সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অধ্যায় ১৭

‘তিনি লোকদের সঙ্গে শাস্ত্র থেকে যুক্তিতর্ক করলেন’

‘তিনি লোকদের সঙ্গে শাস্ত্র থেকে যুক্তিতর্ক করলেন’

একজন ভালো শিক্ষক বাইবেল থেকে শেখান; বিরয়ার লোকদের উত্তম উদাহরণ

প্রেরিত ১৭:১-১৫ পদের উপর ভিত্তি করে

১, ২. কারা ফিলিপী থেকে থিষলনীকী পর্যন্ত যাত্রা করেছিলেন এবং তারা হয়তো মনে মনে কোন বিষয় নিয়ে চিন্তা করেছিলেন?

 রোমের দক্ষ কারিগরদের দ্বারা তৈরি এক রাস্তা উঁচু নীচু পাহাড়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। এই রাস্তা দিয়ে সবসময়ই লোকজন চলাচল করছে। কেউ রথে চড়ে, কেউ গাধার পিঠে চড়ে, কখনো আবার সৈন্যের দল অথবা ব্যবসায়ী কিংবা কারিগরদের দল পায়ে হেঁটে তাদের গন্তব্যের উদ্দেশে চলেছে। এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে বিভিন্ন ধরনের শব্দ কানে আসে, যেমন গাধার পায়ের শব্দ, রথের চাকার ঘর্ষণের শব্দ এবং যাত্রীদের জোরে জোরে কথার বলার আওয়াজ। এই যাত্রীদের মধ্যে পৌল, সীল আর তীমথিয়ও আছেন, যারা ফিলিপী থেকে আসছেন। এখান থেকে তাদের প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দূরে থিষলনীকীতে যেতে হবে। কিন্তু, পৌল ও সীলের জন্য এই দীর্ঘ যাত্রা সহজ হবে না কারণ ফিলিপীতে তাদের নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছে আর সেই ক্ষত এখনও সেরে ওঠেনি।—প্রেরিত ১৬:২২, ২৩.

এই তিন জন ভাই কীভাবে এই দীর্ঘ যাত্রা শেষ করেন? তারা হয়তো একে অন্যের সঙ্গে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলেন আর তাই এই পথ তাদের দীর্ঘ বলে মনে হয়নি। তারা নিশ্চয়ই এই বিষয়ে কথা বলছিলেন যে, কীভাবে ফিলিপীতে কারারক্ষী এবং তার পরিবার সত্য গ্রহণ করে। সেই ঘটনার ফলে তাদের মনোবল আরও বেড়ে যায় যে, তারা ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে প্রচার করে চলবে। কিন্তু, তারা যখন প্রায় থিষলনীকীর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছেন, তখন হয়তো মনে মনে চিন্তা করছেন, ‘জানি না এখানকার যিহুদিরা আমাদের প্রতি কেমন আচরণ করবে? তারাও কি ফিলিপীদের মতো আমাদের উপর আক্রমণ করবে আর মারধর করবে?’

 ৩. আমরা যদি প্রচার করতে ভয় পাই, তা হলে পৌলের কাছ থেকে কী শিখতে পারি?

পৌল যে-বিষয় নিয়ে চিন্তা করছিলেন, তা তিনি পরে থিষলনীকীর খ্রিস্টানদের উদ্দেশে চিঠিতে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন: “তোমরা এই কথাও জান, ফিলিপীতে প্রথমে আমরা কষ্ট ভোগ করেছিলাম এবং আমাদের মারধর করা হয়েছিল। কিন্তু, এত বিরোধিতা সত্ত্বেও তোমাদের কাছে সুসমাচার ঘোষণা করার জন্য আমরা আমাদের ঈশ্বরের কাছ থেকে সাহস লাভ করেছিলাম।” (১ থিষল. ২:২) ফিলিপীতে তাদের প্রতি যা ঘটেছে, সেই কারণেই হয়তো পৌল থিষলনীকীতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। আপনি কি পৌলের মনের অবস্থাটা বুঝতে পারছেন? আপনিও কি কখনো কখনো প্রচার করতে ভয় পান? পৌলের উদাহরণের প্রতি মনোযোগ দিন। তিনি যিহোবার উপর নির্ভর করেন যে, যিহোবা তাকে ভয় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবেন। এই কারণেই তিনি সাহসের সঙ্গে সুসমাচার প্রচার করে চলেন।—১ করি. ৪:১৬.

