সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ত্রিত্ব “প্রমাণিত পদগুলি” সম্বন্ধে কি?

ত্রিত্ব “প্রমাণিত পদগুলি” সম্বন্ধে কি?

ত্রিত্ব “প্রমাণিত পদগুলিসম্বন্ধে কি?

এটা বলা হয় যে কোন কোন বাইবেলের পদ ত্রিত্বের প্রমাণ দেয়। যাহোক, ঐরূপ পদ পড়ার সময়ে, আমাদের মনে রাখা উচিৎ যে বাইবেল এবং ঐতিহাসিক প্রমাণ ত্রিত্বকে সমর্থন করে না।

প্রমাণ হিসাবে যে কোন বাইবেলের পদের উল্লেখ সমগ্র বাইবেলের প্রসঙ্গের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বুঝতে হবে। প্রায়ই ঐরূপ পদের প্রকৃত অর্থ পার্শ্ববর্ত্তী পদগুলির প্রসঙ্গের দ্বারা পরিষ্কার হয়েছে।

একে তিন

দি নূতন ক্যাথলিক এনসাইক্লেপিড়িয়া ঐরূপ তিনটি “প্রমাণিত পদ” অর্পণ করে কিন্তু এও স্বীকার করে: “পবিত্র ত্রিত্বের মতবাদ পু[রাতন] নি[য়মে] শেখানো হয় না। নূ[তন] নি[য়মে] সবচাইতে প্রাচীন প্রমাণ হল পৌলের পত্রে, বিশেষতঃ ২করিন্থীয় ১৩:১৩ (কোন কোন বাইবেলে১৪পদ) এবং ১করিন্থীয় ১২:৪, ৬পদে”।সুসমাচারে ত্রিত্বের স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় কেবলমাত্র বাপ্তিস্মের ফরমূলা মথি ২৮:১৯পদে”।

ঐ পদগুলিতে তিন “ব্যক্তি” এইরূপে দি নিউ যেরূশালেম বাইবেলে তালিকাভুক্ত হয়েছে। দ্বিতীয় করিন্থীয় ১৩:১৩(১৪) তিনজনকে একসাথে এইরূপে বসায়: “প্রভু যীশু খৃষ্টের অনুগ্রহ, ঈশ্বরের প্রেম এবং পবিত্র আত্মার সহভাগিতা তোমাদের সকলের সহবর্ত্তী হউক।” প্রথম করিন্থীয় ১২:৪, পদে বলে: “অনুগ্রহ দান নানা প্রকার, কিন্তু সর্বদা আত্মা এক; এবং পরিচর্য্যা নানা প্রকার, কিন্তু প্রভু এক। ক্রিয়াসাধন গুন নানা প্রাকার, কিন্তু ঈশ্বর এক; তিনি সকলেতে সকল ক্রিয়ার সাধনকর্ত্তা।” এবং মথি ২৮:১৯ পদে পড়ি: “অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর।”

ঐসকল পদগুলি কি বলে যে ঈশ্বর, খৃষ্ট এবং পবিত্র আত্মা ত্রিত্বের ঈশ্বরত্ব গঠন করে, যে তিনটি, বিষয়ে, শক্তি এবং অনন্তকালে সমান? না, তারা নয়, যেমন যদু, মধু এবং শ্যাম তিনজন লোকের তালিকা বানানো মানে নয় যে তিনজন এক।

এই ধরনের উল্লেখ সন্বন্ধে, “ম্যাকক্লিনটক এবং ষ্ট্রং এর সাইক্লোপিডিয়া অফ বিবলিক্যাল, থিওলজিক্যাল এন্ড ইকলাজিয়াসটিকাল লিটারেচার” স্বীকার করে যে “কেবলমাত্র প্রমাণ করে তিনটি বিষয়ের নাম দেওয়া হয়েছে. . .কিন্তু এর দ্বারা আপনা আপনিই প্রমাণিত হয় না যে তিনটির সবগুলিই ঐশিক প্রকৃতিতে অধিষ্টান করার প্রয়োজন আছে এবং সমান ঐশিক সম্মান ধারন করে।”

ত্রিত্বের সমর্থনকারী হওয়া সত্ত্বেও, ঐ উৎস ২করিন্থীয় ১৩:১৩(১৪) পদ সম্বন্ধে বলেঃ “আমরা ন্যায়তঃ এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি না যে তারা সম কর্ত্তৃত্ব বা একই স্বভাবের।” এবং মথি ২৮:১৮--২০ পদ সম্বন্ধে এটা বলে: “পদটিকে, স্বয়ং নিলেও উল্লিখিত তিনটি বিষয়ের ব্যক্তিত্ব বা সমতা বা ঐশিকতাকে চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করে না।”

যীশু যখন বাপ্তিস্ম নেন তখন একই প্রসঙ্গে ঈশ্বর, যীশু এবং পবিত্র আত্মার সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। যীশু “ঈশ্বরের আত্মাকে কপোতের ন্যায় আপনার উপরে নামিয়া আসিতে দেখিলেন।” (মথি ৩:১৬) এতে, যাহোক, বলা হয় নাই যে তিনজনে এক। অব্রাহাম, ইসহাক এবং যাকোবকে একসাথে অসংখ্যবার উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু এতে তারা একব্যক্তি হয় না। পিতর, যাকোব এবং যোহন একসাথে তাদের নাম করা হয়েছে কিন্তু ত্রতেও তারা ত্রক হয় নাই। উপরন্ত্ত, ঈশ্বরের আত্মা তাঁর বাপ্তিস্মের সময়ে যীশুর উপরে নেমে আসে, প্রমাণিত হয় যে ঐ সময় পর্য্যন্ত যীশু আত্মার দ্বারা অভিষিক্তি হন নাই। এই যদি হয়, তবে কিরূপে যীশু ত্রিত্বের অংশ হতে পারতেন যেখানে তিনি সর্ব্বদা পবিত্র আত্মার সাথে এক ছিলেন?

