সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

জীবনের কি কোন উদ্দেশ্য আছে?

জীবনের কি কোন উদ্দেশ্য আছে?

অধ্যায় ১

জীবনের কি কোন উদ্দেশ্য আছে?

আজ বা কাল, প্রায় প্রত্যেকেই জীবনের উদ্দেশ্য কি, সেই সম্বন্ধে চিন্তা করে থাকে। তা কি আমাদের জীবনযাপনের পরিস্থিতি উন্নতি করতে কঠোর পরিশ্রম করা, আমাদের পরিবারকে ভরণপোষণ করা, হয়ত ৭০ বা ৮০ বছর পর মৃত্যু বরণ করা এবং তার পর চিরকালের জন্য নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া? এক যুবক ব্যক্তি যে এরকম ভেবেছিল সে বলেছিল “বেঁচে থাকা, সন্তান লাভ করা, সুখী হওয়া ও একদিন মরে যাওয়া” ছাড়া জীবনে আর কোন উদ্দেশ্য নেই। কিন্তু তা কি সত্যি? এবং মৃত্যু কি প্রকৃতই সমস্ত কিছু শেষ করে দেয়?

পূর্ব ও পশ্চিম উভয় দেশগুলিতে অনেকেই মনে করে যে বেঁচে থাকার মূল উদ্দেশ্য হল ধন-সম্পত্তি অর্জন করা। তারা বিশ্বাস করে যে তা তাদের এক সুখময় ও অর্থপূর্ণ জীবনে পরিচালিত করতে পারে। কিন্তু যাদের বস্তু সম্পদ আছে সেই লোকেদের সম্পর্কেই বা কী? কানাডা দেশের লেখক হ্যারি ব্রুস্‌ বলেন: “বহু বহু সংখ্যক ধনী ব্যক্তিরা বলেন যে তারা সুখী নন।” তিনি আরও বলেন: “গণনা দেখায় যে প্রচণ্ড হতাশা উত্তর আমেরিকাকে প্রভাবিত করেছে . . . এই জগতে কি কউ সুখী আছে? যদি থাকে, তাহলে তার রহস্যটি কী?”

প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টার বলেছিলেন: “আমরা বুঝতে পেরেছি যে জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়ার ইচ্ছাটি, জিনিসপত্র থাকা ও খাওয়া দাওয়া করা পূর্ণ করতে পারে না। . . . যে জীবনে কোন দৃঢ় আস্থা বা উদ্দেশ্য নেই সেই জীবনের শূণ্যতাকে বস্তু সম্পদ জড়ো করা পূর্ণ করতে পারে না।” অপর এক রাজনৈতিক নেতা বলেছিলেন: “আমি বেশ কয়েক বছর ধরে আমার ও আমার জীবন সম্বন্ধে সত্যটি খোঁজার জন্য কঠিন চেষ্টা করেছি; আমার পরিচিত অনেকেই তা করছেন। আগের থেকে এখন আরও বেশি লোক জিজ্ঞাসা করছেন, ‘আমরা কারা? আমাদের উদ্দেশ্য কী?’”

পরিস্থিতিগুলি আরও কষ্টকর

অনেকে যখন দেখে যে জীবনযাপনের পরিস্থিতি আরও কষ্টকর হয়ে পড়ছে তখন তাদের মনে জীবনের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সন্দেহ জাগে। জগদ্ব্যাপী ১০০ কোটিরও বেশি লোক গুরুতরভাবে অসুস্থ বা পুষ্টির অভাবে ভুগছে, যার ফলে শুধুমাত্র আফ্রিকাতেই প্রায় এক কোটি শিশু প্রতি বছর মারা যাচ্ছে। পৃথিবীর জনসংখ্যা প্রায় ৬০০ কোটি, যা প্রতি বছর ক্রমাগত ৯ কোটির থেকেও বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে ও সেই বৃদ্ধির ৯০ শতাংশেরও বেশি উন্নতিশীল দেশগুলিতেই হচ্ছে। এই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা খাদ্য, বাসস্থান ও শিল্পের প্রয়োজনীয়তাকে বৃদ্ধি করছে, যার ফলে শিল্পসংক্রান্ত ও অন্যান্য দূষণ দ্বারা ভূমি, জল এবং বায়ুর ক্ষতি হচ্ছে।

