অপূর্ব নতুন জগত যা ঈশ্বর তৈরি করবেন
অংশ ১০
অপূর্ব নতুন জগত যা ঈশ্বর তৈরি করবেন
হর্মাগিদোনে ঈশ্বরের পরিষ্কার করার যুদ্ধের পর কি হবে? তারপর এক মহিমাপূর্ণ নতুন যুগের আরম্ভ হবে। হর্মাগিদোনে রক্ষাপ্রাপ্তরা ঈশ্বরের শাসনের প্রতি ইতিমধ্যেই বিশ্বস্ততা প্রদর্শনের ফলে তাদের নতুন জগতে নিয়ে যাওয়া হবে। ঈশ্বরের কাছ থেকে মানব পরিবারের প্রতি অপূর্ব উপকারসকল বর্ষিত হওয়ার দরুণ সেটি ইতিহাসের কতই না রোমাঞ্চকর এক নতুন অধ্যায় হবে!
২ ঈশ্বরের রাজ্যের পরিচালনার অধীনে রক্ষাপ্রাপ্তরা পরমদেশ গড়ে তুলতে আরম্ভ করবে। তাদের শক্তি নিঃস্বার্থপর উদ্দেশ্যের প্রতি ব্যবহৃত হবে যা সেই সময়ে জীবিত সকলের প্রতি উপকার আনবে। মানবজাতির জন্য পৃথিবী এক সুন্দর, শান্তিপূর্ণ, তৃপ্তিদায়ক গৃহে পরিণত হতে আরম্ভ করবে।
ধার্মিকতা দুষ্টতাকে প্রতিস্থাপিত করে
৩ শয়তানের জগত ধ্বংস হওয়ার জন্যই এই সমস্ত কিছু সম্পাদন হওয়া সম্ভব হবে। বিভেদ সৃষ্টিকারী মিথ্যা ধর্মগুলি, সামাজিক ব্যবস্থা বা সরকারগুলি আর থাকবে না। লোকেদের প্রতারণা করতে শয়তানি নীতির প্রচার আর থাকবে না; যেসব কর্তৃত্ব তা সৃষ্টি করে সেগুলি শয়তানের ব্যবস্থার সাথেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। শুধু চিন্তা করুন: শয়তানের জগতের সমস্ত বিষাক্ত আবহাওয়া পরিষ্কৃত হবে! তা কতই না তৃপ্তিদায়ক হবে!
৪ তারপর মানব শাসনের ধ্বংসমূলক মনোভাবকে প্রতিস্থাপিত করবে ঈশ্বরের থেকে আগত গঠনমূলক শিক্ষা। “তোমার সন্তানেরা সকলে সদাপ্রভুর কাছে শিক্ষা পাইবে।” (যিশাইয় ৫৪:১৩) বছরের পর বছর এই গঠনমূলক শিক্ষার জন্য “সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী সদাপ্রভু-বিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।” (যিশাইয় ১১:৯) মন্দ বিষয় লোকেরা আর শিক্ষা করবে না, কিন্তু “জগন্নিবাসীরা ধার্ম্মিকতা শিক্ষা করিবে।” (যিশাইয় ২৬:৯) গঠনমূলক চিন্তা ও কার্যকলাপ হবে প্রতিদিনের নিয়ম।—প্রেরিত ১৭:৩১; ফিলিপীয় ৪:৮.
৫ ফলে সেখানে আর হত্যা, দৌরাত্ম্য, ধর্ষণ, ডাকাতি অথবা অন্যান্য অপরাধ হবে না। অন্যের মন্দকার্যের জন্য কাউকে আর দুঃখকষ্ট ভোগ করতে হবে না। হিতোপদেশ ১০:৩০ বলে: “ধার্মিক লোক কখনও বিচলিত হইবে না; কিন্তু দুষ্টগণ দেশে বাস করিবে না।”
সিদ্ধ স্বাস্থ্যের পুনরুদ্ধার
৬ নতুন জগতে আদি বিদ্রোহের সকল মন্দ প্রভাব অপসারিত হবে। উদাহরণস্বরূপ, রাজ্য শাসন অসুস্থতা ও মৃত্যু নির্মূল করবে। বর্তমানে, যদিও বা আপনার কিছুটা উত্তম স্বাস্থ্য থাকলেও, বাস্তব সত্যটি হল আপনি বৃদ্ধাবস্থায় পৌঁছাতেই আপনার চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ হয়, দাঁত খারাপ হয়, শোনার শক্তি কমে যায়, চামড়া কুঁচকে যায় এবং আপনার অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলিরও ভাঙ্গন ঘটে, যতক্ষণ না অবশেষে আপনার মৃত্যু হয়।
৭ যাইহোক, আমাদের প্রথম পিতামাতার কাছ থেকে পাওয়া সেই সব দুর্দশাজনক ফলগুলি অতীতের বিষয় হবে। যীশু পৃথিবীতে থাকাকালীন স্বাস্থ্য সম্পর্কে যা প্রদর্শন করেছিলেন তা মথি ১৫:৩০, ৩১.
