অধ্যায় বারো
ঈশ্বরকে খুশি করে এমনভাবে জীবনযাপন করা
-
কীভাবে আপনি ঈশ্বরের বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন?
-
কোন দিক দিয়ে শয়তানের উত্থাপিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা আপনাকেও জড়িত করে?
-
কোন আচরণ যিহোবাকে অসন্তুষ্ট করে?
-
কীভাবে আপনি ঈশ্বরকে খুশি করে এমনভাবে জীবনযাপন করতে পারেন?
১, ২. কয়েক জন মানুষের উদাহরণ দিন, যাদের যিহোবা তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে দেখতেন।
কোন ধরনের ব্যক্তিকে আপনি একজন বন্ধু হিসেবে বেছে নেবেন? খুব সম্ভবত আপনি এমন কারো সাহচর্য পেতে চাইবেন, যার আপনার মতো একইরকম দৃষ্টিভঙ্গি, আগ্রহ এবং মূল্যবোধ রয়েছে। আর আপনি সেইরকম একজন ব্যক্তির প্রতি আকৃষ্ট হবেন, যার সততা এবং দয়ার মতো চমৎকার গুণাবলি রয়েছে।
২ ইতিহাসজুড়ে, ঈশ্বর নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে বেছে নিয়েছেন। উদাহরণ স্বরূপ, যিহোবা অব্রাহামকে তাঁর বন্ধু বলেছিলেন। (পড়ুন, যিশাইয় ৪১:৮; যাকোব ২:২৩.) ঈশ্বর দায়ূদকে “আমার মনের মত লোক” হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন কারণ দায়ূদ সেই ধরনের ব্যক্তি ছিলেন, যাকে যিহোবা ভালোবাসেন। (প্রেরিত ১৩:২২) আর ভাববাদী দানিয়েলকে যিহোবা “অতিশয় প্রীতি-পাত্র” হিসেবে দেখেছিলেন।—দানিয়েল ৯:২৩.
৩. কেন যিহোবা নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে তাঁর বন্ধু হিসেবে বেছে নেন?
৩ যিহোবা কেন অব্রাহাম, দায়ূদ ও দানিয়েলকে তাঁর বন্ধু হিসেবে দেখেছিলেন? তিনি অব্রাহামকে বলেছিলেন: “তুমি আমার বাক্যে অবধান করিয়াছ।” (আদিপুস্তক ২২:১৮) অতএব, যিহোবা সেই ব্যক্তিদের নিকটবর্তী হন, যারা নম্রভাবে তা-ই করে থাকে, যা তিনি তাদেরকে করতে বলেন। “আমার রবে কর্ণপাত কর,” তিনি ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন, “তাহাতে আমি তোমাদের ঈশ্বর হইব, ও তোমরা আমার প্রজা হইবে।” (যিরমিয় ৭:২৩) যদি আপনি যিহোবার রবে কর্ণপাত করেন বা তাঁর বাধ্য থাকেন, তা হলে আপনিও তাঁর বন্ধু হয়ে উঠতে পারেন!
যিহোবা তাঁর বন্ধুদের শক্তিশালী করেন
৪, ৫. কীভাবে যিহোবা তাঁর লোকেদের পক্ষে তাঁর শক্তি দেখান?
৪ ঈশ্বরের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা বলতে কী বোঝায়, তা চিন্তা করুন। বাইবেল বলে যে, যিহোবার “প্রতি যাহাদের অন্তঃকরণ একাগ্র, তাহাদের পক্ষে আপনাকে বলবান দেখাইবার জন্য” তিনি সুযোগ খুঁজছেন। (২ বংশাবলি ১৬:৯) কীভাবে যিহোবা আপনার পক্ষে তাঁর বল বা শক্তি দেখাতে পারেন? গীতসংহিতা ৩২:৮ পদে একটা উপায় তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে আমরা পড়ি: “আমি [সদাপ্রভু] তোমাকে বুদ্ধি দিব, ও তোমার গন্তব্য পথ দেখাইব, তোমার উপরে দৃষ্টি রাখিয়া তোমাকে পরামর্শ দিব।”
৫ যিহোবার চিন্তার কি এক উষ্ণ অভিব্যক্তি! তিনি আপনাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন এবং তা প্রয়োগ করার সময় আপনাকে রক্ষা করবেন। আপনার প্রলোভন ও পরীক্ষাগুলোকে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য ঈশ্বর আপনাকে সাহায্য করতে চান। (পড়ুন, গীতসংহিতা ৫৫:২২.) তাই, আপনি যদি একাগ্র হৃদয়ে যিহোবার সেবা করেন, তা হলে আপনি গীতরচকের মতো দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে পারেন, যিনি বলেছিলেন: “আমি সদাপ্রভুকে নিয়ত সম্মুখে রাখিয়াছি; তিনি ত আমার দক্ষিণে, আমি বিচলিত হইব না।” (গীতসংহিতা ১৬:৮; ৬৩:৮) হ্যাঁ, যিহোবা আপনাকে এমনভাবে জীবনযাপন করতে সাহায্য করতে পারেন, যা তাঁকে খুশি করে। কিন্তু আপনি যেমন জানেন যে, ঈশ্বরের একজন শত্রু রয়েছে, যে আপনাকে তা করা থেকে বিরত করতে চায়।
শয়তানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা
৬. মানুষের বিষয়ে শয়তানের অভিযোগ কী ছিল?