ওয়ার্ল্ড মিলিটারি অ্যান্ড সোশাল এক্সপেন্ডিচারস্‌ ১৯৯১ প্রকাশনাটি বিবরণ দেয়: “প্রতি বছর সম্পূর্ণ [যুক্ত রাজ্য] সমান অরণ্যাঞ্চল ধ্বংস করা হয়। বর্তমানের বৃক্ষচ্ছেদনের হার অনুসারে আমরা ২০০০ সনের মধ্যে আর্দ্র(-CHECK) ক্রান্তীয় অঞ্চলের ৬৫ শতাংশ বনাঞ্চল শেষ করে দেব।” ইউএন এজেন্সি অনুসারে সেই সকল অঞ্চলে, ১টি বৃক্ষ রোপন করা হলে ১০টি বৃক্ষ ছেদন করা হয়; আফ্রিকাতে তার অনুপাত হল, ১টি রোপন হলে ২০টির থেকেও বেশি ছেদন। তাই মরুভূমি অঞ্চল বৃদ্ধি পাচ্ছে, বেলজিয়াম সমান অঞ্চল প্রতি বছর কৃষিকার্যের জন্য অনুপযোগী হচ্ছে।

তাছাড়া, বিগত চারটি শতাব্দী একত্রিত করলে এই বিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা তার থেকে চার গুণেরও বেশি। প্রত্যেক জায়গায় অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে আর বিশেষভাবে হিংস্রপ্রকারের অপরাধ বেড়ে চলেছে। পারিবারিক জীবনে ভাঙ্গন, নেশাকর ওষুধের অপব্যবহার, এইডস, যৌনসংক্রান্ত রোগ এবং আরও অন্যান্য নেতিবাচক বিষয়গুলি জীবনকে দুর্বহ করে তুলছে। মানব পরিবারকে যে বহু সমস্যাগুলি আক্রান্ত করছে তার সমাধান জগৎ নেতারা দিতে পারেনি। তাই বোঝাই যায় যে কেন লোকে জিজ্ঞাসা করে, জীবনের উদ্দেশ্য কী?

পণ্ডিত ব্যক্তিগণ ও ধর্মীয় নেতারা ওই প্রশ্নটির কিভাবে উত্তর দেন? এই বহু শতাব্দীর পর তারা কি সন্তোষজনক উত্তর দিতে পেরেছেন?

তারা কী বলেন

কন্‌ফুশিয়ান্‌ পণ্ডিত ডু ওয়েমিং বলেন: “আমাদের সাধারণ, মানব অস্তিত্বেই জীবনের চূড়ান্ত অর্থটি খুঁজে পাওয়া যায়।” এই দৃষ্টিকোণ অনুসারে, মানুষকে জন্ম নিতেই হবে, বেঁচে থাকার সংগ্রাম করে যেতেই হবে এবং মৃত্যু বরণ করতেই হবে। এই প্রকৃতির দৃষ্টিভঙ্গিতে খুব সামান্যই আশা থেকে যায়। আর বাস্তবিকই সেটি কি সত্যি?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসী মৃত্যু শিবির থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত, এলি উইসেল্‌ বলেছিলেন: “‘আমরা কেন এখানে আছি?‘ এই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটির সম্মুখীন মানুষকে হতেই হবে। . . . অর্থহীন মৃত্যু দেখা সত্ত্বেও, আমি বিশ্বাস করি যে জীবনের অর্থ আছে।” কিন্তু তিনি জীবনের অর্থ সম্বন্ধে বলতে পারেননি।

১০ সম্পাদক ভারমণ্ট্‌ রয়েস্টার বলেন: “মানুষের নিজের সম্বন্ধে চিন্তায় . . . এই মহাবিশ্বে তার স্থান সম্পর্কে, সময় যখন শুরু হয়েছিল তারপর থেকে আমরা অল্পই এগিয়েছি। আমরা এখনও সেই একই প্রশ্নগুলি নিয়ে বিভ্রান্ত, আমরা কারা ও আমরা কেন এখানে আছি এবং ভবিষ্যতে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে।”

