সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় ২০

বিরোধিতা সত্ত্বেও “যিহোবার বাক্য ছড়িয়ে পড়তে এবং প্রবল হতে থাকল”

বিরোধিতা সত্ত্বেও “যিহোবার বাক্য ছড়িয়ে পড়তে এবং প্রবল হতে থাকল”

পৌল ও আপল্লো সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন

প্রেরিত ১৮:২৩–১৯:৪১ পদের উপর ভিত্তি করে

১, ২. (ক) ইফিষে পৌল এবং তার সঙ্গীদের কোন বিপদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল? (খ) এই অধ্যায়ে আমরা কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করব?

 ইফিষের রাস্তায় অনেক লোক বেরিয়ে পড়েছে, তারা চিৎকার করছে আর এদিক-ওদিক দৌড়োদৌড়ি করছে। চারিদিকে হইচই হচ্ছে। বিক্ষুব্ধ এই জনতা দু-জন ব্যক্তিকে ধরে টেনে-হেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই ব্যক্তিরা হল পৌলের সঙ্গী। এই বিক্ষুব্ধ জনতা নগরের প্রধান সড়কে গিয়ে পৌঁছায় আর তারা যখন দোকানগুলোর সামনে দিয়ে যেতে থাকে, তখন তাদের সঙ্গে আরও লোক যোগ দেয় আর শীঘ্রই পথটা একেবারে জনশূন্য হয়ে যায়। আর সেই জনতা ঝড়ের গতিতে রঙ্গভূমি বা অ্যাম্ফিথিয়েটারে ঢুকে পড়ে, যেখানে ২৫,০০০ দর্শক জমা হতে পারে। আশ্চর্যের বিষয় হল, সেখানে উপস্থিত অর্ধেকেরও বেশি লোক জানে না যে, কেন তারা সেখানে একত্রিত হচ্ছে। তারা শুধুমাত্র এটা শুনেছে, তাদের মহান দেবী আর্তেমিস এবং তার মন্দিরের কোনো বিপদ হয়েছে। তাই তারা চিৎকার করতে থাকে, “ইফিষীয়দের দেবী আর্তেমিসই মহান!”—প্রেরিত ১৯:৩৪.

এখানে শয়তান তার এক পুরোনো কৌশলকে আবারও ব্যবহার করে। সে জনতাকে উসকে দিয়ে সুসমাচার প্রচারের কাজ বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। নিশ্চিতভাবেই, এটা ছিল শয়তানের বিভিন্ন কৌশলের মধ্যে একটা। এই অধ্যায়ে আমরা দেখব, শয়তান প্রথম শতাব্দীতে প্রচার কাজ বন্ধ করে দেওয়ার এবং খ্রিস্টানদের মধ্যে একতা নষ্ট করে দেওয়ার জন্য কোন কোন কৌশল ব্যবহার করে। আর এও দেখব, শয়তানের সমস্ত কৌশল কীভাবে ব্যর্থ হয় এবং কীভাবে ‘যিহোবার বাক্য ছড়িয়ে পড়তে এবং প্রবল হতে থাকে।’ (প্রেরিত ১৯:২০) প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানেরা কীভাবে এই সমস্ত কিছু করতে পেরেছিল? যিহোবার সাহায্যে পেরেছিল। বর্তমানে, যিহোবা আমাদেরও সাহায্য করেন, তবে প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের মতো আমাদেরও কিছু করতে হবে। পবিত্র শক্তির সাহায্যে আমাদের এমন গুণ বৃদ্ধি করতে হবে, যা প্রচার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন। এই সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করার আগে, আসুন আপল্লো নামে একজন খ্রিস্টানের প্রতি মনোযোগ দিই আর দেখি যে, তার কাছ আমরা থেকে কী শিখতে পারি।

“তিনি . . . শাস্ত্র সম্বন্ধে অভিজ্ঞ ছিলেন” (প্রেরিত ১৮:২৪-২৮)

৩, ৪. আপল্লোর কথা শুনে আক্বিলা ও প্রিষ্কিল্লা কী বুঝতে পেরেছিলেন এবং কীভাবে তারা তাকে সাহায্য করেছিলেন?

পৌল তার তৃতীয় মিশনারি যাত্রার উদ্দেশে ইফিষে রওনা দেন। তবে, তার পৌঁছানোর আগেই আপল্লো নামে একজন যিহুদি সেখানে পৌঁছে যান। তিনি মিশরের বিখ্যাত নগর আলেক্‌সান্দ্রীয়ার বাসিন্দা। আপল্লোর মধ্যে অনেক ভালো ভালো গুণ রয়েছে। তিনি একজন সুবক্তা এবং “শাস্ত্র সম্বন্ধে অভিজ্ঞ।” শুধু তা-ই নয়, তিনি ‘পবিত্র শক্তিতে পরিপূর্ণ।’ আপল্লো ইফিষের সমাজগৃহে গিয়ে প্রায়ই উদ্যোগ ও সাহসের সঙ্গে যিহুদিদের কাছে প্রচার করেন।—প্রেরিত ১৮:২৪, ২৫.

