সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বর কি সর্ব্বদা যীশু থেকে শ্রেষ্ট?

ঈশ্বর কি সর্ব্বদা যীশু থেকে শ্রেষ্ট?

ঈশ্বর কি সর্ব্বদা যীশু থেকে শ্রেষ্ট?

যীশু কখনও ঈশ্বর বলে দাবী করেন নাই। তিনি নিজের সম্বন্ধে যা কিছু বলেছেন সমস্তই নির্দ্দেশ করে যে তিনি নিজেকে কখনও ঈশ্বরের সমান বলে বিবেচনা করেন নাই–না শক্তিতে, না জ্ঞানে, না বয়সে।

স্বর্গে বা মর্ত্তে, তাঁর অস্তিত্বের সর্ব্বসময়ে, তাঁর কথা এবং আচরনে ঈশ্বরের বশীভূত প্রতিফলিত হয়েছে। ঈশ্বর সর্ব্বদা শ্রেষ্ঠ, যীশু যিনি ঈশ্বরের সৃষ্টি ছোট।

ঈশ্বর থেকে যীশু আলাদা

পুনঃ পুনঃ যীশু প্রদর্শন করেছেন যে তিনি ঈশ্বর থেকে আলাদা সৃষ্ট প্রাণী এবং যীশুর উপরে ঈশ্বর আছেন, ঈশ্বর যাকে তিনি আরাধনা করেন, ঈশ্বর যাকে তিনি “পিতা” বলে – সম্বোধন করেন। ঈশ্বর অর্থাৎ তাঁর পিতার কাছে প্রার্থনাতে যীশু বলেছিলেন, “তুমি একমাত্র সত্য ঈশ্বর” (যোহন১৭:​৩) যোহন২০:​১৭ পদে তিনি মেরী মগদীলনকে বলেছিলেন: “আমি আমার পিতা এবং তোমাদের পিতা, আমার ঈশ্বর এবং তোমাদের ঈশ্বরের কাছে উর্দ্ধে যায়।” (আর এস, ক্যাথলিক এডিসন। ২ করিন্থীয় ১:​৩ পদে প্রেরিত পৌল এই সম্বন্ধেকে সুদৃঢ় করেন: “ধন্য আমাদের প্রভূ যীশুখৃষ্টের ঈশ্বর ও পিতা।” যেহেতু যীশুর ঈশ্বর ছিলেন, তাঁর পিতা, তিনি একই সময়ে ঐ ঈশ্বর হতে পারতেন না।

প্রেরিত পৌল খোলাখুলিভাবে যীশু এবং ঈশ্বরকে স্পষ্ট আলাদা ব্যক্তিরূপে বলেছেন: “আমাদের জ্ঞানে একমাত্র ঈশ্বর সেই পিতা. . . এবং একমাত্র প্রভু সেই যীশুখৃষ্ট।” (১ করিন্থীয় ৮:​৬ জে বি) প্রেরিত তাদের আলাদা করে স্পষ্টভাবে বলেন “ঈশ্বর এবং খৃষ্টের এবং মনোনীত দূতগণের সাক্ষাতে।” (১ তীমথিয় ৫:​২১, আর এস কমন বাইবেল) পৌল যেমন যীশু এবং দূতদের স্বর্গে পরস্পরের থেকে আলাদা করে দেখান সেইরূপ যীশু এবং ঈশ্বরও।

যোহন ৮:​১৭, ১৮ পদে যীশুর কথাগুলি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেনঃ “আর তোমাদের ব্যবস্থাতেও লিখিত আছে, ‘দুই জনের সাক্ষ্য সত্য’। আমি আপনি আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিই, আর পিতা, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি আমার বিষয়ে সাক্ষ দেন।” এখানে যীশু দেখান যে তিনি এবং তাঁর পিতা, যিনি সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, অবশ্যই দুইজন আলাদা ব্যাক্তি কারণ কিরূপে নতুবা প্রকৃতপক্ষে দুইজন সাক্ষী হতে পারে?

