সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় ১০

“যিহোবার বাক্য ছড়িয়ে পড়তে লাগল”

“যিহোবার বাক্য ছড়িয়ে পড়তে লাগল”

পিতরকে কারাগার থেকে মুক্ত করা হয় এবং বিরোধিতা সত্ত্বেও সুসমাচার ছড়িয়ে পড়তে থাকে

প্রেরিত ১২:১-২৫ পদের উপর ভিত্তি করে

১-৪. পিতর কোন কঠিন পরিস্থিতিতে ছিলেন এবং আপনি যদি তার জায়গায় থাকতেন, তা হলে আপনার কেমন লাগত?

 লোহার বড়ো দরজাটা ধরাম করে বন্ধ হয়ে যায় এবং দু-জন রোমীয় সৈন্য পিতরকে লোহার শিকলে বেঁধে ধীরে ধীরে কারাগারের ভিতরে নিয়ে যায় আর কারাকক্ষে বন্ধ করে দেয়। এখন তার সঙ্গে কী করা হবে? তা জানার জন্য তাকে হয়তো এখানে ঘন্টার পর ঘন্টা অথবা কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে। এখন তার চোখের সামনে, সেই কারাকক্ষের চার দেওয়াল, দরজা, তাকে বেঁধে রাখা শিকল আর রোমীয় সৈন্যেরা ছাড়া কিছুই নেই।

দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পর, কেউ একজন আসে এবং পিতরকে একটা খারাপ খবর দেয়। রাজা আগ্রিপ্প সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, তাকে মেরে ফেলবেন। a নিস্তারপর্বের পর পিতরকে জনতার সামনে নিয়ে আসা হবে এবং রাজা হেরোদ সকলের সামনে তার মৃত্যু ঘোষণা করবেন। এটা হেরোদের কাছ থেকে জনতার জন্য এক উপহার। শুধুমাত্র ভয় দেখানোর জন্য হেরোদ পিতরকে এই খবর পাঠাননি, তিনি সত্যি সত্যিই তাকে মেরে ফেলতে চান। কারণ কিছু সময় আগেই, হেরোদ পিতরের বন্ধু প্রেরিত যাকোবকে হত্যা করিয়েছেন।

সন্ধ্যা বেলায় পিতর কারাকক্ষে বসে গভীরভাবে চিন্তা করছেন। তিনি কী চিন্তা করছেন? তার হয়তো, যিশুর একটা কথা বার বার মনে পরছে যে, একদিন কেউ আসবে, তোমাকে জোর করে বেঁধে নিয়ে যাবে আর মেরে ফেলবে। (যোহন ২১:১৮, ১৯) পিতর হয়তো ভাবছেন, সেই সময়টা এসে গিয়েছে।

পিতরের জায়গায় সেই কারাকক্ষে যদি আপনি থাকতেন, তা হলে আপনার কেমন লাগত? অনেকে এটা ভেবে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়তে পারে যে, তার আর কোনো আশা নেই। কিন্তু, যিশুর প্রকৃত শিষ্যেরা এভাবে চিন্তা করে না। এখন আসুন দেখি, পিতর এবং অন্যান্য খ্রিস্টানেরা এই কঠিন পরিস্থিতিতে কী করেছিল আর সেখান কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি।

‘মণ্ডলী ঐকান্তিকভাবে প্রার্থনা করছিল’ (প্রেরিত ১২:১-৫)

৫, ৬. (ক) কীভাবে হেরোদ আগ্রিপ্প ১ম খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর উপর তাড়না নিয়ে এসেছিলেন এবং কেন? (খ) কেন যাকোবের মৃত্যুর পর খ্রিস্টীয় মণ্ডলী কষ্ট পেয়েছিল?

