সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় ২৮

“পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত”

“পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত”

প্রথম শতাব্দীতে যিশুর শিষ্যেরা যে-কাজ শুরু করেছিল, সেই একই কাজ বর্তমানে যিহোবার সাক্ষিরা করছে

১. প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টান এবং বর্তমানে যিহোবার সাক্ষিদের মধ্যে কোন কোন মিল রয়েছে?

 প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানেরা অনেক উদ্যোগের সঙ্গে ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিল। পবিত্র শক্তি তাদের যে-সাহায্য জুগিয়েছিল, তারা সেটা গ্রহণ করেছিল এবং যে-নির্দেশনা দিয়েছিল, সেগুলো সঙ্গে সঙ্গে মেনে নিয়েছিল। তাড়নার ঝড় আসা সত্ত্বেও তারা সাক্ষ্য দেওয়া বন্ধ করে দেয়নি। যিহোবা তাদের অনেক আশীর্বাদ করেছিলেন। এই সমস্ত কিছু বর্তমানে যিহোবার সাক্ষিদের ক্ষেত্রেও সত্য।

২, ৩. প্রেরিত বইটি বাইবেলের অন্যান্য বই থেকে কোন কোন দিক দিয়ে আলাদা?

প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের বিষয়ে এখন পর্যন্ত প্রেরিত বই থেকে আপনি যা-কিছু পড়েছেন, তা থেকে আপনার বিশ্বাস নিশ্চয়ই অনেক শক্তিশালী হয়েছে। কারণ এটি হল একমাত্র বই যেটি যিশু স্বর্গে ফিরে যাওয়ার পর প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানেরা যা-করেছিল, তার অনুপ্রাণিত বিবরণ।

প্রেরিত বইয়ে ৯৫ জন ব্যক্তির নাম উল্লেখ রয়েছে, যারা ৩২টা দেশ, ৫৪টা নগর এবং ৯টা দ্বীপের বাসিন্দা ছিল। এই বইতে আলাদা আলাদা ব্যক্তিদের আগ্রহজনক ঘটনাগুলো লেখা রয়েছে। এদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি খুবই সাধারণ ছিল আবার কিছু ব্যক্তি অহংকারী শাসক, ধর্মীয় গোঁড়া এবং খ্রিস্টানদের তাড়নাকারী ছিল। এর থেকেও বড়ো বিষয় হল, এই বইটি সেই সব খ্রিস্টান ভাই-বোনদের সঙ্গে আপনার পরিচয় করিয়ে দেয়, যারা প্রথম শতাব্দীতে বেঁচে ছিল। তারাও আপনার মতো বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে, কিন্তু তারপরও তারা উদ্যোগের সঙ্গে সুসমাচার প্রচার করে গিয়েছে।

৪. আমরা যদিও প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের কখনো দেখিনি, তারপরও কেন মনে হয় যে, আমরা তাদের অনেক ভালোভাবে চিনি?

পিতর ও পৌলের মতো উদ্যোগী প্রেরিত, প্রিয় চিকিৎসক লূক, সদয় বার্ণবা, সাহসী স্তিফান, দয়ালু টাবিথা, আতিথেয়তা দেখানোর জন্য সুপরিচিত লুদিয়া আর না জানি কত বিশ্বস্ত খ্রিস্টান আমাদের থেকে প্রায় ২,০০০ বছর আগে বেঁচে ছিলেন। আমরা যদিও তাদের কখনো দেখিনি, কিন্তু এইরকম মনে হয় যেন আমরা তাদের অনেক ভালোভাবে চিনি। কেন? কারণ তাদেরও সেই কাজ দেওয়া হয়েছিল, যা আমাদের দেওয়া হয়েছে আর তা হল প্রচার কাজ। (মথি ২৮:১৯, ২০) এই কাজ সম্পন্ন করা আমাদের জন্য কতই-না বড়ো এক সম্মানের বিষয়!

“পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত . . . ”—প্রেরিত ১:৮

৫. যিশুর শিষ্যেরা প্রচার কাজ কোথা থেকে শুরু করেছিল?

সেই দায়িত্ব সম্বন্ধে একটু চিন্তা করুন, যেটা যিশু তাঁর শিষ্যদের দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন “তোমাদের উপর পবিত্র শক্তি আসার পর তোমরা শক্তি লাভ করবে আর তোমরা জেরুসালেমে, সমস্ত যিহূদিয়া ও শমরিয়ায় এবং পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেবে।” (প্রেরিত ১:৮) পবিত্র শক্তি থেকে শক্তি লাভ করার পর শিষ্যেরা সবার প্রথমে “জেরুসালেমে” সাক্ষ্য দিয়েছিল। (প্রেরিত ১:১–৮:৩) পরে পবিত্র শক্তির নির্দেশনায় তারা “সমস্ত যিহূদিয়া এবং শমরিয়ায়” সাক্ষ্য দিয়েছিল। (প্রেরিত ৮:৪–১৩:৩) এরপর, তারা “পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত” সুসমাচার পৌঁছে দিতে থাকে।—প্রেরিত ১৩:৪–২৮:৩১.

৬, ৭. প্রচার কাজের জন্য বর্তমানে আমাদের কাছে কী কী রয়েছে, যা প্রথম শতাব্দীর ভাই-বোনদের কাছে ছিল না?

প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের কাছে পুরো বাইবেল ছিল না, যেটা তারা প্রচারে ব্যবহার করতে পারত আর কোনো সাহিত্যাদিও ছিল না, যেগুলো তারা আগ্রহী ব্যক্তিদের দিতে পারত। প্রায় ৪১ খ্রিস্টাব্দে মথি বইটি লেখা শেষ হয়। আর প্রায় ৬১ খ্রিস্টাব্দে প্রেরিত বইটি লেখা শেষ হয়, তবে এর আগে পৌল কিছু চিঠি লেখেন। যিশুর শিষ্য হওয়ার আগে অনেক যিহুদি ক্রমাগত সমাজগৃহে যেত, যেখানে ইব্রীয় শাস্ত্র পড়ে শোনানো হত। (২ করি. ৩:১৪-১৬) কিন্তু, সেই সময়ে তাদের মধ্যে সবার কাছে পবিত্র শাস্ত্র অর্থাৎ বাইবেলের ব্যক্তিগত কপি থাকত না। তাই, তারা প্রচারে সেই শাস্ত্রপদগুলোই ব্যবহার করতে পারত, যেটা তাদের মুখস্থ ছিল।

কিন্তু, বর্তমানে আমাদের সবার কাছে নিজেদের বাইবেল এবং প্রচুর সাহিত্যাদি রয়েছে। আমরা দেশ ও দ্বীপ মিলিয়ে প্রায় ২৪০টা জায়গায় শিষ্য তৈরির কাজ করছি আর অনেক ভাষায় সুসমাচার জানাচ্ছি।

পবিত্র শক্তি আমাদের যোগ্য করে তোলে

৮, ৯. (ক) পবিত্র শক্তি যিশুর শিষ্যদের কোন কোন কার্যভারের জন্য দক্ষ করে তুলেছিল? (খ) বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস পবিত্র শক্তির মাধ্যমে কী করতে পারছে?

যিশু যখন তাঁর শিষ্যদের সাক্ষ্য দেওয়ার কার্যভার দিয়েছিলেন, তখন তাদের বলেছিলেন, “তোমাদের উপর পবিত্র শক্তি আসার পর তোমরা শক্তি লাভ করবে।” এর মানে হল, পবিত্র শক্তির নির্দেশনার মাধ্যমেই যিশুর শিষ্যেরা সারা পৃথিবীতে সাক্ষ্য দিতে পারত আর এমনটাই হয়েছিল। এ ছাড়া, এই পবিত্র শক্তির সাহায্যে পিতর ও পৌল অসুস্থদের সুস্থ করেছিলেন, লোকদের মধ্য থেকে মন্দ স্বর্গদূতদের বের করেছিলেন আর এমনকী মৃতদেরও বাঁচিয়ে তুলেছিলেন। পবিত্র শক্তি প্রেরিতদের এবং অন্যান্য শিষ্যদের আরেকটা কার্যভারের জন্য দক্ষ করে তুলেছিল, যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর তা হল, লোকদের সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে সাহায্য করা, যা তাদের অনন্ত জীবন পেতে সাহায্য করবে।—যোহন ১৭:৩.

