সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কে আমাদের বলতে পারে?

কে আমাদের বলতে পারে?

অধ্যায় ২

কে আমাদের বলতে পারে?

কে আমাদের বলতে পারে জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী? আচ্ছা, আপনি যদি একজন যন্ত্র পরিকল্পকের সাথে দেখা করেন আর দেখেন যে সে একটি জটিল ধরনের যন্ত্র নিয়ে কাজ করছেন কিন্তু আপনি সেই যন্ত্রটি যে কী তা বুঝতে পারছেন না, তাহলে আপনি কিভাবে জানতে পারবেন যে সেই যন্ত্রটি কিসের উদ্দেশ্যে? পরিকল্পককে জিজ্ঞাসা করাই হবে আপনার জন্য সবচেয়ে ভাল।

তাহলে, পৃথিবীতে আমাদের চারিদিকে যে অপূর্ব পরিকল্পনা আমরা দেখছি সেই সম্বন্ধেই বা কী, যেমন জীবন্ত বস্তু থেকে এক ক্ষুদ্রতম জীবকোষ পর্যন্ত? এমন কি কোষের মধ্যে যে অতি ক্ষুদ্রতম অণু ও পরমাণু রয়েছে তা অপূর্বরূপে পরিকল্পিত ও সুবিন্যস্ত। তাহলে, বিস্ময়করভাবে রচিত মানব মন সম্বন্ধেই কী বলা যেতে পারে? এবং আমাদের সৌরজগৎ, ছায়াপথ এবং মহাবিশ্ব সম্বন্ধেও বা কী বলা যায়? এইসব বিস্ময়কর পরিকল্পনাগুলির জন্য কি পরিকল্পকের প্রয়োজন নেই? তিনি নিশ্চয় আমাদের বলতে পারবেন কেন তিনি এইগুলির পরিকল্পনা করেছিলেন।

জীবনের কি হঠাৎ উদ্ভব হয়েছে?

দ্যা এনসাইক্লোপিডিয়া অ্যামেরিকানা “জীবন্ত প্রাণীদের মধ্যে অতিরিক্ত পরিমাণে জটিলতা ও সংগঠন” লক্ষ্য করে এবং বলে: “ফুল, কীটপতঙ্গ বা স্তন্যপায়ী প্রাণীদের খুব কাছে থেকে পরীক্ষা করলে দেখা যায় তাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলিতে অবিশ্বাস্যরূপ নির্ভুল ব্যবস্থা আছে।” ইংরেজ জ্যোতির্বিজ্ঞানী সার বার্নার্ড লোভেল্‌, জীবন্ত প্রাণীদের গঠনে রাসায়নিক পদার্থের সংমিশ্রণ সম্বন্ধে উল্লেখ করে লেখেন: “হঠাৎ কোন কিছু ঘটার . . . সম্ভাবনার জন্য একটি অতি ক্ষুদ্রতম প্রোটিন অণু গঠন হওয়াও কল্পনাতীতরূপে কম। . . . প্রকৃতপক্ষে অসম্ভব।”

অনুরূপভাবে, জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্রেড হোয়েল্‌ বলেন: “গোঁড়া জীববিজ্ঞানের সম্পূর্ণ সংগঠন এখনও বিশ্বাস করে যে এলোপাথাড়িভাবে জীবনের উদ্ভব হয়েছে। তবুও, প্রাণরসায়নবিদেরা জীবনের বিস্ময়কর জটিলতা সম্পর্কে যতই আবিষ্কার করছেন, ততই আকস্মিক ঘটনার মাধ্যমে জীবনোদ্ভবের সম্ভাবনা ক্ষীণ হচ্ছে এবং সহজেই সেগুলি সম্পূর্ণরূপে নাকচ করা যায়। আকস্মিক ঘটনা ঘটার মাধ্যমে জীবনের উদ্ভব হতে পারে না।”

