সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

জীবনের এক মহান উদ্দেশ্য আছে

জীবনের এক মহান উদ্দেশ্য আছে

অধ্যায় ৫

জীবনের এক মহান উদ্দেশ্য আছে

পৃথিবী ও তার জীবিত বস্তুগুলি যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে তা দেখায় যে তাদের স্রষ্টা এক প্রেমের ঈশ্বর যিনি প্রকৃতই যত্ন নেন। তাঁর বাক্য, বাইবেল দেখায় যে তিনি যত্ন নেন; এটি আমাদের এই প্রশ্নগুলির সর্বোত্তম উত্তর দেয়: আমরা এখানে পৃথিবীতে কেন আছি? এবং আমরা কোথায় যাচ্ছি?

ওই উত্তরগুলির জন্য আমাদের বাইবেল অনুসন্ধান করার প্রয়োজন। ঈশ্বরের বাক্য বলে: “যদি তোমরা তাঁহার অন্বেষণ কর, তবে তিনি তোমাদিগকে তাঁহার উদ্দেশ পাইতে দিবেন; কিন্তু যদি তাঁহাকে ত্যাগ কর, তবে তিনি তোমাদিগকে ত্যাগ করিবেন।” (২ বংশাবলি ১৫:২) তাহলে, আমাদের প্রতি তাঁর উদ্দেশ্য সম্পর্কে ঈশ্বরের বাক্যের অনুসন্ধান কী প্রকাশ করে?

কেন ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করেন

বাইবেল দেখায় যে বিশেষকরে মানুষকে মনে রেখেই ঈশ্বর পৃথিবীকে প্রস্তুত করেছিলেন। পৃথিবী সম্বন্ধে যিশাইয় ৪৫:১৮ পদ বলে যে ঈশ্বর “অনর্থক সৃষ্টি না করিয়া [কিন্তু] বাসস্থানার্থে নির্ম্মাণ করিয়াছেন।” শুধু বেঁচে থাকার জন্য যা কিছু প্রয়োজন তা নয় কিন্তু মানুষ যাতে সম্পূর্ণরূপে জীবন উপভোগ করতে পারে তার জন্য পৃথিবীতে তিনি সমস্ত কিছু যুগিয়েছেন।—আদিপুস্তক, ১ এবং ২ অধ্যায়।

ঈশ্বর, তাঁর বাক্যে প্রথম মানুষ, আদম ও হবার সৃষ্টি সম্বন্ধে বলেন এবং মানব পরিবারের জন্য তাঁর কী উদ্দেশ্য আছে তা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন: “আমরা আমাদের প্রতিমূর্ত্তিতে, আমাদের সাদৃশ্যে মনুষ্য নির্ম্মাণ করি; আর তাহারা সমুদ্রের মৎস্যদের উপরে, আকাশের পক্ষীদের উপরে, পশুগণের উপরে, সমস্ত পৃথিবীর উপরে, ও ভূমিতে গমনশীল যাবতীয় সরীসৃপের উপরে কর্ত্তৃত্ব করুক।” (আদিপুস্তক ১:২৬) “সমস্ত পৃথিবীর” ও এর প্রাণী জগতকে তত্ত্বাবধান করতে মানুষের উপর ভার দেওয়া হয়।

মধ্য প্রাচ্যে অবস্থিত, এদন নামক জায়গায় ঈশ্বর এক বিরাট উদ্যানতুল্য বাগান তৈরি করেন। তারপর তিনি “আদমকে লইয়া এদনস্থ উদ্যানের কৃষিকর্ম্ম ও রক্ষার্থে তথায় রাখিলেন।” এটি ছিল এক পরমদেশ যেখানে প্রথম মানুষের খাদ্যের জন্য যা কিছু প্রয়োজন সেই সব কিছুই সেখানে ছিল। এর মধ্যে ছিল “সর্ব্বজাতীয় সুদৃশ্য ও সুখাদ্য-দায়ক বৃক্ষ,” তার সাথে ছিল অন্যান্য শাক-সবজি ও হরেকরকমের জীব-জন্তু।—আদিপুস্তক ২:৭-৯, ১৫.