আপনার কি মনে আছে? বাইবেল বর্ণনা দেয়: “বিস্তর লোক তাঁহার কাছে আসিতে লাগিল, তাহারা আপনাদের সঙ্গে খঞ্জ, অন্ধ, বোবা, নুলা এবং আরও অনেক লোককে লইয়া তাঁহার চরণের নিকটে ফেলিয়া রাখিল; আর তিনি তাহাদিগকে সুস্থ করিলেন। এইরূপে বোবারা কথা কহিতেছে, নুলারা সুস্থ হইতেছে, খঞ্জেরা চলিতেছে এবং অন্ধেরা দেখিতেছে, ইহা দেখিয়া লোকেরা আশ্চর্য্য জ্ঞান করিল।”—৮ নতুন জগতে কি মহা আনন্দই হবে যখন আমাদের সমস্ত অসুস্থতা নির্মূল হবে! দুর্বল স্বাস্থ্যের জন্য যে দুঃখকষ্ট ভোগ করতে হয় তা আর কখনও আমাদের পীড়িত করবে না। “নগরবাসী কেহ বলিবে না, আমি পীড়িত।” “তৎকালে অন্ধদের চক্ষু খোলা যাইবে, আর বধিরদের কর্ণ মুক্ত হইবে। তৎকালে খঞ্জ হরিণের ন্যায় লম্ফ দিবে, ও গোঙ্গাদের জিহাব আনন্দগান করিবে।”—যিশাইয় ৩৩:২৪; ৩৫:৫, ৬.
৯ প্রতিদিন সকালবেলা জেগে উঠে আপনি কি রোমাঞ্চিত বোধ করবেন না এই উপলব্ধি করে, যে আপনি গতকালের থেকে আরও বেশী স্বাস্থ্যবান হয়েছেন? বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এটি জানা কি আনন্দের বিষয় হবে না যে, যত দিন অতিবাহিত হবে ততই তারা সম্পূর্ণ যৌবনে ফিরে যাবেন, এবং আদম ও হবা আদিতে দেহ ও মনে যে সিদ্ধতা উপভোগ করত তারা তা প্রাপ্ত হবেন? বাইবেলের প্রতিজ্ঞা হল: “তাহার মাংস বালকের অপেক্ষাও সতেজ হইবে, সে যৌবনকাল ফিরিয়া পাইবে।” (ইয়োব ৩৩:২৫) চশমা, শ্রবণের যন্ত্র, ক্রাচ্, হুইলচেয়ার ও ওষুধপত্র ফেলে দেওয়া কতই না আনন্দের বিষয় হবে! হাসপাতাল, ডাক্তার ও দাঁতের ডাক্তারের আর কখনই প্রয়োজন হবে না।
১০ যে ব্যক্তিরা এত অপূর্ব স্বাস্থ্য উপভোগ করবে তারা আর মৃত্যু কামনা করবে না। তাদের করতেও হবে না, কারণ মানবজাতি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অসিদ্ধতা ও মৃত্যুর কবলে আর থাকবে না। খ্রীষ্টকে ‘রাজত্ব করিতেই হইবে, যাবৎ ঈশ্বর সমস্ত শত্রুকে তাঁহার পদতলে না রাখিবেন। শেষ শত্রু যে মৃত্যু, সেও বিলুপ্ত হইবে।’ ‘ঈশ্বরের অনুগ্রহ-দান অনন্ত জীবন।’—১ করিন্থীয় ১৫:২৫, ২৬; রোমীয় ৬:২৩; আরও দেখুন যিশাইয় ২৫:৮.