যিশুর শিষ্যেরা ৩৩ খ্রিস্টাব্দের পঞ্চাশত্তমীর দিন ‘পবিত্র শক্তি তাদের যেরকম কথা বলার ক্ষমতা দিল, সেই অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলতে লাগল।’ এই কারণেই তারা “ঈশ্বরের মহৎ মহৎ কাজের বিষয়ে” সাক্ষ্য দিতে পেরেছিল। (প্রেরিত ২:১-৪, ১১) এটা ঠিক যে, বর্তমানে পবিত্র শক্তি আমাদের ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলার ক্ষমতা দেয় না, কিন্তু পবিত্র শক্তির মাধ্যমে বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় সাহিত্যাদি প্রকাশ করছে, যেটা কোনো অলৌকিক কাজের চেয়ে কম নয়। উদাহরণ স্বরূপ, প্রতি মাসে প্রহরীদুর্গসজাগ হোন! পত্রিকার লক্ষ লক্ষ কপি ছাপানো হয়। jw.org ওয়েবসাইটে ১,০০০-রেরও বেশি ভাষায় বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনা ও ভিডিও রয়েছে। এই ধরনের প্রকাশনাগুলোর মাধ্যমে আমরা প্রত্যেক দেশ, জাতি ও ভাষার লোকদের কাছে “ঈশ্বরের মহৎ মহৎ কাজের বিষয়ে” জানাতে পারি।—প্রকা. ৭:৯.

১০. বাইবেল অনুবাদ করার বিষয়ে ১৯৮৯ সাল থেকে কোন প্রচেষ্টা করা হয়েছে?

১০ এই দাস ১৯৮৯ সালের পর থেকে নতুন জগৎ অনুবাদ বাইবেল অনেক ভাষাতে অনুবাদ করার উপর বিশেষ জোর দিয়েছে। এই বাইবেল এখন পর্যন্ত ২০০-রও বেশি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে আর এর কোটি কোটি কপি ছাপানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে, আরও অনেক ভাষাতে ছাপানো হবে। এই কাজ শুধুমাত্র ঈশ্বর এবং তাঁর পবিত্র শক্তির দ্বারাই সম্ভব হয়েছে।

১১. অনুবাদের কাজ কত বড়ো আকারে হচ্ছে?

১১ অনুবাদের কাজ দেশ ও দ্বীপ মিলিয়ে ১৫০-টারও বেশি জায়গায় হচ্ছে আর হাজার হাজার ভাই-বোন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছে। এটা দেখে কি আমাদের অবাক হওয়া উচিত? না, কারণ সারা পৃথিবীতে এই একটাই সংগঠন রয়েছে, যেটা পবিত্র শক্তির নির্দেশনায় যিহোবা এবং তাঁর রাজ্য আর যিশুর বিষয়ে “পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য” দিচ্ছে।—প্রেরিত ২৮:২৩.

১২. কীভাবে পৌল এবং অন্যান্য শিষ্যেরা সাক্ষ্য দেওয়ার কাজ করতে পেরেছিলেন?

