সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় ৭

“যিশুর বিষয়ে সুসমাচার” ঘোষণা করা

“যিশুর বিষয়ে সুসমাচার” ঘোষণা করা

ফিলিপ একজন সুসমাচার প্রচারক হিসেবে উদাহরণ স্থাপন করেন

প্রেরিত ৮:৪-৪০ পদের উপর ভিত্তি করে

১, ২. প্রথম শতাব্দীতে যখন বিরোধীরা শিষ্যদের প্রচার কাজ থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, তখন কী ঘটেছিল?

 তাড়নার ঝড় আরও তীব্র হয়ে ওঠে। শৌল মণ্ডলীর লোকদের নিষ্ঠুরভাবে তাড়না করতে থাকেন। যে-গ্রিক শব্দকে এখানে “নিষ্ঠুরভাবে” অনুবাদ করা হয়েছে, সেটার অর্থ হল তিলে তিলে মারা। (প্রেরিত ৮:৩) শৌলের ভয়ে শিষ্যেরা জেরুসালেম ছেড়ে দূরদূরান্তে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে। কেউ কেউ হয়তো মনে করে, শৌলের যে-উদ্দেশ্য ছিল খ্রিস্টানদের প্রচার কাজ বন্ধ করা, তাতে তিনি সফল হয়ে যাবেন। কিন্তু, খ্রিস্টানেরা দূরদূরান্তে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ার ফলে যা ঘটেছিল, তা কেউই হয়তো চিন্তা করতে পারেনি।

আসলে ঘটনাটা এমন ছিল যে, শিষ্যেরা যখন দূরদূরান্ত এলাকায় ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছিল, তখন তারা সেখানেও “বাক্যের সুসমাচার ঘোষণা করতে লাগল।” (প্রেরিত ৮:৪) এভাবে, তাড়নার সেই ঝড় প্রচার কাজ বন্ধ করে দেওয়ার পরিবর্তে, দূরদূরান্ত এলাকায় ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছিল। সেই নিষ্ঠুর বিরোধীরা শিষ্যদের ঘর থেকে বের করে নিজেদের অজান্তেই দূরদূরান্ত এলাকায় রাজ্যের এই সুসমাচার ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছিল। বর্তমান সময়েও ঠিক এমনই কিছু ঘটেছে, যার বিষয়ে আমরা এই অধ্যায়ে আলোচনা করব।

“যারা ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছিল” (প্রেরিত ৮:৪-৮)

৩. (ক) ফিলিপ কে ছিলেন? (খ) শমরিয়ার বেশিরভাগ এলাকায় কেন সুসমাচার প্রচার করা হয়নি এবং যিশু এই এলাকার বিষয়ে কোন ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিলেন?

ফিলিপ সেই শিষ্যদের মধ্যে একজন ছিলেন, “যারা ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছিল।” a (প্রেরিত ৮:৪; “ ফিলিপ—একজন ‘সুসমাচার প্রচারক’” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।) তিনি জেরুসালেম ছেড়ে শমরিয়া নগরে চলে যান। এই নগরের বেশিরভাগ লোকের কাছে এখনও সুসমাচার পৌঁছায়নি, কারণ যিশু পৃথিবীতে থাকার সময়ে তাঁর প্রেরিতদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন, “তোমরা ন-যিহুদিদের অঞ্চলে যেয়ো না এবং শমরীয়দের কোনো নগরে প্রবেশ কোরো না; বরং ইজরায়েল জাতির হারানো মেষদের কাছে যেয়ো।” (মথি ১০:৫, ৬) তবে যিশু জানতেন, সঠিক সময়ে শমরিয়াতেও ভালোভাবে প্রচার করা হবে। সেইজন্য স্বর্গে ফিরে যাওয়ার আগে তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, “তোমরা জেরুসালেমে, সমস্ত যিহূদিয়া ও শমরিয়ায় এবং পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেবে।”—প্রেরিত ১:৮.

৪. শমরিয়ার লোকেরা ফিলিপের কাছ থেকে সুসমাচার শোনার পর কী করেছিল এবং কেন তা করেছিল?