তিনটি একসাথে আছে তার আরেকটি উল্লেখ পাওয়া যায় কোন কোন প্রাচীন বাইবেল অনুবাদের ১যোহন ৫:৭পদে। পন্ডিতেরা যাহোক স্বীকার করে যে এই শব্দগুলি যদিও আদিতে বাইবেলে ছিল না কিন্তু অনেক পরে যোগ দেওয়া হয়। বেশীরভাগ আধুনিক অনুবাদকেরা ন্যায্যতঃই এই মিথ্যা পদটিকে বাদ দেয়।

অন্যান্য “প্রমাণিত পদগুলি” কেবলমাত্র পিতা এবং যীশু এই দুইজনের সম্বন্ধ নিয়ে লেখেছে। আসুন আমরা কয়েকটি বিবেচনা করি।

“আমি ও পিতা আমরা এক”

যোহন ১০:৩০ পদের ঐ পদটি, প্রায়ই ত্রিত্বের সমর্থনে উল্লেখ করা হয়ে থাকে, যদিও নাকি তৃতীয় ব্যক্তির উল্লেখ তাতে নাই। কিন্তু যীশু স্বয়ং পিতার সাথে তাঁর “এক” হওয়া বলতে কি বুঝিয়েছেন তা প্রদর্শন করেছেন । যোহন ১৭:২১, ২২ পদে তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছেন যেন তাঁর শিষ্যরা “সকলে এক হয়, পিতঃ, যেমন তুমি আমাতে ও আমি তোমাতে, তেমনি তাহারাও যেন আমাদিগতে থাকে. . .যেন তাহারা এক হয়, যেমন আমরা এক।” যীশু কি প্রার্থনা করছিলেন যে তাঁর শিষ্যরা সকলে এক সত্ত্বা হবে? না। স্পষ্টতঃই যীশু প্রার্থনা করছিলেন যে তারা চিন্তায় এবং উদ্দেশ্যে এক হবেন, যেমন তিনি এবং ঈশ্বর ছিলেন --আরও দেখুন ১ করিন্থীয় ১:১০

১ করিন্থীয় ৩:৬, পদে পৌল বলেন: “আমি রোপন করিলাম, আপেল্লো জল সেচন করিল. . . আর রোপক ও সেচক উভয়ই এক।” পৌল বুঝাননি যে তিনি এবং আপেল্লো দুই ব্যাক্তি এক ব্যক্তিতে ছিল, তিনি বুঝিয়েছিলেন যে তাদের উদ্দেশ্য এক ছিল। “এক” শব্দের জন্য পৌল যে গ্রীক শব্দ ব্যবহার করেছেন তা (হেন) ক্লীবলিঙ্গ, আক্ষরিকভাবে “এক (বিষয়)”,সহযোগিতায় একতাকে নির্দ্দেশ করে। এই একই শব্দ যীশু ব্যবহার করেছিলেন যোহন ১০:৩০ পদে, তাঁর পিতার সাথে তাঁর সম্বন্ধকে বর্ণনা করতে। ঐ একই শব্দ যীশু যোহন ১৭:২১, ২২ পদেও ব্যবহার করেছিলেন। কাজেই তিনি যখন “এক” (হেন) শব্দ ব্যবহার করেন এইসকল ক্ষেত্রে, তিনি চিন্তা এবং উদ্দেশ্যের একতা সম্বন্ধে বলছিলেন।

কমেন্টরী অন দি গসপেল অ্যার্কডিং টু জন: নামক পুস্তকে যোহন ১০:৩০ সম্বন্ধে জন ক্যালভিন্‌ (যিনি ত্রিত্ববাদী ছিলেন) বলেছিলেন: “খৃষ্ট পিতার একই. . . উপাদান এটা প্রমাণ করতে প্রচীনেরা এই পদটির ভূল ব্যবহার করেছে। কারণ খৃষ্ট বস্তুর একতা সম্বন্ধে বলছিলেন না কিন্তু তাঁর পিতার সাথে এক মিল সম্বন্ধে বলছিলেন।”

যোহন ১০:৩০ পদের পরেই লিখিত পদগুলির প্রসঙ্গে, যীশু জোরের সাথে যুক্তি করেন যে তাঁর কথাগুলির দ্বারা তিনি ঈশ্বর দাবী করছিলেন না। ভুলভাবে ঐ সিদ্ধান্তে উপনীত যিহুদীরা যারা তাঁকে পাথর মারতে চেয়েছিল তাদের তিনি প্রশ্ন করেছিলেন: “তবে পিতা যাঁহাকে পবিত্র করিলেন ও জগতে প্রেরণ করিলেন, তোমরা কি তাঁহাকে বল যে, তুমি ঈশ্বর নিন্দা করিতেছ, কেননা আমি বলিলাম যে, আমি ঈশ্বরের পুত্র?” যোহন ১০: ৩১--৩৬,এন ই) না, যীশু দাবী করেন যে তিনি ঈশ্বর পুত্র ছিলেন না, কিন্তু ঈশ্বরের পুত্র।

“নিজেকে ঈশ্বরের সমতুল্য করা?”

ত্রিত্বের সমর্থনে আর একটি পদ উল্লেখ করা হয় তা যোহন ৫:১৮। এতে বলা হয় যে যিহুদীরা (যেমন যোহন ১০:৩১--৩৬) যীশুকে নিধন করতে চেয়েছিল কারণ “তিনি ঈশ্বরকে নিজ পিতা বলিতেন, আপনাকে ঈশ্বরের সমান করিতেন।”

কিন্তু কে বলে যে যীশু নিজেকে ঈশ্বরের সমান করছিলেন? যীশু নয়। পরবও পদেই তিনি এই মিথ্যা অভিযোগের বিরুদ্ধে নিজের হয়ে কথা বলেন। (১৯): “এই অভিযোগে যীশু উত্তর করিয়া. . . তাহাদিগকে কহিলেন ‘পুত্র আপনা হইতে কিছুই করিতে পারেন না; কেবল পিতাকে যাহা করিতে দেখেন, তাহাই করেন’।” --জে বি

এতদ্বারা যীশু যিহুদীদের দেখালেন যে তিনি ঈশ্বরের সমান ছিলেন না কাজেই নিজের ইচ্ছামত কাজ করতে পারেন না। আমরা কি কল্পনা করতে পারি যে একজন সর্ব্বশক্তিমান ঈশ্বারের সমান হয়েও বলবেন “আপনা হইতে কিছুই করিতে পারেন না?” (তুলনীয় দানিয়েল ৪:৩৪, ৩৫) আগ্রহজনকভাবে, যোহন ৫:১৮ এবং ১০:৩০ উভয়ের প্রসঙ্গে দেখায় যে যীশু যিহুদীদের মিথ্যা অভিযোগ থেকে নিজেকে বাঁচাতে কথা বলেছেন যারা ত্রিত্ববাদীদের মতই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

“ঈশ্বরের সমান”?

