সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় ৪

কেন কর্তৃপক্ষকে সম্মান করবেন?

কেন কর্তৃপক্ষকে সম্মান করবেন?

“সকলকে সমাদর কর।” —১ পিতর ২:১৭.

১, ২. (ক) কর্তৃত্বের বিষয়ে আমরা কোন লড়াইয়ের মুখোমুখি হই? (খ) কোন প্রশ্নগুলো আমরা বিবেচনা করব?

একটা ছোটো বাচ্চাকে যখন তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কাজ করতে বলা হয়, তখন তার প্রতিক্রিয়া কেমন হয়, তা কি আপনি কখনো লক্ষ করেছেন? আপনি হয়তো সেই ছোটো ছেলের চোখে-মুখে ফুটে ওঠা দ্বিধাদ্বন্দ্বের সুস্পষ্ট ছাপ দেখতে পান। সে তার বাবা অথবা মায়ের গলার আওয়াজ শুনতে পায় আর সে জানে যে, তাকে তার বাবা-মার কর্তৃত্বের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। কিন্তু, এই ক্ষেত্রে সে বাধ্য হতে চায় না। তার এই লড়াই এমন এক সত্যকে তুলে ধরে, যার মুখোমুখি আমরা সকলেই হয়ে থাকি।

কর্তৃপক্ষকে সম্মান করা আমাদের পক্ষে সবসময় সহজ নয়। মাঝে মাঝে আপনার পক্ষে কি সেই ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান দেখানো কঠিন বলে মনে হয়, যাদের আপনার উপর কিছুটা কর্তৃত্ব রয়েছে? যদি তা-ই হয়, তাহলে আপনি একাই এই লড়াই করছেন না। আমরা এমন একটা সময়ে বাস করছি, যখন কর্তৃপক্ষের প্রতি সম্মান একেবারে নেই বললেই চলে। তা সত্ত্বেও, বাইবেল বলে যে, সেই ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের সম্মান দেখাতে হবে, যাদের আমাদের উপর কর্তৃত্ব রয়েছে। (হিতোপদেশ ২৪:২১) বস্তুতপক্ষে, তা দেখানো অপরিহার্য, যদি আমরা ঈশ্বরের প্রেমে অবস্থিতি করতে চাই। তাই, স্বাভাবিকভাবেই কিছু প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। কেন কর্তৃপক্ষকে সম্মান করা আমাদের পক্ষে এত কঠিন হতে পারে? কেন যিহোবা চান যেন আমরা সম্মান করি আর কী আমাদেরকে বাধ্য হতে সাহায্য করবে? সবশেষে, কোন কোন উপায়ে আমরা কর্তৃপক্ষের প্রতি সম্মান দেখাতে পারি?

যে-কারণে এটা এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা

৩, ৪. কীভাবে পাপ ও অসিদ্ধতা শুরু হয়েছিল আর কেন আমাদের পাপপূর্ণ স্বভাবের কারণে কর্তৃপক্ষকে সম্মান করা আমাদের জন্য এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে ওঠে?

যারা কর্তৃত্বে রয়েছে, তাদের প্রতি সম্মান দেখানো কেন এত কঠিন হতে পারে, তার দুটো কারণ আসুন আমরা সংক্ষেপে বিবেচনা করি। প্রথমত, আমরা অসিদ্ধ; দ্বিতীয়ত, আমাদের উপর যে-মানুষদের কর্তৃত্ব রয়েছে, তারা অসিদ্ধ। মানব পাপ ও অসিদ্ধতা অনেক অনেক সময় আগে এদন উদ্যানে শুরু হয়েছিল, যখন আদম ও হবা ঈশ্বরের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। তাই, বিদ্রোহের সঙ্গেসঙ্গে পাপ শুরু হয়েছিল। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত, আমাদের বিদ্রোহ করার এক সহজাত প্রবণতা রয়েছে।—আদিপুস্তক ২:১৫-১৭; ৩:১-৭; গীতসংহিতা ৫১:৫; রোমীয় ৫:১২.