আমরা যেমন আগের অধ্যায়ে দেখেছি, ন-যিহুদি কর্ণীলিয় এবং তার পরিবার যখন খ্রিস্টান হয়েছিল, তখন সেটা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর জন্য এক চমৎকার ঘটনা ছিল। কিন্তু, যে-যিহুদিরা খ্রিস্টান হয়নি, তারা এটা দেখে অনেক রেগে গিয়েছিল। তারা এমনকী এটা চিন্তাও করতে পারেনি যে, যিহুদি খ্রিস্টানেরা কীভাবে ন-যিহুদি খ্রিস্টানদের সঙ্গে একসঙ্গে উপাসনা করছে।

চালাক হেরোদ সুযোগের সদ্‌ব্যবহার করেন। তিনি জানতেন, যদি তিনি যিহুদিদের অনুগ্রহ লাভ করতে পারেন, তা হলে তার নিজের জায়গাটা শক্ত হয়ে যাবে। তাই, তিনি খ্রিস্টানদের উপর চরম তাড়না করতে শুরু করেন। তিনি যখন জানতে পারেন যে, ‘যোহনের ভাই যাকোব’ যিশুর অনেক কাছের শিষ্য, তখন তিনি তাকে “খড়্গ দিয়ে হত্যা” করান। (প্রেরিত ১২:২) খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর জন্য যাকোবের মৃত্যু মেনে নেওয়া অনেক কষ্টকর ছিল। যাকোব সেই তিন জন শিষ্যের মধ্যে এক জন ছিলেন, যিনি যিশুকে রূপান্তরিত হতে দেখেছিলেন আর এমন আশ্চর্য কাজ দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন, যা অন্যান্য প্রেরিতেরা পাননি। (মথি ১৭:১, ২; মার্ক ৫:৩৭-৪২) শুধু তাই নয়, যাকোব এবং তার ভাই যোহন অনেক উদ্যোগের সঙ্গে ঈশ্বরের সেবা করতেন। সেইজন্য যিশু তাদের নাম দিয়েছিলেন, “মেঘধ্বনির পুত্রেরা।” (মার্ক ৩:১৭) নিশ্চিতভাবে, যাকোব একজন নির্ভীক ও বিশ্বস্ত সেবক ছিলেন। তাই, যাকোবের মৃত্যুর পর মণ্ডলী অনেক কষ্ট পেয়েছিল কারণ তাদের একজন প্রিয় ভাইকে তারা হারিয়ে ফেলেছে।

৭, ৮. পিতরকে যখন কারাগারে বন্দি করা হয়, তখন খ্রিস্টান ভাই-বোনেরা কী করেছিল?

যাকোবের মৃত্যুতে যিহুদিরা খুবই খুশি হয়, ঠিক যেমনটা হেরোদ আগ্রিপ্প চেয়েছিলেন। আর এর ফলে, হেরোদ আগ্রিপ্পর সাহস অনেক বেড়ে যায় এবং তিনি পিতরকে তার পরের টার্গেট করেন। এই অধ্যায়ের শুরুতে যেমন বলা হয়েছে, তিনি পিতরকে গ্রেপ্তার করান। কিন্তু, হেরোদ আগ্রিপ্প সম্ভবত জানতেন, কিছুদিন আগে যখন প্রেরিতদের কারাগারে বন্দি করা হয়েছিল, তখন তারা অলৌকিকভাবে সেখান থেকে ছাড়া পেয়ে গিয়েছিলেন। এই বিষয়ে আমরা ৫ অধ্যায়ে পড়েছি। হেরোদ চাইতেন না যে, পিতর কোনোভাবেই ছাড়া পেয়ে যাক। তাই, হেরোদ পিতরকে পাহারা দেওয়ার জন্য ১৬ জন সৈন্যকে নিযুক্ত করেন, যাতে তারা দু-জন দু-জন করে পাহারা দিতে পারে। পিতরের হাত দুটো শিকল দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয় আর সেই শিকল দুটো সেই দু-জন সৈন্যের হাতেও বেঁধে দেওয়া হয়। এ ছাড়া, তিনি সৈন্যদের হুমকি দেন, পিতর যদি সেখান থেকে পালিয়ে যান, তা হলে সৈন্যদের হত্যা করা হবে। পিতরকে এমন একটা পরিস্থিতিতে দেখে তার খ্রিস্টীয় ভাই-বোনেরা কী করতে পারে?

