সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় ৭

প্রতিরক্ষামূলক শক্তি—“ঈশ্বর আমাদের পক্ষে আশ্রয়”

প্রতিরক্ষামূলক শক্তি—“ঈশ্বর আমাদের পক্ষে আশ্রয়”

১, ২. সাধারণ কাল পূর্ব ১৫১৩ সালে ইস্রায়েলীয়রা যখন সীনয় অঞ্চলে প্রবেশ করেছিল, তখন তারা কোন বিপদের মধ্যে ছিল এবং যিহোবা কীভাবে তাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন?

সাধারণ কাল পূর্ব ১৫১৩ সালের গোড়ার দিকে ইস্রায়েলীয়রা যখন সীনয় অঞ্চলে প্রবেশ করেছিল, তখন তারা বিপদের মধ্যে ছিল। তাদের সামনে ভয়ংকর এক সুদীর্ঘ পথ ছিল, “বিষধর সাপ ও বৃশ্চিকে পূর্ণ বিশাল ও ভয়াবহ প্রান্তরের” মধ্যে দিয়ে এক যাত্রা। (দ্বিতীয় বিবরণ ৮:১৫, দ্যা নিউ ইংলিশ বাইবেল) এ ছাড়া, তারা শত্রুতাপূর্ণ জাতিগুলোর আক্রমণের হুমকির মুখোমুখিও হয়েছিল। যিহোবা তাঁর লোকেদের এই পরিস্থিতিতে নিয়ে এসেছিলেন। তাদের ঈশ্বর হিসেবে, তিনি কি তাদের রক্ষা করতে পারবেন?

যিহোবার বাক্যগুলো অত্যন্ত আশ্বাসদায়ক ছিল: “আমি মিস্রীয়দের প্রতি যাহা করিয়াছি, এবং যেমন ঈগল পক্ষী পক্ষ দ্বারা, তেমনি তোমাদিগকে বহিয়া আপনার নিকটে আনিয়াছি, তাহা তোমরা দেখিয়াছ।” (যাত্রাপুস্তক ১৯:৪) যিহোবা তাঁর লোকেদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, তিনি তাদেরকে মিশরীয়দের কাছ থেকে উদ্ধার করেছিলেন, রূপকভাবে বলতে গেলে, যেন ঈগল পাখিদের ব্যবহার করে তাদের নিরাপদ স্থানে বহন করে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু ‘ঈগল পক্ষীর পক্ষ’ কেন ঐশিক প্রতিরক্ষাকে উপযুক্তভাবে বর্ণনা করে সেটার আরও অন্যান্য কারণ রয়েছে।

৩. কেন ‘ঈগল পক্ষীর পক্ষ’ উপযুক্তভাবে ঐশিক প্রতিরক্ষাকে বর্ণনা করে?

ঈগল পাখিরা তাদের বিরাট, বলিষ্ঠ পাখাগুলো শুধু উঁচুতে ওড়ার জন্য ব্যবহার করে না। দিনের বেলায় উত্তাপের সময়ে, মা ঈগল তপ্ত সূর্যের তাপ থেকে তার কচি বাচ্চাদের রক্ষা করতে এক প্রতিরক্ষামূলক ছাতা বানানোর জন্য পাখাগুলো ধনুকের মতো বাঁকা করে—যা হয়তো ২ মিটার প্রসারিত হতে পারে। আবার অন্য সময়ে সে তার বাচ্চাদের ঠাণ্ডা বাতাস থেকে রক্ষা করার জন্য পাখা দিয়ে ঘিরে রাখে। ঠিক যেমন ঈগল পাখি তার বাচ্চাদের রক্ষা করে, তেমনই যিহোবা অনভিজ্ঞ ইস্রায়েল জাতিকে আগলে রেখেছিলেন এবং প্রতিরক্ষা করেছিলেন। প্রান্তরে, তাঁর লোকেরা যতক্ষণ পর্যন্ত বিশ্বস্ত ছিল, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা তাঁর শক্তিশালী পাখার নিচে আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৯-১১; গীতসংহিতা ৩৬:৭) কিন্তু, আজকে কি আমরা ন্যায্যভাবে ঈশ্বরের প্রতিরক্ষা আশা করতে পারি?

