সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বর এবং যীশু সম্বন্ধে বাইবেল কি বলে?

ঈশ্বর এবং যীশু সম্বন্ধে বাইবেল কি বলে?

ঈশ্বর এবং যীশু সম্বন্ধে বাইবেল কি বলে?

এত্ব সম্বন্ধে পূর্ব্বরচিত কোন ধারনা ব্যাতিরেকে লোকেরা যদি বাইবেল প্রথম থেকে শেষ পর্য্যন্ত পড়ে, তবে কি এরূপ কোন ধারনাতে তারা নিজেরাই পৌছাবে? মোটেই না।

একজন নিরপেক্ষ পাঠকের কাছে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয় তা হল ঈশ্বরই সর্ব্বশক্তিমান, স্রষ্টা, অন্য যে কোন কেউ থেকে পৃথক এবং আলাদা, এবং তাই যীশুও এমনকি তাঁর মনুষ্যপূর্ব্ব অস্তিত্বেও পৃথক এবং আলাদা, সৃষ্টব্যক্তি, ঈশ্বরের অধীন।

ঈশ্বর এক, তিন নয়

ঈশ্বর এক, বাইবেলের এই শিক্ষাকে বলা হয় একেশ্বরবাদ। আর গির্জ্জা সংক্রান্ত ইতিহাসের অধ্যাপক এল. এল. পাইন নির্দ্দেশ করেন যে একেশ্বরবাদ তার শুদ্ধ অর্থে ত্রিত্বের সমর্থন করে না: “পুরাতন নিয়ম কঠোর অর্থে একেশ্বরবাদী। ঈশ্বর এক ব্যক্তি। ত্রিত্ব সেখানে পাওয়া যেতে পারে. . . সেটা সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন।”

যীশু পৃথিবীতে আসার পরে কি এই একেশ্বরবাদের পরিবর্ত্তন হয়েছে? পাইন উত্তর করেন: “এই বিষয়ে পুরাতন এবং নূতন নিয়মে কোন ভাঙ্গন নেই। একেশ্বরবাদের রীতি চলতে থাকে। যীশু যিহুদী ছিলেন, যিহুদী পিতামাতার দ্বারা পুরাতন নিয়মের শাস্ত্রাবলীতে শিক্ষিত হন। তাঁর শিক্ষা ছিল খাঁটি যিহুদীর মত; একটি নূতন সুসমাচার বটে, কিন্তু নূতন ঈশ্বরতত্ত্ব নয় এবং তিনি যিহুদী একেশ্বরবাদের মহান পদকে নিজস্ব বিশ্বাসরূপে গ্রহণ করেন: ‘হে ইস্রায়েল, শুন, আমাদের ঈশ্বর প্রভু এক ঈশ্বর।’

ঐ কথাগুলি দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪ পদে পাওয়া যায়। দি ক্যাথলিক নিউ যেরূশালেম বাইবেল (এন জে বি) এখানে পাঠ করে: “ইস্রায়েল শুন: ইয়াওয়ে আমাদের ঈশ্বর এক, একমাত্র ইয়াওয়ে।” a ঐ পদের ব্যাকরণে “এক” শব্দের কোন বহুবচনের আকার নেই যা প্রস্তাব করতে পারে যে এতে একজন ব্যক্তি ছাড়া আরো কিছু বুঝাতে পারে।

খৃষ্টীয় প্রেরিত পৌল, এমনকি যীশুর পৃথিবীতে আসার পরও, ঈশ্বরের প্রকৃতি সম্বন্ধে কোন পরিবর্ত্তনের নির্দ্দেশ দেন নি। তিনি লিখেছিলেন: “ঈশ্বর এক”।–গালাতীয় ৩:​২০; আরো দেখুন ১ করিন্থীয় ৮:​৪–৬

সমগ্র বাইবেলে হাজার হাজার বার, ঈশ্বরকে এক ব্যক্তি বলে আখ্যাত করা হয়েছে। তিনি যখন কথা বলেন, তখন একজন অবিভক্ত ব্যক্তিরূপেই বলেন। বাইবেল এই বিষয়ে আর স্পষ্ট হতে পারে না। ঈশ্বর যেমন বলেন: “আমি যিহোবা, ইহাই আমার নাম; আমি আপন গৌরব অন্যকে দিব না”। (যিশাইয়া ৪২:​ ৮)“আমি ইয়াওয়ে তোমাদের ঈশ্বর. . . আমি ব্যতিরেকে তোমার অন্য দেবতা না থাকুক”। (বাঁকা অক্ষর আমাদের)–যাত্রাপুস্তক ২০:​২, ৩, জেবি।

