সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় ২৪

“সাহস করো!”

“সাহস করো!”

পৌল একটা ষড়যন্ত্রের শিকার হওয়া থেকে বেঁচে যান এবং ফিলিক্সের সামনে নিজের আত্মপক্ষ সমর্থন করেন

প্রেরিত ২৩:১১–২৪:২৭ পদের উপর ভিত্তি করে

১, ২. জেরুসালেমে যখন পৌলের উপর অত্যাচার করা হয়েছিল, তখন কেন তিনি অবাক হয়ে যাননি?

 জেরুসালেমে এক দল লোক পৌলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এমনটা মনে হয়, তারা তাকে মেরে না ফেলা পর্যন্ত থামবে না। ঠিক তখনই পৌলকে রক্ষা করা হয় এবং আবারও এক বার তিনি হেফাজতে রয়েছেন। পৌল একটুও অবাক হননি কারণ তিনি জানতেন, জেরুসালেমে তাকে “কারাগারে যেতে হবে এবং ক্লেশ ভোগ করতে হবে।” (প্রেরিত ২০:২২, ২৩) পৌল নির্দিষ্টভাবে জানতেন না যে, পরবর্তী সময়ে তার প্রতি কী কী ঘটবে, কিন্তু তিনি এটা জানতেন, যিশুর নামের জন্য তাকে অনেক কষ্ট ভোগ করতে হবে।—প্রেরিত ৯:১৬.

শুধু তাই নয়, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর কিছু ভাববাদীও পৌলকে সতর্ক করেছিলেন যে, বিরোধীরা তাকে ধরবে এবং “ন-যিহুদিদের হাতে তুলে দেবে।” (প্রেরিত ২১:৪, ১০, ১১) কিছুদিন আগে, যিহুদিদের একটা দল তাকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল। তারপর, যিহুদি মহাসভার সদস্যরা পৌলকে নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করতে লাগল। ঝগড়া এতটাই চরমে পৌঁছেছিল যে মনে হয়েছিল, তারা পৌলকে “টুকরো টুকরো করে” দেবে। পৌল এখন কারাগারে রয়েছেন এবং রোমীয় সৈন্যেরা তাকে কড়া পাহারা দিচ্ছে। খুব শীঘ্রই তার উপর আরও সমস্যা আসতে চলেছে এবং তার উপর আরও অভিযোগ আনা হবে। (প্রেরিত ২১:৩১; ২৩:১০) এই কঠিন সময় কাটিয়ে ওঠার জন্য পৌলের অনেক সাহসের প্রয়োজন হবে।

৩. প্রচার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা কোথা থেকে উৎসাহ পাই?

বাইবেল বলে, এই শেষকালে “যত লোক খ্রিস্ট যিশুর শিষ্য হিসেবে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি সহকারে জীবনযাপন করতে চায়, তাদের সকলের প্রতিও তাড়না ঘটবে।” (২ তীম. ৩:১২) প্রচার কাজ করে চলার জন্য আমাদেরও মাঝে মধ্যেই উৎসাহের প্রয়োজন হয়। “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস” বিভিন্ন প্রকাশনা এবং সভার মাধ্যমে সঠিক সময়ে আমাদের উৎসাহিত করে এবং সাহস বৃদ্ধি করে। (মথি ২৪:৪৫) এর জন্য সত্যিই আমরা কতই-না কৃতজ্ঞ! যিহোবা আমাদের নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে, আমাদের শত্রুরা কখনো সফল হবে না। তারা কখনোই ঈশ্বরের দাসদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে এবং প্রচার কাজকে পুরোপুরিভাবে বন্ধ করে দিতে পারবে না। (যিশা. ৫৪:১৭; যির. ১:১৯) কিন্তু, প্রেরিত পৌলের বিষয়ে কী বলা যায়? তাকে কি উৎসাহিত করা হয়েছিল? যদি তাই হয়, তা হলে কীভাবে তা করা হয়েছিল আর উৎসাহিত হওয়ার পর তিনি কী করেন? আসুন তা দেখি।

শপথ নিয়ে করা “ষড়যন্ত্র” ব্যর্থ হয় (প্রেরিত ২৩:১১-৩৪)

৪, ৫. কীভাবে পৌলকে উৎসাহিত করা হয়েছিল আর কীভাবে আমরা বলতে পারি যে, সঠিক সময়ে তা করা হয়েছিল?