তারা ভালোভাবেই জানত এখন তাদের কী করতে হবে। প্রেরিত ১২:৫ পদে আমরা পড়ি: “পিতর যখন কারাগারে ছিলেন, তখন মণ্ডলী তার জন্য ঈশ্বরের কাছে ঐকান্তিকভাবে প্রার্থনা করছিল।” তারা তাদের প্রিয় ভাই পিতরের জন্য হৃদয় থেকে প্রার্থনা করছিল। তারা যাকোবের মৃত্যুর কারণে হতাশ হয়ে গিয়ে হাল ছেড়ে দেয়নি। তাদের এই বিশ্বাস ছিল, যিহোবা এখনও তাদের প্রার্থনা শোনেন। নিশ্চিতভাবে, আমাদের প্রার্থনা যিহোবার কাছে খুবই মূল্যবান। আমরা যদি তাঁর ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে প্রার্থনা করি, তা হলে অবশ্যই তিনি সেই প্রার্থনার উত্তর দেবেন। (ইব্রীয় ১৩:১৮, ১৯; যাকোব ৫:১৬) বর্তমানে, খ্রিস্টানদের এই বিষয়টা সবসময় মনে রাখা উচিত।

 ৯. আমরা সেই ভাই-বোনদের কাছ থেকে কী শিখতে পারি, যারা পিতরের জন্য প্রার্থনা করেছিল?

আপনি কি এমন ভাই-বোনদের জানেন যারা বড়ো বড়ো সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে? হতে পারে, তারা তাদের বিশ্বাসের কারণে তাড়না সহ্য করছে অথবা তারা এমন দেশে বসবাস করে, যেখানে সরকার আমাদের কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কিংবা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তাদের হয়তো বড়ো কোনো ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। আমরা কী সেই ভাই-বোনদের জন্য হৃদয় থেকে প্রার্থনা করতে পারি না? আপনি হয়তো এমন ভাই-বোনদেরও জানেন, যাদের সমস্যাগুলো সবার নজরে আসে না। হতে পারে, তাদের পরিবারে কোনো সমস্যা রয়েছে, তারা হয়তো হতাশার মধ্যে রয়েছে অথবা তারা হয়তো বিশ্বাসের কারণে কোনো পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রার্থনা করার আগে চিন্তা করুন, আপনি কোন ভাই-বোনদের নাম প্রার্থনায় উল্লেখ করবেন। এটা করার মাধ্যমে আপনি “প্রার্থনা-শ্রবণকারী” যিহোবার কাছে সেই ভাই-বোনদের জন্য বিনতি করতে পারবেন, যারা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। (গীত. ৬৫:২) পরবর্তী সময়ে, আপনিও যখন কোনো সমস্যার মধ্য দিয়ে যাবেন, তখন ভাই-বোনেরাও আপনার জন্য প্রার্থনা করবে।

সেই ভাই-বোনদের জন্য আমরা প্রার্থনা করি, যারা তাদের বিশ্বাসের কারণে জেলে রয়েছে

“আমার পিছন পিছন এসো” (প্রেরিত ১২:৬-১১)

১০, ১১. কীভাবে স্বর্গদূত পিতরকে কারাগার থেকে মুক্ত করেছিলেন?