ফিলিপীয় ২:৬ পদে ১৬০৯ সালের ক্যাথলিক ডুয়ে সংস্করন (ডিওয়াই) যীশু সন্বন্ধে বলে: “ঈস্বরের স্ববূপবিশিষ্ট থাকিতে তিনি ঈশ্বরের সমতুল্য হওয়াকে ডাকাতি মনে করিলেন না।” ১৬১১ সালের দি কিং জেমস সংস্করন (কে জে) একই প্রকার পড়ে। যীশু ঈশ্বরের সমতুল্য ছিলেন এই ধারনাকে সমর্থন করতে ঐরূপ কয়েকটি সংস্করন এখনও কেউ কেউ ব্যবহার করেন। কিন্তু লক্ষ্য করুন কিরূপে অন্যান্য অনুবাদকেরা এই পদটিকে লিখছে:

১৮৬৯: “যিনি ঈশ্বরের স্বরূপ বিশিষ্ট থাকাতে ঈশ্বরের সমতুল্য হবার বিষয়টিকে আকড়াইয়া ধরবার চেষ্টা করেন নি।” জি. আর নয়িস কর্ত্তৃক দি নিউ টেষ্টামেন্ট।

১৯৬৫: “তিনি প্রকৃতই ঐশিক প্রকৃতির! --কখনও আত্ম--প্রত্যয়ের সাথে নিজেকে ঈশ্বরের সমতুল্য করেন নি।” ফ্রেডরিক ফ্যাফলিন কর্ত্তৃক সংশোধিত সংস্করন, ড্যাস নিউ টেষ্টামেন্ট

১৯৬৮: “যিনি, ঈশ্বরের স্বরূপ বিশিষ্ট হয়েও, লোভবশতঃ ঈশ্বরের সমান হবার বিষয় নিজস্ব করার কথা বিবেচনা করেন নাই।” লা বিবিয়া কনকরডাটা

১৯৭৬: তাঁর সর্বদা ঈশ্বরের প্রকৃতি ছিল, কিন্তু তিনি জোর করে ঈশ্বরের সমান হবার চেষ্টার কথা চিন্তা করেন নাই। টুডেজ ইংলিশ সংস্করন।

১৯৮৪: “যিনি, ঈশ্বরের স্বরূপ বিশিষ্ট থাকা সত্বেও, ঈশ্বরের সমান হবার বিষয়কে দখল করার কথা বিবেচনা করেন নাই।” নিউ ওয়ার্ল্ড ট্রানস্লেসন অফ দি হোলি স্কৃপচারস।

১৯৮৫: “যিনি, ঈশ্বরের স্বরূপ বিশিষ্ট হওয়া সত্বেও, ঈশ্বরের সমান হবার বিষয়টিকে আকড়াইয়া ধরার জন্য ব্যগ্র হন নাই।”দি নিউ যেরূশালেম বাইবেল।

যাহোক, কেউ কেউ দাবী করে যে এমন কি এই সকল আরও শুদ্ধ অনুবাদগুলিও বুঝায় যে (১) যীশু ইতিমধ্যেই সমান ছিলেন কিন্তু তা ধরে থাকতে চান নি বা (২) তাঁকে সমান হবার বিষয়টিকে আকড়ইয়া ধরার প্রেয়োজন ছিল না কারণ ইতিমধ্যেই সেটা তাঁর ছিল।

এই সম্বন্ধে রাল্‌ফ মারটিন, দি এপিসল অফ পল টু দি ফিলিপিয়ানসে আদি গ্রীক সম্বন্ধে বলেন: “যাহোক এটা প্রশ্নজনক যে ক্রিয়াটির প্রকৃত অর্থ ‘ছিনিয়ে নেওয়া’,‘জোরে ছিনাইয়া নেওয়া’ হতে ‘দৃঢ়রূপে ধরে রাখাতে’ সহজে যেতে পারে কিনা।” দি এক্সপজিটর’স গ্রীক টেস্টামেন্ট আরও বলে: “আমরা এমন কোন পদ পাই না যেখানে [হারপাজো] অথবা এর কোন প্রকৃতি প্রত্যায়ন্ত শব্দ ‘দখলে ধরে রাখা’, ‘অধিকারে রাখা’ অর্থ বহন করে। এটা স্পষ্টতঃই বুঝায় যে ‘ছিনিয়ে নেওয়া’ ‘জোর পূর্বক ছিনিয়ে নেওয়া।’ কাজেই ‘আকড়াইয়া ধরতে ব্যগ্র’ এই প্রকৃত অর্থ হতে সম্পূর্ণ আলাদা ‘দৃঢ়রূপে ধরে রাখা’ এই অর্থে যাওয়া ঠিক নয়।”

উপরে লেখা থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে ডুয়ে এবং কিং জেমস সংস্করনের অনুবাদকেরা ত্রিত্ববাদীদের মন যোগাতে নিয়মকে ভেঙ্গেছে। যীশু ঈশ্বরের সমান হওয়া উপযুক্ত মনে করেছিলেন ঐ কথা থেকে অনেক দূরে ফিলিপীয় ২:৬ পদের গ্রীক অর্থ ঠিক উল্টোটাই প্রদর্শন করে, যে যীশু এটা উপযুক্ত বলে মনে করেন নাই।

