অধ্যায় পাঁচ
মুক্তির মূল্য—ঈশ্বরের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার
-
মুক্তির মূল্য কী?
-
কীভাবে এটা জোগানো হয়েছিল?
-
আপনার জন্য এটা কী অর্থ রাখতে পারে?
-
কীভাবে আপনি দেখাতে পারেন যে, এটার প্রতি আপনার উপলব্ধি রয়েছে?
১, ২. (ক) ব্যক্তিগতভাবে কখন আপনার কাছে একটা উপহারের প্রচুর মূল্য থাকে? (খ) কেন বলা যেতে পারে যে, আপনার পাওয়া উপহারগুলোর মধ্যে মুক্তির মূল্য হচ্ছে সবচেয়ে মূল্যবান?
আপনার কাছে এযাবৎ পাওয়া সর্বশ্রেষ্ঠ উপহারটা কী? একটা উপহার গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার জন্য সেটা যে দামি হতে হবে এমন নয়। বস্তুতপক্ষে, কোনো উপহারের প্রকৃত মূল্য সবসময় টাকা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। বরং, একটা উপহার যখন আপনাকে আনন্দ দেয় ও আপনার জীবনের এক প্রকৃত প্রয়োজনকে মেটায়, তখন ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছে এর প্রচুর মূল্য থাকে।
২ আপনার কাঙ্ক্ষিত অনেক উপহারের মধ্যে এমন একটা উপহার রয়েছে, যা অন্য সবগুলো থেকে অসাধারণ। এটা মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের কাছ থেকে একটা উপহার। যিহোবা আমাদের অনেক কিছু দিয়েছেন কিন্তু আমাদেরকে দেওয়া তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ উপহারটা হচ্ছে, তাঁর পুত্র যিশু খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান। (পড়ুন, মথি ২০:২৮.) এই অধ্যায়ে আমরা দেখতে পাব যে, মুক্তির মূল্য সম্ভবত আপনার পাওয়া উপহারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান কারণ এটা আপনার জন্য অবর্ণনীয় সুখ নিয়ে আসতে এবং আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনগুলো মেটাতে পারে। মুক্তির মূল্য প্রকৃতপক্ষেই আপনার জন্য যিহোবার প্রেমের সর্বশ্রেষ্ঠ অভিব্যক্তি।
মুক্তির মূল্য কী?
৩. মুক্তির মূল্য কী আর এই মূল্যবান উপহারকে উপলব্ধি করার জন্য আমাদের কী বুঝতে হবে?
৩ সহজ কথায়, মুক্তির মূল্য হচ্ছে মানবজাতিকে পাপ ও মৃত্যু থেকে উদ্ধার বা রক্ষা করার জন্য যিহোবার উপায়। (ইফিষীয় ১:৭) বাইবেলের এই শিক্ষার অর্থটা বোঝার জন্য এদন উদ্যানে যা ঘটেছিল, তা নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে। পাপ করার ফলে আদম যা হারিয়েছিল, তা যদি আমরা বুঝতে পারি, একমাত্র তা হলেই আমরা উপলব্ধি করতে পারব যে, কেন মুক্তির মূল্য আমাদের জন্য এত মূল্যবান এক উপহার।
৪. আদমের জন্য সিদ্ধ মানবজীবনের অর্থ কী ছিল?
৪ যিহোবা যখন আদমকে সৃষ্টি করেছিলেন, তখন তিনি তাকে প্রকৃতই মূল্যবান কিছু—সিদ্ধ মানবজীবন—দান করেছিলেন। আদমের জন্য সেটার অর্থ কী ছিল, তা বিবেচনা করুন। সিদ্ধ দেহ ও মন দিয়ে তৈরি হওয়ায় তিনি কখনোই অসুস্থ হতেন না, বৃদ্ধ হতেন না কিংবা মারা যেতেন না। এক সিদ্ধ মানুষ হিসেবে, যিহোবার সঙ্গে তার এক বিশেষ সম্পর্ক ছিল। বাইবেল বলে যে, আদম “ঈশ্বরের পুত্ত্র” ছিলেন। (লূক ৩:৩৮) তাই, যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে আদম এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উপভোগ করতেন, ঠিক যেমন একজন প্রেমময় বাবার সঙ্গে তার ছেলে উপভোগ করে। যিহোবা তাঁর পার্থিব পুত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, আদমকে পরিতৃপ্তিদায়ক কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন এবং তার কাছ থেকে যা আশা করা হয়েছিল, তা তাকে জানিয়েছিলেন।—আদিপুস্তক ১:২৮-৩০; ২:১৬, ১৭.
