সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় ৬

স্তিফান—“অনুগ্রহে ও শক্তিতে পূর্ণ”

স্তিফান—“অনুগ্রহে ও শক্তিতে পূর্ণ”

স্তিফান মহাসভার সামনে যেভাবে সাহসের সঙ্গে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, সেখান থেকে আমরা যা শিখতে পারি

প্রেরিত ৬:৮–৮:৩ পদের উপর ভিত্তি করে

১-৩. (ক) স্তিফান কোন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং সেই পরিস্থিতিতে তিনি কী করেছিলেন? (খ) আমরা এখন কোন প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করব?

 স্তিফান, দেশের সবচেয়ে বড়ো আদালত মহাসভার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। এই মহাসভা একটা বিলাসবহুল হলে রাখা হয়েছে, যেটা সম্ভবত জেরুসালেম মন্দিরের কাছে অবস্থিত। আজ স্তিফানের বিচার হবে। আদালতের ৭১ জন বিচারক প্রতি বারের মতো অর্ধবৃত্তাকারে বসে আছে আর সবার নজর স্তিফানের উপর রয়েছে। এই বিচারকেরা হল দেশের বড়ো বড়ো আধিকারিক, যাদের অনেক ক্ষমতা রয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগ বিচারক যিশুর এই শিষ্য স্তিফানকে নীচু চোখে দেখত। এই আদালত মহাযাজক কায়াফা আয়োজন করেছিলেন। কিছু মাস আগে যখন এই আদালত যিশু খ্রিস্টকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল, তখন কায়াফাই এর সভাপতি ছিলেন। এইরকম কঠোর শত্রুদের মাঝে ঘেরা পড়ে স্তিফান কি ভয়ে কাঁপতে শুরু করেন? একেবারেই না।

এই সময়ে স্তিফানের চোখে-মুখে এক অদ্ভুত শান্তভাব রয়েছে। মহাসভার বিচারকেরা যখন তার মুখের দিকে তাকাল, তখন তারা দেখল “তার মুখ স্বর্গদূতের মুখের মতো শান্ত।” (প্রেরিত ৬:১৫) প্রাচীনকালে স্বর্গদূতেরা যিহোবার বার্তা লোকদের কাছে পৌঁছাতেন, তাই তারা ভয় পেতেন না এবং দৃঢ় ও শান্ত থাকতে পারতেন। এখন স্তিফানের মধ্যেও সেই একই বিষয় দেখা যাচ্ছে। এমনকি সেই বিচারকেরা, যারা স্তিফানকে অত্যন্ত ঘৃণা করত, তারাও সেটা দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, এইরকম পরিস্থিতিতে যেখানে অন্যদের বুক শুকিয়ে যায়, সেখানে স্তিফান কীভাবে এত শান্ত রয়েছেন?

আমরা যখন এই প্রশ্নের উত্তর জানব, তখন অনেক কিছু শিখতে পারব। তবে, আমাদের এটাও জানতে হবে, এমন কী হয়েছিল যে-কারণে স্তিফানকে মহাসভার সামনে আনা হয়েছিল? কীভাবে স্তিফান আদালতে আসার আগেও নিজের বিশ্বাসের পক্ষ সমর্থন করেছিলেন? এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা স্তিফানের উদাহরণ অনুকরণ করে চলতে পারি?

‘তারা লোকদের উত্তেজিত করে তুলল’ (প্রেরিত ৬:৮-১৫)

৪, ৫. (ক) কীভাবে স্তিফান মণ্ডলীর জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ ছিলেন? (খ) কোন অর্থে তিনি “ঈশ্বরের অনুগ্রহে ও শক্তিতে পূর্ণ” ছিলেন?

আগের অধ্যায়ে আমরা যেমন দেখেছি, স্তিফান নতুন খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর জন্য এক আশীর্বাদ স্বরূপ ছিলেন। তিনি সেই সাত জন ভাইয়ের মধ্যে একজন ছিলেন, যাদের কাছে প্রেরিতেরা প্রয়োজনের সময়ে সাহায্য চেয়েছিলেন এবং তিনি নম্রভাবে সাহায্য করেছিলেন। স্তিফান ঈশ্বরের কাছ থেকে এক বিশেষ দান পেয়েছিলেন। প্রেরিত ৬:৮ পদ বলে, তিনি “বড়ো বড়ো অলৌকিক কাজ এবং আশ্চর্য কাজ” করার শক্তি পেয়েছিলেন। এটা এমন একটা দান ছিল, যেটা কেবলমাত্র কয়েক জন প্রেরিতের কাছেই ছিল। প্রেরিতদের মতো এই দান পাওয়ার পরও স্তিফানের নম্র মনোভাব ছিল প্রশংসনীয়। শাস্ত্রপদ এও বলে, তিনি “ঈশ্বরের অনুগ্রহে ও শক্তিতে পূর্ণ” ছিলেন। এর অর্থ কী ছিল?

