সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ত্রিত্ব মতবাদ কিরূপে বৃদ্ধি পেল?

ত্রিত্ব মতবাদ কিরূপে বৃদ্ধি পেল?

ত্রিত্ব মতবাদ কিরূপে বৃদ্ধি পেল?

এখানে আপনি জিজ্ঞাসা করতে পারেন: “ত্রিত্ব যদি বাইবেলের শিক্ষা না হয়, এটা কিরূপে খৃষ্টীয়জগতের শিক্ষা হল? অনেকে মনে করে যে ৩২৫ খৃষ্টাব্দে এটা নাইসিয়া পরিষদে গঠিত হয়।

যাহোক, এটা সম্পূর্ণরূপে সত্য নয়। নাইসিয়ার পরিষদ দাবী করেছিল, যে খৃষ্ট এবং ঈশ্বর একই জিনিষ দিয়ে তৈরী, যা পরে ত্রিত্ববাদী ঈশ্বরত্বের ভিত্তি তৈরী হয়। কিন্তু এটা ত্রিত্বকে প্রতিষ্ঠিত করে নি, কারণ ঐ পরিষদে একটি ত্রিত্ব ঈশ্বরত্ত্বের তৃতীয় ব্যক্তি রূপে পবিত্র আত্মার উল্লেখ ছিল না।

নাইসিয়াতে কনষ্টানটাইনের ভুমিকা

বহু বৎসর ধরে, যীশু ঈশ্বর এই ধারনা বেড়ে উঠছিল কিন্তু বাইবেলের ভিত্তিতে ঐ ধারনায় অনেক বাধা ছিল। বিতর্কের সমাধান করতে, রোমীয় সম্রাট কনস্টানটাইন সমস্ত বিশপদের নাইসিয়াতে ডেকে পাঠান। পুরা সংখ্যার ক্ষুদ্রাংশ, ৩০০জনের মত, প্রকৃত পক্ষে যোগ দিয়েছিল।

কনষ্টানটাইন খৃষ্টীয়ান ছিলেন না। ধরা হয় যে, তিনি পরবর্ত্তী জীবনে ধর্ম্মান্তরিত হয়েছিলেন, কিন্তু মৃত্যুশয্যাতে শায়িত না হত্তয়া পর্য্যন্ত বাপ্তাইজিত হন নাই। তার সম্বন্ধে, হেনরি চ্যাডউইক দি আরলি চার্চ্চে বলেন: “কনষ্টানটাইন, তাঁর পিতার মত, অজেয় সূর্যকে উপাসনা করতেন . . . তার ধর্ম্মান্তরিত হওয়াকে দয়ার আন্তরিক অভিজ্ঞতা রূপে বুঝা উচিৎ নয় . . . এটা ছিল যুদ্ধের বিষয়। খৃষ্টীয় মতবাদ তার কাছে কোনদিন স্পষ্ট ছিল না, কিন্তু তিনি নিশ্চিৎ ছিলেন যে যুদ্ধে জয় খৃষ্টীয়ানদের ঈশ্বরের কৃপাতেই হয়।”

নাইসিয়ার পরিষদে এই অবাপ্তাইজিত সম্রাট কি ভূমিকা নিয়েছিলেন? দি এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা বলে: “কনস্টানটাইন স্বয়ং সভাপতি হন, আলোচনাতে সক্রিয় অংশ নেন, এবং ব্যক্তিগতভাবে প্রস্তাব করেন . . . তারপরে “পিতা পুত্র একই বস্তু, ‘পরিষদের সূত্রেতে ঈশ্বরের সাথে খৃষ্টের এই সম্বন্ধের বিষয়ে চুড়ান্ত মত প্রকাশ করেন . . . সম্রাটের দ্বারা অভিভুত হয়ে, দুইজন বাদে, আর সব বিশপেরা সূত্রটিতে সই করে তাদের মধ্যে অনেকেই সেটা তাদের ইচ্ছার বিরূদ্ধে করে।”

