সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

স্বাধীন ইচ্ছার অপূর্ব উপহার

স্বাধীন ইচ্ছার অপূর্ব উপহার

অংশ ৫

স্বাধীন ইচ্ছার অপূর্ব উপহার

ঈশ্বর কেন দুঃখকষ্ট ভোগ করতে দিয়েছেন এবং এ সম্পর্কে তিনি কী করবেন, তা জানতে হলে আমাদের তিনি কিরূপে সৃষ্টি করেছেন সেটি উপলব্ধি করা প্রয়োজন। শুধুমাত্র দেহ ও মস্তিষ্কসহ সৃষ্টি করা ছাড়াও তিনি আরও কিছু করেছেন। তিনি আমাদের মানসিক ও আবেগপ্রবণ বিশেষ গুণাবলীসহ সৃষ্টি করেছেন।

আমাদের মানসিক ও আবেগপ্রবণ গঠনের একটি মূল অংশ হল স্বাধীন ইচ্ছা। হ্যাঁ, ঈশ্বর আমাদের মধ্যে স্বাধীনভাবে মনোনয়ন করার ক্ষমতা দিয়েছেন। এটি প্রকৃতপক্ষেই ঈশ্বরের কাছ থেকে এক অপূর্ব উপহার।

আমরা কিরূপে সৃষ্ট

দুঃখকষ্ট থাকতে দিতে ঈশ্বরের অনুমতির সাথে স্বাধীন ইচ্ছা কিভাবে জড়িত আছে, আসুন আমরা তা বিবেচনা করি। শুরুতে, এই বিষয়টি চিন্তা করুন: আপনি কী করবেন ও বলবেন, আপনি কী খাবেন বা পরবেন, কী প্রকৃতির কাজ আপনি করবেন, কোথায় এবং কিভাবে আপনি থাকবেন, তা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতাকে কী আপনি উপলব্ধি করেন না? অথবা আপনি চান যে আপনার জীবনের প্রতিটি ক্ষণে, আপনার প্রত্যেক কথা ও প্রতিটি পদক্ষেপে কেউ আপনাকে হুকুম দিয়ে পরিচালনা করুক?

কোন স্বাভাবিক ব্যক্তি চায় না যে তার জীবন এমন পূর্ণভাবে তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাক। কেন? কারণ ঈশ্বর আমাদের এরূপ সৃষ্টি করেছেন। বাইবেল আমাদের বলে যে ঈশ্বর মানুষকে তাঁর ‘প্রতিমূর্ত্তিতে ও সাদৃশ্যে’ সৃষ্টি করেছেন এবং একটি ক্ষমতা যা ঈশ্বরের নিজের আছে তা হল মনোনয়ন করার স্বাধীনতা। (আদিপুস্তক ১:২৬; দ্বিতীয় বিবরণ ৭:৬) মানুষকে সৃষ্টি করার সময় তিনি তাদের সেই একই অপূর্ব ক্ষমতা দেন—স্বাধীন ইচ্ছার উপহার। অত্যাচারী শাসকের দাসত্বে থাকতে কেন আমরা এত নিরাশ হই, তার এটি হল একটি কারণ।

তাই স্বাধীন থাকার ইচ্ছা কোন আকস্মিক ঘটনা নয়, কারণ ঈশ্বর হলেন স্বাধীনতার ঈশ্বর। বাইবেল বলে: “যেখানে প্রভুর আত্মা, সেইখানে স্বাধীনতা।” (২ করিন্থীয় ৩:১৭) তাই আমাদের গঠনেই ঈশ্বর স্বাধীন ইচ্ছা দিয়েছেন। যেহেতু তিনি জানেন যে আমাদের মন ও আবেগ কিরূপে কাজ করবে, তাই তিনি জানতেন যে আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা থাকলে আমরা খুবই আনন্দিত থাকব।

স্বাধীন ইচ্ছার সাথে, ঈশ্বর আমাদের চিন্তা করতে, বিষয়গুলি তলিয়ে দেখতে, নির্ধারণ করতে ও ভালমন্দ বিচার করতে ক্ষমতা দিয়েছেন। (ইব্রীয় ৫:১৪) ফলে, স্বাধীন ইচ্ছার ভিত্তি হওয়া দরকার বুদ্ধিপূর্ণ মনোনয়নের উপর। আমরা নির্বোধ রোবোটের মত সৃষ্ট নই, যাদের কোন নিজস্ব ইচ্ছা নেই। অথবা পশুদের মত সহজাত প্রবৃত্তির দ্বারা কার্য করার জন্য সৃষ্ট হইনি। পরিবর্তে, আমাদের অপূর্ব মস্তিষ্ক স্বাধীন মনোনয়ন অনুসারে কাজ করার জন্য পরিকল্পিত হয়েছিল।

