সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় ২১

“আমি কারো রক্তের দায়ে দোষী নই”

“আমি কারো রক্তের দায়ে দোষী নই”

পৌল উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার করেন এবং প্রাচীনদের পরামর্শ দেন

প্রেরিত ২০:১-৩৮ পদের উপর ভিত্তি করে

১-৩. (ক) ত্রোয়াতে পৌলের শেষ রাতে উতুখ কীভাবে মারা গিয়েছিল, তা ব্যাখ্যা করুন। (খ) উতুখ যখন মারা যায়, তখন পৌল কী করেছিলেন এবং এই ঘটনা থেকে পৌলের বিষয়ে আমরা কী জানতে পারি?

 প্রেরিত পৌল এখন ত্রোয়াতে রয়েছেন। তিনি একটা বাড়ির তিন তলায় বক্তৃতা দিচ্ছেন। ঘরটা লোকজনে একেবারে ঠাসা রয়েছে। এখানকার ভাই-বোনদের সঙ্গে পৌলের এটাই শেষ রাত। তাই, তিনি অনেক রাত পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কথা বলেন। দেখতে দেখতেই মাঝরাত হয়ে যায়। ঘরের মধ্যে অনেকগুলো প্রদীপ জ্বলছে, তাই সেই ঘর খুব গরম হয়ে এক অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। উতুখ নামে একজন যুবক জানালায় বসে পৌলের কথা শুনছে। কিন্তু, সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে আর হঠাৎই তিন তলা থেকে নীচে পড়ে যায়।

লোকেরা তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে আসে। তাদের মধ্যে হয়তো চিকিৎসক লূক সবার আগে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন, যেন উতুখকে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, তিনি পৌঁছে “তাকে মৃত দেখতে” পান। (প্রেরিত ২০:৯) লোকেরা তখন হইচই করতে শুরু করে। কিন্তু, সেই সময়ে পৌল এক আশ্চর্য কাজ করেন। তিনি নীচে নেমে সেই যুবকের দিকে ঝুঁকে তাকে জড়িয়ে ধরেন এবং লোকদের বলেন: “তোমরা কোলাহল কোরো না, কারণ সে আবার বেঁচে উঠেছে।” পৌল সত্যিই সেই যুবককে বাঁচিয়ে তোলেন।—প্রেরিত ২০:১০.

এই ঘটনা দেখায় যে, যিহোবা তাঁর পবিত্র শক্তিকে ব্যবহার করে কতই-না চমৎকার কাজ করতে পারেন! যদিও উতুখের মৃত্যুর জন্য পৌল দায়ী ছিলেন না, তা সত্ত্বেও তিনি চাননি যে, এই বিশেষ সভা থেকে ফেরার সময় ভাই-বোনেরা দুঃখে থাকুক কিংবা তাদের বিশ্বাস দুর্বল হয়ে যাক। তাই, তিনি উতুখকে বাঁচিয়ে তোলেন। এই আশ্চর্য কাজ দেখে মণ্ডলী অনেক সান্ত্বনা লাভ করে এবং প্রচার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক উদ্যোগী হয়ে ওঠে। এই ঘটনা দেখায় যে, পৌল অন্যদের জীবনকে খুবই মূল্যবান হিসেবে দেখতেন। এটা আমাদের পৌলের সেই কথাগুলো মনে করিয়ে দেয়, “আমি কারো রক্তের দায়ে দোষী নই।” (প্রেরিত ২০:২৬) আসুন দেখি, আমরাও কীভাবে লোকদের জীবনকে মূল্যবান হিসেবে দেখতে পারি, ঠিক যেমনটা পৌল দেখেছিলেন।

“তিনি ম্যাসিডোনিয়ার উদ্দেশে রওনা হলেন” (প্রেরিত ২০:১, ২)

৪. ইফিষে পৌলের প্রতি কী ঘটেছিল?