১১ পরমদেশে মানব পরিবারের প্রতি চিন্তাশীল ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রবাহিত উপকারগুলির সারাংশ দিয়ে বাইবেলের শেষ পুস্তকটি বলে: “আর [ঈশ্বর] তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.
মৃতদের প্রত্যাবর্তন হয়
১২ যীশু অসুস্থ ও খঞ্জদের সুস্থ করার থেকেও আরও বেশী কিছু করেছিলেন। তিনি সমাধি থেকেও ব্যক্তিদের বার করে এনেছিলেন। ঈশ্বর তাঁকে যে পুনরুত্থানের আশ্চর্য শক্তি দিয়েছেন এর দ্বারা তিনি তা প্রদর্শন করেন। আপনি কি সেই ঘটনার বিষয় স্মরণ করতে পারেন যখন যীশু এক ব্যক্তির গৃহে আসেন যার কন্যা মারা গিয়েছিল? যীশু মৃত বালিকাটিকে বলেন: “বালিকে, তোমাকে বলিতেছি, উঠ।” এর ফল কী হয়? “বালিকাটি তৎক্ষণাৎ উঠিয়া বেড়াইতে লাগিল।” তা দেখে সেখানকার লোকেরা “বড়ই বিস্ময়ে একেবারে চমৎকৃৎ মার্ক ৫:৪১, ৪২; আরও দেখুন লূক ৭:১১-১৬; যোহন ১১:১-৪৫.
হইল।” আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিল তারা!—১৩ নতুন জগতে “ধার্ম্মিক ও অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে।” (প্রেরিত ২৪:১৫) সেই সময় মৃতদের উত্থাপন করতে যীশু ঈশ্বর-দত্ত ক্ষমতা ব্যবহার করবেন, যেমন তিনি বলেন, “আমিই পুনরুত্থান ও জীবন; যে আমাতে বিশ্বাস করে, সে মরিলেও জীবিত থাকিবে।” (যোহন ১১:২৫) তিনি আরও বলেন: “কবরস্থ [ঈশ্বরের স্মৃতিতে] সকলে তাঁহার [যীশুর] রব শুনিবে এবং . . . বাহির হইয়া আসিবে।”—যোহন ৫:২৮, ২৯.
১৪ পৃথিবীব্যাপী মহা আনন্দ হবে যখন দলে দলে মৃত ব্যক্তিরা জীবিত হবে ও তাদের প্রিয়জনের কাছে ফিরে যাবে! দুঃখিত হওয়ার জন্য সংবাদপত্রে আর শোকসংবাদ থাকবে না। পরিবর্তে, এর বিপরীত হতে পারে: নব পুনরুত্থিতদের সম্পর্কে ঘোষণাবলী থাকবে যা তাদের প্রিয়জনদের আনন্দিত করবে। তাই কোন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া, চিতা, দাহস্থান ও কবরস্থান থাকবে না!
সত্যই এক শান্তিপূর্ণ জগৎ
১৫ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রকৃত শান্তি উপলব্ধি করা যাবে। যুদ্ধ, যুদ্ধের উদ্যোক্তারা এবং যুদ্ধাস্ত্র তৈরী করা হবে অতীতের বিষয়। কেন? কারণ বিভেদ সৃষ্টিকারী জাতীয়, উপজাতীয় ও বর্ণ সম্বন্ধীয় আগ্রহের লোপ হবে। আর তখনই সম্পূর্ণ অর্থে, “এক জাতি অন্য জাতির বিপরীতে আর খড়্গ তুলিবে না, তাহারা আর যুদ্ধ শিখিবে না।”—মীখা ৪:৩.