সেই সমাজগৃহে আক্বিলা ও প্রিষ্কিল্লা ছিলেন। তারা যখন আপল্লোকে ‘যিশুর বিষয়ে নির্ভুলভাবে কথা বলতে এবং শিক্ষা দিতে’ দেখেন, তখন অনেক খুশি হন। কিন্তু, তারা দ্রুত বুঝতে পারেন যে, আপল্লো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জানেন না। তার “কেবল যোহনের দ্বারা প্রচারিত বাপ্তিস্ম সম্বন্ধেই জ্ঞান” রয়েছে। আক্বিলা ও প্রিষ্কিল্লা হয়তো চিন্তা করতে পারতেন, ‘আপল্লো তো অনেক পড়াশোনা জানেন এবং একজন সুবক্তা আর আমরা তো তাঁবু সেলাই করা সাধারণ লোক, আমরা তাকে কী বোঝাব!’ কিন্তু, তারা এভাবে চিন্তা করেননি। এর পরিবর্তে, “তারা তাকে তাদের সঙ্গে নিয়ে গেলেন এবং তাকে ঈশ্বরের পথ সম্বন্ধে আরও নিখুঁতভাবে বুঝিয়ে দিলেন।” (প্রেরিত ১৮:২৫, ২৬) আপল্লো কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? পরবর্তী বিবরণ থেকে জানা যায় যে, তিনি এমন একটা গুণ দেখিয়েছিলেন, যা প্রত্যেক খ্রিস্টানের থাকা উচিত। তা হল, নম্রতা।

৫, ৬. কোন কারণে আপল্লো আরও ভালোভাবে যিহোবার সেবা করতে পেরেছিলেন এবং তার কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

আক্বিলা ও প্রিষ্কিল্লার দেওয়া পরামর্শ আপল্লো কাজে লাগান আর তাই, তিনি আরও ভালোভাবে যিহোবার সেবা করতে পারেন। কিছু সময় পর, তিনি আখায়াতে যান আর সেখানকার ভাই-বোনদের ‘সাহায্য করেন।’ শুধু তা-ই নয়, তিনি সেখানকার যিহুদিদের কাছে জোরালোভাবে সাক্ষ্য দেন, যারা এটা দাবি করত যে, যিশু প্রতিজ্ঞাত মশীহ নন। আপল্লোর বিষয়ে লূক লেখেন, “যিশুই যে খ্রিস্ট, তা শাস্ত্র থেকে দেখানোর মাধ্যমে তিনি সকলের সামনে এবং অত্যন্ত জোরালোভাবে পুরোপুরি প্রমাণ করলেন যে, যিহুদিদের শিক্ষা ভুল।” (প্রেরিত ১৮:২৭, ২৮) সত্যিই, আপল্লো খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর জন্য এক আশীর্বাদ ছিলেন! তার জন্য অনেক লোক “যিহোবার বাক্য” সম্বন্ধে জানতে পেরেছিল। আপল্লোর কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

খ্রিস্টানদের মধ্যে নম্রতা গুণটা থাকা খুবই প্রয়োজন। আমাদের প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা জ্ঞান, দক্ষতা কিংবা অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে, এগুলোর কারণে আমরা অহংকারী হয়ে উঠতে পারি। আর এই অহংকার খুবই দক্ষ এক ব্যক্তিকেও যিহোবার চোখে অযোগ্য করে তুলতে পারে। (১ করি. ৪:৭; যাকোব ৪:৬) আমরা যদি প্রকৃতই নম্র হই, তা হলে আমরা নিজেদের চেয়ে অন্যদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে করব। (ফিলি. ২:৩) কেউ যখন আমাদের ভুল ধরিয়ে দেয়, তখন আমরা খারাপ মনে করব না কিংবা কেউ যখন আমাদের কিছু শেখায়, তখন আমরা তা শেখার চেষ্টা করব। যিহোবা তাঁর পবিত্র শক্তির মাধ্যমে সংগঠনকে যদি এমন কোনো নির্দেশনা দেন, যা আমরা যেভাবে চিন্তা করি তার একেবারে বিপরীত, তা হলে আমরা একগুঁয়ে মনোভাব না দেখিয়ে, আমাদের চিন্তাভাবনাকে পরিবর্তন করব। যতদিন আমরা নম্র থাকব, ততদিন যিহোবা এবং তাঁর পুত্র যিশু আমাদের তাঁদের কাজে ব্যবহার করবেন।—লূক ১:৫১, ৫২.