তিনি যদি প্রকৃতই তিন ব্যক্তি হবেন তবে কেন ঈশ্বর–অনুপ্রাণীত বাইবেল লেখকেরা সকলে ঈশ্বরকে এক ব্যক্তি বলেন? লোকদের বিপথে নিয়ে যাত্তয়া ছাড়া এতে আর কি উদ্দেশ্য সম্পন্ন হতে পারে? নিশ্চিতই, ঈশ্বর যদি তিন ব্যক্তির গঠিত হন, তিনি তাঁর বাইবেল লেখকদের প্রচুররূপে স্পষ্ট করবেন যাতে এই বিষয় কোন সন্দেহ না থাকতে পারে। অন্ততঃপক্ষে গ্রীক শাস্ত্রাবলীর লেখকেরা যাদের ঈশ্বরের পুত্রের সাথে ব্যক্তিগত মেলামেশার সুযোগ হয়েছিল তারা সেটা করত। কিন্তু তারা করে নাই।

পরন্তু, বাইবেল লেখকেরা প্রচুররূপে যা স্পষ্ট করেছেন তা হল ঈশ্বর এক ব্যক্তি-একজন অনুপম, অবিভাজ্য ব্যক্তি যার সমান কেউ নেইঃ “আমিই যিহোবা, আর কেহ নয়। আমি ব্যতীত আর ঈশ্বর নাই।” (যিশাইয় ৪৫:​৫) “আর তুমি, যাঁহার নাম যিহোবা, একা তুমি সমস্ত পৃথিবীর উপরে পরাৎপর।”–গীতসংহিতা ৮৩:​১৮

বহুবচনের ঈশ্বর নহেন

যীশু ঈশ্বরকে “একমাত্র সত্য ঈশ্বর বলেছেন’’। (যেহন১৭:​৩) তিনি কখনও ঈশ্বরকে বহু ব্যক্তির এক দেবতা বলেননি। সেইজন্যই বাইবেলে কোথাত্ত যিহোবা ছাড়া আর কাউকেই সর্ব্বশক্তিমান বলা হয় না। নতুবা এতে “সর্ব্বশক্তিমান” শব্দের অর্থ বাতিল হয়ে যায়। যীশু বা পবিত্র আত্মা কাউকেই কখনও তা বলা হয় নাই, কারণ যিহোবাই একমাত্র সর্ব্বপ্রধান। আদিপুস্তক ১৭:​১ পদে তিনি ঘোষনা করেনঃ “আমি সর্ব্বশক্তিমান ঈশ্বর।” যাত্রা পুস্তক ১৮:​১১ পদ বলেঃ “অন্যান্য সকল দেব হইতে যিহোবা মহান।”

ইব্রীয় শাস্তাবলীতে, ইলোহা (দেবতা) শব্দের দুইটি বহুবচনের আকৃতি আছে, যথা ইলোহিম (দেবতা সকল) এবং ইলোহে (দেবতা সকলের)। এই বহুবচনের আকৃতিগুলি সাধারণতঃ যিহোবার প্রতি উল্লেখ করে, যে ক্ষেত্রে তাদেরকে একবচনে যেমন “ঈশ্বর” এইরূপে অনুবাদ করা হয়। এই বহুবচনের আকৃতিগুলি কি ত্রিত্বের নির্দ্দেশ করে? না তারা করে না। এ ডিকসেনারী অফ দি বাইবেল, উইলিয়াম স্মিত বলেন: “(ইলোহিম) ঈশ্বরতত্ত্বের তিন ব্যক্তির প্রতি উল্লেখ করে এই বিলাসপূর্ণ ধারনা এখন পণ্ডিতদের মধ্যে মোটেই সমর্থন পায় না। এটা ব্যাকরণ বিশারদদের কথা অনুসারে হয় মহত্ত্বের বহুবচন নতুবা ঐশিক শক্তির সম্পূর্ণতাকে নির্দ্দেশ করে, ঈশ্বর কর্ত্তৃক প্রকাশিত শক্তি সকলের সমষ্টি।