তিনি ঈশ্বর থেকে আলাদা দেখাতে যীশু আরো বলেন: “আমাকে সৎ কেন বলিতেছ? ঈশ্বর ব্যতিরেকে আর কেহ সৎ নেই।” (মার্ক ১০:​১৮,জে বি) কাজেই যীশু বলছেন যে ঈশ্বরের মত কেউ সৎ নয়, এমনকি যীশু নিজেও নয়। ঈস্বর এই প্রকারে সৎ যা তাকে যীশু থেকে পৃথক করে

ঈশ্বরের বশীভুত দাস

বার বার, যীশু এইরূপ মন্তব্য করেন: “পুত্র আপনা হইতে কিছুই করিতে পারে না, কেবল পিতাকে যাহা করিতে দেখেন, তাহাই করেন।” (যোহন ৫:​১৯, দি হোলি বাইবেল, মসিনর আর. এ. নক্স কর্ত্তৃক) “কেননা আমার ইচ্ছা সাধন করিবার জন্য আমি স্বর্গ হইতে নামিয়া আসি নাই, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠায়াছেন তাঁহার ইচ্ছা সাধন করিবার জন্য।” (যোহন ৬:​৩৮) “আমার উপদেশ আমার নহে, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠায়াছেন তাঁহার।” (যোহন ৭:​১৬) প্রেরিত ব্যক্তির চাইতে যে পাঠায় সে কি শ্রেষ্ট নয়?

যীশুর দ্রাক্ষাক্ষেত্রের উদাহরণে এই সম্বন্ধ স্পষ্ট হয়েছে। তিনি তাঁর পিতা, ঈশ্বরকে দ্রাক্ষাক্ষেত্রের মালিকের সাথে তুলনা করেন, যিনি দীর্ঘকালের জন্য অন্য দেশে গেলেন, এবং ক্ষেত্র কৃষকদের কাছে জমা দিয়ে গেলেন, যারা র্যিহুদী পুরোহিতদের চিত্রিত করে। পরে মালিক যখন দ্রাক্ষাক্ষেত্রের ফলের অংশ আনতে এক দাসকে পাঠালেন কৃষকেরা তাকে প্রহার করে রিক্ত হস্তে বিদায় করিল। তখন মালিক দ্বিতীয় দাসকে পাঠালেন, পরে তৃতীয়জনকে, উভয়েই একই ব্যবহার পেল। পরিশেষে, মালিক বলিলেন: “আমি আমার প্রিয় পুত্রকে (যীশু) পাঠাব; হয়ত তাহারা সমাদর করিবে।” কিন্তু দুষ্ট কৃষকেরা বলিল: “এই বাক্তিই উত্তরাধিকারী; আইস, আমারা ইহাকে বধ করি, যেন অধিকার আমাদেরই হয়’। পরে তাহারা তাঁহাকে দ্রাক্ষাক্ষেত্রের বাহিরে ফেলিয়া বধ করিল।” (লূক ২০:​৯–১৬) এইরূপে যীশু ঈশ্বরের ইচ্ছা পালনে ঈশ্বর কর্ত্তৃক প্রেরিতরূপে তার পদের উদাহরণ দেন, যেমন পিতা একজন বশীভূত পুত্রকে পাঠান।

যীশুর শিষ্যরা তাঁকে সর্বদা ঈশ্বরের বশীভূত দাসরূপে দেখতেন। ঈশ্বরের সমতুল্যরূপে নয়। তারা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করিল, “পবিত্র দাস যীশু সম্বন্ধে যাঁকে তুমি অভিষিক্ত করিয়াছ. . . আর তোমার পবিত্র দাস যীশুর নামে যেন চিহ্ন কার্য ও অদ্ভুত লক্ষণ সাধিত হয়।”–প্রেরিত ৪:​২৩, ২৭, ৩০, আর এস, ক্যাথলিক এডিসন।

