সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় ১৩

‘অনেক কথা কাটাকাটি ও তর্কবিতর্ক হওয়ার পর’

‘অনেক কথা কাটাকাটি ও তর্কবিতর্ক হওয়ার পর’

পরিচালকগোষ্ঠীর সামনে ত্বকচ্ছেদের বিষয়টা মীমাংসা করার জন্য নিয়ে আসা হয়

প্রেরিত ১৫:১-১২ পদের উপর ভিত্তি করে

১-৩. (ক) কেন প্রথম শতাব্দীর মণ্ডলীর একতা ঝুঁকির মুখে পড়েছিল? (খ) প্রেরিত বইয়ের এই ঘটনা থেকে আমরা কোন বিষয়টা জানতে পারব?

 প্রেরিত পৌল ও বার্ণবা তাদের প্রথম মিশনারি যাত্রার পর, আবারও সিরিয়ার আন্তিয়খিয়ায় ফিরে এসেছেন। তারা খুবই আনন্দিত কারণ যিহোবা ‘ন-যিহুদিদের জন্য বিশ্বাসের দ্বার খুলে দিয়েছেন।’ (প্রেরিত ১৪:২৬, ২৭) এই আন্তিয়খিয়াতেও অনেক উদ্যোগের সঙ্গে সুসমাচারের কাজ করা হচ্ছে এবং “বহুসংখ্যক” ন-যিহুদি খ্রিস্টান হচ্ছে।—প্রেরিত ১১:২০-২৬.

বৃদ্ধির এই খবর দ্রুত যিহূদিয়ায় পৌঁছে যায়। কিন্তু, সবাই এই খবর শুনে খুশি হয়নি। আবারও ত্বকচ্ছেদের বিষয়টা উঠে আসে। কিছু লোক মনে করে, ন-যিহুদিদের খ্রিস্টান হতে গেলে মোশির ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে এবং ত্বকচ্ছেদ করতে হবে, আবার অন্যদিকে কিছু লোক তা মনে করে না। এ ছাড়া, আরও একটা প্রশ্ন উঠে আসে, সেটা হল যিহুদি খ্রিস্টান ও ন-যিহুদি খ্রিস্টানদের একে অন্যের সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিত? এই বিষয় নিয়ে ভাইদের মধ্যে তর্কবিতর্ক এতটাই চরম পর্যায়ে পৌঁছায় যে, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর একতা ঝুঁকির মুখে পড়ে। অবশেষে এই সমস্যাটা কীভাবে সমাধান করা হয়?

আমরা যখন প্রেরিত বই থেকে এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করব, তখন আমরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করব। আমরা জানতে পারব, বর্তমানেও যদি মণ্ডলীর একতা ঝুঁকির মুখে থাকে, তা হলে আমাদের কী করা উচিত।

‘তোমরা যদি ত্বকচ্ছেদ না কর’ (প্রেরিত ১৫:১)

৪. যিহূদিয়া থেকে আসা কয়েক জন লোক কী শিক্ষা দিয়েছিল আর এর ফলে কোন প্রশ্ন উঠে এসেছিল?

শিষ্য লূক লিখেছিলেন: “যিহূদিয়া থেকে কয়েক জন [আন্তিয়খিয়াতে] এসে ভাইদের এই শিক্ষা দিতে লাগল: ‘তোমরা যদি মোশির রীতি অনুযায়ী ত্বকচ্ছেদ না কর, তা হলে তোমরা রক্ষা পাবে না।’” (প্রেরিত ১৫:১) আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না যে, ‘যিহূদিয়া থেকে আসা’ এই ‘কয়েক জন’ লোক খ্রিস্টান হওয়ার আগে ফরীশী ছিল কি না। তবে এটা মনে করা হয়, তাদের চিন্তাভাবনা ফরীশীদের মতোই ছিল আর তারা মোশির ব্যবস্থা পালন করার ক্ষেত্রে খুবই একগুঁয়ে ছিল। এ ছাড়া, সেই লোকেরা হয়তো মিথ্যা দাবি করছিল যে, তারা জেরুসালেমের প্রেরিত ও প্রাচীনদের হয়ে কথা বলছে। (প্রেরিত ১৫:২৩, ২৪) প্রায় ১৩ বছর আগে, যিহোবা যখন প্রেরিত পিতরকে স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে, তিনি ন-যিহুদিদের গ্রহণ করছেন, তা হলে কেন এই যিহুদি খ্রিস্টানেরা ত্বকচ্ছেদ করার জন্য এতটা জোর দিচ্ছে? aপ্রেরিত ১০:২৪-২৯, ৪৪-৪৮.