ইলোহিম সম্বন্ধে দি আমেরিকান জারনাল অফ সেমেটিক ল্যাংগুজুয়েস এন্ড লিটারেচার বলে: “এটা সর্ব্বদা একবচনের ক্রিয়া বিধেয়রূপে অনুবাদ করা হয় এবং একবচনের বিশেষণ গুন নেয়” উদাহরণ স্বরূপ, ইলোহিম উপাধি সৃষ্টি বিবরণীতে ৩৫ বার ব্যবহৃত হয়েছে এবং প্রতি সময়ে ঈশ্বর কি বলেছিলেন এবং করেছিলেন বর্ণনা করতে ক্রিয়াটি একবচনের। (আদিপুস্তক ১:​১–২:​৪) এরূপে ঐ সাহিত্যের উপসংহারে বলা হয়: “(ইলোহিমকে) অবশ্যই বিশালত্ব এবং মহত্বকে নির্দ্দেশ করতে প্রগাঢ় বহুবচনে ব্যাখ্যা করতে হবে।”

ইলোহিম অর্থে “ব্যাক্তিগণ” বুঝায় না, কিন্তু “দেবতাগণ।” কাজেই যারা তর্ক করে যে এই শব্দটি ত্রিত্ত্বকে বুঝায় তারা নিজেদেরকে বহু ঈশ্বরবাদী করে, এক ঈশ্বরের বেশী উপাসনাকারী। কেন? কারণ এর অর্থ বুঝাবে ত্রিত্বে তিন ঈশ্বর আছে। কিন্তু ত্রিত্বের প্রায় সব সমর্থনকারীরা এই দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিত্যাগ করে যে ত্রিত্ব তিনটি আলাদা ঈশ্বর দিয়ে তৈরী।

বাইবেল “ইলোহিম” এবং “ইলোহে” শব্দদ্বয় কয়েকটি মিথ্যা মূর্ত্তির দেবতার উল্লেখ করার সময়েও ব্যবহার করে। (যাত্রাপুস্তক ১২:​১২;২০:​২৩) কিন্তু অন্য সময়ে এটা একটি মিথ্যা দেবতার প্রতি উল্লেখ করতে পারে, যেমন ফিলিষ্টীয়রা “তাদের দেবতা (ইলোহে) দাগোনের কথা উল্লেক্ষ করে।” (বিচার কর্ত্তৃক ১৬:​২৩, ২৪) বালকে “একটি দেবতা (ইলোহিম)” বলা হয়।”(১ ম রাজাবলি ১৮:​২৭) উপরন্তু, এই শব্দটি মনুষ্যের বেলাতেও প্রয়োগ হয়। (গীত ৮২:​১,) মোশিকে বলা হয়েছিল যে তিনি হারোণ এবং ফরৌণের কাছে “ঈশ্বর” [ইলোহিম] রূপে হবেন।–যাত্রাপুস্তক ৪:​১৬;৭:⁠১

স্পষ্টতঃই, মিথ্যা দেবতা সকল এবং এমনকি মানুষের জন্য ‘ইলোহিম’ এবং ‘ইলোহে’ উপাধি সকল ব্যবহার করার দ্বারা বুঝায় না যে প্রত্যেকে দেবতাদের বহুবচন ছিল; এমন কি ‘ইলোহিম’ বা ‘ইলোহে’ যিহোবাতে প্রয়োগ করেও বুঝায় না যে তিনি এক ব্যক্তির বেশী, বিশেষতঃ আমরা যখন এই বিষয়ে বাইবেলের অশিষ্টাংশের সাক্ষ্য বিবেচনা করি।

যীশু একজন পৃথক সৃষ্টি

পৃথিবীতে থাকাকালীন যীশু মনুষ্য ছিলেন, যদিও একজন সিদ্ধ ব্যক্তি কারণ ঈশ্বর যীশুর জীবনী শক্তিকে মরিয়মের গর্ভে স্হানান্তরিত করেছিলেন। (মথি ১:​১৮​—⁠২৫) কিন্তু ঐরূপে তিনি শুরু হন নাই, তিনি স্বয়ং ঘোষনা করেছিলেন যে তিনি “স্বর্গ থেকে নেমে আসেন।” (যোহন ৩:​১৩) কাজেই এটা স্বাভাবিক ছিল যে তিনি পরে তাঁর শিষ্যদের বলবেন: “তবে মনুষ্যপুত্র (যীশু) পূর্ব্বে যেখানে ছিলেন, সেখানে তোমরা তাঁহাকে উঠিতে দেখিলে কি বলিবে?”–যোহন ৬:​৬২, এন. জে. বি