১০ পিতর কি এটা ভেবে ভয় পাচ্ছেন যে, তাকে খুব শীঘ্র মেরে ফেলা হবে? আমরা নিশ্চিতভাবে তা বলতে পারি না। তবে, বিবরণ আমাদের জানায়, পিতর সেই কারাগারে শেষ রাতে দু-জন সৈন্যের মাঝে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন। পিতরের অগাধ বিশ্বাস ছিল যে, আগামীকাল তার প্রতি যাই ঘটুক না কেন, তিনি সবসময় যিহোবার স্মরণে সুরক্ষিত থাকবেন। (রোমীয় ১৪:৭, ৮) কিন্তু, এখন যা-কিছু ঘটতে যাচ্ছে, তা হয়তো পিতর কখনো স্বপ্নেও ভাবেননি। হঠাৎ করে কারাকক্ষ আলোতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। একজন স্বর্গদূত দ্রুত পিতরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলেন। আশ্চর্যের বিষয় হল, এই সমস্ত কিছু সেই সৈন্যদের চোখের সামনেই ঘটছে, কিন্তু তারা কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। এরপর, পিতরের হাত থেকে শিকল আপনা-আপনি খুলে পড়ে যায়।

“তারা যেখান দিয়ে নগরে যাওয়া যায়, সেই লোহার ফটকের কাছে পৌঁছালেন আর সেই ফটক নিজে নিজে খুলে গেল।”—প্রেরিত ১২:১০

১১ তারপর, স্বর্গদূত পিতরকে একের পর এক বেশ কিছু নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, “তাড়াতাড়ি ওঠো! . . . প্রস্তুত হও এবং জুতো পরো। . . . তোমার চাদরটা জড়িয়ে নাও।” পিতর দ্রুত তার কথা শোনেন। এরপর স্বর্গদূত তাকে বললেন, “আমার পিছন পিছন এসো।” আর পিতর তার পিছন পিছন যেতে লাগলেন। তারা দু-জন সেই কারাকক্ষ থেকে বেরিয়ে, বাইরে থাকা সৈন্যদের সামনে দিয়ে চুপিসারে এগিয়ে গিয়ে, লোহার বড়ো ফটকের কাছে পৌঁছায়। কীভাবে তারা এখন সেই ফটক দিয়ে বাইরে বের হবে? পিতরের মনে এই প্রশ্ন আসার আগেই “সেই ফটক নিজে নিজে খুলে” যায় এবং তারা সেই কারাগার থেকে বাইরে বেরিয়ে যান। দেখতে দেখতে তারা একটা রাস্তার কাছে পৌঁছায় এবং তারপর স্বর্গদূত তাকে ছেড়ে চলে যান। পিতর এতক্ষণ মনে করছিলেন যে, তিনি একটা দর্শন দেখছেন, কিন্তু তিনি রাস্তায় পৌঁছানোর পর বুঝতে পারেন, এটা কোনো দর্শন ছিল না। তিনি সত্যিই মুক্ত হয়ে গিয়েছেন!—প্রেরিত ১২:৭-১১.

১২. যিহোবা যেভাবে পিতরকে মুক্ত করেছেন, তা নিয়ে চিন্তা করলে কেন আমরা সাহস লাভ করি?

