সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় চোদ্দো

একসঙ্গে বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া

একসঙ্গে বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া

১, ২. (ক) বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোন পরিবর্তনগুলো ঘটে? (খ) বাইবেলের সময়ের ঈশ্বরভয়শীল পুরুষরা বৃদ্ধ বয়সে কীভাবে পরিতৃপ্তি লাভ করেছিল?

 আমাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক পরিবর্তন দেখা দেয়। শারীরিক দুর্বলতা আমাদের শক্তিকে হ্রাস করে দেয়। আয়নাতে তাকালে দেখা যায়, নতুন নতুন বলিরেখা পড়েছে আর ধীরে ধীরে চুল পেকে যাচ্ছে—এমনকি চুলও পড়ে যাচ্ছে। হয়তো আমাদের কিছু স্মরণশক্তিও লোপ পায়। সন্তানরা যখন বিয়ে করে ও সেইসঙ্গে নাতিনাতনি হয়, তখন নতুন নতুন সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কারো কারো ক্ষেত্রে, চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করার পর জীবনধারা পালটে যায়।

আসলে, বার্ধক্যের বছরগুলো কঠিন হতে পারে। (উপদেশক ১২:১-৮) তা সত্ত্বেও, বাইবেলের সময়কার ঈশ্বরের দাসদের কথা বিবেচনা করুন। যদিও তারা অবশেষে মারা গিয়েছিল কিন্তু তারা প্রজ্ঞা ও বুদ্ধি বা বোধগম্যতা লাভ করেছিল, যেগুলো বৃদ্ধ বয়সে তাদের জন্য পরিতৃপ্তি নিয়ে এসেছিল। (আদিপুস্তক ২৫:৮; ৩৫:২৯; ইয়োব ১২:১২; ৪২:১৭) কীভাবে তারা বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় আনন্দ বজায় রেখেছিল? নিশ্চিতভাবেই, সেই নীতিগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করার মাধ্যমে, যেগুলো আজকে আমরা বাইবেলে লিপিবদ্ধ রয়েছে বলে দেখতে পাই।—গীতসংহিতা ১১৯:১০৫; ২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭.

৩. বয়স্ক নারী ও পুরুষদের পৌল কোন পরামর্শ দিয়েছিলেন?

তীতের প্রতি লেখা চিঠিতে প্রেরিত পৌল সেই ব্যক্তিদের উপকারী নির্দেশনা দিয়েছিলেন, যাদের বয়স ধীরে ধীরে বাড়ছিল। তিনি লিখেছিলেন: “বৃদ্ধদিগকে বল, যেন তাঁহারা মিতাচারী, ধীর, সংযত [এবং] বিশ্বাসে, প্রেমে, ধৈর্য্যে নিরাময় হন। সেইরূপে প্রাচীনাদিগকে বল, যেন তাঁহারা আচার ব্যবহারে ভয়শীলা হন, অপবাদিকা কি বহুমদ্যের দাসী না হন, সুশিক্ষাদায়িনী হন।” (তীত ২:২, ৩) এই কথাগুলোতে মনোযোগ দেওয়া আপনাকে বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো মোকাবিলা করতে সাহায্য করতে পারে।

আপনার সন্তানদের স্বাধীনতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিন

৪, ৫. সন্তানরা যখন বাড়ি ত্যাগ করে, তখন অনেক বাবা-মা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় আর কীভাবে কেউ কেউ নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়?

ভূমিকা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া আবশ্যক। এটা কতই না সত্য বলে প্রমাণিত হয়, যখন প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানরা বাড়ি ত্যাগ করে অথবা বিয়ে করে! অনেক বাবা-মায়ের জন্য এটা হল প্রথম অনুস্মারক যে, তাদের বয়স বাড়ছে। যদিও তারা আনন্দিত যে, তাদের সন্তানরা প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে কিন্তু বাবা-মায়েরা প্রায়ই এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করে থাকে যে, স্বাধীনতার জন্য সন্তানদের প্রস্তুত করতে তারা তাদের যথাসাধ্য করতে পেরেছে কি না। আর তারা হয়তো সারা বাড়িতে তাদের অভাব বোধ করে থাকে।

