সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের শর্ত অনুসারে তাঁকে সেবা করা

ঈশ্বরের শর্ত অনুসারে তাঁকে সেবা করা

ঈশ্বরের শর্ত অনুসারে তাঁকে সেবা করা

যীশু প্রার্থনাতে ঈশ্বরকে বলেছিলেন: “আর ইহাই অনন্ত জীবন যে তাহারা তোমাকে একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে যীশু খৃষ্টকে জানিতে পায়।” (যোহন ১৭:৩) কি ধরনের জ্ঞান? “[ঈশ্বরের] ইচ্ছা এই যেন সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায় ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে।” (১ তীমথিয় ২:৪) দি অ্যামল্পিফায়েড বাইবেল পরবর্ত্তী কথাটি এইভাবে অনুবাদ করে: “[ঐশিক] সত্য শুদ্ধ এবং সঠিকরূপে জানুন।”

কাজেই ঈশ্বর চান যে আমরা তাঁকে এবং তাঁর উদ্দেশ্য ঐশিক সত্যের সাথে মিল রেখে সঠিকরূপে জানি। এবং পবিত্র বাইবেল, ঈশ্বরের বাক্য, ঐ সত্যের উৎস। (যোহন ১৭:১৭; ২ তীমথিয় ৩:​১৬, ১৭) লোকেরা যখন বাইবেল ঈশ্বর সম্বন্ধে কি বলে সঠিকরূপে জানতে পারে, তখন তারা রোমীয় ১০:​২, ৩ পদে উল্লিখিত ব্যক্তিদের মত হওয়া এড়িয়ে চলে, যাদের “ঈশ্বরের জন্য উদ্যোগ আছে, কিন্তু সঠিক জ্ঞান অনুসারে নয়।” বা শমরীয়দের মত যাদের বিষয়ে যীশু বলেছিলেন: “তোমরা যাহা জান না, তাহার ভজনা করিতেছ।”​—⁠যোহন ৪:২২

কাজেই, আমরা যদি ঈশ্বরের অনুমোদন চাই, আমাদের নিজেদের প্রশ্ন করা উচিৎ: ঈশ্বর নিজের সম্বন্ধে কি বলেন? তিনি কিরূপে উপাসনা চান? তাঁর উদ্দেশ্য কি এবং কিরূপে আমাদের সেগুলির উপযোগী করা উচিৎ? সত্যের সঠিক জ্ঞান আমাদের ঐ প্রশ্নগুলির সঠিক উত্তর দেয়। তারপরে আমরা ঈশ্বরকে তাঁর শর্ত অনুসারে আরাধনা করতে পারি

ঈশ্বরকে অসম্মান করা

“যাহারা আমাকে গৌরবান্বিত করে, তাহাদিগকে আমি গৌরবান্বিত করি।” ঈশ্বর বলেন। (১ শমূয়েল ২: ৩০) কাউকে তাঁর সমান বলাতে কি ঈশ্বরের সম্মান হয়? এতে কি তাঁর সম্মান হয় মরিয়মকে “ঈশ্বরের মা” বলা এবং “স্রষ্টা ও তাঁর সৃষ্টির . . . মধ্যস্হ জ্ঞান করা,” যেমন নিউ ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া করে থাকে? না, এই ধারণাগুলিতে ঈশ্বরের অসম্মান হয়। কেউ তাঁর সমান নয়; এবং তাঁর মাংসিক মাতাও ছিল না, যেহেতু যীশু ঈশ্বর ছিলেন না। এবং “মধ্যস্থও” নেই কারণ ঈশ্বর “মনুষ্য এবং ঈশ্বরের মধ্যে একজন মধ্যস্থ” নিযুক্ত করেছেন, তিনি হলেন যীশু।​—⁠১ তীমথিয় ২:৫; ১ম যোহন ২:​১, ২