এই শাস্ত্রপদে যে-গ্রিক শব্দ “ঈশ্বরের অনুগ্রহ” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেখান থেকে বোঝা যায়, স্তিফান একজন নম্র স্বভাবের ব্যক্তি ছিলেন। তিনি সবার সঙ্গে সদয়ভাবে আচরণ করতেন আর এই কারণেই তিনি সবার মন জয় করে নিতেন। তিনি এত সুন্দরভাবে কথা বলতেন যে, তার প্রতি লোকেরা আকৃষ্ট হত। স্তিফানের কথা শুনে লোকেরা একেবারে নিশ্চিত হয়ে যেত, তিনি যে-সত্যটা শেখাচ্ছেন, তা নিঃস্বার্থভাবে শেখাচ্ছেন আর সেটা মেনে চললে লোকদের উপকার হবে। যিহোবার পবিত্র শক্তি তার উপর কাজ করত আর তিনি নম্রভাবে পবিত্র শক্তির নির্দেশনা অনুযায়ী চলতেন। সেইজন্য শাস্ত্র বলে, তিনি ঈশ্বরের শক্তিতে পূর্ণ ছিলেন। এই সমস্ত দক্ষতা এবং দান থাকা সত্ত্বেও, স্তিফান কখনো অহংকারী হননি। তিনি সবসময় যিহোবার প্রশংসা করেছিলেন এবং লোকদের প্রেমের সঙ্গে শিক্ষা দিয়েছিলেন। স্তিফানের এই ভালো গুণগুলোর জন্যই তার শত্রুদের কাছে তিনি ছিলেন পথের কাঁটা!

৬-৮. (ক) বিরোধীরা স্তিফানের উপর কোন দুটো অভিযোগ নিয়ে এসেছিল এবং কেন? (খ) বর্তমানে খ্রিস্টানদের জন্য স্তিফানের উদাহরণ কেন ব্যাবহারিক?

স্তিফানকে কেন মহাসভার সামনে হাজির করা হয়েছিল? কারণ কিছু লোক স্তিফানের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াল এবং তার সঙ্গে তর্কবিতর্ক করতে লাগল। কিন্তু, উত্তরে স্তিফান “অনেক প্রজ্ঞা সহকারে এবং পবিত্র শক্তির সাহায্যে কথা বলছিলেন, তাই তারা কেউই তার প্রতিরোধ করতে পারল না।” a এর ফলে, তারা রেগে গিয়ে খ্রিস্টের এই নির্দোষ শিষ্যের উপর দোষ চাপানোর জন্য “গোপনে কয়েক জন ব্যক্তিকে প্ররোচিত করল।” আর “তারা লোকদের, যিহুদি নেতাদের ও অধ্যাপকদের উত্তেজিত করে তুলল।” সেইজন্য স্তিফানকে টেনে-হেঁচড়ে মহাসভার সামনে নিয়ে আসা হয়েছিল। (প্রেরিত ৬:৯-১২) এই বিরোধীরা মহাসভার সামনে স্তিফানের উপর দুটো অভিযোগ নিয়ে এসেছিল: এই ব্যক্তি ঈশ্বর ও মোশি উভয়ের বিরুদ্ধে নিন্দা করছে। কিন্তু কীভাবে তা করছে?

বিরোধীরা বলেছিল, স্তিফান জেরুসালেমের “পবিত্র স্থানের বিরুদ্ধে” কথা বলে ঈশ্বর নিন্দা করেছেন। (প্রেরিত ৬:১৩) তারা এটাও বলেছিল, স্তিফান মোশির ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলে তার নিন্দা করেছেন কারণ তিনি মোশির শেখানো নিয়মকানুন বদলে দিচ্ছেন। এই দুটো অভিযোগই খুব গুরুতর ছিল কারণ সেই সময়কার যিহুদিরা মন্দিরকে অনেক সম্মান করত এবং মোশির ব্যবস্থার এক একটা শব্দ এবং পরম্পরাগত মৌখিক শিক্ষাগুলো মেনে চলার জন্য অনেক উদ্যোগ দেখাত, যেগুলো তারা সেই আইনের সঙ্গে যুক্ত করেছিল। বিরোধীদের দিক থেকে দেখলে স্তিফান একজন ভয়ানক অপরাধী ছিলেন, যাকে যেকোনো প্রকারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত।