এটা ঠিক যে, বাবা-মায়েরা সবসময়—এমনকি সন্তানরা বাড়ি ত্যাগ করার পরও—তাদের সন্তানদের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে চলে। “তারা যে ভাল আছে, এই বিষয়ে নিজেকে আশ্বস্ত করার জন্য আমি যদি তাদের কাছ থেকে প্রায়ই খবর পেতাম, তাহলে সেটা আমাকে আনন্দিত করত,” একজন মা বলেছিলেন। একজন বাবা বলেন: “আমাদের মেয়ে যখন বাড়ি ত্যাগ করেছিল, তখন তা অত্যন্ত কঠিন সময় ছিল। এটা আমাদের পরিবারের মধ্যে বিরাট শূন্যতা নিয়ে এসেছিল কারণ আমরা সবসময় সমস্ত কাজ একসঙ্গে করতাম।” কীভাবে এই বাবা-মা তাদের সন্তানদের অনুপস্থিতির সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করেছিল? অনেক ক্ষেত্রে, অন্য লোকেদের প্রতি চিন্তা দেখিয়ে এবং তাদেরকে সাহায্য করে।

৬. কী পারিবারিক সম্পর্কগুলোকে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে সাহায্য করে?

সন্তানরা যখন বিয়ে করে, তখন বাবা-মায়ের ভূমিকা পরিবর্তিত হয়ে যায়। আদিপুস্তক ২:২৪ পদ বলে: “মনুষ্য আপন পিতা মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে, এবং তাহারা একাঙ্গ হইবে।” মস্তকপদ ও সুশৃঙ্খলা সম্বন্ধে ঈশ্বরীয় নীতিগুলোকে মেনে নেওয়া বাবা-মাদেরকে বিভিন্ন বিষয় সঠিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে সাহায্য করবে।—১ করিন্থীয় ১১:৩; ১৪:৩৩, ৪০.

৭. একজন বাবা কোন উত্তম মনোভাব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করেছিলেন, যখন তার মেয়েরা বিয়ে করে বাড়ি ত্যাগ করেছিল?

এক দম্পতির দুজন মেয়ে বিয়ে করে অন্যত্র চলে যাওয়ার পর, সেই দম্পতি তাদের জীবনে শূন্যতা অনুভব করেছিল। প্রথম প্রথম, স্বামী তার মেয়ে-জামাইদের ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। কিন্তু, তিনি যখন মস্তকপদের নীতি নিয়ে চিন্তা করেছিলেন, তখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার মেয়েদের স্বামীরাই এখন থেকে তাদের নিজ নিজ পরিবারের দায়িত্ব বহন করে থাকে। তাই, তার মেয়েরা যখন কোনো উপদেশ চাইত, তখন তিনি জিজ্ঞেস করতেন যে, তাদের স্বামীরা এই বিষয়ে কী চিন্তা করেছে আর এরপর তিনি যতদূর সম্ভব তাদের সমর্থন করার বিষয়টা নিশ্চিত করতেন। তার মেয়ে-জামাইরা এখন তাকে একজন বন্ধু হিসেবে দেখে থাকে এবং তার পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করে।

৮, ৯. কীভাবে কিছু বাবা-মা তাদের প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের স্বাধীনতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে?

যদিও নববিবাহিত দম্পতিরা অশাস্ত্রীয় কোনোকিছু করছে না কিন্তু বাবা-মা যেটাকে সর্বোত্তম বলে মনে করে, তারা যদি তা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে কী? “আমরা সবসময় তাদেরকে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে সাহায্য করি,” বিবাহিত সন্তান রয়েছে এমন এক দম্পতি বলে, “কিন্তু আমরা যদি তাদের কোনো সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত না-ও হই, তবুও আমরা তা মেনে নিই এবং তাদেরকে সমর্থন করি ও উৎসাহ দিই।”

এশিয়ার কিছু দেশে, কিছু মা তাদের ছেলেদের স্বাধীনতার বিষয়টা মেনে নেওয়াকে বিশেষভাবে কঠিন বলে মনে করে। কিন্তু, তারা যদি খ্রিস্টীয় শৃঙ্খলা ও মস্তকপদকে সম্মান করে, তাহলে তারা দেখতে পায় যে তাদের ছেলের বউয়ের সঙ্গে দ্বন্দ্ব অনেকটা কমে গিয়েছে। একজন খ্রিস্টান মহিলা দেখেছেন যে, বাড়ি থেকে তাদের ছেলেদের প্রস্থান “দিন দিন বেড়ে চলা কৃতজ্ঞতার এক উৎস” হয়ে এসেছে। তিনি তাদের নতুন পরিবারকে সামলানোর বিষয়ে তাদের ক্ষমতা দেখে অভিভূত হয়েছেন। ফলস্বরূপ, এটা তার নিজের ও স্বামীর জন্য সেই দৈহিক এবং মানসিক বোঝাকে হালকা করে দিয়েছিল, যা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বহন করতে হয়।

