সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

কে প্রকৃতপক্ষে জগতকে শাসন করে?

কে প্রকৃতপক্ষে জগতকে শাসন করে?

কে প্রকৃতপক্ষে জগতকে শাসন করে?

বেশীর ভাগ লোক একবাক্যে উপরোক্ত প্রশ্নটির উত্তর দেবে—ঈশ্বর। কিন্তু লক্ষণীয়রূপে, বাইবেলে কোথাও যীশু খ্রীষ্টকে অথবা তাঁর পিতাকে এই জগতের প্রকৃত শাসক বলা হয়নি। বিপরীতে, যীশু বলেন: “এ জগতের অধিপতি বাহিরে নিক্ষিপ্ত হইবে।” আর তিনি আরও যোগ দেন: “জগতের অধিপতি আসিতেছে, আর আমাতে তাহার কিছুই নাই।”—যোহন ১২:৩১; ১৪:৩০; ১৬:১১.

সুতরাং এই জগতের অধিপতি যীশুর বিরোধী। এ কে হতে পারে?

জগৎ পরিস্থিতি থেকে এক ইঙ্গিত

সৎ-চিন্তাশীল ব্যক্তিদের প্রচেষ্টা সত্বেও, সমগ্র ইতিহাসে মানুষ সাংঘাতিকভাবে কষ্ট পেয়ে আসছে। এটি চিন্তাশীল ব্যক্তিদের চিন্তা করতে প্ররোচিত করেছে, যেমন করেছিলেন প্রয়াত সম্পাদকীয় লেখক ডেভিড লরেন্স্‌: “‘পৃথিবীতে শান্তি’—প্রায় প্রত্যেকেই চায়। ‘মানুষের প্রতি মঙ্গলভাব’—জগতের প্রায় সকলেই একে অন্যের প্রতি বোধ করে। তাহলে ভুলটি কোথায়? মানুষের সহজাত ইচ্ছা থাকা সত্বেও তাহলে যুদ্ধের ভীতি রয়েছে কেন?”

এটিকে বিপরীত মনে হয়, তাই নয় কি? যেখানে মানুষের স্বাভাবিক ইচ্ছা শান্তিতে বাস করা, সেখানে সাধারণত একজন অন্যজনকে ঘৃণা ও হত্যা করে—আর এমন নিষ্ঠুরতার সাথে। বিবেচনা করুন ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাপক অস্বাভাবিক নিষ্ঠুরতার কথা। একে অপরকে নির্মমভাবে যাতনা দেওয়া ও হত্যা করার জন্য মানুষ গ্যাস চেম্বার, কনসেন্‌ট্রেশন্‌ ক্যাম্প, অগিন নিক্ষেপক, নাপাম বোমা, এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর পদ্ধতি ব্যবহার করেছে।

আপনি কি বিশ্বাস করেন যে মানুষ, যারা শান্তি এবং সুখ চায়, তাদের নিজেদের পক্ষে, একে অপরের বিরুদ্ধে এই রকম জঘন্য নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন সম্ভব? কোন্‌ শক্তি মানুষকে এই ধরনের ঘৃণ্য কাজ করতে বাধ্য করে অথবা সেই পরিস্থিতিতে নিয়ে যেতে পরিচালনা করে যেখানে তারা বর্বরতা করতে বাধ্য হয়? আপনি কি কখনও ভেবেছেন যে কোন মন্দ, অদৃশ্য শক্তি মানুষকে এই ধরনের হিংস্র কাজে লিপ্ত হতে প্ররোচিত করছে?

জগতের শাসকগণ শনাক্ত হয়েছে

এই বিষয়ে অনুমান করার কোন প্রয়োজন নেই, কারণ বাইবেল পরিষ্কারভাবে দেখায় যে একজন বুদ্ধিমান, অদৃশ্য ব্যক্তি মানুষ ও জাতিসকল উভয়কেই নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি বলে: “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।” আর বাইবেল তাকে এই বলে শনাক্ত করে: “যাহাকে দিয়াবল এবং শয়তান বলা যায় . . . সে সমস্ত নরলোকের ভ্রান্তি জন্মায়।”—১ যোহন ৫:১৯; প্রকাশিত বাক্য ১২:৯.

এক সময়ে যীশু যখন “শয়তানের দ্বারা পরীক্ষিত হন,” এই জগতের শাসক হিসাবে শয়তানের ভূমিকা সম্বন্ধে যীশু কোন প্রশ্ন তোলেননি। বাইবেল ব্যাখ্যা করে কি ঘটেছিল: “দিয়াবল তাঁহাকে অতি উচ্চ এক পর্ব্বতে লইয়া গেল, এবং জগতের সমস্ত রাজ্য ও সেই সকলের প্রতাপ দেখাইল, আর তাঁহাকে কহিল, ‘তুমি যদি ভূমিষ্ঠ হইয়া আমাকে প্রণাম কর, এই সমস্তই আমি তোমাকে দিব।’ তখন যীশু তাহাকে কহিলেন, ‘দূর হও, শয়তান!’”—মথি ৪:১, ৮-১০.