১২ আমরা এটা জেনে কি সান্ত্বনা লাভ করি না যে, যিহোবার কাছে অসীম ক্ষমতা রয়েছে এবং তিনি তাঁর উপাসকদের যেকোনো সমস্যা থেকে উদ্ধার করতে পারেন? পিতরকে এমন একজন রাজা কারাগারে বন্দি করেছিলেন, যার পিছনে সেই সময়কার সবচেয়ে ক্ষমতাশালী সাম্রাজ্যের সমর্থন ছিল। তবুও, সেই রাজা পিতরের কিছুই করতে পারেননি এবং পিতর খুব সহজেই সেই কারাগার থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন। এটা ঠিক যে, যিহোবা তাঁর সমস্ত উপাসককে সমস্যা থেকে উদ্ধার করার জন্য এইরকম আশ্চর্য কাজ করেন না। যেমন, তিনি প্রেরিত যাকোবকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেননি। পরবর্তী সময়ে, তিনি পিতরকেও মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেননি। আর যিশুর ভবিষ্যদ্‌বাণী সত্যিই পূর্ণ হয়েছিল। বর্তমানেও, আমরা খ্রিস্টানেরা এটা আশা করি না যে, যিহোবা আমাদের আশ্চর্যভাবে যেকোনো সমস্যা থেকে উদ্ধার করবেন। কিন্তু, আমরা এই বিষয়টা সবসময় মনে রাখতে চাই, যিহোবা পরিবর্তিত হননি। (মালাখি ৩:৬) শীঘ্রই এমন সময় আসছে, যখন তিনি তাঁর পুত্রকে ব্যবহার করে, লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিকে মৃত্যুর কারাগার থেকে রক্ষা করবেন, যেখান থেকে মুক্ত হওয়া এখনও পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। (যোহন ৫:২৮, ২৯) বর্তমানে, আমরা যখন বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে যাই, তখন বাইবেলের এই প্রতিজ্ঞা আমাদের অনেক সাহস জোগায়।

‘তারা তাকে দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে গেল’ (প্রেরিত ১২:১২-১৭)

১৩-১৫. (ক) পিতরের আসার খবর শুনে মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা কী করেছিল? (খ) পিতরের পর প্রেরিত বই আমাদের কার বিবরণ সম্বন্ধে জানায় আর কোন বিষয়ে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি?

১৩ পিতর মাঝরাতে সেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চিন্তা করছেন, এখন তিনি কোথায় যাবেন। ঠিক তখনই তার মনে পড়ে, মরিয়ম নামে একজন বোন কাছাকাছি থাকেন। তিনি হয়তো একজন বিধবা ছিলেন এবং অনেক ধনীও ছিলেন। মরিয়মের ঘর অনেক বড়ো ছিল, সেইজন্য একটা মণ্ডলী সেখানে একত্রিত হয়ে সভা করতে পারত। তিনি যোহনের মা ছিলেন। এই যোহনকে মার্ক বলেও ডাকা হত। প্রেরিত বইয়ে প্রথম বার এই বিবরণে মার্কের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে আর তিনি পরবর্তী সময়ে পিতরের ছেলে হয়ে উঠেছিলেন। (১ পিতর ৫:১৩) পিতর মরিয়মের বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করেন। সেখানে মণ্ডলীর অনেক ভাই-বোন একত্রিত হয়ে অনেক রাত পর্যন্ত পিতরের জন্য প্রার্থনা করছিল। তারা নিশ্চয়ই পিতরের মুক্তির জন্য প্রার্থনা করছিল। কিন্তু, তাদের কোনো ধারণাই ছিল না যে, যিহোবা কীভাবে তাদের প্রার্থনার উত্তর দিতে যাচ্ছেন!

১৪ পিতর মরিয়মের বাড়ি পৌঁছানোর পর দরজায় কড়া নাড়েন। রোদা নামে একজন দাসী দরজা খুলতে আসেন। রোদা হল একটা গ্রিক নাম, যার অর্থ “গোলাপ।” পিতরের গলার স্বর শুনে রোদা বিশ্বাস করতে পাচ্ছিলেন না। তিনি এতটাই আনন্দিত হয়েছিলেন যে, দরজা না খুলে তিনি দৌড়ে ভিতরে গেলেন আর শিষ্যদের বললেন, পিতর দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন। শিষ্যেরা তার কথা বিশ্বাস না করে তাকে বলতে লাগল, তিনি পাগল হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু, তিনি তাদের বলতেই থাকেন, সত্যিই পিতর বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। এরপর, কিছু ভাই-বোন বলতে থাকে, রোদা হয়তো কোনো স্বর্গদূতকে দেখেছে, যিনি পিতরের হয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন। (প্রেরিত ১২:১২-১৫) এদিকে পিতর ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে এখনও দরজায় কড়া নাড়ছেন।

