সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

গল্প ৮৩

যিরূশালেমের প্রাচীর

যিরূশালেমের প্রাচীর

দেখো তো এখানে কত রকমের কাজ চলছে। ইস্রায়েলীয়রা যিরূশালেমের প্রাচীর নির্মাণ করার কাজে ব্যস্ত। এক-শো বাহান্ন বছর আগে যখন রাজা নবূখদ্‌নিৎসর যিরূশালেম ধ্বংস করেছিলেন, তখন তিনি সেই প্রাচীর ভেঙে ফেলেছিলেন এবং নগরের দ্বার পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। ইস্রায়েলীয়রা প্রথম যখন বাবিল থেকে দেশে ফিরে এসেছিল, তখন তারা এই প্রাচীর পুনর্নির্মাণ করেনি।

তোমার কী মনে হয়, এত বছর ধরে তাদের নগরের চারপাশে কোনো প্রাচীর না থাকায় এখানে লোকেদের বসবাস করতে কেমন লেগেছিল? তারা নিরাপদ বোধ করেনি। তাদের শত্রুরা খুব সহজেই এসে তাদের আক্রমণ করতে পারত। কিন্তু, এখন নহিমিয় নামে এই ব্যক্তি অবশেষে লোকেদেরকে সেই প্রাচীর আবারও নির্মাণ করতে সাহায্য করছেন। তুমি কি জান, নহিমিয় কে? নহিমিয় হলেন একজন ইস্রায়েলীয়, যিনি সেই শূশন নগর থেকে এসেছেন, যেখানে মর্দখয় ও ইষ্টের বসবাস করেন। নহিমিয় রাজপ্রাসাদে কাজ করতেন আর তাই তিনি মর্দখয় ও রানি ইষ্টেরের ভালো বন্ধু ছিলেন। তবে, বাইবেল এটা বলে না যে, নহিমিয় ইষ্টেরের স্বামী রাজা অহশ্বেরশের জন্য কাজ করতেন। বরং, তিনি তার পরবর্তী রাজা অর্থাৎ রাজা অর্তক্ষস্তের জন্য কাজ করতেন।

মনে করে দেখো, অর্তক্ষস্ত হলেন সেই ভালো রাজা, যিনি ইষ্রাকে যিরূশালেমে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক টাকাপয়সা দিয়েছিলেন, যাতে যিহোবার মন্দির মেরামত করা যায়। কিন্তু, ইষ্রা সেই নগরের ভেঙে যাওয়া প্রাচীর নির্মাণ করেননি। চলো দেখি, কীভাবে নহিমিয় সেই কাজটা করলেন।

অর্তক্ষস্ত ইষ্রাকে মন্দির মেরামতের জন্য টাকাপয়সা দেওয়ার পর তেরো বছর পার হয়ে গিয়েছে। নহিমিয় এখন রাজা অর্তক্ষস্তের প্রধান পানপাত্রবাহক। তার মানে হল, তিনি রাজাকে দ্রাক্ষারস পরিবেশন করেন আর এই বিষয়টা নিশ্চিত করেন, যেন কেউ রাজাকে বিষ খাওয়ানোর চেষ্টা করতে না পারে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক কাজ।

একদিন, নহিমিয়ের ভাই হনানি ও অন্যান্য লোক ইস্রায়েল দেশ থেকে নহিমিয়ের সঙ্গে দেখা করতে আসে। তারা নহিমিয়কে ইস্রায়েলীয়রা যে-সমস্যা ভোগ করছিল, সেই বিষয়ে এবং যিরূশালেমের প্রাচীর এখনও কেমন ভগ্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে, সেই বিষয়ে জানায়। এতে নহিমিয় খুবই বিষণ্ণ হয়ে পড়েন এবং তিনি যিহোবার কাছে সেই বিষয়ে প্রার্থনা করেন।

একদিন রাজা লক্ষ করেন যে, নহিমিয় বিষণ্ণ হয়ে আছেন আর তাই তিনি জিজ্ঞেস করেন: ‘তোমাকে বিষণ্ণ দেখাচ্ছে কেন?’ নহিমিয় তাকে বলেন যে, এর কারণ হল যিরূশালেমের দুরবস্থা আর এর প্রাচীর ভেঙে পড়েছে। ‘তুমি কী চাও?’ রাজা জিজ্ঞেস করেন।

‘আমাকে যিরূশালেমে যেতে দিন, যাতে আমি সেই প্রাচীর আবারও নির্মাণ করতে পারি’ নহিমিয় বলেন। রাজা অর্তক্ষস্ত অনেক দয়ালু ব্যক্তি। তিনি বলেন যে, নহিমিয় যেতে পারেন আর তিনি নহিমিয়কে নির্মাণকাজের জন্য কিছু কাঠ দিয়েও সাহায্য করেন। যিরূশালেমে এসে পৌঁছানোর পর পরই নহিমিয় লোকেদেরকে তার পরিকল্পনা সম্বন্ধে বলেন। সেই পরিকল্পনাটা তাদের পছন্দ হয় আর তারা বলে: ‘চলো, আমরা নির্মাণ কাজ শুরু করি।’

ইস্রায়েলীয়দের শত্রুরা যখন দেখে যে, প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে, তখন তারা বলে: ‘আমরা ওপরে গিয়ে তাদের মেরে ফেলব আর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেব।’ কিন্তু, নহিমিয় সেই বিষয়ে শুনতে পান আর তিনি কর্মীদের হাতে খড়্গ ও বর্শা দেন। আর তিনি বলেন: ‘আমাদের শত্রুদের ভয় পেও না। তোমাদের ভাইদের জন্য, তোমাদের সন্তানদের জন্য, তোমাদের স্ত্রীদের জন্য আর তোমাদের ঘরবাড়ির জন্য যুদ্ধ কোরো।’

লোকেরা অনেক সাহসী। তারা রাতদিন তাদের অস্ত্রশস্ত্র তৈরি রেখে নির্মাণকাজ চালিয়ে যায়। তাই, মাত্র বাহান্ন দিনের মধ্যেই প্রাচীর নির্মাণ শেষ হয়ে যায়। এখন লোকেরা নগরের ভিতরে নিরাপদ বোধ করতে পারে। নহিমিয় এবং ইষ্রা লোকেদের ঈশ্বরের নিয়ম সম্বন্ধে শেখায় আর লোকেরা আনন্দে থাকে।

তবে, ইস্রায়েলীয়দের বন্দি হিসেবে বাবিলে নিয়ে যাওয়ার আগে যেরকম পরিস্থিতি ছিল, এখনও পর্যন্ত সেইরকম পরিস্থিতি ফিরে আসেনি। পারস্যের রাজা লোকেদের শাসন করেন এবং তাদেরকে তার সেবা করতে হয়। কিন্তু, যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, তিনি একজন নতুন রাজাকে পাঠাবেন, যে-রাজা লোকেদের জন্য শান্তি নিয়ে আসবেন। সেই রাজা কে? তিনি কীভাবেই-বা পৃথিবীতে শান্তি নিয়ে আসবেন? এই বিষয়ে আরও কিছু জানার আগে প্রায় চার-শো বছর পার হয়ে যায়। তারপর, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিশুটির জন্ম হয়। কিন্তু, সেটা অন্য এক কাহিনি।