সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় ২৫

“আমি কৈসরের কাছে আপিল করছি!”

“আমি কৈসরের কাছে আপিল করছি!”

সুসমাচারের পক্ষসমর্থন করার ক্ষেত্রে পৌল এক উদাহরণ স্থাপন করেন

প্রেরিত ২৫:১–২৬:৩২ পদের উপর ভিত্তি করে

১, ২. (ক) পৌল কোথায় এবং কোন পরিস্থিতিতে ছিলেন? (খ) কোন প্রশ্নের উত্তর জানা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ?

 প্রেরিত পৌল এখনও পর্যন্ত কৈসরিয়াতেই রয়েছেন এবং তার উপর কড়া পাহারা রয়েছে। দু-বছর আগে তিনি যখন মিশনারি যাত্রা করে যিহূদিয়ায় ফেরেন, তখন যিহুদিরা কমপক্ষে তিন বার তাকে হত্যা করার চেষ্টা করে। (প্রেরিত ২১:২৭-৩৬; ২৩:১০, ১২-১৫, ২৭) কিন্তু, প্রতি বার তারা ব্যর্থ হয়। তারপরও তারা পৌলের পিছন ছাড়েনি। পৌল যখনই বুঝতে পারেন যে, তাকে তার শত্রুদের কাছে জেরুসালেমে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, তখন তিনি রোমীয় রাজ্যপাল ফীষ্টকে বলেন, “আমি কৈসরের কাছে আপিল করছি!”—প্রেরিত ২৫:১১.

পৌলের এই সিদ্ধান্তে যিহোবা কি তার সঙ্গে ছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর জানা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমরাও এই শেষকালে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছি। আমাদের জানতে হবে যে, পৌল “সুসমাচারের পক্ষসমর্থন করার আর তা প্রচার করার বৈধ অধিকার লাভ করার” জন্য যে-উপায়টা বেছে নিয়েছিলেন, আমরাও কি একইরকম কোনো উপায় বেছে নিতে পারি?—ফিলি. ১:৭.

“আমি . . . বিচারাসনের সামনে দাঁড়িয়ে আছি” (প্রেরিত ২৫:১-১২)

৩, ৪. (ক) কেন যিহুদিরা পৌলকে জেরুসালেমে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেছিল? (খ) কীভাবে পৌল মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরেছিলেন? (গ) বর্তমানে কীভাবে যিহোবা তাঁর দাসদের সাহায্য করেন যেমনটা তিনি পৌলকে করেছিলেন?

ফীষ্ট যিহূদিয়ার নতুন রাজ্যপাল হওয়ার তিন দিন পর জেরুসালেমে যান। a সেখানে প্রধান যাজক এবং যিহূদিয়ার বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি তার সামনে উপস্থিত হন আর পৌলের উপর গুরুতর অভিযোগগুলো আনতে থাকেন। বিরোধীরা জানে যে, এই নতুন রাজ্যপাল যেকোনো পরিস্থিতিতে সমস্ত যিহুদিকে খুশি করতে চান। তাই, তারা ফীষ্টের কাছে অনুরোধ করে, যেন তিনি তাকে জেরুসালেমে পাঠিয়ে দেন, যাতে সেখানে তার মামলার শুনানি হয়। এই অভিযোগ সাধারণ বলেই মনে হতে পারে, কিন্তু এর পিছনে তাদের এক খারাপ মতলব রয়েছে। তারা ফন্দি এঁটেছে, পৌলকে যখন কৈসরিয়া থেকে জেরুসালেমে আনা হবে, তখন রাস্তাতেই তাকে হত্যা করবে। কিন্তু, ফীষ্ট তাদের অনুরোধ খারিজ করে দেন। তিনি বললেন: তাই “তোমাদের মধ্যে যারা নেতা, তারা আমার সঙ্গে আসুক আর যদি সেই ব্যক্তি সত্যিই কোনো দোষ করে থাকে, তা হলে তার বিরুদ্ধে দোষারোপ করুক।” (প্রেরিত ২৫:৫) আবারও এক বার প্রেরিত পৌল মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরে আসেন।