মলিকিউলার জীববিজ্ঞান, বিজ্ঞান জগতের অতি আধুনিক বিষয়গুলির মধ্যে একটি, জীবের বংশানুক্রমের মূল কণিকাগুলি (genes), অণু ও পরমাণু সংক্রান্ত গবেষণা। সেই গবেষণা অনুযায়ী প্রাপ্য বিষয়ের উপর মলিকিউলার জীববিজ্ঞানী, মাইকেল ডেন্টন মন্তব্য করেন: “অতি সরল কোষরূপে পরিচিত কোষেরও জটিলতা এতই বেশি যে এটি বিশ্বাস করা অসম্ভব যে কোন এক খামখেয়ালি, সম্পূর্ণ অসম্ভব ঘটনা ঐ প্রকৃতির বস্তুগুলিকে হঠাৎ একসঙ্গে জড়ো করে দিয়েছে।” “প্রাণীজগতের জটিলতাই যে শুধুমাত্র খুবই বিস্ময়কর তা নয়, এর মধ্যে যে অবিশ্বাস্যরূপ দক্ষতা আছে তা প্রায়ই এগুলির নকশার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।” “এই অণু স্তরেই . . . জীববিজ্ঞানের নকশার প্রতিভা এবং নিখুঁত উদ্দেশ্যসাধন সম্পূর্ণরূপে সুস্পষ্ট হয়।”

ডেন্টন আরও বলেন: “আমরা যেখানেই দেখি, যত গভীরেই দেখি, আমরা দেখতে পাই পূর্ণমাত্রায় এক সর্বোৎকৃষ্ট গুণের দক্ষতা ও সৌন্দর্য যা অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটতে পারে সেই ধারণাকে দুর্বল করে দেয়। এলোমেলো কোন ব্যবস্থা কি বাস্তব কোন কিছু গঠন করতে পারে, অতি ক্ষুদ্রতম বস্তু—একটি কার্যক্ষম প্রোটিন বা বংশানুক্রমের কণিকা—যা হল আমাদের সৃষ্ট কোন কিছু জটিল বিষয়ের থেকেও আরও জটিল, একটি বাস্তবতা, যা অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটতে পারার সম্পূর্ণ বিপরীত, যে বাস্তবতা মানুষের বুদ্ধির ক্ষমতা দ্বারা যা কিছুই সৃষ্ট হয়েছে তাকে ছাপিয়ে যেতে পারে, তা কি বিশ্বাস্য?” তিনি আরও বলেন: “স্ফটিক বা তুষারের মত অতি উন্নতরূপ সুবিন্যস্ত অজৈব পদার্থের ব্যবস্থা ও জীব কোষের মধ্যে ব্যবধান যতটা ধারণা করা সম্ভব ঠিক ততটা বিশাল ও ব্যাপক।” এবং পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক চেট রেমো, বলেন: “আমি মুগ্ধ হয়ে যাই . . . কারণ প্রতিটি অণু যেন নিজের কাজের জন্য পরিকল্পিত হয়েছে।”

মলিকিউলার জীববিজ্ঞানী ডেন্টন এই বলে শেষ করেন যে “যারা এখনও অন্ধের মত এই নতুন বাস্তব বিষয়গুলিকে সম্পূর্ণ হঠাৎ ঘটে যাওয়া এক ঘটনা বলে প্রকাশ করেন” তারা এখনও এক কাল্পনিক বিষয়কে বিশ্বাস করছেন। এমনকি তিনি, জীবের হঠাৎ উদ্ভব হয়েছে এইরূপ ডারউইন প্রবর্তিত বিশ্বাসকে “বিংশ শতাব্দীর সৃষ্টিরহস্যের মহা কাল্পনিক রচনা” হিসাবে আখ্যা দেন।