যে-রাতে পৌলকে মহাসভা থেকে রক্ষা করা হয়েছিল, সেই রাতেই “প্রভু যিশু পৌলের কাছে দাঁড়িয়ে তাকে বললেন: ‘সাহস করো! কারণ জেরুসালেমে যেমন তুমি আমার বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিয়েছ, তেমনই রোমেও তোমাকে সাক্ষ্য দিতে হবে।’” (প্রেরিত ২৩:১১) যিশুর কথাগুলো থেকে পৌল অনেক উৎসাহ পান এবং তিনি বুঝতে পারেন, বিরোধীরা তার কিছু করতে পারবে না। তিনি ভালোভাবে রোমে পৌঁছাতে পারবেন এবং সেখানে যিশু সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেবেন।

“তাদের মধ্যে ৪০ জনের চেয়েও বেশি লোক তাকে হঠাৎ আক্রমণ করার জন্য অপেক্ষা করছে।”—প্রেরিত ২৩:২১

যিশু একদম সঠিক সময়ে পৌলকে উৎসাহিত করেছিলেন। ঠিক এর পরের দিনই ৪০ জনেরও বেশি যিহুদি “একটা ষড়যন্ত্র করল এবং এই শপথ করল যে, পৌলকে হত্যা না করা পর্যন্ত তারা খাবার বা জল গ্রহণ করবে না।” লক্ষ করুন, যিহুদিরা একটা “ষড়যন্ত্র করল” এবং তা পূরণ করার জন্য “শপথ করল।” এর থেকে বোঝা যায়, তারা যেকোনোভাবে হোক পৌলকে মেরে ফেলতে চায়। তারা মনে করত, এই পরিকল্পনা যদি ব্যর্থ হয়, তা হলে তাদের উপর অভিশাপ নেমে আসবে। (প্রেরিত ২৩:১২-১৫) তারা কী ষড়যন্ত্র করেছিল? তাদের ষড়যন্ত্র এই ছিল যে, তারা এমনটা দেখাবে যেন, মামলাটাকে তারা আরও ভালোভাবে যাচাই করতে চাইছে। আর তাই, তারা পৌলকে মহাসভার সামনে নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করবে। কিন্তু, তারা রাস্তাতে লুকিয়ে থাকবে এবং পৌলের উপর হামলা করে তাকে মেরে ফেলবে। তাদের এই পরিকল্পনাকে মহাযাজক এবং যিহুদি নেতারাও অনুমোদন দেয়।

৬. (ক) কীভাবে পৌল যিহুদিদের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে জানতে পেরেছিলেন? (খ) পৌলের ভাগনের কাছ থেকে অল্পবয়সি ভাই-বোনেরা কী শিখতে পারে?

কিন্তু, পৌলের ভাগনে এই পরিকল্পনা সম্বন্ধে জানতে পারে আর সে গিয়ে পৌলকে তা বলে। পৌল তাকে বলেন, সে যেন রোমীয় সেনাপতি ক্লোদিয় লুষিয়কে গিয়ে এই বিষয়গুলো জানায়। (প্রেরিত ২৩:১৬-২২) পৌলের এই ভাগনের নাম বাইবেলে দেওয়া হয়নি। তবে, আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা ঈশ্বর এইরকম অল্পবয়সিদের খুবই ভালোবাসেন যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েও ঈশ্বরের লোকদের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করে যেন রাজ্যের কাজ বিনা বাধায় এগিয়ে যায়।

৭, ৮. ক্লোদিয় লুষিয় পৌলের সুরক্ষার জন্য কোন ব্যবস্থা করেছিলেন?

ক্লোদিয় লুষিয় একজন সেনাপতি ছিলেন, যার অধীনে ১,০০০ জন সৈন্য ছিল। তাকে যখনই এই ষড়যন্ত্র সম্বন্ধে জানানো হয়েছিল, তখনই তিনি আদেশ দেন যেন ৪৭০ জনকে নিয়ে একটা সৈন্যদল গঠন করা হয়, যার মধ্যে বর্ষাধারী ও অশ্বারোহী সৈন্যেরাও থাকবে। এই সৈন্যদলকে আদেশ দেওয়া হয় তারা যেন রাতের মধ্যেই পৌলকে কৈসরিয়ায় নিয়ে যায় এবং সেখানে রাজ্যপাল ফীলিক্সের হাতে তুলে দেয়। a কৈসরিয়া রোমীয় প্রদেশ যিহূদিয়ার রাজধানী ছিল। যদিও এই নগরে অনেক যিহুদি বাস করত, কিন্তু এখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দা ন-যিহুদি ছিল। কৈসরিয়া নগর জেরুসালেম থেকে একেবারে আলাদা ছিল। কৈসরিয়ায় শাসন ব্যবস্থা ভালো ছিল এবং এখানে শান্তি ছিল। কিন্তু, এর বিপরীতে জেরুসালেমের লোকেরা সবসময় অন্য ধর্মের লোকদের ঘৃণা করত এবং কথায় কথায় ঝগড়াঝাঁটি করত। কৈসরিয়া রোমীয় সৈন্যদের প্রধান কার্যালয়ও ছিল।