এইরূপে পৃথিবীতে আসার পূর্ব্বে যীশুর স্বর্গে অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু এটা কি সর্ব্বশক্তিমান, অনন্তকাল ত্রিত্ব ঈশ্বরত্বের ব্যক্তিদের এক ব্যক্তিরূপে? না, কারণ বাইবেল স্পষ্ট করে জানাই যে তাঁর মনুষ্যপূর্ব্ব অস্তিত্বে যীশু একজন সৃষ্ট আত্মিক ব্যক্তি ছিলেন, যেমন দূতেরা ঈশ্বরের সৃষ্ট আত্মিক ব্যক্তি ছিলেন। যীশু এমন কি দূতেরাও তাদের সৃষ্টির পুর্ব্বে অস্তিত্বে ছিল না।

যীশু, তাঁর মনুষ্যপূর্ব্ব অস্তিত্বে “সকল সৃষ্টির প্রথম জাত ছিলেন।” (কলসীয় ১:​১৫, এন জে বি) “তিনি ঈশ্বরের সৃষ্টির আদি” ছিলেন। (প্রকাশিত বাক্য ৩:​১৪, আর, এস, ক্যাথলিক এডিসন) “আদি” (গ্রীক, আরখি) শব্দকে ন্যায়তঃ অনুবাদ করা যেতে পারে না যে যীশু ঈশ্বরের সৃষ্টি ‘শুরু’ করেন। যোহন তাঁর বাইবেল লেখাতে আরখি গ্রীক শব্দের বিভিন্নরূপ ২০ বারেরও বেশী ব্যবহার করেন এবং এগুলির সর্ব্বদা সাধারণ অর্থ, হল “আদি”। হ্যাঁ, যীশু ঈশ্বরের অদৃশ্য সৃষ্টির আদিতে ঈশ্বরের দ্বারা সৃষ্টি হয়েছিলেন।

লক্ষ্য করুন যীশুর উৎপত্তি সম্বন্ধে ঐ উল্লেখগুলির সাথে বাইবেল বই হিতোপদেশে কথিত আলঙ্কারিক “প্রজ্ঞা” অভিব্যক্তির কিরূপ ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ আছে: “ইয়াওয়ে তাঁর সবচাইতে প্রাচীন কাজের পূর্ব্বে তাঁর কাজের প্রথম ফলস্বরূপ আমাকে সৃষ্টি করিলেন। পর্ব্বত সকল স্হাপিত হইবার পূর্ব্বে, উপপর্ব্বত সকলের পূর্ব্বে আমি জন্মিয়াছিলাম; তখন তিনি স্থল ও মাঠ নির্ম্মাণ করেন নাই, জগতের ধূলির প্রথম অনুও গড়েন নাই।” (হিতোপদেশ ৮:​১২, ২২, ২৫, ২৬, এন জে বি) “প্রজ্ঞা” এই শব্দটি যখন ঈশ্বর যাকে সৃষ্টি করেছেন তাকে ব্যক্তিত্ব প্রদান করতে ব্যবহৃত হয়েছে, বেশীরভাগ পন্ডিতেরা সম্মত হন যে এটা প্রকৃতপক্ষে তাঁর মানব অস্তিত্বের পূর্ব্বে আত্মিক প্রাণীরূপে যীশুর জন্য বাক্যালঙ্কার।

“প্রজ্ঞা” রূপে তাঁর মনুষ্যপূর্ব্ব অস্তিত্বে, যীশু বলতে থাকেন যে তিনি “তাঁর (ঈশ্বরের) কাছে, একজন দক্ষ কারিগর রূপে ছিলেন।” (হিতোপদেশ ৮:​৩০, জে. বি)। দক্ষ কারিগররূপে তাঁর এই ভূমিকার সাথে মিল রেখে, কলসীয় ১:​১৬ পদ যীশু সম্বন্ধে বলে যে “তাঁর মাধ্যমে ঈশ্বর স্বর্গ এবং পৃথিবীতে সব কিছু সৃষ্টি করেছেন।”–টুডেজ ইংলিস ভারসান (টি ই ভি)

