অধ্যায় ১১
“আনন্দে এবং পবিত্র শক্তিতে পূর্ণ হতে থাকল”
বিরোধীদের সঙ্গে সঠিকভাবে আচরণ করার ক্ষেত্রে পৌল এক উত্তম উদাহরণ রাখেন
প্রেরিত ১৩:১-৫২ পদের উপর ভিত্তি করে
১, ২. বার্ণবা ও শৌলকে যে-দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, কেন অন্য যোগ্য ভাইদের চেয়ে তা আলাদা ছিল এবং কীভাবে প্রেরিত ১:৮ পদে করা ভবিষ্যদ্বাণী এই ক্ষেত্রে আরও ভালোভাবে পরিপূর্ণ হবে?
আন্তিয়খিয়ার মণ্ডলীর জন্য এটা এক আনন্দের দিন। অনেক ভাববাদী ও শিক্ষক সেখানে একত্রিত হয়েছিল। আর তাদের মধ্যে থেকে পবিত্র শক্তি বার্ণবা ও শৌলকে এক বিশেষ কাজের জন্য বাছাই করে। তাদের দূরদূরান্ত পর্যন্ত সুসমাচার পৌঁছে দিতে হবে। a (প্রেরিত ১৩:১, ২) এর আগেও বিভিন্ন এলাকায় সেবা করার জন্য যোগ্য ভাইদের পাঠানো হয়েছে। তবে, সেই এলাকায় এমন লোকেরাও ছিল, যারা ইতিমধ্যে খ্রিস্টান হয়েছে। (প্রেরিত ৮:১৪; ১১:২২) কিন্তু, এখন বার্ণবা ও শৌলকে এমন এক এলাকায় পাঠানো হচ্ছে, যেখানে বেশিরভাগ লোক আগে কখনো সুসমাচার শোনেনি। আর এই দু-জনকে সাহায্য করার জন্য মার্ককেও পাঠানো হয়।
২ প্রায় ১৪ বছর আগে যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “তোমাদের উপর পবিত্র শক্তি আসার পর তোমরা শক্তি লাভ করবে আর তোমরা জেরুসালেমে, সমস্ত যিহূদিয়া ও শমরিয়ায় এবং পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেবে।” (প্রেরিত ১:৮) যিশুর এই ভবিষ্যদ্বাণী এখন আরও ভালোভাবে পরিপূর্ণ হবে কারণ বার্ণবা ও শৌল এখন তাদের মিশনারি যাত্রা শুরু করতে চলেছেন। b
প্রচার “কাজের জন্য আলাদা করো” (প্রেরিত ১৩:১-১২)
৩. প্রথম শতাব্দীতে দীর্ঘ পথ যাত্রা করা কেন কঠিন ছিল?
৩ বর্তমানে গাড়ি ও প্লেন ব্যবহার করে আমরা অনেক দূরের রাস্তা খুবই কম সময়ের মধ্যে অতিক্রম করতে পারি। কিন্তু, প্রেরিতদের সময়ে বেশিরভাগ যাত্রা পায়ে হেঁটে করতে হত, তা-ও আবার এবড়োখেবড়ো রাস্তার উপর দিয়ে। একজন ব্যক্তি এক দিনে খুব বেশি হলে ৩০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারতেন কারণ তারপর পা আর চলত না। c এখন যদিও বার্ণবা ও শৌল তাদের নতুন কার্যভারের বিষয়ে খুবই উৎসুক রয়েছেন, তবে তারা এটাও জানেন যে, এই কার্যভার সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে তাদের অনেক প্রচেষ্টা করতে হবে এবং তাদের আরাম আয়েশের জীবন ত্যাগ করতে হবে।—মথি ১৬:২৪.
৪. (ক) বার্ণবা ও শৌলকে কীভাবে বাছাই করা হয়েছিল আর খ্রিস্টান ভাইয়েরা কী করেছিল? (খ) কীভাবে আমরা সেই ভাইদের পুরোপুরিভাবে সমর্থন করতে পারি, যাদের মণ্ডলীতে বিভিন্ন দায়িত্ব দেওয়া হয়?