লুষিয় রোমীয় আইন অনুসারে ফীলিক্সকে একটা চিঠি লেখেন। চিঠিতে তিনি সেই মামলার সমস্ত বর্ণনা দেন। তিনি লেখেন, যিহুদিরা পৌলকে “প্রায় হত্যা করতে যাচ্ছিল।” কিন্তু তিনি যখন জানতে পারেন যে, পৌল একজন রোমীয় নাগরিক, তখন তিনি পৌলকে রক্ষা করেন। লুষিয় এও বলেন, তার মতে পৌলকে “মৃত্যুদণ্ড বা কারাগারে দেওয়ার মতো কোনো বিষয় নিয়ে অভিযোগ ওঠেনি।” আসলে, পৌলের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র করা হয়েছে আর তাই, তিনি তাকে রাজ্যপাল ফীলিক্সের কাছে পাঠাচ্ছেন। এবার পৌলের উপর যারা অভিযোগ করেছিল, ফীলিক্স তাদের কথা শুনুক এবং তারপর সিদ্ধান্ত নিক।—প্রেরিত ২৩:২৫-৩০.

৯. (ক) কীভাবে পৌলের নাগরিকত্বের অধিকারকে লঙ্ঘন করা হয়েছিল? (খ) কেন আমরা আইনের সাহায্য নিয়ে নিজেদের অধিকার রক্ষা করি?

লুষিয় চিঠিতে যা লিখেছিলেন, সেই সমস্ত কিছু কি সত্যি ছিল? না। আসলে, তিনি হয়তো রাজ্যপালের সামনে দেখাতে চেয়েছিলেন যে, তিনি একজন যোগ্য ও দায়িত্ববান সেনাপতি। তিনি এই বিষয়ে মিথ্যা লিখেছিলেন যে, তিনি যখন জানতে পেরেছিলেন, পৌল একজন রোমীয় নাগরিক, তখন তিনি তাকে রক্ষা করেছিলেন। এ ছাড়া, তিনি ফীলিক্সকে এটা বলেননি যে, তিনি পৌলকে “দুটো শিকল দিয়ে বাঁধার” আদেশ দিয়েছিলেন এবং এক সময় তাকে “চাবুক মেরে জেরা” করতেও বলেছিলেন। (প্রেরিত ২১:৩০-৩৪; ২২:২৪-২৯) এমনটা করার ফলে লুষিয় পৌলের রোমীয় নাগরিকত্বের অধিকারকে লঙ্ঘন করেছিলেন। বর্তমানেও শয়তান আমাদের উপর তাড়না করার জন্য ধর্মীয় গোঁড়া ব্যক্তিদের ব্যবহার করে। হতে পারে, এই বিরোধীরা আমাদের উপাসনা করতে বাধা দেয়, যেখানে দেশের আইন আমাদের তা করতে অনুমতি দেয়। এই ক্ষেত্রে আমরা সেটাই করতে পারি যা প্রেরিত পৌল করেছিলেন। আমরা আইনের সাহায্য নিয়ে নিজেদের অধিকার রক্ষা করতে পারি।

“আমি আপনার সামনে আত্মপক্ষ সমর্থন করার জন্য কথা বলতে পেরে আনন্দিত” (প্রেরিত ২৩:৩৫–২৪:২১)

১০. পৌলের উপর কোন কোন গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছিল?