ফিলিপ শমরিয়ায় গিয়ে দেখেন যে, “শস্য কাটার মতো পেকে গিয়েছে।” (যোহন ৪:৩৫) তার বার্তা শমরিয়ার লোকদের কাছে যেন সকালের স্নিগ্ধ বাতাসের মতো ছিল, যা মনপ্রাণকে সতেজ করে। কারণটা স্পষ্ট ছিল, যিহুদি লোকেরা শমরীয়দের সঙ্গে কোনোরকম সম্পর্ক রাখত না। এমনকী তারা শমরীয়দের নীচু চোখে দেখত। কিন্তু, এখন সেখানকার লোকেরা দেখতে পাচ্ছে ফিলিপ যে-সুসমাচার প্রচার করছেন, এই সুসমাচার কোনোরকম ভেদাভেদ না করে, সমস্ত লোককে একই আশা দেয় এবং এটা পক্ষপাতিত্ব করে, এমন ফরীশীদের শিক্ষা থেকে একদম আলাদা। ফিলিপ কোনোরকম পক্ষপাতিত্ব না করে, উদ্যোগের সঙ্গে শমরিয়ায় প্রচার করে এটা প্রকাশ করেন যে, তার মধ্যে সেই যিহুদিদের মতো কোনোরকম পক্ষপাতিত্বের মনোভাব নেই, যারা শমরীয়দের নীচু চোখে দেখত। তাই, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই, শমরিয়ায় থাকা ব্যক্তিরা ভিড় করে ফিলিপের কাছে আসত এবং তার কথা “আরও বেশি মনোযোগ” দিয়ে শুনত।—প্রেরিত ৮:৬.

৫-৭. খ্রিস্টানেরা ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ার ফলে কীভাবে সুসমাচার দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল, তা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।

প্রথম শতাব্দীর মতো বর্তমানেও তাড়না ও অত্যাচার ঈশ্বরের লোকদের প্রচার কাজ করা থেকে বিরত করতে পারেনি। খ্রিস্টানদের মুখ বন্ধ করার জন্য তাদের কখনো কখনো কারাগারে বন্দি করা হয়েছে। আবার কখনো কখনো অন্য দেশে গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য করা হয়েছে। এভাবে যখন খ্রিস্টানদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যেতে হয়েছিল, তখন তারা সেই নতুন নতুন জায়গায় প্রত্যেকটা লোকের কাছে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করেছিল। উদাহরণ স্বরূপ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে যখন যিহোবার সাক্ষিদের নাতসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তখন সেখানেও তারা প্রতিটা সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সুসমাচার প্রচার করেছিল। সেই কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে একজন যিহুদির পরিচয় হয়। তিনি সাক্ষিদের সম্বন্ধে বলেন, “এই কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে যে-সাক্ষিরা ছিল, তাদের বিশ্বাস অনেক দৃঢ় ছিল। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস দেখে আমি নিশ্চিত হই যে, তাদের এই বিশ্বাস বাইবেলের উপর ভিত্তি করেই। এরপর, আমি নিজেও একজন যিহোবার সাক্ষি হই।”

সাক্ষিরা অনেকবার এমন ব্যক্তিদের কাছেও প্রচার করেছিল, যারা তাদের উপর অত্যাচার করত, কিন্তু পরে তারা রাজ্যের সুসমাচার গ্রহণ করেছিল। ফ্রাঞ্জ ডেসের উদাহরণ লক্ষ করুন। তাকে যখন অস্ট্রিয়ার একটা কনসেনট্রেশন ক্যাম্প থেকে গুজেনে একটা কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তখন তিনি সেখানে একজন এসএস (নাতসি পুলিশবাহিনি) অফিসারকে বাইবেল অধ্যয়ন করাতে শুরু করেন। একটু কল্পনা করুন, বহু বছর পর যখন যিহোবার সাক্ষিদের একটা সম্মেলনে তাদের দু-জনের একসঙ্গে দেখা হয়েছিল, তখন তারা কতই-না আনন্দিত হয়েছিলেন! এখন তারা দু-জনেই রাজ্যের প্রচারক।