৪ কিন্তু, কেন পবিত্র শক্তি বার্ণবা ও শৌলকে ‘সেই কাজের জন্য আলাদা’ করেছিল? (প্রেরিত ১৩:২) বাইবেল যদিও এই বিষয়ে আমাদের স্পষ্টভাবে কিছু জানায় না, তবে আমরা জানি পবিত্র শক্তির নির্দেশনায় তাদের বাছাই করা হয়েছিল। আন্তিয়খিয়া মণ্ডলীর কয়েক জন ভাববাদী ও শিক্ষক এই বিষয়টা মেনে নেয় এবং পুরোপুরিভাবে সমর্থন করে। একটু কল্পনা করুন, বার্ণবা ও শৌল সেইসময় কতটা আনন্দিত হয়েছিলেন, যখন সেই মণ্ডলীর ভাই-বোনেরা কোনোরকম হিংসা ছাড়াই উপবাস ও প্রার্থনা করার পর, “বার্ণবা ও শৌলের উপর হাত রাখলেন এবং তাদের বিদায় দিলেন।” (প্রেরিত ১৩:৩) বর্তমানেও ভাইদের বিভিন্ন দায়িত্ব দেওয়া হয়ে থাকে, এমনকী অধ্যক্ষ হিসেবেও নিযুক্ত করা হয়ে থাকে। সেই ভাইদের উপর হিংসা করার পরিবর্তে, আমাদের “তাদের কাজের জন্য তাদের প্রতি প্রেম সহকারে বিশেষ দয়া” দেখানো উচিত। (১ থিষল. ৫:১৩) এভাবে আমরা সেই ভাইদের পুরোপুরিভাবে সমর্থন করতে পারব।
৫. সাইপ্রাস দ্বীপে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য বার্ণবা ও শৌল কী করেছিলেন?
৫ বার্ণবা ও শৌল আন্তিয়খিয়া থেকে পায়ে হেঁটে সিলূকিয়া বন্দরে পৌঁছান। সেখান থেকে তারা জাহাজে করে সাইপ্রাস দ্বীপের উদ্দেশে রওনা হলেন, যেটা প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছিল। d বার্ণবা যেহেতু সাইপ্রাসের বাসিন্দা ছিলেন, তাই তিনি তার নিজের এলাকার লোকদের কাছে সুসমাচার প্রচার করার জন্য উৎসুক হয়ে রয়েছেন। বার্ণবা ও শৌল যখন এই দ্বীপের পূর্ব দিকে অবস্থিত সালামীতে পৌঁছান, তখন একটুও সময় নষ্ট না করে তারা “যিহুদিদের সমাজগৃহে সমাজগৃহে ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করতে লাগলেন।” e (প্রেরিত ১৩:৫) সাইপ্রাস দ্বীপের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যাওয়ার সময় রাস্তায় যে-বড়ো বড়ো নগরগুলো পড়েছিল, তারা সেই সমস্ত নগরে সুসমাচার প্রচার করেন। এই যাত্রা করার জন্য সেই দু-জন মিশনারিকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে যাত্রা করতে হয়েছিল।
৬, ৭. (ক) সের্গিয় পৌল কে ছিলেন আর কেন বর-যিশু চেষ্টা করেছিল, যাতে সের্গিয় পৌল রাজ্যের বার্তা গ্রহণ না করে? (খ) বর-যিশুকে বাঁধা দেওয়ার জন্য শৌল কী করেছিলেন?