আগের অধ্যায়ে আমরা যেমন দেখেছি, পৌল ইফিষে উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার করছিলেন। এটা দেখে যারা আর্তেমিস দেবীর মূর্তি তৈরি করত, তারা চটে যায়। তারা পৌল এবং তার সঙ্গীদের ধরার জন্য একত্রিত হয় এবং গণ্ডগোল শুরু করে দেয়। তবে, পৌল অল্পের জন্য বেঁচে যান। এরপর কী হয়েছিল? প্রেরিত ২০:১ পদ বলে, “গণ্ডগোল থামার পর পৌল শিষ্যদের ডেকে পাঠালেন এবং তাদের উৎসাহিত করে বিদায় দিলেন আর এরপর তিনি ম্যাসিডোনিয়ার উদ্দেশে রওনা হলেন।”

৫, ৬. (ক) পৌল ম্যাসিডোনিয়ায় কতদিন ছিলেন এবং তিনি সেখানকার ভাই-বোনদের জন্য কী করেছিলেন? (খ) কেন আমরা বলতে পারি পৌল ভাই-বোনদের ভালোবাসতেন?

ম্যাসিডোনিয়া যাওয়ার পথে পৌল ত্রোয়া বন্দরে বেশ কিছুদিন থেকে যান। পৌল আশা করেছিলেন, তীত ত্রোয়াতে আসবেন আর তারা দু-জনে একসঙ্গে পরবর্তী যাত্রার উদ্দেশে রওনা দেবেন। সেই সময়ে তীত করিন্থে ছিলেন। (২ করি. ২:১২, ১৩) অনেকটা সময় অপেক্ষা করার পর পৌল যখন বুঝতে পারেন যে, তীত আর আসবেন না, তখন তিনি একাই ম্যাসিডোনিয়ার উদ্দেশে রওনা দেন। ম্যাসিডোনিয়ায় তিনি হয়তো এক বছর ছিলেন এবং ‘সেখানকার শিষ্যদের অনেক উৎসাহিত করেছিলেন।’ a (প্রেরিত ২০:২) অবশেষে তীত ম্যাসিডোনিয়ায় পৌঁছান এবং পৌলকে একটা সুখবর দেন। তিনি বলেন, করিন্থের খ্রিস্টানেরা তার প্রথম চিঠিটা পড়ার পর তাতে দেওয়া পরামর্শ কাজে লাগায় এবং সঠিক পদক্ষেপ নেয়। (২ করি. ৭:৫-৭) এই খবরটা শুনে পৌল এতটাই খুশি হয়েছিলেন যে, তিনি করিন্থের ভাই-বোনদের জন্য আরও একটি চিঠি লিখেছিলেন, যেটা বর্তমানে দ্বিতীয় করিন্থীয় বই হিসেবে পরিচিত।

লক্ষ করুন, পৌল যখন ইফিষে ছিলেন আর পরে ম্যাসিডোনিয়ায় যান, তখন উভয় জায়গার ভাই-বোনদের “উৎসাহিত” করেন। এখান থেকে বোঝা যায়, পৌল ভাই-বোনদের কতটা ভালোবাসতেন! তিনি সেই ফরীশীদের মতো ছিলেন না, যারা অন্যদের তুচ্ছ বলে মনে করত এবং নীচু চোখে দেখত। (যোহন ৭:৪৭-৪৯) পৌল ভাই-বোনদের সহকর্মী হিসেবে দেখতেন এবং তাদের সঙ্গে মিলে যিহোবার সেবা করতেন। (১ করি. ৩:৯) কখনো কখনো তিনি যদিও ভাই-বোনদের কঠোরভাবে পরামর্শ দিয়েছিলেন, তবে তাদের নীচু চোখে দেখেননি।—২ করি. ২:৪.

৭. বর্তমানে খ্রিস্টান অধ্যক্ষেরা কীভাবে পৌলের মত হওয়ার চেষ্টা করেন?

