সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল বাস করুন

পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল বাস করুন

অধ্যায় ৮

পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল বাস করুন

ঈশ্বর যখন পৃথিবী থেকে দুষ্টতা ও দুঃখকষ্ট মুছে দেবেন এবং তাঁর স্বর্গীয় রাজ্যের প্রেমময় নিয়ন্ত্রণের অধীনে নতুন জগৎ নিয়ে আসবেন তখন জীবন কিরূপ হবে? ‘তাঁর হস্ত মুক্ত করে, সমুদয় প্রাণীর বাঞ্ছা পূর্ণ করবেন’ বলে তিনি প্রতিজ্ঞা করেন।—গীতসংহিতা ১৪৫:১৬.

আপনার স্বাভাবিক ইচ্ছাগুলি কী? সেগুলি কি সুখী জীবন, উদ্দেশ্যময় কাজ, বস্তুর প্রাচুর্য, মনোরম পরিবেশ, সকলের মাঝে শান্তি এবং অন্যায়, রোগব্যধি, দুঃখকষ্ট ও মৃত্যু থেকে মুক্তি নয়? এবং আনন্দপূর্ণ এক আত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে কী বলা যায়? ঈশ্বরের রাজ্যের শাসন ব্যবস্থার অধীনে খুব শীঘ্রই এই সকল বিষয় বাস্তবে রূপায়িত হবে। সেই নতুন জগতে যে অপূর্ব আশীর্বাদগুলি আসবে সে সম্বন্ধে বাইবেল ভাববাণীগুলি কী বলে তা লক্ষ্য করুন।

মানবজাতি সম্পূর্ণ শান্তিতে

“[ঈশ্বর] পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত যুদ্ধ নিবৃত্ত করেন; তিনি ধনু ভগ্‌ন করেন, বড়শা খণ্ড খণ্ড করেন, তিনি রথ সকল আগুনে পোড়াইয়া দেন।”—গীতসংহিতা ৪৬:৯.

“তাহারা আপন আপন খড়্গ ভাঙ্গিয়া লাঙ্গলের ফাল গড়িবে, ও আপন আপন বড়শা ভাঙ্গিয়া কাস্তা গড়িবে; এক জাতি অন্য জাতির বিপরীতে আর খড়্গ তুলিবে না, তাহারা আর যুদ্ধ শিখিবে না।”—যিশাইয় ২:৪.

“মৃদুশীলেরা দেশের অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:১১.

“সমস্ত পৃথিবী শান্ত ও সুস্থির হইয়াছে, সকলে উচ্চৈঃস্বরে আনন্দগান করিতেছে।”—যিশাইয় ১৪:৭.

মানুষ ও পশুদের মধ্যে শান্তি

“কেন্দুয়াব্যাঘ্র মেষশাবকের সহিত একত্র বাস করিবে; চিতাব্যাঘ্র ছাগবৎসের সহিত শয়ন করিবে; গোবৎস, যুবসিংহ ও হৃষ্টপুষ্ট পশু একত্র থাকিবে; এবং ক্ষুদ্র বালক তাহাদিগকে চালাইবে। ধেনু ও ভল্লুকী চরিবে, তাহাদের বৎস সকল একত্র শয়ন করিবে, এবং সিংহ বলদের ন্যায় বিচালি খাইবে। আর স্তন্যপায়ী শিশু কেউটিয়া সর্পের গর্ত্তের উপরে খেলা করিবে, ত্যক্তস্তন্য বালক কৃষ্ণসর্পের বিবরের উপরে হস্ত রাখিবে। সে সকল . . . হিংসা কিম্বা বিনাশ করিবে না।”—যিশাইয় ১১:৬-৯.

“সেই দিন আমি লোকদের নিমিত্ত মাঠের পশু, আকাশের পক্ষী ও ভূমির সরীসৃপ সকলের সহিত নিয়ম করিব; . . . তাহাদিগকে নিশ্চিন্তে শয়ন করাইব।”—হোশেয় ২:১৮.