ঐশিক প্রতিরক্ষার প্রতিজ্ঞা

৪, ৫. ঈশ্বরের প্রতিরক্ষা করার প্রতিজ্ঞায় আমরা কেন পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি?

যিহোবা নিশ্চিতভাবে তাঁর দাসদের রক্ষা করতে পারেন। তিনি “সর্ব্বশক্তিমান্‌ ঈশ্বর”—যে-উপাধিটি ইঙ্গিত করে যে, তিনি অপ্রতিরোধ্য শক্তির অধিকারী। (আদিপুস্তক ১৭:১) এক অপ্রতিরোধ্য জোয়ারভাটার মতোই যিহোবার প্রযুক্ত শক্তিকে ব্যাহত করা যায় না। যেহেতু তিনি তাঁর ইচ্ছানুযায়ী সবকিছু করতে পারেন, তাই আমরা হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারি, ‘এটা কি যিহোবার ইচ্ছা যে তিনি তাঁর লোকেদের রক্ষা করার জন্য তাঁর শক্তি ব্যবহার করবেন?’

এক কথায় উত্তর হল হ্যাঁ! যিহোবা আমাদের আশ্বাস দেন যে তিনি তাঁর লোকেদের রক্ষা করবেন। গীতসংহিতা ৪৬:১ পদ বলে, “ঈশ্বর আমাদের পক্ষে আশ্রয় ও বল। তিনি সঙ্কটকালে অতি সুপ্রাপ্য সহায়।” যেহেতু ঈশ্বর “মিথ্যাকথনে অসমর্থ,” তাই আমরা তাঁর প্রতিরক্ষা করার প্রতিজ্ঞায় সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি। (তীত ১:২) যিহোবা তাঁর প্রতিরক্ষামূলক যত্নকে বর্ণনা করার জন্য যে-প্রাণবন্ত উদাহরণগুলো ব্যবহার করেছেন, আসুন আমরা সেগুলোর কয়েকটা বিবেচনা করি।

৬, ৭. (ক) বাইবেলের সময়ের মেষপালক তার মেষের জন্য কোন সুরক্ষা জোগাত? (খ) যিহোবার যে তাঁর মেষদের রক্ষা করার ও যত্ন নেওয়ার আন্তরিক ইচ্ছা রয়েছে, সেটাকে বাইবেল কীভাবে উদাহরণের সাহায্যে বর্ণনা করে?

যিহোবা হলেন একজন মেষপালক আর “আমরা তাঁহার প্রজা ও তাঁহার চরাণির মেষ।” (গীতসংহিতা ২৩:১; ১০০:৩) গৃহপালিত মেষের মতো অসহায় খুব কম পশুই রয়েছে। বাইবেলের সময়ের মেষপালককে তার মেষদের সিংহ, নেকড়ে, ভল্লুক ও সেইসঙ্গে চোরদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সাহসী হতে হতো। (১ শমূয়েল ১৭:৩৪, ৩৫; যোহন ১০:১২, ১৩) কিন্তু এমন সময়ও ছিল যখন মেষদের রক্ষা করার জন্য কোমল হতে হতো। একটা মেষ যখন খোঁয়াড় থেকে দূরে বাচ্চা প্রসব করত, তখন পালের দেখাশোনাকারী মেষপালককে মা মেষের অসহায় মুহূর্তে যত্ন নিতে হতো ও তারপর অরক্ষিত মেষশাবককে তুলে খোঁয়াড়ে বয়ে নিয়ে যেতে হতো।

‘তিনি কোলে করিয়া [তাহাদের] বহন করিবেন’

