সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় ১৫

‘তিনি মণ্ডলীগুলোকে শক্তিশালী করলেন’

‘তিনি মণ্ডলীগুলোকে শক্তিশালী করলেন’

ভ্রমণ অধ্যক্ষদের সাহায্যে মণ্ডলীগুলো বিশ্বাসে দৃঢ় হতে থাকল

প্রেরিত ১৫:৩৬–১৬:৫ পদের উপর ভিত্তি করে

১-৩. (ক) পৌলের নতুন সঙ্গী কে ছিলেন এবং তিনি কেমন ব্যক্তি ছিলেন? (খ) এই অধ্যায়ে আমরা কী জানতে পারব?

 প্রেরিত পৌল আর একজন যুবক একটা এবড়োখেবড়ো রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছেন, হাঁটতে হাঁটতে পৌল মাঝে মধ্যেই সেই যুবকের দিকে তাকাচ্ছেন। এই উদ্যমী যুবকের নাম তীমথিয়, যার বয়স প্রায় ২০ বছর। তীমথিয় প্রথম বার মিশনারি যাত্রায় যাচ্ছেন। তারা যতই লুস্ত্রা ও ইকনিয় নগর ফেলে এগিয়ে চলেছেন, ততই তীমথিয় তার বাড়ি থেকে দূরে চলে যাচ্ছেন। এই যাত্রায় তাদের প্রতি কী কী ঘটবে? এই বিষয়ে পৌলের অল্প কিছু ধারণা আছে কারণ এটা ছিল তার দ্বিতীয় মিশনারি যাত্রা। তিনি ভালো করেই জানেন যে, তাদের অনেক বিপদজনক পরিস্থিতি ও সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। তিনি হয়তো চিন্তা করছেন যুবক তীমথিয় কীভাবে এই সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করবেন?

তীমথিয় নিজেকে এই কাজের জন্য অযোগ্য বলে মনে করেন, কিন্তু তার উপর পৌলের পুরোপুরি আস্থা ছিল। এখন তাদের মণ্ডলীগুলো পরিদর্শন করতে হবে এবং ভাই-বোনদের শক্তিশালী করতে হবে। তাদের খুব মন দিয়ে এবং একমত হয়ে এই কাজ করতে হবে। পৌল জানতেন, এই কাজের জন্য এমন একজন সঙ্গীর প্রয়োজন, যার সঙ্গে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করা যাবে। কেন? এর একটা কারণ হতে পারে, কিছু দিন আগে পৌল ও বার্ণবার মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল এবং এর ফলে তারা দু-জন আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন।

এই অধ্যায়ে আমরা শিখব যে, ভাই-বোনদের সঙ্গে কোনো মতবিরোধ দেখা দিলে কীভাবে তা মিটমাট করা যায়। আমরা এটাও জানতে পারব, কেন পৌল তীমথিয়কে সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন আর বর্তমানে সীমা অধ্যক্ষেরা কীভাবে তাদের দায়িত্বগুলো পালন করেন।

‘চলো, ফিরে যাই এবং দেখি, ভাইয়েরা কেমন আছে’ (প্রেরিত ১৫:৩৬)

৪. পৌল কোন কোন কারণে ভাই-বোনদের সঙ্গে আবারও দেখা করতে চেয়েছিলেন?