৬ প্রথম শতাব্দীতে সাইপ্রাস দ্বীপের লোকেরা মিথ্যা দেব-দেবীর উপাসনা করত। এই বিষয়টা বার্ণবা ও শৌল সেইসময় বুঝতে পারেন, যখন তারা এই দ্বীপের পশ্চিম দিকে অবস্থিত পাফঃ নগরে পৌঁছান। সেখানে “তারা বর-যিশু নামে একজন যিহুদি ব্যক্তির দেখা পান, যে একজন মায়াবী এবং মিথ্যা ভাববাদী ছিল।” সে “দেশাধ্যক্ষ সের্গিয় পৌলের জন্য কাজ করত। সের্গিয় পৌল ছিলেন একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি।” f প্রথম শতাব্দীতে সের্গিয় পৌলের মতো বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা এবং রোমীয় বিজ্ঞ ব্যক্তিরা প্রায়ই জীবনের বড়ো বড়ো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মায়াবী কিংবা জ্যোতিষীদের কাছ থেকে পরামর্শ নিত। কিন্তু, সের্গিয় পৌল রাজ্যের বার্তা শুনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং “তিনি ঈশ্বরের বাক্য শোনার জন্য প্রবল আকাঙ্ক্ষী” হন। তবে, বর-যিশুর এই বিষয়টা একদমই পছন্দ হয়নি। এই ব্যক্তি ইলুমা নামেও পরিচিত, যার অর্থই হল “মায়াবী।”—প্রেরিত ১৩:৬-৮.
৭ বর-যিশু এটা জানতেন যে, সের্গিয় পৌল যদি রাজ্যের এই বার্তা গ্রহণ করে, তা হলে তিনি আর তার পরামর্শ গ্রহণ করবেন না। তাই, সে “দেশাধ্যক্ষকে প্রভু যিশুর উপর বিশ্বাস থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগল।” (প্রেরিত ১৩:৮) কিন্তু, শৌলও হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি। বিবরণ জানায়: “শৌল, যাকে পৌল বলেও ডাকা হয়, পবিত্র শক্তিতে পূর্ণ হয়ে স্থিরদৃষ্টিতে তার দিকে তাকালেন এবং বললেন: ‘হে সমস্ত ধরনের প্রতারণা এবং সমস্ত ধরনের মন্দতায় পূর্ণ দিয়াবলের সন্তান, সমস্ত ধার্মিকতার শত্রু, তুমি কি যিহোবার সরল পথকে বিকৃত করা থেকে বিরত হবে না? দেখো! যিহোবার হাত তোমার বিরুদ্ধে উঠেছে আর তুমি অন্ধ হয়ে যাবে, কিছুসময় ধরে সূর্যের আলো দেখতে পাবে না।’ সঙ্গেসঙ্গে ঘন কুয়াশা ও অন্ধকার তার উপর নেমে এল এবং কেউ যেন তার হাত ধরে নিয়ে যেতে পারে, এইজন্য সে এদিক-ওদিক কাউকে খুঁজতে লাগল।” g এই সমস্ত কিছু দেখে, “সেই দেশাধ্যক্ষ যিশুর একজন অনুসারী হলেন, কারণ যিহোবার শিক্ষায় তিনি অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন।”—প্রেরিত ১৩:৯-১২.
৮. কীভাবে আমরা পৌলের মতো সাহস দেখাতে পারি?
৮ বর্তমানেও বিরোধীরা আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে, যাতে আগ্রহী ব্যক্তিরা রাজ্যের বার্তা না শোনে। কিন্তু, ঠিক যেমন পৌল বর-যিশুকে ভয় পাননি, তেমনি আমাদেরও কাউকে ভয় পাওয়া উচিত নয় এবং সবসময় সত্যের পক্ষ নেওয়া উচিত। তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় আমাদের মনে রাখা উচিত, আমাদের “কথাবার্তা যেন সবসময় সদয় হয় অর্থাৎ লবণ দিয়ে স্বাদযুক্ত করা খাবারের মতো হয়।” (কল. ৪:৬) কিন্তু, আগ্রহী ব্যক্তিদের সত্য শেখানোর জন্য আমাদের পক্ষে যা করা সম্ভব আমরা যেন তা-ই করি। আমরা যেন বিরোধীদের ভয়ে চুপ করে না থাকি। বর-যিশুর মতো মিথ্যা ধর্মও “যিহোবার সরল পথকে বিকৃত” করে। (প্রেরিত ১৩:১০) সেইজন্য, আমাদের উচিত ভয় না পেয়ে তাদের মন্দ কাজের বিষয়ে অন্যদের জানানো। তাই আসুন, আমরাও পৌলের মতো সাহসের সঙ্গে সত্য সম্বন্ধে ঘোষণা করে চলি আর সৎহৃদয়ের ব্যক্তিদের সত্য শিখতে সাহায্য করি। বর্তমানে, যদিও যিহোবা আমাদের আশ্চর্য কাজ করার ক্ষমতা দেন না, যেমনটা তিনি অতীতে পৌলকে দিয়েছিলেন। তবে, আমরা একটা বিষয় নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা অবশ্যই তাঁর পবিত্র শক্তি আমাদের দেবেন, যাতে আমরা সৎহৃদয়ের ব্যক্তিদের সত্য জানাতে পারি।—যোহন ৬:৪৪.