নিজেকে একজন মেষপালকের সঙ্গে তুলনা করে, যিহোবা আমাদের রক্ষা করার জন্য তাঁর যে আন্তরিক ইচ্ছা রয়েছে, সেই সম্বন্ধে আশ্বাস দেন। (যিহিষ্কেল ৩৪:১১-১৬) যিশাইয় ৪০:১১ পদে দেওয়া যিহোবার বর্ণনার কথা স্মরণ করুন, যা এই বইয়ের ২য় অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে: “তিনি মেষপালকের ন্যায় আপন পাল চরাইবেন, তিনি শাবকদিগকে বাহুতে সংগ্রহ করিবেন, এবং কোলে করিয়া বহন করিবেন।” ছোট্ট মেষশাবক কীভাবে মেষপালকের “কোলে”—তার ওপরের কাপড়ের ভাঁজে ওঠে? মেষটা হয়তো পালকের কাছে আসে, এমনকি তার পায়ে মৃদু ঠেলা দেয়। তবে, মেষপালককেই নিচু হয়ে মেষকে তুলতে হয় এবং আলতোভাবে এটাকে তার কোলের নিরাপদ জায়গায় রাখতে হয়। আমাদের আগলে রাখতে ও রক্ষা করতে আমাদের মহান মেষপালক যে ইচ্ছুক, সেটার কী এক কোমল চিত্র!

৮. (ক) ঈশ্বরের প্রতিরক্ষা করার প্রতিজ্ঞা কাদের প্রতি করা হয়েছে আর হিতোপদেশ ১৮:১০ পদে এটা কীভাবে ইঙ্গিত করা আছে? (খ) ঈশ্বরের নামে আশ্রয় খোঁজার সঙ্গে কী অন্তর্ভুক্ত?

ঈশ্বরের প্রতিরক্ষা করার প্রতিজ্ঞা শর্তসাপেক্ষ—এটা শুধু তারাই অভিজ্ঞতা করে যারা তাঁর নিকটবর্তী হয়। হিতোপদেশ ১৮:১০ পদ বলে: “সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] নাম দৃঢ় দুর্গ। ধার্ম্মিক তাহারই মধ্যে পলাইয়া রক্ষা পায়।” বাইবেলের সময়ে, নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য প্রান্তরে কখনও কখনও দুর্গ নির্মাণ করা হতো। তবে এইরকম একটা দুর্গে নিরাপত্তা খুঁজে পাওয়ার জন্য পালিয়ে আসা নির্ভর করত তার ওপর, যিনি বিপদে পড়েছেন। ঈশ্বরের নামে আশ্রয় খোঁজার বিষয়টাও একই। এটা শুধু ঈশ্বরের নাম বার বার বলার চেয়ে আরও বেশি কিছুকে অন্তর্ভুক্ত করে; ঐশিক নাম কোনো জাদুমন্ত্র নয়। বরং, আমাদের সেই নাম ধারণকারীকে জানতে ও তাঁর ওপর নির্ভর করতে এবং তাঁর ধার্মিক মানগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করতে হবে। যিহোবা আমাদের এই আশ্বাস দিয়ে কতই না দয়া দেখিয়েছেন যে আমরা যদি বিশ্বাস নিয়ে তাঁর প্রতি ফিরি, তা হলে তিনি আমাদের জন্য প্রতিরক্ষামূলক এক দুর্গ হবেন!

‘আমাদের ঈশ্বর আমাদিগকে উদ্ধার করিতে সমর্থ আছেন’

৯. কীভাবে যিহোবা শুধু প্রতিরক্ষার প্রতিজ্ঞা করার চেয়ে আরও বেশি কিছু করেছেন?

যিহোবা শুধু প্রতিরক্ষার প্রতিজ্ঞা করার চেয়ে আরও বেশি কিছু করেছেন। বাইবেলের সময়ে, তিনি অলৌকিকভাবে দেখিয়েছিলেন যে তিনি তাঁর লোকেদের রক্ষা করতে সমর্থ। ইস্রায়েলের ইতিহাসে, যিহোবার পরাক্রান্ত ‘হস্ত’ প্রায়ই শক্তিশালী শত্রুদের নিয়ন্ত্রণ করেছিল। (যাত্রাপুস্তক ৭:৪) কিন্তু, যিহোবা তাঁর প্রতিরক্ষামূলক শক্তি বিভিন্ন ব্যক্তিবিশেষের জন্যও ব্যবহার করেছিলেন।

১০, ১১. যিহোবা বিভিন্ন ব্যক্তিবিশেষের জন্য যেভাবে তাঁর প্রতিরক্ষামূলক শক্তি ব্যবহার করেছিলেন, তা বাইবেলের কোন উদাহরণগুলো দেখায়?