আগের অধ্যায়ে আমরা যেমন দেখেছি, পৌল, বার্ণবা, যিহূদা ও সীল আন্তিয়খিয়া মণ্ডলীতে আসেন এবং ত্বকচ্ছেদের বিষয়ে পরিচালকগোষ্ঠী যে-সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই সম্বন্ধে তাদের জানান আর শক্তিশালী করেন। এরপর পৌল কী করেন? তিনি পরের যাত্রার পরিকল্পনার বিষয়ে বার্ণবাকে বলেন, “চলো, যে-সমস্ত নগরে গিয়ে আমরা যিহোবার বাক্য প্রচার করেছিলাম, সেইসমস্ত নগরে ফিরে যাই এবং দেখি, ভাইয়েরা কেমন আছে।” (প্রেরিত ১৫:৩৬) পৌল সেই নতুন খ্রিস্টানদের সঙ্গে শুধুমাত্র দেখা করতে যাওয়ার জন্য বলছিলেন না। প্রেরিত বই স্পষ্টভাবে জানায় যে, তাদের সঙ্গে দেখা করার দুটো বিশেষ কারণ ছিল। প্রথমত, পরিচালকগোষ্ঠীর সিদ্ধান্ত মণ্ডলীগুলোকে জানানো। (প্রেরিত ১৬:৪) দ্বিতীয়ত, ভ্রমণ অধ্যক্ষ হিসেবে মণ্ডলীর ভাই-বোনদের উৎসাহিত করা এবং তাদের বিশ্বাস দৃঢ় করা। (রোমীয় ১:১১, ১২) প্রেরিতদের মতো বর্তমানে যিহোবার সংগঠন কী করে?

৫. বর্তমানে পরিচালকগোষ্ঠী কীভাবে মণ্ডলীগুলোকে নির্দেশনা দেয় এবং শক্তিশালী করে?

বর্তমানে, যিশু পরিচালকগোষ্ঠীর মাধ্যমে মণ্ডলীগুলোকে নির্দেশনা দিচ্ছেন। পরিচালকগোষ্ঠীর অভিষিক্ত ভাইয়েরা চিঠি, সভা, ছাপানো কিংবা অনলাইনে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রকাশনার মাধ্যমে ও সেইসঙ্গে অন্যান্য উপায়ে মণ্ডলীগুলোকে নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং শক্তিশালী করছেন। এই পরিচালকগোষ্ঠী সমস্ত মণ্ডলীকে ভালোভাবে জানতে চায় আর তাই তারা সীমা অধ্যক্ষদের ব্যবস্থা করেছে। পরিচালকগোষ্ঠী সারা পৃথিবীতে হাজার হাজার দক্ষ প্রাচীনদের সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করেছে।

৬, ৭. সীমা অধ্যক্ষেরা কোন কোন দায়িত্ব পালন করেন?

সীমা অধ্যক্ষেরা যখন কোনো মণ্ডলী পরিদর্শন করেন, তখন তারা সেই মণ্ডলীর সমস্ত ভাই-বোনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করেন এবং তাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করেন। কীভাবে তারা তা করেন? তারা পৌলের মতো ভ্রমণ অধ্যক্ষকে অনুকরণ করেন। পৌল তার সহঅধ্যক্ষ তীমথিয়কে, উৎসাহিত করে বলেন: “তুমি বাক্য প্রচার করো; সুবিধাজনক সময়ে হোক কিংবা কঠিন সময়ে হোক, তুমি তৎপরতার মনোভাব বজায় রেখে প্রচার করো; সম্পূর্ণ ধৈর্য সহকারে এবং উত্তমভাবে শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে তিরস্কার করো, দৃঢ়ভাবে সাবধান করো, উৎসাহিত করো . . . সুসমাচার প্রচারকের কাজ করো।”—২ তীম. ৪:২, ৫.

এই শাস্ত্রপদের কথা অনুযায়ী সীমা অধ্যক্ষেরা মণ্ডলীগুলো পরিদর্শন করার সময় ভাই-বোনদের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন উপায়ে প্রচার কাজ করেন। যে-সীমা অধ্যক্ষেরা বিবাহিত তাদের স্ত্রীরাও এই কাজে অংশ নেন। ভাই-বোনেরা যখন দেখে যে, সীমা অধ্যক্ষেরা প্রচার কাজকে খুব ভালোবাসেন আর লোকদের ভালোভাবে শেখান, তখন তারা আরও উদ্যোগী হয়ে ওঠে। (রোমীয় ১২:১১; ২ তীম. ২:১৫) সীমা অধ্যক্ষেরা এবং তাদের স্ত্রীরাও ভাই-বোনদের প্রতি প্রকৃত প্রেম দেখান এবং তাদের জন্য অনেক ত্যাগস্বীকার করেন। এলাকা বিপদজনক হোক কিংবা আবহাওয়া খারাপ থাকুক, তারা মণ্ডলীগুলো পরিদর্শন করেন। (ফিলি. ২:৩, ৪) এ ছাড়া, সীমা অধ্যক্ষেরা বাইবেলভিত্তিক বক্তৃতা দেওয়ার মাধ্যমে মণ্ডলীগুলোকে শিক্ষা ও পরামর্শ দেন আর তাদের উৎসাহিত করেন। আমরা যদি সীমা অধ্যক্ষদের উদাহরণের প্রতি মনোযোগ দিই এবং তাদের মতো বিশ্বাসকে দৃঢ় করার চেষ্টা করি, তা হলে আমরা উপকৃত হব।—ইব্রীয় ১৩:৭.

