ষমতা ব্যবহার করতে শিখছে। (হিতোপদেশ ৩:২১, ২২) ফল স্বরূপ, সে এমনভাবে খ্রিস্টীয় বিশ্বাসের “প্রশস্ততা, দীর্ঘতা, উচ্চতা ও গভীরতা” বুঝতে পারে, যা সে ছোটো হলে বুঝতে পারত না। (ইফিষীয় ৩:১৮) আগের চেয়ে এখনই আপনার কিশোরবয়সি সন্তানকে তার বিশ্বাস নিয়ে যুক্তি করতে শেখানোর সময়, যাতে সে তার বিশ্বাস সম্বন্ধে দৃঢ়প্রত্যয় গড়ে তুলতে পারে।—হিতোপদেশ ১৪:১৫; প্রেরিত ১৭:১১.
এটা করে দেখুন: আপনি ও সে যে-বিষয়গুলোকে হয়তো হালকাভাবে নিয়েছিলেন, সেগুলোকে আবার দেখার দ্বারা আপনার কিশোরবয়সি সন্তানের সঙ্গে প্রাথমিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনাতে ফিরে যান। উদাহরণস্বরূপ, তাকে এই প্রশ্নগুলো নিয়ে চিন্তা করতে বলুন যেমন: ‘কোন বিষয়টা আমাকে প্রত্যয়ী করে যে, একজন ঈশ্বর রয়েছেন? আমি কোন প্রমাণ পেয়েছি, যা দেখায় যে, ঈশ্বর আমার জন্য চিন্তা করেন? কেন আমার মনে হয় যে, ঈশ্বরের আইনগুলোর বাধ্য থাকা সবসময়ই আমার জন্য মঙ্গলজনক?’ আপনার কিশোরবয়সি সন্তানের ওপর আপনার দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে না দেওয়ার ব্যাপারে সাবধান থাকুন। এর পরিবর্তে, তাকে তার নিজের প্রত্যয় গড়ে তুলতে সাহায্য করুন। এভাবে তার বিশ্বাসের ওপর আস্থা গড়ে তোলা তার পক্ষে সহজ হবে।
“প্রমাণ জ্ঞাত হইয়াছ”
বাইবেল অল্পবয়সি তীমথিয় সম্বন্ধে বলে যিনি, “শিশুকাল অবধি” পবিত্র শাস্ত্রকলাপ সম্বন্ধে জানতেন। তবুও, প্রেরিত পৌল তীমথিয়কে জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তুমি যাহা যাহা শিখিয়াছ ও যাহার যাহার প্রমাণ জ্ঞাত হইয়াছ, তাহাতেই স্থির থাক।” (২ তীমথিয় ৩:১৪, ১৫) তীমথিয়ের মতো, আপনার কিশোরবয়সি সন্তানও হয়তো জন্ম থেকেই বাইবেলের মানগুলো অনুসারে শিক্ষালাভ করেছে। কিন্তু, এখন তাকে আপনার প্রমাণ জ্ঞাত করতে হবে, যাতে সে তার নিজ প্রত্যয় গড়ে তুলতে পারে।
যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য—যে-উত্তরগুলো কাজ করে, খণ্ড ১ (ইংরেজি) বইটি বলে: “আপনার কিশোরবয়সি সন্তান যতদিন ধরে আপনার বাড়িতে থাকে, ততদিন আপনার তাকে এক আধ্যাত্মিক তালিকা মেনে চলতে বলার অধিকার রয়েছে। কিন্তু, পরিশেষে আপনার লক্ষ্য হল আপনার কিশোরবয়সি সন্তানের হৃদয়ে ঈশ্বরের জন্য প্রেম গেঁথে দেওয়া—শুধুমাত্র যান্ত্রিকভাবে কিছু করানো নয়।” সেই লক্ষ্য মনে রেখে আপনি আপনার কিশোরবয়সি সন্তানকে “বিশ্বাসে অটল” হয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারেন, যাতে সেটা, কেবলমাত্র আপনার নয় কিন্তু তার জীবনের পথ হয়ে ওঠে। *—১ পিতর ৫:৯. (w১২-E ০২/০১)
[পাদটীকাগুলো]
^ এই প্রবন্ধে নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।
^ আরও তথ্যের জন্য ২০০৯ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১০-১২ পৃষ্ঠা এবং যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য—যে-উত্তরগুলো কাজ করে, খণ্ড ১ বইটির ৩১৫-৩১৮ পৃষ্ঠা দেখুন।
নিজেকে জিজ্ঞেস করুন . . .