আমাদের পাপপূর্ণ স্বভাবের কারণে, আমাদের অধিকাংশের মধ্যে সহজেই গর্ব ও উদ্ধত মনোভাব জেগে ওঠে অথচ অন্যদিকে নম্রতা এমন এক বিরল গুণ, যা গড়ে তোলা ও বজায় রাখার জন্য আমাদেরকে কঠোর প্রচেষ্টা করতে হয়। এমনকী অনেক বছর ঈশ্বরকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করার পরও, আমরা হয়তো একগুঁয়েমি ও গর্বের কাছে নতিস্বীকার করি। উদাহরণ স্বরূপ, কোরহের কথা বিবেচনা করুন, যিনি বিভিন্ন কষ্টের মধ্যেও বিশ্বস্তভাবে যিহোবার লোকেদের সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি আরও কর্তৃত্ব পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন এবং নির্লজ্জভাবে সেই সময়কার সবচেয়ে মৃদুশীল ব্যক্তি মোশির বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। (গণনাপুস্তক ১২:৩; ১৬:১-৩) এ ছাড়া, রাজা ঊষিয়ের কথা চিন্তা করুন, যার গর্ব তাকে যিহোবার মন্দিরে প্রবেশ করে যাজকদের জন্য নির্ধারিত পবিত্র দায়িত্ব পালন করতে প্ররোচিত করেছিল। (২ বংশাবলি ২৬:১৬-২১) এই ব্যক্তিদেরকে তাদের বিদ্রোহের জন্য চরম মূল্য দিতে হয়েছিল। তবে, তাদের নেতিবাচক উদাহরণ আমাদের সকলের জন্য উপকারী অনুস্মারক। আমাদেরকে গর্বের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে, যেটার কারণে কর্তৃপক্ষকে সম্মান করা আমাদের পক্ষে কঠিন হয়ে ওঠে।

৫. কীভাবে অসিদ্ধ মানুষরা তাদের কর্তৃত্বের অপব্যবহার করেছে?

অন্যদিকে, ক্ষমতায় থাকা অসিদ্ধ মানুষরা কর্তৃপক্ষের প্রতি সম্মানকে হ্রাস করার জন্য যথেষ্ট ইন্ধন জুগিয়েছে। অনেকে নিষ্ঠুর, দুর্ব্যবহারকারী অথবা স্বৈরাচারী হয়েছে। বস্তুতপক্ষে, মানব ইতিহাসে ক্ষমতার অপব্যবহার করার এক বিরাট নথি রয়েছে। (পড়ুন, উপদেশক ৮:৯.) উদাহরণ স্বরূপ, শৌল একজন ভালো ও নম্র ব্যক্তি ছিলেন, যখন যিহোবা তাকে রাজা হওয়ার জন্য বাছাই করেছিলেন। কিন্তু, তিনি গর্ব ও ঈর্ষার কাছে নতিস্বীকার করেছিলেন; এরপর তিনি বিশ্বস্ত ব্যক্তি দায়ূদকে তাড়না করেছিলেন। (১ শমূয়েল ৯:২০, ২১; ১০:২০-২২; ১৮:৭-১১) পরে, দায়ূদ ইস্রায়েলের একজন সর্বোত্তম রাজা হয়ে উঠেছিলেন কিন্তু তারপরও তিনি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিলেন, যখন তিনি হিত্তীয় ঊরিয়ের স্ত্রীকে হরণ করেছিলেন এবং সেই নির্দোষ ব্যক্তিকে যুদ্ধক্ষেত্রে হত হওয়ার জন্য সামনের সারিতে পাঠিয়েছিলেন। (২ শমূয়েল ১১:১-১৭) হ্যাঁ, অসিদ্ধতার কারণে মানুষের পক্ষে সঠিকভাবে ক্ষমতা ব্যবহার করা কঠিন হয়ে পড়ে। আর ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরা যখন যিহোবাকে সম্মান করে না, তখন তারা এমনকী আরও বেশি করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে। কিছু ক্যাথলিক পোপ যেভাবে ব্যাপক তাড়না শুরু করেছিলেন, তা বর্ণনা করার পর একজন ব্রিটিশ কূটনীতিক লিখেছিলেন: “ক্ষমতা মাত্রই কলুষিতপ্রবণ; আর অবাধ ক্ষমতা অবাধভাবেই কলুষিত করে।” এই নথি মাথায় রেখে আসুন আমরা এই প্রশ্নটা বিবেচনা করি: কেন কর্তৃপক্ষকে সম্মান করা উচিত?