৬ এই বইয়ের ১১ অধ্যায় ব্যাখ্যা করেছে যে, কীভাবে শয়তান দিয়াবল ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। শয়তান ঈশ্বরকে মিথ্যা বলার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিল এবং পরোক্ষভাবে ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, কোনটা সঠিক ও কোনটা ভুল সেই বিষয়ে আদম ও হবাকে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে না দিয়ে যিহোবা অন্যায্য কাজ করেছিলেন। আদম ও হবা পাপ করার পর এবং পৃথিবী যখন তাদের বংশধর দিয়ে পূর্ণ হতে শুরু করেছিল, তখন শয়তান সমস্ত মানুষের অভিপ্রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। ‘লোকেরা ঈশ্বরকে ভালোবাসে বলে তাঁর সেবা করে না,’ শয়তান অভিযোগ করেছিল। ‘আমাকে একবার সুযোগ দাও, আমি যেকাউকে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে নিয়ে যেতে পারব।’ ইয়োব নামে একজন ব্যক্তির বিবরণ দেখায় যে, শয়তান এইরকমই ভেবেছিল। ইয়োব কে ছিলেন আর শয়তানের উত্থাপিত প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে তিনি কীভাবে জড়িত ছিলেন?
৭, ৮. (ক) কী ইয়োবকে সেই সময়ের মানুষদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য করে তুলেছিল? (খ) কীভাবে শয়তান ইয়োবের অভিপ্রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল?
৭ ইয়োব প্রায় ৩,৬০০ বছর আগে বেঁচে ছিলেন। তিনি একজন ভালো লোক ছিলেন কারণ যিহোবা বলেছিলেন: “তাহার তুল্য সিদ্ধ [“নির্দোষ,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] ও সরল, ঈশ্বরভয়শীল ও কুক্রিয়াত্যাগী লোক পৃথিবীতে কেহই নাই।” (ইয়োব ১:৮) ইয়োব ঈশ্বরের সন্তোষজনক ব্যক্তি ছিলেন।
৮ ঈশ্বরকে সেবা করার পিছনে ইয়োবের অভিপ্রায় নিয়ে শয়তান প্রশ্ন তুলেছিল। দিয়াবল যিহোবাকে বলেছিল: “তুমি [ইয়োবের] চারিদিকে, তাহার বাটীর চারিদিকে ও তাহার সর্ব্বস্বের চারিদিকে কি বেড়া দেও নাই? তুমি তাহার হস্তের কার্য্য আশীর্ব্বাদযুক্ত করিয়াছ, এবং তাহার পশুধন দেশময় ব্যাপিয়াছে। কিন্তু তুমি একবার হস্ত বিস্তার করিয়া তাহার সর্ব্বস্ব স্পর্শ কর, তবে সে অবশ্য তোমার সম্মুখেই তোমাকে জলাঞ্জলি দিবে।”—ইয়োব ১:১০, ১১.
৯. যিহোবা কীভাবে শয়তানের প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তর দিয়েছিলেন এবং কেন?