আপনাদের বিবাহবন্ধনকে পুনরায় শক্তিশালী করা

১০, ১১. কোন শাস্ত্রীয় পরামর্শ লোকেদেরকে মাঝবয়সের কিছু ফাঁদ এড়াতে সাহায্য করবে?

১০ মাঝবয়সে গিয়ে পৌঁছালে লোকেরা বিভিন্ন উপায়ে প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে থাকে। কিছু পুরুষ নিজেদের কমবয়সি দেখানোর জন্য ভিন্ন ধরনের পোশাক-আশাক পরে থাকে। অনেক নারী রজোনিবৃত্তির কারণে ঘটিত পরিবর্তনগুলো নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে। দুঃখের বিষয় হল যে, মাঝবয়সি কিছু ব্যক্তি বিপরীত লিঙ্গের কমবয়সি ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রেমের ভান করে নিজেদের সাথিদের অসন্তুষ্ট করে ও তাদের মধ্যে ঈর্ষা জাগিয়ে তোলে। কিন্তু, ঈশ্বরভয়শীল বয়স্ক পুরুষরা “সংযমশীল” এবং তারা অনুপযুক্ত আকাঙ্ক্ষাগুলোকে দমন করে। (১ পিতর ৪:৭) একইভাবে, পরিপক্ব নারীরা তাদের স্বামীদের প্রতি প্রেম ও যিহোবাকে খুশি করার আকাঙ্ক্ষার কারণে তাদের বিয়ের দৃঢ়তা বজায় রাখার জন্য কাজ করে।

১১ অনুপ্রাণিত হয়ে রাজা লমূয়েল সেই ‘গুণবতী স্ত্রীর’ প্রতি করা প্রশংসা লিপিবদ্ধ করেছেন, যিনি তার স্বামীকে “জীবনের সমস্ত দিন . . . উপকার করেন, অপকার করেন না।” একজন খ্রিস্টান স্বামী, তার স্ত্রী মাঝবয়সে আসা যেকোনো আবেগগত অস্থিরতার সঙ্গে যেভাবে মোকাবিলা করার চেষ্টা করেন, তা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হবেন না। তার প্রেম তাকে ‘স্ত্রীর প্রশংসা করিতে’ অনুপ্রাণিত করবে।—হিতোপদেশ ৩১:১০, ১২, ২৮.

১২. বছর গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দম্পতিরা কীভাবে পরস্পরের সান্নিধ্যে আসতে পারে?

১২ সন্তান লালনপালনের ব্যস্ত বছরগুলোতে, আপনারা দুজনেই হয়তো আপনাদের সন্তানদের চাহিদাগুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়ার জন্য আনন্দের সঙ্গে আপনাদের ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষাগুলোকে বাদ দিয়েছিলেন। তাদের প্রস্থানের পর, এখন আবার আপনাদের বিবাহিত জীবনের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার সময়। “আমার মেয়েরা যখন বাড়ি ত্যাগ করেছিল, তখন আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে পুনরায় আগের মতো করে অন্তরঙ্গভাবে মেলামেশা করতে শুরু করি,” একজন স্বামী বলেন। আরেকজন স্বামী বলেন: “আমরা পরস্পরের স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখি এবং পরস্পরকে ব্যায়াম করার কথা মনে করিয়ে দিই।” তারা যেন একাকিত্ব বোধ না করে, সেইজন্য তিনি ও তার স্ত্রী মণ্ডলীর অন্য সদস্যের প্রতি আতিথেয়তা দেখান। হ্যাঁ, অন্যদের প্রতি আগ্রহ দেখানো আশীর্বাদ নিয়ে আসে। অধিকন্তু, এটা যিহোবাকে প্রীত বা খুশি করে।—ফিলিপীয় ২:৪; ইব্রীয় ১৩:২, ১৬.