৫. বাইবেল যখন বলে যে, আদম “ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তিতেই” নির্মিত হয়েছিলেন, তখন এটি কী বোঝায়?
৫ আদম “ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তিতেই” নির্মিত হয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ১:২৭) তার অর্থ এই ছিল না যে, আদম দেখতে ঈশ্বরের মতো ছিলেন। এই বইয়ের ১ অধ্যায় থেকে আমরা যেমন শিখেছি যে, যিহোবা হলেন এক অদৃশ্য আত্মা। (যোহন ৪:২৪) তাই, যিহোবার রক্তমাংসের কোনো দেহ নেই। ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে নির্মিত হওয়ার অর্থ ছিল যে, আদমকে ঈশ্বরের মতো গুণাবলি দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছিল, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রেম, প্রজ্ঞা, ন্যায়বিচার ও শক্তি। আদম আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক দিয়ে তার পিতার মতো ছিলেন আর সেটা হল, তিনি স্বাধীন ইচ্ছার অধিকারী ছিলেন। তাই, আদম এমন কোনো যন্ত্রের মতো ছিলেন না, যা শুধুমাত্র তা-ই করতে পারত যেটা করার জন্য সেটা তৈরি করা বা সেটাতে প্রোগ্রাম করা হয়েছিল। এর পরিবর্তে, তিনি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তগুলো নিতে, সঠিক ও ভুলের মধ্যে বাছাই করতে পারতেন। তিনি যদি ঈশ্বরের বাধ্য থাকাকে বেছে নিতেন, তা হলে তিনি পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকতে পারতেন।
৬. আদম যখন ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছিলেন, তখন তিনি কী হারিয়েছিলেন এবং তার বংশধররা কীভাবে প্রভাবিত হয়েছিল?
৬ অতএব এটা স্পষ্ট যে, আদম যখন ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছিলেন এবং মৃত্যুদণ্ড পেয়েছিলেন, তখন তাকে খুবই বড়ো এক মূল্য দিতে হয়েছিল। তার পাপের কারণে তাকে তার সিদ্ধ মানবজীবন ও এর সমস্ত আশীর্বাদ হারাতে হয়েছিল। (আদিপুস্তক ৩:১৭-১৯) দুঃখের বিষয় যে, আদম শুধুমাত্র তার নিজের এই মূল্যবান জীবনই হারাননি, কিন্তু সেইসঙ্গে তার ভবিষ্যৎ বংশধরদের জীবনও হারিয়েছিলেন। ঈশ্বরের বাক্য বলে: “এক মনুষ্য [আদম] দ্বারা পাপ, পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল; আর এই প্রকারে মৃত্যু সমুদয় মনুষ্যের কাছে উপস্থিত হইল, কেননা সকলেই পাপ করিল।” (রোমীয় ৫:১২) হ্যাঁ, আমরা সকলেই উত্তরাধিকারসূত্রে আদমের কাছ থেকে পাপ পেয়েছি। তাই বাইবেল বলে যে, তিনি নিজেকে ও তার বংশধরকে পাপ এবং মৃত্যুর দাসত্বে ‘বিক্রী’ করেছিলেন। (রোমীয় ৭:১৪) আদম ও হবার জন্য কোনো আশাই ছিল না কারণ তারা স্বেচ্ছায় ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়া বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু, তাদের বংশধরদের সম্বন্ধে কী বলা যায়, যার অন্তর্ভুক্ত আমরাও?