৫, ৬. (ক) কেন কিছু যিহুদি খ্রিস্টান ত্বকচ্ছেদ করার জন্য জোর দিয়েছিল? (খ) ত্বকচ্ছেদ সম্বন্ধীয় চুক্তি কি অব্রাহামের সঙ্গে করা চুক্তির অন্তর্ভুক্ত ছিল? ব্যাখ্যা করুন। (পাদটীকা দেখুন।)

ত্বকচ্ছেদের বিষয়ে জোর দেওয়ার পিছনে তাদের কাছে অনেক কারণ থাকতে পারে। একটা কারণ হল, পুরুষদের ত্বকচ্ছেদ করার আজ্ঞা যিহোবা ঈশ্বর নিজেই দিয়েছিলেন এবং এটা ছিল ঈশ্বরের সঙ্গে এক বিশেষ সম্পর্কের চিহ্ন। সবার প্রথমে অব্রাহাম এবং তার পরিবার নিজেদের ত্বকচ্ছেদ করিয়েছিল। এই আজ্ঞা মোশির ব্যবস্থা দেওয়ার আগেই দেওয়া হয়েছিল আর পরবর্তী সময়ে এটা মোশির ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। b (লেবীয়. ১২:২, ৩) মোশির ব্যবস্থা অনুযায়ী বিদেশিরা যদি কোনো বিশেষ সুযোগ সুবিধা পেতে চাইত, তা হলে তাদেরও ত্বকচ্ছেদ করতে হত। যেমন, শুধুমাত্র সেই বিদেশিরা নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে পারত, যারা ত্বকচ্ছেদ করেছিল। (যাত্রা. ১২:৪৩, ৪৪, ৪৮, ৪৯) একজন যিহুদির দিক দিয়ে দেখলে, ত্বকচ্ছেদ করা একজন পুরুষের জন্য এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, তিনি যদি তা না করতেন, তা হলে তাকে অশুচি এবং ঈশ্বরকে সেবা করার অযোগ্য হিসেবে দেখা হত।—যিশা. ৫২:১.

কিন্তু, এখন মোশির ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে আর সেই জায়গায় নতুন নিয়ম বা চুক্তি শুরু হয়েছে। এই নিয়ম বা চুক্তি অনুযায়ী যিহুদিরা আর জন্মগতভাবে যিহোবার বিশেষ লোক রইল না বরং এই সুযোগ সবার জন্য খুলে গেল। যিহুদি খ্রিস্টানদের জন্য এই বিষয়টা একেবারে নতুন ছিল, তাই সেই খ্রিস্টানদের নিজেদের চিন্তাধারা পরিবর্তন করার জন্য এক দৃঢ় বিশ্বাস ও নম্রতার প্রয়োজন ছিল। তাদের মধ্যে অনেক খ্রিস্টান এমন এক এলাকায় থাকত, যেখানে যিহুদিদের অনেক বড়ো সম্প্রদায় ছিল। সেইজন্য তাদের পক্ষে যিশুকে সবার সামনে মশীহ বলে মেনে নেওয়া এবং ন-যিহুদি খ্রিস্টানদের সঙ্গে মিলে যিহোবার উপাসনা করা সহজ ছিল না। সত্যিই, তাদের অনেক সাহসের প্রয়োজন ছিল।—যির. ৩১:৩১-৩৩; লূক ২২:২০.

৭. ‘যিহূদিয়া থেকে আসা’ সেই ‘কয়েক জন’ লোক কোন সত্য বিষয় বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল?