কেন কর্তৃপক্ষকে সম্মান করবেন?

৬, ৭. (ক) যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেম আমাদেরকে কী করতে অনুপ্রাণিত করে এবং কেন? (খ) বশ্যতার সঙ্গে কোন মনোভাব জড়িত?

কর্তৃপক্ষকে সম্মান করার সর্বোত্তম কারণগুলো সেই প্রেম থেকে উদ্ভূত হয়, যে-প্রেম যিহোবার প্রতি, সহমানবের প্রতি ও এমনকী আমাদের নিজেদের প্রতিও রয়েছে। সমস্তকিছুর ঊর্ধ্বে আমরা যিহোবাকে প্রেম করি বলে আমরা তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করতে চাই। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২৭:১১; মার্ক ১২:২৯, ৩০.) আমরা জানি যে, এদনে বিদ্রোহের সময় থেকে তাঁর সার্বভৌমত্ব অর্থাৎ নিখিলবিশ্ব শাসন করার ব্যাপারে তাঁর অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে আর মানবজাতির অধিকাংশই শয়তানের পক্ষ নিয়েছে এবং যিহোবার শাসনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা যিহোবার পক্ষ নিতে পেরে রোমাঞ্চিত। আমরা যখন প্রকাশিত বাক্য ৪:১১ পদের চমৎকার কথাগুলো পড়ি, তখন তা আমাদের হৃদয়কে উদ্দীপিত করে তোলে। আমাদের কাছে এটা কতই-না স্পষ্ট যে, নিখিলবিশ্বের ন্যায্য শাসক হলেন যিহোবা! আমরা যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করি এবং আমাদের রোজকার জীবনে তাঁর শাসন মেনে নিই।

এই ধরনের সম্মান বাধ্যতা ও সেইসঙ্গে আরও কিছুকে ইঙ্গিত করে। আমরা নির্দ্বিধায় যিহোবার বাধ্য হই কারণ আমরা তাঁকে ভালোবাসি। কিন্তু, মাঝে মাঝে এমন সময় আসবে, যখন বাধ্যতা দেখানো আমাদের জন্য অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। সেই সময়গুলোতে, শুরুতে উল্লেখিত ছোটো ছেলেটির মতো আমাদের বশ্যতা দেখানোর বিষয়টা শিখতে হবে। আমাদের মনে আছে যে, যিশু এমনকী সেই সময়েও তাঁর পিতার ইচ্ছার প্রতি বশ্যতা দেখিয়েছিলেন, যখন তা দেখানো অনেক কঠিন বলে মনে হয়েছিল। “আমার ইচ্ছা নয়, তোমারই ইচ্ছা সিদ্ধ হউক,” তিনি তাঁর পিতাকে বলেছিলেন।—লূক ২২:৪২.

৮. (ক) আজকে যিহোবার কর্তৃত্বের প্রতি বশ্যতার সঙ্গে প্রায়ই কী জড়িত আর এই ক্ষেত্রে কী যিহোবার অনুভূতিকে প্রকাশ করে? (খ) কী আমাদেরকে পরামর্শ শোনার এবং শাসন গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে? (“ পরামর্শ শুন, শাসন গ্রহণ কর” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)

