প্রকৃত বিশ্বাসী এবং দায়িত্ববান নাগরিক যেভাবে দুটোই হওয়া যায়
প্রকৃত বিশ্বাসী এবং দায়িত্ববান নাগরিক যেভাবে দুটোই হওয়া যায়
যিশুর পরিচর্যার দুটো বৈশিষ্ট্য কী ছিল? প্রথমত, যিশু রাজনৈতিক ব্যবস্থা নয় কিন্তু লোকেদের হৃদয় পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, পর্বতেদত্ত উপদেশে যিশু যে-বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছিলেন, তা লক্ষ করুন। লবণ ও দীপ্তির মতো হওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে কথা বলার একটু আগেই, তিনি তাঁর শ্রোতাদের বলেছিলেন যে, যারা “আত্মাতে দীনহীন” বা তাদের আধ্যাত্মিক চাহিদা সম্পর্কে সচেতন, তারা প্রকৃত সুখী। তিনি আরও বলেছিলেন: “ধন্য যাহারা মৃদুশীল, . . . যাহারা নির্ম্মলান্তঃকরণ, . . . যাহারা মিলন করিয়া দেয়।” (মথি ৫:১-১১) যিশু তাঁর অনুসারীদেরকে, ভালো-মন্দ সম্বন্ধে ঈশ্বরের মানদণ্ড অনুসারে তাদের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি পরিবর্তন করার এবং সর্বান্তঃকরণে ঈশ্বরকে সেবা করার গুরুত্ব বুঝতে সাহায্য করেছিলেন।
দ্বিতীয়ত, যিশু যখন মানুষদেরকে কষ্টভোগ করতে দেখেছিলেন, তখন সহমানবদের প্রতি তাঁর সমবেদনা তাঁকে সাময়িকভাবে তাদের কষ্ট দূর করতে পরিচালিত করেছিল। কিন্তু, সমস্ত দুঃখকষ্ট দূর করা তাঁর লক্ষ্য ছিল না। (মথি ২০:৩০-৩৪) তিনি অসুস্থদের সুস্থ করেছিলেন কিন্তু অসুস্থতা পুরোপুরিভাবে দূর হয়নি। (লূক ৬:১৭-১৯) তিনি নিপীড়িতদের জন্য স্বস্তি নিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু অবিচারের কারণে সবসময়েই দুঃখকষ্ট এসেছে। তিনি ক্ষুধার্তদের খাবার জুগিয়েছিলেন, কিন্তু দুর্ভিক্ষ ক্রমাগত মানবজাতিকে আঘাত করে চলেছে।—মার্ক ৬:৪১-৪৪.
হৃদয় পরিবর্তন করা এবং সাময়িকভাবে দুঃখকষ্ট দূর করা
কেন যিশু রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করার অথবা দুর্দশা পুরোপুরিভাবে দূর করার ওপর নয় বরং হৃদয় পরিবর্তন করার এবং সাময়িকভাবে দুঃখকষ্ট দূর করার ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন? যিশু জানতেন যে, ঈশ্বর সমস্ত মনুষ্য সরকারকে ধ্বংস ও সমস্ত দুঃখকষ্টের কারণগুলোকে দূর করার জন্য ভবিষ্যতে তাঁর রাজ্যকে ব্যবহার করার উদ্দেশ্য করেছেন। (লূক ৪:৪৩; ৮:১) তাই, একবার শিষ্যরা যখন অসুস্থদের সুস্থ করতে আরও বেশি সময় ব্যয় করার জন্য যিশুর কাছে অনুরোধ করেছিল, তখন যিশু তাদের বলেছিলেন: “চল, আমরা অন্য অন্য স্থানে, নিকটবর্ত্তী সকল গ্রামে যাই, আমি সে সকল স্থানেও প্রচার করিব, কেননা সেই জন্যই বাহির হইয়াছি।” (মার্ক ১:৩২-৩৮) যিশু সাময়িকভাবে অনেকের শারীরিক কষ্ট দূর করেছিলেন কিন্তু তিনি ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করা ও শিক্ষা দেওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন।
আজকে, যিহোবার সাক্ষিরা তাদের প্রচার কাজে যিশুকে অনুকরণ করার চেষ্টা করে। প্রয়োজন রয়েছে এমন ব্যক্তিদের ব্যবহারিক সাহায্য প্রদান করার দ্বারা তারা তাদের দুঃখকষ্ট সাময়িকভাবে দূর করার জন্য পরিচালিত হয়। কিন্তু, সাক্ষিরা জগতের অন্যায়-অবিচার পুরোপুরিভাবে দূর করার চেষ্টা করে না। তারা বিশ্বাস করে যে, ঈশ্বরের রাজ্য সমস্ত দুঃখকষ্টের কারণগুলো দূর করবে। (মথি ৬:১০) যিশুর মতো, তারাও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নয় বরং হৃদয় পরিবর্তন করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। সেই মনোভাব বাস্তবসম্মত, কারণ মানুষের মূল সমস্যাগুলো রাজনৈতিক নয় বরং নৈতিক।