কাজেই এই দক্ষ কারিগর দ্বারা, যেন তাঁর ছোট অংশীদার, সর্ব্বশক্তিমান ঈশ্বর, অন্যান্য সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। বাইবেল বিষয়টি এইরূপে সারাংশ করে: “তথাপি আমাদের জ্ঞানে একমাত্র ঈশ্বর, সেই পিতা, যাঁহা হইতে সকলই হইয়াছে. . .এবং একমাত্র প্রভু, যীশুখৃষ্ট, যাঁহার দ্বারা সকলই হইয়াছে। (বাঁকা অক্ষর আমাদের) ১ ম করিন্থীয় ৮:​৬, আর এস, ক্যাথলিক এডিসন।

নিঃসন্দেহে এই দক্ষ কারিগরের কাছে ঈশ্বর বলেছিলেন: “আইস আমরা আমাদের সাদৃশ্যে মনুষ্য নির্ম্মান করি।’’ (আদিপুস্তক ১:​২৬) কেউ কেউ দাবী করে যে এই বাক্য “আমরা” এবং “আমাদের” ত্রিত্বকে নির্দ্দেশ করে। কিন্তু আপনাকে যদি বলতে হয়, ‘আইস আমরা আমাদের নিজেদের জন্য কিছু তৈরী করি,’ এতে সাধারণতঃ কেউ বুঝবে না যে এটার অর্থ হল কয়েকজন ব্যক্তি একত্রে আপনার মধ্যে আছে। আপনি কেবলমাত্র বুঝাতে চান যে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রে কোন কিছুতে কাজ করবে। কাজেই, ঈশ্বরও যখন “আমরা” এবং “আমাদের” ব্যবহার করেন, তিনি কেবল আরেকজন ব্যক্তিকে সম্বোধন করছিলেন, তাঁর প্রথম আত্মিক সৃষ্টি দক্ষ কারিগর, মনুষ্যপূর্ব্ব যীশু।

ঈশ্বর কি প্রলোভিত হতে পারেন?

মথি ৪:​১ পদে যীশু “দিয়াবলের দ্বারা পরীক্ষিত” হয়েছিলেন বলা হয়। যীশুকে “জগতের সমস্ত রাজ্য ও তাদের প্রতাপ” দেখানোর পর, শয়তান বলেছিল: “তুমি যদি ভূমিষ্ঠ হইয়া আমাকে প্রণাম কর, এই সমস্তই আমি তোমাকে দিব।” (মথি ৪:​৮, ৯) শয়তান যীশুকে ঈশ্বরের কাছে অবিশ্বাসী করাতে চেষ্টা করছিল।

কিন্তু সেটা বিশ্বস্ততার কি ধরনের পরীক্ষা যদি যীশু ঈশ্বর ছিলেন? ঈশ্বর কি নিজের বিরূদ্ধে বিদ্রোহ করতে পারেন? না, কিন্তু দূতেরা এবং মনুষ্যেরা ঈশ্বরের বিরূদ্ধে বিদ্রোহ করতে পারে এবং করেছিল। যীশুর প্রলোভনের অর্থ তবেই হবে যদি সে ঈশ্বর নয়, কিন্তু পৃথক ব্যক্তি যার নিজস্ব স্বাধীন ইচ্ছা আছে, যদি চাইতেন অবিশ্বস্ত হতে পারতেন, যেমন একজন দূত বা একজন মানুষ।

অপরপক্ষে, এটা অকল্পনীয় যে ঈশ্বর পাপ করতে পারেন এবং নিজের প্রতি অবিশ্বস্ত হবেন। “তাঁর কর্ম্ম সিদ্ধ. . .তিনি বিশ্বাস্য ঈশ্বর।. . .তিনিই ধর্ম্মময় ও সরল।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:​৪) কাজেই যীশু যদি ঈশ্বর হতেন, তবে তিনি প্রলোভিত হতে পারতেন না।–যাকোব ১:⁠১৩

ঈশ্বর না হওয়াতে, যীশু অবিশ্বস্ত হতে পারতেন। কিন্তু তিনি বিশ্বস্ত থেকে বলেন: “দূর হও, শয়তান। কেন না লেখা আছে, ‘তোমার ঈশ্বর যিহোবাকে প্রণাম করবে, কেবল তাঁহারই আরাধনা করিবে,”–মথি ৪:​১০

মুক্তির মূল্যের দাম কতটা ছিল?