অবশ্য, যিহোবা আজকে আমাদের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে কথা বলেন না; তিনি তাঁর বাক্য ও পৃথিবীতে মানব প্রতিনিধিদের ব্যবহার করেন। তাই, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই ব্যক্তিদেরকে সম্মান করার মাধ্যমে আমরা যিহোবার কর্তৃত্বের প্রতি সম্মান দেখিয়ে থাকি, যাদেরকে তিনি আমাদের উপর কর্তৃত্ব করার জন্য স্থাপন করেছেন অথবা থাকতে দিয়েছেন। আমরা যদি সেই মানুষদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করি—উদাহরণ স্বরূপ, তাদের শাস্ত্রীয় পরামর্শ ও সংশোধন গ্রহণ করতে অস্বীকার করি—তাহলে আমরা আমাদের ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করব। ইস্রায়েলীয়রা যখন মোশির বিরুদ্ধে বচসা ও বিদ্রোহ করেছিল, তখন যিহোবা তাদের কাজকে ব্যক্তিগতভাবে তাঁর বিরুদ্ধে করা হয়েছে বলে বিবেচনা করেছিলেন।—গণনাপুস্তক ১৪:২৬, ২৭.

৯. কেন সহমানবদের প্রতি আমাদের প্রেম আমাদেরকে কর্তৃপক্ষকে সম্মান করতে পরিচালিত করে? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

এ ছাড়া, আমরা আমাদের সহমানবদের ভালোবাসি বলে কর্তৃপক্ষের প্রতি সম্মান দেখাই। কীভাবে? কল্পনা করুন যে, আপনি একটা সেনাবাহিনীর একজন সৈন্য। সফলতা, এমনকী সেনাবাহিনীর রক্ষা পাওয়াও প্রত্যেক সৈন্যের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে সহযোগিতা, তার প্রতি বাধ্যতা এবং সম্মান দেখানোর উপর নির্ভর করে। আপনি যদি বিদ্রোহ করার মাধ্যমে সেই সংগঠনকে দুর্বল করে দেন, তাহলে আপনার সমস্ত সহসৈন্য হয়তো ঝুঁকির মুখে পড়বে। এটা ঠিক যে, মানব সেনাবাহিনী আজকের জগতে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে এসেছে। কিন্তু, যিহোবার সেনাবাহিনী রয়েছে, যারা কেবল লোকেদের উপকারই করে থাকে। বাইবেল ঈশ্বরকে শত শত বার ‘বাহিনীগণের সদাপ্রভু’ বলে উল্লেখ করে। (১ শমূয়েল ১:৩) তিনি হলেন পরাক্রমী আত্মিক প্রাণীদের বিশাল বাহিনীর অধিনায়ক। মাঝে মাঝে, যিহোবা তাঁর পার্থিব দাসদেরকে এক সেনাবাহিনীর সঙ্গে তুলনা করেন। (গীতসংহিতা ৬৮:১১; যিহিষ্কেল ৩৭:১-১০) আমরা যদি সেই মানুষদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করি, যাদেরকে যিহোবা আমাদের উপর কর্তৃত্ব করতে দিয়েছেন, তাহলে আমরা কি আমাদের আধ্যাত্মিক সহসৈন্যদেরকে ঝুঁকির মুখে ফেলছি না? একজন খ্রিস্টান যখন নিযুক্ত প্রাচীনদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন, তখন মণ্ডলীর অন্যেরাও কষ্টভোগ করতে পারে। (১ করিন্থীয় ১২:১৪, ২৫, ২৬) আর একজন সন্তান যখন বিদ্রোহী মনোভাব দেখায়, তখন পুরো পরিবার কষ্টভোগ করে। তাই, এক সম্মাননীয় ও সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা আমাদের সহমানবদের প্রতি প্রেম দেখাই।

১০, ১১. কীভাবে নিজেদের উপকারের জন্য এক সঠিক আকাঙ্ক্ষা আমাদেরকে কর্তৃপক্ষের বাধ্য হতে পরিচালিত করে?

১০ এ ছাড়া, আমরা কর্তৃপক্ষকে সম্মান করি কারণ তা করা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। যিহোবা যখন আমাদেরকে কর্তৃপক্ষকে সম্মান করতে বলেন, তখন তিনি এর সঙ্গে যে-উপকারগুলো আসে, সেই সম্বন্ধে প্রায়ই উল্লেখ করে থাকেন। উদাহরণ স্বরূপ, সন্তানরা যাতে দীর্ঘ ও পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন উপভোগ করতে পারে, সেইজন্য তিনি তাদেরকে বাবা-মায়ের বাধ্য হতে বলেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১৬; ইফিষীয় ৬:২, ৩) তিনি আমাদের বলেন মণ্ডলীর প্রাচীনদেরকে সম্মান করতে কারণ তা না করলে আমাদের আধ্যাত্মিক ক্ষতি হবে। (ইব্রীয় ১৩:৭, ১৭) আর আমাদের নিজেদের সুরক্ষার জন্য তিনি আমাদেরকে জাগতিক কর্তৃপক্ষের বাধ্য হতে বলেন।—রোমীয় ১৩:৪.