নিঃসন্দেহে, ত্রিত্ব মতবাদ ঈশ্বরের প্রকৃত পদ সম্বন্ধে লোকদের বোধগম্যতাকে করেছে মিশ্র এবং গন্ডগোলে। এটা নিখিল সৃষ্টির সার্বভৌম যিহোভা ঈশ্বরকে সঠিকরূপে জানতে এবং তাঁর শর্ত অনুসারে তাঁকে সেবা করা হতে বিরত করে। যেমন ঈশ্বরতত্ত্ববিদ হ্যানস কুং বলেছিলেন: “ঈশ্বর এক এবং অনুপম এই ধারনাতে কেন কেউ যোগ দিতে চাবে যা সেই এক এবং অনুপম এই ধারণাকে কেবল তরল এবং বাতিল করতে পারে”? কিন্তু ত্রিত্বে বিশ্বাস সেটাই করেছে।

ত্রিত্বে বিশ্বাসকারীরা “ঈশ্বরের সঠিক জ্ঞান ধারণ করে না।” (রোমীয় ১:২৮) ঐ পদ আরো বলে: “তেমনি ঈশ্বর তাহাদিগকে অনুচিৎ ক্রিয়া করিতে ভ্রষ্ট মতিতে সমর্পণ করিলেন।” ২৯ থেকে ৩১পদ ঐ “অনুচিৎ” কাজগুলির কিছু কিছু তালিকা দিয়েছে, যেমন, ‘বধ, বিবাদ, ছল, স্নেহরহিত, নির্দ্দয়’। ত্রিত্ব যারা মানে সেই ধর্ম্মগুলি এই বিষয়গুলি অভ্যাস করে।

উদাহরণ স্বরূপ ত্রিত্বের শিক্ষা পরিত্যাগকারীদের ত্রিত্ববাদীরা নির্য্যাতন করেছে এবং এমন কি হত্যা করেছে। তারা আরো এগিয়ে গেছে। তারা যুদ্ধে তাদের সহত্রিত্ববাদীদের হত্যা করেছে। এর থেকে আর কি ‘অনুচিৎ’ হতে পারে যে ক্যাথলিক ক্যাথলিকদের হত্যা করেছে, অরথোডক্স অরথোডক্সদের হত্যা করছে, প্রটেস্টান্ট প্রটেস্টান্টকে হত্যা করেছে–ঐ সমস্তই একই ত্রিত্ববাদী ঈশ্বরের নামে?

হ্যাঁ, যীশু সরলভাবে বলেছিলেন: “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম কর: তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৫) ঈশ্বরের বাক্য এই কথার উপরে আরো প্রসারণ করে বলে: “ইহাতে ঈশ্বরের সন্তানগণ এবং দিয়াবলের সন্তানগণ প্রকাশ হইয়া পড়ে; যে কেহ ধর্ম্মাচরণ না করে এবং যে ব্যক্তি আপন ভ্রাতাকে প্রেম না করে, সে ঈশ্বরের লোক নয়।” এতে যারা তাদের আত্মিক ভাইদের নিহত করে তাদের “কইনের সাথে তুলনা করেছে যে সেই দুষ্ট ব্যক্তি [শয়তানের] লোক এবং আপন ভ্রাতাকে বধ করিয়াছিল।”​—⁠১ যোহন ৩:​১০-১২

এইরূপে ঈশ্বর সন্বন্ধে গোলযোগপূর্ণ শিক্ষা লোকদের তাঁর নীতি লঙ্ঘনে নিয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে, সারা খৃষ্টজগতে যা ঘটেছে তা ড্যানিস ঈশ্বরতত্ত্ববিদ সারেন কির্কগার্ড বর্ণনা করেন: “খৃষ্টীয়জগত নিজের অজ্ঞাতেই খৃষ্টতত্ত্ব পরিত্যাগ করেছে।”

প্রেরিত পৌলের লেখার সাথে খৃষ্টীয় জগতের আত্মিক অবস্থা মিলে যায়: “তাহারা স্বীকার করে যে, ঈশ্বরকে জানে কিন্তু কার্য্যে তাঁহাকে অস্বীকার করে, তাহারা ঘৃনাস্পদ ও অবাধ্য এবং সমস্ত সৎ ক্রিয়ার পক্ষে অপ্রামাণিক।”​—⁠তীত ১:১৬

