আপনি কি অদৃশ্য ঈশ্বরকে দেখতে পান?
“ঈশ্বর আত্মা” বা আত্মিক ব্যক্তি আর তাই তিনি মানুষের চোখে অদৃশ্য। (যোহন ৪:২৪) তবে, বাইবেল জানায় যে, কেউ কেউ এক অর্থে ঈশ্বরকে দেখেছে। (ইব্রীয় ১১:২৭) কীভাবে তা সম্ভব? আপনি কি সত্যিই ‘অদৃশ্য ঈশ্বরকে’ দেখতে পান?—কলসীয় ১:১৫.
আমাদের পরিস্থিতিকে এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে তুলনা করুন, যিনি জন্ম থেকে অন্ধ। অন্ধ বলে কি তিনি তার আশেপাশের জগৎ সম্বন্ধে কোনো ধারণাই লাভ করেন না? একেবারেই না। একজন অন্ধ ব্যক্তি বিভিন্ন উপায়ে তথ্য লাভ করেন, যা তাকে আশেপাশের লোক, বস্তু এবং ঘটনা বুঝতে সাহায্য করে। একজন অন্ধ ব্যক্তি বলেন, “শুধু চোখ দিয়ে নয়, মন দিয়েও দেখা যায়।”
একইভাবে, যদিও আপনি আক্ষরিক চোখ দিয়ে ঈশ্বরকে দেখতে পান না, তবে ‘আপনার হৃদয়ের চক্ষু’ দিয়ে তাঁকে দেখতে পারেন। (ইফিষীয় ১:১৮) তিনটে উপায় বিবেচনা করুন, যেগুলোর মাধ্যমে আপনি তাঁকে দেখতে পারেন।
‘জগতের সৃষ্টিকাল অবধি দৃষ্ট হইতেছে’
একজন অন্ধ ব্যক্তির শ্রবণশক্তি এবং স্পর্শশক্তি সাধারণত প্রবল হয়ে থাকে, যেগুলো তিনি সেই বিষয়গুলো উপলব্ধি করার জন্য ব্যবহার করেন, যেগুলো তিনি দেখতে পান না। একইভাবে, আপনার চারপাশের জগৎ পরীক্ষা করে দেখার এবং যে-অদৃশ্য ঈশ্বর এই জগৎ সৃষ্টি করেছেন, তাঁকে উপলব্ধি করার জন্য আপনি আপনার আক্ষরিক ইন্দ্রিয়গুলো ব্যবহার করতে পারেন। ‘তাঁহার অদৃশ্য গুণ, জগতের সৃষ্টিকাল অবধি তাঁহার বিবিধ কার্য্যে বোধগম্য হইয়া দৃষ্ট হইতেছে।’—রোমীয় ১:২০.
উদাহরণ স্বরূপ, আমাদের এই পৃথিবীর কথা চিন্তা করুন। পৃথিবীকে এমনভাবে সৃষ্টি করা হয়নি, যেখানে শুধুমাত্র কোনোরকমে বেঁচে থাকা যায় বরং এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে জীবন উপভোগ করা যায়। আমাদের গায়ে যখন মৃদু বাতাস লাগে, আমরা যখন রোদের উষ্ণ তাপ অনুভব করি, রসালো ফল আস্বাদন করি অথবা পাখিদের মধুর ডাক শুনি, তখন আমরা আনন্দিত হই। এই দানগুলো কি আমাদের সৃষ্টিকর্তার প্রেমময় যত্ন, কোমলতা এবং উদারতাকে প্রকাশ করে না?
নিখিলবিশ্বে আপনি যা-কিছু দেখতে পান, তা থেকে আপনি ঈশ্বর সম্বন্ধে কী শিখতে পারেন? একটা বিষয় হল, আকাশমণ্ডল ঈশ্বরের শক্তিকে প্রকাশ করে। সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নির্দেশ করে, নিখিলবিশ্বের পরিধি যে কেবল বৃদ্ধিই পাচ্ছে, তা নয় বরং দিনের পর দিন অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে! আপনি যখন রাতের আকাশের দিকে তাকান, তখন এই বিষয়টা চিন্তা করুন: নিখিলবিশ্বে এই পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ার এবং এই বৃদ্ধির হারকে ত্বরান্বিত করার পিছনে যে-শক্তি রয়েছে, সেটার উৎস কী? বাইবেল আমাদের বলে, সৃষ্টিকর্তার “সামর্থ্যের আধিক্য” রয়েছে। (যিশাইয় ৪০:২৬) ঈশ্বরের সৃষ্টি আমাদেরকে দেখায় যে, তিনি হলেন “সর্ব্বশক্তিমান্” অর্থাৎ “পরাক্রমে মহান্।”—ইয়োব ৩৭:২৩.