১১ আপনি কি একমত নন যে, কেন যিহোবা চান আমরা বাধ্য হই, তা জানা আমাদেরকে কর্তৃপক্ষকে সম্মান করতে সাহায্য করে? তাহলে, আসুন আমরা বিবেচনা করি যে, কীভাবে আমরা জীবনের তিনটে প্রধান ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের প্রতি সম্মান দেখাতে পারি।

পরিবারের মধ্যে সম্মান

১২. পরিবারের মধ্যে স্বামী ও পিতাকে যিহোবা কোন দায়িত্ব দিয়েছেন আর কীভাবে একজন পুরুষ সেই ভূমিকা পালন করতে পারেন?

১২ যিহোবা নিজে পরিবারের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি হলেন এমন একজন ঈশ্বর, যিনি সবসময় শৃঙ্খলা বজায় রাখেন আর তিনি পরিবারকে এমনভাবে সংগঠিত করেছেন, যাতে এটা সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। (১ করিন্থীয় ১৪:৩৩) তিনি স্বামী এবং পিতাকে পরিবারের মস্তক হিসেবে কাজ করার কর্তৃত্ব দিয়েছেন। যিশু যেভাবে মণ্ডলীর উপর তাঁর মস্তকপদকে ব্যবহার করেছেন, তা অনুকরণ করার মাধ্যমে স্বামী তার মস্তক খ্রিস্ট যিশুর প্রতি সম্মান দেখিয়ে থাকেন। (ইফিষীয় ৫:২৩) তাই, স্বামী তার দায়িত্বকে পরিত্যাগ করবেন না বরং সাহসের সঙ্গে সেটা কাঁধে তুলে নেবেন; অথবা তিনি স্বৈরাচারী বা কঠোর হবেন না বরং প্রেমময়, যুক্তিবাদী ও সদয় হবেন। তিনি মনে রাখেন যে, তার কর্তৃত্ব আপেক্ষিক আর এটা কখনো যিহোবার কর্তৃত্বের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়।

একজন খ্রিস্টান বাবা, খ্রিস্ট যেভাবে মস্তকপদকে ব্যবহার করেন, সেটা অনুকরণ করে থাকেন

১৩. কীভাবে একজন স্ত্রী ও মা এমনভাবে তার পারিবারিক ভূমিকা পালন করতে পারেন, যা যিহোবাকে খুশি করে?

১৩ একজন স্ত্রী ও মা, তার স্বামীর সাহায্যকারী অথবা পরিপূরক হিসেবে কাজ করে থাকেন। তাকেও পরিবারের মধ্যে কর্তৃত্ব প্রদান করা হয়েছে কারণ বাইবেল “মাতার ব্যবস্থা” সম্বন্ধে বলে। (হিতোপদেশ ১:৮) অবশ্য, তার কর্তৃত্ব তার স্বামীর অধীনে। স্বামীকে পরিবারের মস্তক হিসেবে তার ভূমিকা পালন করতে সহায়তা করার মাধ্যমে একজন খ্রিস্টান স্ত্রী তার স্বামীর কর্তৃত্বের প্রতি সম্মান দেখান। তিনি স্বামীকে ছোটো করেন না, স্বীয়স্বার্থে কাজে লাগান না অথবা তার পদ নিজে নিয়ে নেন না। এর পরিবর্তে, তিনি সমর্থনকারী ও সহযোগিতাপরায়ণ। স্বামীর সিদ্ধান্তের সঙ্গে যখন তার সিদ্ধান্ত মেলে না, তখন তিনি হয়তো সম্মানের সঙ্গে তার চিন্তাভাবনা জানাতে পারেন কিন্তু তিনি বশীভূত থাকেন। স্বামী যদি একজন বিশ্বাসী না হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি হয়তো কঠিন পরিস্থিতিগুলোর মুখোমুখি হতে পারেন কিন্তু তারপরও তার বশীভূত আচরণ হয়তো তার স্বামীকে যিহোবার অন্বেষণ করতে অনুপ্রাণিত করবে।—পড়ুন, ১ পিতর ৩:১, ২.