ঈশ্বর সর্ব্বসময়ে শ্রেষ্ট

যীশুর পরিচর্য্যার প্রথমে, তিনি যখন জলে বাপ্তিস্ম নিয়ে উঠে আসলেন, ঈশ্বরের স্বর স্বর্গ থেকে বলেছিল: “ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, ইহাতেই আমি প্রীত।” (মথি ৩:​১৬, ১৭) ঈশ্বর কি বলছিলেন যে তিনি তাঁর নিজের পুত্র ছিলেন, নিজেতেই প্রীত, নিজেকেই পাঠাচ্ছিলেন? না, ঈশ্বর স্রষ্টারূপে বলছিলেন যে তিনি শ্রেষ্ট, তাঁর পুত্র যীশুকে ক্ষুদ্র ব্যক্তি রূপে আগত কাজের জন্য অনুমোদন করছিলেন।

যীশু তাঁর পিতার শ্রেষ্ঠত্ব নির্দ্দেশ করেন যখন তিনি বলেন: “যিহোবার আত্মা আমাতে অধিষ্ঠান করেন, কারণ তিনি আমাকে অভিষিক্ত করেন, দরিদ্রদের কাছে সুসমাচার প্রচার করবার জন্য।” (লূক ৪:​১৮) অভিষিক্ত কথার অর্থ হল বড় কোন ব্যক্তির দ্বারা কাউকে কর্ত্তৃত্ব বা কার্যভার প্রদান করা যার ইতিমধ্যে কর্ত্তৃত্ব হয় নাই। এখানে ঈস্বর স্পষ্টরূপে উচ্চ, কারণ তিনি যীশুকে অভিষিক্ত করেছেন, তাঁকে কর্ত্তৃত্ব দিয়েছেন যা তাঁর পূর্বে ছিল না।

যীশু তাঁর পিতার শ্রেষ্ঠত্ব স্পষ্ট করেন যখন দুইজন শিষ্যের মা জিজ্ঞাসা করে যে যীশু যখন তাঁর রাজ্যে আসবেন তখন যেন তার পুত্রদ্বয় যীশুর দক্ষিনে এবং বামে বসে। যীশু উত্তর করলেন: “আমার দক্ষিনে ও বামে বসিতে দিতে আমার কোন অধিকার নেই, সেগুলি তাদেরই জন্য যাদের জন্য আমার পিতা কর্ত্তৃক স্থান প্রস্তুত করা হয়েছে” তিনি হলেন ঈশ্বর। (মথি ২০:​২৩, জ বি) যীশু যদি সর্বশক্তিমান হতেন তবে ঐ পদগুলি তিনিই দিতেন। কিন্তু যীশু সেগুলি দিতে পারতেন না, কারণ সেগুলি ঈশ্বরের হাতে এবং যীশু ঈশ্বর ছিলেন না।

যীশুর নিজস্ব প্রার্থনাগুলি তাঁর নিকৃষ্ট পদের শক্তিশালী উদাহরণ। যীশু মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে প্রার্থনার দ্বারা দেখিয়েছিলেন কে তাঁর চাইতে শ্রেষ্টঃ “পিতঃ যদি তোমার অভিমত হয়, আমা হইতে এই পানপাত্র দূর কর; তথাপি আমার ইচ্ছা নয়, তোমারই ইচ্ছা সিদ্ধ হউক।” (লূক ২২:​৪২) কার কাছে তিনি প্রার্থনা করছিলেন? তাঁর কোন অংশের কাছে? না, তিনি সম্পূর্ণরূপে এক পৃথক সত্ত্বার কাছে প্রার্থনা করছিলেন, তাঁর পিতা, ঈশ্বর, যাঁর ইচ্ছা হল শ্রেষ্ট এবং তাঁর নিজের থেকে আলাদা হতে পারে, কেবলমাত্র তিনিই এই “পানপাত্র দূর করতে পারেন।”