বর্তমানে, মণ্ডলীর প্রাচীন ও সীমা অধ্যক্ষেরা পৌলের মতো হওয়ার চেষ্টা করেন। এমনকি কাউকে যখন কঠোরভাবে পরামর্শ দেওয়ার প্রয়োজন হয়, তখনও তারা তাদের নীচু চোখে দেখেন না। তারা তাদের পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন এবং তাদের দোষী সাব্যস্ত করার পরিবর্তে তাদের উৎসাহিত করেন। একজন অভিজ্ঞ সীমা অধ্যক্ষ বলেন: “বেশিরভাগ ভাই-বোনই সঠিক কাজ করতে চায়, তবে তাদের পক্ষে তা করা কঠিন হয়ে পড়ে। জীবনের চিন্তায় এবং বিভিন্ন সমস্যাগুলোর কারণে তারা এতটাই ভারগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং এতটাই ভয় পেয়ে যায় যে, বুঝতে পারে না, তারা কী করবে।” এইরকম ক্ষেত্রে প্রাচীনেরা ভাই-বোনদের উৎসাহিত করেন যেন তারা সঠিক কাজ করতে পারে।—ইব্রীয় ১২:১২, ১৩.

“তার বিরুদ্ধে এক ষড়যন্ত্র” করা হয় (প্রেরিত ২০:৩, ৪)

৮, ৯. (ক) কেন পৌল জাহাজে করে সিরিয়া যাওয়ার পরিকল্পনাকে পরিবর্তন করেছিলেন? (খ) কেন করিন্থের যিহুদিরা পৌলকে হত্যা করতে চেয়েছিল?

পৌল এবার ম্যাসিডোনিয়া থেকে করিন্থে যান। b সেখানে তিনি তিন মাস থাকেন, তারপর কিংক্রিয়া যাওয়ার কথা চিন্তা করেন, যেন সেখান থেকে জাহাজে করে সিরিয়া যেতে পারেন। পরে তিনি সিরিয়া থেকে জেরুসালেমে যেতে চান, যাতে প্রয়োজন রয়েছে এমন ভাই-বোনদের কাছে দান পৌঁছে দিতে পারেন। c (প্রেরিত ২৪:১৭; রোমীয় ১৫:২৫, ২৬) কিন্তু, হঠাৎ এমন কিছু ঘটে যে-কারণে পৌলকে তার এই পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে হয়। প্রেরিত ২০:৩ পদ যেমনটা বলে, পৌল জানতে পারেন, করিন্থে “যিহুদিরা তার বিরুদ্ধে এক ষড়যন্ত্র করেছে।”

কেন যিহুদিরা পৌলকে হত্যা করতে চাইছিল? একটা কারণ হল, পৌল নিজেই যিহুদি ধর্ম ছেড়ে খ্রিস্টান হয়ে যান আর আগের বার পৌল যখন করিন্থে সুসমাচার প্রচার করেছিলেন, তখন তার বার্তা শুনে সমাজগৃহের অধ্যক্ষ ক্রীষ্পও খ্রিস্টান হয়ে যান। (প্রেরিত ১৮:৭, ৮; ১ করি. ১:১৪) শুধু তাই নয়, একবার করিন্থের যিহুদিরা আখায়ার দেশাধ্যক্ষ গাল্লিয়োর কাছে যায় আর তারা পৌলের উপর এই অভিযোগ আনে যে, তিনি আইন বিরুদ্ধ কাজ করেছেন। কিন্তু, গাল্লিয়ো পৌলকে নির্দোষ বলে সেই মামলাকে সেখানেই খারিজ করে দেন। এই কারণেও যিহুদিরা রেগে যায়। (প্রেরিত ১৮:১২-১৭) তাই যখন করিন্থের যিহুদিরা জানতে পারে যে, পৌল কিংক্রিয়া বন্দর থেকে রওনা হবেন, তখন তারা তাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। পৌল এখন কী করবেন?

১০. পৌল কিংক্রিয়া যাননি, এর মানে কি এই যে, তিনি ভীতু ছিলেন? ব্যাখ্যা করুন।

১০ পৌল বিনা কারণে কোনো ঝুঁকি নিতে চান না এবং দানের সমস্ত টাকাপয়সা সুরক্ষিতভাবে পৌঁছে দিতে চান। তাই পৌল সিদ্ধান্ত নেন, কিংক্রিয়ায় না গিয়ে তিনি সড়ক পথে ম্যাসিডোনিয়ায় ফিরে যাবেন। এই যাত্রাতেও অনেক বিপদ রয়েছে। সেই সময় এইরকম সড়ক পথের ধারে ধারে দস্যুরা লুকিয়ে থাকত আর লোকদের লুটপাট করত। পান্থশালাও সুরক্ষিত ছিল না। তবুও পৌল মনে করেছিলেন, কিংক্রিয়া যাওয়ার পরিবর্তে সড়ক পথে ম্যাসিডোনিয়া যাওয়া অনেক ভালো। ভালো বিষয় হল, এই যাত্রায় তিনি একা নন। তার সঙ্গে আরিষ্টার্খ, গায়, সিকুন্দ, সোপাত্র, তীমথিয়, ত্রফিম ও তুখিক ছিলেন।—প্রেরিত ২০:৩, ৪.