সুতরাং, কনস্টানটাইনের ভূমিকা চুড়ান্ত নির্ণয় করে। দুইমাস ভয়ানকভাবে তর্কাতর্কি হওয়ার পর, এই পরজাতীয় রাজনীতিবিদ হস্তক্ষেপ করেন এবং যারা যীশু ঈশ্বর বলছিল তাদের পক্ষেই নিষ্পত্তি করেন। কিন্তু কেন? নিশ্চিতই বাইবেলের সুদৃঢ় ধারনা হেতু নয়। “গ্রীক ঈশ্বরতত্ত্বে যে প্রশ্নগুলি জিজ্ঞাসা করা হয় সেই সম্বন্ধে কনষ্টানটাইনের এমন কি কোন মৌলিক ধারনাও ছিল না।” বলে এ র্সট হিষ্টরি অফ খৃষ্টীয়ান ডকট্রিন। তিনি যা বুঝেছিলেন তা হল ধর্ম্মীয় বিভেদ তার সাম্রাজ্যের জন্য এক বিপদ স্বরূপ এবং তিনি তার রাজ্যকে আরো সবল করতে চেয়েছিলেন।

নাইসিয়ার কোন বিশপই ত্রিত্বকে উন্নত করে নি। তারা কেবল যীশুর প্রকৃতি সম্বন্ধে সিন্ধান্ত নেন কিন্তু পবিত্র আত্মার ভূমিকা সম্বন্ধে নয়। ত্রিত্ব যদি বাইবেলের সত্য শিক্ষা হয় তবে কি তারা ঐ সময়ে এটার প্রস্তাব করত না।

আরো বৃদ্ধি

নাইসিয়ার পরে, এই বিষয়ের উপর তর্ক কয়েক দশক ধরে চলতে থাকে। যারা বিশ্বাস করত যে যীশু ঈশ্বর নয় তারা কিছু সময়ের জন্য অনুকম্পা ফিরে পায়। কিন্তু পরে সম্রাট থিয়োডসিয়াস তাদের বিরূদ্ধে যায়। তিনি নাইসিয়া পরিষদের ধর্ম্মসূত্র তাঁর রাজ্যের মান রূপে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং ৩৮১ খৃষ্টাব্দে এই ধর্ম্মমতকে আরো স্পষ্ট করতে কনষ্টানটিনোপোলের পরিষদে সমবেত হতে আহ্বান করেন।

ঐ পরিষদ পবিত্র আত্মাকে ঈশ্বর এবং খৃষ্টের একই মর্য্যাদাতে বসান। এই প্রথমবার খৃষ্টীয়জগতের ত্রিত্ব কেন্দ্রবিন্দু হতে থাকে।

তবুও, এমন কি কনষ্টানটিনোপোলের পরিষদের পরেও ত্রিত্ব বিস্তারিত ভাবে স্বীকৃত ধর্ম্মমতে পরিণত হয় নাই। অনেকে এর বিরোধিতা করে ফলে ভয়ানক নির্য্যাতনের সম্মুখীন হন। কেবলমাত্র পরবর্ত্তী শতাব্দীগুলিতে ত্রিত্ব নির্দ্দিষ্ট সূত্ররূপে ধর্ম্মমত হয়ে দাড়ায়। দি এনসাইক্লোপিডিয়া আমেরিকানা বলে: “ত্রিত্ববাদের পূর্ণ বৃদ্ধি পাশ্চাত্যে সংঘটিত হয়েছিল, মধ্যযুগের পন্ডিতদের সময়ে যখন কোন ব্যাখ্যা দার্শনিক এবং মনস্তত্ববিদদের কথা অনুযায়ী করা হত।”

অ্যাথেনিসীয় সুত্র

অ্যাথেনিসীয় সূত্রে ত্রিত্বকে আরো পূর্ণরূপে বর্ণনা করা হয়েছে। অ্যাথোনিসীয় একজন পুরোহিত ছিলেন যিনি নাইসিয়াতে কনষ্টানটাইনকে সমর্থন করেছিলেন। তার নামে তৈরী সূত্রটিতে ঘোষণা করা হয়: “আমরা ত্রিত্বে এক ঈশ্বরকে ভজনা করি . . . পিতা ঈশ্বর, পুত্র ঈশ্বর, পবিত্র আত্মা ঈশ্বর; এবং তবুও এরা তিন ঈশ্বর নয়, কিন্তু এক ঈশ্বর।”