“তাদের মধ্যে এমন ঝগড়া হল” (প্রেরিত ১৫:৩৭-৪১)

৮. পৌলের কাছ থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে বার্ণবা কী করেছিলেন?

পৌল যখন বার্ণবাকে বলেন যে, তারা আবারও সেই নগরগুলোতে গিয়ে দেখে আসবেন “ভাইয়েরা কেমন আছে,” তখন বার্ণবা রাজি হয়ে যান। (প্রেরিত ১৫:৩৬) পৌল ও বার্ণবা আগেও একসঙ্গে কাজ করেছেন, তাই তারা একে অন্যকে খুব ভালোভাবে বোঝেন। এ ছাড়া, তারা সেই নগরের ভাই-বোনদের আগে থেকে জানতেন। (প্রেরিত ১৩:২–১৪:২৮) তাই, তারা চিন্তা করেন এবারও একসঙ্গে গেলে ভালো হয়। কিন্তু, তখনই একটা সমস্যা দেখা দেয়। প্রেরিত ১৫:৩৭ পদ বলে: “আর বার্ণবা সঙ্গে করে যোহনকে নিয়ে যেতে চাইলেন, যাকে মার্ক বলে ডাকা হয়।” বার্ণবা পৌলের কাছে অনুমতি চাননি বরং নিজেই ঠিক করে নেন যে, এই মিশনারি যাত্রায় তিনি মার্ককে তার সঙ্গে “নিয়ে যেতে” চান।

৯. পৌল কেন বার্ণবার কথায় রাজি হননি?

কিন্তু, পৌল বার্ণবার কথায় রাজি হননি। কেন? বিবরণ জানায়: “কিন্তু, পৌল মনে করলেন, যে-ব্যক্তি পাম্ফুলিয়াতে তাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে আর কাজ করেনি, তাকে তাদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়।” (প্রেরিত ১৫:৩৮) পৌল ও বার্ণবার প্রথম মিশনারি যাত্রায় মার্ক যদিও তাদের সঙ্গে গিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে থাকেননি। (প্রেরিত ১২:২৫; ১৩:১৩) পাম্ফুলিয়াতে থাকার সময় মার্ক তাদের ছেড়ে জেরুসালেমে নিজের বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলেন। বাইবেল এটা জানায় না যে, কেন তিনি এমনটা করেছিলেন। কিন্তু, এটা মনে হয় যে, পৌলের এই বিষয়টাই খারাপ লেগেছিল। তাই, আবারও মার্কের উপর নির্ভর করা তার জন্য কঠিন ছিল।

১০. পৌল ও বার্ণবার মধ্যে কী হয়েছিল আর এর ফলে কী ঘটেছিল?