এই সমস্ত পরীক্ষার সময়ে যিহোবা পৌলের সঙ্গে ছিলেন। তিনি যিশুর মাধ্যমে প্রত্যেকটা পরিস্থিতিতে তাকে শক্তিশালী করেছিলেন। মনে করে দেখুন, একটা দর্শনে যিশু পৌলকে বলেছিলেন: “সাহস করো!” (প্রেরিত ২৩:১১) বর্তমানেও আমাদের উপর বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা আসে। আমাদের ভয় দেখানো হয়, হুমকি দেওয়া হয়। যিহোবা আমাদের প্রতিটা পরীক্ষা থেকে রক্ষা করবেন না, কিন্তু তিনি আমাদের প্রজ্ঞা এবং শক্তি দেবেন, যাতে আমরা বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যেও হাল ছেড়ে না দিই। আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি, আমাদের প্রেমময় ঈশ্বর সবসময় আমাদের “অসাধারণ শক্তি” দেবেন।—২ করি. ৪:৭.

 ৫. পৌলকে যখন ফীষ্টের সামনে আনা হয়েছিল, তখন ফীষ্ট কী করেছিলেন?

কিছুদিন পর, ফীষ্ট কৈসরিয়ায় ‘বিচারাসনে বসেন।’ b ফীষ্টের সামনে পৌল এবং সেই যিহুদিরা দাঁড়িয়ে রয়েছে, যারা জেরুসালেম থেকে এসেছে। তারা পৌলের উপর এমন সব অভিযোগ করতে থাকে, যেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। উত্তরে পৌল বলেন, “যিহুদিদের ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বা মন্দিরের বিরুদ্ধে কিংবা কৈসরের বিরুদ্ধে আমি কোনো অপরাধ করিনি।” এই বিষয়টা স্পষ্ট যে, পৌল নির্দোষ এবং তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া উচিত। কিন্তু ফীষ্ট কী রায় দেবেন? তিনি পৌলকে জিজ্ঞেস করেন, “তুমি কি জেরুসালেমে গিয়ে আমার উপস্থিতিতে এইসমস্ত বিষয়ে বিচার করা হোক বলে চাও?” (প্রেরিত ২৫:৬-৯) ফীষ্ট এমন একটা পরামর্শ দিয়েছিলেন, যার কোনো যুক্তি নেই। পৌল যদি জেরুসালেমে ফিরে যেতেন, তা হলে তার বিরোধীরাই তার বিচার করত এবং নিশ্চয়ই তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিত। এই কথা বলে ফীষ্ট দেখিয়েছিলেন যে, ন্যায়বিচার করার পরিবর্তে লোকদের খুশি করাই তার লক্ষ্য ছিল। এর আগে, রাজ্যপাল পন্তীয় পীলাতও যিশুর সঙ্গে ঠিক এটাই করেছিলেন। (যোহন ১৯:১২-১৬) বর্তমানেও হতে পারে, কিছু বিচারক আধিকারিকদের খুশি করার জন্য যিহোবার লোকদের কিছু মামলায় ন্যায়বিচার না-ও করতে পারেন। তাই, আমরা যে নির্দোষ সেই বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও, আদালত যদি আমাদের প্রতি ন্যায়বিচার না করে, তা হলে অবাক হওয়া উচিত নয়।

৬, ৭. (ক) কেন পৌল কৈসরের কাছে আপিল করেছিলেন? (খ) এটা করার মাধ্যমে তিনি বর্তমানে খ্রিস্টানদের জন্য কোন উদাহরণ রেখেছিলেন?