১৬ মানুষের ক্রমাগত যুদ্ধের রক্তপিপাসু ইতিহাসের সামনে এই বিষয়টি হয়ত আশ্চর্যবোধ হতে পারে। কিন্তু এই পরিস্থিতি এসেছিল কারণ মানবজাতি মানুষ ও মন্দ আত্মাদের শাসনের অধীনে ছিল। রাজ্য শাসনের অধীনে, নতুন জগতে এই পরিস্থিতি হবে: “চল, সদাপ্রভুর কার্য্যকলাপ সন্দর্শন কর . . . তিনি পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত যুদ্ধ নিবৃত্ত করেন; তিনি ধনু ভগ্ন করেন, বড়শা খন্ড খন্ড করেন, তিনি [যুদ্ধ] রথসকল আগুনে পোড়াইয়া দেন।”—গীতসংহিতা ৪৬:৮, ৯.
১৭ যেমন এদন উদ্যানে ছিল, মানুষ ও পশু শান্তিতে বাস করবে। (আদিপুস্তক ১:২৮; ২:১৯) ঈশ্বর বলেন: “সেই দিন আমি লোকদের নিমিত্ত মাঠের পশু, আকাশের পক্ষী ও ভূমির সরীসৃপ সকলের সহিত নিয়ম করিব; . . . তাহাদিগকে নিশ্চিন্তে শয়ন করাইব।”—হোশেয় ২:১৮.
১৮ সেই শান্তি কত দূর বিস্তৃত থাকবে? “কেন্দুয়াব্যাঘ্র মেষশাবকের সহিত একত্র বাস করিবে; চিতাব্যাঘ্র ছাগবৎসের সহিত শয়ন করিবে; গোবৎস, যুবসিংহ ও হৃষ্টপুষ্ট পশু একত্র থাকিবে; এক ক্ষুদ্র বালক তাহাদিগকে চালাইবে।” আর কখনও পশু মানুষের জন্য ও নিজেদের জন্য ভয়ের কারণ হবে না। এমনকি “সিংহ বলদের ন্যায় বিচালি খাইবে”!—যিশাইয় ১১:৬-৯; ৬৫:২৫.
পৃথিবী পরমদেশে পরিণত হয়
১৯ সম্পূর্ণ পৃথিবী মানবজাতির জন্য এক পরমদেশ গৃহে পরিণত হবে। সেই কারণেই যীশু এক ব্যক্তিকে প্রতিজ্ঞা করতে পেরেছিলেন যে তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল: “তুমি পরমদেশে আমার সঙ্গে উপস্থিত হইবে।” বাইবেল বলে: “প্রান্তর ও জলশূন্য স্থান আমোদ করিবে, মরুভূমি উল্লাসিত হইবে, গোলাপের ন্যায় উৎফুল্ল হইবে . . . কেননা প্রান্তরে জল উৎসারিত হইবে, ও মরুভূমির নানা স্থানে প্রবাহ হইবে।”—লূক ২৩:৪৩; যিশাইয় ৩৫:১, ৬.
২০ ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে, ক্ষুধা লক্ষ লক্ষ লোককে আর পীড়িত করবে না। “দেশমধ্যে পর্ব্বত-শিখরে প্রচুর শস্য হইবে।” “ক্ষেত্রের বৃক্ষ ফল উৎপন্ন করিবে, ও ভূমি নিজ শস্য দিবে; এবং তাহারা নির্ভয়ে স্বদেশে থাকিবে।”—গীতসংহিতা ৭২:১৬; যিহিষ্কেল ৩৪:২৭.
২১ কখনও আর দরিদ্রতা, গৃহহারা লোক, বস্তি বা ক্রমাগত অপরাধে পরিপূর্ণ প্রতিবেশ থাকবে না। “লোকেরা গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া তাহার মধ্যে বসতি করিবে, দ্রাক্ষাক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়া তাহার ফল ভোগ করিবে। তাহারা গৃহ নির্ম্মাণ করিলে অন্যে যিশাইয় ৬৫:২১, ২২; মীখা ৪:৪.
বাস করিবে না, তাহারা রোপণ করিলে অন্যে ভোগ করিবে না।” “প্রত্যেকে আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুরবৃক্ষের তলে বসিবে; কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না।”—২২ এই সমস্ত কিছু ও আরও অধিক দ্বারা মানুষ পরমদেশে আশীর্বাদপ্রাপ্ত হবে। গীতসংহিতা ১৪৫:১৬ বলে: “তুমিই [ঈশ্বর] আপন হস্ত মুক্ত করিয়া থাক, সমুদয় প্রাণীর বাঞ্ছা পূর্ণ করিয়া থাক।” সেই কারণেই বাইবেল ভাববাণী ঘোষণা করে: “মৃদুশীলেরা দেশের অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে। . . . ধার্ম্মিকেরা দেশের অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:১১, ২৯.