প্রথম মানুষের দেহ সিদ্ধরূপে সৃষ্টি করা হয় যাতে তারা অসুস্থ, বৃদ্ধ বা মারা যেতে না পারে। তাদের অন্যান্য গুণাবলী দিয়েও ভূষিত করা হয় যেমন স্বাধীন ইচ্ছা। তাদের যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছিল সে সম্বন্ধে আদিপুস্তক ১:২৭ পদে বর্ণনা আছে: “ঈশ্বর আপনার প্রতিমূর্ত্তিতে মনুষ্যকে সৃষ্টি করিলেন; ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তিতেই তাহাকে সৃষ্টি করিলেন, পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে সৃষ্টি করিলেন।” যেহেতু আমরা ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্ট তাই আমাদের শুধুমাত্র দৈহিক ও মানসিক গুণাবলী সকল দেওয়া হয়নি কিন্তু নৈতিক ও আত্মিক বিষয়গুলিও দেওয়া হয়েছিল, যেগুলিকে অবশ্যই পরিতৃপ্ত করতে হবে যদি আমরা প্রকৃত সুখী হতে চাই। ঈশ্বর সেই চাহিদাগুলিকে তৃপ্ত করতে ব্যবস্থা করবেন ও সেই সঙ্গে খাদ্য, জল ও বায়ুর চাহিদাগুলিও মিটাবেন। যেমন যীশু খ্রীষ্ট বলেছিলেন, “মনুষ্য কেবল রুটীতে বাঁচিবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়, তাহাতেই বাঁচিবে।”—মথি ৪:৪.

তাছাড়া, প্রথম দম্পতি এদনে থাকাকালীন ঈশ্বর তাদের এক অপূর্ব কার্যভার দেন: “তোমরা প্রজাবন্ত ও বহুবংশ হও, এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ” কর। (আদিপুস্তক ১:২৮) ফলে তারা বংশবৃদ্ধি করতে এবং সিদ্ধ সন্তানের জন্ম দিতে পারত। এবং মানব সংখ্যার বৃদ্ধি হওয়ার সাথে সাথে, এদনের আদি বাগানরূপ পরমদেশের অংশটির সীমানা বৃদ্ধি করার তাদের হয়ত আনন্দদায়ক কাজটি থাকত। অবশেষে, হয়ত সম্পূর্ণ পৃথিবীটি পরমদেশে পরিণত হত, যেখানে সিদ্ধ, সুখী মানুষেরা বসবাস করত আর যারা চিরকাল বেঁচে থাকতে পারত। বাইবেল আমাদের জানায় যে এই সমস্ত কিছুর শুরু করার পর, “ঈশ্বর আপনার নির্ম্মিত বস্তু সকলের প্রতি দৃষ্টি করিলেন, আর দেখ, সে সকলই অতি উত্তম।”—আদিপুস্তক ১:৩১; আরও দেখুন গীতসংহিতা ১১৮:১৭.

এটি প্রতীয়মান হয় যে মানুষ তার নিজ উপকারের জন্য বশ্যতাপ্রাপ্ত পৃথিবীকে কাজে লাগাবে। কিন্তু তা দায়িত্বের সাথে করা দরকার ছিল। মানুষকে পৃথিবীর সম্মানীয় তত্ত্বাবধায়ক হওয়ার ছিল কিন্তু ধ্বংসকারী নয়। আমরা যে আজ পৃথিবীর ধ্বংস দেখে থাকি তা ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এবং যারা এটিকে ধ্বংস করতে অংশ নেয় তারা পৃথিবীতে জীবনের যে উদ্দেশ্য তার বিরুদ্ধে যাচ্ছে। সেইজন্য তাদের দণ্ড দিতে হবে কারণ বাইবেল বলে যে ঈশ্বর “পৃথিবীনাশকদিগকে নাশ” করবেন।—প্রকাশিত বাক্য ১১:১৮.

এখনও ঈশ্বরের উদ্দেশ্য তাই

তাই, প্রথম থেকেই ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ছিল, এক সিদ্ধ মানব পরিবার যেন চিরকাল পৃথিবীতে পরমদেশে বাস করুক। আর এখনও সেটি তাঁর উদ্দেশ্য! কোন বিচ্যুতি না ঘটেই, সেই উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে। বাইবেল বলে: “বাহিনীগণের সদাপ্রভু শপথ করিয়া বলিয়াছেন, অবশ্যই, আমি যেরূপ সঙ্কল্প করিয়াছি, তদ্রূপ ঘটিবে; আমি যে মন্ত্রণা করিয়াছি, তাহা স্থির থাকিবে।” “আমি বলিয়াছি, আর আমি সফল করিব; আমি কল্পনা করিয়াছি, আর আমি সিদ্ধ করিব।”—যিশাইয় ১৪:২৪; ৪৬:১১.