ফীষ্ট যিহুদিদের খুশি করতে গিয়ে পৌলের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলছেন। সেইজন্য পৌল তার রোমীয় নাগরিকতার অধিকার ব্যবহার করেন। তিনি ফীষ্টকে বলেন, “আমি কৈসরের বিচারাসনের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, এখানেই আমার বিচার হওয়া উচিত। আমি যিহুদিদের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ করিনি, এ কথা আপনিও ভালোভাবে বুঝতে পারছেন। . . . আমি কৈসরের কাছে আপিল করছি!” একবার কেউ যখন কৈসরের কাছে আপিল করে, তখন তা খারিজ করে দেওয়া অসম্ভব। তাই, ফীষ্ট বলেন, “তুমি কৈসরের কাছে আপিল করেছ; তুমি কৈসরের কাছেই যাবে।” (প্রেরিত ২৫:১০-১২) পৌল দেশের সবচেয়ে বড়ো আধিকারিক কৈসরের কাছে আপিল করার মাধ্যমে বর্তমানে খ্রিস্টানদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন। বর্তমানেও যখন বিরোধীরা “বিধান দ্বারা উপদ্রব” অর্থাৎ আইনকে ব্যবহার করে আমাদের উপর তাড়না করে এবং আমাদের প্রচার করার অধিকারকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে, তখন আমরা আইনের সাহায্য নিয়ে আমাদের এই অধিকারকে রক্ষা করি। cগীত. ৯৪:২০.

অবশেষে রোমে গিয়ে পৌলকে নিজের মামলা পেশ করার সুযোগ দেওয়া হয়। এর আগে পৌলকে প্রায় দু-বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল আর তা-ও আবার এমন অপরাধের জন্য যেটা তিনি করেননি। কিন্তু, যাওয়ার আগে আরেক জন আধিকারিক পৌলের সঙ্গে দেখা করতে চান।

কোনো আদালত যখন আমাদের বিরুদ্ধে রায় দেয়, তখন আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করি

“আমি . . . অবাধ্য হইনি” (প্রেরিত ২৫:১৩–২৬:২৩)

৮, ৯. কেন রাজা আগ্রিপ্প কৈসরিয়ায় গিয়েছিলেন?

কিছু দিন পর, রাজা আগ্রিপ্প এবং তার বোন বর্ণীকী ফীষ্টের সঙ্গে “সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ” করার জন্য অর্থাৎ ফীষ্টকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য কৈসরিয়ায় আসেন। এর কারণ হল ফীষ্ট নতুন রাজ্যপাল হয়েছেন। d সেই সময়, বেশিরভাগ আধিকারিকেরাই এমনটা করতেন। আগ্রিপ্প ফীষ্টের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক মজবুত করতেই এখানে এসেছেন, যাতে পরবর্তী সময় তার সুবিধা হয়।—প্রেরিত ২৫:১৩.

ফীষ্ট যখন রাজা আগ্রিপ্পকে পৌলের বিষয়ে বলেন, তখন রাজার আগ্রহ বেড়ে যায়। পরের দিন, তারা দু-জন খুব জাঁকজমকভাবে এসে পৌলের মামলা শোনার জন্য বসেন। কিন্তু, পৌলের কথার সামনে তাদের সেই জাঁকজমক একেবারে ফীকে হয়ে যায়।—প্রেরিত ২৫:২২-২৭.

১০, ১১. (ক) কীভাবে পৌল দেখিয়েছিলেন যে, তিনি আগ্রিপ্পকে সম্মান করেন? (খ) পৌল তার অতীত জীবন সম্বন্ধে কী জানিয়েছিলেন?