পরিকল্পনার জন্য এক পরিকল্পকের প্রয়োজন

এলোমেলো আকস্মিক ঘটনার মাধ্যমে অজৈব বস্তুর মধ্যে হঠাৎ প্রাণের সঞ্চার হওয়ার সম্ভাবনা এতই কম যে তা অসম্ভব। না, উন্নতরূপে পরিকল্পিত পৃথিবীর সমস্ত জীবিত বস্তু আকস্মিক ঘটনার মাধ্যমে আসতে পারে না কারণ যেহেতু যা কিছুই পরিকল্পনা করা হয় তার পরিকল্পকের প্রয়োজন হয়ে থাকে। আপনি কি এর কোন ব্যতিক্রম সম্বন্ধে জানেন? সেই রকম কিছুই নেই। আর পরিকল্পনাটি যতই জটিল হবে, পরিকল্পককেও ততই দক্ষ হতে হবে।

আমরা হয়ত এই বিষয়টি এইভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি: আমরা যখন একটি চিত্রাঙ্কন দেখি তখন এর এক শিল্পী আছেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা যখন একটি বই পড়ি, আমরা বিশ্বাস করি যে এর একজন লেখক আছেন। যখন আমরা একটি গৃহ দেখি, আমরা ধরে নিই তার নির্মাতা আছেন। ট্র্যাফিকের আলো দেখলে আমরা বুঝতে পারি যে এর নিয়ম-সৃষ্টিকারী এক গোষ্ঠী আছেন। যারা সেগুলি সৃষ্টি করছে উদ্দেশ্য নিয়েই সেইগুলি তৈরি করেছে। আর যারা সেগুলি পরিকল্পনা করেছেন তাদের সম্বন্ধে আমরা সবকিছু না বুঝলেও আমরা তাদের অস্তিত্ব সম্বন্ধে কোন সন্দেহ করি না।

১০ অনুরূপে, পৃথিবীতে জীবিত বস্তুদের পরিকল্পনা, সুবিন্যাস ও জটিলতার মধ্যেই মহান পরিকল্পকের অস্তিত্বের প্রকাশ পায়। তারা সকলেই ইঙ্গিত করে যে এক মহান বুদ্ধিমত্তা আছেন। কোটি কোটি ছায়াপথ নিয়ে গঠিত মহাবিশ্ব ও যে ছায়াপথে রয়েছে কোটি কোটি নক্ষত্র, সেই মহাবিশ্বের পরিকল্পনা, সুবিন্যাস ও জটিলতার ক্ষেত্রেও এটি সত্য। গতি, তাপ, আলো, শব্দ, ইলেক্টেরাম্যাগনেটিজম্‌ ও মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মতই এই সমস্ত জ্যোতিষ্কমণ্ডলী নির্ভুল নিয়ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। নিয়ম সৃষ্টিকারী ব্যতিরেকে কি কোন নিয়ম হতে পারে? রকেট বিজ্ঞানী ডা. ভারনার ফন্‌ বলেন: “মহাবিশ্বের প্রাকৃতিক নিয়মগুলি এতই নির্ভুল যে চাঁদে পাঠাবার জন্য মহাকাশ যান নির্মান করতেও আমাদের কোন কষ্টই হয় না এবং ওড়ার সেই সময় আমরা সেকেণ্ডের ভগ্‌নাংশে নির্ভুলভাবে নির্ণয় করতে পারি। এই নিয়মগুলি নিশ্চয় কেউ তৈরি করেছিলেন।”

১১ সত্য যে, সাধারণ চক্ষুতে মহান পরিকল্পক ও নিয়মদাতাকে আমরা দেখতে পাই না। কিন্তু মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, চুম্বকত্ব, বিদ্যুৎশক্তি বা বেতার তরঙ্গের মত বস্তুগুলিকে, যেহেতু আমরা দেখতে পাই না তাই আমরা কি এদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করি? না, আমরা তা করি না, কারণ তাদের প্রভাব দেখে থাকি। তাই, যদিও আমরা তাঁকে দেখতে পাই না কিন্তু তাঁর অপূর্ব হস্তশিল্পের প্রভাবগুলি লক্ষ্য করতে পারি, তখন কেন এক মহান পরিকল্পক ও নিয়মদাতার অস্তিত্বকে অস্বীকার করব?

