সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বিদ্রোহের পরিণতি কী হয়?

বিদ্রোহের পরিণতি কী হয়?

অংশ ৭

বিদ্রোহের পরিণতি কী হয়?

ঈশ্বরের শাসন করার অধিকারের বিচার্য বিষয় সম্পর্কে বলতে গেলে, এই এতগুলি শতাব্দী ঈশ্বর ব্যতিরেকে স্বাধীন মানব শাসনের ফলাফল কী হয়েছে? ঈশ্বরের থেকে মানুষ কি উত্তম শাসক প্রমাণিত হয়েছে? যদি আমরা বিবরণগুলি থেকে মানুষের প্রতি মানুষের অমানবিকতা দেখি, তাহলে নিশ্চয়ই নয়।

আমাদের প্রথম পিতামাতা ঈশ্বরের শাসন প্রত্যাখ্যান করাতে, দুর্দশা আসে। তারা নিজেদের জন্য ও তাদের থেকে আগত সমস্ত মানব পরিবারের জন্য দুঃখকষ্ট নিয়ে আসে। নিজেদের ছাড়া তাদের আর কারোকে দোষ দেওয়ার ছিল না। ঈশ্বরের বাক্য বলে: “তাহারা স্বয়ং বিধ্বংসীরূপ কার্য করিয়াছে; তাহারা তাঁহার সন্তান নয়, দোষ তাহাদের নিজেদেরই।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৫, NW.

আদম ও হবার প্রতি ঈশ্বরের সাবধানতার নির্ভুলতা ইতিহাস প্রদর্শন করে যা হল, যদি তারা ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনার অধীন থেকে সরে যায় তাহলে তাদের অবনতি ঘটবে ও অবশেষে মৃত্যু হবে। (আদিপুস্তক ২:১৭; ৩:১৯) ঈশ্বরের শাসনাধীন থেকে তারা সরে গিয়েছিল এবং অবশেষে তাদের অবনতিও ঘটে এবং মৃত্যু হয়।

পরবর্তীকালে তাদের সমস্ত সন্তানদের কী হয় তা রোমীয় ৫:১২ ব্যাখ্যা করে: “এক মনুষ্য [আদম, মানবজাতির পরিবারের মস্তক] দ্বারা পাপ, ও পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল; আর এই প্রকারে মৃত্যু সমুদয় মনুষ্যের কাছে উপস্থিত হইল।” তাই আমাদের প্রথম পিতামাতা যখন ঈশ্বরের অধ্যক্ষের অধিকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তখন তারা ত্রুটিপূর্ণ পাপীতে পরিণত হয়। প্রজনন-বিজ্ঞানের নিয়মানুসারে ফলাফলস্বরূপ তারা সন্তানদের প্রতি শুধুমাত্র অসিদ্ধতা ছাড়া আর কিছুই প্রদান করতে পারত না। সেই কারণে আমরা সকলেই ত্রুটিপূর্ণ, অসুস্থতা ও মৃত্যুর প্রবণতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছি।

বহু শতাব্দী অতিবাহিত হয়ে গেছে। সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতন হয়েছে। কল্পনাসাধ্য প্রত্যেকটি সরকারকে পরীক্ষা করা হয়েছে। তবুও, বারবার মানব পরিবারের প্রতি ভয়াবহ বিষয়গুলি ঘটেছে। একজন হয়ত চিন্তা করতে পারে যে ছয় হাজার বছর পর, মানুষ পৃথিবীব্যাপী শান্তি, ন্যায়স্থাপন ও উন্নতিসাধনের পথে পৌঁছাবে এবং এতদিনে তারা হয়ত দয়া, করুণা এবং সহযোগিতার প্রকৃত মূল্যটি বুঝতে পারবে।

কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি হল এর বিপরীত। এখনও পর্যন্ত উদ্ভাবিত কোন প্রকৃতির মানব সরকার সকলের জন্য শান্তি ও শ্রীবৃদ্ধি আনতে পারেনি। শুধুমাত্র এই বিংশ শতাব্দীতেই আমরা ইচ্ছাকৃতরূপে ব্যাপক হত্যাকান্ডে লক্ষ লক্ষ হত্যা দেখেছি এবং ১০ কোটিরও অধিক ব্যক্তিকে যুদ্ধে মারা যেতে দেখেছি। আমাদের সময়ে অসহনীয়তা ও রাজনৈতিক বিবাদের জন্য অসংখ্য লোককে নির্যাতন, হত্যা ও কারাবদ্ধ করা হয়েছে।