‘তিনি শাস্ত্র থেকে যুক্তিতর্ক করলেন’ (প্রেরিত ১৭:১-৩)

 ৪. কেন আমরা বলতে পারি, পৌল হয়তো থিষলনীকীতে তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ছিলেন?

বিবরণ জানায়, থিষলনীকীতে পৌল সমাজগৃহে পর পর তিন বিশ্রামবারে প্রচার করেছিলেন। এর মানে কি এই যে, তিনি সেখানে মাত্র তিন সপ্তাহ ছিলেন? আসলে, আমরা সঠিকভাবে বলতে পারি না যে, তিনি থিষলনীকীতে যাওয়ার পর পরই সমাজগৃহে যাওয়া শুরু করেছিলেন কি না। এ ছাড়া, পৌলের চিঠিগুলো থেকে এটা বোঝা যায়, তিনি এবং তার সঙ্গীরা থিষলনীকীতে তাদের খরচ মেটানোর জন্য কিছু কাজও করতেন। (১ থিষল. ২:৯; ২ থিষল. ৩:৭, ৮) শুধু তা-ই নয়, পৌল যখন সেখানে ছিলেন, তখন ফিলিপীর ভাইয়েরা দু-বার তার প্রয়োজন মেটানোর জন্য কিছু জিনিস পাঠিয়েছিল। (ফিলি. ৪:১৬) এর থেকে আমরা বুঝতে পারি, পৌল হয়তো থিষলনীকীতে তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ছিলেন।

 ৫. পৌল এমন কী করেছিলেন, যেন লোকেরা চিন্তাভাবনা করে তার বার্তা গ্রহণ করে?

পৌল সাহসের সঙ্গে সমাজগৃহে একত্রিত হওয়া লোকদের কাছে প্রচার করেন। তিনি তার রীতি অনুসারে “শাস্ত্র থেকে যুক্তিতর্ক করলেন, শাস্ত্র থেকে ব্যাখ্যা করলেন এবং প্রমাণ দিলেন যে, খ্রিস্টের কষ্ট ভোগ করা এবং মৃতদের মধ্য থেকে ওঠা আবশ্যক ছিল। তিনি বললেন: ‘যে-যিশু সম্বন্ধে আমি তোমাদের কাছে প্রচার করছি, ইনিই সেই খ্রিস্ট।’” (প্রেরিত ১৭:২, ৩) লক্ষ করুন পৌল চাননি যে, লোকেরা আবেগের বশে তার বার্তা গ্রহণ করুক। এর পরিবর্তে তিনি চেয়েছিলেন, তারা যেন চিন্তাভাবনা করে বিষয়টা বোঝে এবং তারপর তার বার্তা গ্রহণ করে। তিনি জানতেন, সমাজগৃহে উপস্থিত লোকদের শাস্ত্র সম্বন্ধে জ্ঞান আছে এবং তারা শাস্ত্রকে সম্মানও করে। কিন্তু, তাদের শাস্ত্র সম্বন্ধে সম্পূর্ণ জ্ঞান নেই। তাই, পৌল তাদের সঙ্গে শাস্ত্র থেকে যুক্তিতর্ক করেন, ব্যাখ্যা করেন এবং শাস্ত্র থেকে প্রমাণ দেন যে, নাসরতের যিশুই হলেন সেই প্রতিজ্ঞাত মশীহ বা খ্রিস্ট।

 ৬. যিশু এমন কী করেছিলেন, যাতে শিষ্যেরা শাস্ত্রের উপর নির্ভর করতে পারেন এবং এটা তাদের উপর কেমন প্রভাব ফেলেছিল?