অতীতকে মুছে ফেলা
২৩ বিগত ছয় হাজার বছর ব্যাপী মানব পরিবারের উপর যে ক্ষতি এসেছে তা ঈশ্বরের রাজ্যের শাসন অপসৃত করবে। সেই সময়ের আনন্দ, মানুষ যে দুঃখকষ্ট সহ্য করেছে তাকে ছাপিয়ে যাবে। পূর্বের কষ্টযন্ত্রনার কোন মন্দ স্মৃতিই আমাদের জীবনকে বিচলিত করবে না। গঠনমূলক চিন্তাধারা ও কার্যাবলীই হবে লোকেদের প্রতিদিনের জীবন যা বেদনাপূর্ণ স্মৃতিকে ধীরে ধীরে মুছে দেবে।
২৪ চিন্তাশীল ঈশ্বর ঘোষণা করেন: “দেখ, আমি নূতন আকাশমন্ডলের [মানবজাতির উপরে এক নতুন স্বর্গীয় সরকার] ও নূতন পৃথিবীর [এক ধার্মিক মানব সমাজ] সৃষ্টি করি; এবং পূর্ব্বে যাহা ছিল, তাহা স্মরণে থাকিবে না, আর মনে পড়িবে না। কিন্তু আমি যাহা সৃষ্টি করি, তোমরা তাহাতে চিরকাল আমোদ ও উল্লাস কর।” “সমস্ত পৃথিবী শান্ত ও সুস্থির হইয়াছে, সকলে উচ্চৈঃস্বরে আনন্দগান করিতেছে।”—যিশাইয় ১৪:৭; ৬৫:১৭, ১৮.
২৫ তাই এতদিন ধরে থাকা এই মন্দ ব্যবস্থাকে ঈশ্বর তাঁর রাজ্যের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিপরীত করবেন। আশীর্বাদ বর্ষণ করে তিনি আমাদের প্রতি অনন্তকাল যাবৎ তাঁর চিন্তা প্রদর্শন করবেন যা আমাদের অতীতে পাওয়া দুঃখকষ্টকে মোচন করতে যথেষ্ট হবে। পূর্বের দুঃখদুর্দশার স্মৃতিগুলি স্মরণ করতে যদি আমরা কখনও চাইও, তা তখন আমাদের কাছে এক আবছা স্মৃতিতে পরিণত হবে।
২৬ আমরা এই জগতে যে দুঃখকষ্ট সহ্য করেছি ঈশ্বর তার ক্ষতিপূরণ আমাদের এইভাবেই দেবেন। আমাদের অসিদ্ধরূপে জন্মগ্রহণ করার জন্য আমরা দোষী নয় তা তিনি জানেন, কারণ আমরা আমাদের প্রথম পিতামাতার কাছ থেকে অসিদ্ধতা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। এই শয়তানতুল্য জগতে জন্মগ্রহণ করার জন্য আমরা দায়ী নই, কারণ যদি আদম ও হবা বিশ্বস্ত থাকত, তাহলে আমরা পরমদেশ পৃথিবীতেই জন্ম নিতাম। তাই মন্দ অতীত যা আমাদের কাছে আঘাতস্বরূপ এসেছিল সেটি মুছে দেওয়া ছাড়াও ঈশ্বর আরও অধিক কিছু করবেন।
২৭ নতুন জগতে, রোমীয় ৮:২১, ২২ পদে ভাববাণী করা স্বাধীনতা, মানবজাতি অভিজ্ঞতা করবে: “সৃষ্টি নিজেও ক্ষয়ের দাসত্ব হইতে মুক্ত হইয়া ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা পাইবে। কারণ আমরা জানি, সমস্ত সৃষ্টি এখন পর্য্যন্ত একসঙ্গে আর্ত্তস্বর করিতেছে, ও একসঙ্গে ব্যথা খাইতেছে।” আর তখনই লোকেরা সেই প্রার্থনার সম্পূর্ণ পরিপূর্ণতা লক্ষ্য করবে: “তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হউক।” (মথি ৬:১০) পরমদেশ পৃথিবীতে অপূর্ব পরিস্থিতি স্বর্গের পরিস্থিতিকে প্রতিফলিত করবে।
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
১, ২. হর্মাগিদোনের পরিষ্কার করার যুদ্ধের পর কী হবে?