৭. নম্রতার ক্ষেত্রে পৌল ও আপল্লো কোন উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?

নম্র হওয়ার আরও একটা ভালো দিক হচ্ছে, নম্র লোকেরা অন্যদের দেখে হিংসা করে না। শয়তান চেয়েছিল যেন প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয়। আপল্লো ও পৌলের বিষয়ে চিন্তা করুন, যারা খুবই দক্ষ শিক্ষক ছিলেন। তারা যদি একে অন্যকে হিংসা করতেন এবং মণ্ডলীর মধ্যে নিজেদের শ্রেষ্ঠ দেখানোর চেষ্টা করতেন, তা হলে এটা দেখে শয়তান কতই-না খুশি হত! তারা এমনটা করতে পারতেন, কারণ করিন্থের কিছু খ্রিস্টান বলছিল, “আমি পৌলের শিষ্য,” আবার কেউ বলছিল, “আমি আপল্লোর শিষ্য।” পৌল ও আপল্লো কি এই ভুল চিন্তাধারাকে প্রশ্রয় দিয়েছিলেন? একেবারেই না। এর পরিবর্তে, পৌল নম্রতার সঙ্গে স্বীকার করেন যে, সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আপল্লোও অনেক পরিশ্রম করেছেন। সেইসঙ্গে তিনি আপল্লোকে আরও অনেক দায়িত্ব দেন আর আপল্লোও পৌলের নির্দেশনা মেনে নেন। (১ করি. ১:১০-১২; ৩:৬, ৯; তীত ৩:১২, ১৩) পৌল ও আপল্লো দু-জনেই নম্র ছিলেন আর তারা একসঙ্গে কাজ করেছিলেন। তারা আমাদের জন্য কতই-না চমৎকার এক উদাহরণ!

পৌল “ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে . . . বিশ্বাস জন্মানোর মতো করে যুক্তিতর্ক তুলে ধরলেন” (প্রেরিত ১৮:২৩; ১৯:১-১০)

৮. পৌল কোন রাস্তা দিয়ে ইফিষে গিয়েছিলেন এবং কেন পৌল এত দীর্ঘ ও কঠিন রাস্তা বাছাই করেছিলেন?

পৌল ইফিষের ভাই-বোনদের কথা দিয়েছিলেন যে, তিনি তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য আবারও ফিরে আসবেন আর তিনি তার কথা রাখেন। a (প্রেরিত ১৮:২০, ২১) কিন্তু লক্ষ করুন, তিনি এখন কোন রাস্তা দিয়ে ইফিষে পৌঁছান। আগের অধ্যায়ে আমরা যখন পৌলের বিষয়ে কথা বলেছি, তখন তিনি সিরিয়ার আন্তিয়খিয়ায় ছিলেন। তিনি চাইলে কাছেই সিলিকিয়া বন্দরে যেতে পারতেন আর সেখান থেকে জাহাজে করে সরাসরি ইফিষে পৌঁছাতে পারতেন। কিন্তু, তিনি তা করেন না। তিনি “সমুদ্র থেকে দূরবর্তী অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে ইফিষে” আসেন। প্রেরিত ১৮:২৩১৯:১ পদের কথা মাথায় রেখে আমরা বলতে পারি, পৌল সম্ভবত ১,৬০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেন! কেন পৌল এত দীর্ঘ ও কঠিন এক রাস্তা বেছে নেন? কারণ তিনি সেই রাস্তায় আলাদা আলাদা মণ্ডলীতে গিয়ে ‘সমস্ত শিষ্যকে শক্তিশালী করতে’ চান। (প্রেরিত ১৮:২৩) পৌল জানতেন, তার আগের দুটো মিশনারি যাত্রার মতো এই তৃতীয় মিশনারি যাত্রাও বেশ কঠিন হবে। তবে, তিনি এটাও জানতেন, তার পরিশ্রম বৃথা যাবে না। বর্তমানে, সীমা অধ্যক্ষেরা এবং তাদের স্ত্রীরাও একইরকম পরিশ্রম করেন। তাদের এই ত্যাগস্বীকার এবং ভালোবাসার জন্য আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ!