১০ পৌল সম্মান দেখিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। তিনি বলেন যে, তিনি অনেক খুশি কারণ তিনি রাজা আগ্রিপ্পের সামনে আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ পেয়েছেন। এর কারণ হল, আগ্রিপ্প যিহুদিদের রীতিনীতি এবং সমস্যাগুলো খুব ভালোভাবে জানতেন। তারপর, পৌল নিজের অতীত জীবনের কথা বলেন, “আমি আমাদের ধর্মের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন দলের শিক্ষা মেনে চলতাম এবং একজন ফরীশী হিসেবে জীবনযাপন করতাম।” (প্রেরিত ২৬:৫) পৌল যখন একজন ফরীশী ছিলেন, তখন তিনি ঈশ্বরের এই প্রতিজ্ঞার উপর বিশ্বাস করতেন যে, মশীহ আসবেন। খ্রিস্টান হওয়ার পর, তিনি এই বিষয়টা প্রচার করতে লাগলেন যে, মশীহ ইতিমধ্যেই এসে গিয়েছেন আর তিনি হলেন যিশু। পৌল বলতে চেয়েছিলেন, ঈশ্বরের যে-প্রতিজ্ঞার উপর তিনি বিশ্বাস করেন, তার বিরোধীরাও তা বিশ্বাস করে। কিন্তু, তারপরও এই বিষয়টা নিয়ে তার উপর মামলা চালানো হচ্ছে। এগুলো শোনার পর আগ্রিপ্পের আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। e

১১ এরপর, পৌল তাদের বলেন যে, আগে কীভাবে তিনি খ্রিস্টানদের নিষ্ঠুরভাবে তাড়না করতেন। তিনি বলেন, “আমি নিজেই দৃঢ়ভাবে মনে করতাম, নাসরতীয় যিশুর নামের বিরুদ্ধে যা-কিছু করা সম্ভব, সেগুলোর সবই আমাকে করতে হবে। . . . আমি যেহেতু তাদের [যিশুর শিষ্যদের] উপর প্রচণ্ড রেগে ছিলাম, তাই আমি এমনকী অন্যান্য নগরে গিয়েও তাদের তাড়না করতাম।” (প্রেরিত ২৬:৯-১১) পৌল বাড়িয়ে কিছু বলছিলেন না। আসলে, অনেক লোকই জানত যে, পৌল সত্যিই একজন তাড়নাকারী ছিলেন এবং তিনি খ্রিস্টানদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন। (গালা. ১:১৩, ২৩) তাই, আগ্রিপ্প এটা জানতে চেয়েছিলেন হঠাৎ এমন কী ঘটল যে, খ্রিস্টানদের একজন চরম শত্রু এত বদলে গেল।

১২, ১৩. (ক) পৌল যেভাবে খ্রিস্টান হয়েছিলেন, সেই সম্বন্ধে তিনি কী ব্যাখ্যা করেছিলেন? (খ) কীভাবে পৌল “পাঁচনির মুখে লাথি” মারছিলেন?

১২ পৌল বলেন যে, তিনি কীভাবে একজন খ্রিস্টান হয়েছিলেন। তিনি বলেন: “একবার আমি একই বিষয় করার জন্য প্রধান যাজকদের কাছ থেকে ক্ষমতা ও দায়িত্ব পেয়ে দামেস্কের পথে যাচ্ছিলাম। হে রাজা, তখন বেলা প্রায় দুপুর আর আমি দেখলাম, আকাশ থেকে সূর্যের আলোর চেয়েও অত্যন্ত উজ্জ্বল এক আলো আমার এবং আমার ভ্রমণসঙ্গীদের চারপাশে বিচ্ছুরিত হল। আর আমরা যখন মাটিতে পড়ে গেলাম, তখন আমার উদ্দেশে ইব্রীয় ভাষায় একটা কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম: ‘শৌল, শৌল, তুমি কেন আমাকে তাড়না করছ? পাঁচনির মুখে লাথি মারতে থাকা তোমার নিজের জন্যই কষ্টকর।’ কিন্তু আমি বললাম: ‘প্রভু, আপনি কে?’ আর প্রভু আমাকে বললেন: ‘আমি যিশু, যাঁকে তুমি তাড়না করছ।’” fপ্রেরিত ২৬:১২-১৫.