১২ পৌল যখন পিষিদিয়ার আন্তিয়খিয়ায় যিহুদি ও ন-যিহুদিদের কাছে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, তখন “যাদের অনন্তজীবন লাভ করার জন্য সঠিক মনোভাব ছিল, তারা সকলে যিশুর অনুসারী হয়ে” উঠেছিল। (প্রেরিত ১৩:৪৮) প্রেরিত বইয়ের শেষে লূক লেখেন যে, পৌল “ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করতেন এবং . . . শিক্ষা দিতেন, কেউ তাকে বাধা দিত না।” (প্রেরিত ২৮:৩১) পৌল সেই সময়ে কোথায় সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন? নিশ্চয়ই রোমে, যেটা সেই সময়ের বিশ্বশক্তির রাজধানী ছিল। পৌল এবং অন্যান্য শিষ্যেরা লোকদের সামনে বক্তৃতা দেওয়ার কিংবা অন্যান্য পদ্ধতিতে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তারা পবিত্র শক্তির সাহায্য ও নির্দেশনায় এগুলো করতে পেরেছিলেন।

বিরোধিতা সত্ত্বেও আমরা স্থির থাকি

১৩. আমাদের বিরোধিতা করা হলে অথবা আমাদের তাড়না করা হলে, প্রার্থনা করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

১৩ যিশুর প্রাথমিক শিষ্যদের উপর যখন তাড়না করা হয়, তখন তারা সাহসের জন্য যিহোবার কাছে বিনতি করে। এর ফলে, তারা পবিত্র শক্তিতে পূর্ণ হল এবং সাহসের সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য বলতে লাগল। (প্রেরিত ৪:১৮-৩১) বর্তমানে, আমরাও যিহোবার কাছে প্রজ্ঞা ও শক্তি চেয়ে প্রার্থনা করি, যাতে তাড়না সত্ত্বেও প্রচার কাজ চালিয়ে যেতে পারি। (যাকোব ১:২-৮) আর ঈশ্বর তাঁর পবিত্র শক্তির মাধ্যমে আমাদের সাহায্য করেন ফলে, আমরা প্রচার কাজ চালিয়ে যেতে পারি। আমাদের বিরোধিতা করা হোক কিংবা নিষ্ঠুরভাবে তাড়না করা হোক, পৃথিবীর কোনো শক্তিই আমাদের আটকাতে পারবে না। আমাদের যখন তাড়না করা হয়, তখন যিহোবার কাছে পবিত্র শক্তি, প্রজ্ঞা ও সাহস চেয়ে প্রার্থনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমনটা করলে, আমরা সুসমাচার প্রচার করে চলতে পারব।—লূক ১১:১৩.

১৪, ১৫. (ক) “স্তিফানকে কেন্দ্র করে যে-প্রচণ্ড তাড়না শুরু হয়েছিল,” সেটার ফলাফল কী হয়েছিল? (খ) বর্তমানে সাইবেরিয়ার লোকেরা কীভাবে সত্য জানতে পেরেছে?

১৪ স্তিফান শত্রুদের হাতে মারা যাওয়ার আগে সাহসের সঙ্গে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। (প্রেরিত ৬:৫; ৭:৫৪-৬০) এরপর, খ্রিস্টানদের যখন “প্রচণ্ড তাড়না শুরু হল,” তখন প্রেরিতেরা ছাড়া বাকি সকলে যিহূদিয়া ও শমরিয়া অঞ্চলে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে। কিন্তু, এই কারণে সাক্ষ্য দেওয়ার কাজ থেমে থাকেনি। ফিলিপ শমরিয়াতে “খ্রিস্ট সম্বন্ধে প্রচার” করেছিলেন এবং ভালো ফলাফল পেয়েছিলেন। (প্রেরিত ৮:১-৮, ১৪, ১৫, ২৫) এ ছাড়া, বাইবেলে লেখা আছে, “স্তিফানকে কেন্দ্র করে যে-প্রচণ্ড তাড়না শুরু হয়েছিল, সেটার কারণে যারা ছিন্নভিন্ন হয়ে ফৈনীকিয়া, সাইপ্রাস ও আন্তিয়খিয়া পর্যন্ত চলে গিয়েছিল, তারা কেবল যিহুদিদের কাছেই সুসমাচার ঘোষণা করতে লাগল। কিন্তু, তাদের মধ্যে কেউ কেউ সাইপ্রাস ও কুরীণীর লোক ছিল। তারা আন্তিয়খিয়ায় এসে গ্রিকভাষী লোকদের কাছে প্রভু যিশুর বিষয়ে সুসমাচার ঘোষণা করতে লাগল।” (প্রেরিত ১১:১৯, ২০) সত্যি বলতে কী, তাড়নার কারণেই সুসমাচার দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল।