বর্তমানে পরিস্থিতি

আরও, বর্তমানে মানব পরিবারের সমগ্র পরিস্থিতিটি বিবেচনা করুন। অপরাধ ও দৌরাত্ম্য প্রচুর। ব্যাপকভাবে নেশাকর ওষুধের ব্যবহার রয়েছে। যৌন সংক্রান্ত রোগ পৃথিবীব্যাপী। হাজার হাজার লোক ভয়াবহ এইডস্‌ রোগের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতি বছর কোটি কোটি লোক ক্ষুধা অথবা রোগের জন্য মারা যাচ্ছে, যেখানে শুধুমাত্র অল্পসংখ্যক লোকে অত্যন্ত ধনী। মানুষ পৃথিবীকে দূষিত ও আবর্জনাপূর্ণ করেছে। সর্বত্র পারিবারিক জীবন ও নৈতিক মূল্যে ভাঙ্গন ধরেছে। সত্যই, বর্তমান জীবন ‘এই জগতের অধিপতি’ শয়তানের কুৎসিত শাসনকে প্রতিফলিত করে। যে জগতের সে অধিপতি সেটি হল এক নিষ্প্রাণ, নির্মম ও সম্পূর্ণ কলুষিত এক জগৎ।—২ করিন্থীয় ৪:৪.

ঈশ্বর মানুষকে যথেষ্ট সময় দিয়েছেন বৈজ্ঞানিক ও বস্তু সম্পর্কে উন্নতির শীর্ষে পৌঁছাতে। কিন্তু এটি কি প্রকৃতপক্ষে এক উন্নতি, যখন তীর ধনুককে পরিবর্তন করে এসেছে মেশিন গান, বোমাবর্ষণকারী বিমান, পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্র? একে কি উন্নতি বলা যায় যখন লোকে অন্তরিক্ষে যেতে পারে কিন্তু পৃথিবীতে শান্তিতে একত্রে বাস করতে পারে না? এই কি উন্নতি যখন লোকে রাতে রাস্তায় হাঁটতে বা এমনকি কোন কোন জায়গায় দিনেরবেলাতেও চলতে ভয় করে?

সময় কী প্রদর্শন করেছে

শতাব্দীব্যাপী সময়ের পরীক্ষা প্রদর্শন করে যে ঈশ্বরের শাসন ব্যতিরেকে মানুষ সফলভাবে তার পদক্ষেপ ফেলতে পারে না। তারা যেমন খাদ্য, পানীয় ও শ্বাসপ্রশ্বাস ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে না ঠিক তেমন ঈশ্বরের শাসন ছাড়া তাদের বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। বিষয়টি স্পষ্ট: স্রষ্টার পরিচালনার প্রতি নির্ভর করব বলেই আমরা পরিকল্পিত ঠিক যেমন খাদ্য, পানীয় ও বায়ুর উপর নির্ভর করার জন্য আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।

১০ দুষ্টতা থাকতে অনুমতি দিয়ে ঈশ্বর, স্বাধীন ইচ্ছার অপব্যবহারের দুর্দশাজনক ফলাফলটি সর্বসময়ের জন্য প্রদর্শন করেন। এবং স্বাধীন ইচ্ছাটি হল এতই অমূল্য এক উপহার যে তিনি সেটি মানুষের কাছ থেকে কেড়ে না নিয়ে, পরিবর্তে তাদের দেখতে দিয়েছেন যে সেটি অপব্যবহার করলে কী হয়। ঈশ্বরের বাক্য সত্য বলে যখন তা বলে: “মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না।” আবার এও সত্যি যখন তা বলে: “এক জন অন্যের উপরে তাহার অমঙ্গলার্থে কর্ত্তৃত্ব করে।”—যিরমিয় ১০:২৩; উপদেশক ৮:৯.