যীশু কেন পৃথিবীতে এসেছিলেন তার প্রধান কারণগুলির একটি ত্রিত্বের সাথেও সোজা সম্বন্ধ রাখে। বাইবেল বলে: “কারণ একমাত্র ঈশ্বর আছেন; ঈশ্বর ও মনুষ্যদের মধ্যে একমাত্র মধ্যস্হও আছেন, তিনি মনুষ্য খৃষ্ট যীশু, তিনি সকলের নিমিত্ত মুক্তির মূল্যরূপে আপনাকে প্রদান করিয়াছেন।” ১ তীমথিয় ২:​৫, ৬

যীশু, যিনি একজন সিদ্ধ মনুষ্য থেকে কম বা বেশী ছিলেন না তিনি মুক্তির মূল্য দেন আদম যা হারিয়েছিল সেই একই ক্ষতিপূরন –পৃথিবিতে সিদ্ধ মনুষ্য জীবনের অধিকার। কাজেই যীশুকে ন্যায়তঃ প্রেরিত পৌল “শেষ আদম” বলে আখ্যাত করেন যিনি একই প্রসঙ্গে বলেছিলেন: “কারণ আদমে যেমন সকলে মরে তেমনি খৃষ্টে সকলে জীবন প্রাপ্ত হইবে” (১ করিন্থীয় ১৫:​২২, ৪৫) যীশুর সিদ্ধ মানবজীবন হল “সমতুল্য মুক্তির মূল্য” যা ঐশিক বিচারের জন্য প্রয়োজন হইয়াছিল–এর বেশীও নয়, এর কমও নয়। মনুষ্য বিচারের বেলাতেও একটি মৌলিক নীতি হল যে দোষ অনুরূপ মূল্য প্রদান করা।

যীশু যদি ঈশ্বরত্ত্বের অংশ হতেন, তবে মুক্তির মূল্য ঈশ্বরের নিজস্ব আইন যা চায় তার চাইতে অনেক বেশী হত। (যাত্রাপুস্তক ২১:​২৩–২৫; লেবীয় ২৪:​১৯–২১) কেবলমাত্র একজন সিদ্ধ মনুষ্য আদম, এদনে পাপ করেছিল, ঈশ্বর নয়। কাজেই মুক্তির মূল্য ঈশ্বরের ন্যায়বিচারের সাথে প্রকৃতই একমিল হতে হলে, কঠোরভাবে সমতুল্য হবে–একজন সিদ্ধ মনুষ্য, “শেষ আদম” হতে হবে। এইরূপে, ঈশ্বর যখন যীশুকে পৃথিবীতে মুক্তির মূল্য রূপে পাঠান, তিনি বিচারকে সন্তুষ্ট করবেন এমনভাবেই যীশুকে বানালেন, একজন অবতার নয়, একজন মানব–দেবতা নয়, কিন্তু একজন সিদ্ধ মনুষ্যরূপে, “দূতেদের থেকে ন্যূনীকৃত রূপে”। (ইব্রীয় ২:​৯; তুলনীয় গীত সংহিতা ৮:​৫, ৬) সর্ব্বশক্তিমান ঈশ্বরত্ত্বের কোন অংশ পিতা, পুত্র বা পবিত্র আত্মা– কিরূপে কখনও দূতদের চাইতে ন্যূনীকৃত হতে পারে?

কিরূপে “এক–জাত পূত্র”?

বাইবেল যীশুকে ঈশ্বরের “এক–জাত পুত্র” বলে। (যোহন ১:​১৪; ৩:​১৬, ১৮; ১ যোহন ৪:​৯) ত্রিত্ববাদীরা বলে যেহেতু ঈশ্বর নিত্যস্থায়ী তাই ঈশ্বরের পুত্র নিত্যস্থায়ী। কিন্তু কিরূপে একজন ব্যক্তি একজন পূত্র হবেন এবং একই সময়ে পিতার ন্যায় প্রবীন হবেন?