তারপরে মৃত্যুর মুখামুখি হয়ে, যীশু চিৎকার করে বল্লেন: “ঈশ্বর আমার; ঈশ্বর আমার; তুমি কেন আমায় পরিত্যগ করিয়াছ?” (মার্ক ১৫:​৩৪,জে বি) যীশু কাঁর কাছে চিৎকার করছিলেন? নিজের কাছে বা নিজের অংশের কাছে? নিশ্চিতই ঐ চীৎকার “আমার ঈশ্বর” এমন কাউর কাছে থেকে হতে পারে না যিনি নিজেকে ঈশ্বর বিবেচনা করেন। আর যীশু যদি ঈশ্বর হতেন, তবে কার দ্বারা তিনি পরিত্যক্ত? নিজের দ্বারা? এর দ্বারা কোন অর্থ হয় না। যীশু আরও বলেছিলেন: “পিতঃ, তোমার হস্তে আমার আত্মা সমর্পণ করি।” (লূক ২৩:​৪৬) যীশু যদি ঈশ্বর হতেন, তবে কোন কারণে তিনি তাঁর আত্মা পিতার হস্তে সমর্পণ করতেন?

যীশু মারা যাবার পরে তিনি তিনদিনের অংশত কবরে ছিলেন। তিনি যদি ঈশ্বর হতেন, তবে হবক্‌কূক ১:​১২ পদের কথা ভুল যখন এতে বলা হয়: “হে আমার ঈশ্বর, পবিত্রতম, তুমি মারা যাবে না”। কিন্তু বাইবেল বলে যে যীশু মারা গিয়েছিলেন এবং কবরে অচেতন ছিলেন। এবং কে যীশুকে কবর থেকে পুনরুত্থিত করেছিল? সে যদি প্রকৃতই মারা যায়, তবে তিনি নিজেকে পুনরুন্থান দিতে পারতেন না। অপর পক্ষে তিনি যদি প্রকৃতই মারা গিয়ে না থাকেন, তাঁর মৃত্যুর ভান আদমের পাপের জন্য মুক্তির মূল্য দিতে পারত না। কিন্তু তিনি তাঁর প্রকৃত মৃত্যুর দ্বারা মুক্তির মূল্য প্রদান করেছিলেন। কাজেই “ঈশ্বর (যিনি) মৃত্যু যন্ত্রণা মুক্ত করিয়া (যীশুকে) তাঁহাকে উঠাইয়াছেন।” (প্ররিত ২:​২৪) শ্রেষ্ঠ, সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, তার দাস নিকৃষ্ট যীশুকে উঠাইয়াছিলেন।

যীশুর আশ্চর্য্য কাজ করার ক্ষমতা যেমন লোকদের পুনরুত্থান দেওয়ার দ্বারা কি নির্দ্দেশিত হয় যে তিনি ঈশ্বর ছিলেন? উত্তম, প্রেরিতগণ এবং ভাববাদীগণ, এলিয় এবং ইলীশায়রও ঐ একই শক্তি ছিল, কিন্তু তাঁর দ্বারা তারা মনুষ্যের উর্দ্ধে উঠেন নাই। তিনি যে তাদের সমর্থন করছিলেন তা প্রদর্শন করতে ঈশ্বর ভাববাদীগণ, যীশু এবং প্রেরিতদের আশ্চর্য্য কাজ সম্পাদন করতে ক্ষমতা দিয়েছিলেন। কিন্তু এতে তারা কেউই একাধিক ঈশ্বরত্বের অংশ হননি।