১১. বর্তমানে খ্রিস্টানেরা কীভাবে সতর্কতার সঙ্গে প্রচার করে? (খ) এক্ষেত্রে যিশু কেমন উদাহরণ রেখেছিলেন?

১১ বর্তমানে, খ্রিস্টানেরাও পৌলের মতো সতর্ক হয়ে প্রচার কাজ করে। কিছু জায়গায় যেখানে একা যাওয়া বিপদজনক, সেখানে তারা দলগতভাবে যায়, যদি তা সম্ভব না হয়, তা হলে অন্তত পক্ষে দু-জন দু-জন করে যায়। বিরোধিতা কিংবা তাড়নার বিষয় কী বলা যায়? খ্রিস্টানেরা জানে এই বিষয়টা তারা পুরোপুরি এড়াতে পারবে না। (যোহন ১৫:২০; ২ তীম. ৩:১২) কিন্তু, তারা জোর করে বিপদ ডেকে আনে না। লক্ষ করুন, যিশু কী করেছিলেন? একবার, জেরুসালেমে যখন বিরোধীরা তাঁকে মারার জন্য পাথর তুলেছিল, তখন “যিশু নিজেকে লুকিয়ে ফেললেন এবং মন্দির থেকে বাইরে চলে গেলেন।” (যোহন ৮:৫৯) পরে, আর একবার যিশু যখন জানতে পারলেন যে, যিহুদিরা তাঁকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছে, তখন তিনি ‘আর প্রকাশ্যে যিহুদিদের মাঝে ভ্রমণ করলেন না, কিন্তু তিনি সেখান থেকে প্রান্তরের কাছাকাছি এলাকায় চলে গেলেন।’ (যোহন ১১:৫৪) এভাবে, যিশু নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য তাঁর পক্ষে যা-সম্ভব তা-ই করেছিলেন, যাতে তিনি যিহোবার ইচ্ছা পালন করতে পারেন। বর্তমানে, খ্রিস্টানেরাও তা-ই করে।—মথি ১০:১৬.

“তারা . . . অনেক সান্ত্বনা লাভ করল” (প্রেরিত ২০:৫-১২)

১২, ১৩. (ক) উতুখকে যখন পুনরুত্থিত করা হয়েছিল, তখন মণ্ডলীর ভাই-বোনদের কেমন লেগেছিল? (খ) যারা মৃত্যুতে তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে, তারা বাইবেলের কোন আশা থেকে সান্ত্বনা পাবে?

১২ পৌল এবং তার সঙ্গীরা একসঙ্গে ম্যাসিডোনিয়া পর্যন্ত পৌঁছান, তারপর তারা আলাদা হয়ে যান। এমনটা মনে হয়, ত্রোয়াতে তারা আবার একত্রিত হন। d বিবরণ বলে: “আমরা . . . পাঁচ দিন পর ত্রোয়াতে তাদের কাছে এলাম।” e (প্রেরিত ২০:৬) ত্রোয়াতেই উতুখ নামের সেই যুবককে বাঁচিয়ে তোলা হয়েছিল, যার বিষয়ে আমরা এই অধ্যায়ের শুরুতে পড়েছি। একটু কল্পনা করুন, যখন ভাই-বোনেরা দেখেছিল যে, উতুখ বেঁচে উঠেছে এবং সে সুস্থ আছে, তখন তাদের কেমন লেগেছিল! বিবরণ বলে: “তারা সেই যুবককে নিয়ে গেল এবং তাকে জীবিত অবস্থায় পেয়ে অনেক সান্ত্বনা লাভ করল।”—প্রেরিত ২০:১২.