১২ নিয়তির আকস্মিক কোন পরিবর্তনের জন্য মানুষ অস্তিত্বে আসেনি বলে, পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক পল্‌ ডেভিস্‌, পরিসমাপ্তিতে আসেন। তিনি বলেন: “আমরা প্রকৃতপক্ষে এখানে থাকার জন্যই সৃষ্ট।” আর তিনি এই মহাবিশ্বের সম্বন্ধে বলেন: “বিজ্ঞান জগতে গবেষণার মাধ্যমে আমি আরও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেছি যে এই ভৌত মহাবিশ্বকে এত দক্ষতার সাথে সৃষ্টি করা হয়েছে যে আমি এটিকে কিছুতেই একটি স্থূল সত্য হিসাবে ধরে নিতে পারছি না। আমার মতে, এই সম্বন্ধে আরও গভীর ব্যাখ্যা থাকার কথা।”

১৩ তাই, প্রমাণ প্রদর্শন করে যে মহাবিশ্ব, পৃথিবী ও পৃথিবীর মধ্যে জীবিত বস্তুগুলি হঠাৎ উপস্থিত হয়নি। তারা সকলেই এক মহান বুদ্ধিধর, শক্তিশালী স্রষ্টার নির্বাক সাক্ষ্য দেয়।

বাইবেল কী বলে

১৪ মানবজাতির অতি প্রাচীন পুস্তক, বাইবেল সেই একই উপসংহারে আসে। উদাহরণস্বরূপ, প্রেরিত পৌলের দ্বারা লিখিত, বাইবেলের ইব্রীয় পুস্তকে আমাদের বলা হয়েছে: “কেননা প্রত্যেক গৃহ কাহারও দ্বারা সংস্থাপিত হয়, কিন্তু যিনি সকলই সংস্থাপন করিয়াছেন, তিনি ঈশ্বর।” (ইব্রীয় ৩:৪) প্রেরিত যোহনের দ্বারা লিখিত বাইবেলের শেষ পুস্তকটিও বলে: “হে আমাদের প্রভু ও আমাদের ঈশ্বর, তুমিই প্রতাপ ও সমাদর ও পরাক্রম গ্রহণের যোগ্য; কেননা তুমিই সকলের সৃষ্টি করিয়াছ, এবং তোমার ইচ্ছাহেতু সকলই অস্তিত্বপ্রাপ্ত ও সৃষ্ট হইয়াছে।”—প্রকাশিত বাক্য ৪:১১.

১৫ বাইবেল দেখায় যে ঈশ্বরকে দেখা না গেলেও, তিনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার মাধ্যমেই তিনি কি প্রকৃতির ঈশ্বর তা আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারি। এটি বলে: “[স্রষ্টার] অদৃশ্য গুণাবলী, অর্থাৎ তাঁর অনন্ত শক্তি ও ঈশ্বরত্ব, জগৎ প্রারম্ভের কাল থেকেই তাঁর সৃষ্ট বস্তুসকলের মধ্যেই যুক্তির চক্ষুর সামনে দৃশ্য হয়েছে।”—রোমীয় ১:২০, দ্যা নিউ ইংলিশ বাইবেল।

১৬ সুতরাং বাইবেল আমাদের কার্যফল থেকে কারণে নিয়ে যায়। কার্যফল—সৃষ্ট বিস্ময়কর বস্তুগুলি—হল প্রমাণ বুদ্ধিধর, শক্তিশালী সেই কারণের: ঈশ্বরের। তাছাড়া, তিনি যে অদৃশ্য সেজন্য আমরা কৃতজ্ঞ থাকতে পারি কারণ কোন সন্দেহই নেই যে সমগ্র মহাবিশ্বের স্রষ্টারূপে, তাঁর এতই শক্তি আছে যে রক্তমাংসের মানুষ তাঁকে দেখে বেঁচে থাকতে পারবে না। আর ঠিক সেটিই বাইবেল বলে: “মনুষ্য আমাকে [ঈশ্বরকে] দেখিলে বাঁচিতে পারে না।”—যাত্রাপুস্তক ৩৩:২০.