‘উৎসাহ দেওয়ার জন্য কিছু বলুন’ (প্রেরিত ১৩:১৩-৪৩)
৯. নেতৃত্ব নিয়ে থাকেন এমন ভাইদের জন্য পৌল ও বার্ণবা কোন উদাহরণ স্থাপন করেছেন?
৯ এরপর বার্ণবা, পৌল এবং তাদের সঙ্গী মার্ক পাফঃ নগর ত্যাগ করেন। তারা জাহাজে করে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পর্গা নগরে পৌঁছান, যেটা এশিয়া মাইনর উপকূলে অবস্থিত। এখন পর্যন্ত যখনই এই তিন জনের বিষয়ে বলা হয়েছে, তখনই বার্ণবার নাম প্রথমে এসেছে। কিন্তু, এখন এক পরিবর্তন হয়। প্রেরিত ১৩:১৩ পদে লেখক তাদের “পৌল এবং তার সঙ্গীরা” বলে উল্লেখ করেন। এই শব্দগুলো থেকে বোঝা যায় যে, এখন থেকে পৌল প্রচার কাজে নেতৃত্ব নিচ্ছেন। তবে, এই বিষয়টার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না যে, এটা দেখে বার্ণবা পৌলের উপর হিংসা করতে শুরু করেছিলেন। এর পরিবর্তে, এই দু-জন খ্রিস্টান ভাই ঈশ্বরের ইচ্ছা পরিপূর্ণ করার জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন। বর্তমানে, মণ্ডলীতে যে-ভাইয়েরা নেতৃত্ব নিয়ে থাকেন, বার্ণবা ও পৌল সেই ভাইদের জন্য কী এক চমৎকার উদাহরণই না স্থাপন করেছেন! আমরা সত্য খ্রিস্টানেরা একে অন্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ার জন্য যেন প্রতিযোগিতা না করি, বরং যিশুর এই কথাগুলো মনে রাখি: “তোমরা সকলে একে অন্যের ভাই।” যিশু এও বলেছিলেন: “যে-কেউ নিজেকে উচ্চীকৃত করে, তাকে নত করা হবে আর যে-কেউ নিজেকে নত করে, তাকে উচ্চীকৃত করা হবে।”—মথি ২৩:৮, ১২.
১০. পর্গা থেকে পিষিদিয়ার আন্তিয়খিয়ার যাত্রা কেমন ছিল?
১০ মার্ক পর্গায় পৌঁছানোর পর পৌল ও বার্ণবাকে ছেড়ে জেরুসালেমে ফিরে যান। তবে, কেন মার্ক হঠাৎ ফিরে গিয়েছিলেন, সে বিষয়ে বাইবেল আমাদের কিছু জানায় না। পৌল ও বার্ণবা তাদের যাত্রা চালিয়ে যান। তারা পর্গা থেকে এগিয়ে গিয়ে পিষিদিয়ার আন্তিয়খিয়ায় এলেন, যেটা গালীল প্রদেশে অবস্থিত। এই যাত্রা কোনো সাধারণ যাত্রা ছিল না, কারণ পিষিদিয়ার আন্তিয়খিয়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১,১০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত ছিল। শুধু তাই নয়, সেখানে পৌঁছানোর জন্য তাদের পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে যেতে হত। আর এই পাহাড়ি রাস্তা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল কারণ সেটা দস্যুদের আস্তানা হিসেবে পরিচিত ছিল এবং এই যাত্রার সময় হয়তো পৌলের শরীরও ভালো ছিল না। h
১১, ১২. পৌল সমাজগৃহে কী করেছিলেন, যেন লোকেরা তার বার্তার প্রতি আগ্রহ দেখায়?