যাহোক, শিক্ষিত পন্ডিতেরা স্বীকার করে যে অ্যাথেনেসীয়াস এই সূত্র গঠন করে নাই। দি নিউ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা মন্তব্য করেঃ “সূত্রটি ১২ শতাব্দী পর্য্যন্ত প্রাচ্যের গির্জ্জাতে অপরিচিত ছিল ১৭ শতাব্দী থেকে, পন্ডিতেরা সাধারণতঃ স্বীকার করতে থাকে যে অ্যাথেনেসীয়ান সূত্র অ্যাথেনিসীয়াস (মৃত্যু ৩৭৩) দ্বারা লিখিত হয় নাই। কিন্তু সম্ভবতঃ ৫ম শতাব্দীতে দক্ষিণ ফ্রান্সে গঠিত হয়েছিল . . . সূত্রটির প্রভাব প্রথমে দক্ষিণ ফ্রান্সে হয় বলে মনে হয় এবং ৬ষ্ট ও ৭ম শতাব্দীতে স্পেনে। এটা ৯ম শতাব্দীতে জার্ম্মানীতে গির্জ্জার ধর্ম অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয় এবং কিছুপরে রোমে।”

“কাজেই, খৃষ্টের সময় থেকে খৃষ্টীয় জগতে ত্রিত্বকে ত্রত ব্যাপকভাবে গ্রহণে কয়েক শতাব্দী লেগে যায়। আর এই সমস্তে, সিদ্ধান্ত নিতে কি চালনা করেছিল? ঈশ্বরের বাক্য বা পরোহিত এবং রাজনৈতিক পরিচালনা? অরিজিন অ্যান্ড ইভলিউসান অর্ফ রিলিজিয়নে,, ডব্লিউ হপকিনস উর করেন: “ত্রিত্বের শেষ সুনিশ্চিৎ সংগা হল ত্রিত্ব প্রধানতঃ গির্জ্জার রাজনৈতিক বিষয় ছিল।”

ধর্ম্মভ্রষ্টতা ভাববাণী করা হয়েছিল

ত্রিত্বের এই অখ্যাত ইতিহাস যীশু এবং প্রেরিতদের পরে কি ঘটবে সেই সম্বন্ধে তাদের ভাববাণীর সাথে মিলে যায়। তারা বলেছিলেন যে খৃষ্টের প্রত্যাবর্তন পর্য্যন্ত সত্য উপাসনা থেকে ধর্ম্মভ্রষ্টতা, বিচ্যুতি, বিপথগামীতা ঘটবে যখন সত্য উপাসনা এই পরিস্থিতি ঈশ্বরের মহাদিনে ধ্বংস হওয়ার পূর্ব্বে পুনঃস্থাপিত হবে।

ঐ “দিন” সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “এটা আসবে না যতক্ষন না প্রথমে ধর্ম্ম ভ্রষ্টতা উপস্থিত হয় এবং সেই পাপ পুরুষ প্রকাশ পায়।” (২য় থিষলনীকীয় ২:​৩, ৭) পরে, তিনি বলেছিলেন: “আমি জানি আমি গেলে পর দুরন্ত কেন্দুয়ারা তোমাদের মধ্যে প্রবেশ করিবে, পালের প্রতি মমতা করিবে না। এবং তোমাদের মধ্য হইতেও কোন কোন লোক উঠিয়া শিষ্যদিগকে আপনাদের পশ্চাৎ টানিয়া লইবার জন্য সত্যের বিপরীত কথা কহিবে।”(প্রেরিত ২০:​২৯, ৩০, জেবি) অন্যান্য শিষ্যরাও এই “পাপপুরুষ” পুরোহিত শ্রেণীর ধর্ম্মভ্রষ্টতা সম্বন্ধে লিখেছিলেন।---দেখুন, উদাহরণ স্বরূপ, ২ পিতর ২:​১;১ যোহন ৪:​১-৩; যিহুদা ৩, ৪

পৌল আরো লিখেছিলেন: “সময় আসিবে, যে সময়ে লোকেরা নিরাময় শিক্ষা সহ্য করিবে না, লোকেরা নূতন গল্প শোনার জন্য আগ্রহী হবে এবং নিজেদের অভিলাষ অনুসারে আপনাদের জন্য রাশি রাশি গুরু ধরিবে এবং সত্য হইতে কান ফিরাইয়া গল্পের দিকে বিপথে যাইবে।”​—⁠২ তীমথিয় ৪:​৩, ৪ জেবি।