অবশ্য, ঈশ্বর তাঁর মান পরিবর্তন করেননি। কারণ মোশির ব্যবস্থায় যে-মূল নীতি ছিল, সেটা নতুন চুক্তিতেও ছিল। (মথি ২২:৩৬-৪০) উদাহরণস্বরূপ, ত্বকচ্ছেদ সম্বন্ধে পরবর্তী সময়ে পৌল লিখেছিলেন: “হৃদয়ে যে যিহুদি, সে-ই প্রকৃত যিহুদি এবং হৃদয়ে যে-ত্বকচ্ছেদ, সেটাই প্রকৃত ত্বকচ্ছেদ, যা পবিত্র শক্তির মাধ্যমে হয়, লিখিত আইনের মাধ্যমে নয়।” (রোমীয় ২:২৯; দ্বিতীয়. ১০:১৬) কিন্তু, ‘যিহূদিয়া থেকে আসা’ সেই ‘কয়েক জন’ লোক এই সত্য বিষয় বুঝতে পারেনি। তারা এই বিষয়টা নিয়ে জেদ ধরে বসেছিল যে, ঈশ্বর কখনো ত্বকচ্ছেদ করতে বারণ করেননি। আপনার কী মনে হয়, সেই যিহুদি খ্রিস্টানদের যখন যথেষ্ট যুক্তি দিয়ে বিষয়টা বোঝানো হবে, তখন কি তারা তাদের চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করবে?

‘কথা কাটাকাটি ও তর্কবিতর্ক হয়’ (প্রেরিত ১৫:২)

৮. কেন ত্বকচ্ছেদের বিষয়টা পরিচালকগোষ্ঠীর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল?

লূক আরও লেখেন: “তাদের সঙ্গে পৌল ও বার্ণবার অনেক কথা কাটাকাটি ও তর্কবিতর্ক হওয়ার পর, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, এই বিষয়টা মীমাংসা করার জন্য পৌল, বার্ণবা এবং আরও কয়েক জন, জেরুসালেমে প্রেরিতদের ও প্রাচীনদের কাছে যাবেন।” c (প্রেরিত ১৫:২) শাস্ত্রপদ বলে, সমস্যাটা নিয়ে অনেক “কথা কাটাকাটি ও তর্কবিতর্ক” হয়। তার মানে, দুই পক্ষই বিষয়টা মেনে নিতে চায়নি কারণ তারা মনে করছিল, তারা যা বলছে, সেটাই ঠিক। আন্তিয়খিয়া মণ্ডলীর প্রাচীনেরা এই সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। তাই, তারা মণ্ডলীর শান্তি ও একতা বজায় রাখার জন্য এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, এই সমস্যাটা নিয়ে তারা “জেরুসালেমে প্রেরিতদের ও প্রাচীনদের কাছে যাবেন,” অর্থাৎ সেই সময়ের পরিচালকগোষ্ঠীর কাছে যাবেন। আন্তিয়খিয়ার সেই প্রাচীনদের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

কিছু লোক জোরপূর্বক বলতে থাকে, ‘[ন-যিহুদিদের] অবশ্যই আদেশ দিতে হবে, যেন তারা মোশির ব্যবস্থা পালন করে’

৯, ১০. পৌল, বার্ণবা এবং আন্তিয়খিয়ার ভাইদের কাছে থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

একটা গুরুত্বপূর্ণ যে-শিক্ষা আমরা লাভ করি তা হল, আমাদের যিহোবার সংগঠনের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে হবে। একটু চিন্তা করুন, আন্তিয়খিয়ার ভাইয়েরা জানত যে, পরিচালকগোষ্ঠীর সমস্ত ভাই যিহুদি ছিল। তা সত্ত্বেও, তারা এই আস্থা রেখেছিল যে, ত্বকচ্ছেদের বিষয়ে পরিচালকগোষ্ঠী যে-সিদ্ধান্ত নেবে, তা শাস্ত্র অনুযায়ী সঠিক। কেন তারা এতটা আস্থা রাখতে পেরেছিল? কারণ তারা জানত যে, যিহোবা তাঁর পবিত্র শক্তি এবং মণ্ডলীর মস্তক যিশু খ্রিস্টের মাধ্যমে, সমস্যাটা ভালোভাবে সমাধান করার জন্য অবশ্যই তাদের নির্দেশনা দেবেন। (মথি ২৮:১৮, ২০; ইফি. ১:২২, ২৩) বর্তমানেও, যখন কোনো গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়, তখন আমাদেরও আন্তিয়খিয়ার ভাইদের মতো মনোভাব রাখতে হবে। আমাদের যিহোবার সংগঠনের উপর এবং অভিষিক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত পরিচালকগোষ্ঠীর উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে হবে।