১০ তিন জন ইব্রীয় যুবক—শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্‌নগো—যখন রাজা নবূখদ্‌নিৎসরের সোনার প্রতিমাকে প্রণাম করতে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তখন ক্রুদ্ধ রাজা তাদেরকে প্রচণ্ড উত্তপ্ত অগ্নিকুণ্ডে ফেলে দেওয়ার ভয় দেখিয়েছিলেন। পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাবান সম্রাট নবূখদ্‌নিৎসর উপহাস করে বলেছিলেন, “এমন দেবতা কে যে, আমার হস্ত হইতে তোমাদিগকে উদ্ধার করিবে?” (দানিয়েল ৩:১৫) তিন জন যুবকের তাদেরকে রক্ষা করার যে-শক্তি তাদের ঈশ্বরের রয়েছে, তাতে পূর্ণ আস্থা ছিল কিন্তু তারা ধরে নেয়নি যে তিনি তা করবেনই। তাই, তারা উত্তর দিয়েছিল: “যদি হয়, আমরা যাঁহার সেবা করি, আমাদের সেই ঈশ্বর আমাদিগকে . . . উদ্ধার করিতে সমর্থ আছেন।” (দানিয়েল ৩:১৭) বাস্তবিকই, সেই অগ্নিকুণ্ড এমনকি যখন স্বাভাবিকের চেয়ে সাত গুণ বেশি উত্তপ্ত ছিল, তখনও তা তাদের সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার সৃষ্টি করেনি। তিনি তাদের রক্ষা করেছিলেন আর রাজা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন: “এ প্রকার উদ্ধার করিতে সমর্থ আর কোন দেবতা নাই।”—দানিয়েল ৩:২৯.

১১ যিহোবা যখন তাঁর একজাত পুত্রের জীবন যিহুদি কুমারী মরিয়মের গর্ভে স্থানান্তরিত করেছিলেন, তখনও তিনি তাঁর প্রতিরক্ষামূলক শক্তির প্রকৃতই এক উল্লেখযোগ্য নমুনা দেখিয়েছিলেন। একজন দূত মরিয়মকে বলেছিলেন যে তিনি ‘গর্ব্ভবতী হইয়া পুত্ত্র প্রসব করিবেন।’ দূত ব্যাখ্যা করেছিলেন: “পবিত্র আত্মা তোমার উপরে আসিবেন, এবং পরাৎপরের শক্তি তোমার উপরে ছায়া করিবে।” (লূক ১:৩১, ৩৫) আপাতদৃষ্টিতে, ঈশ্বরের পুত্র আর কখনও এইরকম আশঙ্কাজনক অবস্থার মধ্যে ছিলেন না। মানব মায়ের পাপ ও অসিদ্ধতা কি ভ্রূণকে কলঙ্কিত করবে? শয়তান কি সেই পুত্র জন্ম নেওয়ার আগেই তাঁকে আঘাত করতে বা হত্যা করতে সমর্থ হবে? অসম্ভব! বস্তুত, যিহোবা মরিয়মের চারিদিকে এক প্রতিরক্ষামূলক দেয়াল গড়ে তুলেছিলেন যাতে কোনো কিছুই—কোনো অসিদ্ধতা, ক্ষতিকর শক্তি, হত্যাকারী মানুষ বা কোনো মন্দ দূত—গর্ভধারণের মুহূর্ত থেকে বাড়ন্ত ভ্রূণের ক্ষতি করতে না পারে। যিহোবা ক্রমাগত যিশুকে তাঁর ছোটবেলায় রক্ষা করে গিয়েছিলেন। (মথি ২:১-১৫) ঈশ্বরের নিরূপিত সময় পর্যন্ত, তাঁর প্রিয় পুত্র সমস্ত আক্রমণের ঊর্ধ্বে ছিলেন।

১২. বাইবেলের সময়ে যিহোবা কেন কিছু ব্যক্তিবিশেষকে অলৌকিকভাবে রক্ষা করেছিলেন?