▪ আমার সন্তান যখন আমার ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে সন্দেহ করে, তখন আমি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাই?
▪ আমি যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাই, সেই ক্ষেত্রে উন্নতি করার জন্য কীভাবে আমি এই প্রবন্ধের বিষয়বস্তু ব্যবহার করতে পারি?
[২৩ পৃষ্ঠার বাক্স]
প্রতারিত?
প্রচলিত ধারণা: যিহোবার সাক্ষি বাবা-মারা তাদের সন্তানদেরকে তাদের বিশ্বাস অনুসরণ করার জন্য জোর করে।
বাস্তব বিষয়: সাক্ষি বাবা-মারা তাদের সন্তানদের মধ্যে ঈশ্বরের প্রতি প্রেম গড়ে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে, ঠিক যেমনটা বাইবেল তা করার জন্য তাদেরকে আদেশ দেয়। (ইফিষীয় ৬:৪) তবুও, তারা উপলব্ধি করে যে, একজন সন্তান যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠে, তখন উপাসনা সম্বন্ধে তাকে ব্যক্তিগত বাছাই করতে হবে।—রোমীয় ১৪:১২; গালাতীয় ৬:৫.
[২৪ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
ধৈর্য ধরুন!
আপনার কিশোরবয়সি সন্তানের সঙ্গে কথা বলার জন্য আপনাকে হয়তো বিরাট ধৈর্য ধরতে হতে পারে। কিন্তু সেটার ফল হল আস্থা গড়ে তোলা আর সেটার মূল্য রয়েছে। কিশোরবয়সি একজন মেয়ে বর্ণনা করে: “এক রাতের আলোচনায় আমি আমার বাবাকে বলেছিলাম যে, গোপনে আমার একটা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক পেজ ও একজন বয়ফ্রেন্ড ছিল আর আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। আমার সঙ্গে পুরো বিষয়টা নিয়ে কথা বলার সময় তিনি খুবই শান্ত ছিলেন। আমি আর কোনো বাবাকে জানি না যিনি শুধু চুপচাপ বসে থাকেন কিন্তু তার মেয়েকে বকাঝকা করতে শুরু করেন না যখন তিনি জানতে পারেন যে, সে একটা ছেলেকে চুম্বন করেছে আর সবসময় তাকে টেক্সট মেসেজ পাঠায়। আমার মনে হয় যে, আমার বাবাকে আমি সবকিছুই বলতে পারি। আমি জানি যে, তিনি সত্যিই আমাকে সাহায্য করতে চান।”
[২৫ পৃষ্ঠার বাক্স]
একজন পরামর্শদাতার মূল্য
কখনো কখনো যখন পরিবারের বাইরের কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি উৎসাহ প্রদান করেন, তখন অল্পবয়সিরা সাহায্য লাভ করে। আপনি কি এমন কাউকে জানেন যার আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি আপনার কিশোরবয়সি সন্তানের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে? তিনি যাতে আপনার ছেলে বা মেয়ের সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন, সেটার ব্যবস্থা করুন না কেন? আপনার উদ্দেশ্য আপনার দায়িত্বগুলো ছেড়ে দেওয়া নয়। কিন্তু, তীমথিয়ের কথা চিন্তা করুন। তিনি প্রেরিত পৌলের উদাহরণ থেকে খুবই উপকৃত হয়েছিলেন এবং তীমথিয়কে তার সহযোগী হিসেবে পাওয়ার দ্বারা পৌলও খুবই উপকৃত হয়েছিলেন।—ফিলিপীয় ২:২০, ২২. *
[পাদটীকা]
^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য—যে-উত্তরগুলো কাজ করে বইয়ের খণ্ড ১, ২০১১ সালের সংস্করণের ৩১৮ পৃষ্ঠা থেকে।