১০ এই ঘটনা থেকে আমরা নম্রতা দেখানোর এবং ধৈর্য ধরার বিষয়েও শিখতে পারি। ঈশ্বরের পবিত্র শক্তির মাধ্যমে, পৌল ও বার্ণবাকে ন-যিহুদিদের কাছে প্রচার করার জন্য বাছাই করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরও, তারা এমনটা চিন্তা করেননি যে, এর ফলে তারা ত্বকচ্ছেদের বিষয়টা সমাধান করার অধিকার পেয়ে গিয়েছেন। (প্রেরিত ১৩:২, ৩) শুধু তাই নয়, পরে পৌল লিখেছিলেন: “প্রভু যিশুর আদেশ অনুসারেই আমি সেখানে [জেরুসালেম] যাই।” (গালা. ২:২) এখান থেকে বোঝা যায় যে, পৌলের জেরুসালেম যাওয়ায় বিষয়ে ঈশ্বরের অনুমোদন ছিল। বর্তমানেও, যখন মণ্ডলীর শান্তি ও একতা ঝুঁকির মুখে থাকে, তখন মণ্ডলীর প্রাচীনেরা সমস্যাটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে তর্কবিতর্ক করার পরিবর্তে, নম্র মনোভাব দেখান এবং ধৈর্যপূর্বক কাজ করেন। তারা যিহোবার ইচ্ছা কী তা জানার জন্য বাইবেল থেকে গবেষণা করেন এবং বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা মেনে চলেন।—ফিলি. ২:২, ৩.

১১, ১২. কেন যিহোবার উপর আস্থা রাখা গুরুত্বপূর্ণ?

১১ কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা হয়তো বুঝতে পারি না যে, কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া সঠিক হবে। এইরকম পরিস্থিতিতে আমাদের যিহোবার উপর আস্থা রাখতে হবে যে, সঠিক সময়ে তিনি আমাদের তা বুঝতে সাহায্য করবেন। মনে করে দেখুন, ৩৬ খ্রিস্টাব্দে পবিত্র শক্তির মাধ্যমে কর্ণীলিয়কে অভিষিক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু, এর ১৩ বছর পর অর্থাৎ প্রায় ৪৯ খ্রিস্টাব্দে যিহোবা ত্বকচ্ছেদের বিষয়টা সমাধান করেন। কেন যিহোবা এত সময় ধরে সমস্যাটা থাকতে দিয়েছিলেন? কারণ ত্বকচ্ছেদ সম্বন্ধীয় চুক্তি ১,৯০০ বছর আগে অব্রাহামের সঙ্গে করা হয়েছিল, যাকে যিহুদিরা অনেক সম্মান করত। সঠিক মনোভাব রয়েছে, এমন যিহুদি খ্রিস্টানদের জন্য এটা মেনে নেওয়া অনেক কঠিন হত যে, ত্বকচ্ছেদ করার ব্যবস্থা এখন বাতিল করা হয়েছে এত বড়ো পরিবর্তন মেনে নেওয়া এবং নিজেদের চিন্তাভাবনা রদবদল করার জন্য তাদের অনেক সময় লাগত। আর তাই, যিহোবা এই সমস্যাটা এত সময় ধরে থাকতে দিয়েছিলেন।—যোহন ১৬:১২.

১২ আমাদের পিতা যিহোবা আমাদের প্রেমের সঙ্গে শিক্ষা দেন এবং আমাদের প্রতি ধৈর্য দেখান। এইরকম একজন পিতার কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করা এবং তাঁর হাতে গড়ে ওঠা, আমাদের জন্য কতই-না বিশেষ এক সুযোগ! তাঁর কথা মতো চললে আমরা সবসময় উপকৃত হই। (যিশা. ৪৮:১৭, ১৮; ৬৪:৮) তাই আসুন, আমরা যেন কখনো গর্বিত হয়ে গিয়ে নিজেদের চিন্তাভাবনাকে প্রাধান্য না দিই। এ ছাড়া, সংগঠনের কাজে যখন কোনো রদবদল করা হয় কিংবা কোনো শাস্ত্রপদের বোধগম্যতায় রদবদল করা হয়, তখন আমরা যেন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া না দেখাই। (উপ. ৭:৮) আমাদের যদি মনে হয় যে, আমাদের মধ্যে ধীরে ধীরে এই ধরনের প্রবণতা আসতে শুরু করছে, তা হলে প্রেরিত ১৫ অধ্যায়ে দেওয়া নীতি নিয়ে আমাদের চিন্তা করা উচিত এবং যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা উচিত। d

১৩. কীভাবে আমরা পরিচর্যায় যিহোবার মতো ধৈর্য দেখাতে পারি?