১৩ দর্শন পাওয়ার আগে, পৌল এক প্রকার “পাঁচনির মুখে লাথি” মারছিলেন। বাইবেলের সময়ে, পাঁচনি এক সুঁচালো দণ্ড বা লাঠি হত, যার এক প্রান্ত সুঁচালো এবং ধাতু দিয়ে তৈরি হত। এটা দিয়ে একজন চাষি তার পশুকে বার বার খোঁচাত এবং মারত, যাতে সেই পশু এগিয়ে চলতে পারে অথবা সঠিক দিকে চলতে পারে। কিন্তু, যদি একটা পশু এই পাঁচনিতে লাথি মারত তা হলে সে নিজেই নিজেকে আঘাত করত। একইভাবে, পৌলও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কাজ করে নিজেই নিজের জন্য সমস্যা ডেকে আনছিলেন। তার মন ভালো ছিল, কিন্তু তাকে ভ্রান্ত করা হয়েছিল। তাই যিশু, যাঁকে পুনরুত্থিত করা হয়েছিল, তিনি দামেস্কের রাস্তায় পৌলকে দর্শন দেন এবং তার চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করতে সাহায্য করেন।—যোহন ১৬:১, ২.

১৪, ১৫. পৌল নিজের জীবনে যে-পরিবর্তনগুলো করেছিলেন, সেটার ফলাফল কী হয়েছিল?

১৪ এরপর যিশু পৌলকে এক বিশেষ কার্যভার দেন। এই বিষয়ে তিনি রাজা আগ্রিপ্পকে বলেন: “আমি স্বর্গীয় দর্শনের অবাধ্য হইনি। আমি প্রথমে দামেস্কের লোকদের কাছে, পরে জেরুসালেমের লোকদের কাছে আর এরপর যিহূদিয়ার সমস্ত জায়গায় এবং ন-যিহুদিদের কাছে এই বার্তা নিয়ে গেলাম যে, তারা যেন অনুতপ্ত হয় এবং অনুতাপের উপযুক্ত কাজের মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে ফিরে আসে।” (প্রেরিত ২৬:১৯, ২০) যিশু পৌলকে যে-কার্যভার দিয়েছিলেন, সেটা করার জন্য পৌলকে অনেক পরিবর্তন করতে হত। আর তিনি এমনটাই করেছিলেন। এর ফলাফল কী হয়েছিল? তিনি অনেক বছর ধরে প্রচার করতে পেরেছিলেন। শুধু তাই নয়, যে-লোকেরা পৌলের বার্তার উপর বিশ্বাস করেছিল, তারা খারাপ কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে শুরু করেছিল। তারা দেশের একজন ভালো নাগরিক হয়ে উঠেছিল এবং আইন মেনে চলতে শুরু করেছিল।

১৫ কিন্তু, এই সমস্ত কিছু পৌলের বিরোধীদের জন্য কোনো অর্থই রাখেনি। পৌল বলেন: “এই কারণেই মন্দিরে যিহুদিরা আমাকে ধরে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, ঈশ্বরের কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছি বলে আমি এখনও পর্যন্ত ছোটো-বড়ো সকলের কাছে সাক্ষ্য দিয়ে আসছি।”—প্রেরিত ২৬:২১, ২২.

১৬. বিচারক ও আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় কীভাবে আমরা পৌলের পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারি?

১৬ সত্য খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের বিশ্বাসের পক্ষ সমর্থন করে “উত্তর দেওয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত” থাকতে হবে। (১ পিতর ৩:১৫) যদি আমাদেরও কখনো বিচারক ও আধিকারিকদের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়, তা হলে আমরাও পৌলের মত একই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারি। পৌল ফীষ্ট এবং আগ্রিপ্পের সঙ্গে সম্মান দেখিয়ে কথা বলেন এবং তাদের বলেন যে, সুসমাচার তাকে এবং অন্যদেরকে কীভাবে উপকৃত করেছে। একইভাবে আমরাও বলতে পারি, বাইবেলের সত্য কীভাবে আমাদের উপকৃত করেছে এবং অন্যদেরও উপকৃত করেছে। এটা শোনার পর বিচারক ও আধিকারিকদের মন হয়তো গলে যেতে পারে এবং তারা আমাদের প্রতি ভালো আচরণ করতে পারে।