১৫ শিষ্যেরা এসে যখন দরজা খোলে, তখন তারা “তাকে দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে গেল।” (প্রেরিত ১২:১৬) আনন্দে তারা হইচই করতে শুরু করে। পিতর তাদের শান্ত হতে বলেন, যেন তারা পুরো ঘটনাটা ভালোভাবে শুনতে পারে। সমস্ত ঘটনা বলার পর, পিতর তাদের বলেন, তারা যেন শিষ্য যাকোব এবং অন্যান্য ভাইদের এই খবরটা জানায়। এরপর, তিনি দ্রুত সেখান থেকে চলে যান, যাতে হেরোদের সৈন্যেরা তাকে খুঁজতে খুঁজতে সেখানে এসে না পড়ে। তারপর, তিনি এক সুরক্ষিত জায়গায় গিয়ে সেবা করতে থাকেন। এখান থেকে প্রেরিত বইয়ে পৌলের প্রচার কাজ এবং যাত্রার বিবরণ শুরু হয়। পিতরের বিষয়ে আমরা আরও একবার প্রেরিত ১৫ অধ্যায়ে পাই, যেখানে ত্বকচ্ছেদের বিষয়টা সমাধান করা হয়েছিল। এই ঘটনার পর, তার বিষয়ে আর কোথাও উল্লেখ পাওয়া যায় না। তবে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, পিতর যেখানেই গিয়ে থাকুন না কেন, নিশ্চয়ই সেখানকার ভাই-বোনদের উৎসাহিত করেছিলেন। সেই রাতে পিতর যখন মরিয়মের ঘরে থাকা সমস্ত শিষ্যদের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন, তখন নিশ্চয়ই তারা অনেক আনন্দিত হয়েছিল।

১৬. কেন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, ভবিষ্যতে আমাদের জন্য প্রচুর আনন্দ অপেক্ষা করছে?

১৬ যিহোবা কখনো কখনো তাঁর দাসদের এত আনন্দ দেন যে, তারা আত্মহারা হয়ে পরে এবং আনন্দে কেঁদে ফেলে। পিতর মুক্ত হওয়ার রাতে সেই খ্রিস্টীয় ভাই-বোনেরা ঠিক এইরকমই আনন্দ পেয়েছিল। বর্তমানেও, যখন যিহোবা আমাদের উপর আশীর্বাদ বর্ষণ করেন, তখন আমরাও ঠিক একইরকম অনুভব করি। (হিতো. ১০:২২) একটু চিন্তা করুন, ভবিষ্যতে আমরা আরও কতই-না আনন্দ লাভ করব! সেইসময় যিহোবা পৃথিবীতে তাঁর সমস্ত প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করবেন আর আমরা যিহোবার কাছ থেকে অনেক চমৎকার আশীর্বাদ লাভ করব। যে-আশীর্বাদগুলোর বিষয়ে আমরা কল্পনাও করতে পারি না। আমরা যদি তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকি, তা হলে আমরা সেই সময়টা অবশ্যই দেখতে পাব।

“যিহোবার স্বর্গদূত তাকে আঘাত করলেন” (প্রেরিত ১২:১৮-২৫)

১৭, ১৮. কেন লোকেরা হেরোদকে তোষামোদ করতে শুরু করেছিল?

১৭ হেরোদ যখন জানতে পারেন যে, পিতর কারাগার থেকে পালিয়ে গিয়েছেন, তখন তিনি হতবাক হয়ে যান। তিনি দ্রুত পিতরকে খোঁজার জন্য চিরুনি তল্লাশি করার আদেশ দেন। এরপর, তিনি রক্ষীদের জেরা করলেন আর তাদের “শাস্তি দেওয়ার আদেশ দিলেন।” তাদের হয়তো মেরে ফেলা হয়েছিল। (প্রেরিত ১২:১৯) হেরোদ খুবই নিষ্ঠুর ছিলেন, তার মধ্যে কোনো দয়া মায়া ছিল না। এই জল্লাদের কি কখনো শাস্তি হয়েছিল?