১০ কৈসরিয়ায় পৌলকে “হেরোদের প্রাসাদে পাহারা দিয়ে” ততক্ষণ রাখা হয়, যতক্ষণ না জেরুসালেম থেকে তার অভিযোগকারীরা আসে। (প্রেরিত ২৩:৩৫) পাঁচ দিন পর, মহাযাজক অননিয়, তর্তুল্ল নামে এক উকিল এবং কয়েক জন যিহুদি নেতা কৈসরিয়ায় পৌঁছায়। তারা ফীলিক্সের সামনে হাজির হয়। তর্তুল্ল প্রথমে ফীলিক্সের প্রশংসা করে বলেন, ফীলিক্স যিহুদিদের জন্য অনেক ভালো ভালো কাজ করছেন। তিনি ফীলিক্সকে তোষামোদ করার জন্য এমনটা করেন। b এরপর, তিনি আসল কথায় আসেন। তিনি পৌলের বিষয়ে বলেন: “এই লোকটা গণ্ডগোলের মূল, পৃথিবীর সমস্ত জায়গার যিহুদিদের বিদ্রোহ করতে উসকে দিচ্ছে এবং এ নাসরতীয় দলের একজন প্রধান নেতা। আর এ এমনকী মন্দিরও অপবিত্র করার চেষ্টা করেছে, তাই আমরা এ-কে ধরেছি।” তখন অন্যান্য যিহুদিরাও “পৌলকে দোষারোপ করল, জোর দিয়ে বলতে লাগল যে, এইসমস্ত কথা সত্য।” (প্রেরিত ২৪:৫, ৬, ৯) সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা, একটা ভয়ঙ্কর দলের নেতা হওয়া এবং মন্দিরকে অপবিত্র করা, এমন গুরুতর অভিযোগ ছিল যে, এগুলোর জন্য মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারত।

১১, ১২. কীভাবে পৌল তার ওপর আনা অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রমাণ করেছিলেন?

১১ এই বার পৌলকে বলার সুযোগ দেওয়া হয়। তিনি সবার প্রথমে বলেন: “আমি আপনার সামনে আত্মপক্ষ সমর্থন করার জন্য কথা বলতে পেরে আনন্দিত।” তারপর তিনি স্পষ্টভাবে বলেন যে, তার উপর যত অভিযোগ আনা হয়েছে সব মিথ্যা। তিনি মন্দিরকে অপবিত্র করার চেষ্টাও করেননি আর যিহুদিদের বিদ্রোহ করতে উসকেও দেননি। তিনি বলেন, আসলে তিনি “বেশ কয়েক বছর” জেরুসালেমেই ছিলেন না। তিনি “দান” নিয়ে সবেমাত্র জেরুসালেমে এসেছেন কারণ এখানকার খ্রিস্টানেরা দুর্ভিক্ষ এবং বিভিন্ন তাড়নার কারণে অনেক সমস্যার মধ্যে রয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, মন্দিরে ঢোকার আগে তিনি নিজেকে “রীতিগতভাবে শুচি” করেছিলেন। আর তার মনের ইচ্ছা এই যে, তিনি যেন ‘সবসময় ঈশ্বরের এবং লোকদের সামনে এক শুদ্ধ বিবেক বজায় রাখার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেন।’—প্রেরিত ২৪:১০-১৩, ১৬-১৮.

১২ পৌল এই বিষয়টা স্বীকার করেন যে, “তারা যেটাকে দল বলে” তিনি সেই দলের রীতি অনুযায়ী তার পূর্বপুরুষদের ঈশ্বরের উপাসনা করতেন। কিন্তু, তিনি এবং তার বিরোধীরা যা বিশ্বাস করে, সেটার মধ্যে বেশি পার্থক্য নেই। তাদের মতো তিনিও ঈশ্বরের উপাসনা করেন, “ব্যবস্থায় এবং ভাববাদীদের গ্রন্থে যে-সমস্ত বিষয় লেখা রয়েছে,” সেগুলো বিশ্বাস করেন এবং এটাও বিশ্বাস করেন যে, “ধার্মিক ও অধার্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হবে।” এরপর পৌল দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগের যদি কোনো প্রমাণ থাকে, তা হলে সেটা দেখানো হোক। তিনি বলেন, “আমি যখন মহাসভার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তখন তারা আমার মধ্যে কোন দোষ খুঁজে পেয়েছে। তারা কেবল একটা বিষয়েই আমার বিরুদ্ধে দোষারোপ করতে পারে যে, আমি তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলেছিলাম: ‘মৃতদের পুনরুত্থানে আমি বিশ্বাস করি বলে আজ আপনাদের সামনে আমার বিচার করা হচ্ছে!’”—প্রেরিত ২৪:১৪, ১৫, ২০, ২১.