১০ কোন এক ব্যক্তি ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশা পেতে চাইলে, যীশু তখন পৃথিবীকে পরমদেশে পুনঃস্থাপন করার ঈশ্বরের উদ্দেশ্যটি সম্বন্ধে বলেন: “তুমি পরমদেশে আমার সঙ্গে উপস্থিত হইবে।” (লূক ২৩:৪৩) প্রেরিত পিতরও আগত নতুন জগৎ সম্বন্ধে বলেন, যখন তিনি ভাববাণী করেন: “[ঈশ্বরের] প্রতিজ্ঞা অনুসারে আমরা এমন নূতন আকাশমণ্ডলের [স্বর্গ থেকে শাসনরত নতুন সরকারি ব্যবস্থা] ও নূতন পৃথিবীর [নতুন পার্থিব সমাজ] অপেক্ষায় আছি, যাহার মধ্যে ধার্ম্মিকতা বসতি করে।”—২ পিতর ৩:১৩.

১১ আগত নতুন জগৎ এবং কতদিন এটি স্থায়ী থাকবে সেই সম্বন্ধে গীতরচক দায়ূদও লিখেছিলেন। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন: “ধার্ম্মিকেরা দেশের অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।” (গীতসংহিতা ৩৭:২৯) সেই কারণেই যীশু প্রতিজ্ঞা করেন: “ধন্য যাহারা মৃদুশীল, কারণ তাহারা দেশের অধিকারী হইবে।”—মথি ৫:৫.

১২ সেটি কতই না এক অপূর্ব ভবিষ্যৎ, সমস্ত দুষ্টতা, অপরাধ, অসুস্থতা, দুঃখ এবং বেদনা মুক্ত পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল বাস করা! বাইবেলের সর্বশেষ পুস্তকে, ঈশ্বরের ভাববাণীমূলক বাক্য এটি ঘোষণা করে সংক্ষেপে বলে: “[ঈশ্বর] তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।” এটি আরও বলে: “আর যিনি সিংহাসনে বসিয়া আছেন, তিনি কহিলেন, দেখ, আমি সকলই নূতন করিতেছি। পরে তিনি কহিলেন, লিখ, কেননা এ সকল কথা বিশ্বসনীয় ও সত্য।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৪, ৫.

১৩ হ্যাঁ, ঈশ্বরের মনে এক মহান উদ্দেশ্য আছে। সেটি হবে ধার্মিকতার এক নতুন জগৎ, এক অনন্তকালীন পরমদেশ, তিনিই ভবিষ্যদ্বাণী করেন যিনি করতে সক্ষম এবং যা প্রতিজ্ঞা করেন তা রক্ষা করেন, কারণ তাঁর “কথা বিশ্বসনীয় ও সত্য।”

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

১, ২. আমরা কিভাবে বলতে পারি যে ঈশ্বর আমাদের প্রতি যত্ন নেন এবং জীবনের প্রশ্নগুলির উত্তর পেতে আমরা কোথায় যেতে পারি?

৩. ঈশ্বর কেন পৃথিবীকে সৃষ্টি করেন?

৪. প্রথম মানুষদের কেন ঈশ্বর সৃষ্টি করেন?

৫. প্রথম মানুষদের কোথায় রাখা হয়?

৬. মানসিক ও দৈহিক কোন্‌ গুণাবলী দিয়ে মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছিল?

৭. প্রথম দম্পতিকে কোন্‌ কার্যভার দেওয়া হয়?

৮. মানুষকে কিভাবে পৃথিবীর যত্ন নিতে বলা হয়?

৯. ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সাধন হবেই বলে কেন আমরা দৃঢ়নিশ্চিত থাকতে পারি?

১০, ১১. যীশু, পিতর এবং গীতরচক দায়ূদ পরমদেশ সম্বন্ধে কিভাবে বলেছিলেন?

১২, ১৩. মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের মহান উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংক্ষেপে বলুন।

[Pictures on page 20, 21]

ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ছিল মানুষ চিরকাল পরমদশ পৃথিবীতে বাস করুক। এখনও তাঁর উদ্দেশ্য তাই।

[২২ পৃষ্ঠার চিত্র]

যে ভাড়াটে বাড়ি নষ্ট করে দেয় তাকে বাড়িওয়ালা প্রশ্ন করতে পারে