খ্রিস্টানদের যখন তাড়নার কারণে নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পালিয়ে যেতে হয়, তখনও এইরকমই কিছু ঘটেছিল। ১৯৭০-এর দশকের দিকে মালাউইনের সাক্ষিদের মোজাম্বিকে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছিল, তবে তারা সেখানেও উদ্যোগের সঙ্গে সাক্ষ্য দিয়েছিল। এরপর সেখানে তাদের বিরোধিতা করা হয়, কিন্তু তারপরও মোজাম্বিকে প্রচার কাজ বন্ধ হয়নি। ফ্রানসিসকো কোয়ানা নামে একজন যিহোবার সাক্ষি বলেন, “এটা ঠিক যে, বেশ কয়েক বার কিছু ভাই-বোনকে প্রচার করার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু, এরপরও আমরা যখন প্রচার কাজ চালিয়ে যাই আর অনেক লোক সুসমাচার গ্রহণ করে, তখন আমরা নিশ্চিত হই যে, ঈশ্বর আমাদের সাহায্য করছেন, ঠিক যেমন তিনি প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদেরও সাহায্য করেছিলেন।”

৮. রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে প্রচার কাজের উপর কোন প্রভাব পড়েছিল?

কেবলমাত্র তাড়নার কারণে নয় বরং অন্যান্য কারণেও বিভিন্ন দেশে সুসমাচার ছড়িয়ে পড়েছিল। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে কিছু লোক নিজেদের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে গিয়ে থাকতে শুরু করে। এর ফলে সেই দেশগুলোতে বিদেশি এবং যারা ভিন্ন ভাষায় কথা বলে তাদের কাছে সুসমাচার প্রচার করার সুযোগ খুলে যায়। আবার কিছু লোক তাদের দেশে হওয়া যুদ্ধ এবং দরিদ্রতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যখন অন্য দেশে গিয়ে থাকতে শুরু করে, তখন তারা সেখানে সুসমাচার সম্বন্ধে জানতে পারে এবং বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করে। বেশ কিছু দেশে যখন অন্যান্য দেশ থেকে শরণার্থীরা আসে, তখন সেখানে বিদেশি ভাষার এলাকা বৃদ্ধি পেতে থাকে। আপনিও কি “সমস্ত জাতি ও বংশ ও বর্ণ ও ভাষার” লোকদের কাছে সুসমাচার পৌঁছে দেওয়ার জন্য আপনার সর্বোত্তম প্রচেষ্টা করেন?—প্রকা. ৭:৯.

“আমাকেও এই ক্ষমতা দিন” (প্রেরিত ৮:৯-২৫)

“পরে শিমোন যখন দেখল, সেই প্রেরিতেরা যাদের উপর হাত রাখছেন, তারা সবাই পবিত্র শক্তি লাভ করছে, তখন সে তাদের টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিল।”—প্রেরিত ৮:১৮

৯. শিমোন কে ছিলেন? ফিলিপের কোন কাজ দেখে তিনি আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন?

ফিলিপ শমরিয়ায় অনেক আশ্চর্য কাজ করেন। তিনি এমন অনেক ব্যক্তিকে সুস্থ করেন যারা হাঁটাচলা করতে পারত না। এমনকী লোকদের মধ্যে থাকা মন্দ স্বর্গদূতদেরও বের করে দেন। (প্রেরিত ৮:৬-৮) ফিলিপকে এই অলৌকিক কাজগুলো করতে দেখে শিমোন নামে একজন ব্যক্তি আশ্চর্য হয়ে যান। শিমোন একজন জাদুকর ছিলেন, যাকে লোকেরা এতটাই মানত যে, তার সম্বন্ধে এই কথা বলত, “এই ব্যক্তির মধ্যে ঈশ্বরের মহাশক্তি রয়েছে।” কিন্তু, তিনি যখন ফিলিপকে আশ্চর্য কাজ করতে দেখলেন, তখন বুঝতে পারলেন যে, ঈশ্বরের শক্তি আসলেই কী এবং তিনিও একজন বিশ্বাসী হয়ে উঠলেন। (প্রেরিত ৮:৯-১৩) তবে, পরবর্তী সময়ে তার উদ্দেশ্য পরীক্ষিত হয়েছিল। কীভাবে?