১৩ বাইবেল ছাত্রদের প্রতিও আমাদের ধৈর্য দেখানো উচিত। হতে পারে, একজন ছাত্রের জন্য কিছু মিথ্যা শিক্ষা কিংবা রীতিনীতি ত্যাগ করা কঠিন বলে মনে হয়। আমাদের সেই ছাত্রের প্রতি ধৈর্য ধরতে হবে, যাতে ঈশ্বরের পবিত্র শক্তি তার হৃদয়ে কাজ করতে পারে। (১ করি. ৩:৬, ৭) বাইবেল ছাত্রদের জন্য আমাদের প্রার্থনাও করা উচিত। এর ফলে, সঠিক সময়ে ঈশ্বর কোনো না কোনো উপায়ে আমাদের এটা বুঝতে সাহায্য করবেন যে, সেই ছাত্রের জন্য আমাদের কোন পদক্ষেপ নেওয়া সঠিক হবে।—১ যোহন ৫:১৪.

তারা উৎসাহজনক অভিজ্ঞতার “বিষয়টা বর্ণনা” করলেন (প্রেরিত ১৫:৩-৫)

১৪, ১৫. কীভাবে আন্তিয়খিয়া মণ্ডলী পৌল, বার্ণবা এবং অন্যান্য ভাইদের প্রতি সম্মান দেখিয়েছিল আর কীভাবে পৌল এবং তার সঙ্গীরা ফৈনীকিয়া ও শমরিয়ার ভাইদের উৎসাহিত করেছিলেন?

১৪ এরপর লূক লেখেন: “মণ্ডলী তাদের কিছু দূর এগিয়ে দেওয়ার পর, তারা ফৈনীকিয়া ও শমরিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে যেতে ন-যিহুদি ব্যক্তিদের ধর্মান্তরিত হওয়ার বিষয়টা বর্ণনা করলেন আর তা শুনে সমস্ত ভাই অত্যন্ত আনন্দিত হল।” (প্রেরিত ১৫:৩) আন্তিয়খিয়া মণ্ডলী পৌল, বার্ণবা এবং অন্যান্য ভাইদের সঙ্গে কিছু দূর গিয়ে তাদের এগিয়ে দেয়। তাদের এই খ্রিস্টীয় প্রেম দেখায় যে, তারা পৌল এবং তার সঙ্গীদের সম্মান করে আর তারা চায় যেন, যিহোবার আশীর্বাদ তাদের উপর থাকে। এটাও আমাদের জন্য এক চমৎকার উদাহরণ। আপনিও কি সেই আন্তিয়খিয়ার ভাইদের মতো খ্রিস্টান ভাই-বোনদের সম্মান করেন, “বিশেষভাবে [প্রাচীনেরা] যারা ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে কথা বলার এবং শিক্ষা দেওয়ার কাজে কঠোর পরিশ্রম করেন”?—১ তীম. ৫:১৭.

১৫ পথে যেতে যেতে পৌল এবং তার সঙ্গীরা ফৈনীকিয়া ও শমরিয়ায় কিছুদিন থাকেন আর যতদিন সেখানে থাকেন, সেখানকার ভাইদের উৎসাহিত করেন। তারা সেখানকার ভাইদের “বিষয়টা বর্ণনা” করে বলেন যে, কীভাবে অনেক ন-যিহুদি খ্রিস্টান হচ্ছে। সেখানকার ভাইদের মধ্যে সেই যিহুদি খ্রিস্টানেরাও ছিল, যারা স্তিফান শহিদ হওয়ার পর, জেরুসালেম থেকে পালিয়ে গিয়ে ফৈনীকিয়া ও শমরিয়ায় এসে থাকতে শুরু করে। বর্তমানেও, আমরা যখন অন্যান্য এলাকার প্রচার কাজের বৃদ্ধির খবর শুনি, তখন আমাদের সাহস বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে, সেই খ্রিস্টানেরা অনেক সাহস লাভ করে, যারা বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আপনিও কি এইরকম অভিজ্ঞতা শোনার জন্য খ্রিস্টীয় সভা এবং সম্মেলনগুলোতে যোগ দেন আর আমাদের প্রকাশনায় কিংবা jw.org ওয়েবসাইটে দেওয়া অভিজ্ঞতা ও সেইসঙ্গে জীবনকাহিনিগুলো পড়েন?