১১ বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানী স্টিফেন জে গোল্ড লক্ষ্য করেন: “আমরা হয়ত কোন ‘উন্নতমানের’ উত্তর পেতে চাই—কিন্তু কিছুই নেই।” এই প্রকৃতির বিবর্তনবাদীদের জন্য, অস্তিত্ব বজায় রাখতে ক্রমাগত সংগ্রামই হল জীবন, আর মৃত্যু সমস্ত কিছুর শেষ নিয়ে আসে। এমনকি সেই প্রকৃতির দৃষ্টিভঙ্গিতেও কোন আশাই নেই। আর আবার, তা কি সত্যি?

১২ বহু ধর্মীয় নেতারা বলেন যে জীবনের উদ্দেশ্য হল উত্তম জীবনযাপন করা যাতে মৃত্যুর পর আত্মা যেন স্বর্গে গিয়ে অনন্তকাল থাকতে পারে। মন্দ ব্যক্তিদের জন্য বিকল্প প্রস্তাব হল নরকাগিনতে চিরকালের জন্য যন্ত্রণা ভোগ করা। আর এই বিশ্বাস অনুসারে, সারা ইতিহাস ধরে যে অতৃপ্তিকর জীবন মানুষের ছিল প্রায় সেইরূপ জীবনই পৃথিবীতে থেকে যাবে। কিন্তু যদি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যই ছিল লোকে স্বর্গে দূতেদের মত বাস করুক তাহলে কেন তিনি প্রথমেই তাদের সেই রকম সৃষ্টি করলেন না, যেমন তিনি দূতেদের করেছিলেন?

১৩ সেই প্রকৃতির দৃষ্টিকোণের জন্য পাদ্রীরাও সমস্যায় পড়েছেন। লণ্ডনের সেন্ট পলস্‌ ক্যাথিড্রেলের প্রাক্তন ডীন, ডা. ডবলিউ. আর. ইঙ্গে, একবার বলেছিলেন: “আমি আমার সারা জীবন ধরে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যটি খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে চেষ্টা করি যা আমার কাছে সবসময় প্রধান বলে মনে হয়েছিল: অনন্তকালের সমস্যা; মানব ব্যক্তিত্বের সমস্যা; এবং মন্দ বিষয়ের সমস্যা। আমি এই সম্পর্কে ব্যর্থ হয়েছি। আমি কোনটিরই সমাধান করতে পারিনি।”

প্রভাব

১৪ জীবনের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে প্রশ্নের উপর পণ্ডিত ব্যক্তি ও ধর্মীয় নেতাদের বহু বিভিন্ন মতবাদের প্রভাব কী হয়েছে? অনেকেই উত্তর দেন যেমন এক বয়স্ক ব্যক্তি যিনি বলেছিলেন: “প্রায় সারা জীবন ধরেই আমি জিজ্ঞাসা করেছি যে কেন আমি এখানে আছি। যদি কোন উদ্দেশ্য থাকেও, আমি সে সম্বন্ধে কোন চিন্তাই করি না।”

১৫ জগতের ধর্মগুলির মধ্যে বিভিন্ন প্রকৃতির মতামতগুলি যারা লক্ষ্য করেছেন তাদের মধ্যে অনেকেই এই পরিসমাপ্তিতে এসেছেন যে, একজন কী বিশ্বাস করে তাতে কোন কিছু যায় আসে না। তারা মনে করে যে মনকে শুধুমাত্র অন্যদিকে পরিচালিত করার জন্যই হল ধর্ম, যা মনকে একটু শান্তি ও সান্ত্বনা দেয় যার দরুন একজন জীবনের সমস্যার সাথে মোকাবিলা করতে পারে। অন্যেরা মনে করে ধর্ম হল আর কিছুই নয় কুসংস্কার মাত্র। তারা মনে করে শতাব্দী ধরে ধর্মীয় গবেষণা জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্নটির উত্তর দিতে পারেনি, আর তা পারেনি সাধারণ মানুষের জীবনকে উন্নত করতে। সত্যই, ইতিহাস দেখায় যে জগতের ধর্মগুলি প্রায়ই মানবজাতিকে উন্নতি করতে বাধা দিয়েছে এবং ঘৃণার ও যুদ্ধের কারণ হয়েছে।