১৩-১৫. আধিকারিকদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার বিষয়ে আমরা পৌলের কাছ থেকে কী শিখতে পারি?

১৩ বর্তমানেও হয়তো বিরোধীরা আমাদের উপরে এই অভিযোগ আনতে পারে যে, আমরা দেশদ্রোহী, লোকদের উসকে দিই অথবা কোনো বিপদজনক দলের লোক। হতে পারে তারা আমাদের আধিকারিকদের সামনে নিয়ে যাবে। এই ক্ষেত্রে আমরা পৌলের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। তিনি রাজ্যপালের সঙ্গে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে তার তোষামোদ করেননি, যেমনটা তর্তুল্ল করেছিল। তার উপর যখন মিথ্যা অভিযোগগুলো আনা হচ্ছিল, তখন তিনি শান্ত ছিলেন এবং সবার প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন। এরপর যখন তার বলার সুযোগ এসেছিল, তখন তিনি বুদ্ধির সঙ্গে কিন্তু, স্পষ্টভাবে কথা বলেছিলেন। পৌল বলেছিলেন, “এশিয়া প্রদেশের কয়েক জন যিহুদি” যারা তার উপর এই অভিযোগ এনেছিল যে, তিনি মন্দির অপবিত্র করেছেন, আইন অনুযায়ী তাদের এখানে থাকার কথা ছিল।—প্রেরিত ২৪:১৮, ১৯.

১৪ পৌলের মধ্যে একটা বিষয় খুবই লক্ষ করার মতো যে, তিনি নিজের বিশ্বাস সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেওয়া থেকে পিছপা হননি। এই সুযোগে একবার আবারও তিনি পুনরুত্থানের বিষয়টা তোলেন। তিনি এই ভেবে ভয় পাননি যে, আগে একবার এই শিক্ষা নিয়েই মহাসভায় গণ্ডগোল শুরু হয়ে গিয়েছিল। (প্রেরিত ২৩:৬-১০) কিন্তু, পৌল নিজের পক্ষ সমর্থন করার সময়ে কেন এই শিক্ষার বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন? কারণ পৌল যিশুর বিষয়ে প্রচার করছিলেন এবং শিক্ষা দিচ্ছিলেন যে, তাকে মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত করা হয়েছে। কিন্তু, তার বিরোধীরা এই শিক্ষাকে বিশ্বাস করত না। (প্রেরিত ২৬:৬-৮, ২২, ২৩) হ্যাঁ, যত গণ্ডগোল হয়েছিল, এই শিক্ষাকে নিয়েই হয়েছিল।

১৫ পৌলের মতো আমরাও নির্ভয়ে সাক্ষ্য দিতে পারি আর যিশুর বলা এই কথাগুলো থেকে শক্তি পেতে পারি: “আমার নামের জন্য সকলে তোমাদের ঘৃণা করবে। কিন্তু, যে-কেউ শেষ পর্যন্ত স্থির থাকবে, সে-ই রক্ষা পাবে।” আমাদের কি এই বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত হওয়া উচিত যে, উচ্চ আধিকারিকদের কাছে আমরা কীভাবে কথা বলব? না। যিশু নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন, “তারা যখন তোমাদের আদালতের হাতে তুলে দেবে, তখন কী বলতে হবে, তা ভেবে উদ্‌বিগ্ন হোয়ো না; বরং সেই সময়ে তোমাদের যা জানানো হবে, সেটাই বোলো কারণ তোমরাই যে বলবে, এমন নয়, কিন্তু পবিত্র শক্তিই বলবে।”—মার্ক ১৩:৯-১৩.

“ফীলিক্স ভয় পেয়ে গেলেন” (প্রেরিত ২৪:২২-২৭)

১৬, ১৭. (ক) পৌলের বিচারের ক্ষেত্রে ফীলিক্স কী করেছিলেন? (খ) ফীলিক্স হয়তো কোন বিষয়ে ভয় পেয়েছিলেন? (গ) তারপরও কেন তিনি পৌলকে বার বার ডেকে পাঠিয়েছিলেন?