১৮ পিতরকে মারতে না পারার জন্য হেরোদ অনেক অপমান বোধ করেন আর তার অহংকার ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। তার মনে হয়েছিল, লোকদের সামনে তার আর কোনো সম্মান নেই। কিন্তু লক্ষ করুন, এরপর কী হয়। হেরোদের কিছু শত্রুরা তার সঙ্গে শান্তি স্থাপন করতে আসে। হেরোদ মনে করেন, লোকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার এটা একটা ভালো সুযোগ। একটা বড়ো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তিনি সেই বড়ো অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার জন্য উৎসুক হয়ে রয়েছেন। লূক বলেন: এই সময়ে সেখানে “হেরোদ রাজপোশাক পরে” আসেন। যিহুদি ইতিহাসবেত্তা জোসিফাস লিখেছিলেন, হেরোদ যে-পোশাকটা পরেছিলেন, সেটা রুপো দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। সেইজন্য, সেই পোশাকের উপর যখন আলো পড়ছিল, তখন আরও বেশি করে তিনি চকচকে হয়ে উঠছিলেন। এরপর, এই অহংকারী রাজা গর্বের সঙ্গে তার ভাষণ শুরু করেন। তার আওয়াজ শুনে সেখানে থাকা লোকেরা চিৎকার করে তাকে তোষামোদ করে বলতে লাগল, “এ তো মানুষের রব নয়, এ যে ঈশ্বরের রব!”—প্রেরিত ১২:২০-২২.

১৯, ২০. (ক) যিহোবা কেন হেরোদকে শাস্তি দিয়েছিলেন? (খ) হেরোদের বিবরণ পড়ে আমরা কোন নিশ্চয়তা পাই?

১৯ একমাত্র যিহোবা ঈশ্বরকে এই ধরনের প্রশংসা দেওয়া উচিত। হেরোদ যখন নিজে গৌরব পাওয়ার জন্য লোকদের প্রশংসা কুড়াচ্ছিলেন, তখন ঈশ্বর সেটা দেখছিলেন। হেরোদ চাইলে লোকদের বারণ করতে পারতেন। কিন্তু, তিনি তাদের ধমক দিয়ে বারণ তো করেননি, বরং তাদের কথায় একমত হয়েছিলেন। তার এই অহংকার ঈশ্বর দেখেছিলেন। বাইবেলে লেখা এই কথাগুলো তার প্রতি একেবারে প্রযোজ্য, “বিনাশের পূর্ব্বে অহঙ্কার।” (হিতো. ১৬:১৮) শাস্ত্রপদ বলে, “সঙ্গেসঙ্গে যিহোবার স্বর্গদূত তাকে আঘাত করলেন।” এতে “তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কীটের আক্রমণে মারা যান।” সেই স্বার্থপর ও অহংকারী ব্যক্তির কতই-না কষ্টদায়ক ও জঘন্য মৃত্যু হয়েছিল। (প্রেরিত ১২:২৩) জোসিফাসও এই একই কথা বলেছিলেন, রাজা আগ্রিপ্প হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তিনি তার মৃত্যুর আগে এই বিষয়টা স্বীকার করেন যে, লোকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ানোর জন্যই তার এই পরিণতি হয়েছে। জোসিফাস লেখেন, রাজা হেরোদ পাঁচ দিন ধরে কষ্ট পেতে পেতে মারা যান। b