৯ এভাবে শয়তান দাবি করেছিল যে, ইয়োব বিনিময়ে কিছু পাচ্ছিলেন বলেই ঈশ্বরকে সেবা করছিলেন। দিয়াবল এও অভিযোগ করেছিল যে, ইয়োবকে যদি পরীক্ষা করা হয়, তা হলে তিনি ঈশ্বরের প্রতি বিমুখ হবেন। কীভাবে যিহোবা শয়তানের প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তর দিয়েছিলেন? যেহেতু সেই বিচার্য বিষয়ের সঙ্গে ইয়োবের অভিপ্রায় জড়িত ছিল, তাই যিহোবা ইয়োবকে পরীক্ষা করার জন্য শয়তানকে অনুমতি দিয়েছিলেন। এভাবে, ঈশ্বরের প্রতি ইয়োবের ভালোবাসা—অথবা ভালোবাসার অভাব—স্পষ্টভাবে দেখা যাবে।
ইয়োবকে পরীক্ষা করা হয়
১০. ইয়োবের উপর কোন পরীক্ষাগুলো এসেছিল এবং তিনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?
১০ শীঘ্রই শয়তান নানাভাবে ইয়োবকে পরীক্ষা করে। ইয়োবের কিছু পশু চুরি হয়েছিল এবং অন্যগুলোকে মেরে ফেলা হয়েছিল। তার অধিকাংশ দাস-দাসী হত হয়েছিল। এর ফলে, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে কষ্ট আসে। আরও দুঃখজনক ঘটনা ঘটে যখন ইয়োবের দশ জন সন্তান একটা ঝড়ের কবলে পড়ে মারা যায়। কিন্তু, এই মারাত্মক ঘটনাগুলো সত্ত্বেও, “ইয়োব পাপ করিলেন না, এবং ঈশ্বরের প্রতি অবিবেচনার দোষারোপ করিলেন না।”—ইয়োব ১:২২.
১১. (ক) ইয়োবের সম্বন্ধে শয়তান দ্বিতীয় কোন অভিযোগ করেছিল এবং যিহোবা কীভাবে সাড়া দিয়েছিলেন? (খ) ইয়োব তার যন্ত্রণাদায়ক রোগের প্রতি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?
১১ শয়তান হাল ছেড়ে দেয়নি। সে নিশ্চয়ই ভেবেছিল যে, যদিও ইয়োব তার ধনসম্পদ, দাস-দাসী ও সন্তান হারানোর ব্যথা সহ্য করতে পেরেছিলেন, কিন্তু তিনি যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তা হলে তিনি ঈশ্বরের প্রতি বিমুখ হবেন। যিহোবা শয়তানকে সুযোগ দিয়েছিলেন যার ফলে সে ইয়োবকে এক জঘন্য, যন্ত্রণাদায়ক রোগের দ্বারা আঘাত করে। কিন্তু, এমনকী এটাও ইয়োবকে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলতে পরিচালিত করেনি। এর পরিবর্তে, তিনি দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন: “প্রাণ থাকিতে আমি আপন সিদ্ধতা [“বিশ্বস্ততা,” NW] ত্যাগ করিব না।”—ইয়োব ২৭:৫.
১২. কীভাবে ইয়োব দিয়াবলের প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তর দিয়েছিলেন?
১২ ইয়োব জানতেন না যে, তার সমস্যাগুলোর কারণ ছিল শয়তান। যিহোবার সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত দিয়াবলের উত্থাপিত প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে বিস্তারিত না জানায় ইয়োব ভয় পেয়েছিলেন যে, ঈশ্বরই তাঁর সমস্যাগুলোর উৎস ছিলেন কি না। (ইয়োব ৬:৪; ১৬:১১-১৪) তা সত্ত্বেও, তিনি যিহোবার প্রতি তাঁর বিশ্বস্ততা বজায় রেখেছিলেন। আর শয়তানের এই দাবি যে, ইয়োব স্বার্থপর কারণগুলোর জন্য ঈশ্বরকে সেবা করছিলেন, তা ইয়োবের বিশ্বস্ত থাকার দ্বারা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছিল!
১৩. ইয়োব ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার ফলে কী হয়েছিল?
১৩ ইয়োবের বিশ্বস্ততা যিহোবাকে শয়তানের অপমানজনক প্রতিদ্বন্দ্বিতার এক জোরালো উত্তর জুগিয়েছিল। ইয়োব সত্যিই যিহোবার বন্ধু ছিলেন আর তার বিশ্বস্ত পথ বজায় রাখার জন্য ঈশ্বর তাকে পুরস্কৃত করেছিলেন।—ইয়োব ৪২:১২-১৭.
আপনিও যেভাবে জড়িত
১৪, ১৫. কেন আমরা বলতে পারি যে, ইয়োবের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত শয়তানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা সমস্ত মানুষের বেলায় প্রযোজ্য?