১৬ রাজ্যপাল ফীলিক্স আগেও খ্রিস্টের শিক্ষা সম্বন্ধে শুনেছিলেন। বাইবেল বলে, “ফীলিক্স যেহেতু প্রভুর পথ সম্বন্ধে ভালোভাবে জানতেন, তাই তিনি তাদের এই বলে বিচার স্থগিত রাখলেন: ‘প্রধান সেনাপতি লুষিয় যখন আসবেন, তখন আমি এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।’ এরপর তিনি সেনাপতিকে আদেশ দিলেন, যেন এই ব্যক্তিকে বন্দি করেই রাখা হয়, তবে কিছুটা স্বাধীনতাও যেন দেওয়া হয় আর তার লোকেরা যদি তার সেবাযত্ন করতে চায়, তা হলে যেন কোনোরকম বাধা দেওয়া না হয়।”—প্রেরিত ২৪:২২, ২৩.

১৭ কিছুদিন পর ফীলিক্স এবং তার স্ত্রী দ্রুষিল্লা, যিনি একজন যিহুদি ছিলেন, পৌলকে ডেকে পাঠান এবং তার কাছ থেকে জানতে চান যে, “খ্রিস্ট যিশুর উপর বিশ্বাস করার অর্থ কী।” (প্রেরিত ২৪:২৪) কিন্তু, “পৌল যখন যা সঠিক, সেই সম্বন্ধে এবং আত্মসংযম ও আসন্ন বিচার সম্বন্ধে বললেন, তখন ফীলিক্স ভয় পেয়ে গেলেন।” তার বিবেক হয়তো তাকে দংশন করছিল কারণ তিনি জীবনে অনেক মন্দ কাজ করেছেন। তাই, তিনি এই বলে পৌলকে পাঠিয়ে দেন, “তুমি এখনকার মতো যাও। সুযোগ হলে আবারও আমি তোমাকে ডেকে পাঠাব।” পরে তিনি পৌলকে বার বার ডেকে পাঠান। তবে, সত্যের প্রতি তার কোনো আগ্রহ ছিল না, তিনি শুধুমাত্র ঘুস পাওয়ার আশায় পৌলকে বার বার ডেকে পাঠাতেন।—প্রেরিত ২৪:২৫, ২৬.

১৮. পৌল কেন ফীলিক্স এবং তার স্ত্রীর সঙ্গে “যা সঠিক, সেই সম্বন্ধে এবং আত্মসংযম ও আসন্ন বিচার সম্বন্ধে” কথা বলেছিলেন?

১৮ কেন পৌল “যা সঠিক, সেই সম্বন্ধে এবং আত্মসংযম ও আসন্ন বিচার সম্বন্ধে” কথা বলেছিলেন? মনে করে দেখুন, ফীলিক্স এবং তার স্ত্রী নিজেরাই জানতে চেয়েছিলেন যে, “খ্রিস্ট যিশুর উপর বিশ্বাস করার অর্থ কী।” পৌল জানতেন তারা চরিত্রহীন, নিষ্ঠুর এবং অন্যায়কারী। তাই, পৌল তাদের স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, যিশুর শিষ্য হওয়ার অর্থ কী। পৌলের কথা থেকে এটা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, ফীলিক্স এবং তার স্ত্রী ঈশ্বরের মান অনুযায়ী জীবনযাপন করছিলেন না। তারা হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন যে, ঈশ্বরের কাছে তাদের কথা, তাদের কাজ এবং তাদের চিন্তাধারার জন্য নিকাশ দিতে হবে। ফীলিক্স যদি পৌলের বিচার করার জন্য রয়েছেন, তা হলে ফীলিক্সের বিচার করার জন্যেও কেউ রয়েছেন। আর তিনি হলেন, ঈশ্বর। তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, পৌলের কথা শুনে ফীলিক্স “ভয় পেয়ে গেলেন।”

১৯, ২০. (ক) প্রচারে আমরা হয়তো কেমন ব্যক্তিদের পেতে পারি আর তাদের সঙ্গে আমাদের কেমন আচরণ করা উচিত? (খ) কেন আমরা বলতে পারি যে, পৌলের প্রতি ফীলিক্সের কোনো সহানুভূতি ছিল না?