ত্রিত্ববাদীরা দাবী করে যে যীশুর বেলাতে, যে “এক জাত” শব্দ ব্যবহার হয়েছে তা “জন্মদান করা”র অভিধানিক সংগা অনুযায়ী একই নয়, যা হল “পিতারূপে জন্মদান করা”। (ওয়েবস্টারস নাইনথ নিউ কলেজিয়েট ডিকসেনারী) তারা বলে যে যীশুর ক্ষেত্রে এটা হল “উৎপত্তিহীন সম্বন্ধ”, একমাত্র পুত্রের সম্বন্ধ যার জন্ম হয় নাই। (ভাইনস এক্‌সপজিটরি ডিকসেনারী অফ ওল্ড এন্ড নিউ টেষ্টামেন্ট ওয়ার্ডস) এটা কি আপনার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়? একজন মনুষ্য কি তার পুত্রের জন্ম না দিয়েই তার পিতা হতে পারেন?

উপরন্তু, বাইবেল কেন ইসাহাক এবং অব্রাহামের সম্বন্ধ বর্ণনা করতে “এক–জাতের” একই গ্রীক শব্দ ব্যবহার করে? (যেমন ভাইন কোন ব্যাখ্যা ব্যতিরেকেই স্বীকার করে) ইব্রীয় ১১:​১৭ পদে ইসাহাককে অব্রাহামের “এক–জাত পুত্র” বলা হয়েছে। এতে কোন প্রশ্ন নেই যে ইসাহাকের ক্ষেত্রে তিনি সাধারণ অর্থে এক–জাত ছিলেন, তাঁর পিতার সময় বা পদের সমান নহে।

যিশু এবং ইসাহাকের ক্ষেত্রে “এক–জাতের” জন্য যে মৌলিক গ্রীক শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে তা হল মনোজিনেস, মনোস থেকে, অর্থ হল “একমাত্র” এবং জিনোমাই, মূলশব্দটির অর্থ “উৎপন্ন করা”, “হওয়া (অস্তিত্বে আসা)” মন্তব্য করে ষ্ট্রংস এগজসটিভ কনকরডেন্স। সুতরাং, মনোজিনেসের সংগা হল: “একমাত্র জন্ম, একমাত্র জাত, অর্থাৎ একমাত্র সন্তান।” এ গ্রীক এবং ইংলিশ লেকসিকন অফ দি নিউ টেষ্টামেন্ট, ই. রবিনসন কর্ত্তৃক।

জারহার্ড কিটেল কর্ত্তৃক সম্পাদিত দি থিওলজিক্যাল ডিকসেনারী অফ দি নিউ টেষ্টামেন্ট বলে: “[মনোজিনেস] এর অর্থ হল ‘একমাত্র সন্তান’ অর্থাৎ ভাই এবং বোন ছাড়া।” এই বইটি আরো বলে যে যোহন ১:​১৮; ৩:​১৬, ১৮ এবং ম যোহন ৪:​৯ পদে, “যীশুর সম্বন্ধ কেবল মাত্র পিতার একমাত্র সন্তানের সংগে তুলনা করলেই চলবে না। এটা হল পিতার সাথে এক–জাতের সম্বন্ধ।”

কাজেই যীশু, এক–জাত পুত্র, তাঁর জীবনে আরম্ভ ছিল। এবং সর্ব্বশক্তিমান ঈশ্বরকে ন্যায়তঃ তাঁর জন্মদাতা বা পিতা বলা যেতে পারে, একই অর্থে অব্রাহামের মত একজন পার্থিব পিতা একটি পুত্রের জন্ম দেন। (ইব্রীয় ১১:​১৭) সুতরাং, বাইবেল যখন ঈশ্বরকে যীশুর ‘পিতা’ বলে, এটা যা বলে তাই বুঝায়–অর্থাৎ তারা দুইজন পৃথক ব্যক্তি। ঈশ্বর বড়। যীশু ছোট​ সময়ে, পদে, শক্তিতে এবং জ্ঞানে।

একজন যখন বিবেচনা করেন যে কেবলমাত্র যীশুই ঈশ্বরের আত্মিক পুত্রদের মধ্যে স্বর্গে সৃষ্টি হন নাই, এটা স্পষ্ট হয় কেন “এক–জাত পুত্র” কথাটি তাঁর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছিল। অসংখ্য অন্যান্য আত্মিক প্রাণী, দূতদেরও, “ঈশ্বরের পুত্র” বলা হয়, একই অর্থে আদমও ছিলেন, কারণ তাদের জীবনী–শক্তি, স্রোত বা জীবনের উৎস, যিহোবা ঈশ্বর থেকে উৎপন্ন। (ইয়োব ৩৮:​৭; গীতসংহিতা ৩৬:​৯; লূক ৩:​৩৮) কিন্তু এই সকল সমস্তই “এক–জাত পুত্রের” মাধ্যমে সৃষ্ট হয়েছিল, যিনি একমাত্র সরাসরি ঈশ্বরের দ্বারা জাত।-কলসীয় ১:​১৫–১৭

যীশুকে কি ঈশ্বর বলে বিবেচনা করা হয়েছিল?