১৪ ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রাখার ব্যাপারে শয়তানের দ্বারা উত্থাপিত বিচার্য বিষয়টা শুধুমাত্র ইয়োবের বিরুদ্ধেই আনা হয়নি। এতে আপনিও জড়িত। এটা হিতোপদেশ ২৭:১১ পদে স্পষ্টভাবে দেখানো হয়েছে, যেখানে যিহোবার বাক্য বলে: “বৎস, জ্ঞানবান হও; আমার চিত্তকে আনন্দিত কর; তাহাতে যে আমাকে টিট্কারি দেয়, তাহাকে উত্তর দিতে পারিব।” ইয়োবের মৃত্যুর শত শত বছর পরে লেখা এই কথাগুলো দেখায় যে, শয়তান তখনও ঈশ্বরকে টিট্কারি দিচ্ছিল ও তাঁর দাসদের সম্বন্ধে অভিযোগ করছিল। যখন আমরা এমনভাবে জীবনযাপন করি যা যিহোবাকে খুশি করে, তখন আমরা আসলে শয়তানের মিথ্যা অভিযোগগুলোর উত্তর দিতে সাহায্য করি আর এভাবে ঈশ্বরের হৃদয়কে আনন্দিত করি। সেই বিষয়ে আপনি কী মনে করেন? দিয়াবলের মিথ্যা অভিযোগগুলোর উত্তর দেওয়ায় অংশ নেওয়া কি চমৎকার হবে না, এমনকী এর জন্য আপনার জীবনে যদি নির্দিষ্ট কিছু পরিবর্তনও করতে হয়?
১৫ লক্ষ করুন যে, শয়তান বলেছিল: “প্রাণের জন্য লোক সর্ব্বস্ব দিবে।” (ইয়োব ২:৪) “লোক” বলার দ্বারা শয়তান স্পষ্ট করেছিল যে, তার অভিযোগ শুধুমাত্র ইয়োবের বেলায় প্রযোজ্য ছিল না, বরং সমস্ত মানুষের বেলায় প্রযোজ্য। সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। ঈশ্বরের প্রতি আপনার বিশ্বস্ততা নিয়ে শয়তান প্রশ্ন তুলেছে। দিয়াবল দেখতে চায় যে, আপনি ঈশ্বরের অবাধ্য হন এবং যখন নানা সমস্যা আসে, তখন আপনি ধার্মিক পথ পরিত্যাগ করেন। এটা সম্পাদন করার জন্য শয়তান কীভাবে চেষ্টা করতে পারে?
১৬. (ক) কোন পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে শয়তান লোকেদেরকে ঈশ্বরের কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে? (খ) আপনার বিরুদ্ধে দিয়াবল কীভাবে এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করতে পারে?
১৬ দশ অধ্যায়ে যেমন আলোচনা করা হয়েছে, ঈশ্বরের কাছ থেকে লোকেদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় শয়তান বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। একদিকে সে “গর্জ্জনকারী সিংহের ন্যায়” আক্রমণ করে, ‘কাহাকে গ্রাস করিবে, তাহার অন্বেষণ করিয়া বেড়াইতেছে।’ (১ পিতর ৫:৮) তাই, শয়তানের প্রভাব হয়তো দেখা যেতে পারে, যখন বাইবেল অধ্যয়ন করার এবং আপনি যা শিখছেন তা প্রয়োগ করার ব্যাপারে আপনার প্রচেষ্টায় বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন বা অন্যেরা বিরোধিতা করে। a (যোহন ১৫:১৯, ২০) অন্যদিকে, শয়তান “আপনি দীপ্তিময় দূতের বেশ ধারণ করে” বা করে চলছে। (২ করিন্থীয় ১১:১৪) দিয়াবল আপনাকে ভ্রান্ত করার এবং আপনাকে প্রলোভিত করার মাধ্যমে ধার্মিকভাবে জীবনযাপন করা থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সূক্ষ্ম উপায়গুলো ব্যবহার করতে পারে। এ ছাড়া, সে নিরুৎসাহিতাকে ব্যবহার করতে পারে, সম্ভবত আপনাকে এইরকম মনে করাতে পারে যে, আপনি ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার মতো যথেষ্ট যোগ্য নন। (হিতোপদেশ ২৪:১০) শয়তান ‘গর্জ্জনকারী সিংহ’ বা ‘দীপ্তিময় দূত’ যেভাবেই কাজ করুক না কেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা একই রয়ে গিয়েছে: সে বলে যে, আপনি যখন পরীক্ষা বা প্রলোভনগুলোর মুখোমুখি হন, তখন আপনি ঈশ্বরকে সেবা করা বন্ধ করে দেবেন। ইয়োবের মতো আপনি কীভাবে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তর দিতে এবং ঈশ্বরের প্রতি আপনার বিশ্বস্ততা প্রমাণ করতে পারেন?