১৩. কোনো দম্পতির একত্রে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খোলাখুলি মনোভাব ও অকপটতা কোন ভূমিকা পালন করে?

১৩ আপনার ও আপনার সাথির মধ্যে ভাববিনিময়ের অভাব ঘটতে দেবেন না। দুজনে খোলাখুলিভাবে কথা বলুন। (হিতোপদেশ ১৭:২৭) “যত্ন নেওয়ার ও বিবেচনা দেখানোর মাধ্যমে আমরা পরস্পরের প্রতি আমাদের বোধগম্যতাকে গভীর করি,” একজন স্বামী মন্তব্য করেন। তার স্ত্রী একমত হয়ে বলেন: “বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা একসঙ্গে চা খাওয়া, কথাবার্তা বলা ও পরস্পরকে সহযোগিতা করা উপভোগ করছি।” আপনারা যদি খোলাখুলি মনোভাবাপন্ন ও অকপট হন, তাহলে তা আপনাদের বিবাহবন্ধনকে মজবুত করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে, এটাকে সেই স্থিরতা দান করে, যা বিয়েতে ভাঙন সৃষ্টিকারী শয়তানের আক্রমণগুলোকে ব্যাহত করবে।

আপনার নাতিনাতনিদের সঙ্গে আনন্দ করুন

১৪. তীমথিয় একজন খ্রিস্টান হিসেবে বেড়ে ওঠার সময়, তার দিদিমা স্পষ্টতই কোন ভূমিকা পালন করেছিলেন?

১৪ নাতিনাতনিরা হল বয়স্ক লোকেদের “মুকুট।” (হিতোপদেশ ১৭:৬) নাতিনাতনিদের সাহচর্য সত্যিই আনন্দদায়ক—প্রাণবন্ত ও সতেজতাদায়ক—হতে পারে। বাইবেল একজন দিদিমা লোয়ীর প্রশংসা করে, যিনি তার মেয়ে উনীকীর সঙ্গে তার অল্পবয়সি নাতি তীমথিয়ের কাছে তাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে জানিয়েছিলেন। অল্পবয়সি তীমথিয় এই বিষয়টা জেনে বড় হয়েছিলেন যে, তার মা ও দিদিমা উভয়েই বাইবেলের সত্যকে মূল্যবান বলে গণ্য করে।—২ তীমথিয় ১:৫; ৩:১৪, ১৫.

১৫. নাতিনাতনিদের বিষয়ে ঠাকুরদাদা-ঠাকুরমা বা দাদু-দিদিমা কোন মূল্যবান অবদান রাখতে পারে কিন্তু তাদের কী এড়িয়ে চলা উচিত?

১৫ এই বিশেষ ক্ষেত্রটাতেই ঠাকুরদাদা-ঠাকুরমা অথবা দাদু-দিদিমা সবচেয়ে মূল্যবান অবদান রাখতে পারে। ঠাকুরদাদা-ঠাকুরমা অথবা দাদু-দিদিমারা, আপনারা ইতিমধ্যেই আপনাদের সন্তানদেরকে যিহোবার উদ্দেশ্য সম্বন্ধীয় জ্ঞান জানিয়েছেন। এখন আপনারা আরেকটা প্রজন্মকেও একই বিষয় জানাতে পারেন! অনেক অল্পবয়সি ছেলে-মেয়ে তাদের ঠাকুরদাদা-ঠাকুরমা অথবা দাদু-দিদিমার কাছ থেকে বাইবেলের গল্পগুলো শুনে রোমাঞ্চিত হয়। অবশ্য, আপনারা সন্তানদের মধ্যে বাইবেলের সত্য গেঁথে দেওয়ার ব্যাপারে বাবার দায়িত্বটা নিয়ে নেবেন না। (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৭) এর পরিবর্তে, পরিপূরক হোন। আপনাদের প্রার্থনা যেন গীতরচকের মতো হয়: “হে ঈশ্বর, বৃদ্ধ বয়স ও পক্বকেশের কাল পর্য্যন্তও আমাকে পরিত্যাগ করিও না, যাবৎ আমি এই বর্ত্তমান লোকদিগকে তোমার বাহুবল, ভাবী লোক সকলকে তোমার পরাক্রম, জ্ঞাত না করি।”—গীতসংহিতা ৭১:১৮; ৭৮:৫, ৬.