১১ পিষিদিয়ার আন্তিয়খিয়ায় পৌল ও বার্ণবা বিশ্রামবারে সমাজগৃহে যান। বিবরণ বলে: “সকলের সামনে ব্যবস্থা এবং ভাববাদীদের গ্রন্থ পড়া শেষ হওয়ার পর সমাজগৃহের অধ্যক্ষেরা পৌল ও বার্ণবাকে বললেন: ‘ভাইয়েরা, এই লোকদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য আপনাদের যদি কিছু বলার থাকে, তা হলে বলুন।’” (প্রেরিত ১৩:১৫) পৌল তখন সবার সামনে বলার জন্য উঠে দাঁড়ালেন।
১২ পৌল প্রথমে বলেন: “হে ইজরায়েলীয়েরা এবং ন-যিহুদি লোকেরা, যারা ঈশ্বরকে ভয় কর, শোনো।” (প্রেরিত ১৩:১৬) সমাজগৃহে বসে থাকা লোকদের মধ্যে কিছু যিহুদি এবং বাকিরা ন-যিহুদি ছিল, যারা ধর্মান্তরিত হয়েছিল। এই লোকেরা যিশুকে এখনও পর্যন্ত খ্রিস্ট হিসেবে মেনে নেয়নি। তা হলে, পৌল এখন কী করবেন যাতে লোকেরা তার বার্তার প্রতি আগ্রহ দেখায়? প্রথমে তিনি ইজরায়েল জাতির এক সংক্ষিপ্ত বিবরণ তাদের জানান। তিনি তাদের বোঝান যে, যিহোবা কীভাবে ইজরায়েলীয়েরা “যখন মিশরে বিদেশি হিসেবে বাস করছিল, তখন তাদের এক শক্তিশালী জাতি করে তোলেন।” এরপর, তারা যখন মুক্ত হয়েছিল, তখন যিহোবা কীভাবে “প্রায় ৪০ বছর ধরে প্রান্তরে তাদের আচরণ সহ্য করেন।” পৌল তাদের এটাও বোঝান যে, কীভাবে ইজরায়েলীয়েরা তাদের প্রতিজ্ঞাত দেশ দখল করে আর কীভাবে যিহোবা তাদের “পূর্বপুরুষদের উত্তরাধিকার হিসেবে সেই দেশ দেন।” (প্রেরিত ১৩:১৭-১৯) এটা বলা হয়ে থাকে, পৌল সমাজগৃহে লোকদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে, হয়তো সেই শাস্ত্রপদগুলো থেকে উদাহরণ দিয়েছিলেন, যেগুলো কিছু সময় আগেই বিশ্রামবার পালন করার সময়ে পড়া হয়েছিল। এই ধারণা যদি সত্য হয়ে থাকে, তা হলে আমরা এটা বলতে পারি, পৌল ‘সমস্ত ধরনের লোককে সাহায্য করার জন্য সমস্ত কিছুই করার চেষ্টা’ করেছিলেন।—১ করি. ৯:২২.
১৩. কীভাবে আমরা শ্রোতাদের হৃদয়ে পৌঁছানোর জন্য চেষ্টা করতে পারি?