‘তিনিই তাঁহাকে প্রকাশ করিয়াছেন’
চোখে দেখতে পায় না এমন দুই সন্তানের মা বলেন: “তাদের শেখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল কথা বলা। আপনি যখন সন্তানদের নিয়ে ঘরের বাইরে যান, তখন আপনি যা-কিছু দেখেন, তা ক্রমাগতভাবে তাদের বলতে থাকুন। আপনিই হলেন তাদের চোখ।” একইভাবে, যদিও “ঈশ্বরকে কেহ কখনও দেখে নাই,” তবুও ঈশ্বরের পুত্র যিশু, “যিনি পিতার ক্রোড়ে থাকেন, তিনিই [তাঁহাকে] প্রকাশ করিয়াছেন।” (যোহন ১:১৮) ঈশ্বরের প্রথম সৃষ্টি এবং তাঁর একজাত পুত্র হওয়ায় যিশু স্বর্গীয় বিষয়গুলো জানানোর মাধ্যমে আমাদের “চোখ” হয়ে উঠেছেন। অদৃশ্য ঈশ্বর সম্বন্ধে জানার জন্য তিনি হলেন সবচেয়ে উত্তম উৎস।
যিশু তাঁর পিতার সঙ্গে যুগ যুগ ধরে ছিলেন। তিনি তাঁর পিতা সম্বন্ধে যা শিখিয়েছিলেন, সেগুলোর কিছু লক্ষ করুন:
ঈশ্বর অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। “আমার পিতা এখন পর্য্যন্ত কার্য্য করিতেছেন।”—যোহন ৫:১৭.
ঈশ্বর আমাদের প্রয়োজন সম্বন্ধে জানেন। “তোমাদের কি কি প্রয়োজন, তাহা যাচ্ঞা করিবার পূর্ব্বে তোমাদের পিতা জানেন।”—মথি ৬:৮.
ঈশ্বর সদয়ভাবে আমাদের প্রয়োজন যোগান। ‘তোমাদের স্বর্গস্থ পিতা ভাল মন্দ লোকদের উপরে আপনার সূর্য্য উদিত করেন, এবং ধার্ম্মিকগণের উপরে জল বর্ষান।’—মথি ৫:৪৫.
ঈশ্বর আমাদের প্রত্যেককে মূল্যবান বলে গণ্য করেন। “দুইটী চড়াই পাখী কি এক পয়সায় বিক্রয় হয় না? আর তোমাদের পিতার অনুমতি বিনা তাহাদের একটীও ভূমিতে পড়ে না। কিন্তু তোমাদের মস্তকের কেশগুলিও সমস্ত গণিত আছে। অতএব ভয় করিও না, তোমরা অনেক চড়াই পাখী হইতে শ্রেষ্ঠ।”—মথি ১০:২৯-৩১.
একজন মানুষ, যিনি অদৃশ্য ঈশ্বরকে প্রতিফলিত করেছিলেন
দৃষ্টিশক্তি রয়েছে এমন ব্যক্তিদের চেয়ে অন্ধ ব্যক্তিরা সাধারণত বিভিন্ন বিষয়কে আলাদাভাবে উপলব্ধি করতে পারে। একজন স্বাভাবিক ব্যক্তির কাছে ছায়া হল এমন একটা জায়গা, যেখানে সূর্যের আলো নেই কিন্তু একজন অন্ধ ব্যক্তির কাছে ছায়া হল এমন ঠাণ্ডা জায়গা, যেখানে সূর্যের উত্তাপ নেই। ঠিক যেমন একজন অন্ধ ব্যক্তি ছায়া অথবা সূর্যের আলো দেখতে পায় না, তেমনই আমাদেরও নিজেদের শক্তিতে যিহোবাকে বোঝা সম্ভব নয়। তাই, যিহোবা এমন একজন মানুষকে জুগিয়েছেন, যিনি নিখুঁতভাবে তাঁর পিতার গুণাবলি ও ব্যক্তিত্বকে প্রতিফলিত করেছিলেন।
সেই মানুষ ছিলেন যিশু। (ফিলিপীয় ২:৭) যিশু কেবল তাঁর পিতা সম্বন্ধে কথাই বলেননি কিন্তু সেইসঙ্গে আমাদের দেখিয়েছেন যে, ঈশ্বর কেমন। যিশুর শিষ্য ফিলিপ বলেছিলেন: “প্রভু, পিতাকে আমাদের দেখাউন।” উত্তরে যিশু বলেছিলেন: “যে আমাকে দেখিয়াছে, সে পিতাকে দেখিয়াছে।” (যোহন ১৪:৮, ৯) যিশুর কাজের মাধ্যমে পিতাকে আপনি কীভাবে “দেখতে” পারেন?