চতুষ্পার্শ্বস্হ পদগুলির প্রসঙ্গ (৩--৫, ৭, ৮, ডি ওয়াই) ৬ পদ কিরূপে বুঝতে হবে তা স্পষ্ট করে। ফিলিপীয়দের বলা হয়েছিল: “নম্রভাবে প্রত্যেকজন আপনা হইতে অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর”। তারপরে পৌল খৃষ্টকে এই মনোভাবের উল্লেখয্যেগ্য উদাহরণ রূপে ব্যবহার করেন: “খৃষ্ট যীশুতে যে ভাব ছিল, তাহা তোমাদিগতেও হউক”। কি ভাব? ঈশ্বরের সমতুল্য হওয়াকে ডাকাতি মনে না করা’? না, তাতে যে বিষয়টি বলা হল তার ঠিক বিপরীতই হবে। বরং যীশু, যিনি ‘ঈশ্বরকে নিজের চাইতে উত্তম ভেবেছেন’ কখনও ‘ঈশ্বরের সমতুল্যতাকে ছিনিয়ে নিতে’ চাইবেন না, পরন্তু তিনি “নিজেকে নম্র করেন, মৃত্যু পর্য্যন্ত আজ্ঞাবহ হন।”

নিশ্চিতই, এতে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কোন অংশ সম্বন্ধে কথা বলা হয় নাই। এতে যীশু খৃষ্ট সম্বন্ধে বলা হয় যিনি পৌলের কথাকে ফুটিয়ে তুলতে সিদ্ধ উদাহরণ স্হাপন করেছিলেন। --যথা একজনের শ্রেষ্ট এবং স্রষ্টা, যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি নম্র এবং বাধ্য থাকার গুরুত্ব।

আমি আছি”

যোহন ৮:৫৮ পদের বিভিন্ন অনুবাদ, যেমন দি যেরূশালেম বাইবেল যীশুর কথা এইভাবে লিখে: “অব্রাহামের জন্মের পূর্ব্বাবধি আমি আছি।” যীশু কি এখানে ত্রিত্ববাদিদের দাবি অনুসারে শিক্ষা দিচ্ছিলেন, যে তিনি “আমি আছি” এই উপাধি দ্বারা পরিচিত ছিলেন? এবং, তারা যেমন দাবি করে, এর অর্থ কি এই যে তিনি ইব্রীয় শাস্ত্রাবলীর যিহোবা ছিলেন, যেহেতু কিং জেমস ভারসান যাত্রাপুস্তক ৩:১৪ পদে বলে: “ঈশ্বর মোশিকে কহিলেন, “আমি যে আছি সেই আছি”?

যাত্রাপুস্তক ৩:১৪ (কে জে) পদের “আমি আছি” এই উক্তি ঈশ্বরের উপাধিরূপে ব্যবহৃত হয়েছে দেখাতে যে তিনি প্রকৃতই বিদ্যমান এবং তাঁর প্রতিঞ্জামত কাজ করবেন। ডাক্টার জে. এইচ. র্হাট কর্ত্তৃক সম্পাদিত দি পেন্টাটুক এন্ড হাফটোরাস এই পদটি সম্বন্ধে বলে: “বন্দিদশায় থাকা ইস্রায়েলদের কাছে, অর্থটি হবে, ‘তিনি যদিও তাঁর শক্তি তোমাদের প্রতি এখনও দেখাননি, তিনি তা করবেন; তিনি অনন্তকালীন এবং অবশ্যই তোমাদের মুক্তিসাধন করবেন।’ বেশীর ভাগ আধুনিকেরা যাত্রাপুস্তক (৩: ১৪) ‘আমি যে হইব সেই হইব’ অনুবাদ করার সময়ে রসিকে অনুসরন করে (একটি ফরাসী বাইবেল এবং তালমূদ মন্তব্যকারী)”।যাত্রাপুস্তক ৩:১৪ পদের অভিব্যক্তি থেকে যোহন ৮:৫৮ পদের অনেক পার্থক্য আছে। যীশু এটাকে একটা নাম বা উপাধিরূপে নয় কিন্তু মনুষ্যপূর্ব অস্তিত্বকে ব্যাখ্যা করার উপায়রূপে ব্যবহার করেন। সুতরাং আসুন লক্ষ্য করি কিরূপে অন্যান্য বাইবেল সংস্করনগুলি যোহন ৮:৫৮ পদ লেখে:

১৮৬৯: “অব্রাহামের পূর্বে থেকে আমি আছি” দি নিউ টেষ্টামেন্ট, জি. আর. নয়িস কর্ত্তৃক।

১৯৩৫: “অব্রাহামের জন্মের পূর্বে আমার অস্তিত্ব ছিল।” -দি বাইবেল -এন আমেরিকান ট্রানস্লেসন, জে. এম. পি স্মিথ এবং ই. জে. গুডস্পীড কর্ত্তৃক।

১৯৬৫: “অব্রাহামের জন্ম হবার পূর্বাবধি, আমি যে আছি সে ইতিমধ্যেই ছিল।” ড্যাস নিউ টেস্টামেন্ট, র্জজ জিংক কর্ত্তৃক।

১৯৮১: “অব্রাহামের জন্মের পূর্বে আমি জীবিত ছিলাম।” দি সিম্পেল ইংলিস বাইবেল।

১৯৮৪: “অব্রাহামের অস্তিত্বের পূর্বে আমি আছি।” নিউ ওয়ার্ল্ড ট্র্যানস্লেসন অফ দি হোলি স্কৃপচারস।

এই প্রকার যে গ্রীক শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে তার প্রকৃত অর্থ হল এই যে ঈশ্বরের সৃষ্ট “প্রথমজাত” যীশু অব্রাহামের জন্মের অনেক পূর্বে অবস্হান করছিলেন। --কলসীয় ১:১৫; হিতোপদেশ ৮:২২,২৩,৩০; প্রকাশিত ৩:১৪।

