সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আগের চেয়ে অল্প আয়ে যেভাবে জীবনযাপন করা যায়

আগের চেয়ে অল্প আয়ে যেভাবে জীবনযাপন করা যায়

আগের চেয়ে অল্প আয়ে যেভাবে জীবনযাপন করা যায়

ওবেদ হলেন দুই সন্তানের বাবা। তিনি আফ্রিকার এক বড়ো শহরের একটা পাঁচতারা হোটেলে দশ বছর ধরে কাজ করেছিলেন এবং তার পরিবারের প্রয়োজনগুলো মেটানোর ব্যাপারে কোনো সমস্যা ছিল না বললেই চলে। মাঝে মাঝে, তিনি তার দেশের মধ্যে খেলাধুলার জায়গাগুলোতে পরিবারকে নিয়ে ছুটি কাটাতে যেতে পারতেন। কিন্তু হোটেলে কাস্টমারের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে তিনি যখন তার চাকরি হারান, তখন এই সমস্তকিছুই শেষ হয়ে যায়।

স্টিফেন ২২ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটা বড়ো ব্যাঙ্কে কাজ করতেন আর পরিশেষে এগ্‌জিকিউটিভের পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন। কোম্পানি থেকে তিনি যে-সব সুযোগসুবিধা লাভ করেছিলেন, সেগুলোর মধ্যে ছিল একটা বড়ো বাড়ি, একটা গাড়ি, বাড়ির কাজের লোক এবং তার সন্তানদের জন্য নাম করা স্কুল। ব্যাঙ্ক যখন তাদের অফিস কর্মীদের সংগঠিত করার প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন করতে শুরু করেছিল, তখন তিনি তার চাকরি হারিয়েছিলেন। “আমার পরিবার ও আমি একেবারে ভেঙে পড়েছিলাম,” স্টিফেন বলেন। “আমি হতাশা, তিক্ততা ও উদ্‌বেগের অনুভূতির দ্বারা আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম।”

এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিশ্বব্যাপী চলতে থাকা অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এমন লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি তাদের চাকরি হারিয়েছে, যাদের আগে স্থায়ী আয় ছিল। অনেকে যারা কোনোভাবে একটা চাকরি খুঁজে পেয়েছে তারা কম মাইনে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে, যদিও তাদেরকে জিনিসপত্রের ক্রমবর্ধমান মূল্যের সঙ্গে লড়াই করতে হয়। উন্নত হোক বা না-ই হোক, পৃথিবীর কোনো দেশই অর্থনৈতিক মন্দার ধ্বংসাত্মক পরিণতি থেকে রেহাই পায় না।

ব্যবহারিক প্রজ্ঞার প্রয়োজনীয়তা

আমরা যদি আগের চেয়ে কম আয় করি অথবা চাকরি হারাই, তাহলে আমরা সহজেই নেতিবাচক চিন্তাধারার দ্বারা ভারগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারি। এটা ঠিক যে, একজন ব্যক্তি পুরোপুরিভাবে উদ্‌বেগকে এড়াতে পারে না। কিন্তু, একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি একবার বলেছিলেন: “সঙ্কটের দিনে যদি অবসন্ন হও, তবে তোমার শক্তি সঙ্কুচিত।” (হিতোপদেশ ২৪:১০) অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে ভয় না পেয়ে বরং আমাদের “সূক্ষ্ম বুদ্ধি” বা ব্যবহারিক প্রজ্ঞার জন্য ঈশ্বরের বাক্যের ওপর নির্ভর করা প্রয়োজন।—হিতোপদেশ ২:৭.

যদিও বাইবেল অর্থনীতি বিষয়ক কোনো নির্দেশপুস্তক নয় কিন্তু এই ধরনের বিষয়গুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করা সম্বন্ধীয় এর ব্যবহারিক প্রজ্ঞা পৃথিবীব্যাপী লক্ষ লক্ষ ব্যক্তির কাছে সাহায্যকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে। আসুন আমরা বাইবেলে দেওয়া কয়েকটা মূল নীতি পরীক্ষা করে দেখি।