যিশু ছিলেন আন্তরিক, নম্র এবং বন্ধুত্বপরায়ণ। (মথি ১১:২৮-৩০) তাঁর উত্তম ব্যক্তিত্ব লোকেদেরকে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট করত। যিশু অন্যদের কষ্টে কষ্ট পেতেন এবং তাদের আনন্দে আনন্দিত হতেন। (লূক ১০:১৭, ২১; যোহন ১১:৩২-৩৫) আপনি যখন বাইবেল থেকে যিশুর বিবরণগুলো পড়েন অথবা শোনেন, তখন আপনার ইন্দ্রিয়গুলো ব্যবহার করুন এবং ঘটনাগুলো মনের চোখে কল্পনা করে দেখুন। লোকেদের সঙ্গে যিশু যেভাবে আচরণ করেছিলেন, তা নিয়ে যদি আপনি ধ্যান করেন, তাহলে আপনি ঈশ্বরের অপূর্ব গুণাবলি আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবেন এবং তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হবেন।
বিভিন্ন তথ্যের সাহায্যে আসল চিত্রটা বোঝা
একজন অন্ধ ব্যক্তি যেভাবে জগৎকে উপলব্ধি করতে পারেন, সেই সম্বন্ধে একজন লেখিকা বলেন: “তিনি বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন উৎস (যেমন, স্পর্শ, ঘ্রাণ, শ্রবণ ও অন্যান্য উৎস) থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন এবং সেগুলোকে একত্রিত করে একটা ধারণা গড়ে তোলেন।” একইভাবে, আপনি যখন ঈশ্বরের সৃষ্টি দেখেন, যিশু তাঁর পিতা সম্বন্ধে যা বলেছিলেন, সেগুলো পড়েন এবং যিশু যেভাবে ঈশ্বরের গুণাবলি প্রতিফলিত করেছিলেন, তা বিশ্লেষণ করেন, তখন যিহোবা সম্বন্ধে এক চমৎকার চিত্র তৈরি হয়। তিনি আপনার কাছে আরও বাস্তব হয়ে ওঠেন।
প্রাচীনকালে বসবাসরত ইয়োবের ক্ষেত্রেও ঠিক তা-ই হয়েছিল। প্রথমে তিনি ‘যাহা বোঝেন নাই,’ সেটাই বলেছিলেন। (ইয়োব ৪২:৩) কিন্তু, পরবর্তী সময়ে ঈশ্বরের অপূর্ব সৃষ্টি নিয়ে মনোযোগের সঙ্গে বিবেচনা করার পর, ইয়োব এই কথা বলতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন: “পূর্ব্বে তোমার বিষয় কর্ণে শুনিয়াছিলাম, কিন্তু সম্প্রতি আমার চক্ষু তোমাকে দেখিল।”—ইয়োব ৪২:৫.
‘তুমি যদি যিহোবার অন্বেষণ কর, তবে তিনি তোমাকে আপনার উদ্দেশ পাইতে দিবেন’
আপনার ক্ষেত্রেও একই বিষয় সত্য হতে পারে। বাইবেল বলে, “তুমি যদি [যিহোবার] অন্বেষণ কর, তবে তিনি তোমাকে আপনার উদ্দেশ পাইতে দিবেন।” (১ বংশাবলি ২৮:৯) যিহোবার সাক্ষিরা আপনাকে অদৃশ্য ঈশ্বরের অন্বেষণ করতে এবং তাঁর উদ্দেশ খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পেরে আনন্দিত হবেন। ▪ (w১৪-E ০৭/০১)