১০ বার্ণবা তবুও মার্ককে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করেন। অন্যদিকে, পৌলও কোনোমতেই মার্ককে নিয়ে যেতে রাজি হন না। প্রেরিত ১৫:৩৯ পদ বলে: “এতে তাদের মধ্যে এমন ঝগড়া হল যে, তারা একে অন্যের কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেলেন।” বার্ণবা মার্ককে নিয়ে জাহাজে করে সাইপ্রাসে নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিলেন। আর পৌল তার পরিকল্পনা অনুযায়ী দ্বিতীয় মিশনারি যাত্রায় বেরিয়ে পড়েন। বিবরণ বলে: “অন্যদিকে, পৌল সীলকে সঙ্গে নিলেন। পরে ভাইয়েরা পৌলকে যিহোবার মহাদয়ার উপর ছেড়ে দিলে পৌল সেখান থেকে চলে গেলেন।” (প্রেরিত ১৫:৪০) পৌল ও সীল “সিরিয়া ও কিলিকিয়া দিয়ে যেতে যেতে মণ্ডলীগুলোকে শক্তিশালী করলেন।”—প্রেরিত ১৫:৪১.

১১. কেন পৌল ও বার্ণবা একে অন্যকে ক্ষমা করতে পেরেছিলেন এবং এখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১১ এই বিবরণ দেখায় যে, আমরা অসিদ্ধ এবং আমাদের সবার মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। পৌল ও বার্ণবাকে পরিচালকগোষ্ঠী তাদের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছিল। পৌল হয়তো নিজেও পরবর্তী সময় পরিচালকগোষ্ঠীর একজন সদস্য হয়েছিলেন। তাদের দু-জনের মধ্যে ভালো গুণ থাকা সত্ত্বেও, তারা তাদের মেজাজ হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু, এই ঝগড়ার কারণে কি তাদের বন্ধুত্ব ভেঙে গিয়েছিল? তারা কি সারাজীবন একে অন্যের উপর রেগে ছিলেন? না। তাদের মধ্যে দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও, তারা নম্র ছিলেন এবং খ্রিস্টের মতো মনোভাব দেখিয়েছিলেন। তাই, পরবর্তী সময় তারা একে অন্যকে ক্ষমা করে দেন এবং আবারও ভালো বন্ধু হয়ে ওঠেন। (ইফি. ৪:১-৩) পরে, পৌল ও মার্ক তারাও একসঙ্গে মিলে কাজ করেন। aকল. ৪:১০.

১২. বর্তমানে অধ্যক্ষদের পৌল ও বার্ণবার মতো কোন গুণগুলো দেখাতে হবে?

১২ এটা ঠিক যে, পৌল ও বার্ণবার মধ্যে প্রচণ্ড ঝগড়া হয়েছিল, কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তারা দু-জন বদমেজাজি ছিলেন। বার্ণবা ভাই-বোনদের খুব ভালোবাসতেন এবং সবসময় তাদের সাহায্য করতেন। তার এই ভালো গুণের জন্যই প্রেরিতেরা তাকে বার্ণবা বলে ডাকতেন, যার অর্থ হল “সান্ত্বনার পুত্র,” যদিও তার আসল নাম ছিল যোষেফ। (প্রেরিত ৪:৩৬) পৌলও অন্যদের জন্য চিন্তা করতেন এবং নম্রতা দেখাতেন। (১ থিষল. ২:৭, ৮) বর্তমানে, সমস্ত প্রাচীন ও সীমা অধ্যক্ষদেরও পৌল ও বার্ণবার মতো নম্রতা দেখানো উচিত এবং সহপ্রাচীনদের প্রতি ও সেইসঙ্গে পুরো মণ্ডলীর প্রতি নম্রতা দেখানো উচিত।—১ পিতর ৫:২, ৩.

মণ্ডলীর ‘ভাইয়েরা তীমথিয়ের খুব প্রশংসা করে’ (প্রেরিত ১৬:১-৩)

১৩, ১৪. (ক) তীমথিয় কে ছিলেন আর পৌল তার সঙ্গে কখন এবং কীভাবে দেখা করেছিলেন? (খ) কেন পৌল তীমথিয়ের উপর বিশেষ মনোযোগ দিয়েছিলেন? (গ) তীমথিয়কে কোন কার্যভার দেওয়া হয়েছিল?