“তুমি তো দেখছি . . . আমাকে একজন খ্রিস্টান বানিয়ে ফেলবে” (প্রেরিত ২৬:২৪-৩২)

১৭. (ক) পৌলের কথাগুলো ফীষ্টের উপর কেমন প্রভাব ফেলেছিল? (খ) ফীষ্টের মতো বর্তমান লোকেরাও কেমন আচরণ করে থাকে?

১৭ পৌলের এই জোরালো কথাগুলো সেই দু-জন আধিকারিকের উপর কেমন প্রভাব পড়েছিল। বাইবেল বলে, “পৌল আত্মপক্ষ সমর্থন করে যখন এইসমস্ত কথা বলছিলেন, তখন ফীষ্ট উচ্চস্বরে বললেন: ‘পৌল, তুমি পাগল হয়ে গিয়েছ! অতিরিক্ত জ্ঞান তোমার মাথা খারাপ করে দিয়েছে!’” (প্রেরিত ২৬:২৪) বর্তমানেও এমন লোকেরা রয়েছে যাদের আচরণ ফীষ্টের মতো। আমাদের কথাগুলো তাদের অযৌক্তিক বলে মনে হয়। অনেক উচ্চশিক্ষিত লোকদের প্রায়ই বাইবেলের শিক্ষাগুলো মেনে নেওয়া কঠিন বলে মনে হয়, যেমন, মৃতেরা পুনরুত্থিত হবে।

১৮. পৌল ফীষ্টের প্রশ্নের উত্তরে কী বলেছিলেন এবং পৌলের কথা শুনে আগ্রিপ্প কী বলেছিলেন?

১৮ পৌলের কাছে ফীষ্টের প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। পৌল বললেন, “হে মহামান্য ফীষ্ট, আমি পাগল হয়ে যাইনি, বরং আমার কথা সত্য ও যুক্তিযুক্ত। কারণ রাজা আগ্রিপ্প, যার সামনে আমি নির্দ্বিধায় কথা বলছি, তিনিও এইসমস্ত বিষয় ভালোভাবে জানেন; . . . হে রাজা আগ্রিপ্প, আপনি কি ভাববাদীদের উপর বিশ্বাস করেন? আমি জানি, আপনি বিশ্বাস করেন।” তখন আগ্রিপ্প পৌলকে বললেন: “তুমি তো দেখছি অল্প সময়ের মধ্যেই আমাকে একজন খ্রিস্টান বানিয়ে ফেলবে।” (প্রেরিত ২৬:২৫-২৮) আগ্রিপ্প এই বিষয়টা মন থেকে বলেছেন কি না, তা আমরা জানি না। কিন্তু, আমরা একটা বিষয়ে নিশ্চিত যে, পৌলের সাক্ষ্য আগ্রিপ্পের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

১৯. ফীষ্ট ও আগ্রিপ্প পৌলের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন?

১৯ এরপর, আগ্রিপ্প ও ফীষ্ট উঠে দাঁড়ান। এটা থেকে বোঝা যায়, এই মামলার শুনানি শেষ। “তারা সেখান থেকে যেতে যেতে পরস্পর বলাবলি করতে লাগলেন: ‘এই ব্যক্তি মৃত্যুর যোগ্য অথবা শিকলে বদ্ধ হওয়ার মতো কিছুই করেনি।’ আগ্রিপ্প তখন ফীষ্টকে বললেন: ‘এই ব্যক্তি যদি কৈসরের কাছে আপিল না করত, তা হলে এ মুক্তি পেতে পারত।’” (প্রেরিত ২৬:৩১, ৩২) এখন তারা জেনে গিয়েছেন, তাদের সামনে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন, তিনি নির্দোষ। এখন থেকে তারা হয়তো অন্যান্য খ্রিস্টানদের সঙ্গে ভালো আচরণ করবেন।