দায়িত্ববান নাগরিক
একই সময়ে, যিহোবার সাক্ষিরা এও বিশ্বাস করে যে, উত্তম নাগরিক হওয়া হল তাদের খ্রিস্টীয় দায়িত্ব। তাই, তারা সরকারি কর্তৃপক্ষকে সম্মান করে থাকে। তাদের প্রকাশনাদি ও সাক্ষ্যদানের কাজের মাধ্যমে তারা তাদের প্রতিবেশীদেরকে আইন মেনে চলতে উৎসাহিত করে। কিন্তু, সরকার যখন এমন কিছু দাবি করে, যা ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলোর সঙ্গে সরাসরি সংঘাত ঘটায়, তখন সাক্ষিরা তা মেনে চলে প্রেরিত ৫:২৯; রোমীয় ১৩:১-৭.
না। তারা ‘মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করে।’—বিনামূল্যে বাইবেল শিক্ষার প্রস্তাব দেওয়ার জন্য যিহোবার সাক্ষিরা তাদের এলাকায় সকলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। তাদের এই শিক্ষার ফলে, লক্ষ লক্ষ লোকের হৃদয় পরিবর্তিত হয়েছে। প্রতি বছর, হাজার হাজার লোককে ধূমপান করা, মাতাল হওয়া, নেশাকর ওষুধের অপব্যবহার করা, জুয়াখেলা এবং বাছবিচারহীনভাবে যৌনসম্পর্ক করার মতো ক্ষতিকর অভ্যাসগুলোকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করা হচ্ছে। তারা নৈতিকভাবে দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে উঠেছে, কারণ তারা তাদের জীবনে বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগাতে শিখেছে।
এ ছাড়া, বাইবেলের শিক্ষা পরিবারের সদস্যদের একে অপরের প্রতি তাদের সম্মানকে আরও গভীর করতে এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আর সেইসঙ্গে বাবা-মা ও সন্তানদের মধ্যে এবং সন্তানদের নিজেদের মধ্যে ভাববিনিময়কে উন্নত করতে সাহায্য করে। এই বিষয়গুলোই পারিবারিক বন্ধনকে দৃঢ় করে। পরিবারগুলো যত দৃঢ় হয়, ভাববিনিময়ও তত দৃঢ় হয়।
এই প্রবন্ধগুলোতে যে-বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়েছে, সেগুলো পুনরালোচনা করার পর, এই সম্বন্ধে আপনি কী মনে করেন: সত্য খ্রিস্টানদের কি দায়িত্ববান নাগরিক হওয়া উচিত? হ্যাঁ, তাদের তা হওয়া উচিত। কিন্তু কীভাবে তারা তা হতে পারে? জগতের লবণ ও দীপ্তির মতো হওয়া সম্বন্ধে যিশুর আদেশ মেনে চলে।
যারা খ্রিস্টের এই ব্যবহারিক নির্দেশনাগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করে, তারা নিজেদের ও তাদের পরিবারের আর সেইসঙ্গে যে-সমাজে তারা বাস করে, সেই সমাজের জন্য উপকার নিয়ে আসে। আপনার এলাকায় বর্তমানে বাইবেল শিক্ষার যে-কার্যক্রম চলছে, সেই সম্বন্ধে আপনার এলাকার যিহোবার সাক্ষিরা আপনাকে আরও তথ্য জানাতে পেরে আনন্দিত হবে। * (w১২-E ০৫/০১)
[পাদটীকা]
^ এ ছাড়া, আপনি যদি চান, তাহলে www.pr418.com-তেও যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
[১৮ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
যিশু রাজনৈতিক ব্যবস্থা নয় কিন্তু হৃদয় পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছিলেন
[১৯ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
যিহোবার সাক্ষিরা বিশ্বাস করে যে, উত্তম নাগরিক হওয়া হল তাদের খ্রিস্টীয় দায়িত্ব