১৬ তবুও, জীবনের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে উত্তর খুঁজে পাওয়া কি এতই গুরুত্বপূর্ণ? মানসিক-স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ভিক্টর ফ্র্যাঙ্কেল উত্তর দেন: “একজনের জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়ার প্রচেষ্টা হল, মানুষের প্রধান প্ররোচনা শক্তি। . . . আমি সাহস করে বলতে পারি যে একজনকে সবচেয়ে মন্দ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে জগতের আর কিছুই এত প্রভাবশালীরূপে সাহায্য করতে পারে না যা একজনের জীবনের অর্থ সম্বন্ধে জ্ঞান করতে পারে।”

১৭ যেহেতু মানব দর্শন ও ধর্ম জীবনের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে তৃপ্তিদায়ক উত্তর দিতে পারে না, তাই আমরা তা খুঁজে পেতে কোথায় যেতে পারি? কোন শ্রেষ্ঠ প্রজ্ঞার উৎস আছে কি যা এই বিষয় সম্বন্ধে সত্যটি বলতে পারে?

টীকা: অন্যথা নির্দেশিত না থাকলে, এই বইটির শাস্ত্রীয় উদ্ধৃতিগুলি বাইবেল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার পবিত্র বাইবেল থেকে নেওয়া হয়েছে। যেখানে নিউ ওয়ার্ল্ড ট্রান্সলেশন অফ দ্যা হোলী স্ক্রিপচার্স—উইথ রেফারেন্সেস্‌ ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে NW লিখে চিহ্নিত করা হয়েছে।

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

১. জীবনের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে অনেক সময় কী জিজ্ঞাসা করা হয় এবং এই বিষয়ে একজন কী মন্তব্য করেন?

২, ৩. ধনসম্পত্তি অর্জন করা জীবনের উদ্দেশ্যর জন্য যথেষ্ট নয় কেন?

৪. জীবনের যে কোন উদ্দেশ্য আছে সেই সম্বন্ধে অনেকে কেন সন্দেহ করে?

৫. পৃথিবীর বনাঞ্চলের কী ঘটছে?

৬, ৭. কোন্‌ সমস্যাগুলি সমাধান করতে মানব নেতারা অসমর্থ হয়েছেন, তাই কোন্‌ প্রশ্নগুলির উত্তরের প্রয়োজন আছে?

৮, ৯. (ক) চীন দেশীয় এক পণ্ডিত জীবনের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে কী বলেন? (খ) নাৎসী মৃত্যু শিবির থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত এক ব্যক্তি কী মন্তব্য করেন?

১০, ১১. (ক) মানুষের কাছে যে উত্তর নেই তা কিভাবে এক সম্পাদক দেখান? (খ) একজন বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানীর দৃষ্টিভঙ্গি কেন সন্তোষজনক নয়?

১২, ১৩. গির্জ্জার নেতাদের দৃষ্টিকোণ কী এবং সাধারণ পর্যবেক্ষকদের মতবাদের থেকে সেগুলি কি বেশি সন্তোষজনক?

১৪, ১৫. পরস্পর বিরোধী মতবাদগুলি অনেকের প্রতি কী প্রভাব এনেছে?

১৬. জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে?

১৭. এখন আমাদের কোন্‌ প্রশ্নগুলি জিজ্ঞাসা করা উচিৎ?

[৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

“প্রতি বছর সম্পূর্ণ [যুক্ত রাজ্যের] সমান অরণ্যাঞ্চল ধ্বংস করা হয়”

[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

“প্রায় সারা জীবন ধরেই আমি জিজ্ঞাসা করেছি কেন আমি এখানে আছি”