১৪. কীভাবে সন্তানরা তাদের বাবা-মা ও যিহোবার জন্য আনন্দ নিয়ে আসতে পারে?

১৪ সন্তানরা যখন তাদের বাবা-মার বাধ্য থাকে, তখন তারা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করে। এ ছাড়া, তারা তাদের বাবা-মার জন্যও সম্মান এবং আনন্দ নিয়ে আসে। (হিতোপদেশ ১০:১) একক বাবা অথবা মায়ের পরিবারগুলোতে, সন্তানরা বাধ্যতার একই নীতি প্রয়োগ করে, এই বিষয়টা মনে রাখে যে, তাদের বাবা অথবা মায়ের হয়তো তাদের সমর্থন ও সহযোগিতা আরও বেশি প্রয়োজন। যে-পরিবারগুলোতে সমস্ত সদস্য তাদের ঈশ্বরদত্ত দায়িত্ব পালন করে, সেখানে প্রচুর শান্তি এবং আনন্দ থাকে। এটা সমস্ত পরিবারের উদ্যোক্তা যিহোবা ঈশ্বরের জন্য সম্মান নিয়ে আসে।

মণ্ডলীর মধ্যে সম্মান

১৫. (ক) কীভাবে আমরা মণ্ডলীতে দেখাতে পারি যে, আমরা যিহোবার কর্তৃত্বকে সম্মান করি? (খ) কোন নীতিগুলো আমাদেরকে নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের বাধ্য হওয়ার জন্য সাহায্য করতে পারে? (‘ তোমরা নেতাদিগের আজ্ঞাগ্রাহী হও’ শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)

১৫ যিহোবা তাঁর পুত্রকে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর উপর শাসক হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। (কলসীয় ১:১৩) ফল স্বরূপ, যিশু পৃথিবীতে ঈশ্বরের লোকেদের আধ্যাত্মিক চাহিদার যত্ন নেওয়ার জন্য তাঁর ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসকে’ নিযুক্ত করেছেন। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) যিহোবার সাক্ষিদের পরিচালকগোষ্ঠী “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাস” হিসেবে কাজ করে। প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মতো আজকেও প্রাচীনরা পরিচালকগোষ্ঠীর কাছ থেকে নির্দেশনা ও পরামর্শ পায় আর তা হয় সরাসরি নয়তো প্রতিনিধিদের মাধ্যমে, যেমন ভ্রমণ অধ্যক্ষদের মাধ্যমে। আমরা যখন ব্যক্তি-বিশেষ হিসেবে খ্রিস্টান প্রাচীনদের কর্তৃত্বকে সম্মান করি, তখন আমরা যিহোবার বাধ্য হই।—পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ৫:১২; ইব্রীয় ১৩:১৭.

১৬. কোন অর্থে প্রাচীনরা পবিত্র আত্মার দ্বারা নিযুক্ত?

১৬ প্রাচীন ও পরিচারক দাসেরা সিদ্ধ নয়। আমাদের মতো তারাও ভুল করে থাকে। তা সত্ত্বেও, প্রাচীনরা হল ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ বা দানরূপ মানুষ, যাদেরকে প্রদান করা হয়েছে যেন তারা মণ্ডলীকে আধ্যাত্মিকভাবে দৃঢ় থাকতে সাহায্য করে। (ইফিষীয় ৪:৮) প্রাচীনরা পবিত্র আত্মার দ্বারা নিযুক্ত। (প্রেরিত ২০:২৮) কীভাবে? এই অর্থে যে, এই পুরুষদের প্রথমে ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা অনুপ্রাণিত বাক্যে লিপিবদ্ধ যোগ্যতাগুলো পূরণ করতে হয়। (১ তীমথিয় ৩:১-৭, ১২; তীত ১:৫-৯) অধিকন্তু, যে-প্রাচীনরা একজন ভাইয়ের যোগ্যতাগুলো মূল্যায়ন করে, তারা যিহোবার পবিত্র আত্মার নির্দেশনার জন্য আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করে।