অটুট স্বাস্থ্য, অনন্ত জীবন

“তৎকালে অন্ধদের চক্ষু খোলা যাইবে, আর বধিরদের কর্ণ মুক্ত হইবে। তৎকালে খঞ্জ হরিণের ন্যায় লম্ফ দিবে, ও গোঙ্গাদের জিহাব আনন্দগান করিবে।”—যিশাইয় ৩৫:৫, ৬.

১০ “[ঈশ্বর] তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৪.

১১ “আর নগরবাসী কেহ বলিবে না, আমি পীড়িত।”—যিশাইয় ৩৩:২৪.

১২ “তাহার মাংস বালকের অপেক্ষাও সতেজ হইবে, সে যৌবনকাল ফিরিয়া পাইবে।”—ইয়োব ৩৩:২৫.

১৩ “ঈশ্বরের অনুগ্রহ-দান আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টেতে অনন্ত জীবন।”—রোমীয় ৬:২৩.

১৪ “যে কেহ তাহাতে বিশ্বাস করে, সে . . . অনন্ত জীবন [পাইবে]।”—যোহন ৩:১৬.

মৃতদের পুনর্জীবন লাভ

১৫ “ধার্ম্মিক ও অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে।”—প্রেরিত ২৪:১৫.

১৬ “এমন সময় আসিতেছে, যখন কবরস্থ [ঈশ্বরের স্মৃতিতে] সকলে তাঁহার রব শুনিবে, এবং . . . বাহির হইয়া আসিবে।”—যোহন ৫:২৮, ২৯.

১৭ “সমুদ্র আপনার মধ্যবর্ত্তী মৃতগণকে সমর্পণ করিল, এবং মৃত্যু ও পাতাল [কবর] আপনাদের মধ্যবর্ত্তী মৃতগণকে সমর্পণ করিল।”—প্রকাশিত বাক্য ২০:১৩.

পৃথিবী, প্রাচুর্যের এক পরমদেশ

১৮ “আশীর্ব্বাদের ধারা বর্ষিবে। আর ক্ষেত্রের বৃক্ষ ফল উৎপন্ন করিবে, ও ভূমি নিজ শস্য দিবে; এবং তাহারা নির্ভয়ে স্বদেশে থাকিবে।”—যিহিষ্কেল ৩৪:২৬, ২৭.

১৯ “পৃথিবী নিজ ফল দিয়াছে; ঈশ্বর, আমাদের ঈশ্বর, আমাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিবেন।”—গীতসংহিতা ৬৭:৬.

২০ “প্রান্তর ও জলশূন্য স্থান আমোদ করিবে, মরুভূমি উল্লাসিত হইবে, গোলাপের ন্যায় উৎফুল্ল হইবে।”—যিশাইয় ৩৫:১.

২১ “পর্ব্বত ও উপপর্ব্বতগণ তোমাদের সমক্ষে উচ্চৈঃস্বরে আনন্দগান করিবে, এবং ক্ষেত্রের সমস্ত বৃক্ষ হাততালি দিবে। কন্টকবৃক্ষের পরিবর্ত্তে দেবদারু, শ্যাকুলের পরিবর্ত্তে গুলমেঁদি উৎপন্ন হইবে।”—যিশাইয় ৫৫:১২, ১৩.

২২ “তুমি পরমদেশে আমার সহিত উপস্থিত হইবে।”—লূক ২৩:৪৩.

সকলের জন্য উত্তম বাসস্থান

২৩ “লোকেরা গৃহ নির্ম্মাণ করিয়া তাহার মধ্যে বসতি করিবে, . . . তাহারা গৃহ নির্ম্মাণ করিলে অন্যে বাস করিবে না, তাহারা রোপণ করিলে অন্যে ভোগ করিবে না; . . . আমার মনোনীত লোকেরা দীর্ঘকাল আপন আপন হস্তের শ্রমফল ভোগ করিবে। তাহারা বৃথা পরিশ্রম করিবে না, বিহল্বতার নিমিত্ত সন্তান জন্ম দিবে না।”—যিশাইয় ৬৫:২১-২৩.

২৪ “প্রত্যেকে আপন আপন দ্রাক্ষালতার ও আপন আপন ডুমুরবৃক্ষের তলে বসিবে; কেহ তাহাদিগকে ভয় দেখাইবে না।”—মীখা ৪:৪.