৭, ৮. মুক্তির মূল্যের সঙ্গে মূলত কোন দুটো বিষয় জড়িত?
৭ যিহোবা মুক্তির মূল্যের মাধ্যমে মানবজাতিকে উদ্ধার করার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন। মুক্তির মূল্য কী? মুক্তির মূল্যের ধারণায় মূলত দুটো বিষয় জড়িত। প্রথমত, মুক্তির মূল্য হচ্ছে কোনো কিছুকে মুক্ত করার বা পুনরায় কেনার জন্য প্রদানকৃত মূল্য। এটাকে সেই পরিশোধকৃত মূল্যের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যা অপহরণ করে রাখা এক সন্তানের বিনিময়ে বাবা-মায়ের কাছ থেকে নেওয়া হয়। দ্বিতীয়ত, মুক্তির মূল্য হচ্ছে সেই মূল্য যা কোনো কিছুর মূল্যকে মেটায় বা পরিশোধ করে। এটা সেই মূল্যের সমরূপ, যা কোনো আঘাতের কারণে ঘটা ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হয়ে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ,
একজন ব্যক্তি যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটান, তা হলে যে-ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটার পুরোপুরি সমরূপ বা সমপরিমাণ মূল্য তাকে পরিশোধ করতে হবে।৮ আমাদের সকলের উপর আদম যে-বিরাট ক্ষতি চাপিয়ে দিয়েছিলেন সেটা পূরণ করা ও আমাদের পাপ ও মৃত্যুর দাসত্ব থেকে মুক্ত করা কীভাবে সম্ভব হবে? আসুন আমরা যিহোবার জোগানো সেই মুক্তির মূল্য সম্বন্ধে এবং এটা আপনার জন্য কী অর্থ রাখতে পারে, তা বিবেচনা করি।
যিহোবা যেভাবে মুক্তির মূল্য জুগিয়েছিলেন
৯. কোন ধরনের মুক্তির মূল্যের প্রয়োজন ছিল?
৯ যেহেতু এক সিদ্ধ মানবজীবন হারিয়ে গিয়েছিল, তাই কোনো অসিদ্ধ মানবজীবনই তা কখনো পুনরায় ক্রয় করতে পারত না। (গীতসংহিতা ৪৯:৭, ৮) এমন এক মুক্তির মূল্যের প্রয়োজন ছিল, যেটা মূল্যের দিক দিয়ে হারিয়ে যাওয়া বিষয়টার সমরূপ। এটা ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া নিখুঁত ন্যায়বিচারের নীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ, যেটা বলে: “প্রাণের পরিশোধ প্রাণ।” (দ্বিতীয় বিবরণ ১৯:২১) তাহলে, আদম যা হারিয়েছিলেন সেই সিদ্ধ মানব প্রাণ বা জীবনের মূল্যকে কী পূরণ করতে পারত? আরেকটা সিদ্ধ মানবজীবনই ছিল সমরূপ মুক্তির মূল্য, যেটার প্রয়োজন ছিল।—১ তীমথিয় ২:৬.
১০. কীভাবে যিহোবা মুক্তির মূল্য জুগিয়েছিলেন?
১০ কীভাবে যিহোবা মুক্তির মূল্য জুগিয়েছিলেন? তিনি তাঁর সিদ্ধ আত্মিক পুত্রদের মধ্যে একজনকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু, যিহোবা যেকোনো একজন আত্মিক প্রাণীকেই পাঠিয়ে দেননি। তিনি এমন একজনকে পাঠিয়েছিলেন , যিনি তাঁর সবচেয়ে প্রিয়, তাঁর একজাত পুত্র ছিলেন। (পড়ুন, ১ যোহন ৪:৯, ১০.)এই পুত্র স্বেচ্ছায় তাঁর স্বর্গীয় আবাস ছেড়ে এসেছিলেন। (ফিলিপীয় ২:৭) এই বইয়ের পূর্বের অধ্যায়ে আমরা যেমন দেখেছি যে, যিহোবা এক অলৌকিক কাজ সম্পাদন করেছিলেন, যখন তিনি তাঁর এই পুত্রের জীবন মরিয়মের গর্ভে স্থানান্তরিত করেছিলেন। ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার মাধ্যমে যিশু একজন সিদ্ধ মানব হিসেবে জন্ম নিয়েছিলেন এবং পাপের দণ্ডাধীনে ছিলেন না।—লূক ১:৩৫.