১৩ এটা ঠিক যে, বর্তমানে এইরকম অলৌকিক কাজ ঘটে না, তবে বাইবেল প্রতিজ্ঞা করে, ভবিষ্যতে মৃত ব্যক্তিরা আবার বেঁচে উঠবে। (যোহন ৫:২৮, ২৯) তাই বর্তমানেও, যারা মৃত্যুতে তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে, বাইবেলের আশা তাদের “অনেক সান্ত্বনা” জোগায়। লক্ষ করুন, যদিও উতুখকে পুনরুত্থিত করা হয়েছিল, কিন্তু পরে অন্যান্য মানুষের মতো সে আবারও মারা গিয়েছিল। (রোমীয় ৬:২৩) তবে, নতুন জগতে যারা পুনরুত্থিত হবে, তাদের সামনে অনন্ত জীবন বেঁচে থাকার আশা থাকবে। শুধু তাই নয়, যাদের স্বর্গে শাসন করার আশা রয়েছে, তারা আশীর্বাদ হিসেবে অমর জীবন পাবে। (১ করি. ১৫:৫১-৫৩) তাই, অভিষিক্ত খ্রিস্টান হোক কিংবা “আরও মেষ,” সবাই বাইবেলের এই আশা থেকে “অনেক সান্ত্বনা” পাবে।—যোহন ১০:১৬.

“জনসাধারণ্যে ও ঘরে ঘরে . . . শিক্ষা দেওয়া” (প্রেরিত ২০:১৩-২৪)

১৪. পৌল যখন ইফিষের প্রাচীনদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তখন কী বলেছিলেন?

১৪ পৌল এবং তার সঙ্গীরা ত্রোয়া থেকে আঃস নগরে আসেন। এরপর, তারা মিতুলীনী, খীয়, সামঃ ও মিলীতে যান। পৌল পঞ্চাশত্তমীর উৎসবের আগেই জেরুসালেমে পৌঁছাতে চান। সেইজন্য, এই বার তিনি ইফিষে না গিয়ে মিলীতেই থেকে যান। কিন্তু, পৌল ইফিষের প্রাচীনদের সঙ্গে দেখা করতে চান আর তাই, তিনি তাদের খবর পাঠান যেন তারা তার সঙ্গে মিলীতে এসে দেখা করেন। (প্রেরিত ২০:১৩-১৭) প্রাচীনেরা যখন সেখানে পৌঁছান, তখন পৌল তাদের বলেন, “তোমরা ভালোভাবেই জান, এশিয়া প্রদেশে আসার প্রথম দিন থেকেই আমি তোমাদের মধ্যে কীভাবে জীবন কাটিয়েছি। আমি সম্পূর্ণ নম্রতা সহকারে দাস হিসেবে প্রভুর সেবা করেছি আর যিহুদিরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল বলে চোখের জল ফেলেছি এবং কষ্ট ভোগ করেছি। তোমরা এও জান, তোমাদের জন্য উপকারজনক এমন কোনো বিষয় বলতে আমি দ্বিধা করিনি কিংবা জনসাধারণ্যে ও ঘরে ঘরে তোমাদের শিক্ষা দেওয়া থেকে বিরত হইনি। আমি যিহুদিদের ও গ্রিকদের কাছে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এই সাক্ষ্য দিয়েছি যে, তারা যেন অনুতপ্ত হয়, ঈশ্বরের উপাসনা করে এবং আমাদের প্রভু যিশুর উপর বিশ্বাস করে।”—প্রেরিত ২০:১৮-২১.

১৫. ঘরে ঘরে প্রচার করার কোন কোন উপকার রয়েছে?