১৩ পৌলের মতো আমরা কী করতে পারি যাতে লোকেরা আমাদের বার্তার প্রতি আগ্রহ দেখায়? আমরা যখন জানতে পারি গৃহকর্তা কোন ধর্মে বিশ্বাস করেন, তখন আমরা এমন বিষয় বাছাই করতে পারি, যেটাতে তিনি আগ্রহ দেখাবেন অথবা গৃহকর্তা যদি কোনো শাস্ত্রপদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে থাকেন, তা হলে আমরা সেই শাস্ত্রপদ থেকে কথা বলতে পারি। তবে, এটা আরও ভালো হয়, যদি আপনি তাকে তার বাইবেল থেকেই সেই শাস্ত্রপদটা পড়তে বলেন। আমরা লোকদের আগ্রহ বাড়িয়ে তোলার জন্য এইরকম আরও নতুন নতুন উপায় খোঁজার চেষ্টা করতে পারি।
১৪. (ক) কীভাবে পৌল যিশুর বিষয়ে কথা বলা শুরু করেছিলেন আর কী বলে তিনি লোকদের সতর্ক করেছিলেন? (খ) পৌলের কথাগুলো লোকদের উপর কোন প্রভাব ফেলেছিল?
১৪ এরপর, পৌল তাদের বোঝান যে, ইজরায়েলীয়দের বংশ থেকে ‘এক ত্রাণকর্তা, যিশু’ এসেছেন। তবে, তিনি আসার আগে যোহন বাপ্তাইজক পথ প্রস্তুত করেছিলেন। পৌল বলেন যে, যিশুকে হত্যা করা হয়েছে এবং তারপর মৃতদের মধ্য থেকে তাঁকে পুনরুত্থিত করা হয়েছে। (প্রেরিত ১৩:২০-৩৭) পরে তিনি বলেন: “তোমরা জেনে রাখ, একমাত্র তাঁর মাধ্যমেই পাপের ক্ষমা লাভ করা সম্ভব আর এখন এই বিষয়টাই তোমাদের কাছে ঘোষণা করা হচ্ছে। . . . কিন্তু, যে-কেউ বিশ্বাস করে, সে যিশুর দ্বারা নির্দোষ বলে গণ্য হয়।” এরপর, তিনি সমাজগৃহে উপস্থিত লোকদের সতর্ক করে বলেন, “সাবধান, ভাববাদীদের গ্রন্থে বলা এই কথাগুলো যেন তোমাদের প্রতি না ঘটে: ‘হে উপহাসকারীরা, তোমরা দেখো, আশ্চর্য হও এবং বিনষ্ট হও, কারণ তোমাদের সময়ে আমি এমন এক কাজ করতে চলেছি, যেটার বিষয়ে কেউ তোমাদের বিস্তারিতভাবে বললেও তোমরা তা কোনোমতেই বিশ্বাস করবে না।’” পৌলের কথাগুলো লোকদের উপর এক জোরালো প্রভাব ফেলে। “তখন লোকেরা তাদের অনুরোধ করল, যেন তারা পরের বিশ্রামবারেও এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন।” শুধু তাই নয়, “সমাজগৃহের সভা শেষ হওয়ার পর অনেক যিহুদি এবং ধর্মান্তরিত ব্যক্তি, যারা ঈশ্বরকে উপাসনা করত, পৌল ও বার্ণবার পিছন পিছন যেতে লাগল।”—প্রেরিত ১৩:৩৮-৪৩.
“আমরা ন-যিহুদিদের কাছে যাচ্ছি” (প্রেরিত ১৩:৪৪-৫২)
১৫. পরের বিশ্রামবারে কী হয়েছিল?
১৫ পরের বিশ্রামবারে “নগরের প্রায় সমস্ত লোক” পৌলের কথা শোনার জন্য একত্রিত হল। এটা দেখে কিছু যিহুদি “ঈর্ষায় জ্বলতে লাগল এবং নিন্দা করতে করতে পৌলের কথার প্রতিবাদ করতে লাগল।” কিন্তু, পৌল ও বার্ণবা সাহসের সঙ্গে তাদের বললেন, “ঈশ্বরের বাক্য প্রথমে তোমাদের কাছে বলা জরুরি ছিল। যেহেতু তোমরা তা প্রত্যাখ্যান করছ আর এভাবে দেখাচ্ছ যে, তোমরা অনন্তজীবনের জন্য যোগ্য নও, তাই দেখো! আমরা ন-যিহুদিদের কাছে যাচ্ছি। কারণ যিহোবা আমাদের এই আজ্ঞা দিয়েছেন: ‘আমি তোমাকে ন-যিহুদিদের আলো হিসেবে নিযুক্ত করেছি, যেন তুমি পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত পরিত্রাণ সম্বন্ধে প্রচার কর।’” —প্রেরিত ১৩:৪৪-৪৭; যিশা. ৪৯:৬.