আপনি চিরকাল পরমদেশে বাস করতে পারেন

২৫ ভবিষ্যতের প্রতি কী অপূর্ব দৃষ্টিভঙ্গি! বর্তমান জীবন প্রকৃতই কত উদ্দেশ্যপূর্ণ হতে পারে, যখন আমরা এই দৃঢ় আশায় নোঙ্গর বাঁধি যে ঈশ্বরের নতুন জগতে আজকের সমস্যাগুলি চিরকালের জন্য অতীতের বিষয় হবে! “পূর্ব্বে যাহা ছিল, তাহা স্মরণে থাকিবে না, আর মনে পড়িবে না।” (যিশাইয় ৬৫:১৭) এবং এটি জানা কতই না সান্ত্বনাদায়ক যে সেই সময় জীবন হবে শ্বাসত: “[ঈশ্বর] মৃত্যুকে অনন্তকালের জন্য বিনষ্ট করিয়াছেন।”—যিশাইয় ২৫:৮.

২৬ আপনি কি সেই পরমদেশ নতুন জগতে চিরকাল জীবিত থাকতে চান যেটি এখন খুবই নিকটে? ‘এই জগৎ শেষ হওয়ার সময়ে ঈশ্বরের অনুমোদন পেতে এবং তাঁর নতুন জগতে চিরকাল বেঁচে থাকতে হলে আমাকে কী করতে হবে?’ আপনি হয়ত জিজ্ঞাসা করতে পারেন। যীশু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনার সময় যা ইঙ্গিত করেছিলেন আপনাকে তা করতে হবে: “ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়।”—যোহন ১৭:৩.

২৭ সুতরাং, আপনি একটি বাইবেল সংগ্রহ করুন, এবং এই ব্রোশারে যা পড়েছেন সেটি মিলিয়ে নিন। যারা এই বাইবেল সত্য সম্বন্ধে অধ্যয়ন করে ও শিক্ষা দেয় তাদের খুঁজে বার করুন। ভণ্ড ধর্ম যেগুলি বাইবেলের বিরুদ্ধে শিক্ষা দেয় ও কার্য করে সেগুলির বন্ধন থেকে মুক্ত হোন। লক্ষ লক্ষ লোকে যারা ইতিমধ্যেই ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করছেন তাদের সাথে আপনিও কিভাবে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য, পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল মানুষ জীবিত থাকবে তাতে অংশ গ্রহণ করতে পারেন সেই সম্বন্ধে শিখুন। নিকট ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য যা ঘোষণা করে তা হৃদয়ে গ্রহণ করুন: “জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।”—১ যোহন ২:১৭.

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

১, ২. ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে জীবন কেমন হবে?

৩-৬. মানুষেরা নতুন জগতে যে শান্তিতে থাকবে সে সম্বন্ধে কী নিশ্চয়তা আছে?

৭, ৮. মানুষ ও পশুর মাঝে কী ধরনের শান্তি থাকবে?

৯-১৪. নতুন জগতে স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্বন্ধে বর্ণনা করুন।

১৫-১৭. যারা ইতিমধ্যে মারা গেছেন তাদের জন্য কী আশা আছে?

১৮-২২. সম্পূর্ণ পৃথিবী কিসে পরিবর্তিত হবে?

২৩, ২৪. সকলের জন্য যে যথেষ্ট উত্তম গৃহ থাকবে সে সম্পর্কে কী নিশ্চয়তা আছে?

২৫. ভবিষ্যতের জন্য আমাদের কোন্‌ অপূর্ব দৃষ্টিভঙ্গি আছে?

২৬. ঈশ্বরের নতুন জগতে চিরকাল জীবিত থাকার চাবিকাঠিটি কী?

২৭. ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে অংশ গ্রহণ করতে আপনার কী করা উচিৎ?

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]

পার্থিব পরমদেশ পুনঃস্থাপন করার ঈশ্বরের উদ্দেশ্য খুব শীঘ্রই বাস্তবে রূপায়িত হবে