পৌল যিশুর মতো একই পদ্ধতি ব্যবহার করে শিক্ষা দিতেন। যিশু যা-কিছু শেখাতেন, সমস্তই শাস্ত্র থেকে শেখাতেন। উদাহরণ স্বরূপ, যিশু বলেছিলেন যে, মনুষ্যপুত্রকে অনেক দুঃখ ভোগ করতে হবে, তাঁকে হত্যা করা হবে এবং আবারও তাঁকে জীবিত করা হবে। (মথি ১৬:২১) যিশু যখন মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত হন এবং তাঁর শিষ্যদের দেখা দেন, তখন তারা নিশ্চিত হয়ে যান যে, শাস্ত্রে লেখা কথাগুলো সত্য। তবে, যিশু তাঁর শিষ্যদের আরও সাহায্য করেন, যাতে তারা শাস্ত্রের উপর নির্ভর করতে পারেন। তিনি তাঁর কয়েক জন শিষ্যকে “মোশির ব্যবস্থা এবং সমস্ত ভাববাদীদের গ্রন্থ থেকে শুরু করে, পুরো শাস্ত্রে তাঁর সম্বন্ধে যে-সমস্ত বিষয় লেখা রয়েছে, সেগুলো তাদের স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিলেন।” এটা তাঁর শিষ্যদের উপর কেমন প্রভাব ফেলেছিল? শিষ্যেরা যিশুর কথা শুনে অবাক হয়ে যান আর বলেন: “তিনি যখন পথে আমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, স্পষ্টভাবে আমাদের শাস্ত্র বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন আমাদের হৃদয় কি উদ্দীপিত হয়ে উঠছিল না?”—লূক ২৪:১৩, ২৭, ৩২.

 ৭. আমরা লোকদের যা-কিছু শিক্ষা দিই, কেন তা বাইবেল থেকেই হওয়া উচিত?

ঈশ্বরের বাক্য অত্যন্ত ক্ষমতাশালী। (ইব্রীয় ৪:১২) সেইজন্য আমরা লোকদের যা-কিছু শিক্ষা দিই, তা বাইবেল থেকেই দিই, ঠিক যেমন যিশু, পৌল এবং অন্যান্য প্রেরিতেরা করেছিলেন। প্রচার করার সময় আমরা লোকদের সঙ্গে যুক্তি করি এবং শাস্ত্রপদের অর্থ বুঝিয়ে দিই আর যখনই সুযোগ পাই, বাইবেল খুলে তাদের দেখাই যে, আমরা যা বলছি, সেগুলো বাইবেল থেকেই বলছি। এটা আমরা এইজন্য করি, যাতে লোকেরা বুঝতে পারে, আমরা নিজেদের নয়, বরং ঈশ্বরের বার্তা তাদের জানাচ্ছি। এটা করার মাধ্যমে আমাদেরও বিশ্বাস বৃদ্ধি পায় যে, আমরা যা শিক্ষা দিচ্ছি, তা বাইবেল থেকেই দিচ্ছি আর এটির উপর আমরা পুরোপুরি নির্ভর করতে পারি। এর ফলে, আমরা পৌলের মতো সাহস লাভ করি আর ভয় না পেয়ে প্রচার করে চলি।

“তাদের মধ্যে কয়েক জন যিশুর অনুসারী হল” (প্রেরিত ১৭:৪-৯)

৮-১০. (ক) থিষলনীকীর লোকেরা সুসমাচার শুনে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল? (খ) কেন কিছু যিহুদি খুবই রেগে গিয়েছিল? (গ) রেগে গিয়ে তারা কী করেছিল?

পৌল তার অভিজ্ঞতা থেকে জানতেন যে, যিশুর এই কথাগুলো একেবারে সত্য: “একজন দাস তার প্রভুর চেয়ে বড়ো নয়। তারা যদি আমাকে তাড়না করে, তা হলে তারা তোমাদেরও তাড়না করবে; তারা যদি আমার কথা পালন করে, তা হলে তোমাদের কথাও পালন করবে।” (যোহন ১৫:২০) থিষলনীকীতে পৌলের প্রতি এমনই কিছু ঘটে। কিছু ব্যক্তি দ্রুত ঈশ্বরের বাক্য গ্রহণ করে নেয়, কিন্তু অন্যেরা তা গ্রহণ করে না। যারা সুসমাচার গ্রহণ করেছিল, তাদের বিষয়ে লূক লেখেন: “তাদের মধ্যে কয়েক জন [যিহুদি] যিশুর অনুসারী হল এবং পৌল ও সীলের সঙ্গে যোগ দিল। আর গ্রিকদের মধ্যে বিপুলসংখ্যক লোকও, যারা ঈশ্বরকে উপাসনা করত, তা-ই করল। এদের মধ্যে বেশ কয়েক জন গণ্যমান্য মহিলাও ছিলেন।” (প্রেরিত ১৭:৪) এই নতুন শিষ্যেরা নিশ্চয়ই অনেক আনন্দিত হয়েছিল কারণ তারা শাস্ত্রের বিষয়ে সঠিক জ্ঞান লাভ করেছে।