১৬. কীভাবে ঠাকুরদাদা-ঠাকুরমা বা দাদু-দিদিমা তাদের পরিবারে উদ্ভূত চাপের কারণ হয়ে ওঠা এড়াতে পারে?

১৬ দুঃখের বিষয় যে, কিছু ঠাকুরদাদা-ঠাকুরমা বা দাদু-দিদিমা ছোটো ছেলে-মেয়েদের এতটাই প্রশ্রয় দেয় যে, তা তাদের নিজেদের ও তাদের প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি করে। কিন্তু, আপনার আন্তরিক দয়া হয়তো আপনার নাতিনাতনিদের পক্ষে সেই সময় আপনার ওপর আস্থা রাখাকে সহজ করে দিতে পারে, যখন তারা তাদের বাবা-মায়ের কাছে বিভিন্ন বিষয় প্রকাশ করতে চায় না। মাঝে মাঝে অল্পবয়সিরা আশা করে যে, তাদের প্রশ্রয়ী ঠাকুরদাদা-ঠাকুরমা বা দাদু-দিদিমা তাদের বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে তাদের পক্ষ নেবে। তখন কী করা যায়? তখন প্রজ্ঞা ব্যবহার করুন এবং আপনার নাতিনাতনিদেরকে তাদের বাবা-মায়ের কাছে সবকিছু খুলে বলার জন্য উৎসাহিত করুন। আপনারা ব্যাখ্যা করতে পারেন যে, তা যিহোবাকে খুশি করে। (ইফিষীয় ৬:১-৩) যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে আপনারা হয়তো আগে থেকেই নাতিনাতনিদের সমস্যার ব্যাপারে বাবা-মাদের উপদেশ দিতে পারেন। বিগত বছরগুলোতে আপনারা যা শিখেছেন, সেগুলো আপনাদের নাতিনাতনিদের কাছে খোলাখুলিভাবে বলুন। আপনার সততা ও অকপটতা তাদের উপকৃত করতে পারে।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানিয়ে নিন

১৭. গীতরচকের কোন দৃঢ়সংকল্প বয়স্ক খ্রিস্টানদের অনুকরণ করা উচিত?

১৭ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনি দেখবেন যে, আপনি আগে যা করতে পারতেন এবং যা করতে চান, সেগুলোর সবই করতে পারেন না। কীভাবে একজন ব্যক্তি বার্ধক্যের পরিবর্তনগুলো গ্রহণ করতে ও সেগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারেন? আপনি হয়তো মনে মনে নিজেকে ৩০ বছর বয়সি বলে ভাবছেন, কিন্তু আয়নার দিকে এক ঝলক তাকালে ভিন্ন বাস্তবতা প্রকাশ পায়। নিরুৎসাহিত হবেন না। গীতরচক যিহোবার কাছে মিনতি করেছিলেন: “বৃদ্ধ বয়সে আমাকে পরিত্যাগ করিও না, আমার বল ক্ষয় পাইলে আমাকে ছাড়িও না।” গীতরচকের দৃঢ়সংকল্পকে অনুকরণ করার জন্য সংকল্পবদ্ধ হোন। তিনি বলেছিলেন: “আমি নিরন্তর প্রত্যাশা করিব, এবং উত্তর উত্তর তোমার আরও প্রশংসা করিব।”—গীতসংহিতা ৭১:৯, ১৪.

১৮. কীভাবে একজন পরিপক্ব খ্রিস্টান অবসর গ্রহণের সময়টাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারেন?

১৮ অনেকে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছে, যাতে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করার পর যিহোবার প্রতি তাদের প্রশংসাকে বৃদ্ধি করতে পারে। “আমাদের মেয়ে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার পর আমি কী করব, সেই সম্বন্ধে আমি আগে থেকেই পরিকল্পনা করেছিলাম,” বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত একজন বাবা বলেন। “আমি ঠিক করেছিলাম যে, আমি পূর্ণসময়ের প্রচার কাজ শুরু করব এবং যিহোবাকে আরও পূর্ণরূপে সেবা করার জন্য মুক্ত থাকতে আমি আমার ব্যাবসা বিক্রি করে দিয়েছিলাম। আমি ঈশ্বরের নির্দেশনার জন্য প্রার্থনা করেছিলাম।” আপনি যদি অবসর গ্রহণ করার পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছান, তাহলে আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তার এই ঘোষণা থেকে সান্ত্বনা লাভ করুন: “আর তোমাদের বৃদ্ধ বয়স পর্য্যন্ত আমি যে সেই থাকিব, পক্বকেশ হওয়া পর্য্যন্ত আমিই তুলিয়া বহন করিব।”—যিশাইয় ৪৬:৪.