১২ কেন যিহোবা কিছু ব্যক্তিবিশেষকে এইরকম অলৌকিক উপায়ে রক্ষা করেছিলেন? অনেক ক্ষেত্রে, যিহোবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু রক্ষা করার জন্য ব্যক্তিবিশেষকে রক্ষা করেছিলেন আর তা হল তাঁর উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণতা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণতার জন্য শিশু যিশুর বেঁচে থাকার দরকার ছিল, যে-উদ্দেশ্য শেষ পর্যন্ত সমস্ত মানবজাতির উপকার করবে। প্রতিরক্ষামূলক শক্তির অনেক প্রদর্শনের নথি অনুপ্রাণিত শাস্ত্রের অংশ, যা “আমাদের শিক্ষার নিমিত্তে লিখিত হইয়াছিল, যেন শাস্ত্রমূলক ধৈর্য্য ও সান্ত্বনা দ্বারা আমরা প্রত্যাশা প্রাপ্ত হই।” (রোমীয় ১৫:৪) হ্যাঁ, এই উদাহরণগুলো আমাদের সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ওপর আমাদের বিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করে। কিন্তু আজকে আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে কোন প্রতিরক্ষা আশা করতে পারি?

ঐশিক প্রতিরক্ষার মানে যা নয়

১৩. যিহোবা কি আমাদের জন্য অলৌকিক কাজ করতে বাধ্য? ব্যাখ্যা করুন।

১৩ ঐশিক প্রতিরক্ষার প্রতিজ্ঞার মানে এই নয় যে, যিহোবা আমাদের জন্য অলৌকিক কাজ করতে বাধ্য। না, আমাদের ঈশ্বর এই পুরনো ব্যবস্থায় আমাদের জন্য এক সমস্যামুক্ত জীবনের নিশ্চয়তা দেন না। যিহোবার অনেক বিশ্বস্ত দাস কঠিন বিপদের মুখোমুখি হন, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে দরিদ্রতা, যুদ্ধ, অসুস্থতা ও মৃত্যু। যিশু তাঁর শিষ্যদের স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে তাদের বিশ্বাসের জন্য তাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে হয়তো মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে। সেইজন্য যিশু শেষ পর্যন্ত স্থির থাকার প্রয়োজনের ওপর জোর দিয়েছিলেন। (মথি ২৪:৯, ১৩) যদি সমস্ত ক্ষেত্রে যিহোবা অলৌকিকভাবে উদ্ধার করার জন্য তাঁর শক্তি ব্যবহার করতেন, তা হলে শয়তান হয়তো যিহোবাকে উপহাস করার ও ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভক্তি আদৌ অকৃত্রিম কি না, সেই বিষয়ে সন্দেহ করার ভিত্তি পেত।—ইয়োব ১:৯, ১০.

১৪. কোন উদাহরণগুলো দেখায় যে, যিহোবা সবসময় তাঁর সমস্ত দাসকে একইরকমভাবে রক্ষা করেন না?

১৪ এমনকি বাইবেলের সময়েও, যিহোবা তাঁর প্রত্যেক দাসকে অকালমৃত্যু থেকে বাঁচানোর জন্য তাঁর প্রতিরক্ষামূলক শক্তি ব্যবহার করেননি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, সা.কা. প্রায় ৪৪ সালে প্রেরিত যাকোব হেরোদের দ্বারা নিহত হয়েছিলেন কিন্তু এর কিছুদিন পর পিতর “হেরোদের হস্ত হইতে” রক্ষা পেয়েছিলেন। (প্রেরিত ১২:১-১১) আর যাকোবের ভাই যোহন, পিতর ও যাকোবের চেয়ে আরও বেশি দিন বেঁচে ছিলেন। স্পষ্টতই, আমরা আমাদের ঈশ্বরের কাছ থেকে আশা করতে পারি না যে, তিনি তাঁর সমস্ত দাসকে একইরকমভাবে রক্ষা করবেন। এ ছাড়া, আমাদের সকলের প্রতি “কাল ও দৈব” ঘটে। (উপদেশক ৯:১১) তা হলে, আজকে কীভাবে যিহোবা আমাদের রক্ষা করেন?