পুনঃশ্চ, প্রসঙ্গ দেখায় যে এটাই হল ঠিক ব্যাখ্য। এই সময়ে যিহুদীরা যীশুকে মারবার জন্য পাথর তুলে নিল কারণ তারা বলল যে যদিও তিনি এখনও ৫০ বৎসর হন নাই “অব্রাহামকে দেখেছেন” বলে দাবী করছেন। (৫৭পদ) যীশু স্বাভাবিক ভাবেই তার বয়সের সত্যতা বলার জন্য সাড়া দিয়েছিলেন। কাজেই তিনি তাদের স্বাভাবিকভাবেই বলেছিলেন যে তিনি “অব্রাহামের জন্মের পূর্বে বেঁচে ছিলেন।।”-- দি সিম্পল ইংলিস বাইবেল।

“বাক্য ঈশ্বর ছিলেন”

যোহন ১:১ পদে দি কিং জেমস ভারসান পড়ে: “আদিতে বাক্য ছিল এবং বাক্য ঈশ্বরের সাথে ছিল এবং বাক্য ঈশ্বর ছিল। ”ত্রিত্ববাদীরা দাবী করে যে এর অর্থ হল “বাক্য” (গ্রীক, হো লো গস) যিনি যীশুখৃষ্টরূপে পৃথিবীতে এসেছিলেন তিনি স্বয়ং সর্বশক্তিমান ঈশ্বর ছিলেন।

যাহোক, এখানে লক্ষ্য করুন যে সঠিক ভাবে বুঝবার জন্য পুনরায় প্রসঙ্গ ভিত্তি স্হাপন করে। এমন কি দি কিং জেমস ভারসান বলে, “বাক্য ঈশ্বরের সাথে ছিলেন”। (বাকা অক্ষর আমাদের) কেউ যদি আরেকজন ব্যক্তির “সাথে” থাকে সে ঐ ব্যক্তি হতে পারে না। এর সাথে মিল রেখে জেসুট জোসেফ এ. ফিজমায়ার কর্ত্তৃক সম্পাদিত দি জারনাল অফ বিবলিক্যাল লিটারেচার বলে যে যদি নাকি যোহন ১:১ পদের পরবর্ত্তী অংশ ঈশ্বর “টি” বুঝাতে অনুবাদ করা হয়, তবে” তা পূর্ববর্ত্তী অংশের বিরুদ্ধে যাবে,” যাতে বলা হয় যে বাক্য ঈশ্বরের সাথে ছিলেন।

আরও লক্ষ্য করুন, অন্যান্য অনুবাদগুলি পদের এই অংশটি কি ভাবে লেখে:

১৮০৮: “এবং বাক্য একটি ঈশ্বর ছিলেন।” দি নিউ টেষ্টামেন্ট ইন এন ইমপ্রুভড ভারসান, আপন দি বেসিস অফ আর্কবিশপ নিউকামস নিউ ট্রানস্লেসন: উইথ এ কারেকটেড টেকসট।

১৮৬৪: “এবং একটি ঈশ্বর ছিলেন বাক্য।” দি এমফ্যাটিক ডায়াগ্লট, ইন্টারলিনিয়ার রিডিং, বেনজামিন উইলসন কর্ত্তৃক।

১৯২৮: “এবং বাক্য একটি ঐশিক ব্যক্তি ছিলেন”। লা বাইবেল ডিউ সেন্টেনায়ার, এল এভানজাইল সিলন জিন, মরিস গোগূয়েল কর্ত্তৃক।

১৯৩৫: “এবং বাক্য ঐশিক ছিলেন।” দি বাইবেল--অ্যান আমেরিকান ট্রানস্লেসন, জে. এম. পি স্মিথ এবং ই. জে. গুডস্পীড কর্ত্তৃক।

১৯৪৬: “এবং ঐশিক ধরনের ছিল বাক্য।” ড্যাস নিউ টেষ্টামেন্ট, লূডউইগ থাইম কর্ত্তৃক।

১৯৫০: “এবং বাক্য একটি ঈশ্বর ছিল”। নিউ ওয়ার্ল্ড ট্রানস্লেশন অফ দি খৃষ্টীয়ান গ্রীক স্কৃপচারস

১৯৫৮: “এবং বাক্য একটি ঈশ্বর ছিল।” দি নিউ টেস্টামেন্ট, জেমস্‌ এল. টোমানেক কর্ত্তৃক।

১৯৭৫: “এবং বাক্য একটি ঈশ্বর (বা একটি ঐশিক ধরনের) ছিল।” ড্যাস এভানজেলিয়াম ন্যাক জোহানেস, সিগফ্রিড সুলজ কর্ত্তৃক।

১৯৭৮: “এবং ঈশ্বরের মত ছিল লোগস”। ড্যাস এভানজেলিয়াম ন্যাক জোহানেস, জোহানেস সনাইডার কর্ত্তৃক

যোহন ১:১ পদে গ্রীক বিশেষ্য থিওস (ঈশ্বর) দুইবার উল্লেখ হয়েছে। প্রথমটি উল্লেখ করে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে, যার সাথে বাক্য ছিল (“এবং বাক্য) [লোগাস] ঈশ্বরের সাথে ছিল [থিওসের একটি রূপ]। প্রথম থিওসটির পূর্বে টন শব্দ [দ্যা] আছে, গ্রীক নির্দ্দিষ্ট আর্টিকেলের একটি রূপ যা নির্দ্দিষ্ট ব্যক্তিত্বকে নির্দ্দিষ্ট করে, এইক্ষেত্রে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর (“এবং বাক্য [দ্যা] ঈশ্বরের সাথে ছিলেন।”)

অপরপক্ষে, যোহন ১:১পদে দ্বিতীয় থিওসের পূর্বে কোন আর্টিকেল নেই। কাজেই আক্ষরিক অনুবাদ হল, “এবং ঈশ্বর বাক্য ছিল।” তাথাপি আমরা দেখি যে অনেক অনুবাদ এই দ্বিতীয় থিওসকে (একটি বিধেয় বিশেষ) যেমন “ঐশিক”, “ঈশ্বর তুল্য”, বা “একটি ঈশ্বর” রূপে লিখেছে। কোন কর্ত্তৃত্বে তারা এটা করে?