যীশু স্বয়ং ব্যাখ্যা করেছিলেন সত্য উপাসনা হতে ভ্রষ্ট হওয়ার পিছনে কি ছিল। তিনি বলেন যে তিনি উওম বীজ বপন করেছিলেন কিন্তু শত্রু শয়তান তার উপরে ক্ষেত্রে আগাছা রোপন করে। কাজেই গমের প্রথম পাতার সাথে আগাছাও দেখা দিল। এরূপে, সত্য খৃষ্ট ধর্ম্ম থেকে বিচ্যুতি শস্যছেদন র্পয্যন্ত আশা করা যাবে, যখন খৃষ্ট বিষয়টি ঠিক করবেন। (মথি ১৩:​২৪-৪৩) দি এনসাইক্লোপিডিয়া আমেরিকানা মন্তব্য করে: “চতুর্থ শতাব্দীর ত্রিত্ববাদ সঠিক-রূপে ঈশ্বরের প্রকৃতি সম্বন্ধে প্রাথমিক খৃষ্টীয় শিক্ষাকে প্রতিফলিত করে নি। বরং উল্টা, এই শিক্ষা হতে বিচ্যুতি হয়েছিল”। তবে, এই ভ্রষ্টতা কোথা থেকে আরম্ভ হল?​—⁠১ তীমথিয় ১:৬

কি একে প্রভাবিত করেছিল

বাবিলন পর্য্যন্ত, সমস্ত প্রাচীন জগৎব্যাপী, তিন বা ত্রয়ী পরজাতী দেবতাদের পূজা প্রচলন ছিল। ঐ প্রভাব মিশর, গ্রীস এবং রোমে খৃষ্টের পূর্ব্বে, সময়ে এবং পরবর্ত্তী শতাব্দী গুলিতেও প্রাধান্য করছিল। এবং প্রেরিতদের মৃত্যুর পরে, ঐরূপ পরজাতীয় বিশ্বাসগুলি খৃষ্টধর্ম্মে প্রবেশ করতে লাগল।

ঐতিহাসিক উইল ডুরান্ট মন্তব্য করেন: “খৃষ্টধর্ম্ম পরজাতীদের ধর্ম্মকে ধ্বংস করে নাই; এটাকে সে গ্রহণ করে নিল . . . মিশর থেকে ঐশিক ত্রিত্বের ধারনা এসেছিল”। সিগফ্রেড মোরেঞ্জ তার ইজিপশিয়ান রিলিজিয়ান পুস্তকে বলেন: “ত্রিত্ব মিশরীয় ঈশ্বরতত্ত্ববিদদের মনকে আগে থেকেই অনেকটা আচ্ছন্ন করে রেখেছিল . . . তিন দেবতাকে একসাথে এবং একরূপে দেখা হত, একবচনে সম্বোধন করা হত। এই রূপে মিশরীয় ধর্ম্মের আত্মিক শক্তির সাথে খৃষ্টীয় ঈশ্বরতত্বের সরাসরি সংস্পর্শ আছে।’’

এইরূপে, আলেকজান্দ্রিয়া, মিশরে, তৃতীয় শতাব্দীর শেষে এবং চতুর্থ শতাব্দীর প্রথমে পুরোহিতগণ, যেমন অ্যাথেনিসীয়াস এই প্রভাব প্রতিফলিত করেন যখন তারা ত্রিত্বে পরিচালিত ধারনা সকল সূত্রবদ্ধ করেন। তাদের প্রভাব বাড়তে থাকে তাই মোরেঞ্জের মতে “আলেকজান্দ্রিয়ান ঈশ্বরতত্ত্ব মিশরীয় ধর্ম্মীয় উত্তরাধিকার এবং খৃষ্টীয় ধর্ম্মের মধ্যে মধ্যস্ত বলে বিবেচিত হয়।”

এডওয়ার্ড গিবনসের হিষ্টরি অফ খৃষ্টীয়ানিটির ভূমিকাতে, আমরা পড়িঃ “ন-খৃষ্টীয়ান ধর্ম্মকে যদি খৃষ্টধর্ম্ম জয় করে থাকে, তবে একইরূপে বলা যেতে পারে যে খৃষ্টধর্ম্মও ন-খৃষ্টীয়ান ধর্ম্মের দ্বারা দূষিত যে হয়েছে এও সত্য। প্রাথমিক খৃষ্টীয়ানদের শুদ্ধ দেববাদ . . . রোমের গির্জ্জার দ্বারা অবোধ্য ত্রিত্বের মতে বদল হয়ে যায়। পরজাতীয় অনেক শিক্ষা মিশরীয়দের দ্বারা আবিষ্কৃত হয় এবং প্লেটো আদর্শ দেয়, বিশ্বাসের যোগ্য বলে ধরে রাখা হয়।”