যীশুকে যখন বাইবেলে প্রায়ই ইশ্বরের পুত্র বলা হয়, প্রথম শতাব্দীর কেউই কখন তাঁকে ঈশ্বর পুত্র বলে চিন্তা করে নাই। এমন কি মন্দ দূতেরাও “যারা এক ঈশ্বরে বিশ্বাস করে”, তারা আত্মিক জাগতে তাদের অভিজ্ঞতা থেকে জানত যে যীশু ঈশ্বর ছিলেন না। কাজেই, সঠিকরূপেই তারা যীশুকে পৃথক “ঈশ্বরের পুত্ররূপে” সম্বোধন করেছিলেন। (যাকোব ২:​১৯; মথি ৮:​২৯) আর যীশু যখন মারা যায়, দন্ডায়মান পরজাতীয় রোমীয় সৈন্যরা তাঁর শিষ্যদের কাছ থেকে যথেষ্টেরূপে জেনেশুনেই বলেছিল, যা অবশ্যই সত্য হতে হবে, যীশু ঈশ্বর এই কথা নয় কিন্তু “সত্যই, ইনি ঈশ্বরের পুত্র।”​—⁠মথি ২৭:​৫৪

সুতরাং “ঈশ্বরের পুত্র” এই কথাটি পৃথক সৃষ্টি ব্যক্তিরূপে যীশুর প্রতি উল্লেখ করে, ত্রিত্বের একটি অংশরূপে নয়। ঈশ্বরের পুত্ররূপে, তিনি স্বয়ং ঈশ্বর হতে পারেন না, কারণ যোহন ১:​১৮ পদে বলে: “ঈশ্বরকে কেউ কখনও দেখে নাই”।–আর এস, ক্যাথলিক এডিসন।

শিষ্যরা যীশুকে “ঈশ্বর এবং মনুষ্যের মধ্যস্তরূপে” দেখতেন, স্বয়ং ঈশ্বররূপে নয়। (১ তীমথিয় ২:​৫) যেহেতু সংগা অনুসারে মধ্যস্হ যাদের মধ্যস্হের প্রয়োজন তাদের হতে একজন পৃথক ব্যক্তি, এটা অসঙ্গত হবে যীশুর উভয় দলের কোন একটির সাথে একসত্ত্বা হয়ে যাওয়া যাদের তিনি পুনর্মিলন করাবার চেস্টা করছেন। সেটা হবে তিনি যা নন তা হবার ভান করা।

ঈশ্বরের সাথে যীশুর সম্বন্ধের বিষয়ে বাইবেল স্পষ্ট এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ। যিহোবা ঈশ্বর একাই হলেন সর্ব্বশক্তিমান। তিনি মনূষ্যপূর্ব্ব যীশুকে সরাসরি তৈরী করেছিলেন। এইরূপে যীশুর আরম্ভ ছিল এবং শক্তি বা অনন্তকালে কখনও ঈশ্বরের সমপদস্হ হতে পারবেন না।

[পাদটীকাগুলো]

a ঈশ্বরের নাম কোন কোন অনুবাদে “ইয়াওয়ে,” অন্য অনুবাদগুলিতে “যিহোবা” লেখা হয়েছে।

[১৪ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

ঈশ্বরের দ্বারা সৃষ্ট হওয়াতে সময়, ক্ষমতা ও জ্ঞানের ক্ষেত্রে যীশুর স্থান দ্বিতীয়

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

যীশু বলেছিলেন যে তাঁর মনুষ্যপূর্ব্ব অস্তিত্ব ছিল, ঈশ্বরের অদৃশ্য সৃষ্টির আদিরূপে ঈশ্বর কর্ত্তৃক সৃষ্টি হয়।