গল্প ৫৯
দায়ূদকে পালাতেই হয়
দায়ূদ গলিয়াৎকে মেরে ফেলার পর, ইস্রায়েলের সেনাবাহিনীর সেনাপতি অব্নের তাকে শৌলের কাছে নিয়ে আসে। শৌল দায়ূদের ওপর খুবই খুশি হন। তিনি তাকে তার সেনাবাহিনীর একজন প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেন এবং তাকে রাজপ্রাসাদে থাকতে দেন।
পরে, সৈন্যরা যখন পলেষ্টীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করে ফিরে আসে, তখন মহিলারা এই গান গাইতে থাকে: ‘শৌল বধিলেন সহস্র সহস্র আর দায়ূদ বধিলেন অযুত অযুত।’ এতে শৌলের হিংসা হয় কারণ শৌলের চেয়ে দায়ূদকে বেশি সম্মান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, শৌলের ছেলে যোনাথন হিংসা করেন না। তিনি দায়ূদকে অনেক ভালোবাসেন আর দায়ূদও যোনাথনকে ভালোবাসেন। তাই, তারা দু-জন দু-জনের কাছে প্রতিজ্ঞা করে যে, তারা আজীবন বন্ধু থাকবে।
দায়ূদ খুব ভালো বীণা বাজাতে পারেন আর শৌল তার বাজানো সুর অনেক পছন্দ করেন। কিন্তু একদিন, হিংসার কারণে শৌল একটা ভয়ানক কাজ করে ফেলেন। দায়ূদ যখন বীণা বাজাতে থাকে, তখন শৌল একটা বর্শা হাতে নিয়ে এই বলে ছুড়ে মারে: ‘আমি দায়ূদকে দেওয়ালে গেঁথে ফেলব!’ কিন্তু, দায়ূদ নীচু হয়ে যান আর সেই বর্শা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরে, শৌল আবারও দায়ূদকে বর্শা ছুড়ে মারেন কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হন। তাই, দায়ূদ বুঝতে পারেন যে, তাকে সতর্ক থাকতে হবে।
তোমার কি মনে আছে, শৌল কী প্রতিজ্ঞা করেছিলেন? তিনি বলেছিলেন, যে-ব্যক্তি গলিয়াৎকে মেরে ফেলতে পারবে, তিনি তাকে তার মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেবেন। অবশেষে শৌল দায়ূদকে বলেন যে, দায়ূদ তার মেয়ে মীখলকে পাবে, কিন্তু তার আগে তাকে এক-শো জন পলেষ্টীয় শত্রুকে মারতে হবে। একটু ভেবে দেখো! শৌল আসলে আশা করেন যে, পলেষ্টীয়রা দায়ূদকে মেরে ফেলবে। কিন্তু, তারা সেটা করতে পারে না আর তাই শৌল তার মেয়ের সঙ্গে দায়ূদের বিয়ে দেন।
শৌল একদিন যোনাথন ও তার সমস্ত দাসকে বলেন যে, তিনি দায়ূদকে মেরে ফেলতে চান। কিন্তু যোনাথন তার বাবাকে বলেন: ‘দায়ূদকে আঘাত করবেন না। সে তো আপনার প্রতি কখনোই কোনো অন্যায় আচরণ করেনি। বরং, সে যা-কিছু করেছে, তার ফলে আপনার অনেক সাহায্য হয়েছে। সে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গলিয়াৎকে মেরেছিল আর আপনি তা দেখে অনেক আনন্দিত হয়েছিলেন।’
শৌল তার ছেলের কথা শোনেন এবং দায়ূদকে আঘাত করবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেন। দায়ূদকে ফিরিয়ে আনা হয় আর তিনি আবারও শৌলের বাড়িতে আগের মতোই তার কাজ করতে থাকেন। কিন্তু একদিন, দায়ূদ যখন বীণা বাজাতে থাকে, তখন শৌল আবারও দায়ূদের দিকে বর্শা ছুড়ে মারেন। দায়ূদ নীচু হয়ে যান আর সেই বর্শা দেওয়ালে আঘাত করে। এ-বার নিয়ে তৃতীয় বার হল! দায়ূদ বুঝতে পারেন যে, তাকে পালাতেই হবে!
সেই দিন দায়ূদ নিজের ঘরে ফিরে যান। কিন্তু, শৌল তাকে মেরে ফেলার জন্য কয়েক জন লোককে পাঠান। মীখল তার বাবা যা করতে যাচ্ছেন, সেই বিষয়ে জানতে পারেন। তাই, তিনি তার স্বামীকে বলেন: ‘তুমি যদি আজ রাতেই পালিয়ে না যাও, তাহলে আগামীকাল মারা পড়বে।’ সেই রাতে মীখল দায়ূদকে একটা জানালা দিয়ে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন। প্রায় সাত বছর ধরে দায়ূদকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালিয়ে বেড়াতে হয়, যাতে শৌল তাকে খুঁজে না পান।