১৭ এক মহান পরিকল্পক, এক সর্বোৎকৃষ্ট ব্যক্তির—ঈশ্বরের—ধারণা থাকা, আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি একজন স্রষ্টা আমাদের সৃষ্টি করে থাকেন তাহলে আমাদের সৃষ্টি করার জন্য তাঁর কোন কারণ ও উদ্দেশ্য নিশ্চয় ছিল। আমাদের জীবনে উদ্দেশ্য থাকবে বলে যদি আমাদের সৃষ্টি করা হয়ে থাকে তাহলে আমরা আশা করতে পারি যে ভবিষ্যতে আমাদের জন্য ভাল কিছু অপেক্ষা করছে। তা না হলে, আমরা শুধুমাত্র বেঁচে থাকি ও কোন আশা ছাড়াই মারা যাই। তাই আমাদের পক্ষে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কী তা জানা খুবই জরুরী। আর তখনই আমরা বেছে নিতে পারব যে আমরা ঈশ্বরের উদ্দেশ্য অনুসারে বেঁচে থাকতে চাই কি না।

১৮ বাইবেল আমাদের আরও জানায় যে স্রষ্টা হলেন প্রেমময় যিনি আমাদের অত্যন্ত যত্ন নেন। প্রেরিত পিতর বলেন: “তিনি তোমাদের জন্য চিন্তা করেন।” (১ পিতর ৫:৭; আরও দেখুন যোহন ৩:১৬ ও ১ যোহন ৪:৮, ১৬.) ঈশ্বর আমাদের প্রতি কতটা যত্ন নেন তা আমরা একটি উপায়ে জানতে পারি তা হল তিনি আমাদের মানসিক ও দৈহিকরূপে যে অপূর্বভাবে সৃষ্টি করেছেন তা বিবেচনা করে।

“আশ্চর্য্যরূপে নির্ম্মিত”

১৯ বাইবেলে গীতরচক দায়ূদ স্বীকার করেন: “আমি ভয়াবহরূপে ও আশ্চর্য্যরূপে নির্ম্মিত।” (গীতসংহিতা ১৩৯:১৪) এটি প্রকৃতই সত্য, কারণ মানব দেহ ও মস্তিষ্ক এক সর্বোৎকৃষ্ট পরিকল্পকের দ্বারা আশ্চর্যরূপে পরিকল্পিত।

২০ যেমন, যে কোন কম্পিউটারের থেকে আপনার মস্তিষ্ক অনেক বেশি জটিল। দ্যা নিউ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা বলে: “স্নায়ু তন্ত্রের মধ্যে বার্তা প্রেরণ যে কোন বড় একটি টেলিফোন এক্সচেঞ্জের থেকেও বেশি জটিল; মানব মস্তিষ্কের সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা একটি সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটারের ক্ষমতাকেও অনেক বেশি ছাপিয়ে যায়।”

২১ আপনার মস্তিষ্কে কোটি কোটি তথ্য ও মনশ্চক্ষুর ছবি জমা হয়, কিন্তু এটি শুধু তথ্য সংগ্রহের কেন্দ্র মাত্র নয়। মস্তিষ্কের সাহায্যে আপনি শিস্‌ দিতে, রুটি শেঁকতে, বিদেশী ভাষায় কথা বলতে, কম্পিউটার ব্যবহার করতে অথবা একটি এরোপ্লেন চালাতে শেখেন। ছুটির দিনগুলি কেমন করে কাটবে বা কোন্‌ ফল কতটা সুস্বাদু হবে তাও ধারণা করতে পারেন। আপনি বিশ্নেষণ করে কোন কিছু তৈরি করতে পারেন। আপনি পরিকল্পনা করতে, উপলব্ধি করতে, ভালবাসতে পারেন এবং আপনার চিন্তাধারাকে আপনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতে নিয়ে যেতে পারেন। আমরা মানুষেরা যেহেতু এই অত্যাশ্চর্য মানব মস্তিষ্কের পরিকল্পনা করতে পারি না, তাই যিনি সেটির পরিকল্পনা করেছেন তাঁর নিশ্চয় যে কোন মানুষের থেকেও অগাধ প্রজ্ঞা ও ক্ষমতা আছে।