১৬. পৌল ও বার্ণবার কথা শুনে যিহুদিরা কী করেছিল এবং পৌল ও বার্ণবার বিরোধিতা করা হলে, তারা কী করেছিলেন?
১৬ পৌল ও বার্ণবার কথা শুনে ন-যিহুদি লোকেরা আনন্দিত হল এবং “যাদের অনন্তজীবন লাভ করার জন্য সঠিক মনোভাব ছিল, তারা সকলে যিশুর অনুসারী হয়ে উঠল।” (প্রেরিত ১৩:৪৮) দ্রুত যিহোবার বাক্য সেই অঞ্চলের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগল। কিন্তু, সেখানে থাকা যিহুদিরা একদমই খুশি হয়নি। পৌল ও বার্ণবা তাদের বলেন, ঈশ্বরের বাক্য প্রথমে তোমাদের কাছে বলা হয়েছিল, কিন্তু তোমরা খ্রিস্টকে প্রত্যাখ্যান করেছ। তাই, তোমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। তখন সেই যিহুদিরা ঈশ্বরভয়শীল গণ্যমান্য মহিলাদের এবং নগরের প্রধান প্রধান পুরুষদের উসকে দিল “আর তারা পৌল ও বার্ণবাকে তাড়না করল এবং তাদের সীমানা থেকে বের করে দিল।” পৌল ও বার্ণবা তখন কী করেছিলেন? তারা “তাদের পায়ের ধুলো ঝেড়ে ফেললেন, যেন সেটা তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয় . . . এরপর তারা ইকনিয়ে চলে গেলেন।” এরপর কি পিষিদিয়ার আন্তিয়খিয়ায় খ্রিস্টধর্ম শেষ হয়ে গিয়েছিল? কখনোই না। শাস্ত্রপদ বলে, আন্তিয়খিয়ায় বসবাসরত “শিষ্যেরা আনন্দে এবং পবিত্র শক্তিতে পূর্ণ হতে থাকল।”—প্রেরিত ১৩:৫০-৫২.
১৭-১৯. পৌল ও বার্ণবার কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি আর কীভাবে তাদের অনুকরণ করার মাধ্যমে আমরা আনন্দে থাকতে পারব?
১৭ এই বিশ্বস্ত ভাইয়েরা যেভাবে তাদের কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করতে পারি। সেটা হল, আমরা কখনো প্রচার করা বন্ধ করব না, তা পৃথিবীর যত বড়ো বড়ো ব্যক্তিরাই আমাদের প্রচার কাজ বন্ধ করার চেষ্টা করুক না কেন। আরও একটা বিষয় লক্ষ করুন, আন্তিয়খিয়ার লোকেরা যখন পৌল ও বার্ণবার বার্তা প্রত্যাখ্যান করেছিল, তখন তারা “তাদের পায়ের ধুলো ঝেড়ে ফেললেন।” পায়ের ধুলো ঝেড়ে ফেলার অর্থ এই ছিল না যে, তারা লোকদের উপর রেগে ছিলেন বরং এর অর্থ ছিল, সেখানকার লোকদের এখন যে-পরিণতি হবে, তার জন্য তারা দু-জনে কখনোই দায়ী হবেন না। এই মিশনারিরা জানতেন যে, তারা জোর করে যিশুর উপর লোকদের বিশ্বাস করাতে পারবেন না। তবে, তারা যে-কাজটা করতে পারতেন, তা হল প্রচার কাজ চালিয়ে যাওয়া আর তারা তা-ই করেন। তারা আন্তিয়খিয়া ছেড়ে ইকনিয়ায় চলে যান এবং সেখানে সুসমাচার প্রচার করতে থাকেন।