১৫ পৌলের মতো আমরাও সেই সমস্ত জায়গায় গিয়ে প্রচার করার প্রচেষ্টা করি, যেখানে লোকদের পাওয়া যায়। যেমন, বাস স্টপে, বাজারে ও রাস্তায়। তবে, ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার করাই হল আমাদের প্রধান পদ্ধতি। এর ফলে কোন উপকার পাওয়া যায়? একটা হল, যখন আমরা ঘরে ঘরে যাই, তখন সমস্ত লোকেরা সুসমাচার শোনার সুযোগ পায়। ফলে তারা বুঝতে পারে, ঈশ্বর কখনোই পক্ষপাতিত্ব করেন না। দ্বিতীয়টা হল, আমরা যদি কোনো সৎ হৃদয়ের ব্যক্তিকে খুঁজে পাই, তখন তার পরিস্থিতি অনুযায়ী তাকে ভালোভাবে সাহায্য করতে পারি। শুধু তাই নয়, ঘরে ঘরে প্রচার করার সময় আমাদের বিশ্বাসও শক্তিশালী হয় এবং আমরা ধৈর্য ধরতে শিখি। সত্যি বলতে কী, বর্তমানে সত্য খ্রিস্টানেরা “জনসাধারণ্যে ও ঘরে ঘরে” প্রচার করার জন্য পরিচিত।

১৬, ১৭. কীভাবে পৌল দেখিয়েছিলেন যে, তিনি সাহসী ছিলেন এবং বর্তমানে খ্রিস্টানেরা কীভাবে পৌলের মতো হতে পারে?

১৬ পৌল ইফিষের প্রাচীনদের বলেন যে, তিনি জানেন না, জেরুসালেমে ফিরে যাওয়ার পর তাকে কোন কোন বিপদের মুখোমুখি হতে হবে। তা সত্ত্বেও তিনি বলেন: “আমি আমার নিজের জীবনকে একটুও মূল্যবান বলে গণ্য করি না, কেবল চাই, যেন শেষ পর্যন্ত দৌড়াতে পারি এবং ঈশ্বরের মহাদয়ার সুসমাচার সম্বন্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেওয়ার বিষয়ে প্রভু যিশুর কাছ থেকে যে-পরিচর্যা লাভ করেছি, তা শেষ করি।” (প্রেরিত ২০:২৪) পৌল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন যে, যদি তাকে অনেক বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয় কিংবা তার শরীর খারাপ থাকে অথবা অন্যান্য সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, তা সত্ত্বেও তিনি ঈশ্বরের সেবা করে চলবেন। সত্যিই, পৌল কতই-না সাহসী ছিলেন!

১৭ বর্তমানে, খ্রিস্টানেরাও বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়। কিছু ভাই-বোনেরা এমন দেশে থাকে যেখানে আমাদের প্রচার কাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং তাদের উপর তাড়নাও করা হয়। আবার কিছু ভাই-বোন হয়তো অসুস্থ কিংবা হতাশার মধ্যে রয়েছে। তা সত্ত্বেও, তারা হাল ছেড়ে না দিয়ে যিহোবার সেবা করে চলেছে। এমনকী অল্পবয়সি খ্রিস্টান ছেলে-মেয়েদেরও তাদের স্কুলের সঙ্গীসাথিরা খারাপ কাজ করার জন্য চাপ দেয়। হতে পারে, আপনিও এই ধরনের কোনো এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। তা সত্ত্বেও, আপনি পৌলের মতো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে, আপনি দৃঢ় থাকবেন এবং “সুসমাচার সম্বন্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য” দিয়ে চলবেন।

‘তোমরা নিজেদের এবং সেইসমস্ত পালের দেখাশোনা করো’ (প্রেরিত ২০:২৫-৩৮)

১৮. কীভাবে পৌল সবার রক্তের দায় থেকে মুক্ত ছিলেন এবং ইফিষের প্রাচীনেরাও কীভাবে অন্যদের রক্তের দায় থেকে মুক্ত থাকতে পারতেন?