১৫ বর্তমানেও এমনই কিছু ঘটেছে। ১৯৫০-এর দশকে প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের হাজার হাজার যিহোবার সাক্ষিকে সাইবেরিয়ায় নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে তাদের দূরদূরান্তের এলাকায় ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, এর ফলাফল ভালো হয়েছিল। সাক্ষিদের যেখানে যেখানে পাঠানো হয়েছিল, তারা সেখানেই সুসমাচার প্রচার করেছিল। এভাবে সাইবেরিয়াতে বড়ো এলাকা জুড়ে সুসমাচার ছড়িয়ে পড়েছিল। সরকার যদি সাক্ষিদের সেখানে না পাঠাত, তা হলে তারা কখনোই নিজে থেকে সেখানে যেতে পারত না। কারণ তাদের কাছে এত টাকাপয়সা ছিল না যে, তারা ১০,০০০ কিলোমিটারের পথ যাত্রা করে সেখানে পৌঁছাবে। কিন্তু, সরকার নিজেই সাক্ষিদের বিনামূল্যে সাইবেরিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছিল। একজন ভাই বলেছিলেন, “সরকারি আধিকারিকদের জন্যই সাইবেরিয়ার হাজার হাজার সদ্‌হৃদয়ের ব্যক্তিরা সত্য জানতে পেরেছিল।”

যিহোবা প্রচুররূপে আশীর্বাদ করেন

১৬, ১৭. প্রেরিত বই থেকে কীভাবে জানা যায় যে, সাক্ষ্য দেওয়ার কাজের উপর যিহোবার আশীর্বাদ ছিল?

১৬ যিহোবা যে প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের পরিশ্রমে আশীর্বাদ করেছিলেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। পৌল এবং অন্যান্য শিষ্যেরা সত্যের বীজ রোপন করেছিল আর তাতে জল দিয়েছিল, “কিন্তু ঈশ্বরই বৃদ্ধি দিতে থাকলেন।” (১ করি. ৩:৫, ৬) প্রেরিত বই থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, যিহোবার আশীর্বাদেই বেশিরভাগ লোক সত্য শিখতে পেরেছিল। উদাহরণ স্বরূপ, একটা ঘটনা বলে, “ঈশ্বরের বাক্য ছড়িয়ে পড়তে লাগল এবং জেরুসালেমে শিষ্যদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকল।” (প্রেরিত ৬:৭) তারপর, সুসমাচার অন্যান্য এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়তে লাগল এবং “যিহূদিয়া, গালীল ও শমরিয়ার সমস্ত মণ্ডলী শান্তিতে বাস করতে এবং বিশ্বাসে শক্তিশালী হতে থাকল; আর যেহেতু তারা যিহোবার প্রতি ভয় প্রদর্শন করল এবং পবিত্র শক্তির কাছ থেকে প্রাপ্ত সান্ত্বনার সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করতে লাগল, তাই মণ্ডলীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকল।”—প্রেরিত ৯:৩১.

১৭ সিরিয়ার আন্তিয়খিয়ায় প্রচারকেরা যখন সাহসের সঙ্গে সাক্ষ্য দিয়েছিল, তখন যিহুদি ও গ্রিক লোকেরা সুসমাচার শোনার সুযোগ পেয়েছিল। ফলাফল কী হয়েছিল? শাস্ত্রপদ বলে, “যিহোবার সমর্থন তাদের [প্রচারকদের] উপর ছিল, তাই বহুসংখ্যক লোক প্রভুর উপর বিশ্বাস করল এবং তাঁর শিষ্য হয়ে উঠল।” (প্রেরিত ১১:২১) প্রচারের বিষয়ে শাস্ত্র এও বলে, “যিহোবার বাক্য ছড়িয়ে পড়তে লাগল এবং বহু লোক সেই বাক্যে বিশ্বাস করতে লাগল।” (প্রেরিত ১২:২৪) তারপর, যখন পৌল এবং অন্যান্য শিষ্যেরা ন-যিহুদি লোকদের কাছে উদ্যোগের সঙ্গে সাক্ষ্য দিতে লাগল, তখন “যিহোবার বাক্য ছড়িয়ে পড়তে এবং প্রবল হতে থাকল।”—প্রেরিত ১৯:২০.