২০. বড়ো বড়ো আধিকারিকদের কাছে সাক্ষ্য দিয়ে কি পৌলের কোনো লাভ হয়নি? ব্যাখ্যা করুন।

২০ পৌল ফীষ্ট ও আগ্রিপ্পের কাছে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, কিন্তু তারা কেউই খ্রিস্টান হননি। তা হলে, তাদের দু’জনের কাছে সাক্ষ্য দিয়ে কি পৌলের কোনো লাভ হয়নি? ঠিক তা নয়। সাধারণত যিহুদি “রাজাদের ও রাজ্যপালদের” কাছে সাক্ষ্য দেওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল, কিন্তু পৌল এই সুযোগ পেয়েছিলেন। (লূক ২১:১২, ১৩) শুধু তাই নয়, যখন অন্যান্য খ্রিস্টানেরাও শুনেছিল, পৌলের প্রতি কী কী ঘটেছে এবং পৌল কীভাবে পরীক্ষার মধ্যেও বিশ্বস্ততা বজায় রেখেছিলেন তখন তারাও অনেক সাহস পেয়েছিলেন।—ফিলি. ১:১২-১৪.

২১. কঠিন পরিস্থিতিতেও প্রচার করে চললে কোন কোন ভালো ফলাফল পাওয়া যায়?

২১ বর্তমানেও, আমরা যখন বিভিন্ন পরীক্ষা ও বিরোধিতা সত্ত্বেও প্রচার করে যাই, তখন এর অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। আমরা সেই আধিকারিকদের কাছেও সাক্ষ্য দিতে পারি, যাদের সঙ্গে দেখা করা সাধারণত সহজ নয়। আর যখন আমরা কঠিন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরি, তখন আমাদের বিশ্বস্ততা দেখে অন্যান্য ভাই-বোনেরাও উৎসাহ পায় আর তারাও সাহসের সঙ্গে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেয়।

a পর্কিয় ফীষ্ট—যিহুদিয়ার রাজ্যপাল” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

b এখানে বলা ‘বিচারাসন’ একটা সিংহাসন ছিল, যেটাকে উঁচু জায়গায় রাখা হয়েছিল। এই সিংহাসনকে উঁচুতে রাখার কারণ ছিল, এই সিংহাসনে বসে বিচারক যে-সিদ্ধান্ত নিতেন, সেটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হত। পীলাতও একটা “বিচারাসনে” বসে যিশুর বিচার করেছিলেন।

c সত্য উপাসনার জন্য আদালতে করা আপিল” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

d রাজা হেরোদ আগ্রিপ্প ২য়” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

e খ্রিস্টান হিসেবে পৌল এটা বিশ্বাস করতেন যে, যিশুই হলেন, সেই মশীহ। কিন্তু যিহুদিরা যিশুকে মেনে নেয়নি। এই কারণেই যিহুদিরা মনে করেছিল যে, পৌল যিহুদি ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে।—প্রেরিত ২১:২১, ২৭, ২৮.

f পৌল বলেন, তিনি “বেলা প্রায় দুপুর” তখন যাত্রা করছিলেন। এই বিষয়ে বাইবেলের একজন পণ্ডিত বলেন: “দুপুর বেলায় অনেক গরম থাকত আর তাই বেশিরভাগ যাত্রীরা বিশ্রাম নিত। কিন্তু, তাদের যদি কোনো জায়গায় যাওয়ার জন্য খুব তাড়া থাকত, তা হলে তারা বিশ্রাম না নিয়ে তাদের যাত্রা চালিয়ে যেত। পৌল দুপুর বেলায় যাত্রা করছিলেন। এর থেকে বোঝা যায় যে, খ্রিস্টানদের তাড়না করার জন্য পৌল একদম উঠে পড়ে লেগেছিলেন।”