কিন্তু, থিষলনীকীর কিছু যিহুদি যখন এটা দেখে যে, “গ্রিকদের মধ্যে বিপুলসংখ্যক লোক” পৌলের বার্তা গ্রহণ করেছে, তখন তারা খুবই রেগে যায়। কেন? কারণ এই যিহুদিরা গ্রিক লোকদের ইব্রীয় শাস্ত্র শিখিয়েছিল এবং নিজেদের শিষ্য তৈরি করেছিল। আর হঠাৎ একদিন পৌল তাদের সমাজগৃহে এসে গ্রিক লোকদের তার দিকে টেনে নেয় আর তারা খ্রিস্টান হয়ে যায়। যিহুদিদের মনে হয়েছিল, পৌল তাদের শিষ্যদের চুরি করে নিচ্ছে। এই সমস্ত দেখে তাদের রাগ মাথায় ওঠে যায়।

“তারা . . . পৌল ও সীলকে সেই উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য তাদের খুঁজতে লাগল।”—প্রেরিত ১৭:৫

১০ এখন কী হবে? লূক লেখেন: “যিহুদিরা ঈর্ষায় পরিপূর্ণ হল এবং বাজারে বসে অলস সময় কাটাত এমন কয়েক জন দুষ্ট লোককে একত্রিত করল। আর পরে উচ্ছৃঙ্খল জনতার একটা দল তৈরি করে নগরের মধ্যে গণ্ডগোল করতে লাগল। তারা যাসোনের বাড়ি আক্রমণ করল এবং পৌল ও সীলকে সেই উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য তাদের খুঁজতে লাগল। সেখানে তাদের না পেয়ে তারা যাসোন এবং কয়েক জন ভাইকে টানতে টানতে নগরাধ্যক্ষদের কাছে নিয়ে গেল এবং চিৎকার করে বলল: ‘এই যে লোকেরা সারা দুনিয়া তোলপাড় করে তুলেছে, তারা এখানেও এসে হাজির হয়েছে আর যাসোন তাদের প্রতি আতিথেয়তা দেখিয়েছে। এরা সকলে এই কথা বলে কৈসরের আইনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে যে, যিশু নামে আরেকজন রাজা আছেন।’” (প্রেরিত ১৭:৫-৭) এই উচ্ছৃঙ্খল জনতার আক্রমণ পৌল এবং তার সঙ্গীদের উপর কেমন প্রভাব ফেলে?

১১. পৌল এবং তার সঙ্গীদের উপর কোন অভিযোগ নিয়ে আসা হয়েছিল এবং যিহুদিরা হয়তো কোন আইনের ভিত্তিতে এই অভিযোগ এনেছিল? (পাদটীকা দেখুন।)

১১ এইরকম রাগী উচ্ছৃঙ্খল জনতা খুবই ভয়ানক হয়। তারা বানের জলের মতো সবকিছু তছনছ করে ভাসিয়ে নিয়ে চলে যেতে পারে। সেইজন্য থিষলনীকীর যিহুদিরা পৌল ও সীলকে তাদের রাস্তা থেকে সরানোর জন্য জনতাকে উসকে দেয়। এ ছাড়া, তারা “নগরের মধ্যে গণ্ডগোল করতে লাগল” এবং নগরাধক্ষ্যের কাছে গিয়ে পৌল ও সীলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ জানাল। তাদের প্রথম অভিযোগ ছিল, পৌল এবং তার সঙ্গীরা “সারা দুনিয়া তোলপাড় করে তুলেছে।” কিন্তু, গণ্ডগোলটা আসলে যিহুদিরাই করেছিল, পৌল এবং তার সঙ্গীরা নয়। দ্বিতীয় অভিযোগটা আরও গুরুতর ছিল। যিহুদিরা বলে, এই ব্যক্তিরা যিশু নামে আরেক জন রাজা সম্বন্ধে প্রচার করছে আর এভাবে তারা কৈসরের আইনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে। a

১২. কেন বলা যেতে পারে যে, থিষলনীকীর খ্রিস্টানদের উপর যে-অভিযোগ আনা হয়েছিল, সেটার পরিণতি ভয়ানক হতে পারত?