১১. কীভাবে একজন মানুষ লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য মুক্তির মূল্য দিতে পেরেছিলেন?
১১ কীভাবে একজন মানুষ অনেকের জন্য, বস্তুতপক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষের ১ করিন্থীয় ১৫:৪৫) এক অর্থে, যিশু আমাদের রক্ষা করার জন্য আদমের জায়গায় এসেছিলেন। ঈশ্বরের প্রতি নিখুঁত বাধ্যতা দেখিয়ে তাঁর সিদ্ধ জীবন বলি দিয়ে বা ত্যাগ করে যিশু আদমের পাপের মূল্য পরিশোধ করেছিলেন। এভাবে যিশু আদমের বংশধরদের জন্য আশা নিয়ে এসেছিলেন।—রোমীয় ৫:১৯; ১ করিন্থীয় ১৫:২১, ২২.
জন্য মুক্তির মূল্য দিতে পেরেছিলেন? আসলে, লক্ষ লক্ষ মানুষ কীভাবে পাপী হয়ে উঠেছিল? মনে করে দেখুন যে, পাপ করার দ্বারা আদম সিদ্ধ মানবজীবনের মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে ফেলেছিলেন। তাই, তিনি এটা তার বংশধরদের দিতে পারতেন না। এর পরিবর্তে, তিনি শুধুমাত্র পাপ ও মৃত্যুই দিতে পারতেন। যিশু, যাঁকে বাইবেলে “শেষ আদম” বলা হয়েছে, তাঁর সিদ্ধ মানবজীবন ছিল এবং তিনি কখনো পাপ করেননি। (১২. যিশুর কষ্টভোগের দ্বারা কী প্রমাণিত হয়েছিল?
১২ যিশু তাঁর মৃত্যুর আগে যে-কষ্ট সহ্য করেছিলেন, সেই বিষয়ে বাইবেল বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে। তাঁকে চাবুকাঘাত করা হয়েছিল এবং যাতনাদণ্ডে বিদ্ধ করে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু দেওয়া হয়েছিল। (যোহন ১৯:১, ১৬-১৮, ৩০; প্রেরিত ৫:৩০; পরিশিষ্টে দেওয়া “যে-কারণে সত্য খ্রিস্টানরা উপাসনায় ক্রুশ ব্যবহার করে না” শিরোনামের প্রবন্ধ) যিশুর জন্য এতটা কষ্টভোগ করা কেন অত্যাবশ্যক ছিল? এই বইয়ের পরবর্তী একটা অধ্যায়ে আমরা দেখব যে, যিহোবার কোনো মানবদাস পরীক্ষার মধ্যে বিশ্বস্ত থাকবে কি না, সেই বিষয়ে শয়তান প্রশ্ন তুলেছিল। চরম কষ্টভোগ করা সত্ত্বেও, বিশ্বস্তভাবে স্থির থেকে যিশু শয়তানের প্রতিদ্বন্দ্বিতার যথাসম্ভব সর্বোত্তম উত্তর দিয়েছিলেন। যিশু প্রমাণ করেছিলেন যে, দিয়াবল যা-কিছুই করুক না কেন, স্বাধীন ইচ্ছার অধিকারী একজন সিদ্ধ ব্যক্তি, ঈশ্বরের প্রতি নিখুঁত নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে পারেন। যিহোবা তাঁর প্রিয় পুত্রের বিশ্বস্ততা দেখে নিশ্চয়ই প্রচুর আনন্দিত হয়েছিলেন!—হিতোপদেশ ২৭:১১.
১৩. মুক্তির মূল্য কীভাবে পরিশোধ করা হয়েছিল?
