সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

গল্প ৫৫

একটি ছোটো বালক ঈশ্বরের সেবা করে

একটি ছোটো বালক ঈশ্বরের সেবা করে

ছোটো ছেলেটি দেখতে বেশ সুন্দর, তাই না? তার নাম শমূয়েল। আর যে-ব্যক্তি তার মাথার ওপর হাত দিয়ে রেখেছেন, তিনি মহাযাজক এলি। আর ওই যে শমূয়েলের বাবা ইল্‌কানা ও মা হান্না, যারা শমূয়েলকে এলির কাছে নিয়ে এসেছে।

শমূয়েলের বয়স মাত্র চার কি পাঁচ বছর। কিন্তু, সে এখানে যিহোবার আবাসে এলি ও অন্যান্য যাজকের সঙ্গে থাকবে। কেন ইল্‌কানা ও হান্না, শমূয়েলের মতো এত ছোটো একটি ছেলেকে যিহোবার সেবা করার জন্য আবাসে দিয়ে দিচ্ছে? এসো দেখি।

মাত্র কয়েক বছর আগেও হান্না অনেক বিষণ্ণ ছিলেন। এর কারণ হল তার কোনো সন্তান হচ্ছিল না আর তিনি একটি সন্তানের জন্য ব্যাকুল হয়ে ছিলেন। তাই, একদিন হান্না যখন যিহোবার আবাসে গিয়েছিলেন, তখন তিনি এই প্রার্থনা করেছিলেন: ‘হে যিহোবা, আমাকে ভুলে যেও না! তুমি যদি আমাকে একটি ছেলে দাও, তাহলে আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, আমি সেই ছেলেকে সারাজীবন তোমার সেবা করার জন্য দিয়ে দেব।’

যিহোবা হান্নার প্রার্থনা শোনেন আর কয়েক মাস পর হান্না শমূয়েলের জন্ম দেন। হান্না তার ছোট্ট ছেলেকে অনেক ভালোবাসেন আর তিনি তাকে একেবারে ছোটো থাকতেই যিহোবা সম্বন্ধে শিক্ষা দিতে শুরু করেন। তিনি তার স্বামীকে বললেন: ‘শমূয়েল দুধ খাওয়া ছেড়ে দেওয়ার মতো বড়ো হলেই আমি তাকে যিহোবার আবাসে সেবা করার জন্য সেখানে নিয়ে যাব।’

এই ছবিতে আমরা হান্না ও ইল্‌কানাকে সেটাই করতে দেখছি। আর যেহেতু শমূয়েল তার বাবা-মার কাছ থেকে অনেক ভালোভাবে শিক্ষা পেয়েছেন, তাই সে এখানে যিহোবার তাঁবুতে সেবা করতে পেরে খুব আনন্দিত হয়। প্রতি বছর হান্না ও ইল্‌কানা এই বিশেষ তাঁবুতে উপাসনা করতে ও তাদের ছোটো ছেলেকে দেখতে আসত। আর প্রতি বছর হান্না শমূয়েলের জন্য একটা নতুন হাতকাটা জামা তৈরি করে নিয়ে আসতেন।

বছর গড়িয়ে যেতে থাকে এবং শমূয়েল যিহোবার আবাসে সেবা করতে থাকেন আর যিহোবা ও লোকেরা তাকে অনেক পছন্দ করে। কিন্তু, মহাযাজক এলির সন্তান হফ্‌নি ও পীনহস ভালো লোক নয়। তারা অনেক মন্দ কাজ করে আর অন্যদেরকেও যিহোবার অবাধ্য হওয়ার জন্য জোর করে। এলির উচিত তাদেরকে যাজকপদ থেকে সরিয়ে দেওয়া, তবে তিনি তা করেন না।

আবাসে যে-মন্দ কাজগুলো চলছিল, সেগুলোর কোনোটাই বালক শমূয়েলের জন্য যিহোবার সেবা করার ক্ষেত্রে বাধা হতে পারেনি। যেহেতু তখন খুব কম লোকই যিহোবাকে সত্যি সত্যিই ভালোবাসত, তাই অনেকদিন ধরে যিহোবা কোনো মানুষের সঙ্গে কথা বলেননি। শমূয়েল যখন কিছুটা বড়ো হয়, তখন এই ঘটনাটা ঘটে:

শমূয়েল যখন আবাসে ঘুমিয়ে ছিল, তখন একটা কণ্ঠস্বর শুনে সে জেগে ওঠে। সে উত্তর দেয়: ‘এই তো আমি এখানে।’ আর সে উঠে দৌড়ে এলির কাছে গিয়ে বলে: ‘আপনি আমায় ডেকেছেন, এই যে আমি।’

কিন্তু এলি উত্তর দেন: ‘আমি তোমাকে ডাকিনি; যাও গিয়ে শুয়ে পড়ো।’ তাই, শমূয়েল গিয়ে শুয়ে পড়ে।

দ্বিতীয় বার সেই কণ্ঠস্বর ডেকে ওঠে: ‘শমূয়েল!’ তাই, শমূয়েল আবারও উঠে দৌড়ে এলির কাছে যায়। ‘আপনি আমায় ডেকেছেন, এই যে আমি,’ সে বলে। কিন্তু, এলি উত্তর দেন: ‘বাছা, আমি তোমায় ডাকিনি। আবার গিয়ে শুয়ে পড়ো।’ শমূয়েল আবারও গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।

‘শমূয়েল!’ সেই কণ্ঠস্বর তৃতীয় বারের মতো ডেকে ওঠে। আর তাই শমূয়েল দৌড়ে এলির কাছে যায়। ‘এই যে আমি, এ-বার নিশ্চয়ই আপনিই আমাকে ডেকেছেন,’ সে বলে। এলি এই বার বুঝতে পারলেন যে, যিহোবাই তাকে ডাকছেন। তাই, তিনি শমূয়েলকে বলেন: ‘যাও, আবার গিয়ে শুয়ে পড়ো আর যদি তিনি আবারও ডাকেন, তাহলে বলবে: “বলুন যিহোবা, আপনার দাস শুনছে।”’

শমূয়েল ঠিক সেভাবেই উত্তর দেন, যখন যিহোবা আবারও তাকে ডাকেন। যিহোবা তখন শমূয়েলকে বলেন, তিনি এলি এবং তার দুই ছেলেকে শাস্তি দেবেন। পরবর্তী সময়ে, হফ্‌নি এবং পীনহস পলেষ্টীয়দের সঙ্গে যুদ্ধে মারা যায় আর এলি যখন শুনতে পান যে কী ঘটেছে, তখন তিনি পড়ে যান এবং ঘাড় ভেঙে গিয়ে মারা যান। এভাবে যিহোবার কথা সত্যি হয়।

শমূয়েল বড়ো হন আর তিনি ইস্রায়েলের শেষ বিচারকর্তা হন। তিনি যখন বৃদ্ধ হয়ে যান, তখন লোকেরা এসে বলে: ‘আমাদের ওপর শাসন করার জন্য একজন রাজাকে মনোনীত করুন।’ শমূয়েল তা করতে চান না, কারণ যিহোবা হলেন তাদের আসল রাজা। কিন্তু, যিহোবা তাকে লোকেদের কথা শুনতে বলেন।