সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বর কেন দুঃখকষ্ট ভোগের অনুমতি দিয়েছেন

ঈশ্বর কেন দুঃখকষ্ট ভোগের অনুমতি দিয়েছেন

অংশ ৬

ঈশ্বর কেন দুঃখকষ্ট ভোগের অনুমতি দিয়েছেন

কিসের ভুল হয়? ঈশ্বর আমাদের প্রথম পিতামাতাকে এদনের পরমদেশে যে উত্তম সূচনা দেন তা কোন্‌ ঘটনা ঘটার জন্য নষ্ট হয়ে যায়? পরমদেশের শান্তি ও একতা থাকার পরিবর্তে, হাজার হাজার বছর ধরে কেন এই দুষ্টতা ও দুঃখকষ্ট রয়েছে?

কারণ হল, আদম ও হবা তাদের স্বাধীন ইচ্ছার অপব্যবহার করে। তারা এই বিষয়টি ভুলে যায় যে, ঈশ্বর ও তাঁর নিয়ম ব্যতিরেকে সাফল্যলাভ করার জন্য তাদের সৃষ্টি করা হয় নি। তারা ঈশ্বর থেকে স্বাধীন হতে নির্ধারণ করে এই ভেবে যে সেটি তাদের জীবনধারাকে উন্নত করবে। ফলে তারা ঈশ্বর-নিয়োজিত স্বাধীন ইচ্ছার সীমার বাইরে পদার্পণ করে।—আদিপুস্তক, ৩ অধ্যায়।

সার্বিক সার্বভৌমত্বের বিচার্য বিষয়

ঈশ্বর আদম ও হবাকে ধ্বংস করে দিয়ে, অন্য এক মানব দম্পতীর মাধ্যমে আবার কেন আরম্ভ করলেন না? কারণ তাঁর সার্বিক সার্বভৌমত্বের, অর্থাৎ অপসারণ করার অসাধ্য, তাঁর শাসন করার অধিকারকে, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আহ্বান করা হয়েছিল।

প্রশ্নটি ছিল: কার শাসন করার অধিকার আছে, এবং কার শাসন সঠিক? সর্বশক্তিমান ও সকল প্রাণীর স্রষ্টা হওয়ার জন্যই, তাদের উপর শাসন করার অধিকার ঈশ্বরের আছে। যেহেতু তিনি সর্ব-জ্ঞানী, তাই তাঁর শাসন সমস্ত প্রাণীর জন্য সবচেয়ে ভাল। কিন্তু এখন ঈশ্বরের শাসনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আহ্বান করা হয়েছে। তাছাড়া, তাঁর সৃষ্টিতে কি কোন কিছু ভুল ছিল—মানুষে? মানুষের আনুগত্যতার প্রশ্ন কিভাবে জড়িত ছিল তা আমরা পরে বিবেচনা করব।

মানুষ ঈশ্বর থেকে স্বাধীন হওয়ার জন্য আর একটি প্রশ্নেরও ইঙ্গিত করা হয়: ঈশ্বরের দ্বারা শাসিত না হয়ে কি মানুষ অধিক উন্নতি করতে পারত? ঈশ্বর নিশ্চয় এর উত্তর জানতেন, কিন্তু মানুষকে নিশ্চিতরূপে এর উত্তর পেতে হলে, মানুষের আকাঙ্ক্ষিত সম্পূর্ণ স্বাধীনতা তাদের দেওয়া প্রয়োজন। তারা তাদের স্বাধীন ইচ্ছানুসারে সেই পথ বেছে নেয়, তাই ঈশ্বর তার অনুমতি দেন।

মানুষকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতাসহ যথেষ্ট সময় পরীক্ষা করতে দিয়ে, ঈশ্বর সর্বকালের জন্য এই বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করবেন যে, মানুষ ঈশ্বরের শাসনাধীনে অথবা নিজেদের শাসনাধীনে অধিক উত্তম অবস্থায় থাকে। এবং যে সময় তাদের দেওয়া হয়েছে তা যথেষ্ট হওয়া উচিৎ মানুষকে রাজনৈতিক, শিল্পসংক্রান্ত, বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসাক্ষেত্রে মানুষের বিবেচিত সাফল্যলাভের শীর্ষে পৌঁছাতে দিতে।