এ ডিকসেনারী অফ রিলিজিয়াস নলেজ বলে যে অনেকের মতে ত্রিত্ব “পরজাতীয় ধর্ম্ম থেকে নেওয়া দুষিততা এবং খৃষ্টীয়ান বিশ্বাসে সংযুক্ত হয়েছে” এবং দি পেগানিজম ইন আওয়ার খৃষ্টীয়ানিটি ঘোষনা করে: “[ত্রিত্বের] উৎস সম্পূর্ণরূপে পরজাতীয়”

এই জন্যই, এনসাইক্লোপিডিয়া অফ রিলিজিয়ন এন্ড এথিকসে, জেমস হেষ্টিংস লিখেছিলেন: “উদাহরণ স্বরূপ, ভারতীয় ধর্ম্মে আমরা ত্রয়ী দলের সাক্ষাৎ পাই যমন ব্রহ্মা শিব এবং বিষ্ণু এবং মিশরীয় ধর্ম্মে ওসাইরিস, আইসিস এবং হোরাস এই ত্রিত্বদলের সাক্ষাৎ পাই . . . কেবল মাত্র ঐতিহাসিক ধর্ম্মগুলিতেই ঈশ্বরকে ত্রিত্বরূপে দেখা হয় না। একজন বিশেষ করে সর্ব্বপ্রধান বা সর্ব্বশেষ বাস্তব সম্বন্ধে নূতন প্লেটোনিক দৃষ্টিভঙ্গি স্মরণ করতে পারেন যা “ত্রিভুজে চিত্রিত।” ত্রিত্বের সাথে গ্রীক দার্শনিক প্লেটোর কি সম্বন্ধ?

প্লেটোর শিক্ষা

এটা মেনে নেওয়া হয় যে প্লেটো খৃষ্টপূর্ব্ব ৪২৮ থেকে ৩৪৭ সালে বেঁচেছিলেন। তিনি যদিও ত্রিত্বের বর্ত্তমান গঠনকে শিক্ষা দেন নাই তবে তার দর্শন এর পথ তৈরী করেছিল। পরে, দর্শনবাদ চিন্তা যাতে ত্রিত্ব বিশ্বাস জড়িত ছিল জেগে ওঠে এবং সেগুলো ঈশ্বর এবং প্রকৃতি সম্বন্ধে প্লেটোর ধারনার দ্বারা প্রভাবিত হয়।

দি ফ্রেঞ্চ নভিয়া ডিকসেনরী ইউনিভারসাল (নিউ ইউনিভারসাল ডিকসেনারী) প্লেটোর প্রভাব সম্বন্ধে বলে: “প্লেটোনিক ত্রিত্ব, প্রাথমিক লোকদের পুরাতন ত্রিত্বেরই পুনঃবিন্যাশ মাত্র, গুণগত দার্শনিক ত্রিত্ব যা তিন ঐশিক ব্যক্তির জন্ম দেয় এবং খৃষ্টীয় গির্জ্জাতে শেখানো হয় . . . ঐশিক ত্রিত্ব সম্বন্ধে এই গ্রীক দার্শনিকের ধারনা . . . সমস্ত (পরজাতীয়) প্রাচীন ধর্ম্মে পাওয়া যায়।”

দি নিউ স্কাফ-হারজগ্‌ এনসাইক্লোপিডিয়া অফ রিলিজিয়াস নলেজ এই গ্রীক দর্শনবাদের প্রভাব দেখায়: “লোগস এবং ত্রিত্বের শিক্ষা গ্রীক পিতাদের কাছ থেকে এসেছে . . . যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্লেটোবাদ দর্শনের দ্বারা খুব প্রভাবিত ছিল . . . ঐ ভুল এবং দূষিততা যে এই উৎস থেকে গির্জ্জাতে এসেছে তা অস্বীকার করা যায় না।”

গদি র্চাচ্চ অফ দি ফার্ষ্ট থ্রি সেনচুরিস বলে: “ত্রিত্বের শিক্ষা ধীরে ধীরে এবং তুলনামূলকভাবে পরবর্ত্তীকালে এসেছে . . . এর উৎস যিহুদী এবং খৃষ্টায়ান শাস্ত্রাবলীর কাছে সম্পূর্ণরূপে বিদেশী; . . . এটা বেড়ে ত্তঠে এবং প্লেটোবাদী ফাদারদের মাধ্যমে খৃষ্টধর্ম্মে সংযুক্ত হয়েছিল।”