যিহোবার আজ্ঞার বাধ্য হওয়া
১৭. যিহোবার আজ্ঞাগুলোর বাধ্য হওয়ার প্রধান কারণ কী?
১৭ ঈশ্বরকে খুশি করে এমনভাবে জীবনযাপন করার দ্বারা আপনি শয়তানের প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তর দিতে পারেন। এর সঙ্গে কী জড়িত? বাইবেল উত্তর দেয়: “তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ, ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুকে প্রেম করিবে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৫) ঈশ্বরের প্রতি আপনার ভালোবাসা যতই বৃদ্ধি পাবে, ঈশ্বর আপনার কাছ থেকে যা চান, তা পূরণ করার আকাঙ্ক্ষা দ্বারা আপনি ততই পূর্ণ হবেন। “ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই,” প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন, “যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি।” আপনি যদি আপনার সমস্ত হৃদয় দিয়ে যিহোবাকে ভালোবাসেন, তা হলে আপনি দেখতে পাবেন যে, “তাঁহার আজ্ঞা সকল দুর্ব্বহ নয়।”—১ যোহন ৫:৩.
১৮, ১৯. (ক) যিহোবার আদেশগুলোর কয়েকটা কী? (“ যিহোবা যা ঘৃণা করেন, তা পরিহার করুন” নামক বাক্স দেখুন।) (খ) কীভাবে আমরা জানি যে, ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে খুব বেশি কিছু চান না?
১৮ যিহোবার আজ্ঞাগুলো কী? সেগুলোর কয়েকটার সঙ্গে এমন আচরণ জড়িত, যা আমাদের অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, “ যিহোবা যা ঘৃণা করেন, তা পরিহার করুন” নামক বাক্সটা দেখুন। সেখানে আপনি তালিকাবদ্ধ কিছু আচরণ দেখতে পাবেন, যেগুলোকে বাইবেল স্পষ্টভাবে নিন্দা করে। এক ঝলক তাকিয়ে, তালিকাবদ্ধ কিছু কিছু অভ্যাস হয়তো ততটা খারাপ বলে মনে না-ও হতে পারে। কিন্তু, উল্লেখিত শাস্ত্রপদগুলো নিয়ে ধ্যান করার পর, আপনি সম্ভবত যিহোবার নিয়মগুলোর পিছনে যে-প্রজ্ঞা রয়েছে, তা দেখতে পাবেন। আপনার আচরণে বিভিন্ন পরিবর্তন করা হয়তো, এযাবৎ মুখোমুখি হয়েছেন এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়ো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। তা সত্ত্বেও, ঈশ্বরকে খুশি করে এমনভাবে জীবনযাপন করা প্রচুর পরিতৃপ্তি ও সুখ নিয়ে আসে। (যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮) আর এটা এমন কিছু, যা আপনার নাগালের মধ্যেই রয়েছে। কীভাবে আমরা তা জানি?
১৯ আমরা যতখানি করতে পারি তার চেয়ে বেশি যিহোবা কখনোই চান না। (পড়ুন, দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:১১-১৪.) তিনি আমাদের সুপ্ত ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতাগুলোকে আমাদের চেয়ে আরও ভালোভাবে জানেন। (গীতসংহিতা ১০৩:১৪) অধিকন্তু, তাঁর বাধ্য থাকার জন্য যিহোবা আমাদের শক্তি দিতে পারেন। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “ঈশ্বর বিশ্বাস্য; তিনি তোমাদের প্রতি তোমাদের শক্তির অতিরিক্ত পরীক্ষা ঘটিতে দিবেন না, বরং পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে রক্ষার পথও করিয়া দিবেন, যেন তোমরা সহ্য করিতে পার।” (১ করিন্থীয় ১০:১৩) আপনাকে সহ্য করতে সাহায্য করার জন্য যিহোবা এমনকী “পরাক্রমের উৎকর্ষ” জোগাতে পারেন। (২ করিন্থীয় ৪:৭) অনেক অনেক পরীক্ষা সহ্য করার পর পৌল বলতে পেরেছিলেন: “যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁহাতে আমি সকলই করিতে পারি।”—ফিলিপীয় ৪:১৩.