১০. (ক) পিতর ও যোহন শমরিয়ায় কী করেছিলেন? (খ) পিতর ও যোহন নতুন শিষ্যদের উপর হাত রাখলে তারা পবিত্র শক্তি লাভ করে, এটা দেখে শিমোন কী করেছিলেন?

১০ প্রেরিতেরা যখন জানতে পারেন যে, শমরিয়াতে খ্রিস্টানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন তারা পিতর ও যোহনকে সেখানে পাঠান। (“ পিতর ‘স্বর্গরাজ্যের চাবিগুলো’ ব্যবহার করেন” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।) শমরিয়ায় এসে যখন সেই দু-জন প্রেরিত নতুন শিষ্যদের উপর হাত রাখেন, তখন তারা প্রত্যেকে পবিত্র শক্তি পায়। b এইসমস্ত কিছু দেখে শিমোনের দারুণ লেগেছিল। তিনি প্রেরিতদের বলেন, “আমাকেও এই ক্ষমতা দিন, যাতে আমিও কারো উপর হাত রাখলে সে পবিত্র শক্তি লাভ করে।” তিনি এমনকী প্রেরিতদের টাকা দিয়ে এই পবিত্র দান কেনার চেষ্টা করেন।—প্রেরিত ৮:১৪-১৯.

১১. পিতর শিমোনকে কড়াভাবে কোন পরামর্শ দিয়েছিলেন আর তা শুনে শিমোন কী করেছিলেন?

১১ শিমোনের অনুরোধ শুনে পিতর তাকে কড়াভাবে বলেন, “তোমার রৌপ্যমুদ্রা তোমার সঙ্গে বিনষ্ট হোক, কারণ তুমি মনে করছ, ঈশ্বরের দান তুমি টাকা দিয়ে লাভ করতে পার। এই বিষয়ে তোমার কোনো অংশ কিংবা অধিকার নেই, কারণ তোমার হৃদয় ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সরল নয়।” এরপর, তিনি শিমোনকে অনুতপ্ত হতে এবং প্রার্থনার মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন। পিতর তাকে বলেন, “যিহোবার কাছে বিনতি করো, তা হলে তোমার হৃদয়ের দুষ্টতা [“তোমার মনের এই মন্দ চিন্তা,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] হয়তো তিনি ক্ষমা করলেও করতে পারেন।” এটা ঠিক যে, শিমোন খারাপ ব্যক্তি নন আর তার মধ্যে ভালো কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে। কিন্তু, কিছু সময়ের জন্য তার চিন্তাভাবনা বিকৃত হয়ে যায়। সেইজন্য শিমোন প্রেরিতদের কাছে বিনতি করে বলেন, “যিহোবার কাছে আমার জন্য বিনতি করুন, যাতে আপনারা যা যা বলেছেন, সেগুলোর একটাও আমার প্রতি না ঘটে।”—প্রেরিত ৮:২০-২৪.

১২. মিথ্যা খ্রিস্টানদের মধ্যে কোনো পদ কেনা-বেচা করা কতটা সাধারণ বিষয়?

১২ পিতর শিমোনকে কঠোরভাবে যে-পরামর্শ দিয়েছিলেন, তা বর্তমানে খ্রিস্টানদের জন্যও এক সাবধানবাণী। এটা আমাদের শেখায়, মণ্ডলীর মধ্যে কোনো পদ নিয়ে কেনা-বেচা করা এক গুরুতর অপরাধ। কিন্তু, তারপরও এটা মিথ্যা খ্রিস্টানদের মধ্যে খুবই সাধারণ একটা বিষয়। উদাহরণ স্বরূপ, ১৮৭৮ সালের একটা বই বলে, “এটা মনে করা হয়, যখন পোপ নির্বাচিত হন, তখন তাকেও সেই পদ পাওয়ার জন্য অনেক টাকা দিতে হয়। আর অনেকে নির্লজ্জের মতো এই কাজটা সকলের সামনেই করে থাকে।”

১৩. খ্রিস্টানদের কোন কোন উপায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত পদ কেনা-বেচা করা থেকে নিজেদের দূরে রাখা উচিত?