১২ মনে করে দেখুন, যিশুর উপরও ধর্মগুরুরা একইরকম অভিযোগ নিয়ে এসেছিল। তারা পীলাতকে বলেছিল, “এই লোক আমাদের জাতিকে বিভ্রান্ত করছে, কৈসরকে কর দিতে বারণ করছে আর নিজেকে খ্রিস্ট, একজন রাজা বলে দাবি করছে।” (লূক ২৩:২) পীলাত হয়তো এই ভেবে ভয় পেয়েছিলেন, যদি তিনি যিশুকে ছেড়ে দেন, তা হলে কৈসর মনে করবেন যে, তিনি যিশুর সঙ্গে বিদ্রোহে অংশ নিচ্ছেন। সেইজন্য তিনি যিশুকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। একইভাবে, থিষলনীকীর খ্রিস্টানদের উপর যে-অভিযোগ আনা হয়েছিল, সেটার পরিণতি ভয়ানক হতে পারত। একটা বই বলে: “এই অভিযোগ খুবই গুরুতর ছিল। ‘একজন ব্যক্তির উপর যদি সামান্যও সন্দেহ হত যে, সে সম্রাটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে, তা হলে তার মৃত্যু নিশ্চিত ছিল। কোনোভাবেই রক্ষা পেত না।’” থিষলনীকীর যিহুদিরা কি তাদের চক্রান্তে সফল হয়েছিল?

১৩, ১৪. (ক) কেন থিষলনীকীর জনতা প্রচার কাজ বন্ধ করতে পারেনি? (খ) কীভাবে পৌল যিশুর দেওয়া পরামর্শ কাজে লাগিয়েছিলেন আর এখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১৩ সেই উচ্ছৃঙ্খল জনতা থিষলনীকীতে প্রচার কাজ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। কেন? একটা কারণ হল, তারা পৌল ও সীলকে খুঁজে পায়নি। এ ছাড়া, নগরাধ্যক্ষেরা নিশ্চিত ছিলেন না যে, পৌল ও সীলের উপর যে-অভিযোগ নিয়ে আসা হয়েছে, সেটা সত্য কি না। সেইজন্য তারা যাসোন এবং অন্যদের কাছ থেকে “জামিন হিসেবে পুরো টাকা” নিয়ে তাদের ছেড়ে দেন। (প্রেরিত ১৭:৮, ৯) এর মধ্যে পৌল সিদ্ধান্ত নেন যে, অন্য এলাকায় গিয়ে প্রচার করবেন। এইভাবে, তিনি যিশুর দেওয়া এই পরামর্শ কাজে লাগান: “তোমরা সাপের মতো সতর্ক কিন্তু কপোতের মতো নিরীহ হোয়ো।” (মথি ১০:১৬) এটা ঠিক যে, পৌলের অনেক সাহস ছিল, কিন্তু তিনি অযথা কোনো ঝুঁকি নেননি। বর্তমানে, খ্রিস্টানেরা পৌলের কাছ থেকে কী শিখতে পারে?

১৪ আমাদের সময়ে পাদরিরা প্রায়ই লোকদের যিহোবার সাক্ষিদের বিরুদ্ধে উসকে দেয়। এই পাদরিরা আধিকারিকদেরও উসকে দেয়, যেন তারা আমাদের উপর তাড়না নিয়ে আসে। তারা বলে, সাক্ষিরা সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করে আর তারা দেশদ্রোহী। তারা প্রথম শতাব্দীর যিহুদিদের মতো হিংসায় পরিপূর্ণ হয়ে এমনটা করে। পৌলের মতো আমরাও বিনা কারণে সমস্যা ডেকে নিয়ে আসি না। প্রচারে যখন লোকেরা আমাদের উপর রেগে যায় কিংবা মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে আসে, তখন আমরা তাদের সঙ্গে তর্কবিতর্ক করি না। আমরা সেই এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে যাই। পরে যখন সেই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যায়, তখন আমরা হয়তো আবারও সেখানে গিয়ে প্রচার করি।

তারা “বেশি খোলামনের ছিল” (প্রেরিত ১৭:১০-১৫)

১৫. বিরয়ার লোকেরা সুসমাচার শুনে কী করেছিল?