দুঃখের বিষয় হল, বর্তমানেও ধর্মীয় লোকেরা একই পদ্ধতি অবলম্বন করে ঈশ্বরের লোকদের উপর বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসে। বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, তারা সরকারি আধিকারিকদের উসকে দিয়ে আমাদের উপর তাড়না নিয়ে আসে। আমাদের উপর যখন মিথ্যা অভিযোগ আনা হয় অথবা সত্য বিষয়টা বিকৃত করে আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়, তখন আমাদের কী করা উচিত? এক্ষেত্রে আমরা স্তিফানের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি।

সাহসের সঙ্গে “প্রতাপের ঈশ্বর” সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেওয়া (প্রেরিত ৭:১-৫৩)

৯, ১০. বাইবেলের সমালোচকেরা স্তিফানের বক্তব্যের বিষয়ে কী বলে থাকে আর আমাদের কোন বিষয়টা মনে রাখা উচিত?

এই অধ্যায়ের শুরুতে আমরা যেমন দেখেছি, শত্রুরা যখন দাঁত কিড়মিড় করে স্তিফানের উপর বড়ো বড়ো অভিযোগ আনছিল, তখন স্তিফান ভয় পাননি বরং তার চোখে-মুখে এতটাই শান্তি ছিল যে, তাকে স্বর্গদূতের মতো লাগছিল। তাদের অভিযোগ শোনার পর মহাযাজক কায়াফা স্তিফানকে জিজ্ঞেস করলেন, “এইসমস্ত কথা কি সত্যি?” (প্রেরিত ৭:১) এবার যখন স্তিফানের বলার সুযোগ আসে, তখন তিনি নিজের পক্ষ সমর্থন করে সাহসের সঙ্গে কথা বলেন।

১০ বাইবেলের কিছু সমালোচকেরা বলে থাকে, স্তিফান মহাসভার সামনে দীর্ঘক্ষণ ধরে কথা বলেছিলেন ঠিকই, কিন্তু তার উপর আনা অভিযোগকে তিনি কখনো খণ্ডন করার চেষ্টা করেননি। আসলে তাদের এই কথা সত্য নয়। স্তিফান যেভাবে তার বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন, তা আমাদের জন্য এক চমৎকার উদাহরণ। আমরা স্তিফানের কাছ থেকে শিখতে পারি, কীভাবে আমরা সুসমাচারের পক্ষ সমর্থন করার জন্য ‘প্রস্তুত থাকতে’ পারি। (১ পিতর ৩:১৫) মনে রাখবেন, স্তিফানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছিল যে, তিনি মন্দিরের বিরুদ্ধে কথা বলে ঈশ্বর নিন্দা করছেন এবং ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলে মোশির নিন্দা করছেন। নিজের বক্তব্যে স্তিফান ইজরায়েলের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া আলাদা আলাদা তিনটে ঘটনা সম্বন্ধে সংক্ষেপে তুলে ধরেন আর কিছু মূল বিষয়ের উপরে জোর দেন। আসুন, এই তিনটে সময়কাল নিয়ে আমরা এক এক করে আলোচনা করি।

১১, ১২. (ক) কীভাবে স্তিফান অব্রাহামের উদাহরণ ব্যবহার করে নিজের বিষয়টা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছিলেন? (খ) কেন যোষেফের বিষয় নিয়ে কথা বলাকে স্তিফান সঠিক বলে মনে করেছিলেন?

১১ কুলপতিদের সময়কাল। (প্রেরিত ৭:১-১৬) স্তিফান প্রথমে অব্রাহামের বিষয়ে কথা বলেন, যার অসাধারণ বিশ্বাসের কারণে যিহুদিরা তাকে সম্মান করত। স্তিফান এমন এক বিষয় নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন, যেখানে তার বিরোধীরাও একমত হবে। স্তিফান বলেন, “প্রতাপের ঈশ্বর” যিহোবা সবার প্রথমে মেসোপটেমিয়ায় অব্রাহামকে দর্শন দিয়েছিলেন। (প্রেরিত ৭:২) আসলে অব্রাহাম প্রতিজ্ঞাত দেশে একজন বিদেশি ছিলেন। সেই সময়ে না ছিল মন্দির আর না ছিল মোশির ব্যবস্থা। কিন্তু, তারপরও অব্রাহাম যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রেখেছিলেন। তা হলে, কীভাবে বর্তমানে কেউ দাবি করতে পারে, ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখার জন্য অবশ্যই মন্দির এবং মোশির ব্যবস্থার প্রয়োজন আছে?

