কে প্রার্থনা-শ্রবণকারী?
কে প্রার্থনা-শ্রবণকারী?
একজন প্রার্থনা-শ্রবণকারী যদি থেকে থাকেন, তাহলে যুক্তিসংগতভাবে তিনিই হলেন সৃষ্টিকর্তা। যিনি আপনার মস্তিষ্ক সৃষ্টি করেছেন, তিনি ছাড়া আর কে-ই বা আপনার চিন্তাভাবনা পড়তে পারেন? কে-ই বা প্রার্থনাগুলোর উত্তর দিতে পারেন এবং মানবজাতির যে-সাহায্য প্রয়োজন, তা প্রদান করতে পারেন? কিন্তু আপনি হয়তো চিন্তা করতে পারেন, ‘একজন সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করা কি যুক্তিসংগত?’
অনেকে মনে করে যে, একজন সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করতে হলে, আপনাকে আধুনিক বিজ্ঞানের প্রমাণকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। কিন্তু, ঈশ্বরে বিশ্বাস করা বিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এমনটা ধরে নেওয়া একেবারেই সত্য নয়। নীচের বিষয়গুলো বিবেচনা করুন।
◼ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ভালো ২১টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১,৬৪৬ জন বিজ্ঞানের অধ্যাপকের ওপর করা সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা থেকে দেখা গিয়েছে যে, তাদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ, তাদের মনোভাব বর্ণনা করার জন্য এই মন্তব্য করেছে, “আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না।”
সত্য বিষয়টা হল যে, বেশ কিছু সংখ্যক বিজ্ঞানী ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে।
একজন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রমাণ
কোনোরকম প্রমাণ ছাড়াই কি আমাদেরকে প্রার্থনা-শ্রবণকারীর অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে হবে? কখনোই না। বিশ্বাসের অর্থ, কোনো প্রমাণ ছাড়াই মেনে নেওয়া, এই ধারণাটা ভুল। বাইবেল বলে যে, প্রকৃত বিশ্বাসের ভিত্তি হল স্পষ্ট প্রমাণ। (ইব্রীয় ১১:১) উদাহরণস্বরূপ, আপনি রেডিও তরঙ্গ দেখতে পান না, কিন্তু আপনার রেডিও স্পষ্টভাবে দেখায় যে, সেই অদৃশ্য তরঙ্গ রয়েছে, যা স্বর সম্প্রচার করে; তাই আপনি মেনে নেন যে, এই ধরনের তরঙ্গের অস্তিত্ব রয়েছে। একইভাবে, যদিও আমরা প্রার্থনা-শ্রবণকারীকে দেখতে পাই না, তবুও আমরা প্রাপ্তিসাধ্য প্রমাণ পরীক্ষা করে দেখতে পারি, যা আমাদের মধ্যে এই দৃঢ়প্রত্যয় গড়ে তোলে যে, তিনি অবশ্যই অস্তিত্বে রয়েছেন।
ঈশ্বর যে অস্তিত্বে রয়েছেন, কোথায় আমরা তার প্রমাণ ইব্রীয় ৩:৪) আপনি কি এই বিবৃতির যৌক্তিকতার সঙ্গে একমত? আপনি যখন নিখিলবিশ্বের বিন্যাস, জীবনের উৎপত্তি অথবা পৃথিবীতে থাকা সমস্ত নকশার মধ্যে সবচেয়ে জটিল নকশা, মানুষের মস্তিষ্কের গঠন নিয়ে চিন্তা করেন, তখন আপনি হয়তো এইরকম যুক্তি করেন যে, মানুষের চেয়েও উন্নত কিছু নিশ্চয়ই অস্তিত্বে রয়েছে।