১৯. যাদের বয়স বেড়ে যাচ্ছে, তাদের জন্য কোন পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে?

১৯ চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের সময়টাতে মানিয়ে নেওয়া হয়তো সহজ নয়। প্রেরিত পৌল বয়স্ক পুরুষদের পরামর্শ দিয়েছেন, যেন তারা “মিতাচারী” হয়। এর জন্য সাধারণ সংযম প্রয়োজন, আরাম-আয়েশের এক জীবনযাপনের চেষ্টার কাছে নতিস্বীকার করা নয়। অবসর গ্রহণ করার পর আগের চেয়ে এমনকি আরও বেশি করে একটা তালিকা ও আত্মশাসনের প্রয়োজন হতে পারে। তাহলে, ‘প্রভুর কার্য্যে সর্ব্বদা উপচিয়া পড়িবার’ জন্য ব্যস্ত থাকুন ‘কেননা আপনারা জানেন যে, প্রভুতে আপনাদের পরিশ্রম নিষ্ফল নয়।’ (১ করিন্থীয় ১৫:৫৮) অন্যদের সাহায্য করার ব্যাপারে আপনার কাজকে প্রশস্ত বা বৃদ্ধি করুন। (২ করিন্থীয় ৬:১৩) অনেক খ্রিস্টান বার্ধক্যের সীমাবদ্ধতাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে উদ্যোগের সঙ্গে সুসমাচার প্রচার করার মাধ্যমে তা করে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘বিশ্বাসে, প্রেমে, ধৈর্য্যে নিরাময় হউন।’—তীত ২:২.

আপনার সাথি হারানোর বেদনা মোকাবিলা করা

২০, ২১. (ক) বর্তমান বিধিব্যবস্থায়, কী অবশেষে এক বিবাহিত দম্পতিকে পৃথক করে দেয়? (খ) শোকার্ত সঙ্গীদের জন্য হান্না কীভাবে এক উত্তম উদাহরণ জুগিয়েছেন?

২০ এটা খুবই দুঃখজনক অথচ বাস্তব সত্য যে, বর্তমান বিধিব্যবস্থায় বিবাহিত দম্পতিরা অবশেষে মৃত্যুর মাধ্যমে পৃথক হয়। মৃত্যুতে প্রিয় সাথিদের হারিয়েছে এমন খ্রিস্টান ব্যক্তিরা জানে যে, তাদের প্রিয়জনরা এখন ঘুমাচ্ছে আর এই বিষয়েও তাদের আস্থা রয়েছে যে, তারা আবার তাদেরকে দেখতে পারবে। (যোহন ১১:১১, ২৫) তা সত্ত্বেও, হারানোর বেদনা অনেক কষ্টকর। যিনি বেঁচে আছেন, তিনি তা কীভাবে মোকাবিলা করতে পারেন? a

২১ বাইবেলের নির্দিষ্ট একটা চরিত্র কী করেছিল, তা মনে রাখা সাহায্যকারী হবে। হান্না তার বিয়ের মাত্র সাত বছরের মাথায় বিধবা হয়েছিলেন আর আমরা যখন তার সম্বন্ধে পড়ি, তখন তার বয়স ৮৪ বছর। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, তিনি যখন তার স্বামীকে হারিয়েছিলেন, তখন শোক করেছিলেন। কীভাবে তিনি এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছিলেন? তিনি দিবারাত্র মন্দিরে যিহোবা ঈশ্বরের উপাসনা করতেন। (লূক ২:৩৬-৩৮) হান্নার প্রার্থনাপূর্ণ সেবার এক জীবন নিঃসন্দেহে বিধবা হিসেবে তিনি যে-দুঃখ ও একাকিত্ব বোধ করতেন, সেটার এক চমৎকার প্রতিষেধক ছিল।

২২. কীভাবে কিছু বিধবা ও বিপত্নীক ব্যক্তি একাকিত্বের সঙ্গে সফলভাবে লড়াই করেছে?