কয়িন গ্রীক ভাষাতে নির্দ্দিষ্ট আর্টিকেল ছিল (“দ্যা”) কিন্তু এতে অনির্দ্দিষ্ট আর্টিকেল ছিল না (“এ” বা “অ্যান”) কাজেই বিধেয় বিশেষ্যর পূর্বে যখন নির্দ্দিষ্ট আর্টিকেল নেই, সেটা প্রসঙ্গের উপরে নির্ভর করে অনির্দ্দিষ্ট হতে পারে।

দি জারনাল অফ বিবলিক্যাল লিটারেচর বলে যে “ক্রিয়ার পূর্ববর্ত্তী বিধেয়তে গ্রীক গ্রামার [কোন আর্টিকেল] না থাকলে সাধারণতঃ গুনগত অর্থ বোঝায় ।” জারনালটি যেমন বলে, এটা প্রমাণ করে যে লোগাসকে একটি ঈশ্বরের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। যোহন ১:১ পদ সম্বন্ধে এটা আরও বলে: “বিধেয়ের গুনগত শক্তি এত জোরাল যে বিশেষ্য [থিওস] কে নির্দ্দিষ্টরূপে নেওয়া যেতে পারে না।”

কাজেই যোহন ১:১ পদ বাক্যের গুনগত মানের উপরে জোর দেয়, যেমন তিনি “ঐশিক” “ঈশ্বর তুল্য”, “একটি ঈশ্বর” ছিলেন কিন্তু সর্বশক্তিমান ঈশ্বর নয়। এটা বাইবেলের বাকি অংশের সাথে একমিল যা দেখাই যে যীশু যাকে ঈশ্বরের মুখপাত্রের ভূমিকাতে “বাক্য” বলা হয়েছে তাঁর থেকে শ্রেষ্ট, সর্বশক্তিমান ঈশ্বর কর্ত্তৃক প্রেরিত বাধ্য বশীভূত ব্যক্তি।

আরো অনেক বাইবেল পদ আছে যেখানে প্রায় সমস্ত অনুবাদকেরা একই গ্রীক বাক্যের গঠন অনুবাদের সময় আর্টিকেল “এ” (একটি) সামঞ্জস্যরূপে বসিয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, মার্ক ৬:৪৯ পদে শিষ্যরা যখন যীশুকে জলের উপরে হাঁটতে দেখেন, কিং জেমস্‌ ভারসান বলেঃ “তারা মনে করল এটা একটি আত্মা ছিল।” গ্রীকে, “আত্মার পূর্বে” “এ” (একটি) নেই। কিন্তু প্রায় সমস্ত অনুবাদ “একটি” যোগ দেয় কারণ আক্ষরিক অনুবাদ, “এটা আত্মা ছিল” প্রসঙ্গের সাথে মানাবে না। একই রূপে, যেহেতু যোহন ১:১ দেখায় যে বাক্য ঈশ্বরের সাথে ছিলেন, তিনি ঈশ্বর হতে পারেন না কিন্তু “একটি ঈশ্বর” বা “ ঐশিক” ছিলেন।

একজন ঈশ্বরতত্ত্ববিদ এবং পন্ডিত জোসেফ হেনরি থায়ার, যিনি আমেরিকান ষ্টার্ন্ডাড ভারসানের উপরে কাজ করেছিলেন সরলভাবে বলেনঃ “লোগস ঐশিক ছিল, ঐশিক ব্যক্তি স্বয়ং নয়।”এবং জেসুট জন এল. ম্যাকেনজি তাঁর ডিকসেনারী অফ দি বাইবেলে লিখেছিলেন: “যোহন ১:১ পদকে শুদ্ধভাবে অনুবাদ করা উচিৎ. . .‘বাক্য একটি ঐশিক ব্যক্তি ছিলেন।’”

একটি নিয়মলঙ্ঘন?

যাহোক, কেউ কেউ দাবী করেন যে ঐরূপ অনুবাদ ১৯৩৩ সালে গ্রীক পন্ডিত ই. সি. কলওয়েলের প্রকাশিত গ্রীক ব্যাকরণের নিয়ম লঙ্ঘন করে। তিনি নিশ্চয় পূর্বক বলেন যে গ্রীক ভাষাতে একটি বিধেয় বিশেষ্যের “[নির্দ্দিষ্ট] আর্টিকেল হয় যখন তা ক্রিয়ার পরে বসে, ক্রিয়ার পূর্বে বসলে [নির্দ্দিষ্ট] আর্টিকেল হয় না।” এর দ্বারা তিনি বুঝান যে ক্রিয়ার পূর্ববর্ত্তী বিধেয় বিশেষ্যের সামনে নির্দ্দিষ্ট আর্টিকেল (“দ্যা”) টি আছে বলে বুঝে নিতে হবে। যোহন ১:১ পদে দ্বিতীয় বিশেষ্য (থিওস), বিধেয়, ক্রিয়ার পূর্বে আছে--“এবং (থিওস) বাক্য ছিলেন।” কাজেই কলওয়েল দাবী করেন, যোহন১:১ পদ এইভাবে পড়া উচিত “এবং [“দ্যা”] ঈশ্বর বাক্য ছিলেন।

কিন্তু যোহন ৮:৪৪ পদের দুইটি উদাহরন বিবেচনা কবুন। সেখানে যীশু দিয়াবল সম্বন্ধে বলেন: “সে ছিল একটি নরঘাতক” এবং “সে হল একটি মিথ্যাবাদী”। যেমন যোহন ১:১ পদে তেমনি গ্রীকে বিধেয় বিশেষ্যগুলি (“নরঘাতক” এবং “মিথ্যাবাদী”) ক্রিয়াগুলির (“ছিল” এবং “হল”) পূর্বে বসে। দুইটি বিশেষ্যর কোনটির সামনে অনির্দ্দিষ্ট আর্টিকেল নেই কারণ গ্রীকে কোন অনির্দ্দিষ্ট আটিকেল নেই। কিন্তু বেশীর ভাগ অনুবাদ “এ” (একটি) শব্দ ব্যবহার করে কারণ গ্রীক ব্যাকরণ এবং প্রসঙ্গেএঁর প্রয়োজন হয়।--আরও দেখুন মার্ক ১১:৩২; যোহন ৪:১৯; ৬:৭০; ৯:১৭; ১০:১; ১২:৬