৩. হর্মাগিদোনের ঠিক পরেই অবিলম্বে কী তৃপ্তি লাভ করা যাবে?
৪. শিক্ষার পরিবর্তন সম্বন্ধে বর্ণনা করুন।
৫. সমস্ত দুষ্টতা ও দুষ্ট লোকদের কী হবে?
৬, ৭. (ক) রাজ্য শাসন কোন্ নির্মম বাস্তবতার সমাপ্তি আনবে? (খ) পৃথিবীতে থাকাকালীন যীশু সেটি কিভাবে প্রদর্শন করেন?
৮, ৯. নতুন জগতে সিদ্ধ স্বাস্থ্যের পুনরুদ্ধার হওয়ার সময় যে আনন্দ আসবে, তার বর্ণনা করুন।
১০. মৃত্যুর কী হবে?
১১. নতুন জগতের উপকারগুলি সম্বন্ধে কিভাবে প্রকাশিত বাক্য সারাংশ দেয়?
১২. পুনরুত্থান করার ঈশ্বর-দত্ত ক্ষমতাটি যীশু কিভাবে প্রদর্শন করেন?
১৩. কোন্ প্রকৃতির লোকেরা পুনরুত্থিত হবেন?
১৪. যেহেতু মৃত্যু আর থাকবে না, তাই কিসের লোপ হবে?
১৫. মীখার ভাববাণী কিরূপে সম্পূর্ণ অর্থে পরিপূর্ণতা লাভ করবে?
১৬. যুদ্ধ ঘটা অসম্ভব হওয়ার ক্ষেত্রে ঈশ্বর কিভাবে নিশ্চিত করবেন?
১৭, ১৮. নতুন জগতে, মানুষ ও পশুর মধ্যে কী সম্পর্ক থাকবে?
১৯. পৃথিবী কিসে পরিণত হবে?
২০. মানবজাতিকে ক্ষুধা আর কখনও কেন যন্ত্রণা দেবে না?
২১. গৃহহীন অবস্থা, বস্তি ও মন্দ প্রতিবেশের কী হবে?
২২.ঈশ্বরের শাসনের আশীর্বাদ সম্বন্ধে বাইবেল কিভাবে বর্ণনা করে?
২৩. আমরা যে দুঃখকষ্ট সহ্য করেছি তা কিভাবে ঈশ্বরের রাজ্য শাসন মুছে দেবে?
২৪, ২৫. (ক) কী ঘটবে বলে যিশাইয় ভাববাণী করেন? (খ) আমরা কিরূপে নিশ্চিত হতে পারি যে পূর্বের দুঃখকষ্টের স্মৃতিগুলি আবছা হয়ে যাবে?
২৬. ঈশ্বর কেন আমাদের পূর্বের যে কোন দুঃখদুর্দশার ক্ষতিপূরণ করবেন?
২৭. নতুন জগতে কোন্ ভাববাণীগুলি অপূর্বরূপে তাদের পরিপূর্ণতা প্রাপ্ত হবে?
[Pictures on page 23]
নতুন জগতে, বয়স্করা যৌবন ফিরে পাবেন
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
সমস্ত অসুস্থতা ও অক্ষমতা নতুন জগতে দূর করা হবে
[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
নতুন জগতে, মৃতদের জীবনে পুনরুত্থিত করা হবে
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
‘তারা আর যুদ্ধ শিখবে না’
[Pictures on page 27]
পরমদেশে মানুষ ও পশু সম্পূর্ণ শান্তিতে থাকবে
[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
‘ঈশ্বর আপন হস্ত মুক্ত করে সমুদয় প্রাণীর বাঞ্ছা পূর্ণ করবেন’
[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
আমরা যত দুঃখকষ্ট সহ্য করেছি তার ক্ষতিপূরণ করার থেকেও ঈশ্বরের রাজ্য আরও বেশী কিছু করবে