যীশুর জ্ঞান সীমিত ছিল

এই যুগের শেষ সম্বন্ধে প্রদত্ত তাঁর ভাববাণীতে যীশু বলেছিলেন: “কিন্তু সেই দিনের বা সেই দন্ডের তত্ত্ব কেহই জানে না, স্বর্গস্হ দূতগণও জানে না, পুত্রও জানে না, কেবল পিতা জানেন।” (মার্ক ১৩:​৩২, আর এস, ক্যাথলিক এডিসন) যীশু যদি ঈশ্বরত্বের সমান পুত্র অংশ হতেন, তবে তিনি পিতা যা জানেন তা জানতেন। কিন্তু যীশু জানতেন না, কারণ তিনি ঈশ্বরের সমতুল্য ছিলেন না।

এইরূপে আমরা ইব্রীয় ৫:​৮ পদে পড়ি যে যীশু “যে সকল দুঃখভোগ করিয়াছিলেন, তদ্বারা আজ্ঞাবহতা শিক্ষা করিলেন।” আমরা কি কল্পনা করিতে পারি যে ঈশ্বরের কিছু শিখবার আছে? না, কিন্তু যীশু করেছিলেন, কারণ ঈশ্বর যা জানতেন তা সবই তিনি জানতেন না। এবং তাকে কিছু শিখবার ছিল যা ঈশ্বরকে কখন শিখবার প্রয়োজন হবে না – বাধ্যতা। ঈশ্বরকে কখন কাউরও বাধ্য হতে হবে না।

ঈশ্বর যা জানেন এবং খৃষ্ট যা জানেন তার মধ্যে যে পার্থক্য তা যীশু স্বর্গে ঈশ্বরের কাছে পুনরুত্থিত হওয়ার পরও অবস্থান করছিল। বাইবেলের শেষ পুস্তকের প্রথম কথাগুলি লক্ষ্য করুন: “যীশু খৃষ্টের প্রকাশিত বাক্য, ঈশ্বর যাহা তাঁহাকে দান করিলেন।” (প্রকাশিত ১:​১, আর এস, ক্যাথলিক এডিসন) যীশু যদি স্বয়ং ঈশ্বরত্বের অংশ হন তবে কি ঈশ্বরত্বের আরেকটি অংশের দ্বারা তাঁকে প্রকাশ দিতে হবে – ঈশ্বর? নিশ্চিতই তিনি সমস্তটাই জানতেন, কারণ ঈশ্বর জানেন। কিন্তু যীশু জানতেন না, কারণ তিনি ঈস্বর ছিলেন না।

যীশু এখনও বশীভুত

তাঁর মনুষ্যপূর্ব অস্তিত্বে এবং পৃথিবীতে থাকার সময়ে যীশু ঈশ্বরের বশীভূত ছিলেন। তাঁর পুনরুত্থানের পরও, তিনি বশীভূত, দ্বিতীয় স্হানে আছেন।

যীশুর পুনরুত্থানের বিষেয়ে বলতে গিয়ে পিতর এবং তৎসহ ব্যক্তিরা যিহুদী ধর্ম্মধামে বলেছিলেন: “ঈশ্বর এই ব্যক্তি [যীশু]. . .কে তাঁর দক্ষিণ হস্তে উত্তোলন করিলেন।” (প্ররিত ৫:​৩১) পৌল বলেছিলেন: “ঈশ্বর তাঁহাকে অতিশয় উচ্চ পদান্বিত করিলেন।” (ফিলিপীয় ২:​৯) যীশু যদি ঈশ্বর হতেন, তবে কিরূপে যীশু পদান্বিত হতে পারতেন অর্থাৎ পূর্বে যে পদ উপভোগ করেছেন তা থেকে উচ্চপদে? তিনি ইতিমধ্যেই ত্রিত্বের পদান্বিত অংশে হতেন। তাঁর পদান্বিতের পূর্বে, যীশু যদি ঈশ্বরের সমান হতেন তবে তাঁকে আবার উচ্চান্বিত করার অর্থ হবে তিনি ঈশ্বরের উর্দ্ধে হবেন।