১৩ মুক্তির মূল্য কীভাবে পরিশোধ করা হয়েছিল? ৩৩ খ্রিস্টাব্দে, যিহুদি নিশান মাসের ১৪তম দিনে ঈশ্বর তাঁর সিদ্ধ ও নিষ্পাপ পুত্রকে মৃত্যুবরণ করতে দিয়েছিলেন। এভাবে যিশু “একবারেই চিরকালের জন্য” তাঁর সিদ্ধ মানবজীবন উৎসর্গ করেছিলেন। (ইব্রীয় ১০:১০, ইজি-টু-রিড ভারশন) যিশু মারা যাওয়ার পর তৃতীয় দিনে যিহোবা তাঁকে আত্মিক জীবনে উত্থিত করেছিলেন। স্বর্গে যিশু তাঁর সিদ্ধ মানবজীবনের মূল্য ঈশ্বরের কাছে উপস্থাপন করেছিলেন, যেটা আদমের বংশধরদের জন্য মুক্তির মূল্য হিসেবে উৎসর্গ করা হয়েছিল। (ইব্রীয় ৯:২৪) যিশুর বলিদানের মূল্যকে যিহোবা গ্রহণ করেছিলেন কারণ মানবজাতিকে পাপ ও মৃত্যুর দাসত্ব থেকে মুক্ত করার জন্য সেই মুক্তির মূল্যের প্রয়োজন ছিল।—পড়ুন, রোমীয় ৩:২৩, ২৪.
আপনার জন্য মুক্তির মূল্য যে-অর্থ রাখতে পারে
১৪, ১৫. আমাদের “পাপের মোচন” বা ক্ষমা লাভ করার জন্য অবশ্যই কী করতে হবে?
১৪ আমাদের পাপপূর্ণ অবস্থা সত্ত্বেও, মুক্তির মূল্যের কারণে আমরা অমূল্য আশীর্বাদগুলো উপভোগ করতে পারি। আসুন আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া এই সর্বশ্রেষ্ঠ উপহারের কিছু বর্তমান ও ভবিষ্যৎ উপকার বিবেচনা করি।
১৫ পাপের ক্ষমা। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পাপের দরুন, যা সঠিক তা করার জন্য আমাদের সত্যিই এক সংগ্রাম করতে হয়। আমরা সকলেই কথায় বা কাজে পাপ করে থাকি। কিন্তু, যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের মাধ্যমে আমাদের “পাপের মোচন” হয় বা আমরা ক্ষমা পাই। (কলসীয় ১:১৩, ১৪) তবে, সেই ক্ষমা লাভ করার জন্য আমাদের অবশ্যই প্রকৃত অনুতপ্ত হতে হবে। এ ছাড়া, আমাদের অবশ্যই নম্রভাবে যিহোবার কাছে অনুরোধ জানাতে হবে, তাঁর পুত্রের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানে আমাদের বিশ্বাসের ভিত্তিতে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।—পড়ুন, ১ যোহন ১:৮, ৯.
১৬. কী আমাদের এক শুদ্ধ বিবেক নিয়ে ঈশ্বরকে উপাসনা করতে সমর্থ করে এবং এই ধরনের এক বিবেকের কী মূল্য রয়েছে?
১৬ ঈশ্বরের সম্মুখে এক শুদ্ধ বিবেক। এক দোষী বিবেক সহজেই হতাশার দিকে নিয়ে যেতে এবং আমাদের অযোগ্য বোধ করাতে পারে। কিন্তু আমাদের অসিদ্ধতা সত্ত্বেও, মুক্তির মূল্যের দ্বারা সম্ভবপর ক্ষমার মাধ্যমে, যিহোবা সদয়ভাবে আমাদেরকে এক শুচি সংবেদ বা শুদ্ধ বিবেক নিয়ে তাঁকে উপাসনা করতে সমর্থ করেন। (ইব্রীয় ৯:১৩, ১৪) এর ফলে, আমরা সাহসপূর্বক বা নির্দ্বিধায় যিহোবার সঙ্গে কথা বলতে পারি। তাই, আমরা প্রার্থনায় নির্দ্বিধায় তাঁর নিকটবর্তী হতে পারি। (ইব্রীয় ৪:১৪-১৬) এক শুদ্ধ বিবেক বজায় রাখা মনের শান্তি দান করে, আত্মসম্মান বৃদ্ধি করে এবং সুখের ক্ষেত্রে অবদান রাখে।
১৭. যিশু আমাদের জন্য মৃত্যুবরণ করার ফলে কোন আশীর্বাদগুলো সম্ভবপর হয়েছে?
