সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বাইবেল জীবনকে পরিবর্তন করে

বাইবেলের সত্য আমাকে উত্তর খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে

বাইবেলের সত্য আমাকে উত্তর খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে
  • জন্ম: ১৯৮৭ সাল

  • দেশ: আজারবাইজান

  • ইতিহাসে: আমার বাবা ছিলেন মুসলমান আর মা যিহুদি

আমার অতীত:

আমি আজারবাইজানের বাকুতে জন্মগ্রহণ করি। আমি আমার বাবা-মায়ের দুই সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে ছোটো। আমার বাবা ছিলেন মুসলমান আর মা যিহুদি। আমার বাবা-মা একে অন্যকে ভালোবাসতেন ও একে অন্যের ধর্মীয় বিশ্বাস মেনে নিয়েছিলেন। বাবা যখন রমজানের সময় রোজা রাখতেন, তখন মা বাবাকে সাহায্য করতেন আর মা যখন নিস্তারপর্ব পালন করতেন, তখন বাবা মাকে সাহায্য করতেন। আমাদের ঘরে কোরান, তোরাহ্‌ এবং বাইবেল ছিল।

আমি নিজেকে মুসলমান বলে মনে করতাম। যদিও আমি কখনো ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন করিনি, কিন্তু কিছু বিষয় আমাকে ভাবিয়ে তুলত। আমি চিন্তা করতাম, ‘কেন ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করেছিলেন? কেন তিনি একজন ব্যক্তিকে সারা জীবন কষ্টভোগ করতে এবং পরে চিরকাল নরকে যন্ত্রণাভোগ করতে দেন?’ যেহেতু লোকেরা বলত, সবই ঈশ্বরের ইচ্ছায় ঘটে, তাই আমি ভাবতাম, ‘ঈশ্বর কি লোকেদের উপর সমস্যা নিয়ে আসেন এবং এরপর তাদের কষ্ট পেতে দেখে আনন্দ পান?’

১২ বছর বয়স থেকে আমি নামাজ পড়তে অর্থাৎ মুসলমানদের রীতি অনুসারে দিনে পাঁচ বার প্রার্থনা করতে শুরু করি। সেই সময়ে, বাবা আমার দিদিকে এবং আমাকে একটা যিহুদি স্কুলে ভরতি করান। অন্যান্য বিষয় ছাড়াও আমদেরকে তোরাহ্‌তে উল্লেখিত রীতিনীতি এবং ইব্রীয় ভাষা শেখানো হতো। প্রতিদিন ক্লাস শুরু হওয়ার আগে যিহুদি রীতি অনুসারে আমাদের প্রার্থনা করতে হতো। তাই, আমি সকালে ঘরে নামাজ পড়তাম এবং পরে স্কুলে যিহুদি প্রার্থনায় যোগ দিতাম।

আমি ব্যাকুল হয়ে আমার প্রশ্নের যুক্তিসংগত উত্তর খোঁজার চেষ্টা করতাম। আমি স্কুলে রব্বিদের বার বার জিজ্ঞেস করতাম: “কেন ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন? আমার বাবা যে মুসলমান, এই বিষয়টাকে তিনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন?” আমি খুব কমই উত্তর পেতাম এবং সেগুলো অযৌক্তিক হওয়ায় আমি তাতে খুশি হতাম না।

বাইবেল যেভাবে আমার জীবনকে পরিবর্তন করেছে:

২০০২ সালে ঈশ্বরের উপর থেকে আমার বিশ্বাস উঠে যায়। আমাদের পরিবার জার্মানিতে চলে যাওয়ার মাত্র এক সপ্তাহ পর আমার বাবার স্ট্রোক হয় আর তিনি কোমায় চলে যান। ইতিমধ্যেই আমি অনেক বছর ধরে আমার পরিবারের সুস্বাস্থ্য এবং মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করে এসেছি। যেহেতু আমি দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলাম যে, একমাত্র সর্বশক্তিমানেরই জীবন এবং মৃত্যুর উপর ক্ষমতা রয়েছে, তাই আমি প্রতিদিন আমার বাবার জন্য প্রার্থনা করতাম। আমি ভেবেছিলাম, ‘ঈশ্বরের কাছে একটা ছোট্ট মেয়ের আন্তরিক ইচ্ছা পূর্ণ করা নিশ্চয়ই কোনো বড়ো ব্যাপার নয়।’ আমি একেবারে নিশ্চিত ছিলাম, তিনি আমার ইচ্ছা পূর্ণ করবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, আমার বাবা মারা যান।

ঈশ্বরের উদাসীন মনোভাব দেখে আমি প্রচণ্ড আঘাত পাই এবং একেবারে ভেঙে পড়ি। আমি যুক্তি করি, ‘হয় আমি ভুলভাবে প্রার্থনা করছি নয়তো ঈশ্বর বলে কেউ নেই।’ আমি হতবাক হয়ে পড়ি এবং এর ফলে নামাজ পড়া বন্ধ করে দিই। অন্যান্য ধর্মগুলোও ঠিক যুক্তিসংগত বলে মনে হয়নি আর তাই আমি ধরে নিই যে, ঈশ্বর বলে কেউ নেই।