১৬. কোন বিষয়টা দেখায় যে, ত্বকচ্ছেদের বিষয়টা গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল?

১৬ পৌল এবং তার সঙ্গীরা আন্তিয়খিয়া থেকে দক্ষিণ দিকে প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার পথ যাত্রা করে জেরুসালেমে পৌঁছায়। লূক লিখেছিলেন: “তারা জেরুসালেমে পৌঁছানোর পর মণ্ডলী, প্রেরিতেরা ও প্রাচীনেরা তাদের সাদর অভ্যর্থনা জানালেন আর পৌল ও বার্ণবা, ঈশ্বর তাদের মাধ্যমে যে-সমস্ত কাজ করেছেন, সেই সমস্ত কিছু বর্ণনা করলেন।” (প্রেরিত ১৫:৪) “কিন্তু, ফরীশী দলের মধ্য থেকে যিশুর অনুসারী হয়েছিল এমন কয়েক জন তাদের আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল: ‘সেই লোকদের অবশ্যই ত্বকচ্ছেদ করাতে হবে এবং তাদের আদেশ দিতে হবে, যেন তারা মোশির ব্যবস্থা পালন করে।’” (প্রেরিত ১৫:৫) এর থেকে বোঝা যায়, ত্বকচ্ছেদের বিষয়টা এতটাই গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে, এটা সমাধান করা খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল।

‘প্রেরিতেরা ও প্রাচীনেরা একত্রিত হলেন’ (প্রেরিত ১৫:৬-১২)

১৭. কাদের নিয়ে জেরুসালেমে পরিচালকগোষ্ঠী গঠিত হয়েছিল আর কেন প্রেরিতদের সঙ্গে সঙ্গে “প্রাচীনেরা” ছিল?

১৭ হিতোপদেশ ১৩:১০ পদ বলে: “যাহারা পরামর্শ মানে, প্রজ্ঞা তাহাদের সহবর্ত্তী।” এই গুরুত্বপূর্ণ নীতি অনুযায়ী, “প্রেরিতেরা ও প্রাচীনেরা [ত্বকচ্ছেদের] বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য একত্রিত হলেন।” (প্রেরিত ১৫:৬) সেই সময়ে “প্রেরিতেরা ও প্রাচীনেরা” সমস্ত মণ্ডলীর হয়ে সিদ্ধান্ত নিতেন, যেমন বর্তমানে পরিচালকগোষ্ঠী নিয়ে থাকে। কিন্তু, প্রেরিতদের সঙ্গে সঙ্গে “প্রাচীনেরা” কেন ছিল? মনে করে দেখুন যে, প্রেরিত যাকোবকে মেরে ফেলা হয়েছিল আর কিছু সময়ের জন্য প্রেরিত পিতরকেও বন্দি করা হয়েছিল। বাকি প্রেরিতদের সঙ্গেও এইরকম ঘটনা ঘটতে পারত। সেইজন্য, অন্যান্য অভিজ্ঞ অভিষিক্ত ভাইদেরও বাছাই করা হয়েছিল, যাতে মণ্ডলীর দেখাশোনা করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ ভাই থাকে।

১৮, ১৯. পিতর কোন জোরালো কথাগুলো বলেছিলেন এবং তার কথাগুলো শুনে ভাইদের কোন বিষয়টা বোঝা উচিত ছিল?

১৮ লূক আরও লেখেন: “দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা এবং বিতর্কের পর পিতর উঠে দাঁড়ালেন এবং তাদের বললেন: ‘ভাইয়েরা, আপনারা ভালোভাবেই জানেন, আপনাদের মধ্য থেকে প্রথমে ঈশ্বর আমাকে মনোনীত করেছেন, যেন ন-যিহুদি লোকেরা সুসমাচারের বাক্য শোনে এবং বিশ্বাস করে। আর ঈশ্বর, যিনি হৃদয় জানেন, আমাদের মতো তাদেরও পবিত্র শক্তি দেওয়ার মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে, তিনি তাদের গ্রহণ করেছেন। আর তিনি আমাদের এবং তাদের মধ্যে কোনো প্রভেদ রাখেননি, বরং তাদের বিশ্বাসের কারণে তাদের হৃদয় শুচি করেছেন।’” (প্রেরিত ১৫:৭-৯) একটা বই অনুযায়ী, ৭ পদে যে-গ্রিক শব্দের অনুবাদ, ‘দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা এবং বিতর্ক’ করা হয়েছে, সেটার অর্থ হল, “কোনো কিছু জানার চেষ্টা করা; প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা।” এই বিষয়ে যদিও ভাইদের ভিন্ন ভিন্ন মত ছিল, তবে তারা আলোচনা করতে এবং মন খুলে তাদের মতামত জানানোর জন্য প্রস্তুত ছিল।