পৌল আরো বলেছিলেন যে খৃষ্ট “স্বর্গেই প্রবেশ করিয়াছেন যেন তিনি এখন আমাদের জন্য ঈশ্বরের সাক্ষাতে প্রকাশমান হন।” (ইব্রীয় ৯:​২৪, জে বি) আপনি যদি কাউরও সামনে উপস্হিত হন তবে আপনি কিরূপে ঐ ব্যক্তি হতে পারেন? আপনি হতে পারেন না। আপনি অবশ্যই আলাদা এবং পৃথক।

তদ্রুপ, পাথরের আঘাতে মরবার ঠিক পূর্বে, শহীদ স্তিফেন, “স্বর্গের প্রতি একদৃষ্টে চাহিয়া দেখিলেন যে, ঈশ্বরের প্রতাপ রহিয়াছে এবং যীশু ঈশ্বরের দক্ষিণে দাঁড়াইয়া আছেন।” (প্ররিত ৭:​৫৫) স্পষ্টতঃই তিনি দুইটি পৃথক ব্যক্তি দেখিলেন–কিন্তু কোন পবিত্র আত্মা নয়, ত্রিত্বের ঈশ্বরত্ব নয়।

প্রকাশিত ৪:​৮ থেকে ৫:​৭ পদের বর্ণনাতে, দেখানো হয়েছে ঈশ্বর স্বর্গীয় সিংহাসনে উপবিষ্ট, কিন্তু যীশু নয়। তাঁকে ঈশ্বরের দক্ষিণ হস্ত থেকে পুস্তিকা গ্রহণ করতে ঈশ্বরের কাছে আসতে হল। এর অর্থ হল স্বর্গে যীশু ঈশ্বর নন কিন্তু তাঁর থেকে আলাদা।

পূর্ববর্ত্তী আলোচনার সাথে মিল রেখে ইংলন্ডের ম্যানচেষ্টারে জন রিল্যান্ডস লাইব্রেরীর বুলেটিন বলে: “স্বর্গীয় জীবনে পুনরুত্থানের পরে, ঈশ্বর হতে আলাদা এবং পৃথকরূপে যীশু সম্পূর্ণরূপে আপন ব্যক্তিত্ব বজায় রেখেছেন, যেমন নাকি পার্থিব জীবনে যীশু করেছিলেন। ঈশ্বরের পাশে এবং ঈশ্বরের সাথে তুলনাতে, তিনি প্রকৃতই ঈশ্বরের বিচারালয়ে আরেকজন স্বর্গীয় ব্যক্তিরূপে প্রতীয়মান হন, যেমন দূতেরা ছিলেন – যদিও ঈশ্বরের পুত্ররূপে তিনি শ্রেণী এবং মর্য্যাদায় তাদের থেকে অনেক উর্দ্ধে।”– তুলনীয় ফিলিপীয় ২:​১১

বুলেটিন আরো বলে: “স্বর্গীয় খৃষ্টের জীবন এবং কার্য্যাবলী সম্বন্ধে যাহোক, যাই বলা হোক না কেন এতে মোটেই বুঝায় না এবং ইঙ্গিতও দেয় না যে ঐশিক পদে তিনি ঈশ্বরের সমান এবং সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বর। অপর পক্ষে, নূতন নিয়মের ছবিতে, তাঁর স্বর্গীয় ব্যক্তিত্ব এবং পরিচর্য্যাতে আমরা যে মূর্ত্তি দেখি তা ঈশ্বর থেকে আলাদা এবং তাঁর বশীভূত।”

ভবিষ্যতে স্বর্গে চিরকাল, যীশু ঈশ্বরের বশীভূত দাস, আলাদা ব্যক্তিরূপে চলতে থাকবেন। বাইবেল এটাকে এইভাবে বলে: “তৎপরে পরিনাম হইবে, তখন তিনি (স্বর্গস্হিত যীশু) পিতা ঈশ্বরের হস্তে রাজ্য সমর্পণ করিবেন . . . আর সকলই তাঁহার বশীভূত করা হইল পর পুত্র আপনিও তাঁহার বশীভূত হইবেন, যিনি সকলই তাঁহার বশে রাখিয়াছিলেন, যেন ঈশ্বরই সর্বেসর্বা হন।”–১ করিন্থীয় ১৫:​২৪, ২৮, এন জে বি।