১২ এরপর স্তিফান অব্রাহামের বংশধর যোষেফের বিষয়ে কথা বলেন কারণ মহাসভায় উপস্থিত লোকেরা যোষেফকে খুবই সম্মান করতেন। তিনি তাদের মনে করিয়ে দেন, যোষেফের নিজের ভাইয়েরা যারা পরবর্তীকালে ইজরায়েলের ১২ বংশের কুলপতি হয়েছিলেন, তারা তাকে অনেক কষ্ট দেন এবং একজন দাস হিসেবে বিক্রি করে দেন। অথচ যোষেফ একজন সৎ হৃদয়ের ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু, যিহোবা সেই যোষেফকেই ব্যবহার করে ইজরায়েল জাতিকে দুর্ভিক্ষ থেকে বাঁচিয়েছিলেন। স্তিফান পরিষ্কারভাবে দেখতে পাচ্ছিলেন, যোষেফ ও যিশুর মধ্যে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। কিন্তু, তিনি এই বিষয়ে কোনো কিছু বলেননি কারণ তিনি জানতেন, এই কথা বললে তার বিরোধীরা এতই রেগে যাবে যে, তাকে তার পক্ষ সমর্থন করার জন্য আর কোনো কথাই বলতে দেবে না।

১৩. স্তিফান মোশির বিষয়ে যা বলেছিলেন, তা থেকে কীভাবে প্রমাণ হয় যে, তার উপর আনা অভিযোগ মিথ্যা ছিল? তিনি কোন বিষয়ের উপর মনোযোগ আকর্ষণ করানোর চেষ্টা করেন?

১৩ মোশির সময়কাল। (প্রেরিত ৭:১৭-৪৩) স্তিফান এবার মোশির বিষয়ে কথা বলতে শুরু করেন আর তিনি অনেকক্ষণ ধরে কথা বলেন। এভাবে তিনি বুদ্ধির সঙ্গে কাজ করেন কারণ মহাসভার বেশিরভাগ সদস্য সদ্দূকী ছিল, যারা মোশির লেখা বইগুলো ছাড়া বাইবেলের অন্য কোনো বইকে মানত না। মনে রাখবেন, স্তিফানের উপর মোশির বিরুদ্ধে নিন্দা করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। তিনি এই অভিযোগকে সরাসরি মিথ্যে বলে প্রমাণ করেন কারণ তিনি তার কথার মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন, মোশি এবং ব্যবস্থার প্রতি তার গভীর সম্মান রয়েছে। (প্রেরিত ৭:৩৮) তিনি এও বলেন, মোশির বয়স যখন ৪০ বছর ছিল, তখন তাকে সেই ব্যক্তিরাই ত্যাগ করেছিল, যাদের তিনি উদ্ধার করার জন্য প্রচেষ্টা করছিলেন। এর প্রায় ৪০ বছর পর সেই ব্যক্তিরা মোশির নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। b স্তিফান এগুলো বলার মাধ্যমে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন। তা হল, ঈশ্বরের লোকেরা সেই ব্যক্তিদের বার বার প্রত্যাখান করেছে, যাদের যিহোবা নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য নিযুক্ত করেছেন।

১৪. মোশির উদাহরণ ব্যবহার করে স্তিফান কোন বিষয়টা বোঝানোর চেষ্টা করেন?

১৪ স্তিফানের কথা যারা শুনছিল, তিনি তাদের মোশির একটা ভবিষ্যদ্‌বাণী মনে করিয়ে দেন যে, ইজরায়েলে মোশির মত একজন ভাববাদী আসবে। সেই ভাববাদী কে হবেন এবং লোকেরা তার সঙ্গে কেমন আচরণ করবেন এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর তিনি তার কথার শেষে দেন। কিন্তু, এখন তিনি আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বলেন। তিনি বলেন, মোশি তার অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছিলেন যে, ঈশ্বর যেকোনো ভূমিকে পবিত্র করতে পারেন, ঠিক যেমন তিনি সেই জ্বলন্ত ঝোপের আশেপাশের জায়গাকে পবিত্র করেছিলেন, যেখানে যিহোবা মোশির সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তাই এটা বলা কি ঠিক হবে, যিহোবার উপাসনা শুধুমাত্র জেরুসালেম মন্দিরের মতো একটা জায়গাতেই করা যাবে? আসুন, তা দেখি।

১৫, ১৬. (ক) স্তিফান নিজের যুক্তিকে জোরদার করার জন্য তাঁবুর বিষয়ে কী বলেছিলেন? (খ) স্তিফান শলোমনের মন্দিরের কথা উল্লেখ করে কোন বিষয়টা বোঝাতে চেয়েছিলেন?