তাই, ঈশ্বর মানুষকে আমাদের দিন অবধি বল্গাহীনভাবে শাসন করতে দিয়েছেন, সন্দেহাতীতরূপে এটি প্রদর্শন করতে যে ঈশ্বরের থেকে স্বাধীন হয়ে মানুষের শাসন সাফল্যলাভ করে কি না। ফলে মানুষ দয়া ও নিষ্ঠুরতা, প্রেম ও বিদ্বেষ, ধার্মিকতা ও অধার্মিকতার মধ্যে বেছে নিতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু তাকে তার মনোনয়নের পরিণতিরও সম্মুখীন হতে হয়েছে: মঙ্গল ও শান্তি অথবা দুষ্টতা ও দুঃখকষ্ট।

আত্মিক প্রাণীদের বিদ্রোহ

বিবেচনাযোগ্য আর একটি বিষয়ও আছে: শুধুমাত্র আমাদের আদি পিতামাতাই ঈশ্বরের শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তা নয়। কিন্তু সেই সময় আর কারা অস্তিত্বে ছিলেন? আত্মিক প্রাণীরা। ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করার পূর্বে, এক উন্নত প্রকৃতির জীবন সৃষ্টি করেন, বহু দূতেদের সৃষ্টি করেন, স্বর্গীয় জগতে বাস করার জন্য। তাদেরও স্বাধীন ইচ্ছাসহ এবং ঈশ্বরের শাসনের প্রতি বাধ্য হওয়ার জন্য সৃষ্টি করা হয়।—ইয়োব ৩৮:৭; গীতসংহিতা ১০৪:৪; প্রকাশিত বাক্য ৫:১১.

বাইবেল প্রদর্শন করে যে আত্মিক জগতে বিদ্রোহের প্রথম সূত্রপাত হয়। এক আত্মিক প্রাণী সম্পূর্ণ স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষী হয়। এমনকি সে চায় মানুষেরা তাকে আরাধনা করুক। (মথি ৪:৮, ৯) এই আত্মিক বিদ্রোহী আদম ও হবাকে বিদ্রোহ করতে প্রভাবিত করার কারণ হয়, মিথ্যারূপে এই দাবী করে যে ঈশ্বর কোনকিছু উত্তম বিষয় থেকে তাদের বঞ্চিত করছেন। (আদিপুস্তক ৩:১-৫) তাই তাকে দিয়াবল (অপবাদক) এবং শয়তান (বিপক্ষ) বলা হয়। পরবর্তীকালে, সে অন্যান্য আত্মিক প্রাণীদের বিদ্রোহ করতে প্ররোচিত করে। তারা মন্দ আত্মারূপে পরিচিত হয়।—দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:১৭; প্রকাশিত বাক্য ১২:৯; ১৬:১৪.

১০ ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, মানুষ নিজেকে শয়তান ও তার মন্দ আত্মাদের প্রভাবের অধীনে নিয়ে যায়। সেই কারণে বাইবেল শয়তানকে বলে “এই যুগের দেব,” যে “অবিশ্বাসীদের মন অন্ধ করিয়াছে।” তাই, ঈশ্বরের বাক্য বলে যে “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।” যীশু স্বয়ং শয়তানকে “এ জগতের অধিপতি” বলেছিলেন।—২ করিন্থীয় ৪:৪; ১ যোহন ৫:১৯; যোহন ১২:৩১.