১১ ছয় হাজার বছর ব্যাপী মানুষের শাসনের ঈশ্বরের অনুমতি, জোরালোরূপে প্রদর্শন করে যে মানুষ দুঃখকষ্ট রোধ করতে অক্ষম। কোন সময়েই সে তা করতে পারে নি। উদাহরণস্বরূপ, ইস্রায়েল রাজ শলোমন, তিনি তার সময়কালে সমস্ত জ্ঞান, ঐশ্বর্য ও শক্তি দিয়েও মানব শাসনের প্রতিফলরূপ দুর্দশাকে নিঃশেষ করতে পারেন নি। (উপদেশক ৪:১-৩) অনুরূপে, আমাদের কালে জগতের নেতাগণ, আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতি থাকা সত্ত্বেও দুঃখকষ্টের শেষ করতে পারেননি। পরিবর্তে আরও মন্দ হয়, ইতিহাস প্রদর্শন করে যে ঈশ্বরের শাসন থেকে মানুষ স্বাধীন হওয়ার ফলে তা দুঃখকষ্ট নিঃশেষ করেনি বরং তার বৃদ্ধি করেছে।

ঈশ্বরের দূর-দৃষ্টি

১২ ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে দেওয়াতে আমাদের পরিস্থিতি বেদনাদায়ক হয়। কিন্তু তিনি দূর-দৃষ্টি রাখেন, কারণ তিনি জানেন যে পরবর্তীকালে এর উত্তম ফল হবে। ঈশ্বরের দৃষ্টিকোণ মানুষের শুধুমাত্র কিছু বছর বা কিছু হাজার বছর উপকার করবে না, কিন্তু তা লক্ষ লক্ষ বছরের জন্য, হ্যাঁ তা চিরন্তন উপকার করবে।

১৩ ভবিষ্যতে যদি এমন কোন এক পরিস্থিতি আসে যেখানে কেউ তার স্বাধীন ইচ্ছার অপব্যবহার দ্বারা ঈশ্বরের কাজ করার রীতিকে প্রশ্ন করে, তাহলে তাকে তার দৃষ্টিভঙ্গিটি প্রমাণ করতে আর সময় দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। হাজার হাজার বছরব্যাপী বিদ্রোহীদের থাকতে দিয়ে, ঈশ্বর বিধিসম্মতরূপে পূর্ববর্তী নজির স্থাপন করেছেন যা মহাবিশ্বের যে কোন জায়গায় চিরকাল প্রয়োগ করা যাবে।

১৪ এই সময়ে যিহোবা দুষ্টতা ও দুঃখকষ্ট থাকতে দেওয়াতে, ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণরূপে প্রমাণিত হয়েছে যে, তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনকিছুই উন্নতিলাভ করতে পারে না। মানুষ বা আত্মিক প্রাণীর কোন স্বাধীন পরিকল্পনাই চিরকালীন উপকার আনতে পারে না, সন্দেহাতীতরূপে তা প্রদর্শন করা হবে। সুতরাং, তখন যে কোন বিদ্রোহীকে দ্রুত বিনাশ করতে ঈশ্বরের ন্যায়বিচার প্রতিপাদন হবে। “তিনি সমুদয় দুষ্টকে সংহার করিবেন।”—গীতসংহিতা ১৪৫:২০; রোমীয় ৩:৪.

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

১-৩. কিভাবে সময় প্রমাণ করে যে যিহোবা নির্ভুল?

৪. কেন আমরা সকলে অসিদ্ধ, অসুস্থতা ও মৃত্যুর প্রবণতা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করেছি?

৫, ৬. শান্তি ও শ্রীবৃদ্ধির ক্ষেত্রে মানুষের প্রচেষ্টা সম্পর্কে ইতিহাস কী প্রদর্শন করে?

৭. বর্তমান মানব পরিবারের পরিস্থিতি কিভাবে বর্ণনা করা যেতে পারে?

৮. কেন আমরা মানবজাতির সাফল্যলাভকে প্রকৃত উন্নতি বলতে পারি না?

৯, ১০. (ক) বিগত শতাব্দীগুলি স্পষ্টরূপে কী প্রদর্শন করেছে? (খ) কেন ঈশ্বর স্বাধীন ইচ্ছা নিয়ে নেবেন না?

১১. যে কোন প্রকারের মানব শাসন কি দুঃখকষ্ট দূর করেছে?

১২-১৪. ঈশ্বর দুঃখকষ্ট থাকতে অনুমতি দেওয়াতে কোন্‌ দূরপ্রসারী উপকার আসে?

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমাদের প্রথম পিতামাতা ঈশ্বর থেকে স্বাধীন হতে বেছে নেওয়ার পর, তারা অবশেষে বৃদ্ধ হয় ও মারা যায়

[Pictures on page 16]

ঈশ্বর ব্যতিরেকে মানব শাসন চরম দুর্দশাপূর্ণ প্রমাণিত হয়েছে

[সজন্যে]

U.S. Coast Guard photo