২০ কখনো কখনো আমাদের মনে হতে পারে, দুষ্ট লোকেরা এত খারাপ কাজ করেই চলেছে, তবুও তাদের কোনো শাস্তি হয় না। তবে, এতে আমাদের অবাক হওয়ার কিছু নেই, “কারণ সমস্ত জগৎ শয়তানের নিয়ন্ত্রণের অধীনে রয়েছে।” (১ যোহন ৫:১৯) কিন্তু তারপরও, কখনো কখনো ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসেরা এটা দেখে দুঃখ পায় যে, দুষ্ট লোকেরা কোনো শাস্তি পাচ্ছে না। হেরোদের এই বিবরণ আমাদের নিশ্চয়তা দেয় যে, ঈশ্বর দুষ্ট লোকদের অবশ্যই শাস্তি দেবেন। আর এটা আমাদের এই বিষয়টা বুঝতে সাহায্য করে যে, তিনি ন্যায়বিচার ভালোবাসেন। (গীত. ৩৩:৫) আজ নয়তো কাল তাঁর ন্যায়বিচারের জয় অবশ্যই হবে।

২১. প্রেরিত ১২ অধ্যায় থেকে আমরা কোন বিষয়টা শিখি আর কেন এই বিষয়টা আমাদের উৎসাহিত করে?

২১ প্রেরিত ১২ অধ্যায়ের শেষে আমরা এমন এক বিষয় পড়ি, যা আমাদের অনেক উৎসাহিত করে। সেখানে লেখা আছে, “যিহোবার বাক্য ছড়িয়ে পড়তে লাগল এবং বহু লোক সেই বাক্যে বিশ্বাস করতে লাগল।” (প্রেরিত ১২:২৪) প্রচার কাজের বৃদ্ধির এই রিপোর্ট আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যিহোবা বর্তমানেও এই কাজের উপর আশীর্বাদ করছেন। তাই, এটা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, প্রেরিত ১২ অধ্যায় শুধুমাত্র একজন প্রেরিতের মৃত্যু এবং আরেকজন প্রেরিতের মুক্তির বিবরণ জানায় না। এর পরিবর্তে, এটি আমাদের জানায় যে, শয়তান খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে ধ্বংস করে দেওয়ার এবং প্রচার কাজ বন্ধ করে দেওয়ার যে-প্রচেষ্টাগুলো করেছে, যিহোবা ঈশ্বর কীভাবে সেগুলোকে ব্যর্থ করে দিয়েছেন। শয়তানের সমস্ত প্রচেষ্টা তখনও ব্যর্থ হয়েছিল আর বর্তমানেও তা হবে। (যিশা. ৫৪:১৭) তবে, আমরা যদি যিহোবা ও যিশুর পক্ষ নিই, তা হলে আমরা প্রচার কাজে অবশ্যই সফল হব। এই কথাগুলো আমাদের অনেক উৎসাহিত করে। সত্যিই, “যিহোবার বাক্য” দূরদূরান্তে ছড়িয়ে দেওয়ার কী এক বিশেষ সুযোগই না আমরা পেয়েছি!

a রাজা হেরোদ আগ্রিপ্প ১ম” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

b লক্ষ করুন, এই বিষয়ে একজন লেখক যিনি একজন ডাক্তারও ছিলেন, তিনি কী বলেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, হেরোদের অসুস্থতার লক্ষণের বিষয়ে জোসিফাস ও লূক যা বলেছেন, সেখান থেকে বোঝা যায়, হতে পারে তার অন্ত্রের মধ্যে গোলকৃমির মতো কিছু ভরে গিয়েছিল, যার ফলে তার অন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং তিনি মারা যান। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের মুখে থেকে কখনো কখনো সেই কৃমিগুলো বাইরে বেরিয়ে আসে অথবা তারা মারা যাওয়ার পর সেই কৃমিগুলো শরীরের বাইরে বেরিয়ে আসে। একটা বই বলে, “লূক একজন চিকিৎসক হওয়ায়, এই রোগের বিষয়ে তিনি এত নিখুঁতভাবে বর্ণনা করেছেন যে, সেটা আমাদের কল্পনা করতে সাহায্য করে, হেরোদের মৃত্যু কতটা ভয়ানক ছিল।”