১৮ কিন্তু, আন্তিয়খিয়ার শিষ্যদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? পৌল ও বার্ণবা এখন আর তাদের সঙ্গে নেই এবং তারা এমন লোকদের মাঝে রয়েছে, যারা প্রচার কাজের বিরোধিতা করে। তারপরও তারা হতাশ হয়ে পড়েনি। বিষয়টা এমন ছিল না যে, লোকেরা সুসমাচার শুনলেই শিষ্যেরা আনন্দে থাকত। যিশু বলেছিলেন: “সুখী তারাই, যারা ঈশ্বরের বাক্য শোনে এবং তা পালন করে চলে!” (লূক ১১:২৮) আন্তিয়খিয়ার এই শিষ্যেরা ঠিক এটাই করেছিল, তারা এই বিষয়ে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিল যে, যিশুর কথামতো তারা প্রচার কাজ চালিয়ে যাবে।
১৯ আসুন, পৌল ও বার্ণবার মতো আমরা সবসময় এই বিষয়টা মনে রাখি যে, আমাদের দায়িত্ব হল, শুধুমাত্র প্রচার করে চলা। লোকেরা আমাদের বার্তা গ্রহণ করবে কি করবে না, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। লোকেরা যদি আমাদের কথা না শোনে, তা হলে আমরা প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের কথা মনে রাখব এবং তাদের মতো হওয়ার চেষ্টা করব। আমরা বিরোধিতা সত্ত্বেও আমাদের আনন্দ বজায় রাখতে পারব কারণ আমরা সত্যকে মূল্যবান হিসেবে দেখি এবং পবিত্র শক্তির নির্দেশনা অনুযায়ী চলি।—গালা. ৫:১৮, ২২.
a “ বার্ণবা—‘সান্ত্বনার পুত্র’” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।
b সেই সময়ের মধ্যে জেরুসালেম থেকে প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার উত্তর দিকে, শমরিয়া থেকে আন্তিয়খিয়া এলাকায় অনেক খ্রিস্টীয় মণ্ডলী গঠিত হয়ে গিয়েছিল।
c “ রাস্তায় যাত্রা করা কেমন ছিল?” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।
d প্রথম শতাব্দীতে, বাতাস সঠিক দিকে বইলে জাহাজে করে এক দিনে ১৬০ কিলোমিটার পথ যাওয়া যেত। কিন্তু, যদি আবহাওয়া খারাপ থাকত, তা হলে বেশি সময় লেগে যেত।
e “ যিহুদিদের সমাজগৃহ” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।
f সাইপ্রাস দ্বীপ রোমীয় সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল আর রোমীয়েরা একজন দেশাধ্যক্ষকে সেখানে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত করেছিল।
g এই ঘটনার পর থেকে শৌলকে পৌল বলা হত। কিছু লোক বলে থাকে, তিনি সের্গিয় পৌলের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এই নাম গ্রহণ করেছিলেন। তবে, এটা সত্য নয়। কারণ সাইপ্রাস থেকে চলে যাওয়ার পরও তিনি নিজেকে পৌল বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি এইজন্য তার রোমীয় নাম ব্যবহার করেছিলেন কারণ তাকে ‘প্রেরিত হিসেবে ন-যিহুদিদের কাছে পাঠানো’ হয়েছিল। এমনটা করার আরও একটা কারণ ছিল যে, তার ইব্রীয় নাম শৌল গ্রিক ভাষায় উচ্চারণ করলে এমন এক গ্রিক শব্দের সঙ্গে মিলে যায়, যেটার এক খারাপ অর্থ রয়েছে।—রোমীয় ১১:১৩.
h এর কয়েক বছর পর, পৌল গালাতীয়দের উদ্দেশে চিঠিতে লেখেন, “আমি আমার শারীরিক অসুস্থতার জন্যই প্রথম বার তোমাদের কাছে সুসমাচার ঘোষণা করার সুযোগ পেয়েছিলাম।”—গালা. ৪:১৩.