১৮, ১৯. (ক) কেন আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, “যিহোবার সমর্থন” আমাদের উপরে রয়েছে? (খ) একটা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন যে, যিহোবা তাঁর লোকদের ছেড়ে দেন না।

১৮ বর্তমানে আমরাও পুরোপুরি নিশ্চিত যে, “যিহোবার সমর্থন” আমাদের উপর আছে। তাই, বর্তমানে অনেক লোক যিহোবা সম্বন্ধে শিখছে এবং নিজেকে তাঁর কাছে উৎসর্গ করে বাপ্তিস্ম নিচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, আমাদের যখন বিরোধিতা করা হয় অথবা আমাদের প্রচণ্ড তাড়না করা হয়, তখনও যিহোবা আমাদের সাহায্য করেন। তাঁর সাহায্যেই আমরা প্রচার কাজ করে চলতে পারি, ঠিক যেমন পৌল এবং প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানেরা করতে পেরেছিলেন। (প্রেরিত ১৪:১৯-২১) আমরা এই বিষয়টা যেন ভুলে না যাই, যিহোবা প্রত্যেকটা পরীক্ষার সময়ে আমাদের সঙ্গে আছেন। তিনি আমাদের কখনো পড়ে যেতে দেবেন না, কারণ “তাঁর দুই বাহু [আমাদের] চিরকাল ধরে রাখবে।” (দ্বিতীয়. ৩৩:২৭, NW) আমরা এও মনে রাখতে পারি, যিহোবা নিজের মহৎ নামের কারণে কখনো নিজের লোকদের ছেড়ে দেবেন না। —১ শমূ. ১২:২২; গীত. ৯৪:১৪.

১৯ এই বিষয়ে একটা উদাহরণ লক্ষ করুন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ভাই হ্যারল্ট অ্যাপ্ট প্রচার করা বন্ধ করেননি। তাই, নাতসিরা তাকে জ্যাক্‌সেনহোজেন কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়। ১৯৪২ সালের মে মাসে জার্মান পুলিশ সেই ভাইয়ের বাড়িতে যায় এবং তার স্ত্রী এল্জাকে গ্রেপ্তার করে এবং তাদের ছোট্ট মেয়েকে ছিনিয়ে নেয়। এরপর, বোন এল্জাকে বিভিন্ন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল। বোন বলেন, “জার্মান কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে থাকার ফলে আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখেছি, সেটা হল আমরা যখন জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাই, তখন যিহোবার পবিত্র শক্তি আমাদের ভিতর থেকে শক্তিশালী করে, যাতে আমরা দৃঢ় থাকতে পারি। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আমি এক বোনের লেখা একটা চিঠি পড়েছিলাম, যেখানে লেখা ছিল, কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়ার সময়ও যিহোবার পবিত্র শক্তি আমাদের অশান্ত মনকে শান্ত করতে সাহায্য করতে পারে। সেই সময় আমি চিন্তা করেছিলাম, বোন এই কথাগুলো একটু বেশিই বাড়িয়ে বলেছেন। কিন্তু, আমি নিজে যখন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাই, তখন বুঝতে পারি যে, সেই বোন ঠিকই বলেছিলেন। আসলে, আপনি যদি নিজে এইরকম পরিস্থিতিতে না পড়েন, তা হলে আপনার পক্ষেও বিশ্বাস করা কঠিন বলে মনে হতে পারে। কিন্তু, আমি এটা অনুভব করেছি যে, সত্যিই যিহোবার পবিত্র শক্তি সাহায্য করে।”

পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সাক্ষ্য দিয়ে চলুন!