১৯ পিতর তার জোরালো কথাগুলোর সাহায্যে সেই লোকদের মনে করিয়ে দেন যে, ৩৬ খ্রিস্টাব্দে যখন প্রথম বার ন-যিহুদিদের উপর অর্থাৎ কর্ণীলিয় এবং তার পরিবারের উপর পবিত্র শক্তি বর্ষণ করা হয়েছিল, তখন পিতর নিজে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তার কথাগুলো শুনে ভাইদের এই বিষয়টা বোঝা উচিত ছিল যে, যিহোবা যখন যিহুদি ও ন-যিহুদিদের মধ্যে তুলনা করেন না, তা হলে মানুষ কোন অধিকারে তাদের মধ্যে তুলনা করে? শুধু তাই নয়, একজন ব্যক্তিকে মোশির ব্যবস্থা পালন করার কারণে নয় বরং যিশু খ্রিস্টের উপর বিশ্বাস করার কারণে ধার্মিক বলে ঘোষণা করা হয়।—গালা. ২:১৬.

২০. ত্বকচ্ছেদ করানোর বিষয়টা যারা জোর দিচ্ছিল, তারা কীভাবে ‘ঈশ্বরের পরীক্ষা করছিল’?

২০ ঈশ্বর স্পষ্টভাবে যা বলেছিলেন এবং যেভাবে তিনি তাঁর পবিত্র শক্তিকে ব্যবহার করেছিলেন, সেটা কেউই অস্বীকার করতে পারবে না। তাই, পিতর পরিশেষে বলেন, “তা হলে, এখন কেন আপনারা শিষ্যদের ঘাড়ে এমন জোয়াল চাপিয়ে দিয়ে ঈশ্বরের পরীক্ষা করছেন, যে-জোয়াল না আমাদের পূর্বপুরুষেরা বহন করতে সমর্থ হয়েছে, না আমরা সমর্থ হয়েছি? বরং আমাদের এই বিশ্বাস রয়েছে যে, প্রভু যিশুর মহাদয়ার গুণে আমরা যেমন রক্ষা পাই, তেমনই তারাও পায়।” (প্রেরিত ১৫:১০, ১১) এখানে, যারা ত্বকচ্ছেদ করানোর বিষয়টা জোর দিচ্ছিল, তারা আসলে ‘ঈশ্বরের পরীক্ষা করছিল’ অথবা তাঁর ধৈর্যের পরীক্ষা করছিল। তারা ন-যিহুদি খ্রিস্টানদের উপর এমন নিয়ম চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল, যা তারা নিজেরাই পুরোপুরিভাবে পালন করতে পারছিল না আর সেইজন্য তারা মৃত্যুর যোগ্য ছিল। (গালা. ৩:১০) আসলে, সেই যিহুদিদের ত্বকচ্ছেদ করানোর বিষয়টা জোর দেওয়ার পরিবর্তে, যিহোবা যিশুর মাধ্যমে যে-মহাদয়া দেখিয়েছেন, সেটার জন্য তাঁর প্রতি তাদের কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত ছিল।

২১. বার্ণবা ও পৌল এমন কী বলেছিলেন, যার ফলে ভাইদের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়ে গিয়েছিল?

২১ পিতরের কথাগুলো লোকদের উপর নিশ্চয়ই গভীর প্রভাব ফেলেছিল, কারণ তার “কথা শুনে, তারা সবাই নীরব হয়ে রইল।” এরপর, বার্ণবা ও পৌল সবাইকে বলেন যে, কীভাবে তাদের ‘মাধ্যমে ঈশ্বর ন-যিহুদি লোকদের মধ্যে আশ্চর্য ও অলৌকিক কাজ করেছেন।’ (প্রেরিত ১৫:১২) এখন প্রেরিতেরা ও প্রাচীনেরা এই সমস্ত প্রমাণ পরীক্ষা করতে পারবেন এবং ত্বকচ্ছেদের বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

২২-২৪. (ক) বর্তমানে পরিচালকগোষ্ঠী কীভাবে প্রথম শতাব্দীর পরিচালকগোষ্ঠীর মতো কাজ করে? (খ) কীভাবে প্রাচীনেরা দেখাতে পারেন যে, তারা সংগঠনের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেন?