এই বিষয়ে চিন্তা করুন। শয়তান “জগতের সমস্ত রাজ্য” দেব বলার দ্বারা যীশুকে প্রলোভিত করেছিল। কিন্তু, যদি শয়তান এই রাজ্যগুলির প্রকৃত শাসক না হত, তাহলে শয়তানের প্রস্তাব কি একটি প্রকৃত প্রলোভন হত? না, তা হত না। আর লক্ষ্য করুন, যীশু অস্বীকার করেননি যে জাগতিক সরকারগুলি শয়তানের, যা তিনি করতে পারতেন যদি এইগুলির উপর শয়তানের কোন অধিকার না থাকত। সুতরাং, শয়তান দিয়াবল, এই জগতের প্রকৃত অদৃশ্য শাসক! প্রকৃতপক্ষে, বাইবেল, তাকে “এই যুগের দেব” বলে। (২ করিন্থীয় ৪:৪) তবুও, কিভাবে এই ধরনের একজন মন্দ ব্যক্তি এই ক্ষমতাপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হল?

এই ব্যক্তি যে শয়তানে পরিণত হয়েছিল সে ছিল ঈশ্বরের দ্বারা সৃষ্ট একটি দূত, কিন্তু সে ঈশ্বরের স্থান সম্পর্কে ঈর্ষাপরায়ণ হয়েছিল। সে ঈশ্বরের শাসনের অধিকারকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা জানায়। এই কারণে সে প্রতিনিধিস্বরূপ একটি সাপকে ব্যবহার করে প্রথম নারী, হবাকে প্রতারণা করতে, এবং এইভাবে সে তাকে ও তার স্বামী, আদমকে, ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতা থেকে সরিয়ে নিজের পক্ষে আনতে সক্ষম হয়। (আদিপুস্তক ৩:১-৬; ২ করিন্থীয় ১১:৩) সে আরও দাবী করে, আদম ও হবার ভবিষ্যৎ সকল বংশধরকে সে ঈশ্বরের পথ থেকে সরিয়ে আনতে পারবে। তাই ঈশ্বর শয়তানকে তার দাবী প্রমাণ করার চেষ্টা করতে সময় দিয়ে অনুমতি দিলেন, কিন্তু শয়তান সফল হয়নি।—ইয়োব ১:৬-১২; ২:১-১০.

লক্ষণীয়, শয়তান জগৎ শাসনে একা নয়। সে অন্যান্য কিছু দূতদের ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তার সাথে যোগ দিতে প্ররোচিত করতে সফল হয়। এরা মন্দ দূত, তার আত্মিক সঙ্গী হয়েছিল। খ্রীষ্টানদের সাবধান করতে বাইবেল এদের সম্বন্ধে বলে: “শয়তানের নানাবিধ চাতুরীর সম্মুখে দাঁড়াও; কেননা রক্তমাংসের সহিত নয়, কিন্তু . . . এই অন্ধকারের জগৎপতিদের সহিত, স্বর্গীয় স্থানে দুষ্টতার আত্মাগণের সহিত আমাদের মল্লযুদ্ধ হইতেছে।”—ইফিষীয় ৬:১১, ১২.

দুষ্ট আত্মাদের প্রতিরোধ করুন

এই অদৃশ্য, মন্দ জগৎ শাসকেরা সকল মানবজাতিকে বিভ্রান্ত করতে, ঈশ্বরের উপাসনা থেকে তাদের সরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর। একটি উপায়ে দুষ্ট আত্মারা এটি করে তা হল মৃত্যুর পর মানুষ বেঁচে থাকে এই ধারণা প্রবর্তন করে, এমনকি যদিও ঈশ্বরের বাক্য পরিষ্কারভাবে দেখায় যে মৃতেরা সচেতন নয়। (আদিপুস্তক ২:১৭; ৩:১৯; যিহিষ্কেল ১৮:৪; গীতসংহিতা ১৪৬:৩, ৪; উপদেশক ৯:৫, ১০) এইভাবে একটি দুষ্ট আত্মা, কোন মাধ্যম অথবা অদৃশ্য জগৎ থেকে একটি “কণ্ঠস্বরের” মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির কণ্ঠস্বর অনুসরণ করে, তার জীবিত আত্মীয়স্বজন অথবা বন্ধুদের সাথে কথা বলতে পারে। “কণ্ঠস্বরটি” মৃত ব্যক্তির বলে মনে হতে পারে, কিন্তু এটি আসলে একটি মন্দ দূতের!