সবচেয়ে উত্তম সূচনা

ঈশ্বর কত চিন্তাশীল তা প্রদর্শন করে যে, স্বাধীন ইচ্ছার উপহারসহ সমস্ত কিছু যা একজন যুক্তিসঙ্গতভাবে আশা করতে পারে তা আমাদের প্রথম পিতামাতাকে প্রদান করা হয়েছিল। তাদের এক বৃহৎ উদ্যানরূপ পরমদেশে রাখা হয়। তাদের বস্তুর প্রাচুর্যতা ছিল। তাদের ছিল সিদ্ধ মন ও দেহ, যার ফলে তাদের বৃদ্ধ হওয়ার অথবা অসুস্থ হওয়ার বা মারা যাওয়ার দরকার ছিল না—তারা চিরকাল বেঁচে থাকতে পারত। তাদের সিদ্ধ সন্তান হতে পারত যাদের থাকতে পারত অনন্তকালীন আনন্দপূর্ণ ভবিষ্যৎ। এবং সমস্ত পৃথিবীকে অবশেষে পরমদেশে পরিণত করার তৃপ্তিদায়ক কাজটি এই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জনগণের হত।—আদিপুস্তক ১:২৬-৩০; ২:১৫.

যা প্রদান করা হয়েছিল সেই সম্পর্কে বাইবেল বলে: “ঈশ্বর আপনার নির্ম্মিত বস্তু সকলের প্রতি দৃষ্টি করিলেন, আর দেখ, সে সকলই অতি উত্তম।” (আদিপুস্তক ১:৩১) ঈশ্বর সম্বন্ধেও বাইবেল বলে: তাঁহার কর্ম্ম সিদ্ধ।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪) হ্যাঁ, স্রষ্টা মানবজাতিকে এক পূর্ণাঙ্গ সূচনা দেন। এর থেকে উত্তম আর কিছু হতে পারত না। তিনি কতই না চিন্তাশীল ঈশ্বর প্রমাণিত হন!

সীমার মধ্যে স্বাধীনতা

যাইহোক, ঈশ্বর কি চেয়েছিলেন স্বাধীন ইচ্ছা সীমাহীন হোক? যানবাহন চলাচলের নিয়মহীন এক ব্যস্ত শহর কল্পনা করুন, যেখানে সকলে যে কোন দিকে, যে কোন গতিতে গাড়ী চালাতে পারে। আপনি কি সেইরূপ পরিস্থিতিতে গাড়ী চালাতে চাইবেন? না, সেটি যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে অরাজকতার সৃষ্টি করবে এবং ফলে নিশ্চয় বহু দুর্ঘটনা ঘটবে।

১০ ঈশ্বরের উপহার স্বাধীন ইচ্ছার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। অবাধ স্বাধীনতা সমাজে অরাজকতার সৃষ্টি করবে। মানব কার্যাবলীকে পরিচালনা করতে নিয়মের প্রয়োজন। ঈশ্বরের বাক্য বলে: “স্বাধীন ব্যক্তির মতো চল, এবং তোমার দুষ্টতার জন্য স্বাধীনতাকে অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করিও না।” (১ পিতর ২:১৬, JB) ঈশ্বর চান যেন সকলের হিতের জন্য স্বাধীন ইচ্ছা নিয়ন্ত্রিত হয়। তাঁর উদ্দেব্য ছিল, নিয়মের রীতির প্রতি বাধ্য থেকে আমরা যেন সম্পূর্ণ স্বাধীনতা নয় কিন্তু আপেক্ষিক স্বাধীনতা পাই।

কার নিয়মগুলি?

১১ কার নিয়মগুলি পালন করার জন্য আমাদের পরিকল্পনা করা হয়েছিল? ১ পিতর ২:১৬ (JB) শাস্ত্রের আর একটি অংশে বলে: “ঈশ্বর ব্যতিরেকে তোমরা অন্য কাহারও দাস নও।” এর অর্থ এই নয় এক অত্যাচারী দাসত্ব, পরিবর্তে এর অর্থ হল, ঈশ্বরের নিয়মের অধীনে থেকে আমরা সবথেকে বেশী আনন্দিত থাকব বলেই আমাদের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। (মথি ২২:৩৫-৪০) তাঁর নিয়ম, মানুষের উদ্ভাবিত যে কোন নিয়মের থেকে উত্তম পরিচালনা প্রদান করে। “আমি সদাপ্রভু তোমার ঈশ্বর, আমি তোমার উপকারজনক শিক্ষা দান করি, ও তোমার গন্তব্য পথে তোমাকে গমন করাই।”—যিশাইয় ৪৮:১৭.