দুটি বিচার্য বিষয়

১১ শয়তান অপর একটি বিচার্য বিষয় উত্থাপিত করে যা ঈশ্বরকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আহ্বান জানায়। বাস্তবে, সে এই অভিযোগ করে যে ঈশ্বর যেভাবে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে ত্রুটি আছে এবং কেউই চাপের সম্মুখীন হলে সঠিক জিনিষটি করতে চায় না। আসলে, সে দাবী করেছিল যে পরীক্ষায় পড়লে তারা এমনকি ঈশ্বরকেও অভিসম্পাত দেবে। (ইয়োব ২:১-৫) এইরূপে শয়তান মানুষের আনুগত্যতার প্রশ্ন তোলে।

১২ তাই, ঈশ্বর সমস্ত বুদ্ধিমান প্রাণীর জন্য যথেষ্ট সময় দিয়েছেন এই বিচার্য বিষয়টি ও তার সাথে ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের বিচার্য বিষয়টির কিভাবে নিষ্পত্তি হয় তা দেখতে। (তুলনা করুন যাত্রাপুস্তক ৯:১৬.) মানব ইতিহাসের চূড়ান্ত অভিজ্ঞতাই অবশেষে এই দুটি বিচার্য বিষয়ের সত্যতা প্রকাশ করবে।

১৩ প্রথমতঃ, সার্বিক সার্বভৌমত্বের বিচার্য বিষয় অর্থাৎ ঈশ্বরের শাসন অধিকার সম্পর্কে সময় কী প্রকাশ করে? ঈশ্বর থেকে মানুষ কি অধিক উত্তমরূপে শাসন করতে পারত? ঈশ্বরের শাসনব্যবস্থা ছাড়া মানুষের যে কোন শাসনব্যবস্থা কি যুদ্ধ, অপরাধ ও অন্যায় মুক্ত আনন্দপূর্ণ এক জগৎ নিয়ে আসতে পারত? কোন কিছু কি দারিদ্র দূর করতে পারত ও সকলকে সমৃদ্ধি দিতে পারত? কোন ব্যবস্থা কি অসুস্থতা, বৃদ্ধাবস্থা ও মৃত্যু জয় করতে পারত? ঈশ্বরের শাসনব্যবস্থায় এই সমস্ত কিছু করার পরিকল্পনা ছিল।—আদিপুস্তক ১:২৬-৩১.

১৪ দ্বিতীয় বিচার্য বিষয়টির ক্ষেত্রে মানুষকে সৃষ্টি করার মূল্য সম্বন্ধে সময় কী প্রকাশ করে? ঈশ্বর যেভাবে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, সেভাবে সৃষ্টি করে তিনি কি ভুল করেছেন? পরীক্ষায় পড়লে তাদের মধ্যে কেউ যা ন্যায্য তা কি করতে পারবে? কোন মানুষ কি দেখাবে যে তারা স্বাধীন মানব শাসনের পরিবর্তে ঈশ্বরের শাসন চায়?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

১, ২. ঈশ্বর প্রদত্ত উত্তম সূচনাকে কিরূপে আমাদের প্রথম পিতামাতা নষ্ট করে দেয়?

৩-৫. কেন ঈশ্বর আদম ও হবাকে ধ্বংস করে দিয়ে আবার নতুন করে শুরু করলেন না?

৬, ৭. কেন ঈশ্বর মানুষকে এতদিন ধরে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন?

৮, ৯. (ক) আত্মিক জগতে কিরূপে বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়? (খ) আদম ও হবা ছাড়া আর কাদের শয়তান বিদ্রোহ করতে প্রভাবিত করে?

১০. মানুষ ও আত্মিক প্রাণীদের বিদ্রোহের জন্য কী পরিণতি ঘটে?

১১. শয়তান ঈশ্বরকে অন্য কোন্‌ বিচার্য বিষয় সম্বন্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আহ্বান জানায়?

১২-১৪. শয়তানের উত্থাপিত দুটি বিচার্য বিষয় সম্পর্কে সময় কিরূপে সত্যতা প্রকাশ করবে?

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বর মানুষকে সময় দিয়েছেন সফলতার শীর্ষে পৌঁছাতে

[সজন্যে]

Shuttle: Based on NASA photo