৯. কেন কিছু শিষ্যকে পুনরায় বাপ্তিস্ম নিতে হয়েছিল এবং তাদের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

পৌল যখন ইফিষে পৌঁছান, তখন সেখানে যোহন বাপ্তাইজকের কয়েক জন শিষ্যের সঙ্গে তার দেখা হয়। তারা প্রায় ১২ জন ছিল আর যোহনের শিক্ষা অনুযায়ী বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। কিন্তু, এখন সেই বাপ্তিস্মের কোনো অর্থ নেই। শুধু তা-ই নয়, তারা পবিত্র শক্তির বিষয়ে কিছুই শোনেনি। তাই, পৌল তাদের বোঝান, কেন যিশুর নামে বাপ্তিস্ম নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এই ১২ জন আপল্লোর মতোই নম্র ছিল এবং পৌলের কথা শুনতে ইচ্ছুক ছিল। তারা যখন যিশুর নামে বাপ্তিস্ম নেয়, তখন পবিত্র শক্তি এবং এর কিছু দানও লাভ করে। তাদের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? যিহোবার সংগঠন যখনই কোনো নতুন নির্দেশনা দেয়, তখন তা দ্রুত মেনে নিলে অনেক আশীর্বাদ লাভ করা যায়।—প্রেরিত ১৯:১-৭.

১০. কেন পৌল সমাজগৃহ ছেড়ে বিদ্যালয়ের সভাঘরে শিক্ষা দিতে শুরু করেছিলেন এবং আমরা পৌলের কাছ থেকে কী শিখতে পারি?

১০ কিছু সময় পর আরেকটা ঘটনা ঘটে। পৌল ইফিষের সমাজগৃহে তিন মাস ধরে সাহসের সঙ্গে প্রচার করেন। তিনি “ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে . . . বিশ্বাস জন্মানোর মতো করে যুক্তিতর্ক” করেন। কিন্তু, কিছু ব্যক্তি তার কথা শুনতে চাইল না আর প্রচণ্ড বিরোধিতা করল। তারা “প্রভুর পথের বিষয়ে নিন্দা করল।” পৌল সেখানে সময় নষ্ট না করে, সেই সমাজগৃহ ছেড়ে চলে যান আর একটা বিদ্যালয়ের সভাঘরে বা অডিটরিয়ামে গিয়ে শিক্ষা দিতে শুরু করেন। (প্রেরিত ১৯:৮, ৯) এখন যারা ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে জানতে চায়, তাদের এই সভাঘরে আসতে হবে। পৌলের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? আমরা যদি এমন কোনো ব্যক্তির কাছে প্রচার করি, যিনি আমাদের কথা শুনতে চান না আর শুধুমাত্র তর্কবির্তক করেন, তা হলে আমাদের উচিত সেখানেই আমাদের কথাবার্তা থামিয়ে দেওয়া। এরপর, সেই লোকদের কাছে যাওয়া উচিত, যারা সত্য জানতে চায়। এখনও এমন অনেক নম্র ব্যক্তি রয়েছে, যারা আমাদের বার্তা শুনতে চায়।

১১, ১২. (ক) পরিশ্রমী হতে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে পৌল কীভাবে এক ভালো উদাহরণ রেখেছিলেন? (খ) বর্তমানে যিহোবার সাক্ষিরা কীভাবে প্রচার করার ক্ষেত্রে পৌলের মতো হওয়ার চেষ্টা করে?

১১ পৌল সেই বিদ্যালয়ে সম্ভবত রোজ সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত শিক্ষা দিতেন। (প্রেরিত ১৯:৯) এটা দিনের এমন একটা সময়, যখন কড়া রোদ থাকত আর লোকেরা তাদের কাজকর্ম বন্ধ করে খেয়ে-দেয়ে বিশ্রাম নিত। কিন্তু, পৌল এই প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও পরিশ্রম করে গিয়ে ছিলেন। পৌল যদি দু-বছর ধরে প্রতিদিন এভাবেই লোকদের শিক্ষা দিয়ে থাকেন, তার মানে তিনি ৩,০০০ ঘণ্টারও বেশি সময় ব্যয় করেছিলেন। b পৌল কঠোর পরিশ্রম করেন এবং লোকদের পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নেন। তিনি এমন সময় ও জায়গা বেছে নিতেন, যাতে বেশি লোকের কাছে তার বার্তা শোনাতে পারেন। এটা আরও একটা কারণ ছিল যে, যিহোবার বাক্য ছড়িয়ে পড়েছিল এবং অনেক লোক সুসমাচার শুনেছিল। বাইবেল যেমনটা বলে: “এশিয়া প্রদেশে বসবাসকারী সমস্ত লোক, যিহুদি ও গ্রিক উভয়েই ঈশ্বরের বাক্য শুনতে পেল।” (প্রেরিত ১৯:১০) পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে পৌলের উদাহরণ সত্যিই প্রশংসার যোগ্য!