১৩ মণ্ডলীতে খ্রিস্টানদের সতর্ক থাকা উচিত যাতে তারা মণ্ডলীতে কোনো পদ কেনা-বেচা করার জন্য কাউকে কোনো ঘুস না দেয় অথবা নিজেও কোনোরকম ঘুস না নেয়। উদাহরণ স্বরূপ, মণ্ডলীতে কোনো পদ পাওয়ার উদ্দেশ্যে কোনো ভাইকে উপহার দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া অথবা তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হওয়া উচিত নয়। একইভাবে, মণ্ডলীতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইদেরও এটা মনে রাখা উচিত যে, তারা যেন কোনো সুযোগসুবিধা পাওয়ার জন্য ধনী ভাই-বোনদের পক্ষ না নেন। এভাবে মণ্ডলীতে পদ পাওয়ার লোভ না করে, ঈশ্বরের সমস্ত দাসের “নম্র আচরণ” করা উচিত। আর এটা মনে রেখে ধৈর্য ধরা উচিত যে, যিহোবার পবিত্র শক্তি সঠিক সময়ে তাদের সেই পদে নিযুক্ত করবেন। (লূক ৯:৪৮) ঈশ্বরের সংগঠনে এমন লোকদের কোনো জায়গা নেই, যারা নিজের “গৌরব পাওয়ার জন্য চেষ্টা” করে থাকে।—হিতো. ২৫:২৭, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন।

“আপনি যা পড়ছেন, সেই সমস্ত কিছু কি বুঝতে পারছেন?” (প্রেরিত ৮:২৬-৪০)

১৪, ১৫. (ক) “ইথিওপিয়ার নপুংসক” কে ছিলেন এবং ফিলিপ কীভাবে তাকে খুঁজে পেয়েছিলেন? (খ) ফিলিপের বার্তা শুনে সেই নপুংসক কী করেছিলেন আর কেন আমরা বলতে পারি, সেই নপুংসক তাড়াহুড়ো করে বাপ্তিস্ম নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেননি? (পাদটীকা দেখুন।)

১৪ এখন যিহোবার স্বর্গদূত ফিলিপকে বললেন, তিনি যেন সেই রাস্তা ধরে যান যে-রাস্তা জেরুসালেম থেকে গাজার দিকে গিয়েছে। ফিলিপ হয়তো চিন্তা করছিলেন, কেন তাকে সেই রাস্তা দিয়ে যেতে বলা হল, তবে দ্রুত তিনি তার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যান। কারণ তিনি সেখানে গিয়ে একজন ইথিওপিয় নপুংসককে দেখতে পান, যিনি “জোরে জোরে যিশাইয় ভাববাদীর গ্রন্থ পড়ছিলেন।” (“ কোন অর্থে তিনি একজন ‘নপুংসক’ ছিলেন?” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।) নিশ্চিতভাবে, যিহোবার পবিত্র শক্তি ফিলিপকে রথে চড়ে যাওয়া সেই ব্যক্তির কাছে যাওয়ার জন্য পরিচালিত করেছিল। ফিলিপ রথের সঙ্গে দৌড়োতে দৌড়োতে সেই নপুংসকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি যা পড়ছেন, সেই সমস্ত কিছু কি বুঝতে পারছেন?” সেই নপুংসক তাকে বললেন, “কেউ যদি আমাকে বুঝিয়ে না দেয়, তা হলে আমি কীভাবে তা বুঝতে পারব?”—প্রেরিত ৮:২৬-৩১.