ছয় মাস পরে, যিহোবার সাক্ষিরা আমাদের দরজায় কড়া নাড়ে। যেহেতু আমি এবং আমার দিদি খ্রিস্টধর্মকে ততটা পছন্দ করতাম না, তাই আমরা নম্রভাবে তাদেরকে ভুল হিসেবে প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম। আমরা তাদেরকে জিজ্ঞেস করি: “খ্রিস্টানরা কীভাবে যিশু, ক্রুশ, মরিয়ম এবং অন্যান্য প্রতিমার উপাসনা করতে পারে, যখন কিনা সেটা দশ আজ্ঞার বিরুদ্ধে?” সেই সাক্ষিরা শাস্ত্র থেকে যুক্তিসংগত প্রমাণ দেখান যে, সত্য খ্রিস্টানদের প্রতিমাপূজা করা উচিত নয় এবং শুধুমাত্র ঈশ্বরের কাছেই প্রার্থনা করা উচিত। আমি এতে একেবারে অবাক হয়ে যাই।

তখন আমরা তাদের জিজ্ঞেস করি: “ত্রিত্ব সম্বন্ধে আপনারা কী বলেন? যিশু যদি ঈশ্বর হন, তাহলে কীভাবে তিনি পৃথিবীতে বেঁচে ছিলেন এবং মানুষের হাতে মারা গিয়েছিলেন?” আবারও তারা বাইবেল থেকে ব্যাখ্যা করে, যিশু ঈশ্বর নন এবং তিনি ঈশ্বরের সমতুল্যও নন। সেই সাক্ষিরা ব্যাখ্যা করেন যে, এই কারণেই তারা ত্রিত্বে বিশ্বাস করেন না। এটা শুনে আমি অবাক হয়ে চিন্তা করি, ‘এরা সত্যিই অদ্ভুত ধরনের খ্রিস্টান।’

তা সত্ত্বেও, আমি তাদের কাছে জানতে চাই, কেন লোকেরা মারা যায় এবং কেন ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন। সেই সাক্ষিরা আমাকে জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে * নামক বইটা দেন, যেখানে আমার প্রশ্ন নিয়ে একেকটা অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। তারা তখনই আমার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেন।

প্রত্যেকটা অধ্যয়ন পর্বে আমি আমার প্রশ্নগুলোর যুক্তিযুক্ত বাইবেলভিত্তিক উত্তর খুঁজে পাই। আমি জানতে পারি, ঈশ্বরের নাম হল যিহোবা। (যাত্রাপুস্তক ৩:১৫) তাঁর প্রধান গুণ হল নিঃস্বার্থ প্রেম। (১ যোহন ৪:৮) তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছিলেন যাতে তারাও জীবন উপভোগ করতে পারে। আমি বুঝতে পারি, যদিও ঈশ্বর অবিচার থাকতে দিয়েছেন তবুও তিনি এটা ঘৃণা করেন এবং শীঘ্রই এটাকে চিরকালের জন্য দূর করে দেবেন। আমি শিখি যে, আদম ও হবার বিদ্রোহ মানুষের জন্য কত ক্ষতি নিয়ে এসেছে। (রোমীয় ৫:১২) সেই বিদ্রোহের দুঃখজনক পরিণতির মধ্যে একটা হল মৃত্যুতে প্রিয়জনদের হারানো, যেমন আমি আমার বাবাকে হারিয়েছি। কিন্তু, আসন্ন নতুন জগতে ঈশ্বর এইরকম মর্মান্তিক ঘটনা দূর করবেন এবং যারা মারা গিয়েছে, তারা সেখানে জীবন ফিরে পাবে।—প্রেরিত ২৪:১৫.

বাইবেলের সত্য আমাকে উত্তর খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে। আমি আবারও ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করতে শুরু করি। আমি যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে যত বেশি জানতে শুরু করি, ততই আমি বুঝতে পারি যে, তাদের এক বিশ্বব্যাপী ভ্রাতৃসমাজ রয়েছে। তাদের একতা এবং প্রেম আমার উপর গভীর ছাপ ফেলেছিল। (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫) যিহোবা সম্বন্ধে শেখার পর, আমি তাঁকে সেবা করার জন্য অনুপ্রাণিত হই আর তাই, আমি একজন যিহোবার সাক্ষি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। আমি ২০০৫ সালের জানুয়ারি মাসের ৮ তারিখে বাপ্তিস্ম নিই।

আমি যেভাবে উপকৃত হয়েছি:

বাইবেলের যুক্তিগুলোর কারণে জীবনের প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গি এখন আরও ভালো হয়েছে। ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া বিশ্বাসযোগ্য যুক্তিগুলো মনের শান্তি এনে দিয়েছে। ঈশ্বরের বাক্যে প্রতিজ্ঞাত পুনরুত্থানের আশার কারণে আমি আমার বাবাকে আবার দেখতে পাওয়ার আশা রাখি আর এটা থেকে অনেক আনন্দ এবং সান্ত্বনা লাভ করি।—যোহন ৫:২৮, ২৯.

ছয় বছর আগে আমি আমার ঈশ্বর ভয়শীল স্বামী জনাথনকে বিয়ে করি এবং আমরা আমাদের বিয়েতে অনেক সুখী। আমরা দুজনেই শিখেছি, ঈশ্বর বিষয়ক সত্য যুক্তিসংগত ও সহজসরল আর সেইসঙ্গে এক অমূল্য সম্পদ। এই কারণে আমরা আমাদের বিশ্বাস এবং অপূর্ব আশা সম্বন্ধে অন্যদেরকে জানাতে ভালোবাসি। এখন আমি জানি, যিহোবার সাক্ষিরা ‘অদ্ভুত’ নয়, কিন্তু তারাই হল সত্য খ্রিস্টান। ▪ (w১৫-E ০১/০১)

^ অনু. 15 যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত কিন্তু এখন আর ছাপানো হয় না।