২০. পৌল যখন গৃহবন্দি ছিলেন, তখন তিনি কী করেছিলেন এবং এর থেকে কিছু ভাই-বোনেরা কোন উৎসাহ পায়?

২০ প্রেরিত বইয়ের একেবারে শেষে বলা হয়েছে, প্রেরিত পৌল সম্পূর্ণ উদ্যোগের সঙ্গে “ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার” করছিলেন। (প্রেরিত ২৮:৩১) তিনি রোমে গৃহবন্দি ছিলেন আর তাই তিনি ঘরে ঘরে প্রচারে যেতে পারতেন না। তা সত্বেও, তিনি সেই সমস্ত লোকের কাছে সাক্ষ্য দিতেন, যারা তার সঙ্গে দেখা করতে আসত। বর্তমানে, আমাদের কিছু প্রিয় ভাই-বোনেরাও ঘরে একরকম বন্দি অবস্থায় রয়েছেন। তাদের মধ্যে কিছু জন বেশি চলাফেরা করতে পারে না, এমনকী বিছানা থেকে উঠতেও পারে না। অন্যেরা আবার বার্ধক্য, অসুস্থতা ও অক্ষমতার কারণে নার্সিংহোমে থাকে। এই সমস্ত কিছু সত্ত্বেও, ঈশ্বরের প্রতি তাদের ভালোবাসা এবং প্রচারের জন্য তাদের উদ্যোগ বিন্দুমাত্র কমে যায়নি। আমরা যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে পারি, যাতে এই ভাই-বোনদের সঙ্গে এমন লোকদের দেখা হয়, যারা সত্যিই যিহোবা এবং তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জানতে চায়।

২১. কেন আমাদের সাক্ষ্য দেওয়ার কাজে দেরি করা উচিত নয়?

২১ আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ ভাই-বোনেরই তেমন কোনো অসুস্থতা নেই আর তাই, আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে এবং অন্যান্য উপায়ে প্রচার করতে পারি। ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে “পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত” সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করা উচিত। এই কাজে আমাদের দেরি করা উচিত নয় কারণ আমরা খ্রিস্টের উপস্থিতির “চিহ্ন” স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি। (মথি ২৪:৩-১৪) সেইসঙ্গে ‘প্রভুর সেবায় উপচে পড়ার’ মতো আমাদের কাছে অনেক কাজ আছে। আমাদের কাছে নষ্ট করার মতো একদমই সময় নেই। —১ করি. ১৫:৫৮.

২২. যিহোবার দিন না আসা পর্যন্ত আমরা কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্প?

২২ বর্তমানে, আমরা ‘সদাপ্রভুর মহৎ ও ভয়ঙ্কর দিনের’ অপেক্ষায় রয়েছি। এই সময়ে আমাদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হওয়া উচিত যে, আমরা যেন সাহসের সঙ্গে সাক্ষ্য দিয়ে চলি। (যোয়েল ২:৩১) বর্তমানে, আমাদের এলাকাতেও এমন লোকেরা রয়েছে, যারা বিরয়ার লোকদের মতো “গভীর আগ্রহের সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য গ্রহণ” করবে। (প্রেরিত ১৭:১০, ১১) তাই আসুন, আমরা সাক্ষ্য দেওয়ার কাজে ততক্ষণ পর্যন্ত লেগে থাকি, যতক্ষণ না আমাদের বলা হয়, “বেশ, উত্তম ও বিশ্বস্ত দাস!” (মথি ২৫:২৩) আমরা যদি এখন মনপ্রাণ দিয়ে শিষ্য তৈরির কাজ করি এবং যিহোবার প্রতি বিশ্বস্ত থাকি, তা হলে এই বিষয়টা আমাদের সবসময় আনন্দিত করবে যে, আমরা ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে “পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য” দিয়েছি!