খৃষ্টাব্দ তৃতীয় শতাব্দীর শেষে “খৃষ্টধর্ম্ম” এবং নূতন প্লেটোনিক দর্শনবাদ অবিবেছেদ্যরূপে একতাবদ্ধ হয়। যেমন আডলফ হারন্যাক আউটলাইনস অফ দি হিষ্টরি অফ ডগমাতে বলেন গির্জ্জার শিক্ষা “হেলেনিজমের মাটীতে (পরজাতী গ্রীক চিন্তা) দৃঢ়রূপে শিকড় গাড়ে। এইরূপে এটা বেশীর ভাগ খৃষ্টানদের কাছে রহস্যস্বরূপ হল।”

গির্জ্জা দাবী করে যে তার নূতন মতবাদগুলি বাইবেলে ভিত্তি। কিন্তু হারন্যাক বলেন: “আসলে এই হেলেনিক কল্পনাকেই নিজের মধ্যে বৈধ করেছে, পরজাতীদের রহস্য- উপাসনার কুসংস্কারপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি এবং রীতিগুলি।”

এ ষ্টেটমেন্ট অফ রিজনস্‌ নামক পুস্তকে এনড্রুস নরটন ত্রিত্ব সম্বন্ধে বলেন: “আমরা এই মতবাদের ইতিহাস খঁজে পেতে পারি এবং এর উৎস আবিষ্কার করতে পারি, খৃষ্টীয় প্রকাশে নয়, কিন্তু প্লেটোনিক দর্শনে . . . ত্রিত্ব খৃষ্ট এবং তাঁর প্রেরিতদের মতবাদ নয়, কিন্তু পরবর্ত্তী প্লেটোবাদ গোষ্ঠীর কল্পনা।”

এইরূপে, খৃষ্টাব্দ ৪র্থ শতাব্দীতে, যীশু এবং প্রেরিতদের ভাববাণী অনুসারে ধর্ম্মভ্রষ্টতা সম্পূর্ণরূপে প্রস্ফুটিত হয়। ত্রিত্বের বৃদ্ধি হল এর একটি নিদর্শন। ধর্ম্মভ্রষ্ট গির্জ্জাগুলি পরজাতীদের অন্যান্য ধারনাগুলিকেও আলিঙ্গন করতে লাগল যেমন নরকাগ্নি, আত্মার অমরত্ত্ব এবং প্রতিমাপূজা। আত্মিকরূপে বললে, খৃষ্টীয়জগৎ পূর্ব্বকথিত ক্রমবর্দ্ধিত “পাপ পুরুষ’’ পুরোহিতদের দ্বারা প্রাধান্যপ্রাপ্ত আপন অন্ধকারের যুগে প্রবেশ করল।​—⁠২ থিষলনীকীয় ২:​৩,

ঈশ্বরের ভাববাদীরা কেন এটা শিখাইনি?

কেন, হাজার হাজার বৎসর ধরে, ঈশ্বরের ভাববাদীর কেউই তাঁর লোকদের ত্রিত্ব সম্বন্ধে শিক্ষা দেয় নি? কম করে, যীশু কি মহান শিক্ষকরূপে তাঁর দক্ষতা ব্যবহার করে তাঁর শিষ্যদের কাছে ত্রিত্বকে স্পষ্ট করতেন না? ঈশ্বর কি শতশত শাস্ত্রীয় পৃষ্ঠা অনুপ্রাণীত করবেন এবং তথাপি এর কোন শিক্ষাই ত্রিত্ব শিক্ষা দিতে ব্যবহার করবেন না যদি নাকি এটাই বিশ্বাসের “কেন্দ্রীয় মতবাদ’’ হয়?

খৃষ্টীয়ানদের কি বিশ্বাস করতে হবে যে খৃষ্টের কয়েক শতাব্দী পরে এবং বাইবেলের লেখাকে অনুপ্রানীত করার পর, ঈশ্বর এমন একটি মতবাদ তৈরীতে মদৎ দেবেন যা তাঁর দাসদের কাছে হাজার হাজার বৎসর ধরে অজ্ঞাত ছিল, যা একটি “দুর্জ্ঞেয় রহস্য“,মনুষ্য “যুক্তি বর্হিভূত”, যা পরজাতিদের পটভূমিকাতে সৃষ্ট বলে গন্য এবং “বেশীর ভাগই গির্জ্জার রাজনৈতিক প্রতিফল”?