১৩ পৌল তার দ্বিতীয় মিশনারি যাত্রায় গালাতিয়ার রোমীয় প্রদেশে যান, যেখানে ইতিমধ্যেই কিছু মণ্ডলী গঠিত হয়েছিল। শেষে “পৌল দর্বী ও লুস্ত্রা নগরে গেলেন।” বিবরণ আরও জানায়, “সেখানে তীমথিয় নামে একজন শিষ্য ছিলেন। তার মা ছিলেন যিহুদি এবং একজন শিষ্য, কিন্তু তার বাবা ছিলেন গ্রিক।”—প্রেরিত ১৬:১. b

১৪ এমনটা মনে করা হয়, প্রায় ৪৭ খ্রিস্টাব্দে পৌল যখন তার প্রথম মিশনারি যাত্রায় লুস্ত্রায় এসেছিলেন, তখন তিনি তীমথিয়ের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এখন দু-তিন বছর পর পৌল যখন তার দ্বিতীয় মিশনারি যাত্রায় আবারও এখানে আসেন, তখন তিনি যুবক তীমথিয়ের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেন। কেন? কারণ মণ্ডলীর ভাইয়েরা ‘তীমথিয়ের খুব প্রশংসা করে।’ কেবলমাত্র তীমথিয়ের মণ্ডলীতেই নয় সেইসঙ্গে আশেপাশের মণ্ডলীগুলোতেও তার অনেক সুনাম ছিল। যেমন, এর মধ্যে একটা হল ইকনিয় মণ্ডলী, যেটা লুস্ত্রা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। (প্রেরিত ১৬:২) পরে পবিত্র শক্তির নির্দেশনায় লুস্ত্রার প্রাচীনেরা তীমথিয়কে এক গুরুত্বপূর্ণ কার্যভার দেন। তারা তাকে ভ্রমণ অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করেন, যেন তিনি পৌল ও সীলকে সাহায্য করতে পারেন। —প্রেরিত ১৬:৩.

১৫, ১৬. কেন ভাইয়েরা তীমথিয়ের প্রশংসা করেছিল?

১৫ কীভাবে তীমথিয় এত কম বয়সে সুনাম অর্জন করেছিলেন? তিনি খুব বুদ্ধিমান কিংবা দেখতে সুন্দর ছিলেন বলে? না কি তার অনেক দক্ষতা ছিল বলে? বেশিরভাগই লোকেরা এই বিষয়গুলোর উপর মনোযোগ দেয়। এক সময় ভাববাদী শমূয়েলও এমনটাই করেছিলেন। কিন্তু, যিহোবা তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, “মানুষ যেভাবে দেখে, ঈশ্বর সেভাবে দেখেন না। মানুষ শুধু বাইরের চেহারা দেখে, কিন্তু যিহোবা হৃদয় দেখেন।” (১ শমূ. ১৬:৭, NW) ভাইয়েরা শুধুমাত্র তীমথিয়ের বাইরের বিষয়গুলো দেখে নয় বরং তার ভিতরে যে-গুণগুলো রয়েছে, তা দেখে তার প্রশংসা করেছিল।

১৬ পরবর্তী সময়, প্রেরিত পৌলও তীমথিয়ের ভালো গুণগুলোর প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, তীমথিয়ের মতো ভালো স্বভাব আর কারো নেই। তিনি ভাইদের প্রতি প্রকৃত প্রেম দেখান আর মণ্ডলীর জন্যও অনেক পরিশ্রম করেন। (ফিলি. ২:২০-২২) শুধু তাই নয়, তীমথিয় তার “নিষ্কপট বিশ্বাসের” জন্যও পরিচিত ছিলেন।—২ তীম. ১:৫.

১৭. তীমথিয়ের মতো হওয়ার জন্য বর্তমানে যুবক-যুবতীরা কী করতে পারে?