১৫ তাঁবু ও মন্দির। (প্রেরিত ৭:৪৪-৫০) স্তিফান মহাসভার সদস্যদের বলেন, জেরুসালেমের মন্দির নির্মাণ করার আগেই যিহোবা মোশিকে তাঁবু নির্মাণ করার আদেশ দিয়েছিলেন। এই তাঁবুটা এমন ছিল, যেটাকে খুলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া যেত আর মোশি সেই তাঁবুতেই যিহোবার উপাসনা করতেন। তাহলে কেউ কি এটা দাবি করতে পারে, মোশি নিজে যে-তাঁবুতে উপাসনা করতেন, সেটা মন্দিরের চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল?

১৬ স্তিফান বলেন, পরে শলোমন যদিও ঈশ্বরের জন্য জেরুসালেমে মন্দির তৈরি করেন, কিন্তু তার প্রার্থনায় শলোমন এক গুরুত্বপূর্ণ সত্য তুলে ধরেন। স্তিফান শলোমনের কথা উল্লেখ করে বলেন, “পরমেশ্বর তো মানুষের হাতে তৈরি কোনো গৃহে বাস করেন না।” (প্রেরিত ৭:৪৮; ২ বংশা. ৬:১৮) যিহোবা যদিও তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য মন্দিরকে ব্যবহার করেছেন, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, তিনি সেখানে বাস করেন। তাই, ঈশ্বরের উপাসকদের কি এটা চিন্তা করা সঠিক হবে যে, সত্য উপাসনা মানুষের হাতে তৈরি কোনো মন্দিরেই করা যেতে পারে? স্তিফান তার এই যুক্তিকে আরও জোরদার করার জন্য যিশাইয় পুস্তক থেকে উল্লেখ করে বলেন, “যিহোবা বলেন, স্বর্গ আমার সিংহাসন আর পৃথিবী আমার পাদপীঠ। তোমরা আমার জন্য কীরকম গৃহই-বা তৈরি করবে? আর কোথায়ই-বা আমার বিশ্রামের স্থান তৈরি করবে? আমার হাতই কি এই সমস্ত কিছু তৈরি করেনি?”—প্রেরিত ৭:৪৯, ৫০; যিশা. ৬৬:১, ২.

১৭. স্তিফান নিজের পক্ষ সমর্থন করে যা-কিছু বলেছিলেন, তা থেকে কীভাবে আমরা বুঝতে পারি (ক) যারা তার কথা শুনছিল, তাদের ধারণা ভুল ছিল এবং (খ) তার উপর আনা অভিযোগ মিথ্যে ছিল?

১৭ এখন পর্যন্ত মহাসভার সামনে দেওয়া স্তিফানের যুক্তিগুলো থেকে আপনি কি একমত হবেন না যে, তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিপূর্বক তার বিরোধীদের দেখিয়েছিলেন, তাদের ধারণা ভুল? তিনি দেখিয়েছিলেন, যিহোবা ঈশ্বর কঠোর নন আর কোনো রীতিনীতির দ্বারা আবদ্ধ নন বরং তিনি তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রদবদল করতে ইচ্ছুক। যারা সেই সুন্দর জেরুসালেম মন্দিরকে সম্মান করার ক্ষেত্রে আর ছোটো থেকেই মোশির ব্যবস্থা এবং পরম্পরাগত রীতিনীতি পালন করার ক্ষেত্রে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তারা আসলে এই বিষয়টা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল যে, মন্দির নির্মাণ করার এবং ব্যবস্থা দেওয়ার পিছনে ঈশ্বরের কোন উদ্দেশ্য ছিল! স্তিফানের কথাগুলো লোকদের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা নিয়ে চিন্তা করতে পরিচালিত করেছিল: মন্দির এবং ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখানোর চেয়ে যিহোবার আজ্ঞা পালন করা কী আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়? নিশ্চিতভাবেই, স্তিফান নিজের পক্ষ সমর্থন করে যে-দারুণ যুক্তিগুলো দেখিয়েছিলেন, সেটা থেকে প্রমাণ হয়ে যায় যে, তিনি ভুল কিছু করছিলেন না বরং সঠিকভাবে যিহোবার আজ্ঞা পালন করছিলেন।

১৮. কীভাবে আমরা স্তিফানের উদাহরণ অনুকরণ করে চলার চেষ্টা করতে পারি?

