অধ্যায় পনেরো
যে-উপাসনা ঈশ্বর অনুমোদন করেন
-
সব ধর্মই কি ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে?
-
কীভাবে আমরা সত্য ধর্মকে শনাক্ত করতে পারি?
-
আজকে পৃথিবীতে কারা ঈশ্বরের সত্য উপাসক?
১. আমরা যদি ঈশ্বরকে সঠিক উপায়ে উপাসনা করি, তা হলে আমরা কীভাবে উপকৃত হব?
যিহোবা ঈশ্বর আমাদের জন্য গভীরভাবে চিন্তা করেন এবং চান যেন আমরা তাঁর প্রেমময় নির্দেশনা থেকে উপকার লাভ করি। আমরা যদি সঠিক উপায়ে তাঁকে উপাসনা করি, তা হলে আমরা সুখী হব এবং জীবনে অনেক সমস্যা এড়াতে পারব। এ ছাড়া, আমরা তাঁর আশীর্বাদ ও সাহায্য লাভ করব। (যিশাইয় ৪৮:১৭) তবে শত শত ধর্ম রয়েছে, যেগুলো দাবি করে যে, তারা ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্য শিক্ষা দেয়। তা সত্ত্বেও, ঈশ্বর কে এবং তিনি আমাদের কাছ থেকে কী চান, সেই সম্বন্ধে তাদের শিক্ষার মধ্যে প্রচুর মতবিরোধ রয়েছে।
২. যিহোবাকে উপাসনা করার সঠিক উপায় সম্বন্ধে আমরা কীভাবে জানতে পারি এবং কোন দৃষ্টান্ত আমাদের তা বুঝতে সাহায্য করে?
২ যিহোবাকে উপাসনা করার সঠিক উপায় সম্বন্ধে আপনি কীভাবে জানতে পারেন? আপনাকে এজন্য সমস্ত ধর্ম অধ্যয়ন করার ও সেগুলোর শিক্ষাকে তুলনা করার প্রয়োজন নেই। আপনার কেবলমাত্র জানা প্রয়োজন যে, সত্য উপাসনা সম্বন্ধে বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়। উদাহরণ স্বরূপ: অনেক দেশে, জাল টাকা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। আপনাকে যদি সেই জাল টাকাগুলো শনাক্ত করার কাজ দেওয়া হয়, তা হলে আপনি কীভাবে তা করবেন? সব ধরনের জাল টাকার বৈশিষ্ট্য মুখস্থ করে? না। আপনার সময় আরও ভালোভাবে কাজে লাগানো হবে, যদি আপনি আসল টাকা সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করে থাকেন। আসল টাকা দেখতে কেমন তা জানার পর, আপনি নকলটাকে চিনতে পারবেন। অনুরূপভাবে, আমরা যখন শিখি যে সত্য ধর্মকে কীভাবে শনাক্ত করা যায়, তখন আমরা সেই ধর্মগুলোকে চিহ্নিত করতে পারি যেগুলো মিথ্যা।
৩. যিশুর কথা অনুসারে, ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?
মথি ৭:২১-২৩) জাল টাকার মতো, মিথ্যা ধর্মেরও প্রকৃত কোনো মূল্য নেই। এর চেয়েও খারাপ বিষয়টা হচ্ছে, এই ধরনের ধর্ম আসলে ক্ষতিকর।
৩ যিহোবা অনুমোদন করেন, এমন এক উপায়ে আমাদের তাঁকে উপাসনা করা গুরুত্বপূর্ণ। অনেক লোক মনে করে যে, সব ধর্মই ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে কিন্তু বাইবেল তা শিক্ষা দেয় না। এমনকী নিজেকে শুধুমাত্র একজন খ্রিস্টান হিসেবে দাবি করাই যথেষ্ট নয়। যিশু বলেছিলেন: “যাহারা আমাকে হে প্রভু, হে প্রভু বলে, তাহারা সকলেই যে স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করিতে পাইবে, এমন নয়, কিন্তু যে ব্যক্তি আমার স্বর্গস্থ পিতার ইচ্ছা পালন করে, সেই পাইবে।” তাই, ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করার জন্য আমাদের অবশ্যই শিখতে হবে যে, ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে কী চান এবং আমাদের তা পালন করতে হবে। যারা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে না তাদেরকে যিশু ‘অধর্ম্মাচারী’ বলেছিলেন। (৪. দুটো পথ সম্বন্ধে যিশুর কথাগুলোর অর্থ কী আর প্রত্যেকটা পথ কোন দিকে চালিত করে?