যিহোবা শারীরিক সুরক্ষা জোগান

১৫, ১৬. (ক) কোন প্রমাণ রয়েছে যে, যিহোবা তাঁর উপাসকদের দলগতভাবে শারীরিক সুরক্ষা জুগিয়েছেন? (খ) আমরা কেন নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা এখন ও “মহাক্লেশের” সময় তাঁর দাসদের রক্ষা করবেন?

১৫ প্রথমে, শারীরিক সুরক্ষার বিষয়টা বিবেচনা করুন। যিহোবার উপাসক হিসেবে, আমরা দলগতভাবে এইরকম প্রতিরক্ষা আশা করতে পারি। অন্যথায়, আমরা শয়তানের সহজ শিকার হতাম। এই বিষয়টা একটু ভেবে দেখুন: “এ জগতের অধিপতি” শয়তান সত্য উপাসনাকে নির্মূল করার চেয়ে আর কোনো কিছুতেই এত বেশি আনন্দ পাবে না। (যোহন ১২:৩১; প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭) পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী কিছু সরকার আমাদের প্রচার কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এবং আমাদের সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। তবুও, যিহোবার লোকেরা অটল রয়েছে এবং জোরকদমে প্রচার করে চলেছে! শক্তিশালী জাতিগুলো কেন তুলনামূলকভাবে ছোট ও আপাতদৃষ্টিতে অরক্ষিত বলে মনে হওয়া খ্রিস্টীয় দলের কাজ বন্ধ করতে সমর্থ হয়নি? কারণ যিহোবা তাঁর শক্তিশালী পক্ষের দ্বারা আমাদের আগলে রেখেছেন!—গীতসংহিতা ১৭:৭, ৮.

১৬ আসন্ন “মহাক্লেশের” সময় শারীরিক সুরক্ষা সম্বন্ধে কী বলা যায়? ঈশ্বরের বিচার দেখে আমাদের ভয় পাওয়ার দরকার নেই। কারণ “প্রভু [“যিহোবা,” NW] ভক্তদিগকে পরীক্ষা হইতে উদ্ধার করিতে, এবং অধার্ম্মিকদিগকে দণ্ডাধীনে বিচারদিনের জন্য রাখিতে জানেন।” (প্রকাশিত বাক্য ৭:১৪; ২ পিতর ২:৯) সেই সময় পর্যন্ত, আমরা দুটো বিষয়ে সবসময় নিশ্চিত থাকতে পারি। প্রথমত, যিহোবা তাঁর অনুগত দাসদের কখনোই পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হতে দেবেন না। দ্বিতীয়ত, তিনি নীতিনিষ্ঠা রক্ষাকারীদের তাঁর ধার্মিক নতুন জগতে অনন্তজীবন দেবেন—দরকার হলে, পুনরুত্থানের মাধ্যমে তা দেবেন। যারা মারা যায়, তাদের জন্য ঈশ্বরের স্মরণে থাকার চেয়ে নিরাপদ আর কোনো স্থান নেই।—যোহন ৫:২৮, ২৯.

১৭. যিহোবা কীভাবে তাঁর বাক্যের মাধ্যমে আমাদের সুরক্ষা জোগান?

১৭ এমনকি এখনও, যিহোবা তাঁর জীবন্ত ‘বাক্যের’ মাধ্যমে আমাদের রক্ষা করেন, যেটির হৃদয়কে আরোগ্য করার ও জীবনকে নতুন করে গঠন করার প্রেরণাদায়ক শক্তি রয়েছে। (ইব্রীয় ৪:১২) এর নীতিগুলো প্রয়োগ করে, আমরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে পারি। যিশাইয় ৪৮:১৭ পদ বলে, “আমি সদাপ্রভু . . . তোমার উপকারজনক শিক্ষা দান করি।” কোনো সন্দেহ নেই যে, ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করা আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে ও আয়ু বাড়াতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ব্যভিচার থেকে পৃথক থাকা ও কলুষতা থেকে নিজেদের শুচি রাখার বিষয়ে বাইবেলের পরামর্শ কাজে লাগাই বলে আমরা অশুচি ও ক্ষতিকর অভ্যাসগুলো এড়িয়ে চলি, যেগুলো অনেক ভক্তিহীন লোকের জীবনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আসে। (প্রেরিত ১৫:২৯; ২ করিন্থীয় ৭:১) ঈশ্বরের বাক্য যে-সুরক্ষা জোগায়, সেইজন্য আমরা কতই না কৃতজ্ঞ!