রোমীয় ৬:২৩ পদ বলে। এই পদ আরও বলে: “কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহ-দান আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টেতে অনন্ত জীবন।” এই বইয়ের ৩ অধ্যায়ে আমরা আসন্ন পার্থিব পরমদেশের আশীর্বাদগুলোর বিষয়ে আলোচনা করেছি। (প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪) নিখুঁত স্বাস্থ্য নিয়ে অনন্তজীবন-সহ সেইসমস্ত ভবিষ্যৎ আশীর্বাদ লাভ করা সম্ভব কারণ যিশু আমাদের জন্য মৃত্যুবরণ করেছিলেন। সেই আশীর্বাদগুলো লাভ করার জন্য আমাদের দেখাতে হবে যে, আমরা মুক্তির মূল্যের উপহারকে উপলব্ধি করি।
১৭ এক পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তজীবনের আশা। “পাপের বেতন মৃত্যু,”কীভাবে আপনি আপনার উপলব্ধি দেখাতে পারেন?
১৮. মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থার জন্য যিহোবার প্রতি আমাদের কেন কৃতজ্ঞ থাকা উচিত?
১৮ মুক্তির মূল্যের জন্য যিহোবার প্রতি কেন আমাদের গভীরভাবে কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত? কোনো উপহার বিশেষভাবে তখনই মূল্যবান হয়ে ওঠে, যখন দাতা সেটার জন্য সময় দেন, প্রচেষ্টা করেন বা পয়সা খরচ করে থাকেন। আমরা যখন দেখি যে, কোনো একটা উপহার আমাদের প্রতি দাতার অকৃত্রিম ভালোবাসার অভিব্যক্তিকে প্রকাশ করে, তখন তা আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করে। মুক্তির মূল্য হচ্ছে সমস্ত উপহারের মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান কারণ এটা জোগাতে গিয়ে ঈশ্বর সর্বকালের সবচেয়ে বড়ো ত্যাগস্বীকার করেছেন। “ঈশ্বর যোহন ৩:১৬ পদ বলে। মুক্তির মূল্য হচ্ছে আমাদের প্রতি যিহোবার ভালোবাসার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ। এ ছাড়া, এটা যিশুর ভালোবাসারও প্রমাণ কারণ তিনি আমাদের জন্য স্বেচ্ছায় তাঁর জীবন দিয়েছিলেন। (পড়ুন, যোহন ১৫:১৩.) তাই, মুক্তির মূল্যের উপহারের দ্বারা আমাদের এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হওয়া উচিত যে, যিহোবা ও তাঁর পুত্র আমাদেরকে আলাদা আলাদা ব্যক্তি হিসেবে ভালোবাসেন।—গালাতীয় ২:২০.
জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন,”১৯, ২০. কোন কোন উপায়ে আপনি দেখাতে পারেন যে, আপনি ঈশ্বরের মুক্তির মূল্যের উপহারকে উপলব্ধি করেন?
১৯ তাহলে, কীভাবে আপনি দেখাতে পারেন যে, আপনি ঈশ্বরের মুক্তির মূল্যের উপহারকে উপলব্ধি করেন? সবচেয়ে প্রথমে, মহান দাতা যিহোবা সম্বন্ধে জানুন। (যোহন ১৭:৩) এই প্রকাশনার সাহায্যে বাইবেল অধ্যয়ন আপনাকে তা করতে সাহায্য করবে। যিহোবাকে আপনি যত বেশি জানতে পারবেন, তাঁর প্রতি আপনার ভালোবাসা ততই গভীর হবে। ফলে, সেই ভালোবাসা তাঁকে সন্তুষ্ট করতে আপনাকে পরিচালিত করবে।—১ যোহন ৫:৩.