যীশু কখনও ঈশ্বর বলে দাবী কবন নাই

বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যিহোবা যীশু থেকে কেবল পৃথক ব্যক্তিত্বই নয় কিন্তু তিনি সর্বসময়ে তাঁর শ্রেষ্ঠ। যীশুকে সর্বদা পৃথক, ছোট, ঈশ্বরের, একজন বিনীত দাসরূপে দেখানো হয়েছে। সেইজন্য বাইবেল স্পষ্টভাবে বলে যে “খৃষ্টের মস্তক হলেন ঈশ্বর”, একইভাবে “প্রতিটি মানুষের মস্তক হলেন খৃষ্ট।”( ১করিন্থীয় ১১:​৩) এবং সেইজন্যই যীশু স্বয়ং বলেছিলেন: “পিতা আমা হইতে মহান।” –যোহন।”১৪:​২৮, আর এস, ক্যাথলিক এডিসন।

বিষয়টি হল এই যে যীশু ঈশ্বর নন এবং কখনও ঐরূপ হবার জন্য দাবী করেন নাই। এটা বর্দ্ধিত সংখ্যার পন্ডিতেরা স্বীকার করে। যেমন রিল্যান্ডস বুলেটিন বলে: “বিষয়টির সম্মুখীন হতে হবে যে নূতন নিয়মের গবেষনা বিগত তিরিশ বা চল্লিশ বৎসর ধরে করার পরে নূতন নিয়মের বর্দ্ধিত সংখ্যার খ্যাতনামা পন্ডিতেরা এই সিদ্ধাতে এসেছেন যে যীশু. . . অবশ্যই কখনও নিজেকে ঈশ্বর বলে বিশ্বাস করেন নাই।”

বুলেটিনটি প্রথম শতাব্দীর খৃষ্টানদের সম্বন্ধে আরো বলে: “সুতরাং তারা যখন, [যীশুকে] সম্মানিত উপাধিগুলিতে ভূষিত করে যেমন খৃষ্ট, মনূষ্যপুত্র, ঈশ্বরের পুত্র এবং প্রভু, এগুলির দ্বারা এই বুঝান হয় যে তিনি ঈশ্বর ছিলেন না, কিন্তু তিনি ঈশ্বরের কাজ করেছিলেন।”

এরূপে কোন কোন ধর্ম্মীয় পন্ডিতেরা স্বীকার করে যে যীশুর ঈশ্বর হওয়ার ধারনা বাইবেলের সমগ্র সাক্ষ্যের বিরূদ্ধে। সেখানে ঈশ্বর সর্বদা শ্রেষ্ঠ এবং যীশু হলেন বশীভূত দাস।

[১৯ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

“নূতন নিয়মের গবেষণা বর্দ্ধিত আকারে পন্ডিতদের এই সিদ্ধান্তে পরিচালিত করছে যে যীশু অবশ্যই কখনও নিজেকে ঈশ্বর বলে বিশ্বাস করেন নাই-” -বুলেটিন অফ দি জন রিলেন্ডস লাইব্রেরী

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

যীশু যিহুদীদের বলেছিলেন: “কেননা আমার ইচ্ছা সাধন করিবার জন্য আমি স্বর্গ হইতে নামিয়া আসি নাই; কিন্তু যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহারই ইচ্ছা সাধন করিবার জন্য।”-যোহন ৬:⁠৩৮

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

যীশু যখন চিৎকার করলেনঃ “আমার ঈশ্বর, আমার ঈশ্বর তুমি কেন আমায় পরিত্যগ করেছ?” তিনি নিশ্চয়ই বিশ্বাস করেন নি যে তিনি স্বয়ং ঈশ্বর ছিলেন