১৫ এরপর সেই নপুংসক ফিলিপকে রথে উঠে বসার জন্য বলেন। একটু কল্পনা করুন, সেই সময় তাদের দু-জনের মধ্যে কতই-না আগ্রহজনক এবং রোমাঞ্চকর আলোচনা হয়েছিল! অন্যদের মতো সেই ইথিওপিয় ব্যক্তিও জানতেন না যে, যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্‌বাণীতে বলা “মেষশাবক” অথবা “দাস” কাকে চিত্রিত করে। (যিশা. ৫৩:১-১২) এখন ফিলিপ রথে বসে সেই নপুংসকে বোঝান যে, সেই ভবিষ্যদ্‌বাণীতে বলা মেষশাবক অথবা দাস যিশু খ্রিস্টকে চিত্রিত করে। এই নপুংসক একজন ধর্মান্তরিত ব্যক্তি ছিলেন। সেইজন্য ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিন যারা বাপ্তিস্ম নিয়েছিল, তাদের মতো তিনিও দ্রুত বুঝতে পেরে যান যে, তাকে কোন পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি ফিলিপকে বলেন, “দেখুন! এখানে জল আছে; আমার বাপ্তিস্ম নিতে বাধা কী?” আর তখন ফিলিপ তাকে দ্রুত বাপ্তিস্ম দেন। c (“ ‘জলাশয়ে’ বাপ্তিস্ম” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।) এরপর, ফিলিপ পবিত্র শক্তির নির্দেশনায় আবার একটা নতুন জায়গা অস্‌দোদে যান আর সেখানে তিনি সুসমাচার ঘোষণা করতে থাকেন।—প্রেরিত ৮:৩২-৪০.

১৬, ১৭. বর্তমানে কীভাবে স্বর্গদূতেরা প্রচার কাজে সাহায্য করছেন?

১৬ ফিলিপের মতো বর্তমানে খ্রিস্টানদেরও সুসমাচার প্রচার করার এক বিশেষ সম্মান রয়েছে। তারা প্রায়ই সুযোগ খুঁজে লোকদের কাছে রাজ্যের বার্তা জানিয়ে থাকে যেমন হতে পারে, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার সময়। অনেক বার এইরকম দেখা গিয়েছে যে, খ্রিস্টানদের সঙ্গে এমন সৎহৃদয়ের ব্যক্তিদের দেখা হয়েছে, যারা সেই সময় সত্য খুঁজছিল। এটা কোনো আশ্চর্য বিষয় নয় কারণ বাইবেল বলে, স্বর্গদূতেরা প্রচার কাজে নির্দেশনা দিচ্ছেন। সেইজন্য রাজ্যের এই বার্তা “প্রত্যেক জাতি ও বংশ ও ভাষা ও বর্ণের লোকদের কাছে” ঘোষণা করা হচ্ছে। (প্রকা. ১৪:৬) যিশু তাঁর একটা ভবিষ্যদ্‌বাণীতে প্রচার কাজের ক্ষেত্রে স্বর্গদূতদের বিষয় উল্লেখ করেছিলেন। তিনি গম ও আগাছার দৃষ্টান্তে বলেছিলেন যে, শস্য কাটার মরসুমে অর্থাৎ এই বিধিব্যবস্থার শেষ সময়ে স্বর্গদূতেরা ‘ছেদকের’ কাজ করবে। এরপর তিনি বলেন, সেই স্বর্গদূতেরা “তাঁর রাজ্য থেকে সেইসমস্ত ব্যক্তিকে সংগ্রহ করে আলাদা করবে, যারা অন্যদের পাপ করতে পরিচালিত করে এবং যারা মন্দ কাজ করে চলে।” (মথি ১৩:৩৭-৪১) যিশু এটাও বলেছিলেন যে, এই বিধিব্যবস্থার শেষ সময়ে স্বর্গদূতদের মাধ্যমে, স্বর্গীয় আশা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের এবং এরপর “আরও মেষ” নিয়ে গঠিত ‘বিরাট জনতাকে’ একত্রিত করা হবে, যাদের যিহোবা তাঁর সংগঠনের দিকে আকর্ষণ করতে চান।—প্রকা. ৭:৯; যোহন ৬:৪৪, ৬৫; ১০:১৬.