আমরা যেখানেই লোকদের পাই, সেখানেই তাদের সাক্ষ্য দেওয়ার চেষ্টা করি

১২ বর্তমানে, আমরা যিহোবার সাক্ষিরাও প্রচার কাজে অনেক পরিশ্রম করি এবং লোকদের পরিস্থিতির অনুযায়ী নিজেদের মানিয়ে নিই। আমরা এমন সময় ও জায়গা বেছে নিই, যাতে বেশি লোকের কাছে সাক্ষ্য দিতে পারি। আমরা রাস্তায়, বাজারে, যেখানেই লোকদের পাই না কেন, তাদের কাছে সাক্ষ্য দিই। আমরা ফোন ও চিঠির মাধ্যমেও সাক্ষ্য দিয়ে থাকি। এ ছাড়া, আমরা এমন সময় ঘরে ঘরে প্রচার করি, যখন বেশি লোকদের ঘরে পাওয়া যায়।

মন্দ স্বর্গদূত থাকা সত্ত্বেও “যিহোবার বাক্য ছড়িয়ে পড়তে এবং প্রবল হতে থাকল” (প্রেরিত ১৯:১১-২২)

১৩, ১৪. (ক) যিহোবার সাহায্যে পৌল কী করতে পেরেছিলেন? (খ) স্কিবার ছেলেরা কী ভুল করেছিল? (গ) খ্রিস্টীয় জগতের লোকেরা কীভাবে সেই একই ভুল করে?

১৩ এরপর প্রেরিত বই আমাদের জানায়, যিহোবা পৌলের মাধ্যমে “বড়ো বড়ো অলৌকিক কাজ” করিয়েছিলেন। এমনকী তার রুমাল কিংবা কাপড় ছুঁয়ে অসুস্থ ব্যক্তিরা সুস্থ হয়ে যেত আর মন্দ স্বর্গদূতেরা বের হয়ে আসত। c (প্রেরিত ১৯:১১, ১২) শয়তান আর তার মন্দ স্বর্গদূতদের উপর এই বিজয় অনেকের উপর ভালো প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু, সেখানে এমন কিছু লোক ছিল যাদের উদ্দেশ্য সঠিক ছিল না।

১৪ “কয়েক জন যিহুদি, যারা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে মন্দ স্বর্গদূত বের করত,” তারাও পৌলের মতো একই কাজ করতে চেয়েছিল। তাই, তারা যিশু ও পৌলের নাম নিয়ে লোকদের মধ্য থেকে মন্দ স্বর্গদূতদের বের করার চেষ্টা করে। লূক বলেন, স্কিবা নামে যাজক পরিবারের একজন ব্যক্তির সাত জন ছেলে ছিল। তারা যখন একজন ব্যক্তির মধ্য থেকে মন্দ স্বর্গদূতকে বের করার চেষ্টা করছিল, তখন সেই মন্দ স্বর্গদূত তাদের বলল: “আমি যিশুকে জানি আর পৌলকেও চিনি; কিন্তু তোমরা কারা?” এই বলে মন্দ স্বর্গদূতে পাওয়া সেই ব্যক্তি বন্য পশুর মতো সেই মিথ্যাবাদীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল আর সেই সাত জনের এমন অবস্থা করল যে, তারা উলঙ্গ ও ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় সেই বাড়ি থেকে পালিয়ে গেল। (প্রেরিত ১৯:১৩-১৬) এই ঘটনা থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, পৌলই যিহোবার শক্তি লাভ করেছিলেন, সেই মিথ্যাবাদীরা নয়। বর্তমানে, খ্রিস্টীয় জগতের অনেকেই মনে করে যে, বার বার যিশুর নাম নিলে কিংবা “খ্রিস্টান” বলে নিজেদের দাবি করলেই, ঈশ্বর খুশি হবেন। কিন্তু, তাদের এই চিন্তাভাবনা একেবারেই ভুল। যিশু স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, পিতা তাদের উপরই খুশি হন, যারা সঠিকভাবে তাঁর ইচ্ছা পালন করে। আর তিনি তাদের ভবিষ্যতে অনেক আশীর্বাদ দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন।—মথি ৭:২১-২৩.

১৫. ইফিষের খ্রিস্টানদের মতো আমাদের কী করতে হবে?