২২ মস্তিষ্ক সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা স্বীকার করেন: “এই অপূর্বরূপে পরিকল্পিত, সুবিন্যস্ত ও অদ্ভুতভাবে জটিল যন্ত্রটি কিভাবে যে কাজ করে তা এক রহস্যজনক ব্যাপার। . . . মস্তিষ্ক যে প্রতিটি পৃথক ধাঁধাঁগুলি উপস্থাপন করে তা মানুষ কখনই সমাধান করতে পারবে না।” (সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান) পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক রেমো বলেন: “সত্যি বলতে গেলে, আমরা এখনও অতটা জানি না যে মানব মস্তিষ্ক কিভাবে তথ্য সংগ্রহ করে রাখে বা ইচ্ছা হলে স্মরণশক্তি থেকে বিষয়গুলি বার করে আনে। . . . মানব মস্তিষ্কে দশ হাজার কোটি সমান স্নায়ু কোষ আছে। প্রতিটি কোষই অন্যান্য হাজার হাজার কোষের সঙ্গে গাছের মত দেখতে সিন্যাপ্স্‌গুলির মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করে থাকে। পরস্পরের সাথে এই যোগাযোগ সম্ভাব্যতা বিহল্ব করে দেয় এমন জটিল।”

২৩ যে কোন ক্যামেরার থেকে আপনার চক্ষু আরও নিখুঁত ও উপযোগী করে তৈরি; আসলে চক্ষু হল স্বয়ংচালিত, নিজেই ফোকাস্‌ করে এমন রঙিন চলচ্চিত্রের ক্যামেরার মত। আপনার কর্ণ বিভিন্ন ধরনের শব্দ শুনতে পারে এবং দিক নির্ণয়ের ধারণা ও ভারসাম্য প্রদান করে। আপনার হৃৎপিণ্ড এমন এক ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প যা অত্যন্ত পটু ইঞ্জিনিয়ারেরাও এখনও নকল করতে পারেনি। তাছাড়া, অন্যান্য দেহাঙ্গগুলিও অপূর্ব: কয়েকটির নাম করতে হলে, যেমন আপনার নাসিকা, জিহাব ও হস্ত, তার সাথে আপনার সংবহন এবং পচন প্রণালী।

২৪ তাই একজন ইঞ্জিনিয়ার, যাকে একটি বড় কম্পিউটার পরিকল্পনার জন্য ভাড়া করে নিয়ে যাওয়া হয়, তিনি এই যুক্তি দেন: “যদি আমার কম্পিউটারের এক পরিকল্পকের প্রয়োজন হয়, তাহলে সেই আরও বেশি জটিল শারীরিক-রাসায়নিক-জীববিজ্ঞানের যন্ত্র যেটি আমার মানব দেহ, তার কতই না এক পরিকল্পকের প্রয়োজন হবে—যেটি আবার এই অসম্ভব অসীম সৃষ্টির এক অতি ক্ষুদ্র অংশ?”