১৮ স্তিফানের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? স্তিফান খুব ভালোভাবে শাস্ত্রের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। একইভাবে আমাদেরও ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে ভালোভাবে পরিচিত হওয়ার জন্য গভীরভাবে তা নিয়ে অধ্যয়ন করা উচিত। আর তখনই আমরা “সত্যের বাক্য সঠিকভাবে ব্যবহার” করতে পারব। (২ তীম. ২:১৫) স্তিফানের কাছ থেকে এটাও শিখতে পারি যে, লোকদের সঙ্গে আমাদের সদয়ভাবে কথা বলতে হবে আর তাদের রাগিয়ে না তুলে, কৌশলতার সঙ্গে কথা বলতে হবে। স্তিফান যাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তারা তার শত্রু ছিল। তারপরও তিনি যতটা সম্ভব এমন বিষয় নিয়ে কথা বলেছিলেন, যে-বিষয়ে তারা শুধু একমতই হয়নি বরং সেটাকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখেছিল। শুধু তাই নয়, তিনি সেই বড়ো বড়ো আধিকারিকদের সঙ্গে সম্মানের সঙ্গে কথা বলেছিলেন আর তাদের “পিতৃতুল্য বয়স্ক ব্যক্তিরা” বলে সম্বোধন করেছিলেন। (প্রেরিত ৭:২) একইভাবে আমাদেরও অন্যদের ঈশ্বরের বাক্যের সত্য “মৃদুতা এবং গভীর সম্মানের সঙ্গে” জানাতে হবে। —১ পিতর ৩:১৫.

১৯. কীভাবে স্তিফান সাহসের সঙ্গে মহাসভাকে যিহোবার বিচারের বার্তা জানিয়েছিলেন?

১৯ আমরা লোকদের সঙ্গে সদয়ভাবে আচরণ করি ঠিকই, কিন্তু তারা রেগে যাবে বলে বাইবেলের সত্য জানানোর ক্ষেত্রে আমরা পিছপা হই না কিংবা যিহোবার বিচার বার্তাকে অন্যদের কাছে হালকাভাবে তুলে ধরি না। এই ক্ষেত্রেও স্তিফান এক ভালো উদাহরণ স্থাপন করেছেন। তিনি নিশ্চয়ই এটা বুঝেছিলেন, মহাসভার সামনে তিনি যে-প্রমাণগুলো দেখিয়েছিলেন, সেখানে থাকা কঠিন হৃদয়ের বিচারকদের কান পর্যন্ত সেগুলো পৌঁছায়নি। তাই, তিনি পবিত্র শক্তির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সাহসের সঙ্গে তাদের মুখের উপর বলেন, তোমরা একেবারে তোমাদের পূর্বপুরুষদের মতো, যারা যোষেফ, মোশি এবং অন্যান্য ভাববাদীদের ত্যাগ করেছে। (প্রেরিত ৭:৫১-৫৩) এ ছাড়া, সেই বিচারকেরা মশীহকে হত্যা করেছে, যাঁর আসার বিষয়ে মোশি এবং অন্যান্য ভাববাদীরা ভবিষ্যদ্‌বাণী করেছিল। সত্যিই, তারা মোশির ব্যবস্থা কোনোভাবেই পালন করেনি!

“হে প্রভু যিশু, তোমার কাছে আমি আমার প্রাণ সমর্পণ করি” (প্রেরিত ৭:৫৪–৮:৩)

“এইসমস্ত কথা শুনে তারা রাগে ফেটে পড়ল এবং তার দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করতে লাগল।”—প্রেরিত ৭:৫৪

২০, ২১. স্তিফানের কথা শুনে মহাসভা কী করে এবং যিহোবা কীভাবে স্তিফানকে শক্তিশালী করেন?

২০ স্তিফান মহাসভাকে যে-বিষয়গুলো জানিয়েছিলেন, সেগুলো কেউ মিথ্যে প্রমাণ করতে পারিনি। সেইজন্য বিচারকেরা তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠল আর তার প্রতি কোনোরকম সম্মান না দেখিয়ে রেগে গিয়ে দাঁত কিড়মিড় করতে লাগল। বিশ্বস্ত স্তিফান বুঝতে পেরেছিলেন, তার উপর আর কোনো দয়া দেখানো হবে না, ঠিক যেমন তার প্রভু যিশুর প্রতিও দেখানো হয়নি।