বিধেয় বিশেষ্য সম্বন্ধে কলওয়েলকে এটা স্বীকার করতে হয়, কারণ তিনি বলেছিলেন: “এটা অনির্দ্দিষ্ট (একটি,“এ” বা “অ্যান”) হয় যখন প্রসঙ্গ দাবী করে।” কাজেই এমন কি সেও স্বীকার করে যে প্রসঙ্গের প্রয়োজন অনুসারে, এই ধরনের বাক্যের কাঠামাতে অনুবাদকেরা বিশেষ্যের সামনে অনির্দ্দিষ্ট আর্টিকেল বসাতে পারেন।

যোহন ১:১ পদে কি প্রসঙ্গের জন্য অনির্দ্দিষ্ট আর্টিকেলের প্রয়োজন আছে? হাঁ, কারণ সমগ্র বাইবেলের প্রমাণ হল যীশু সর্বশক্তিমান ঈশ্বর নয়। এইরূপে, ব্যাকরণের নিয়ম সম্বন্ধে কলওয়েলের প্রশ্নজনক রীতি নয়, কিন্তু ঐরূপ ক্ষেত্রে প্রসঙ্গের উচিৎ অনুবাদককে পরিচালনা করা। এবং এটাই স্পষ্ট হয়েছে বিবিধ অনুবাদ থেকে যা যোহন ১:১ পদে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে “এ”, একটি, অনির্দ্দিষ্ট অর্টিকেল প্রবেশ করিয়েছে যা অনেক পন্ডিতেরা ঐরূপ কৃত্রিম নিয়মে অসম্মত হয় এবং সেরূপে ঈশ্বরের বাক্য।

কোন দ্বন্দ নেই

যীশু খৃষ্ট “একটি ঈশ্বর” বলাতে কি একমাত্র একটি ঈশ্বর বাইবেলের শিক্ষার বিরোধিতা করা হয়? না, কখনও কখনও বাইবেল এই উক্তি শক্তিশালী প্রাণীদের প্রতিও ব্যবহার করেছে। গীত ৮:৫ পদে পড়া হয়: “তুমি ঈশ্বরতুল্যদের ইব্রীয়, [‘ইলোহিম’], অর্থাৎ দূতগণের চাইতে তাহাকে [মনুষ্য] অল্পই ন্যুন করিয়াছ।” তিনি নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবি করেন যিহুদীদের এই অভিযোগের বিবুদ্ধে, যীশু স্বপক্ষে বলেন যে “তোমাদের ব্যবস্হায় কি লেখা নাই, যাহাদের নিকটে ঈশ্বরের বাক্য উপস্হিত হইয়াছিল তাহাদের তিনি ঈশ্বর” বলিলেন---অর্থাৎ, মানবীয় বিচারকগণ। (যোহন ১০:৩৪, ৩৫,) জে বি; গীত সংহিতা ৮২:১--৬) এমনকি শয়তানকে ২করিন্থীয় ৪:৪ পদে “এ জগতের দেব বলা হয়।”

দূতগণ, অসিদ্ধ ব্যক্তিরা বা শয়তানের চাইতে যীশুর পদ অনেক উচ্চে। যেহেতু এদেরকে “ঈশ্বর”, শক্তিশালী ব্যক্তি বলা যেতে পারে, তবে নিশ্চিতই যীশুকে “একটি ঈশ্বর” বলা যেতে পারে। যিহোবার সাথে তাঁর অনুপম সম্বন্ধ হেতু, যীশু হলেন একজন “শক্তিশালী ঈশ্বর।” --যোহন ১:১; যিশাইয় ৯:৬

কিন্তু “শক্তিশালী ঈশ্বর” এই শব্দদ্বয়ের প্রথম অক্ষরগুলি ইংরেজিতে বড় অক্ষরে লেখাতে এটাই কি নির্দ্দেশিত হয় না যে যীশু কোন ভাবে যিহোবা ঈশ্বরের সমতুল্য? মোটেই না। যিশাইয় কেবল মাত্র ভাববাণী করেছিলেন যে তাঁর চারটি নামের মধ্যে এটি হবে একটি যার দ্বারা যীশুকে ডাকা যাবে এবং ইংরেজি ভাষাতে ঐ নামগুলিকে বড় অক্ষরে লেখা হয়। তথাপি, যদিও যীশুকে “শক্তিশালী” বলা হয়েছে, কেবলমাত্র একজনই হলেন “সর্বশক্তিমান”। যিহোবা ঈশ্বরকে “সর্বশক্তিমান” বলাতে অল্পই তাৎপর্য্য থাকে যদি না অন্যরাও থাকে যাদেরকেও ঈশ্বর বলা হয় কিন্তু তারা তাদের পদে হলেন ছোট বা নিকৃষ্ট।

দি বুলেটিন অফ দি জন রিলেন্ডস লাইব্রেরী যা ইংলন্ডে স্হাপিত বলে যে ক্যাথলিক ঈশ্বরতত্ত্ববিদ কার্ল রানার অনুসারে যখন থিওস শাস্ত্রাবলীতে ব্যবহৃত হয় যেমন যোহন ১:১ পদে খৃষ্টের উল্লেখে; “এদের কোন ক্ষেত্রেই ‘থিয়সকে’ এমন ভাবে ব্যবহার করা হয় নাই যার ফলে যীশুকে অন্যত্র নুতন নিয়মের “হো থিয়সের” রূপের সাথে সনাক্ত করা যেতে পারে, অর্থাৎ সর্বশক্তিমান ঈশ্বর।” এবং বুলেটিন আরো বলেঃ “নূতন নিয়মের লেখকেরা যদি বিশ্বাস করেন যে এটা মূল্যবান যে বিশ্বাসীরা যীশুকে ‘ঈশ্বর’ বলে স্বীকার করা উচিৎ তবে নুতন নিয়মে এই স্বীকারোক্তির বিষয় সম্পূর্ণরূপে অনুপস্হিত থাকার বিষয় কি ব্যাখ্যা সাধ্য”?