১৫ পৌল ও সীলের সুরক্ষার জন্য থিষলনীকীর ভাইয়েরা তাদের প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে বিরয়াতে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে পৌঁছে পৌল সমাজগৃহে যান এবং লোকদের শিক্ষা দিতে থাকেন। লোকেরা যখন পৌলের বার্তা মন দিয়ে শোনে, তখন পৌল কতই-না খুশি হন! লূক লেখেন: “বিরয়ার লোকেরা থিষলনীকীর লোকদের চেয়ে বেশি খোলামনের ছিল, কারণ তারা গভীর আগ্রহের সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য গ্রহণ করল এবং তারা যা-কিছু শুনত, সেগুলো সত্য কি না, তা দেখার জন্য প্রতিদিন সতর্কতার সঙ্গে শাস্ত্র পরীক্ষা করতে লাগল।” (প্রেরিত ১৭:১০, ১১) এর মানে কি এই যে, থিষলনীকীতে যে-লোকেরা সত্য গ্রহণ করেছিল, তারা খোলামনের ছিল না? বিষয়টা এমন নয়। পরবর্তী সময়ে পৌল তাদের লেখেন: “আমরা সবসময় ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিই, কারণ তোমরা আমাদের কাছ থেকে ঈশ্বরের যে-বাক্য শুনেছ, তা মানুষের বাক্য হিসেবে নয়, বরং ঈশ্বরের বাক্য হিসেবেই গ্রহণ করেছিলে। আর সত্যিই তা ঈশ্বরের বাক্য। তোমরা যারা যিশুর অনুসারী, তোমাদের হৃদয়ে সেই বাক্য কাজ করছে।” (১ থিষল. ২:১৩) তাহলে বিরয়ার লোকেরা কোন অর্থে খোলামনের ছিল?

১৬. কেন বিরয়ার লোকদের “খোলামনের” বলা হয়েছিল?

১৬ পৌলের কথাগুলো বিরয়ার লোকদের কাছে একেবারেই নতুন ছিল। তা সত্ত্বেও, তারা পৌলের উপর সন্দেহ করেনি কিংবা তার সঙ্গে তর্কবিতর্ক করেনি। তবে বিষয়টা এমনও ছিল না যে, তারা একেবারে চোখ বন্ধ করে তার কথায় বিশ্বাস করেছিল। সবার প্রথমে তারা মনোযোগ দিয়ে শোনে, পৌল কী বোঝাচ্ছেন। এরপর, তারা নিজেরা শাস্ত্র থেকে পরীক্ষা করে দেখে যে, সেগুলো সত্যিই লেখা আছে কি না। এ ছাড়া, তারা শুধুমাত্র বিশ্রামবারেই নয়, বরং প্রতিদিন “গভীর আগ্রহের সঙ্গে” ঈশ্বরের বাক্য পরীক্ষা করতে থাকল। তারা বোঝার চেষ্টা করছিল, তারা যে-নতুন বিষয়গুলো শিখছে, সেগুলো কীভাবে শাস্ত্রে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এরপর, তারা সেই শিক্ষা অনুযায়ী তাদের চিন্তাভাবনাকে নম্রতার সঙ্গে পরিবর্তন করে। তাই, “তাদের মধ্যে অনেকে যিশুর অনুসারী হল।” (প্রেরিত ১৭:১২) এই সমস্ত কারণেই লূক বিরয়ার লোকদের “খোলামনের” বলে উল্লেখ করেছেন।

১৭. (ক) কেন বিরয়ার লোকদের উদ্যোগ প্রশংসার যোগ্য ছিল? (খ) অনেক বছর ধরে সত্যে থাকলেও কেন আমাদের বিরয়ার লোকদের মতো হতে হবে?

১৭ বিরয়ার লোকেরা কি অসাধারণ উদ্যোগই-না দেখিয়েছিল! তারা স্বপ্নেও ভাবেনি যে, তাদের বিষয়ে ঈশ্বরের বাক্যে লেখা হবে আর তারা বর্তমানে আমাদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ হয়ে উঠবে। তারা খোলামনে শাস্ত্র পরীক্ষা করে দেখেছিল। পৌল তাদের কাছ থেকে এমনটাই আশা করেছিলেন এবং যিহোবাও তা-ই চেয়েছিলেন। বর্তমানে, আমরাও চাই যেন লোকেরা এমনটাই করে। আমরা তাদের উৎসাহিত করি, তারা যেন শুধুমাত্র আমাদের মুখের কথায় নয় বরং নিজেরা বাইবেল থেকে ভালোভাবে পরীক্ষা করে, তারপর বিশ্বাস করে। কিন্তু, খ্রিস্টান হওয়ার পরও কি আমাদের বাইবেল পরীক্ষা করে চলতে হবে? অবশ্যই। আমাদের সবসময় যিহোবা সম্বন্ধে শেখার এবং তাঁর কথাগুলো মেনে চলার জন্য উৎসুক থাকতে হবে। এমনটা করলে যিহোবা আমাদের তাঁর ইচ্ছে মতো গঠন করবেন এবং শেখাতে থাকবেন। (যিশা. ৬৪:৮) এভাবে আমরা আমাদের পিতা যিহোবার কাজে সবসময় ব্যবহৃত হতে পারব এবং তাঁকে পুরোপুরি খুশি করতে পারব।