১৫ স্কিবার ছেলেদের সঙ্গে যা-কিছু ঘটেছিল, সেই সমস্ত কিছু যখন লোকেরা জানতে পারে, তখন অনেকে খ্রিস্টের অনুসারী হয় এবং জাদুক্রিয়া ছেড়ে দেয়। আসলে, ইফিষের লোকেরা জাদুক্রিয়াতে খুবই বিশ্বাস করত। যেমন, তারা তাবিজ-কবচ পরত, মন্ত্র পড়ত এবং নিজেদের ঘরে জাদুক্রিয়ার বই রাখত। কিন্তু, এখন তাদের মধ্যে অনেকে সেই বইগুলো নিয়ে এসে সবার সামনে পুড়িয়ে ফেলে, যদিও সেগুলো অনেক দামি ছিল। বর্তমান মূল্যে প্রায় লক্ষ লক্ষ টাকা। d লূক বলেন, “এভাবে যিহোবার বাক্য ছড়িয়ে পড়তে এবং প্রবল হতে থাকল।” (প্রেরিত ১৯:১৭-২০) মিথ্যা ধর্ম আর মন্দ স্বর্গদূতদের উপর যিহোবা এবং তাঁর সত্য উপাসকেরা কতই-না বড়ো এক বিজয় লাভ করেন! ইফিষের খ্রিস্টানেরা আমাদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ রেখেছিল। বর্তমানে, আমরাও এমন এক জগতে বাস করছি, যেখানে চারিদিকে লোকেরা জাদুক্রিয়া করে থাকে। আমরা যদি বুঝতে পারি, আমাদের কাছে জাদুক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কোনো কিছু রয়েছে, তা হলে আমাদের সঙ্গেসঙ্গে সেটা নষ্ট করে দেওয়া উচিত, ঠিক যেমন ইফিষের খ্রিস্টানেরা করেছিল। তাই, আমাদের যেকোনো ক্ষতিই হোক না কেন আসুন, আমরা এইরকম জঘন্য কাজ থেকে দূরে থাকি।

“খুব গণ্ডগোলের সৃষ্টি হল” (প্রেরিত ১৯:২৩-৪১)

“বন্ধুরা, আপনারা জানেন, এই ব্যাবসা থেকে আমরা অনেক অর্থ উপার্জন করি।”—প্রেরিত ১৯:২৫

১৬, ১৭. (ক) কীভাবে দীমীত্রিয় ইফিষে দাঙ্গা শুরু করেছিল? (খ) ইফিষের লোকেরা কীভাবে দেখিয়েছিল যে, তারা ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে গোঁড়া ছিল?

১৬ এখন লক্ষ করুন, কীভাবে শয়তান সেই জনতাকে উসকে দেওয়ার মাধ্যমে প্রচার কাজকে বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। লূক লেখেন, ইফিষে “প্রভুর পথকে কেন্দ্র করে খুব গণ্ডগোলের সৃষ্টি হল।” এমন নয় যে, লূক বাড়িয়ে কোনো কিছু বলছিলেন। আসলে, পরিস্থিতিটা সত্যিই খুব খারাপ ছিল। e (প্রেরিত ১৯:২৩) দীমীত্রিয় নামে একজন ব্যক্তি এই গণ্ডগোলটা শুরু করে। সে একজন রৌপ্যকার আর রুপো দিয়ে ছোটো ছোটো মন্দির তৈরি করে। সে তার সহ-কারিগরদের একত্রিত করে আর তাদের মনে করিয়ে দেয় যে, এই প্রতিমাগুলো বিক্রি করে তারা কতটা অর্থ উপার্জন করতে পারছে। এরপর, দীমীত্রিয় বলে, পৌল তো আমাদের ব্যাবসা লাটে তুলে দেবে। তার বার্তা শুনে অনেকেই খ্রিস্টের অনুসারী হচ্ছে আর প্রতিমাপূজা ছেড়ে দিচ্ছে। তাকে যদি বাধা দেওয়া না হয়, তা হলে খুব শীঘ্রই ‘আমাদের তো রাস্তায় বসতে হবে।’ দীমীত্রিয় জানত যে, যারা তার কথা শুনছে, তারা নিজেদের দেশ ও নগর নিয়ে খুবই গর্বিত। সেইজন্য সে তাদের আরও উসকে দিয়ে বলে, পৌল যদি এভাবেই প্রচার করে চলেন, তা হলে তাদের মহান দেবী আর্তেমিস তার মহিমা থেকে বঞ্চিত হবে এবং পৃথিবী বিখ্যাত তার “মন্দিরকেও তুচ্ছ বলে গণ্য করা হবে।”—প্রেরিত ১৯:২৪-২৭.