যিহোবা আমাদের আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সুরক্ষা জোগান

১৮. যিহোবা আমাদের জন্য কোন আধ্যাত্মিক সুরক্ষা জোগান?

১৮ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে, যিহোবা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে আমাদের সুরক্ষা জোগান। আমাদের প্রেমময় ঈশ্বর পরীক্ষা সহ্য করার ও তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রক্ষা করার জন্য আমাদের যা কিছু দরকার, সেগুলোর দ্বারা আমাদের সুসজ্জিত করে আধ্যাত্মিক ক্ষতি থেকে আমাদের রক্ষা করেন। এভাবে যিহোবা শুধু অল্প কিছু বছরের জন্য নয় বরং অনন্তকালের জন্য আমাদের জীবনকে সংরক্ষণ করতে কাজ করেন। ঈশ্বরের কিছু ব্যবস্থার কথা বিবেচনা করুন, যা আমাদের আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে রক্ষা করতে পারে।

১৯. আমরা যেকোনো পরীক্ষার মুখোমুখি হই না কেন, যিহোবার আত্মা কীভাবে তা মোকাবিলা করার জন্য সাহায্য করতে পারে?

১৯ যিহোবা হলেন “প্রার্থনা-শ্রবণকারী।” (গীতসংহিতা ৬৫:২) যখন জীবনের চাপগুলোকে অতিরিক্ত বলে মনে হয়, তখন তাঁর কাছে আমাদের হৃদয় উজাড় করে দেওয়া প্রচুর স্বস্তি নিয়ে আসতে পারে। (ফিলিপীয় ৪:৬, ৭) তিনি হয়তো অলৌকিকভাবে আমাদের পরীক্ষাগুলো সরিয়ে দেবেন না কিন্তু আমাদের আন্তরিক প্রার্থনার প্রতি সাড়া দিয়ে, তিনি সেগুলো মোকাবিলা করার জন্য আমাদের প্রজ্ঞা দিতে পারেন। (যাকোব ১:৫, ৬) এর চেয়েও বড় কথা হল, যারা তাঁর কাছে চায় তাদের যিহোবা পবিত্র আত্মা দেন। (লূক ১১:১৩) সেই শক্তিশালী আত্মা যেকোনো পরীক্ষা বা সমস্যার মুখোমুখি আমরা হই না কেন, তা মোকাবিলা করার জন্য আমাদের সাহায্য করতে পারে। এটা আমাদের “পরাক্রমের উৎকর্ষ” দিয়ে পরিপূর্ণ করতে পারে, যা আমাদেরকে ততক্ষণ পর্যন্ত স্থির থাকতে সাহায্য করতে পারে যতক্ষণ না যিহোবা অতি নিকটবর্তী নতুন জগতে সমস্ত বেদনাদায়ক সমস্যাকে সরিয়ে দেবেন।—২ করিন্থীয় ৪:৭.

২০. যিহোবার প্রতিরক্ষামূলক শক্তি কীভাবে আমাদের সহউপাসকদের মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হতে পারে?