২০ দেখান যে যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানে আপনার বিশ্বাস রয়েছে। যিশু নিজে বলেছিলেন: “যে কেহ পুত্ত্রে বিশ্বাস করে সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে।” (যোহন ৩:৩৬) কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, যিশুর প্রতি আমাদের বিশ্বাস রয়েছে? এই ধরনের বিশ্বাস শুধুমাত্র কথার দ্বারা দেখা যায় না। ‘কর্ম্মবিহীন বিশ্বাস মৃত,’ যাকোব ২:২৬ পদ বলে। হ্যাঁ, প্রকৃত বিশ্বাস ‘কর্ম্মের’ অর্থাৎ আমাদের কাজের দ্বারা প্রমাণিত হয়। যিশুর প্রতি আমাদের বিশ্বাস রয়েছে তা দেখানোর একটা উপায় হচ্ছে, শুধুমাত্র আমরা যা বলি তাতেই নয় কিন্তু আমরা যা করি, সেই ক্ষেত্রেও তাঁকে অনুকরণ করার জন্য আমাদের যথাসাধ্য করা।—যোহন ১৩:১৫.
২১, ২২. (ক) প্রভুর সান্ধ্যভোজের বার্ষিক উদ্যাপনে কেন আমাদের যোগদান করা উচিত? (খ) ৬ ও ৭ অধ্যায়ে কী ব্যাখ্যা করা হবে?
২১ প্রভুর সান্ধ্যভোজের বার্ষিক উদ্যাপনে যোগদান করুন। ৩৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ নিশান সন্ধ্যায় যিশু এক বিশেষ উদ্যাপন প্রবর্তন করেছিলেন, যেটাকে ১ করিন্থীয় ১১:২০; মথি ২৬:২৬-২৮) এই উদ্যাপনকে খ্রিস্টের মৃত্যুর স্মরণার্থও বলা হয়। যিশু তাঁর প্রেরিতদের এবং তাদের পরে সমস্ত সত্য খ্রিস্টানদের এই বিষয়টা মনে রাখতে সাহায্য করার জন্য এটা প্রবর্তন করেছিলেন যে, সিদ্ধ মানুষ হিসেবে তাঁর মৃত্যুর মাধ্যমেই তিনি তাঁর প্রাণ বা জীবন মুক্তির মূল্য হিসেবে দিয়েছেন। এই উদ্যাপন সম্বন্ধে যিশু আদেশ দিয়েছিলেন: “ইহা আমার স্মরণার্থে করিও।” (লূক ২২:১৯) স্মরণার্থ উদ্যাপন করা আমাদেরকে মুক্তির মূল্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যিহোবা ও যিশু উভয়ের দ্বারা প্রদর্শিত মহান ভালোবাসার কথা মনে করিয়ে দেয়। আমরা যিশুর মৃত্যুর স্মরণার্থ সভার বার্ষিক উদ্যাপনে উপস্থিত থাকার দ্বারা মুক্তির মূল্যের প্রতি আমাদের উপলব্ধি দেখাতে পারি। *
বাইবেল বলে “প্রভুর ভোজ [“সান্ধ্যভোজ,” NW]।” (২২ যিহোবার মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থা সত্যিই এক অমূল্য দান বা উপহার। (২ করিন্থীয় ৯:১৪, ১৫) এই অমূল্য উপহার এমনকী সেই ব্যক্তিদেরও উপকার করতে পারে, যারা মারা গিয়েছে। অধ্যায় ৬ ও ৭ ব্যাখ্যা করবে যে, কীভাবে এটা তাদের উপকার করতে পারে।
^ অনু. 21 প্রভুর সান্ধ্যভোজের অর্থ সম্বন্ধে আরও তথ্যের জন্য পরিশিষ্টে দেওয়া “প্রভুর সান্ধ্যভোজ—যে-উদ্যাপন ঈশ্বরকে সম্মানিত করে” শিরোনামের প্রবন্ধ দেখুন।