কিন্তু প্রেরিত থমাস যে যোহন ২০:২৮ পদে যীশুকে “আমার ঈশ্বর এবং আমার প্রভু” বলেছেন সে সম্বন্ধে কি বলা যেতে পারে? থমাসের কাছে, যীশু “একজন ঈশ্বর” তুল্য বিশেষতঃ সেই আশ্চর্য্যপূর্ণ পরিস্থিতিতে যা তাকে একথা বলতে পরিচালিত করেছিল। কোন কোন পন্ডিতেরা মনে করেন যে থমাস হয়ত কেবল মাত্র অবাক হয়ে ভাবপ্রবণভাবে এই কথা যীশুকে বলেছিলেন, কিন্তু ঈশ্বরের প্রতিই নির্দ্দেশিত হয়। অপর ক্ষেত্রে, থমাস কখনও মনে করেন নাই যে যীশু সর্বশক্তিমান ঈশ্বর ছিলেন, কারন তিনি এবং অন্যান্য প্রেরিতেরা জানতেন যে যীশু কখন দাবী করেন নাই যে তিনি ঈশ্বর কিন্তু শিক্ষা দিয়েছিলেন যে যিহোবাই “একমাত্র সত্য ঈশ্বর” --যোহন ১৭:৩

আবার, প্রসঙ্গ আমাদের এই বিষয়ে বুঝতে সাহায্য করে। কয়েকদিন পূর্বে পুনরুত্থিত যীশু মগদীলনী মেরীকে বলেছিলেন শিষ্যদের বলতেঃ “আমার পিতা ও তোমাদের পিতা এবং আমার ঈশ্বর ও তোমাদের ঈশ্বর তাঁহার নিকটে আমি উর্দ্ধে যাই।” (যোহন ২০:১৭) যীশু যদিও একজন শক্তিশালী আত্মিক ব্যক্তিরূপে ইতিমধ্যে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন, যিহোবা তবুও তাঁর ঈশ্বর ছিলেন। এবং মহিমান্বিত হবার পরেও বাইবেলের শেষ পুস্তকে যীশু তাঁকে ঐরূপে উল্লেখ করে যান।--প্রকাশিত ১:৫, ৬; ৩;২, ১২।

বাইবেল থমাসের অবাক হয়ে ঐ কথাগুলির বলার তিনটি পদ পরেই যোহন ২০:৩১ পদে বিষয়টি এইরূপে পরিষ্কার করেছে: “এই সকল লেখা হইয়াছে, যেন তোমরা বিশ্বাস কর যে, যীশুই খৃষ্ট, ঈশ্বরের পুত্র”। তিনি সর্বশক্তিমান ঈশ্বর ছিলেন না। এখানে “পুত্র” কথাটি আক্ষরিক অর্থে বুঝিয়েছে যেমন স্বাভাবিক পিতা এবং পুত্র, ত্রিত্ব ঈশ্বরত্বের কোন রহস্যজনক অংশ নয়।

বাইবেলের সাথে একমিল হতে হবে।

এটা দাবী করা হয় যে আরো অনেক শাস্ত্রীয়পদ ত্রিত্বের সমর্থন করে। কিন্তু ঐ গুলি উপরে অলোচিত পদগুলির মতই, যখন সযত্নে পরীক্ষা করা হয়, তারা কোন প্রকৃত সমর্থন যোগায় না। ঐ পদগুলি কেবল উদাহরণ দেয় যে ত্রিত্বের দাবী তুলে যখন কোন সমর্থন দেখান হয়, একজনের অবশ্যই প্রশ্ন করা উচিৎ: ব্যাখ্যাটি কি সমগ্র বাইবেলের সমঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষার সাথে একমিল--যে যিহোবাই হলেন একমাত্র সর্বপ্রধান? তা যদি না হয়, তবে ব্যাখ্যাটিতে অবশ্যই ভুল আছে।

আমাদের এও স্মরণে রাখতে হবে যে এমনকি একটিও “প্রমাণিত পদ” বলে না যে ঈশ্বর, যীশু এবং পবিত্র আত্মা কোন রহস্যপূর্ণ ত্রিত্বের একব্যক্তি। বাইবেলের কোথাও একটি পদও বলে না যে এই তিনজন বিষয়, শক্তি এবং অনন্তকালের দিক দিয়ে এক। বাইবেল সামঞ্জস্যরূপেই প্রকাশ করেছে যে সর্বশক্তিমান, ঈশ্বর, যিহোবা, একমাত্র সর্বপ্রধান। যীশু খৃষ্ট তাঁর সৃষ্ট পুত্র এবং পবিত্র আত্মা ঈশ্বরের সক্রিয় শক্তি।

[২৪ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

প্রচীন ব্যক্তিরা (যোহান ১০:৩০)ভুলভাবে ব্যবহার করে দেখাতে চেয়েছেন যে খৃষ্ট,. . .পিতার একাই উপাদান।” -কমেন্টরী অন দি গসপেল অ্যাকরডিং টু জন, জন কেলভিনের লেখা

[২৭ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

কেউ একজন অন্যব্যক্তির “সাথে” থাকলে সে ঐ ব্যক্তিও হতে পারে না

[২৮ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

“লোগস ঐশিক ছিলেন স্বয়ং ঐশিক ব্যক্তি নয়।” -যোষেফ হেনরি থায়ার, বাইবেল পন্ডিত

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরের কাছে যীশু, প্রার্থনা করেছিলেন যেন তাঁর শিষ্যেরা “এক হয়” যেমন তিনি এবং তাঁর পিতা “এক”

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

‘তিনি আপনা হইতে কিছুই করিতে পারেন না, কেবল পিতাকে যাহা করিতে দেখেন তাহাই করেন,’ এই বলে যীশু যিহুদীদের দেখান যে তিনি ঈশ্বরের সমান ছিলেন না

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

বাইবেল যেহেতু মনুষ্য, দুতগন, এমনকি শয়তানকে “ঈশ্বরগণ” বা শক্তিশালী ব্যক্তি বলে অভিহিত করে, তবে শ্রেষ্ঠতর যীশুকে স্বর্গে উপযুক্তরূপেই “একটি ঈশ্বর” বলা যেতে পারে