শীঘ্রই ঈশ্বর যখন এই যুগের শেষ আনবেন ত্রিত্ববাদী খৃষ্টজগৎকে হিসাব দিতে ডাকা হবে। এবং সে ঈশ্বর অসম্মানকারী মতবাদ এবং কার্য্য সকলের জন্য খুব খারাপভাবে বিচারিত হবে।​—⁠মথি ২৪:​১৪, ৩৪; ২৫:​৩১-৩৪, ৪১, ৪৬; প্রকাশিত বাক্য ১৭:​১-৬, ১৬; ১৮:​১-৮, ২০, ২৪; ১৯:​১৭-২১

ত্রিত্বকে পরিত্যাগ করুন

ঈশ্বরের সত্যের সাথে কোন আপোস করা যায় না। সুতরাং, ঈশ্বরকে তাঁর শর্ত অনুসারে সেবা করার অর্থ ত্রিত্বের মতবাদকে পরিত্যাগ করা। ভাববাদীরা, যীশু, প্রেরিতেরা এবং প্রাথমিক খৃষ্টীয়ানরা যা বিশ্বাস করত এবং শিক্ষা দিত এটা তার বিরুদ্ধে। ঈশ্বর তাঁর অনুপ্রাণিত বাক্যে তাঁর নিজের সম্বন্ধে যা বলেছেন এটা তার বিপরীত। এইরূপে তিনি উপদেশ দেন: “এটা জ্ঞাত থেক যে আমিই একমাত্র ঈশ্বর এবং আমার মত আর কেউ নাই।”​—⁠যিশাইয় ৪৬:৯ টেভ

ঈশ্বরকে গন্ডোগোলে এবং রহস্যজনক করে তুলে তাঁকে সেবা করা যায় না। পরন্ত্ত, লোকেরা যতই ঈশ্বর এবং তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে গন্ডগোলে থাকবে ততই ঈশ্বরের শত্রুর পক্ষে সেটা ভাল। সে হল শয়তান দিয়াবল, ‘এই যুগের দেব।’ এই ব্যক্তি অবিশ্বাসীদের মন অন্ধ করতে মিথ্যা শিক্ষাগুলিকে তুলেছে। (২ করিন্থীয় ৪:৪) এবং ত্রিত্বের মতবাদ পুরহিতদের ইচ্ছাকে পুরন করে যারা লোকদের উপরে প্রতিপত্তি বজায় রাখতে চায়, কারণ তারা দেখাতে চায় যে কেবলমাত্র ঈশ্বরতত্ত্ববিদরাই এটা বুঝতে পারে।–দেখুন যোহন ৮:৪৪

ঈশ্বর সম্বন্ধে জ্ঞান অনেক সান্ত্বনা নিয়ে আসে। এটা আমাদের ঈশ্বরের বাক্য বিরোধী শিক্ষা এবং ধর্ম্মভ্রষ্ট সংগঠনগুলি থেকে মুক্ত করে। যীশু যেমন বলেছিলেন: “তোমরা সত্য জানিবে এবং সেই সত্য তোমাদিগকে স্বাধীন করিবে।”​—⁠যোহন ৮:৩২

ঈশ্বরকে সর্বশক্তিমানরূপে সম্মান করে এবং তাঁর শর্ত্ত অনুসারে সেবা করে, আমরা সেই বিচার এড়াতে পারি যা শীঘ্রই তিনি ধর্ম্মভ্রষ্ট খষ্টজগতের উপরে আনবেন। অপরদিকে, এই যুগের শেষ প্রাপ্ত হলে ঈশ্বরের করুণার প্রতি আমরা দৃষ্টি দিতে পারি: “এই জগৎ এবং তার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে, কিন্তু যে ব্যাক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে সে চিরস্হায়ী।”১ যোহন ২:১৭

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]

ফ্রান্সের শতাব্দী পুরাতন এই মুর্ত্তি ত্রিত্বের দ্বারা “কুমারী” মেরীর অভিষেককে বর্ণনা করে। ত্রিত্বে বিশ্বাস “ঈশ্বরের মা” রূপে মেরীকে শ্রদ্ধা দিতে পরিচালিত করেছে