১২ একই সঙ্গে, ঈশ্বরের নিয়ম সীমার মধ্যে মনোনয়নের প্রচুর স্বাধীনতা প্রদান করে। এর ফলে বৈচিত্র্য আসে এবং মানব পরিবারকে বিমুগ্ধ করে। জগদ্ব্যাপী বিভিন্ন প্রকৃতির খাদ্য, পোশাক, সঙ্গীত, কলা ও গৃহ সম্পর্কে চিন্তা করুন। এই সমস্ত ক্ষেত্রে অপর ব্যক্তি আমাদের জন্য নির্ধারণ করার পরিবর্তে আমরা নিশ্চয় নিজেদের মনোনয়নই পছন্দ করব।

১৩ ফলে মানব আচার-আচরণের ক্ষেত্রে ঈশ্বরের নিয়মের প্রতি বাধ্য থাকলেই আমরা সব থেকে বেশী আনন্দিত থাকব বলে আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছিল। এটি ঠিক ঈশ্বরের প্রাকৃতিক নিয়মগুলির প্রতি বাধ্য থাকার অনুরূপ। উদাহরণস্বরূপ, যদি আমরা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির নিয়ম উপেক্ষা করে এক উচুঁ জায়গা থেকে ঝাঁপ দিই, তাহলে আমরা আহত হতে বা মারা যেতে পারি। আমাদের দেহের অভ্যন্তরীণ নিয়মগুলি যদি আমরা অগ্রাহ্য করি ও খাদ্য না খাই, জল পান না করি বা শ্বাস-প্রশ্বাস না নিই, তাহলে আমরা মারা যেতে পারি।

১৪ ঈশ্বরের প্রাকৃতিক নিয়মগুলি পালন করার প্রয়োজন রেখেই যেমন আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছিল, ঠিক তেমনই ঈশ্বরের নৈতিক ও সামাজিক নিয়মসকল পালন করতেও আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। (মথি ৪:৪) স্রষ্টা থেকে স্বাধীন হয়ে সাফল্যলাভ করবে বলে মানুষকে সৃষ্টি করা হয় নি। ভাববাদী যিরমিয় বলেন: “মনুষ্য চলিতে চলিতে আপন পাদবিক্ষেপ স্থির করিতে পারে না। হে সদাপ্রভু, আমাকে শাসন কর।” (যিরমিয় ১০:২৩, ২৪) তাই মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রে ঈশ্বরের শাসনাধীনে থাকার জন্য, তাদের নিজেদের শাসনের অধীনে নয়।

১৫ আমাদের প্রথম পিতামাতার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের নিয়মগুলি পালন করা দুর্বহ ছিল না। পরিবর্তে, সেটি তাদের ও সমস্ত মানব পরিবারের কল্যাণ করত। সেই প্রথম দম্পতী যদি ঈশ্বরের নিয়মের সীমার অধীনে থাকত, তাহলে সব কিছুই ভাল হত। তাহলে, এখন আমরা এক প্রেমপূর্ণ, একতাবদ্ধ পরিবার হিসাবে এক আনন্দদায়ক অপূর্ব পরমদেশে বাস করতাম! সেখানে দুষ্টতা, দুঃখকষ্ট এবং মৃত্যু থাকত না।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

১, ২. কোন্‌ অপূর্ব উপহারটি আমাদের গঠনের অংশ?

৩-৫. আমরা কেন স্বাধীন ইচ্ছা উপলব্ধি করি?

৬. আমাদের মস্তিষ্ককে স্বাধীন ইচ্ছা অনুসারে কাজ করার জন্য ঈশ্বর কিরূপে সৃষ্টি করেন?

৭, ৮. আমাদের প্রথম পিতামাতাকে ঈশ্বর কোন্‌ উত্তম সূচনা দেন?

৯, ১০. স্বাধীন ইচ্ছাকে কেন উপযুক্তরূপে নিয়ন্ত্রিত করা দরকার?

১১. কার নিয়মগুলি পালন করার জন্য আমরা পরিকল্পিত হয়েছিলাম?

১২. ঈশ্বরের নিয়মাধীনে মনোনয়নের কোন্‌ স্বাধীনতা আমাদের আছে?

১৩. আমাদের নিজেদের উপকারার্থে কোন্‌ প্রাকৃতিক নিয়মগুলি আমাদের পালন করা দরকার?

১৪. আমরা কিরূপে জানতে পারি যে মানুষকে ঈশ্বর থেকে স্বাধীন থাকার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি?

১৫. আদম ও হবার জন্য ঈশ্বরের নিয়মগুলি কি দুর্বহ ছিল?

[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]

স্রষ্টা মানুষকে এক পূর্ণাঙ্গ সূচনা দেন

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

যেখানে যানবাহন চলাচলের কোন নিয়মকানুন নেই সেখানে কি আপনি প্রচুর যানবাহনের মধ্যে গাড়ী চালাবেন?