সুতরাং আপনি যদি কখনও এই ধরনের একটি “কণ্ঠস্বর” শোনেন, ভ্রান্ত হবেন না। এটি যাই বলুক অগ্রাহ্য করুন, এবং যীশুর বাক্যগুলি বলুন: “দূর হও, শয়তান!” (মথি ৪:১০; যাকোব ৪:৭) মন্দ আত্মার জগৎ সম্বন্ধে কৌতুহলকে দুষ্ট আত্মার সংস্পর্শে আপনার জড়িয়ে পড়ার কারণ হতে দেবেন না। এই ধরনের সংস্পর্শকে বলা হয় প্রেতচর্চা, আর প্রতিটি উপায়ে এর বিরোধিতা করতে ঈশ্বর তাঁর উপাসকদের সাবধান করেন। “যে মায়াবী, . . . অথবা ভূতড়িয়া অথবা গুণী অথবা প্রেতসাধক” বাইবেল তাদের নিন্দা করে।—দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১০-১২; গালাতীয় ৫:১৯-২১; প্রকাশিত বাক্য ২১:৮.

যেহেতু প্রেতচর্চা একজন ব্যক্তিকে মন্দ আত্মার সংস্পর্শে আনে, এর চর্চাগুলি যতই মজার বা উত্তেজনাপূর্ণ মনে হলেও তার থেকে বিরত থাকুন। এর অন্তর্ভুক্ত অভ্যাসগুলি হল স্ফটিক-খণ্ড দর্শন, উইজাবোর্ড, ইএসপি, হাতদেখা ও জ্যোতিষবিদ্যা। মন্দ আত্মারা যে সমস্ত গৃহে তাদের আস্তানা করে সেখানে শব্দ ও অন্যান্য বাহ্যিক প্রকাশও প্রদর্শন করে।

তাছাড়াও, মন্দ আত্মারা সাহিত্য, চলচ্চিত্র, ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠানগুলি যেগুলি অনৈতিকতা এবং অস্বাভাবিক যৌন আচরণে পূর্ণ সেইগুলির দ্বারা মানুষের পাপ প্রবণতাকে কাজে লাগায়। মন্দ আত্মারা জানে যে ভুল চিন্তাগুলি যদি মন থেকে না সরান হয় সেগুলি মুছে ফেলা অসাধ্য এবং মানুষ অনৈতিকতায় পরিচালিত হবে—যেমন মন্দ আত্মারা নিজেরাই হয়েছে।—আদিপুস্তক ৬:১, ২; ১ থিষলনীকীয় ৪:৩-৮; যিহূদা ৬.

সত্য, জগৎ যে দুষ্ট আত্মাদের দ্বারা পরিচালিত এই ধারণাকে অনেকে উপহাস করতে পারে। কিন্তু তাদের এই অবিশ্বাস আশ্চর্যের নয়, কারণ বাইবেল বলে: “শয়তান আপনি দীপ্তিময় দূতের বেশ ধারণ করে।” (২ করিন্থীয় ১১:১৪) তার সবচেয়ে ধূর্ত প্রতারণা হচ্ছে এই যে সে এবং তার মন্দ আত্মারা যে বাস্তবিকই অস্তিত্বে আছে সে সম্বন্ধে অনেককেই অন্ধ করে রাখা। কিন্তু ভ্রান্ত হবেন না! শয়তান ও তার মন্দ আত্মারা প্রকৃতই আছে, এবং আপনার ক্রমাগত তাদের প্রতিরোধ করা প্রয়োজন।—১ পিতর ৫:৮, ৯.

আনন্দের বিষয়, সময় খুব নিকটেই যখন শয়তান ও তার সঙ্গীরা আর থাকবে না! “জগৎ [যার অন্তর্ভুক্ত এর মন্দ আত্মা শাসকরা] বহিয়া যাইতেছে,” বাইবেল আশ্বাস দেয়, “কিন্ত যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।” (১ যোহন ২:১৭) সেই মন্দ প্রভাব সরিয়ে দেওয়া কতই না মুক্তির হবে! তাই, আসুন, আমরা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করি এবং ঈশ্বরের ধার্মিক নতুন জগতে অনন্তজীবন উপভোগ করি।—গীতসংহিতা ৩৭:৯-১১, ২৯; ২ পিতর ৩:১৩; প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.

উল্লেখ করা না থাকলে ব্যবহৃত বাইবেল অনুবাদ বাইবেল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার পবিত্র বাইবেল থেকে গৃহীত।

[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

যদি এই জগতের সকল রাজ্যগুলি শয়তানের না হত তাহলে কি সে যীশুকে তা দেবার প্রস্তাব দিতে পারত?