১৮, ১৯. (ক) কেন পৌলকে বিরয়া ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল? (খ) এরপরও তিনি কী করতে চেয়েছিলেন এবং আমরা সেখান থেকে কী শিখতে পারি? (গ) বিরয়া থেকে পৌল কোথায় গিয়েছিলেন এবং কাদের কাছে তাকে প্রচার করতে হয়েছিল?

১৮ পৌল খুব বেশি দিন বিরয়াতে থাকেননি। বাইবেল বলে: “থিষলনীকীর যিহুদিরা যখন জানতে পারল, বিরয়াতেও পৌল ঈশ্বরের বাক্য প্রচার করছেন, তখন তারা লোকদের উত্তেজিত করার এবং খেপিয়ে তোলার জন্য সেখানে এল। তাই, ভাইয়েরা তাড়াতাড়ি করে পৌলকে অন্যদের সঙ্গে সমুদ্রতীর পর্যন্ত পাঠিয়ে দিলেন, তবে সীল ও তীমথিয় সেখানেই থেকে গেলেন। কিন্তু, যারা পৌলকে সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছিল, তারা তাকে এথেন্স পর্যন্ত নিয়ে গেল। পরে তারা পৌলের কাছ থেকে এই নির্দেশনা পেয়ে ফিরে গেল, যেন সীল ও তীমথিয় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পৌলের কাছে চলে আসেন।” (প্রেরিত ১৭:১৩-১৫) সুসমাচারের শত্রুরা সব ছেড়ে পৌলের পিছনে পড়ে যায়। পৌলকে থিষলনীকী থেকে তাড়িয়ে দিয়েও তাদের শান্তি হয়নি। তারা বিরয়াতেও এসে লোকদের উসকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তারা সফল হয়নি। পৌল জানতেন, প্রচার করার জন্য তার কাছে বড়ো এলাকা রয়েছে। সেইজন্য বিরয়াতে যখন তাকে বাধা দেওয়া হয়, তখন তিনি অন্য জায়গায় গিয়ে প্রচার করতে থাকেন। আসুন, আমরাও পৌলের মতো এই বিষয়ে দৃঢ় হই যে, প্রচার কাজে যতই বাধা দেওয়া হোক না কেন, আমরা প্রচার করে চলব।

১৯ সাহসের সঙ্গে সাক্ষ্য দেওয়া এবং শাস্ত্র থেকে যুক্তি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পৌল এই বিষয়টা সেই সময়ে আরও ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিলেন, যখন তিনি থিষলনীকী ও বিরয়ার যিহুদিদের কাছে প্রচার করেছিলেন। আর এই বিষয়টা আমরাও ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি। এরপর, পৌল বিরয়া থেকে এথেন্সে যান, যেখানে তাকে ন-যিহুদিদের অর্থাৎ যাদের ধর্মীয় বিশ্বাস একদমই আলাদা তাদের কাছে সুসমাচার প্রচার করতে হবে। সেখানকার লোকেরা তার সঙ্গে কেমন আচরণ করবে? এই বিষয়ে আমরা পরের অধ্যায়ে জানতে পারব।

a একজন পণ্ডিত বলেন, সেই সময় কৈসর এক আইন জারি করেছিলেন যেটা হল, “কোনো নতুন রাজা কিংবা সরকার, বিশেষ করে যিনি বর্তমান সম্রাটকে দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করেন কিংবা তাকে সরিয়ে দিয়ে নিজে শাসন করার চেষ্টা করেন।” এমন রাজার আসার বিষয়ে প্রচার করা যাবে না। পৌলের শত্রুরা তার বার্তাকে হয়তো এমনভাবে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলেছিল, যার ফলে মনে হয়েছিল, পৌল কৈসরের বিরুদ্ধে কথা বলছে। “ প্রেরিত বইয়ে উল্লেখিত রোমীয় কৈসর” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।