২০ মাঝে মাঝে, যিহোবার প্রতিরক্ষামূলক শক্তি আমাদের সহউপাসকদের মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হতে পারে। যিহোবা তাঁর লোকেদের এক বিশ্বব্যাপী ‘ভ্রাতৃসমাজের’ প্রতি আকর্ষণ করেছেন। (১ পিতর ২:১৭; যোহন ৬:৪৪) সেই ভ্রাতৃসমাজের প্রেমময় পরিবেশে, আমরা লোকেদের ভাল কিছু করার জন্য প্রভাবিত করতে ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার শক্তির জীবন্ত প্রমাণ দেখি। সেই আত্মা আমাদের মধ্যে ফল অর্থাৎ আকর্ষণীয় মূল্যবান গুণগুলো উৎপন্ন করে, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রেম, মাধুর্য্য ও মঙ্গলভাব। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) অতএব, আমরা যখন যন্ত্রণার মধ্যে থাকি আর একজন সহবিশ্বাসী উপকারী পরামর্শ দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেন বা প্রয়োজনীয় উৎসাহ দেন, তখন আমরা যিহোবাকে তাঁর প্রতিরক্ষামূলক যত্নের এইরকম অভিব্যক্তিগুলোর জন্য ধন্যবাদ দিতে পারি।

২১. (ক) ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ মাধ্যমে যিহোবা কোন সময়োপযোগী আধ্যাত্মিক খাবার জোগান? (খ) আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে রক্ষা করার জন্য যিহোবার ব্যবস্থাগুলো থেকে আপনি ব্যক্তিগতভাবে কীভাবে উপকার পেয়েছেন?

২১ যিহোবা আমাদের প্রতিরক্ষা করার জন্য আরও কিছু জোগান, যা হল সময়োপযোগী আধ্যাত্মিক খাবার। তাঁর বাক্য থেকে শক্তি গ্রহণ করতে সাহায্য করার জন্য যিহোবা আধ্যাত্মিক খাবার বিতরণ করতে ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসকে’ দায়িত্ব দিয়েছেন। বিশ্বস্ত দাস আমাদের “উপযুক্ত সময়ে খাদ্য”—আমাদের যা দরকার ও যখন দরকার—জোগাতে ছাপানো প্রকাশনাদি ব্যবহার করে, যেগুলোর মধ্যে প্রহরীদুর্গ এবং সচেতন থাক! পত্রিকা ও সেইসঙ্গে সভা, অধিবেশন ও সম্মেলনগুলো রয়েছে। (মথি ২৪:৪৫) আপনি কি কখনও কোনো একটা খ্রিস্টীয় সভায়—মন্তব্যে, বক্তৃতায়, এমনকি প্রার্থনায়—এমন কিছু বলতে শুনেছেন, যা প্রয়োজনীয় শক্তি ও উৎসাহ জুগিয়েছিল? আমাদের কোনো একটা পত্রিকায় প্রকাশিত একটা নির্দিষ্ট প্রবন্ধ কি কখনও আপনার জীবনকে প্রভাবিত করেছে? মনে রাখবেন যে, যিহোবা এই সমস্ত ব্যবস্থাগুলো আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে রক্ষা করার জন্য দেন।

২২. যিহোবা কোন উপায়ে তাঁর শক্তি সবসময় ব্যবহার করেন আর কেন তা করা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক?

২২ যিহোবা নিশ্চিতভাবে “নিজ শরণাগত সকলের” ঢালস্বরূপ। (গীতসংহিতা ১৮:৩০) আমরা জানি যে, তিনি এখনই আমাদের সমস্ত দুর্দশা থেকে রক্ষা করার জন্য তাঁর শক্তি ব্যবহার করেন না। তবে, তিনি তাঁর উদ্দেশ্য যাতে সম্পাদিত হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য সবসময় তাঁর প্রতিরক্ষামূলক শক্তি ব্যবহার করেন। আর তা করা অবশেষে তাঁর লোকদের জন্য মঙ্গলজনক হবে। আমরা যদি তাঁর নিকটবর্তী হই এবং তাঁর প্রেমে থাকি, তা হলে যিহোবা আমাদের এক অনন্তকালীন সিদ্ধ জীবন দেবেন। সেই প্রত্যাশার কথা মনে রেখে, আমরা যেন বাস্তবিকই এই বিধিব্যবস্থার যেকোনো কষ্টভোগকে “আপাততঃ . . . লঘুতর” বলে দেখি।—২ করিন্থীয় ৪:১৭.