ঈশ্বরীয় গুণাবলি গড়ে তোলা
২০. কোন ঈশ্বরীয় গুণাবলি আপনার গড়ে তোলা উচিত এবং কেন এগুলো গুরুত্বপূর্ণ?
২০ অবশ্য, যিহোবাকে খুশি করার জন্য তিনি যে-বিষয়গুলোকে ঘৃণা করেন, সেগুলোকে এড়িয়ে চলার চেয়েও আরও বেশি কিছু জড়িত। আপনাকে সেইসমস্ত বিষয়ও ভালোবাসতে হবে, যা তিনি ভালোবাসেন। (রোমীয় ১২:৯) আপনি কি সেই ব্যক্তিদের প্রতি আকৃষ্ট হন না, যারা আপনার দৃষ্টিভঙ্গি, আগ্রহ ও মূল্যবোধগুলোর সঙ্গে একমত পোষণ করে? যিহোবাও হন। তাই, সেই বিষয়গুলোকে ভালোবাসতে শিখুন, যেগুলোকে যিহোবা প্রিয় বলে মনে করেন। এগুলোর কয়েকটা গীতসংহিতা অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে আমরা সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে পড়ি, যাদেরকে ঈশ্বর তাঁর বন্ধু হিসেবে গণ্য করেন। (পড়ুন, ১৫গীতসংহিতা ১৫:১-৫.) যিহোবার বন্ধুরা সেই গুণাবলি প্রদর্শন করে, যেগুলোকে বাইবেল “আত্মার ফল” বলে থাকে। এটি সেই গুণাবলিকে অন্তর্ভুক্ত করে, যেমন “প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমন।”—গালাতীয় ৫:২২, ২৩.
২১. কী আপনাকে ঈশ্বরীয় গুণাবলি গড়ে তুলতে সাহায্য করবে?
২১ নিয়মিত বাইবেল পড়া ও অধ্যয়ন করা আপনাকে ঈশ্বরীয় গুণাবলি গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। আর ঈশ্বর যা চান তা শেখা আপনাকে ঈশ্বরের চিন্তাভাবনার সঙ্গে আপনার চিন্তাধারার মিল রাখতে সাহায্য করবে। (যিশাইয় ৩০:২০, ২১) যিহোবার প্রতি আপনার ভালোবাসাকে আপনি যত বেশি শক্তিশালী করবেন, ঈশ্বরকে খুশি করে এমনভাবে জীবনযাপন করার বিষয়ে আপনার আকাঙ্ক্ষা তত বৃদ্ধি পাবে।
২২. ঈশ্বরকে খুশি করে এমনভাবে জীবনযাপন করলে আপনি কী সম্পাদন করবেন?
২২ যিহোবাকে খুশি করে এমনভাবে জীবনযাপন করার জন্য প্রচেষ্টার প্রয়োজন। বাইবেল আপনার জীবন পরিবর্তন করাকে আপনার পুরোনো মনুষ্য বা ব্যক্তিত্বকে পরিত্যাগ করার ও নতুন ব্যক্তিত্বকে পরিধান করার সঙ্গে তুলনা করে। (কলসীয় ৩:৯, ১০) কিন্তু, যিহোবার আজ্ঞাগুলো সম্বন্ধে গীতরচক লিখেছিলেন: “তাহা পালন করিলে মহাফল হয়।” (গীতসংহিতা ১৯:১১) আপনিও দেখতে পাবেন যে, ঈশ্বরকে খুশি করে এমনভাবে জীবনযাপন করা প্রচুর উপকার নিয়ে আসে। তা করার দ্বারা আপনি শয়তানের প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তর দেবেন এবং যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করবেন!
a এর মানে এই নয় যে, যারা আপনার বিরোধিতা করে তারা ব্যক্তিগতভাবে শয়তানের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু, শয়তান হচ্ছে এই যুগ বা বিধিব্যবস্থার দেব এবং সমগ্র জগৎ তার ক্ষমতাধীনে রয়েছে। (২ করিন্থীয় ৪:৪; ১ যোহন ৫:১৯) তাই আমরা আশা করতে পারি যে, ধার্মিকভাবে জীবনযাপন করা লোকেদের কাছে এক অপ্রিয় পথ হবে এবং কেউ কেউ আপনার বিরোধিতা করবে।