১৭ বর্তমানে, স্বর্গদূতেরা আমাদের প্রচার কাজে সাহায্য করে থাকে। তাই, প্রচারে কখনো কখনো আমাদের এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা হয়, যারা হয়তো কিছু সময় আগেই ঈশ্বরের কাছে সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করছিল। এই ঘটনাটা নিয়ে চিন্তা করুন। একবার, দু-জন প্রকাশক একটা ছোটো বাচ্চার সঙ্গে ঘরে ঘরে প্রচার করছিলেন। প্রচার করতে করতে দুপুর হয়ে গেলে তারা প্রচার বন্ধ করার কথা চিন্তা করেন। কিন্তু, সেই বাচ্চাটির সেই দিন প্রচার করতে এত ভালো লাগছিল যে, সে একা একাই গিয়ে পরবর্তী দরজায় কড়া নাড়ে। এরপর, একজন কমবয়সি মহিলা এসে দরজা খোলেন আর সেই প্রকাশকেরা তাকে রাজ্যের সুসমাচার জানান। সেই মহিলা তখন তাদের বলেন, তারা আসার কিছু সময় আগেই তিনি প্রার্থনা করছিলেন, যাতে কেউ এসে তাকে বাইবেল বুঝতে সাহায্য করে। এই কথা শুনে সেই প্রকাশকেরা অবাক হয়ে যান আর তাকে বাইবেল অধ্যয়ন করাতে শুরু করেন।

“হে ঈশ্বর, তুমি যে-ই হয়ে থাকো আমাকে সাহায্য করো”

১৮. কেন সুসমাচার প্রচার করার কাজকে আমাদের হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়?

১৮ বর্তমানে, প্রচার কাজ এত বিরাট আকারে করা হচ্ছে যা আগে কখনো করা হয়নি। খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর অংশ হিসেবে আপনি স্বর্গদূতদের সঙ্গে এই কাজ করার সম্মান লাভ করেছেন। এই সম্মানকে কখনো হালকাভাবে নেবেন না। আপনি যদি ক্রমাগত “যিশুর বিষয়ে সুসমাচার” জানানোর ক্ষেত্রে কঠোর প্রচেষ্টা করে চলেন, তা হলে আপনি এত আনন্দ লাভ করবেন যা কখনো কল্পনাও করেননি!—প্রেরিত ৮:৩৫.

a ফিলিপ নামে এই শিষ্য প্রেরিত ফিলিপ ছিলেন না। তিনি সেই ‘সাত জন পুরুষের’ মধ্যে একজন ছিলেন, ‘যাদের সুনাম রয়েছে’ আর যাদের সম্বন্ধে আমরা এই বইয়ে ৫ অধ্যায়ে পড়েছি। সেই সাত জন ভাইকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল যে, তারা যেন জেরুসালেমের সেই গ্রিক ও ইব্রীয়ভাষী বিধবাদের প্রতিদিনের খাবার পরিবেশন করার বিষয়টা ভালোভাবে দেখাশোনা করেন।—প্রেরিত ৬:১-৬.

b প্রমাণ দেখায় যে, সেইসময় নতুন শিষ্যেরা সাধারণত তাদের বাপ্তিস্মের সময়ই পবিত্র শক্তি লাভ করত। এভাবে তারা ভবিষ্যতে স্বর্গে যিশুর সঙ্গে রাজা হিসেবে রাজত্ব করার এবং যাজক হিসেবে সেবা করার সুযোগ লাভ করত। (২ করি. ১:২১, ২২; প্রকা. ৫:৯, ১০; ২০:৬) কিন্তু, শমরিয়ার এই নতুন শিষ্যদের তাদের বাপ্তিস্মের সময় পবিত্র শক্তির মাধ্যমে অভিষিক্ত করা হয়নি। এর পরিবর্তে, তারা সেইসময় পবিত্র শক্তি লাভ করেছিল, যখন পিতর ও যোহন তাদের উপর হাত রেখেছিলেন। এরপর তারা অলৌকিক কাজ করার দানও পেয়েছিল, যা পবিত্র শক্তির মাধ্যমে পাওয়া যায়।

c ইথিওপিয়ার এই নপুংসক তাড়াহুড়ো করে বাপ্তিস্ম নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেননি। তিনি ইতিমধ্যেই যিহুদী ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন আর শাস্ত্র সম্বন্ধে তার ভালো জ্ঞান ছিল ও সেইসঙ্গে তিনি মশীহ সম্বন্ধে করা ভবিষ্যদ্‌বাণীগুলো জানতেন। আর এখন তিনি যখন এই বিষয়টা শেখেন, ঈশ্বরের ইচ্ছা পূরণ করার ক্ষেত্রে যিশু কোন ভূমিকা পালন করেছেন, তখন তিনি দ্রুত বাপ্তিস্মের জন্য যোগ্য হয়ে ওঠেন।