পেতে পারি? আমাদেরকে শুধু আমাদের চারপাশ দেখতে হবে। বাইবেল এইভাবে যুক্তি করে: “কেননা প্রত্যেক গৃহ কাহারও দ্বারা সংস্থাপিত হয়, কিন্তু যিনি সকলই সংস্থাপন করিয়াছেন, তিনি ঈশ্বর।” (কিন্তু প্রকৃতি আমাদেরকে ঈশ্বর সম্বন্ধে যা শেখাতে পারে, সেই ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সৃষ্টির মধ্যে ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ লক্ষ করা, অনেকটা একজন ব্যক্তির পায়ের শব্দ শোনার মতো, যিনি এক বন্ধ দরজার উলটো দিকে রয়েছেন। আপনি জানেন যে, সেখানে কেউ রয়েছেন, কিন্তু তিনি কে? তা জানার জন্য আপনাকে দরজাটা খুলতে হবে। সৃষ্টির পিছনে কে রয়েছেন, তাঁকে শনাক্ত করার জন্য আমাদেরকেও একইরকম কিছু কাজ করতে হবে।
ঈশ্বর বিষয়ক জ্ঞানের জন্য বাইবেল হল একটা দরজা। আপনি যখন সেই দরজা খুলবেন এবং এটির বিস্তারিত কয়েকটা ভবিষ্যদ্বাণী ও সেগুলোর পরিপূর্ণতা বিবেচনা করবেন, তখন আপনি এটার প্রমাণ দেখতে পাবেন যে, ঈশ্বর অস্তিত্বে রয়েছেন। কিন্তু এর চেয়েও বড়ো কথা হল, লোকেদের সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণের বিবরণ প্রার্থনা-শ্রবণকারী কেমন ব্যক্তি, সেটার প্রমাণ দেয়।
প্রার্থনা-শ্রবণকারী কেমন ব্যক্তি?
বাইবেল প্রকাশ করে যে, প্রার্থনা-শ্রবণকারী হলেন এমন একজন ব্যক্তি, যাঁর সম্বন্ধে আপনি জানতে পারেন। নিশ্চিতভাবে একজন ব্যক্তিই শুনতে ও বুঝতে পারেন। এই বিষয়টা পড়া আশ্বাসদায়ক: “হে প্রার্থনা-শ্রবণকারী, তোমারই কাছে মর্ত্ত্যমাত্র আসিবে।” (গীতসংহিতা ৬৫:২) যারা বিশ্বাস সহকারে তাঁর কাছে প্রার্থনা করে, তিনি তাদের প্রার্থনা শোনেন। আর তাঁর একটা নাম রয়েছে। * বাইবেল বলে যে, যিহোবা “দুষ্টদের হইতে দূরে থাকেন, কিন্তু তিনি ধার্ম্মিকদের প্রার্থনা শুনেন।”—হিতোপদেশ ১৫:২৯.
যিহোবার আবেগ-অনুভূতি রয়েছে। তিনি হলেন ‘শান্তির ঈশ্বর’ আর তাঁকে সুখী বা ‘পরম ধন্য ঈশ্বর’ বলা হয়। (২ করিন্থীয় ১৩:১১; ১ তীমথিয় ১:১১) এক সময়ে মন্দতা যখন খুব বেড়ে গিয়েছিল, তখন সেটার প্রতি তাঁর প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে বাইবেল বলে: ‘সদাপ্রভু মনঃপীড়া পাইলেন।’ (আদিপুস্তক ৬:৫, ৬) লোকেদেরকে পরীক্ষা করার জন্য ঈশ্বর দুঃখকষ্ট ঘটান, এই দাবি মিথ্যা। বাইবেল বলে: “ইহা দূরে থাকুক যে, ঈশ্বর দুষ্কার্য্য করিবেন।” (ইয়োব ৩৪:১০) তা সত্ত্বেও, আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, ‘ঈশ্বর যদি সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা হয়ে থাকেন, তাহলে কেন তিনি দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন?’