মূল্য বিবেচনা করুন। লূক ১৪:২৮ পদে পাওয়া যিশুর এই কথাগুলোকে বিবেচনা করুন: “বাস্তবিক দুর্গ নির্ম্মাণ করিতে ইচ্ছা হইলে তোমাদের মধ্যে কে অগ্রে বসিয়া ব্যয় হিসাব করিয়া না দেখিবে, সমাপ্ত করিবার সঙ্গতি তাহার আছে কি না?” এই নীতিটা প্রয়োগ করার অর্থ হল একটা বাজেট তৈরি করা ও সেই অনুসারে চলা। কিন্তু ওবেদ যেমন স্বীকার করেন, এটা কঠিন হতে পারে। তিনি বলেন, ‘চাকরি হারানোর আগে আমরা সবসময় এমন অনেক জিনিস কিনতাম, যেগুলোর প্রকৃতপক্ষে কোনো প্রয়োজন ছিল না। আমরা কখনোই কোনো বাজেট তৈরি করিনি কারণ আমরা যা-কিছুই কিনতে চাইতাম, তা কেনার জন্য আমাদের যথেষ্ট অর্থ থাকত।’ আগে থেকে পরিকল্পনা করা এই বিষয়টাকে নিশ্চিত করবে যে, কমে যাওয়া যে-অর্থ রয়েছে, তা পরিবারের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর জন্য ব্যয় করা যাবে।

আপনার জীবনযাত্রায় রদবদল করুন। নিঃসন্দেহে, আরও সাদাসিধে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়াটা কঠিন কিন্তু তা করা প্রয়োজন। একটি প্রবাদ বলে: “একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি বিপদ আসতে দেখে নীচে শুয়ে পড়েন।” স্টিফেন বলেন, ‘অর্থ বাঁচানোর জন্য আমার পরিবারকে আমাদের নিজেদের বাড়িতে চলে আসতে হয়েছিল, যেটা আরও ছোটো এবং যেটার ভিতরের অনেক কাজ অসমাপ্ত ছিল। সন্তানদেরকে এমন স্কুলে বদলি করা হয়েছিল, যেখানে খরচ কম হওয়া সত্ত্বেও উন্নতমানের শিক্ষা প্রদান করা হতো।’

নতুন জীবনযাত্রায় খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সফল হতে গেলে, পরিবারের মধ্যে খোলাখুলি ভাববিনিময় খুবই প্রয়োজন। অস্টিন, যিনি তার চাকরি হারানোর আগে নয় বছর ধরে একটা ব্যাঙ্কে কাজ করেছিলেন, তিনি বলেন: “আমার স্ত্রী ও আমি একসঙ্গে বসে যে-জিনিসগুলো আমাদের সত্যিই প্রয়োজন, সেগুলো লিখে রাখতাম। আমাদেরকে দামি খাবারদাবার, ব্যয়বহুল ছুটি এবং অহেতুক নতুন নতুন জামাকাপড় কেনার ব্যাপারে কাটছাঁট করতে হয়েছিল। আমি খুশি যে, আমার পরিবার এই রদবদলগুলোর ব্যাপারে সহযোগিতা করেছিল।” অবশ্য, এই ধরনের রদবদলগুলো কেন প্রয়োজন, তা ছোটো ছেলেমেয়েরা পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারে না কিন্তু বাবা-মা হিসেবে আপনারা তাদেরকে বুঝতে সাহায্য করতে পারেন।

নতুন ধরনের কাজ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক হোন। আপনি যদি অফিসের কাজ করতে অভ্যস্ত থাকেন, তাহলে শারীরিক কাজ করা হয়তো কঠিন বলে মনে হতে পারে। অস্টিন বলেন, “একটা বড়ো খামারে ম্যানেজারের পদমর্যাদায় কাজ করতে অভ্যস্ত থাকায় আমার পক্ষে কম মাইনের চাকরি গ্রহণ করা মানসিকভাবে কঠিন ছিল।” হিতোপদেশ ২৯:২৫ পদে বাইবেল যেমন বলে যে, “লোক-ভয় ফাঁদজনক,” তার পরিপ্রেক্ষিতে ওপরের মন্তব্যটিতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। অন্যেরা হয়তো যা চিন্তা করতে পারে, সেটা নিয়ে সবসময় চিন্তা করা আপনার পরিবারের খাবারের জন্য আপনাকে অর্থ জোগাবে না। এই ধরনের নেতিবাচক চিন্তাধারা কাটিয়ে উঠতে কী আপনাকে সাহায্য করতে পারে?