২২ “আমার জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হল, কথা বলার মতো কোনো সঙ্গী না থাকা,” ৭২ বছর বয়সি একজন মহিলা বলেন, যিনি দশ বছর আগে বিধবা হয়েছিলেন। “আমার স্বামী একজন উত্তম শ্রোতা ছিলেন। আমরা মণ্ডলী সম্বন্ধে এবং খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় আমাদের অংশগ্রহণের বিষয়ে কথা বলতাম।” আরেকজন বিধবা বলেন: “যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কষ্ট লাঘব হয়, কিন্তু আমি এটা বলা আরও সঠিক বলে দেখেছি যে, একজন ব্যক্তি নিজের সময়কে যেভাবে ব্যয় করেন, সেটা তাকে তার কষ্ট লাঘব করতে সাহায্য করে। অন্যদের সেবা করার জন্য আপনি আরও উত্তম এক অবস্থানে রয়েছেন।” ৬৭ বছর বয়সি একজন বিপত্নীক ব্যক্তি একমত হয়ে বলেন: “শোক কাটিয়ে ওঠার এক অপূর্ব উপায় হল অন্যদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া।”

বৃদ্ধ বয়সে ঈশ্বরের দ্বারা মূল্যবান বলে গণ্য হওয়া

২৩, ২৪. বয়স্ক ব্যক্তিরা, বিশেষভাবে যারা বিধবা, তাদের জন্য বাইবেল কোন বিরাট সান্ত্বনা প্রদান করে?

২৩ যদিও মৃত্যু প্রিয় সাথিকে কেড়ে নেয় কিন্তু যিহোবা সর্বদা বিশ্বস্ত আছেন। “সদাপ্রভুর কাছে আমি একটী বিষয় যাচ্ঞা করিয়াছি,” প্রাচীনকালের রাজা দায়ূদ গেয়েছিলেন, “তাহারই অন্বেষণ করিব, যেন জীবনের সমুদয় দিন সদাপ্রভুর গৃহে বাস করি, সদাপ্রভুর সৌন্দর্য্য দেখিবার ও তাঁহার মন্দিরে অনুসন্ধান করিবার জন্য।”—গীতসংহিতা ২৭:৪.

২৪ “যাহারা প্রকৃত বিধবা, সেই বিধবাদিগকে সমাদর কর,” প্রেরিত পৌল জোরালো পরামর্শ দেন। (১ তীমথিয় ৫:৩) এই নির্দেশনার পরে যে-পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, তা ইঙ্গিত দেয় যে, আত্মীয়স্বজন নেই এমন যোগ্য বিধবাদের হয়তো মণ্ডলী থেকে বস্তুগত সাহায্যের প্রয়োজন। তবে, “সমাদর” করার বিষয়ে এই নির্দেশনার সঙ্গে তাদেরকে মূল্যবান বলে গণ্য করার ধারণা অন্তর্ভুক্ত। ঈশ্বরভয়শীল বিধবা ও বিপত্নীক ব্যক্তিরা এটা জেনে কত সান্ত্বনাই না পেতে পারে যে, যিহোবা তাদেরকে মূল্যবান বলে গণ্য করেন এবং তাদেরকে ধরে রাখবেন!—যাকোব ১:২৭.

২৫. বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য এখনও কোন লক্ষ্য রয়েছে?

২৫ “পক্ককেশ বৃদ্ধ লোকদের শ্রী,” ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য ঘোষণা করে। এটি “শোভার মুকুট,” যখন “তাহা ধার্ম্মিকতার পথে পাওয়া যায়।” (হিতোপদেশ ১৬:৩১; ২০:২৯) তাই, আপনি বিবাহিত অথবা আবার একাকী হয়ে পড়েছেন, যা-ই হোন না কেন, আপনার জীবনে যিহোবার সেবাকে সবসময় প্রথমে রাখুন। তাহলে, এখন ঈশ্বরের কাছে আপনার ভাল নাম থাকবে এবং এমন এক জগতে অনন্তজীবনের প্রত্যাশা থাকবে, যেখানে বৃদ্ধ বয়সের যন্ত্রণাগুলো আর থাকবে না।—গীতসংহিতা ৩৭:৩-৫; যিশাইয় ৬৫:২০.

a এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত আপনার প্রিয়জন যখন মারা যায় (ইংরেজি) ব্রোশারটি দেখুন।