ত্রিত্বকে কিরূপে ব্যাখ্যা করা হয়?
ত্রিত্বকে কিরূপে ব্যাখ্যা করা হয়?
রোমান ক্যাথলিক গির্জ্জা বলে যে: “ত্রিত্ব খৃষ্টীয় ধর্ম্মের মূল মতবাদকে বুঝতে ব্যবহৃত হয়। . . .এই রূপে অ্যাথেনিসিয়ান ক্রীড অনুসারে: ‘পিতা ঈশ্বর, পুত্র ঈশ্বর, এবং পবিত্র আত্মা ঈশ্বর, এবং তথাপি তিন ঈশ্বর নয় কিন্তু এক ঈশ্বর।’ এই ত্রিত্বে . . . ব্যক্তিরা সম–অনন্তকালীন এবং সমকক্ষ; সকলেই সমানভাবে অসৃষ্ট এবং সর্ব্বশক্তিমান।”–দি ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া।
খৃষ্টজগতের অন্যান্য প্রায় সকল গির্জ্জাই এতে সম্মত হয়। উদাহরণস্বরূপ, গ্রীক অরথোডকস্ গির্জ্জাও ত্রিত্বকে “খৃষ্টধর্ম্মের ভিওমূলক মতবাদ” বলে এমনকি এও বলে: “তারাই খৃষ্টান যারা খৃষ্টকে ঈশ্বররূপে গ্রহণ করে।” আওয়ার অরথোডক্স্ খৃষ্টীয়ান ফেইথ পুস্তকে ঐ একই গির্জ্জা ঘোষণা করে: “ঈশ্বর হলেন ত্রিত্ব . . . পিতা সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বর। পুত্র সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বর। পবিত্র আত্মা সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বর।”
এইরূপে, ত্রিত্বে “এক ঈশ্বরে তিন ব্যক্তি” বিবেচনা করা হয়। বলা হয় যে প্রত্যেকেরই আদি নেই, অনন্তকালধরে
অস্তিত্বমান। প্রত্যেককেই বলা হয় সর্ব্বশক্তিমান, কেউই কাউরই চাইতে বড় বা ছোট নয়।এই ধরনের যুক্তি কি অনুসরণ করা কঠিন? অনেক সরল বিশ্বাসীরা এটাকে গন্ডগোলের, সাধারণ যুক্তিবিরূদ্ধ, তাদের অভিজ্ঞতার বর্হিভুত বলে দেখেছে। তারা প্রশ্ন করে, কিরূপে পিতা ঈশ্বর, যীশু ঈশ্বর এবং পবিত্র আত্মা ঈশ্বর হতে পারে, তবুও তিন ঈশ্বর নয় কিন্তু কেবল এক ঈশ্বর?
“মনুষ্য যুক্তির বাইরে”
এই গন্ডোগোল বিরাটভাবে ছড়িয়েছে। দিএনসাইক্লোপিডিয়া আমেরিকানা বলে যে ত্রিত্বের মতবাদ “মনুষ্য যুক্তির বাইরে” বলে বিবেচিত হয়।
ত্রিত্বকে মানে এরকম অনেকেই এটাকে ঐরূপে দেখে। মোন্সিনর ইউজিন ক্লার্ক বলেন: “ঈশ্বর এক এবং ঈশ্বর তিন। সৃষ্টিতে যেহেতু এরকম কিছু নেই, আমরা এটা বুঝতে পারিনা, কিন্তু কেবল মেনে নেই।” কার্ডিনাল জন ওকোনার বলেন: “আমরা জানি যে এটা গভীর রহস্য, যা আমরা বুঝতেও চেষ্টা করিনা।’’ এবং পোপ জন পল II বলেন যে “ত্রিত্ব ঈশ্বরের দুর্জ্ঞেয় রহস্য।”
এইরূপে, এ ডিকসেনারী অফ রিলিজিয়স নলেজ বলে: “সঠিকভাবে এই মতবাদটি কি বা সঠিকরূপে কিরূপে ব্যাখ্যা হবে, ত্রিত্ববাদীরা এ সম্বন্ধে নিজেদের মধ্যে একমত নয়।”
আমরা তাহলে বুঝতে পারি, কেন নিউ ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া মন্তব্য করে: “রোমান ক্যাথলিক সেমিনারগুলিতে ত্রিত্বের শিক্ষার খুব অল্প সংখ্যক শিক্ষকই আছেন যারা কোন না কোন সময়ে এই প্রশ্নের দ্বারা কোনঠাসা হন নি, ‘কিন্তু কিরূপে একজন ত্রিত্ব প্রচার করবেন?’ প্রশ্নটি যদি ছাত্রদের বেলাতে গন্ডগোলের লক্ষণস্বরূপ হয়, সম্ভবতঃ তাদের শিক্ষকদের বেলাতে ঐ গন্ডগোলের লক্ষণ কোন মতেই কম হবে না।”
ঐ পর্য্যবেক্ষনের সত্যতা লাইব্রেরী এবং ত্রিত্বের সমর্থনকারী পুস্তক সকল পরীক্ষা করে যাচাই করা যেতে পারে। এটার ব্যাখ্যা করতে অসংখ্য পৃষ্ঠা লেখা হয়েছে। তথাপি বিভ্রান্তিকর থিওলজিকাল কথা এবং ব্যাখ্যার গোলক ধাধার মধ্য দিয়ে লড়াই করা সত্ত্বেও, অনুসন্ধানকারীরা এখনও অসন্তুষ্ট আছেন।
এই ব্যাপারে, জেসুট যোষেফ ব্র্যাকেন তার হোয়াট আর দে সেইং অ্যাবাউট দি ট্রিনিটি? পুস্তকে মন্তব্য করেনঃ “পুরোহিতরা অনেক কষ্ট করে তাদের সেমিনারী বৎসরগুলিতে ত্রিত্ব সম্বন্ধে শিক্ষা নিয়েও . . . স্বভাবতঃই পুলপিট থেকে অন্য লোকদের কাছে সমর্পন করতে ইতঃস্তত বোধ করে, এমনকি ত্রিত্ব রবিবারেও . . . কেন একজন কোনকিছু দিয়ে অন্যদের একঘেয়ে করে তুলবে যখন পরিশেষে তারা নিজেরাই তা সঠিকরূপে বুঝতে পারে না?” তিনি আরো বলেন: “ত্রিত্ব হল প্রচলিত প্রথানুযায়ী বিশ্বাস, কিন্তু দৈনন্দিন খৃষ্টীয়ান জীবন এবং উপাসনাতে এর (প্রভাব) অল্প বা নেই।” তবুও এটা গির্জ্জাগুলির কেন্দ্রীয় মতবাদ!