১৭ এসব কথা শুনে সমস্ত কারিগর রাগে ফেটে পড়ে এবং চিৎকার করে বলতে থাকে, “ইফিষীয়দের দেবী আর্তেমিসই মহান” আর তাদের সঙ্গে আরও কিছু ধর্মীয় গোঁড়া ব্যক্তি যোগ দেয়। তারা নগরে দাঙ্গা শুরু করে দেয়, যেমনটা এই অধ্যায়ের শুরুতে আমরা পড়েছিলাম। f সেই উত্তেজিত জনতা যখন রঙ্গভূমি বা অ্যাম্পিথিয়েটারের ভিতরে ঢুকে পড়ে, তখন পৌল তাদের বোঝানোর জন্য ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন, যেন তার সঙ্গীদের বাঁচাতে পারেন। পৌল সব সময়ই নিজের চেয়ে অন্যের বিষয়ে বেশি চিন্তা করতেন তাই, তিনি ঝুঁকি নেওয়ার জন্য তৈরি ছিলেন। কিন্তু, শিষ্যেরা তাকে ভিতরে যেতে দিল না। এমন সময় ভিড়ের মধ্য থেকে আলেক্‌সান্দার নামে একজন ব্যক্তি সবার সামনে আসেন। তিনি একজন যিহুদি আর তাই হয়তো সেই উত্তেজিত জনতাকে বোঝাবার জন্য উৎসুক ছিলেন যে, যিহুদি ও খ্রিস্টানদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু, সেই উত্তেজিত জনতা তাকে বলার কোনো সুযোগই দেয়নি। আসলে, তারা কোনো কিছু শুনতে বা বুঝতে চায়নি। এর পরিবর্তে, তারা যখন জানতে পারে যে, তিনি একজন যিহুদি, তখন তারা একসঙ্গে চিৎকার করে বলতে থাকে, “ইফিষীয়দের দেবী আর্তেমিসই মহান।” তারা প্রায় দু-ঘণ্টা ধরে এই একই কথা বলে পাগলের মতো চিৎকার করতে থাকে। এত বছর পর আজও লোকেরা পরিবর্তন হয়নি। কিছু লোক তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে এতটাই গোঁড়া যে, তারা কোনো কিছু শুনতে বা বুঝতে চায় না।—প্রেরিত ১৯:২৮-৩৪.

১৮, ১৯. (ক) কীভাবে ইফিষ নগরের শাসনকর্তা বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করেছিলেন? (খ) কীভাবে সরকারি আধিকারিকেরা যিহোবার লোকদের সাহায্য করেছিল? (গ) আমরা যদি এইরকম সাহায্য পেতে চাই, তা হলে আমাদের কী করতে হবে?

১৮ অবশেষে নগরের শাসনকর্তা সেই বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করেন। তিনি একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি, যিনি শান্তভাবে সেই বিষয়টা সমাধান করেছিলেন। তিনি সেই জনতাকে আশ্বস্ত করেন যে, খ্রিস্টানদের জন্য তাদের মন্দির এবং দেবীর কোনো ক্ষতি হবে না। তিনি এও বলেন, পৌল ও তার সঙ্গীরা আর্তেমিসের মন্দিরের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ করেনি। তারপরও যদি কারো বিরুদ্ধে তাদের কোনো অভিযোগ থাকে, তা হলে সেটার সমাধানের জন্য আইনের দরজা খোলা আছে। এরপর তিনি তাদের সতর্ক করে বলেন, এভাবে জনতাকে একত্রিত করা এবং দাঙ্গা করা বেআইনি কাজ। আর এই কারণে রোমীয় সরকার তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। এই কথা বলার পর, তিনি জনতাকে বিদায় দিলেন। যত দ্রুত দাঙ্গা শুরু হয়েছিল, তত দ্রুতই তা শান্ত হয়ে গেল। এমনটা এই জন্যই সম্ভব হয়, কারণ নগরের শাসনকর্তা বুদ্ধিপূর্বক কথা বলেছিলেন।—প্রেরিত ১৯:৩৫-৪১.

১৯ এটাই প্রথম অথবা শেষ ঘটনা ছিল না, যখন এক বুদ্ধিমান আধিকারিক যিশুর শিষ্যদের বাঁচানোর জন্য এগিয়ে এসেছিলেন। প্রেরিত যোহন শেষকালের বিষয়ে একটা দর্শন দেখেছিলেন, যেখানে পৃথিবী নদীকে খেয়ে ফেলে। এখানে পৃথিবীর অর্থ হল, জগতের কিছু আধিকারিক এবং নদীর অর্থ হল, ঈশ্বরের লোকদের উপর হওয়া তাড়না। শয়তান যখন যিশুর শিষ্যদের উপর তাড়নার ঝড় নিয়ে আসে, তখন কিছু আধিকারিক তাদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে। (প্রকা. ১২:১৫, ১৬) এই কথাগুলো বর্তমানে আমাদের জন্যও সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। অনেক বার যিহোবার সাক্ষিদের মামলায়, বিচারক তাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন এবং তাদের সভা আর প্রচার কাজের অধিকারকে সমর্থন করেছেন। এটা ঠিক যে, আমাদের আচার-আচরণও এই ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। পৌলও তার ভালো আচার-আচরণের মাধ্যমে ইফিষের সরকারি আধিকারিকদের মন জয় করে নিয়েছিলেন। সেইজন্য তারা তাকে সম্মান করত এবং তার ভালো চাইত। (প্রেরিত ১৯:৩১) আসুন, আমরা সবসময় সৎ হই এবং সবার প্রতি সম্মান দেখিয়ে চলি, যেন লোকদের কাছে আমাদের সুনাম থাকে। আমরা জানি না, আমাদের ভালো আচার-আচরণ কখন এবং কোথায় উত্তম ফল নিয়ে আসবে।