২১ স্তিফানের সঙ্গে যা ঘটতে চলেছে, সেটা সহ্য করার জন্য তার সাহসের প্রয়োজন। তাই, যিহোবা ঈশ্বর একটা দর্শন দিয়ে তাকে শক্তিশালী করেন। সেই দর্শনে স্তিফান ঈশ্বরের মহিমা দেখতে পান আর তিনি যিশুকে তাঁর পিতা যিহোবার ডান পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। তিনি যখন মহাসভার বিচারকদের বলেন যে, তিনি দর্শনে কী দেখতে পাচ্ছেন, তখন তারা সবাই নিজের হাত দিয়ে কান বন্ধ করে নিল। কিন্তু কেন? কারণ একদিন এই আদালতে দাঁড়িয়ে যিশু বলেছিলেন, আমি মশীহ আর খুব শীঘ্রই আমি আমার পিতার কাছে গিয়ে তাঁর ডান দিকে বসব। (মার্ক ১৪:৬২) স্তিফান যে-দর্শন দেখেছিলেন, তা থেকে এটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছিল যে, যিশু সত্যি কথা বলেছিলেন। এই মহাসভাই যিশুকে ধরিয়ে দিয়েছিল এবং তাকে মেরে ফেলেছিল। তাই যখন স্তিফান এটা বলছিলেন যে, তিনি দর্শনে কী দেখতে পাচ্ছেন, তখন তারা স্তিফানের উপর রেগে লাল হয়ে যায় এবং সবাই একসঙ্গে মিলে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আর তাকে পাথর মারার জন্য টেনে-হেঁচড়ে বাইরে নিয়ে যায়। c

২২, ২৩. স্তিফান এবং তার প্রভু যিশুর মৃত্যুর মধ্যে কোন মিল রয়েছে এবং বর্তমানে খ্রিস্টানেরাও স্তিফানের মতো যিশুর প্রতিজ্ঞার উপর কেন বিশ্বাস রাখতে পারে?

২২ স্তিফান মারা যাওয়ার সময় ঠিক সেইরকম অনুভব করেছিলেন, যেমনটা তার প্রভু যিশু তাঁর মৃত্যুর সময় অনুভব করেছিলেন। স্তিফান যিহোবার উপর পূর্ণ আস্থা রেখে এবং মনের শান্তি নিয়ে মারা গিয়েছিলেন এবং মারা যাওয়ার আগে তিনিও তার হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য মিনতি করেন। তিনি বলেন, “হে প্রভু যিশু, তোমার কাছে আমি আমার প্রাণ সমর্পণ করি।” হয়তো স্তিফান এই কথাগুলো বলেছিলেন কারণ তিনি মারা যাওয়ার সময়েও দর্শনে মনুষ্যপুত্রকে তাঁর পিতার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন। আর নিশ্চিতভাবেই, তিনি যিশুর এই কথাগুলো থেকেও শক্তি লাভ করেছিলেন যে, “আমিই পুনরুত্থান ও জীবন।” (যোহন ১১:২৫) শেষে তিনি ঈশ্বরের কাছে চিৎকার করে এই মিনতি করেন, “যিহোবা, এদের বিরুদ্ধে এই পাপ ধোরো না।” এটা বলার পর তিনি মৃত্যুতে ঘুমিয়ে পড়লেন।—প্রেরিত ৭:৫৯, ৬০.

২৩ খ্রিস্টের শিষ্যদের মধ্যে থেকে স্তিফানই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি শহিদ হয়েছিলেন। (“ কোন অর্থে স্তিফান একজন ‘শহিদ’ ছিলেন?” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।) দুঃখের বিষয় হল, স্তিফানের পরেও অনেক শিষ্যকে শহিদ হতে হয়েছিল। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত ধর্মীয় গোঁড়া ব্যক্তি, রাজনৈতিক চরমপন্থী এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর বিরোধীরা যিহোবার কিছু বিশ্বস্ত দাসদের হত্যা করেছে। তারপরও আমরা স্তিফানের মতো যিশুর প্রতিজ্ঞার উপর বিশ্বাস রাখতে পারি যে, তিনি মৃতদের পুনরুত্থিত করবেন। বর্তমানে, যিশু একজন রাজা হিসেবে রাজত্ব করছেন এবং তাঁর পিতা তাঁকে অনেক ক্ষমতা দিয়েছেন। তাই যিশুর বিশ্বস্ত শিষ্যেরা, যারা মৃত্যুতে ঘুমিয়ে রয়েছে, তাদের পুনরুত্থিত করার জন্য কোনো কিছুই তাঁকে বাধা দিতে পারবে না।—যোহন ৫:২৮, ২৯.

২৪. শৌল স্তিফানকে হত্যা করার ক্ষেত্রে কীভাবে সমর্থন করেছিলেন এবং বিশ্বস্ত ব্যক্তি স্তিফানের উদাহরণ কীভাবে পরবর্তী সময়ে খ্রিস্টানদের সাহায্য করেছিল?