ঐতিহাসিক প্রমাণ স্পষ্টঃ ত্রিত্ব শিক্ষা, সত্যভ্রষ্ট, ধর্ম্মভ্রষ্ট।

[৮ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

‘চতুর্থ শতব্দীর ত্রিত্বশিক্ষা প্রাথমিক খৃষ্টীয়ান শিক্ষা থেকে বিচ্যুতি ছিল’ -দি এনসাইক্লোপিডিয়া আমেরিকানা

[৯ পৃষ্ঠার বাক্স]

“মহান দেবতাদের ত্রিত্ব”

খৃষ্টের সময়ের বহু শতাব্দী পুর্ব্বে, প্রাচীন বাবিলন এবং অশুরীয়দের দেবতাদের ত্রিত্ব বা ত্রয়ী ছিল। ফরাসীর “লারুস এনসাইক্লোপিডিয়া অফ মাইথোলজি” মেসোপোটেমিয়ান অঞ্চলের ঐরূপ এক ত্রয়ীর কথা বলে: “নিখিল সৃষ্টি তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত ছিল এদের প্রত্যেকটি একটি দেবতার অধীন ছিল। আকাশ ছিল আনুর অংশ। পৃথিবী এনলিলের। ইয়া জলের শাসক। একসাথে তারা মহান দেবতাদের ত্রয়ী তৈরী হয়েছিল।”

[১২ পৃষ্ঠার বাক্স]

হিন্দু ত্রত্ব

‘দি সিম্বলিজম অফ হিন্দু গডস এন্ড রিউচলস’ পুস্তক বলে যে খৃষ্টের অনেক শতাব্দী পুর্ব্বে হিন্দু ত্রিত্বের অস্তিত্ব ছিল: “ত্রত্ব দেবতাদের মধ্যে শিব একজন। তাঁকে ধ্বংসের দেব বলা হয়। অপর দুইটি দেবতা হল সৃষ্টির দেব ব্রহ্ম এবং রক্ষাকর্ত্তা বীষ্ণু. . .এই তিনটি এক এবং সমান এই নির্দেশ করতে তিনটি দেবতাকে এক মুর্ত্তিতে প্রদর্শন করা হয়।” -এ পার্থসারথি কর্ত্তৃক প্রকাশিত, বোম্বে।

[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

“গ্রীক ঈশ্বরতত্ত্বের প্রশ্নগুলি জিজ্ঞাসা করা হয় সেই সম্বন্ধে কনষ্টানটাইনের এমন কি কোন মৌলিক ধারনাও ছিল না।” -এ সর্ট হিষ্টরি অফ খৃষ্টীয়ান ডকট্রিন

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

১. মিশর। হোরাস, ওসাইরিস, আইসিসের ত্রত্ব, খৃষ্টপুর্ব্ব ২য় সহস্র বৎসর।

২. বাবিলন। ইষ্টার, সিন, স্যামসের ত্রিত্ব খৃষ্টপুর্ব্ব ২য় সহস্র বৎসর।

৩. পালমায়রা। চন্দ্রদেবতা, আকাশের প্রভু, সুর্য্য দেবতার ত্রিত্ব, খৃষ্টাব্দ প্রথম শতাব্দীর কাছাকাছি।

৪. ভারত। ত্রিত্ব হিন্দু ঈশ্বরত্ব, খৃষ্টাব্দ ৭ম শতাব্দীর কাছাকাছি।

৫. কাম্পুচিয়া। ত্রিত্ব বুদ্ধের ঈশ্বরত্ব, খৃষ্টাব্দ ১২ শতাব্দীর কাছাকাছি।

৬. নরওয়ে। ত্রিত্ব (পিতা, পুত্র, পবিত্র আত্মা), খৃষ্টাব্দ ১৩ শতাব্দীর কাছাকাছি।

৭. ফ্রান্স। ত্রত্ব, খৃষ্টাব্দ ১৪ শতাব্দীর কাছাকাছি।

৮. ইটালী। ত্রিত্ব, খৃষ্টাব্দ ১৫ শতাব্দীর কাছাকাছি।

৯. জার্ম্মানি। ত্রিত্ব, খৃষ্টাব্দ ১৯ শতাব্দীর কাছাকাছি।

১০. জার্ম্মানি। ত্রিত্ব, খৃষ্টাব্দ ২০ শতাব্দীর।