১৮ এরপর, পৌল ইফিষের প্রাচীনদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন এবং তাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, তিনি কীভাবে তাদের জন্য এক ভালো উদাহরণ রেখেছেন। সবার প্রথমে তিনি তাদের বলেন, হতে পারে এটাই তাদের সঙ্গে শেষ দেখা। তারপর তিনি বলেন, “আমি কারো রক্তের দায়ে দোষী নই। কারণ তোমাদের আমি ঈশ্বরের সমস্ত উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলতে দ্বিধা করিনি।” ইফিষের প্রাচীনেরাও অন্যদের রক্তের দায় থেকে মুক্ত হতে পারেন। কীভাবে? পৌল তাদের বলেন: “তোমরা নিজেদের বিষয়ে সাবধান থেকো এবং পবিত্র শক্তি তোমাদের অধ্যক্ষ করে যে-সমস্ত পালের মধ্যে নিযুক্ত করেছে, সেইসমস্ত পালের দেখাশোনা করো, যেন ঈশ্বরের সেই মণ্ডলীর যত্ন নিতে পার, যা তিনি নিজের পুত্রের রক্ত দিয়ে কিনেছেন।” (প্রেরিত ২০:২৬-২৮) পরে পৌল তাদের সাবধান করে বলেন, তাদের মধ্যে “হিংস্র নেকড়েরা” প্রবেশ করবে এবং “বিকৃত শিক্ষা দেবে, যেন তারা শিষ্যদের নিজেদের দলে টেনে নিতে পারে।” সেইজন্য ইফিষের প্রাচীনদের কী করতে হবে? তাদের ‘সজাগ থাকতে’ হবে এবং পৌলের উদাহরণ মনে রাখতে হবে যে, কীভাবে তিনি ‘তিন বছর ধরে, দিনরাত চোখের জল সহকারে তাদের প্রত্যেককে উপদেশ দেওয়া থেকে কখনো বিরত হননি।’—প্রেরিত ২০:২৯-৩১.

১৯. প্রথম শতাব্দীর শেষের দিকে কী হয়েছিল এবং এর ফলে পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে কী হয়েছিল?

১৯ প্রথম শতাব্দী শেষের দিকে “হিংস্র নেকড়ে” মণ্ডলীর মধ্যে দেখা দিতে শুরু করে। প্রায় ৯৮ খ্রিস্টাব্দে প্রেরিত যোহন লেখেন, “এমনকী এখনই খ্রিস্টের অনেক বিরোধী এসে গিয়েছে, . . . তারা আমাদের মধ্য থেকে বেরিয়ে গিয়েছে, কিন্তু তারা আমাদের মতো ছিল না; তারা যদি আমাদের মতো হতো, তা হলে তারা আমাদের সঙ্গে থাকত।” (১ যোহন ২:১৮, ১৯) তৃতীয় শতাব্দীর শুরুর দিকে মিথ্যা খ্রিস্টানদের সংখ্যা বেড়ে যায় থাকে এবং খ্রিস্টীয় জগতে পাদরি শ্রেণীর আবির্ভাব ঘটে। পরে চতুর্থ শতাব্দীতে রোমীয় সম্রাট কনস্ট্যানটিন খ্রিস্টীয় জগৎকে একটা ধর্ম হিসেবে আইনি স্বীকৃতি দেন। কোন অর্থে খ্রিস্টীয় জগতের পাদরিরা “বিকৃত শিক্ষা” দিত? তারা এমনটা দাবি করত যে, তারা বাইবেল থেকে শিক্ষা দিচ্ছে। কিন্তু, আসলে তারা বাইবেলের শিক্ষার সঙ্গে অন্যান্য ধর্মের শিক্ষা ও রীতিনীতিকে মিশিয়ে দিত। বর্তমানেও গির্জায় লোকেরা এই মিথ্যা শিক্ষা এবং রীতিনীতিকে মেনে চলে।

২০, ২১. পৌল কোন মনোভাব নিয়ে ভাই-বোনদের সেবা করেছিলেন এবং বর্তমানে খ্রিস্টান প্রাচীনেরা কীভাবে পৌলের মতো হতে পারেন?

২০ পৌল কখনোই সেই হিংস্র নেকড়েদের মত ছিলেন না, যারা পরবর্তী সময় নিজেদের স্বার্থ মেটানোর জন্য ঈশ্বরের মেষদের ব্যবহার করেছিল। তিনি নিজের ভরণ-পোষনের জন্য নিজেই পরিশ্রম করতেন, যেন মণ্ডলীর উপর বোঝা না হন। তিনি ভাই-বোনদের জন্য অনেক পরিশ্রম করেছিলেন। কিন্তু, এর বিনিময়ে কিছু পাওয়ার আশা করেননি। পৌল ইফিষের প্রাচীনদের পরামর্শ দিয়েছিলেন, যেন তারা পৌলের মতো নিজেদের যিহোবার সেবায় পুরোপুরি বিলিয়ে দেন। তিনি তাদের বলেন: “আমি তোমাদের সমস্ত বিষয়ে দেখিয়েছি, এভাবে কঠোর পরিশ্রম করার মাধ্যমে দুর্বল ব্যক্তিদের সাহায্য করতে হবে এবং প্রভু যিশুর বলা এই কথাগুলো মনে রাখতে হবে: ‘নেওয়ার চেয়ে বরং দেওয়ার মধ্যে আরও বেশি সুখ।’”—প্রেরিত ২০:৩৫.