১৭ বর্তমানে, অনেক যুবক-যুবতী তীমথিয়ের মতো নিজেদের মধ্যে খ্রিস্টীয় গুণ বৃদ্ধি করার চেষ্টা করে। এভাবে, তারা অল্প বয়স থেকেই যিহোবা এবং ভাই-বোনদের কাছে সুনাম অর্জন করে। (হিতো. ২২:১; ১ তীম. ৪:১৫) তারা দু-রকমভাবে জীবনযাপন করে না অর্থাৎ ভাই-বোনদের কাছে একরকম আর বন্ধুদের কাছে অন্যরকম হওয়ার চেষ্টা করে না। (গীত. ২৬:৪) তীমথিয়ের মতো এই যুবক-যুবতীরা যিহোবার সেবায় অনেক কিছু করতে পারে। তারা যখন প্রকাশক হয় এবং যিহোবার কাছে নিজের জীবন উৎসর্গ করে বাপ্তিস্ম নেয়, তখন মণ্ডলীতে সবাই খুব খুশি হয়।

“মণ্ডলীগুলো বিশ্বাসে দৃঢ় হতে থাকল” (প্রেরিত ১৬:৪, ৫)

১৮. (ক) বিভিন্ন মণ্ডলী পরিদর্শন করার সময় পৌল ও তীমথিয় কী করেছিলেন? (খ) এর ফলে মণ্ডলীগুলো কীভাবে উপকৃত হয়েছিল?

১৮ পৌল ও তীমথিয় অনেক বছর ধরে একসঙ্গে কাজ করেন। ভ্রমণ অধ্যক্ষ হিসেবে তারা বিভিন্ন মণ্ডলী পরিদর্শন করেন এবং পরিচালকগোষ্ঠীর কাছ থেকে যা-কিছু কার্যভার পান, তা সম্পন্ন করেন। বাইবেল বলে, “তারা বিভিন্ন নগরের মধ্য দিয়ে যেতে লাগলেন এবং জেরুসালেমের প্রেরিতেরা ও প্রাচীনেরা যে-সমস্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেগুলো তাদের জানালেন, যাতে তারা সেগুলো পালন করে।” (প্রেরিত ১৬:৪) মণ্ডলীগুলো জেরুসালেমের প্রেরিতদের ও প্রাচীনদের দেওয়া নির্দেশনাগুলো নিশ্চয়ই মেনে নিয়েছিল। এই কারণে “মণ্ডলীগুলো বিশ্বাসে দৃঢ় হতে থাকল এবং দিন দিন সংখ্যায় বৃদ্ধি পেতে লাগল।”—প্রেরিত ১৬:৫.

১৯, ২০. কেন খ্রিস্টানেরা “নেতৃত্ব নেন” এমন ভাইদের নির্দেশনাকে মেনে চলে?

১৯ বর্তমানেও, যখন আমরা “নেতৃত্ব নেন” এমন ভাইদের নির্দেশনাকে আনন্দের সঙ্গে মেনে নিই, তখন অনেক আশীর্বাদ পাই। (ইব্রীয় ১৩:১৭) বর্তমান জগৎ দ্রুত বদলে যাচ্ছে, তাই “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস” আমাদের যেকোনো নির্দেশনা দিক না কেন, তা দ্রুত মেনে চলা উচিত। (মথি ২৪:৪৫; ১ করি. ৭:২৯-৩১) এমনটা করার ফলে, আমাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হবে আর আমরা জগতের অশুচিতা থেকে পৃথক থাকতে পারব।—যাকোব ১:২৭.

২০ এটা সত্য যে, খ্রিস্টান প্রাচীন এবং পরিচালকগোষ্ঠীর সদস্যেরা অসিদ্ধ, ঠিক যেমন প্রথম শতাব্দীতে পৌল, বার্ণবা, মার্ক এবং অন্যান্য অভিষিক্ত প্রাচীনেরা অসিদ্ধ ছিলেন। (রোমীয় ৫:১২; যাকোব ৩:২) কিন্তু তা সত্ত্বেও, আমরা পরিচালকগোষ্ঠীর উপর আস্থা রাখতে পারি। পরিচালকগোষ্ঠী যেকোনো পরিস্থিতিতে ঈশ্বরের বাক্য মেনে চলে এবং প্রেরিতদের উদাহরণ নিখুঁতভাবে অনুকরণ করে। (২ তীম. ১:১৩, ১৪) তাই, বর্তমানে মণ্ডলীগুলো ক্রমাগত বিশ্বাসে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।