২৪ স্তিফানের প্রতি যখন এগুলো ঘটছিল, তখন শৌল নামে একজন যুবক ব্যক্তি এই সব কিছু দেখছিলেন। স্তিফানের হত্যার পিছনে তার পুরোপুরি সমর্থন ছিল। এমনকী যারা স্তিফানকে পাথর মারছিল, তাদের কাপড়গুলো তিনি পাহারা দিচ্ছিলেন। এর কিছু সময় পর, শৌল খ্রিস্টানদের তাড়না করার জন্য নেতৃত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু, স্তিফানের মৃত্যু পরবর্তী সময়ে মণ্ডলীতে অনেক ভালো প্রভাব ফেলেছিল আর তার সাহসিকতার উদাহরণ অনেক খ্রিস্টানকে শক্তিশালী করেছিল। তারা তাড়নার ঝড়ের মধ্যেও বিশ্বস্ত থাকতে পেরেছিল এবং স্তিফানের মতো তারাও সাহসের সঙ্গে তাদের বিশ্বাসের লড়াইয়ে জয় লাভ করেছিল। শুধু তাই নয়, কিছু সময় পর শৌল নিজেও একজন খ্রিস্টান হয়েছিলেন আর পরে পৌল নামে পরিচিত হয়েছিলেন। শৌল নিজের কাজের জন্য গভীরভাবে অনুতপ্ত হয়েছিলেন যে, তিনি স্তিফানের হত্যায় সমর্থন করে কত বড়ো পাপ করেছেন। (প্রেরিত ২২:২০) তিনি বলেছিলেন, “আমি ঈশ্বরনিন্দুক, তাড়নাকারী ও অহংকারী ছিলাম।” (১ তীম. ১:১৩) পৌল তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত হয়তো স্তিফানকে ভুলতে পারেননি। এ ছাড়া, স্তিফানের কথাগুলো পৌল জীবনে ভুলতে পারেননি। কীভাবে আমরা তা বলতে পারি? কারণ পৌলও তার কিছু বক্তৃতায় এবং চিঠিতে সেই বিষয়টা উল্লেখ করেছিলেন, যেটা স্তিফান বলেছিলেন। (প্রেরিত ৭:৪৮; ১৭:২৪; ইব্রীয় ৯:২৪) সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পৌলও স্তিফানের মতো বিশ্বাস এবং সাহস দেখিয়েছিলেন। পৌল স্তিফানের উদাহরণ আরও ভালোভাবে অনুসরণ করেছিলেন, যিনি “ঈশ্বরের অনুগ্রহে ও শক্তিতে পূর্ণ” ছিলেন। আমাদের বিষয় কী বলা যায়? আমরাও কি স্তিফানের উদাহরণ অনুসরণ করব?

a এই বিরোধীদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি “স্বাধীনতা লাভ করেছে এমন ব্যক্তিদের সমাজগৃহ নামে পরিচিত দলের কয়েক জন সদস্য” ছিল। এই ব্যক্তিরা হয়তো প্রথমে রোমীয়দের দাস ছিল, পরে স্বাধীনতা লাভ করেছিল। এই দাসেরা হয়তো ধর্মান্তরিত ব্যক্তি ছিল। এদের মধ্যে কেউ কেউ কিলিকিয়ার বাসিন্দা ছিল, যেখানে তার্ষের শৌলও থাকতেন। বিবরণ এটা জানায় না যে, শৌল সেই এলাকার বিরোধীদের মধ্যে ছিলেন কী না, যারা স্তিফানের সঙ্গে তর্কবিতর্ক করতে গিয়ে হেরে গিয়েছিল।

b স্তিফান নিজের পক্ষ সমর্থন করে মোশির বিষয়ে অনেক কিছু বলেছিলেন, সেখান থেকে আমরা এমন কিছু বিষয় জানতে পারি, যা বাইবেলে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। যেমন মোশি মিশরীয় শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন, মিশর থেকে প্রথম বার পালিয়ে যাওয়ার সময় তার বয়স কত ছিল এবং তিনি মিদিয়নে কত দিন বিদেশি হিসেবে ছিলেন।

c রোমীয় সরকার মহাসভাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার অধিকার দিয়েছিল কি না, তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। (যোহন ১৮:৩১) তাই এমনটা মনে হয়, স্তিফানকে মেরে ফেলার আদেশ আদালত দেয়নি বরং উত্তেজিত জনতা রেগে গিয়ে তাকে মেরে ফেলেছিল।