যিহোবা মানবজাতিকে স্বাধীন ইচ্ছা ব্যবহার করার ক্ষমতা দিয়েছেন আর সেটা আমাদেরকে ঈশ্বর কেমন, সেই সম্বন্ধে কিছু জানায়। কীভাবে আমরা জীবনযাপন করব, সেই বিষয়ে আমাদের বেছে নেওয়ার স্বাধীনতাকে কি আমরা মূল্যবান বলে গণ্য করি না? কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, অনেকেই তাদের স্বাধীনতার অপব্যবহার করে এবং নিজেদের ও অন্যদের জন্য দুঃখকষ্ট নিয়ে আসে। এখন গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করার মতো একটা প্রশ্ন হল: কীভাবে ঈশ্বর মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে না নিয়েও দুঃখকষ্ট দূর করতে পারবেন? পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা এই প্রশ্নটা পরীক্ষা করব। (w১২-E ০৭/০১)
[পাদটীকা]
^ বাংলা বাইবেলে আমরা যাত্রাপুস্তক ৩:১৫ পদে ঈশ্বরের নাম পাই। বাইবেল অনুসারে, ঈশ্বরের নাম হল যিহোবা।
[৫ পৃষ্ঠার বাক্স]
ধর্ম কি আপনার মধ্যে সন্দেহ জাগিয়ে তোলে?
দুঃখের বিষয় যে, ধর্মই অনেকের মধ্যে, একজন সমবেদনাময় প্রার্থনা-শ্রবণকারী যে রয়েছেন, সেই বিষয়ে সন্দেহ জাগিয়ে তোলে। যুদ্ধ, সন্ত্রাসবাদে ধর্মের জড়িত হওয়া এবং শিশু নির্যাতনকে প্রশ্রয় দেওয়া, এমনকী যারা প্রার্থনা করে এমন লোকেদেরকেও এই কথা বলতে পরিচালিত করেছে, “আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না।”
কেন ধর্ম প্রায়ই ক্ষতি নিয়ে আসে? সহজভাবে বললে: মন্দ লোকেরা ধর্মের নামে মন্দ কাজগুলো করে থাকে। বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে, অন্য শক্তিগুলো খ্রিস্টধর্মকে এমন এক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করবে, যেটা ঈশ্বরের ইচ্ছার বিপরীত। প্রেরিত পৌল খ্রিস্টান অধ্যক্ষদের বলেছিলেন: “তোমাদের মধ্য হইতেও কোন কোন লোক উঠিয়া শিষ্যদিগকে আপনাদের পশ্চাৎ টানিয়া লইবার জন্য বিপরীত কথা কহিবে।”—প্রেরিত ২০:২৯, ৩০.
মিথ্যা ধর্মের প্রতি ঈশ্বর খুবই অসন্তুষ্ট। বস্তুতপক্ষে, ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল, ‘যত লোক পৃথিবীতে হত হইয়াছে, সেই সকলের রক্তের’ জন্য মিথ্যা ধর্মকে দায়ী করে। (প্রকাশিত বাক্য ১৮:২৪) যেহেতু মিথ্যা ধর্ম লোকেদেরকে সত্য ঈশ্বর, যিনি প্রেমের মূর্ত প্রতীক, তাঁর সম্বন্ধে শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, তাই ঈশ্বরের চোখে সেই ধর্মগুলো রক্তপাতের দোষে দোষী।—১ যোহন ৪:৮.
যে-ব্যক্তিরা এইরকম ধর্মের উৎপীড়নের শিকার হয়, তাদের জন্য প্রার্থনা-শ্রবণকারী সমবেদনা বোধ করেন। শীঘ্র, মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের প্রেম তাঁকে যিশুর মাধ্যমে সমস্ত ধর্মীয় কপটীর বিচার করতে পরিচালিত করবে। যিশু বলেছিলেন: “সেই দিন অনেকে আমাকে বলিবে, হে প্রভু, হে প্রভু, আপনার নামেই আমরা কি ভাববাণী বলি নাই? . . . তখন আমি তাহাদিগকে স্পষ্টই বলিব, আমি কখনও তোমাদিগকে জানি নাই; হে অধর্ম্মচারীরা, আমার নিকট হইতে দূর হও।” — মথি ৭:২২, ২৩.