সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

গল্প ১০

মহাপ্লাবন

মহাপ্লাবন

জাহাজের বাইরে লোকেরা ঠিক আগের মতোই জীবনযাপন করছিল। তারা তখনও বিশ্বাস করছিল না যে, জলপ্লাবন আসতে যাচ্ছে। তারা নিশ্চয়ই আগের চেয়ে আরও বেশি হাসিঠাট্টা করেছিল। কিন্তু, খুব শীঘ্র তাদের হাসিঠাট্টা বন্ধ হয়ে যায়।

হঠাৎ করেই জল পড়তে শুরু করেছিল। আকাশ থেকে এই জল পড়তে শুরু করেছিল, ঠিক যেমন তুমি বালতি থেকে জল ঢালো। নোহই ঠিক ছিলেন! কিন্তু, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে, অন্য আর কেউই তখন জাহাজে প্রবেশ করতে পারত না। যিহোবা জাহাজের দরজা শক্ত করে বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

খুব শীঘ্র নীচু ভূমি জলে ডুবে যায়। সেই জল বড়ো বড়ো নদীর মতো হয়ে যায়। জলের আঘাতে গাছপালা উপড়ে পড়ে এবং বড়ো বড়ো পাথরের চারপাশেও জলের আঘাতে অনেক আওয়াজ হতে থাকে। লোকেরা ভয় পেয়ে যায়। তারা আরও উঁচু ভূমিতে উঠে যায়। ইস্‌, তারা নিশ্চয়ই এটা ভেবে কতই-না আপশোস করেছিল যে, তারা যদি নোহের কথা শুনত আর সেই দরজাটা যখন তাদের জন্য খোলা ছিল, তখন জাহাজে প্রবেশ করত! কিন্তু, তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল।

জল বাড়তে বাড়তে আরও উঁচুতে উঠে যায়। চল্লিশ দিন ও চল্লিশ রাত ধরে আকাশ থেকে জল পড়ে। পর্বতের চারপাশে জল বাড়তে থাকে আর খুব শীঘ্র এমনকী সবচেয়ে উঁচু পর্বতগুলোও ডুবে যায়। তাই, ঈশ্বর যেমনটা বলেছিলেন, ঠিক তেমনই জাহাজের বাইরে থাকা সমস্ত লোক এবং পশুপাখি মারা যায়। কিন্তু, জাহাজের ভিতরে থাকা সকলেই নিরাপদে ছিল।

নোহ এবং তার ছেলেরা খুব সুন্দরভাবে জাহাজটা নির্মাণ করেছিল। এটা জলের সঙ্গে সঙ্গে ওপরে উঠে গিয়েছিল এবং জলের ঠিক ওপরে ভাসতে শুরু করেছিল। তারপর একদিন, বৃষ্টি পড়া বন্ধ হওয়ার পর, সূর্য আলো দিতে শুরু করে। কতই-না সুন্দর এক দৃশ্য! চারদিকজুড়ে শুধুমাত্র একটাই বিশাল সাগর। আর একমাত্র যে-জিনিসটা দেখা যাচ্ছিল, তা হল জলের ওপরে ভাসতে থাকা জাহাজটা।

দৈত্যাকৃতি ব্যক্তিরা তখন আর ছিল না। লোকেদের আঘাত করার জন্য তাদেরকে আর আশেপাশে দেখা যেত না। তারা সকলেই তাদের মা ও বাকি মন্দ লোকেদের সঙ্গে মারা গিয়েছিল। কিন্তু, তাদের বাবাদের কী হয়েছিল?

এই দৈত্যাকৃতি ব্যক্তিদের বাবারা আসলে আমাদের মতো মানুষ ছিল না। তারা ছিল সেই স্বর্গদূতেরা, যারা মানুষের মতো বসবাস করার জন্য পৃথিবীতে নেমে এসেছিল। তাই, যখন জলপ্লাবন শুরু হয়েছিল, তখন তারা অন্যান্য লোকের মতো মারা যায়নি। তারা নিজেদের জন্য যে-মানবদেহ তৈরি করে নিয়েছিল, তা পরিত্যাগ করেছিল এবং স্বর্গদূত হিসেবে স্বর্গে ফিরে গিয়েছিল। কিন্তু, তাদেরকে আর ঈশ্বরের দূত পরিবারের অংশ হতে দেওয়া হয়নি। তাই, তারা শয়তানের দূত হয়ে উঠেছিল। বাইবেলে তাদেরকে মন্দদূত বলা হয়েছে।

ঈশ্বর তখন এক বায়ু প্রবাহিত করেন আর এর ফলে জলপ্লাবনের জল কমতে শুরু করে। পাঁচ মাস পর, জাহাজটা একটা পর্বতের চূড়ায় আটকে যায়। এভাবে আরও অনেক দিন পার হয়ে যায় এবং জাহাজের ভিতরে থাকা ব্যক্তিরা পর্বতের চূড়াগুলো দেখতে পায়। জল ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।

নোহ তখন জাহাজের বাইরে একটা কালো পাখি ছেড়ে দিয়েছিলেন, যেটাকে দাঁড়কাক বলে। সেটা কিছুক্ষণের জন্য উড়ে গিয়ে পরে আবারও ফিরে আসে কারণ সেটা দাঁড়ানোর জন্য কোনো ভালো জায়গা খুঁজে পায়নি। সেই পাখিটা বার বার এইরকম করেছিল এবং প্রতি বার ফিরে এসে জাহাজের ওপরে বসেছিল।

নোহ দেখতে চেয়েছিলেন যে, পৃথিবীর ওপর থেকে জল পুরোপুরি সরে গিয়েছে কি না আর তাই তিনি এরপর জাহাজের বাইরে একটা পায়রা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু, সেই পায়রাটা ফিরে এসেছিল কারণ সেটা থাকার জন্য কোনো জায়গা খুঁজে পায়নি। নোহ দ্বিতীয় বার সেটাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন আর তখন সেটা ঠোঁটে করে জলপাই গাছের একটা পাতা নিয়ে ফিরে এসেছিল। তাই, নোহ বুঝতে পেরেছিলেন যে, জল নেমে গিয়েছে। তখন নোহ তৃতীয় বারের মতো পায়রাটা ছেড়ে দিয়েছিলেন আর অবশেষে সেটা থাকার জন্য একটা শুকনো জায়গা খুঁজে পেয়েছিল।

ঈশ্বর তখন নোহের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: ‘জাহাজ থেকে বের হও। তোমার পুরো পরিবার ও পশুপাখিকে তোমার সঙ্গে নিয়ে যাও।’ তারা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জাহাজের ভিতরে ছিল। তাই, আমরা কল্পনা করতে পারি যে, আবারও বাইরে আসতে পেরে এবং জীবিত ছিল বলে তারা কতই-না খুশি ছিল!

আদিপুস্তক ৭:১০-২৪; ৮:১-১৭; ১ পিতর ৩:১৯, ২০.