১৯ আমরাও হয়তো প্রচারে ফীলিক্সের মতো ব্যক্তিদের পেতে পারি। প্রথম প্রথম আমাদের হয়তো মনে হতে পারে, এই ব্যক্তিরা সত্যের প্রতি সত্যিই আগ্রহী। কিন্তু পরে বোঝা যায়, তারা ঈশ্বরের মান অনুযায়ী নিজেদের পরিবর্তন করতে চায় না। আমাদের এইরকম ব্যক্তিদের থেকে সাবধান থাকতে হবে কারণ আমরা জানি না যে, তাদের উদ্দেশ্য আসলে কী। কিন্তু, আমরা প্রেমের সঙ্গে তাদের বোঝাতে পারি ঈশ্বরের মান কী। ঠিক যেমন পৌল করেছিলেন। কে জানে, হয়তো সত্য তাদের হৃদয় স্পর্শ করতে পারে এবং তারা পরিবর্তন হতে পারে! কিন্তু, তারা যদি তাদের মন্দ কাজ করা বন্ধ না করে আর নিজেদের পরিবর্তন করতে না চায়, তা হলে আমরা তাদের জোর করব না। এর পরিবর্তে, আমরা এমন ব্যক্তিদের খুঁজব, যারা প্রকৃতই সত্য সম্বন্ধে জানতে চায়।

২০ খুব তাড়াতাড়ি ফীলিক্সের আসল চেহারাটা সামনে এসে যায়। শাস্ত্রপদ বলে: “কিন্তু, দু-বছর কেটে যাওয়ার পর, ফীলিক্সের পদে পর্কিয় ফীষ্ট নিযুক্ত হলেন; আর ফীলিক্স যিহুদিদের খুশি করতে চেয়েছিলেন বলে পৌলকে বন্দি অবস্থাতেই রেখে গেলেন।” (প্রেরিত ২৪:২৭) ফীলিক্স ভালোভাবে জানতেন, যারা ‘প্রভুর পথে’ চলে তারা দেশদ্রোহী নয় এবং সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো আন্দোলনও করে না। (প্রেরিত ১৯:২৩) তিনি এও জানতেন, পৌল রোমীয় সরকারের কোনো আইন ভঙ্গ করেননি। কিন্তু তা সত্ত্বেও, তিনি “যিহুদিদের খুশি করতে চেয়েছিলেন বলে,” পৌলকে বন্দি অবস্থাতেই রেখে দিয়েছিলেন। এর থেকে এটা স্পষ্ট বোঝা যায় যে, পৌলের প্রতি ফীলিক্সের কোনো সহানুভূতি ছিল না।

২১. (ক) পর্কিয় ফীষ্ট যখন রাজ্যপাল হয়েছিলেন, তখন পৌলের প্রতি কী ঘটেছিল (খ) কোন কথাটা পৌলকে সব সময় শক্তিশালী করেছিল?

২১ আমরা প্রেরিত ২৪ অধ্যায়ের শেষ পদে দেখেছি, ফীলিক্সের জায়গায় যখন পর্কিয় ফীষ্ট রাজ্যপাল হন, তখনও পৌল বন্দি অবস্থাতেই ছিলেন। এরপর পৌলকে একের-পর-এক আধিকারিকদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার মামলার শুনানি হয়। এভাবে এই সাহসী প্রেরিতকে ‘রাজাদের ও রাজ্যপালদের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়।’ (লূক ২১:১২) যেমনটা আমরা পরবর্তী সময় দেখব, তিনি সম্রাটের কাছেও সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, যিনি সেই সময়ে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি ছিলেন। এই পরিস্থিতির মধ্যে পৌল কখনোই তার বিশ্বাসে দুর্বল হননি। যিশুর এই কথাটা সবসময় তাকে ভিতর থেকে শক্তিশালী করেছিল: “সাহস করো!”

a ফীলিক্স—যিহূদিয়ার রাজ্যপাল” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

b তর্তুল্ল, ফীলিক্সকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন: “মহামান্য ফীলিক্স, আপনার কারণে আমরা মহাশান্তিতে জীবনযাপন করছি।” কিন্তু, এই প্রশংসা মিথ্যা ছিল। আসলে, ফীলিক্সের আমলে সবচেয়ে বেশি অশান্তি ছিল। তর্তুল্লের এই কথাটাও মিথ্যা ছিল যে, ফীলিক্স যিহুদিয়ায় শান্তি আনার জন্য অনেক প্রচেষ্টা করছে আর যিহুদিরা তার প্রতি ‘সম্পূর্ণ কৃতজ্ঞ’ ছিল। কিন্তু, সত্য বিষয়টা হল, বেশিরভাগ যিহুদি ফীলিক্সকে ঘৃণা করত কারণ তিনি তাদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন এবং তাদের বিদ্রোহ থামানোর জন্য তাদের সঙ্গে অনেক কঠোর আচরণ করেছিলেন।—প্রেরিত ২৪:২, ৩.