১৭. মণ্ডলীর কার্যক্রমে, কেন খ্রিস্টান নারীরা মাঝে মাঝে মস্তক আচ্ছাদন করে থাকে?

১৭ মণ্ডলীতে হয়তো এমন সময়ও আসতে পারে, যখন সাধারণত প্রাচীন ও পরিচারক দাসদের জন্য নির্ধারিত কোনো কাজ, যেমন ক্ষেত্রের পরিচর্যা সভা পরিচালনা করার জন্য তাদেরকে পাওয়া যায় না। এই ধরনের ক্ষেত্রগুলোতে অন্য বাপ্তাইজিত ভাইয়েরা তা করতে পারে। আর যদি কোনো বাপ্তাইজিত ভাইও না থাকে, তাহলে যোগ্য খ্রিস্টান বোনেরা তা করতে পারে। কিন্তু, একজন নারী যখন সেই ভূমিকা পালন করে থাকেন, যা সাধারণত একজন বাপ্তাইজিত পুরুষের জন্য নির্ধারিত, তখন তিনি মস্তক আচ্ছাদন করেন। * (১ করিন্থীয় ১১:৩-১০) এই চাহিদা যিহোবার মস্তকপদের ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখানোর এক সুযোগ করে দেয় আর তা পরিবারে ও মণ্ডলীতে উভয় ক্ষেত্রেই।

জাগতিক কর্তৃপক্ষের প্রতি সম্মান

১৮, ১৯. (ক) রোমীয় ১৩:১-৭ পদে উল্লেখিত নীতিগুলো আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? (খ) কীভাবে আমরা জাগতিক কর্তৃপক্ষের প্রতি সম্মান দেখিয়ে থাকি?

১৮ সত্য খ্রিস্টানরা বিবেকবুদ্ধি খাটিয়ে রোমীয় ১৩:১-৭ পদে বর্ণিত নীতিগুলো মেনে চলে। (পড়ুন।) সেই অংশটা পড়ার সময় আপনি দেখতে পাবেন যে, সেখানে উল্লেখিত ‘প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষ’ হল জাগতিক সরকারগুলো। যতদিন পর্যন্ত যিহোবা এই জাগতিক সরকারগুলোকে থাকতে দিচ্ছেন, তারা গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পাদন করছে অর্থাৎ কিছুটা শৃঙ্খলা বজায় রাখছে এবং প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সেবা প্রদান করছে। আমরা আইনকানুন মেনে চলার মাধ্যমে এই কর্তৃপক্ষদের প্রতি আমাদের সম্মান দেখিয়ে থাকি। তাই, আমাদের কাছ থেকে প্রাপ্য যেকোনো কর প্রদান করার, সরকার চায় এমন যেকোনো ফর্ম বা নথি সঠিকভাবে পূরণ করার এবং আমাদের পরিবার, ব্যাবসা বা সম্পত্তির সঙ্গে যুক্ত যেকোনো আইন মেনে চলার ব্যাপারে আমরা সতর্ক থাকি। কিন্তু, জাগতিক কর্তৃপক্ষরা যখন আমাদেরকে ঈশ্বরের অবাধ্য হতে বলে, তখন আমরা তাদের বশীভূত হই না। এর পরিবর্তে, আমরা প্রাচীনকালের প্রেরিতদের মতো এই উত্তর দিই: “মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে।”—প্রেরিত ৫:২৮, ২৯; ৪৮ “ কার কর্তৃত্বের প্রতি আমার বাধ্য হওয়া উচিত?” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