২২ বর্তমানেও যখন পরিচালকগোষ্ঠীর ভাইদের সভা হয়, তারা নির্দেশনার জন্য ঈশ্বরের বাক্যের উপর নির্ভর করেন আর পবিত্র শক্তির জন্য হৃদয় থেকে প্রার্থনা করেন। (গীত. ১১৯:১০৫; মথি ৭:৭-১১) সভায় যে-বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করা হবে, তা প্রত্যেককে অনেক আগে থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয়, যাতে তারা সেই বিষয়টা নিয়ে প্রার্থনাপূর্বক চিন্তা করতে পারেন। (হিতো. ১৫:২৮) সেই সভায় পরিচালকগোষ্ঠীর ভাইয়েরা খোলাখুলিভাবে এবং সম্মানের সঙ্গে তাদের মতামত প্রকাশ করেন। আর এই আলোচনা চলাকালীন বাইবেলকে বেশি করে ব্যবহার করা হয়।

২৩ মণ্ডলীর প্রাচীনেরাও পরিচালকগোষ্ঠীর মতো এই একই পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকেন। তবে, কোনো গুরুতর বিষয় নিয়ে অনেক আলোচনা করার পরও যদি কোনো সমাধান পাওয়া না যায়, তা হলে প্রাচীনেরা কী করেন? তারা শাখা অফিস কিংবা শাখা অফিসের দ্বারা নিযুক্ত প্রতিনিধি যেমন, সীমা অধ্যক্ষদের সঙ্গে আলোচনা করেন। আর যদি প্রয়োজন হয় তা হলে, নির্দেশনার জন্য শাখা অফিস পরিচালকগোষ্ঠীকে সেই বিষয়টা নিয়ে লিখতে পারেন।

২৪ নিশ্চিতভাবেই, যিহোবা সেই লোকদের দেখে অনেক আনন্দিত হন, যারা নম্রতা, আনুগত্য ও ধৈর্যের মতো গুণগুলো দেখিয়ে থাকেন আর সংগঠনের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেন। তিনি তাদের আশীর্বাদ করেন, যার ফলে তাদের মধ্যে শান্তি ও একতা বজায় থাকে আর মণ্ডলী বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই বিষয়ে আমরা পরবর্তী অধ্যায়ে আলোচনা করব।

a ভণ্ড ভাইদের শিক্ষা” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

b ত্বকচ্ছেদ সম্বন্ধীয় চুক্তি অব্রাহামের সঙ্গে যে-চুক্তি করা হয়েছিল, তার অন্তর্ভুক্ত ছিল না। অব্রাহামের সঙ্গে যে-চুক্তি করা হয়েছিল, তা বর্তমানেও প্রযোজ্য। এই চুক্তি খ্রিস্টপূর্ব ১৯৪৩ সালে করা হয়েছিল, যখন অব্রাহাম (সেই সময় তার নাম ছিল, অব্রাম) কনান দেশে যাওয়ার সময় ফরাৎ নদী পার করেছিলেন। সেই সময় অব্রাহামের বয়স ছিল, ৭৫ বছর। কিন্তু, ত্বকচ্ছেদ সম্বন্ধীয় চুক্তি খ্রিস্টপূর্ব ১৯১৯ সালে দেওয়া হয়েছিল, যখন অব্রাহামের বয়স ছিল ৯৯ বছর।—আদি. ১২:১-৮; ১৭:১, ৯-১৪; গালা. ৩:১৭.

c যে-ভাইদের জেরুসালেমে পাঠানো হয়েছিল, তাদের মধ্যে হয়তো তীত ছিলেন। তিনি একজন গ্রিক খ্রিস্টান ছিলেন, যিনি পরবর্তী সময়ে পৌলের একজন বিশ্বস্ত সঙ্গী হয়েছিলেন। (গালা. ২:১; তীত ১:৪) তীত নিজেই এই বিষয়টার এক বড়ো উদাহরণ ছিলেন যে, অচ্ছিন্নত্বক ন-যিহুদি খ্রিস্টানদের পবিত্র শক্তির মাধ্যমে অভিষিক্ত করা হয়েছে।—গালা. ২:৩.