ক্যাথলিক ঈশ্বরতত্ববিদ হ্যানস কুং খৃষ্টীয়ানিটি এন্ড দি ওয়ার্ল্ড রিলিজিয়নস নামে তার পুস্তকে মন্তব্য করেন যে ত্রিত্ব হল একটি কারণ কেন গির্জ্জারা ন-খৃষ্টীয়ান লোকদের মধ্যে বেশী প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে নাই। তিনি বলেন: “এমনকি শিক্ষিত মুসলমানরা তা বুঝে উঠতে পারেই নি যিহুদীরাও একইরূপে ত্রিত্বের ধারনা বুঝতে অকৃতকার্য্য হয়েছে। . . . ত্রিত্বের মতবাদের দ্বারা এক ঈশ্বর এবং ত্রিত্বের তিন ব্যক্তির মধ্যে যে পার্থক্য করা হয়েছে তা মুসলমানদের সন্তুষ্ট করে না, যারা সিরিয়াক, গ্রীক এবং লাতিন থেকে গ্রহীত ঈশ্বরতত্ত্ব উক্তিগুলি দ্বারা আলোকিত হওয়ার চাইতে বিভ্রান্ত। মুসলমানেরা মনে করে এটা শব্দের খেলামাত্র . . . কেনই বা কেউ ঈশ্বরের এক এবং অদ্বিতীয়তায় কিছু যোগ দিতে চাইবে যা ঐ এক এবং অদ্বিতীয়তায়কে ঘোলাটে বা বাতিল করতে পারে?”
“গন্ডগোলের ঈশ্বর নহেন”
ঐ ধরনের গন্ডগোলের মতবাদের উৎপও কিরূপে হল? দি ক্যাথলিক এনসাইক্লোপিডিয়া দাবী করে: “একটি এত রহস্যজনক ধর্ম্মমত যা ঐশিক প্রকাশ বলে আগেই মেনে নেওয়া হয়।” ক্যাথলিক পন্ডিতদ্বয় কার্ল রানার এবং হার্বাট ভরগ্রিমলার তাদের থিওলজিকাল ডিকসেনারীতে বলেন:
“ত্রিত্ব রহস্যজনক . . . কঠোর অর্থে যা . . . প্রকাশ ছাড়া বোধগম্য নহে এবং প্রকাশের পরও সম্পূর্ণরূপে বুদ্ধিতে কুলোয় না।”যাহোক, যেহেতু ত্রিত্ব এরূপ গন্ডগোলে রহস্যপূর্ণ বলে তর্ক উঠেছে, তবে এটা ঐশিক প্রকাশের ফলে এসেছে বললে আরেকটি বড় সমস্যার উদ্ভব হয়। কেন? কারণ ঐশিক প্রকাশ ঈশ্বর সম্বন্ধে ঐরূপ দৃষ্টিভঙ্গি দেয় না: “ঈশ্বর গোলযোগের ঈশ্বর নয়।”—১ করিন্থীয় ১৪:৩৩, রিভাইজড স্টান্ডার্ড ভারসান (আর এস)।
ঐ মন্তব্য অনুসারে, ঈশ্বর কি নিজের সম্বন্ধে এত গোলযোগপূর্ণ একটি মতবাদের জন্য দায়ী হবেন যা এমন কি ইব্রীয়, গ্রীক এবং লাতিন পন্ডিতেরা ব্যাখ্যা করতে পারে না?
উপরন্তু লোকদের কি ঈশ্বরতত্ত্ববিদ হতে হবে ‘একমাত্র সত্য ঈশ্বর এবং যীশুখৃষ্ট যাকে তিনি পাঠিয়েছেন তাকে জানতে’? (যোহন ১৭:৩, জেবি) তাই যদি হবে, তবে কেন এত অল্প সংখ্যক শিক্ষিত যিহুদী ধর্ম্মীয় নেতারা যীশুকে মশীহরূপে নিতে পেরেছিল? বরং তাঁর বিশ্বস্ত শিষ্যরা ছিল কৃষক, জেলে, করগ্রাহী, গৃহবধূ। ঐ সাধারণ লোকেরা ঈশ্বর বিষয়ে যীশুর শিক্ষাতে এত সুনিশ্চৎ ছিল যে তারা তা অন্যদের শেখাতে পারত এবং এমনকি তাদের বিশ্বাসের জন্য মরতেও রাজী ছিল।—মথি ১৫:১–৯;২১:২৩-৩২, ৪৩;২৩:১৩-৩৬; যোহন ৭:৪৫-৪৯; প্রেরিত ৪:১৩
[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
যীশুর শিষ্যরা ছিলেন নম্র সাধারণ লোক, ধর্ম্মীয় নেতৃবৃন্দরা নয়