১৯ এ ছাড়া, আমরা অন্যদের সঙ্গে আমাদের আচার-ব্যবহারের মাধ্যমেও জাগতিক কর্তৃপক্ষের প্রতি সম্মান দেখিয়ে থাকি। মাঝে মাঝে, আমাদেরকে হয়তো সরাসরি সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে হয়। প্রেরিত পৌল রাজা হেরোদ আগ্রিপ্প ও দেশাধ্যক্ষ ফীষ্টের মতো শাসকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এই ব্যক্তিরা গুরুতর দোষে দোষী ছিল কিন্তু পৌল তাদেরকে সম্মানের সঙ্গে সম্বোধন করেছিলেন। (প্রেরিত ২৬:২, ২৫) আমরাও পৌলের উদাহরণ অনুকরণ করি, তা যে-কর্মকর্তাকে আমরা সম্বোধন করি, তিনি একজন শক্তিশালী শাসকই হোন বা স্থানীয় পুলিশই হোন। স্কুলে, অল্পবয়সি খ্রিস্টানরা তাদের শিক্ষক এবং স্কুলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি একইরকম সম্মান দেখানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে। অবশ্য, আমরা শুধু তাদেরকেই সম্মান করি না, যারা আমাদের বিশ্বাসকে সমর্থন করেন; আমরা সেই ব্যক্তিদের সঙ্গেও আচরণ করার সময় সম্মান দেখাই, যারা যিহোবার সাক্ষিদের বিরোধিতা করে। সত্যিই, অধিকাংশ অবিশ্বাসীরা যেন আমাদের ‘শ্রদ্ধাপূর্ণ’ আচরণ লক্ষ করে।—পড়ুন, রোমীয় ১২:১৭, ১৮; ১ পিতর ৩:১৬, ইজি-টু-রিড ভারশন।

২০, ২১. কিছু আশীর্বাদ কী, যেগুলো কর্তৃপক্ষের প্রতি উপযুক্ত সম্মান দেখানোর ফলে আসে?

২০ আসুন, সম্মান দেখানোর ক্ষেত্রে আমরা যেন কার্পণ্য না করি। প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “সকলকে সমাদর কর।” (১ পিতর ২:১৭) লোকেরা যখন বুঝতে পারে যে, আমরা তাদেরকে অকৃত্রিম সম্মানের সঙ্গে দেখি, তখন তারা হয়তো গভীরভাবে প্রভাবিত হতে পারে। মনে রাখবেন যে, এই গুণ দিন দিন আরও বিরল হয়ে পড়ছে। তাই, এটা দেখানো যিশুর এই আজ্ঞার প্রতি আমাদের মনোযোগ দেওয়ার একটা উপায়: “তোমাদের দীপ্তি মনুষ্যদের সাক্ষাতে উজ্জ্বল হউক, যেন তাহারা তোমাদের সৎক্রিয়া দেখিয়া তোমাদের স্বর্গস্ত পিতার গৌরব করে।”—মথি ৫:১৬.

২১ এই অন্ধকারময় জগতে সৎহৃদয়ের ব্যক্তিরা আধ্যাত্মিক আলোর দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাই, পরিবারে, মণ্ডলীতে এবং জাগতিক ক্ষেত্রগুলোতে সম্মান দেখানো কাউকে কাউকে আকৃষ্ট করতে এবং তাদেরকে আমাদের সঙ্গে আলোতে চলতে পরিচালিত করতে পারে। কী এক গৌরবান্বিত প্রত্যাশা! এমনকী যদি তা না-ও হয়, তবুও একটা বিষয় নিশ্চিত। মানুষদের প্রতি আমাদের সম্মান যিহোবা ঈশ্বরকে খুশি করে এবং আমাদেরকে তাঁর প্রেমে অবস্থিতি করতে সাহায্য করে। এর চেয়ে বড়ো পুরস্কার আর কীই-বা হতে পারে?

^ অনু. 17 এই নীতি কাজে লাগানোর ব্যাপারে পরিশিষ্টের “মস্তক আচ্ছাদন—কখন এবং কেন?” শিরোনামের প্রবন্ধে কিছু ব্যাবহারিক উপায় বিশ্লেষণ করা হয়েছে।