২১ পৌলের মতো বর্তমানে খ্রিস্টান প্রাচীনেরাও বিনা স্বার্থে ভাই-বোনদের সেবায় নিজেদের বিলিয়ে দেন। তারা খ্রিস্টীয় জগতের সেই পাদরিদের মতো নন, যারা শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থে অন্যদের লুটে নেয়। খ্রিস্টান প্রাচীনেরা জানেন যে, ঈশ্বর তাদের “মণ্ডলীর যত্ন” মণ্ডলীর যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন এবং তারা এই কাজ বিনা স্বার্থে করেন। খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে এমন লোকদের কোনো জায়গা নেই, যারা অহংকারী এবং অন্যদের চেয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে করে। যে-লোকেরা শুধুমাত্র নিজেদের ‘গৌরব পাওয়ার চেষ্টা করে,’ তারা অবশেষে নিজেরাই অপমানিত হয়।—হিতো. ১১:২; ২৫:২৭, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন।

“তারা সকলে খুব কান্নাকাটি করলেন।”—প্রেরিত ২০:৩৭

২২. ইফিষের প্রাচীনেরা কেন পৌলকে ভালোবাসতেন?

২২ পৌল ভাইদের সত্যিই ভালোবাসতেন আর তারাও তাকে খুব ভালোবাসত। তাই, যখন পৌলের যাওয়ার সময় এসে পড়ে, তখন “তারা সকলে খুব কান্নাকাটি করলেন এবং পৌলকে জড়িয়ে ধরে তাকে কোমলভাবে চুম্বন করলেন।” (প্রেরিত ২০:৩৭, ৩৮) বর্তমানে, আমাদের মধ্যেও এমন অনেক ভাইয়েরা রয়েছে, যারা পৌলের মতো মেষদের খুব ভালোবাসে এবং তাদের যত্ন নেওয়ার জন্য নিজেদের সময়, শক্তি এবং বস্তুগত বিষয় দিয়ে সাহায্য করে। এইরকম ভাইদের প্রতি আমরা সত্যিই হৃদয় থেকে কৃতজ্ঞ এবং তাদের আমরা খুব ভালোবাসি। এখন পর্যন্ত পৌলের যে-উত্তম উদাহরণের বিষয়ে আমরা দেখেছি, সেখান থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, তিনি সত্যিই অন্যদের জীবনকে মূল্যবান হিসেবে দেখতেন। সেইজন্য তিনি বলতে পেরেছিলেন: “আমি কারো রক্তের দায়ে দোষী নই।”—প্রেরিত ২০:২৬.

a ম্যাসিডোনিয়া থেকে লেখা পৌলের চিঠিগুলো” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।

b সম্ভবত এই বার করিন্থে থাকার সময় পৌল রোমীয়দের উদ্দেশে চিঠি লিখেছিলেন।

d প্রেরিত ২০:৫, ৬ পদে লূক নিজেকেও অন্তর্ভুক্ত করেন। এটা দেখায় যে, পৌল ফিলিপী থেকে লূককে সঙ্গে নিয়ে ত্রোয়াতে যান। কিছু সময় আগে পৌলই লূককে ফিলিপীতে ছেড়ে এসেছিলেন।—প্রেরিত ১৬:১০-১৭, ৪০.

e এর আগে ফিলিপী থেকে ত্রোয়াতে যেতে তাদের দু-দিন সময় লেগেছিল। কিন্তু, এই বার তাদের পাঁচ দিন লাগে। হতে পারে, ঝড়ো হাওয়া তাদের বিপরীত দিকে বইছিল, তাই বেশি সময় লেগেছিল।—প্রেরিত ১৬:১১.