২৫ লোকেরা যখন উড়োজাহাজ, কম্পিউটার, সাইকেল ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি তৈরি করার সময় যেমন কোন উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করে, ঠিক সেই রকমই আমাদের পরিকল্পনা করার সময় মানুষের দেহ ও মস্তিষ্কের পরিকল্পকেরও নিশ্চয়ই কোন এক উদ্দেশ্য ছিল। আর এই পরিকল্পকের প্রজ্ঞা মানুষের থেকে শ্রেষ্ঠ হতেই হবে কারণ আমাদের মধ্যে কেউই সেই পরিকল্পনাকে নকল করতে পারে না। তাই এটি যুক্তিযুক্ত যে তিনিই একমাত্র আমাদের বলতে পারেন যে কেন তিনি আমাদের পরিকল্পনা করলেন, কেন তিনি আমাদের পৃথিবীতে আনলেন এবং আমরা কোথায় যাচ্ছি।

২৬ আমরা ওই সকল বিষয়গুলি শিখলে, ঈশ্বর আমাদের যে আশ্চর্যজনক দেহ ও মস্তিষ্ক দিয়েছেন, তা আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যকে পরিপূর্ণ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু আমরা কোথায় তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে শিখতে পারি? তিনি সেই তথ্যগুলি আমাদের কোথায় দিয়েছেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

১, ২. কোন এক পরিকল্পিত বস্তুর উদ্দেশ্যটি জানার উত্তম উপায়টি কী?

৩, ৪. জীবনের উদ্ভব আকস্মিকভাবে হয়েছে তার কী সম্ভাবনা আছে?

৫-৭. জীবিত বস্তু যে হঠাৎ আসতে পারে না সে সম্বন্ধে কিভাবে মলিকিউলার জীববিজ্ঞান সত্যতা প্রমাণ করে?

৮, ৯. একটি উদাহরণ দিন যা প্রদর্শন করে যে যা কিছুই পরিকল্পিত করা হয়েছে তার অবশ্যই এক পরিকল্পক আছেন।

১০. সর্বোৎকৃষ্ট এক পরিকল্পকের কোন্‌ প্রমাণ প্রত্যক্ষ হয়?

১১. যেহেতু তাঁকে আমরা দেখতে পাই না, তাই কেন আমরা এক সর্বোৎকৃষ্ট পরিকল্পকের অস্তিত্বকে অস্বীকার করব না?

১২, ১৩. স্রষ্টার অস্তিত্ব সম্বন্ধে প্রমাণ কী সাক্ষ্য দেয়?

১৪. স্রষ্টা সম্বন্ধে বাইবেল কী উপসংহারে আসে?

১৫. ঈশ্বরের কিছু গুণাবলী আমরা কিভাবে প্রত্যক্ষ করতে পারি?

১৬. মানুষেরা ঈশ্বরকে দেখতে পারে না বলে আমাদের কেন আনন্দিত হওয়া উচিৎ?

১৭, ১৮. আমাদের কাছে ঈশ্বর সম্বন্ধে এক ধারণা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

১৯. কোন্‌ সত্য সম্বন্ধে গীতরচক দায়ূদ আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করান?

২০. মানব মস্তিষ্ক সম্পর্কে একটি এনসাইক্লোপিডিয়া কিভাবে বর্ণনা করে?

২১. যখন আমরা মস্তিষ্কের কার্যাবলি দেখি তখন আমাদের কী উপসংহারে আসা উচিৎ?

২২. মানব মস্তিষ্ক সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা কি স্বীকার করেছেন?

২৩, ২৪. আশ্চর্যরূপে রচিত কিছু দেহাঙ্গগুলির নাম করুন এবং এক ইঞ্জিনিয়ার কী মন্তব্য করেন?

২৫, ২৬. মহান পরিকল্পক আমাদের কী বলতে সক্ষম হবেন?

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

একটি বস্তুকে কেন পরিকল্পনা করা হয়েছে তা জানার উত্তম উপায় হল তার পরিকল্পককে জিজ্ঞাসা করা

[৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

জীবিত বস্তুদের জটিলতা ও নকশা ডিএনএ অণুর মধ্যে দেখা যেতে পারে

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

“মানব মস্তিষ্কের সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা একটি সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটারের ক্ষমতাকেও অনেক বেশি ছাপিয়ে যায়”