একটা চাবিকাঠি হল নম্রতা। হোটেলের চাকরি হারানোর পর, ওবেদকে একজন প্রাক্তন সহকর্মী, তার গাড়ি মেরামত করার দোকানে কাজ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এই কাজের অন্তর্ভুক্ত ছিল গাড়ির রং ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ কেনার জন্য মাটির রাস্তা দিয়ে দীর্ঘ পথ হাঁটা। ওবেদ বলেন: “সমস্ত বাধা আমার কাছে অত্যন্ত কঠিন বলে মনে হয়েছিল। নম্রতা আমাকে এমন একটা কাজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করেছিল, যেটা আমার আগের বেতনের এক চতুর্থাংশেরও কম কিন্তু সেটা আমার পরিবারের প্রয়োজনগুলো মেটানোর জন্য যথেষ্ট।” আপনি কি একইরকমের এক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উপকার লাভ করতে পারেন?

সন্তুষ্ট থাকুন। একটা অভিধানের সংজ্ঞা অনুসারে একজন সন্তুষ্ট ব্যক্তি হলেন তিনি, যিনি “পরিস্থিতি যেরকমই হোক না কেন তাতেই যুক্তিযুক্তভাবে খুশি ও পরিতৃপ্ত থাকেন।” যার গুরুতর আর্থিক সমস্যা রয়েছে তার কাছে এই ধরনের বর্ণনা হয়তো অযৌক্তিক বলে মনে হতে পারে। কিন্তু, একজন মিশনারি, প্রেরিত পৌলের কথাগুলো বিবেচনা করুন, যিনি অভাবের মধ্যে থাকা বলতে কী বোঝায়, তা জানতেন: “আমি যে অবস্থায় থাকি, তাহাতে সন্তুষ্ট থাকিতে শিখিয়াছি। আমি অবনত হইতে জানি, উপচয় ভোগ করিতেও জানি।”—ফিলিপীয় ৪:১১, ১২.

আমাদের পরিস্থিতি হয়তো আরও ভালো হতে পারে, কিন্তু এই পরিবর্তনশীল সময়ে এটা আরও খারাপও হতে পারে। আমরা সত্যই উপকার লাভ করতে পারি যদি আমরা পৌলের এই অনুপ্রাণিত পরামর্শে মনোযোগ দিই: “বাস্তবিকই ভক্তি, সন্তোষযুক্ত হইলে, মহালাভের উপায়, কিন্তু গ্রাসাচ্ছাদন পাইলে আমরা তাহাতেই সন্তুষ্ট থাকিব।” আলস্যকে প্রশ্রয় না দিয়ে পৌল দেখাচ্ছিলেন যে, শারীরিক চাহিদাগুলোকে কীভাবে যথাস্থানে রাখতে হয়।—১ তীমথিয় ৬:৬, ৮.

প্রকৃত সুখের উৎস

আমরা চাই এমন সমস্ত সম্পদ সঞ্চয় করা অথবা আরামদায়ক জীবনযাপন করা, প্রকৃত সুখ নিয়ে আসে না। যিশু নিজেই বলেছিলেন: “গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য হইবার বিষয়।” হ্যাঁ, অন্যদের সাহায্য করার এবং তাদের কাছে উৎসাহের উৎস হওয়ার জন্য আমাদের যা আছে, তা ব্যবহার করার দ্বারা সুখ ও পরিতৃপ্তি লাভ করা যায়।—প্রেরিত ২০:৩৫.

আমাদের সৃষ্টিকর্তা যিহোবা ঈশ্বর আমাদের সমস্ত প্রয়োজনীয় বিষয় সম্বন্ধে খুব ভালোভাবে জানেন। তিনি তাঁর বাক্য বাইবেলের মাধ্যমে ব্যবহারিক পরামর্শ জুগিয়েছেন, যা অনেককে তাদের জীবনযাত্রার মানকে উন্নত করতে এবং অহেতুক উদ্‌বিগ্ন হওয়া থেকে স্বস্তি পেতে সাহায্য করেছে। অবশ্য এটার ফলে, একজন ব্যক্তির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি হঠাৎ করে অথবা নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হবে না। কিন্তু যারা ‘প্রথমে [ঈশ্বরের] রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করে’ তাদেরকে যিশু এই আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তাদের রোজকার সমস্ত প্রয়োজনীয় বিষয় তাদেরকে দেওয়া হবে।—মথি ৬:৩৩. (w১২-E ০৬/০১)