২০. (ক) যিহোবার বাক্য যে প্রবল হচ্ছে বা বিজয় লাভ করছে, তা দেখে আপনার কেমন লাগে? (খ) সুসমাচারের জন্য লড়াইয়ে আপনার অবদান রাখতে আপনি কী করতে পারেন?

২০ সত্যিই, প্রথম শতাব্দীতে যেভাবে “যিহোবার বাক্য ছড়িয়ে পড়তে এবং প্রবল হতে থাকল,” সেই বিষয়ে চিন্তা করলে আমরা খুবই রোমাঞ্চিত হই। বর্তমানেও যিহোবা যখন আমাদের একইরকম বিভিন্ন লড়াইয়ে জয়ী হতে সাহায্য করেন, তখন এটা দেখে আমরা খুবই আনন্দিত হই। আপনি কি চান না, আমরা এই যে লড়াইগুলোতে বিজয় লাভ করছি, তাতে আপনারও অবদান থাকুক? আপনার উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তা হলে এই অধ্যায়ে আমরা যে-ভালো উদাহরণগুলো পেয়েছি, তা থেকে শিখুন। নম্র হোন, যিহোবার সংগঠন থেকে পাওয়া নির্দেশনা সঙ্গেসঙ্গে মেনে নিন, কঠোর পরিশ্রমী হোন এবং জাদুক্রিয়া থেকে দূরে থাকুন। আর সেইসঙ্গে সৎ হোন এবং অন্যদের প্রতি সম্মান দেখান, যেন আপনার আচার-আচরণের মাধ্যমে অন্যদের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সাক্ষ্য দিতে পারেন।

a  “ইফিষ—এশিয়ার রাজধানী” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

b ইফিষে থাকার সময় পৌল ১ করিন্থীয় বইটিও লিখেছিলেন।

c এখানে যে-রুমালের কথা বলা হয়েছে, সেটা সম্ভবত পৌল মাথায় বাঁধতেন যাতে মাথার ঘাম তার চোখে এসে না পড়ে। আর কাপড় বলতে পৌল কাজ করার সময় তার কোমরে একটা কাপড় বা অ্যাপ্রন বাঁধতেন। এর থেকে বোঝা যায়, তিনি তার অবসর সময়ে সম্ভবত খুব ভোর বেলায় তাঁবু তৈরির কাজ করার সময় এটা পড়তেন।—প্রেরিত ২০:৩৪, ৩৫.

d লূক বলেন, সেই বইগুলোর মূল্য ছিল ৫০,০০০ রৌপ্যমুদ্রা। তিনি যদি এটাকে দিনারের সঙ্গে তুলনা করেন, তা হলে একজন শ্রমিকের এই পরিমাণ রৌপ্যমুদ্রা আয় করতে ৫০,০০০দিন সময় লাগবে অর্থাৎ সপ্তাহে সাত দিন কাজ করলেও প্রায় ১৩৭ বছর সময় লাগবে।

e কিছু লোক মনে করে, পৌল যখন করিন্থের খ্রিস্টানদের লেখেন যে, “আমরা জীবনের আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম,” তখন তিনি হয়তো এই ঘটনার কথাই বলছিলেন। (২ করি. ১:৮) তবে এও হতে পারে, তিনি অন্য কোনো ঘটনার কথা বলছিলেন, যা এর থেকে আরও ভয়ানক ছিল। এর কারণ ১ করিন্থীয় ১৫:৩২ পদে তিনি লেখেন, আমি “ইফিষে বন্য পশুর সঙ্গে লড়াই” করেছি। এর মানে হতে পারে, যেখানে মানুষ ও পশুর মধ্যে লড়াই হয়, এইরকম জায়গায় পৌল কোনো বন্য পশুর সঙ্গে লড়াই করেছিলেন কিংবা বন্য পশুর মতো হিংস্র বিরোধীদের মুখোমুখি হয়েছিলেন।

f এই ধরনের কারিগরদের দল খুবই ভয়ঙ্কর হত। এই ঘটনার প্রায় ১০০ বছর পর ইফিষে বেকার্স (যারা রুটি তৈরি করে) ইউনিয়ন একইরকম দাঙ্গা করেছিল।