৪ যিহোবা পৃথিবীর প্রত্যেককে অনন্তজীবন লাভ করার সুযোগ দেন। কিন্তু, পরমদেশে অনন্তজীবন পাওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই সঠিকভাবে ঈশ্বরকে উপাসনা করতে এবং এখনই এমন এক উপায়ে জীবনযাপন করতে হবে, যা তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য। দুঃখের বিষয় যে, অনেকে তা করতে অস্বীকার করে। সেইজন্য যিশু বলেছিলেন: “সঙ্কীর্ণ দ্বার দিয়া প্রবেশ কর, কেননা সর্ব্বনাশে যাইবার দ্বার প্রশস্ত ও পথ পরিসর, এবং অনেকেই তাহা দিয়া প্রবেশ করে; কেননা জীবনে যাইবার দ্বার সঙ্কীর্ণ ও পথ দুর্গম, এবং অল্প লোকেই তাহা পায়।” (মথি ৭:১৩, ১৪) সত্য ধর্ম অনন্তজীবনের দিকে চালিত করে। মিথ্যা ধর্ম ধ্বংসের দিকে চালিত করে। কোনো মানুষ ধ্বংস হোক, তা যিহোবা চান না আর সেই কারণে তিনি সব জায়গার লোকেদের তাঁর সম্বন্ধে জানার এক সুযোগ দিচ্ছেন। (২ পিতর ৩:৯) তাই, আমরা ঈশ্বরকে যে-উপায়ে উপাসনা করি, সেটার অর্থ আমাদের জন্য হয় জীবন নতুবা মৃত্যু।
সত্য ধর্মকে যেভাবে শনাক্ত করা যায়
৫. যারা সত্য ধর্ম পালন করে, তাদের আমরা কীভাবে চিনতে পারি?
৫ ‘জীবনে যাইবার পথ’ কীভাবে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে? যিশু মথি ৭:১৬, ১৭) অন্য কথায়, যারা সত্য ধর্ম পালন করে তাদেরকে তাদের বিশ্বাস ও আচরণের দ্বারা চেনা যাবে। যদিও তারা সিদ্ধ নয় এবং ভুল করে থাকে, তবুও সত্য উপাসকরা একটা দল হিসেবে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার চেষ্টা করে। আসুন আমরা ছয়টা বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করি, যা সত্য ধর্ম পালনকারী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে।
বলেছিলেন যে, সত্য ধর্ম সেই লোকেদের জীবনে স্পষ্ট হয়ে উঠবে, যারা এটা পালন করে থাকে। “তোমরা তাহাদের ফল দ্বারাই তাহাদিগকে চিনিতে পারিবে,” তিনি বলেছিলেন। “প্রত্যেক ভাল গাছে ভাল ফল ধরে।” (৬, ৭. ঈশ্বরের দাসেরা বাইবেলকে কীভাবে দেখে থাকে আর এই ক্ষেত্রে যিশু কীভাবে উদাহরণস্থাপন করেছিলেন?
৬ ঈশ্বরের দাসদের শিক্ষাগুলোর ভিত্তি হল বাইবেল। স্বয়ং বাইবেল বলে: “ঈশ্বর-নিশ্বসিত প্রত্যেক শাস্ত্রলিপি আবার শিক্ষার, অনুযোগের, সংশোধনের, ধার্ম্মিকতা সম্বন্ধীয় শাসনের নিমিত্ত উপকারী, যেন ঈশ্বরের লোক পরিপক্ব, সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য সুসজ্জীভূত হয়।” (২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭) প্রেরিত পৌল তার সহখ্রিস্টানদের লিখেছিলেন: “আমাদের কাছে ঈশ্বরের বার্ত্তারূপ বাক্য প্রাপ্ত হইয়া তোমরা মনুষ্যদের বাক্য নয়, কিন্তু ঈশ্বরের বাক্য বলিয়া তাহা গ্রহণ করিয়াছিলে; তাহা ঈশ্বরের বাক্যই বটে।” (১ থিষলনীকীয় ২:১৩) তাই, সত্য ধর্মের বিশ্বাস ও অভ্যাসগুলো মানবদৃষ্টিভঙ্গি বা পরম্পরাগত রীতিনীতির উপর ভিত্তি করে নয়। সেগুলো ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য বাইবেলে রয়েছে।
৭ যিশু খ্রিস্ট তাঁর শিক্ষাগুলোকে ঈশ্বরের বাক্যের উপর ভিত্তি করার দ্বারা সঠিক উদাহরণস্থাপন করেছিলেন। তাঁর স্বর্গীয় পিতার কাছে প্রার্থনা করার সময় তিনি বলেছিলেন: “তোমার বাক্যই সত্যস্বরূপ।” (যোহন ১৭:১৭) যিশু ঈশ্বরের বাক্যে বিশ্বাস করতেন এবং তিনি যা-কিছু শিক্ষা দিয়েছিলেন, সমস্তই শাস্ত্রের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ছিল। যিশু প্রায়ই বলতেন: “লেখা আছে।” (মথি ৪:৪, ৭, ১০) এরপর যিশু একটা শাস্ত্রপদ উদ্ধৃতি করতেন। অনুরূপভাবে, ঈশ্বরের লোকেরা আজকে তাদের নিজস্ব ধারণা শিক্ষা দেয় না। তারা বিশ্বাস করে যে, বাইবেল হচ্ছে ঈশ্বরের বাক্য আর এটি যা বলে, সেটির উপর তারা তাদের শিক্ষাগুলোর ভিত্তি দৃঢ়ভাবে স্থাপন করে।
৮. যিহোবাকে উপাসনা করার সঙ্গে কী জড়িত?
মথি ৪:১০, ১১) তাই, ঈশ্বরের দাসেরা যিহোবা ছাড়া আর কাউকে উপাসনা করে না। এই উপাসনার সঙ্গে সত্য ঈশ্বরের নাম কী এবং তিনি কী ধরনের ব্যক্তি, সেই বিষয়গুলো জানানো জড়িত। যাত্রাপুস্তক ৩:১৫ পদ বলে: “তুমি ইস্রায়েল-সন্তানদিগকে এই কথা বলিও, যিহোবা [সদাপ্রভু], তোমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর, অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্হাকের ঈশ্বর ও যাকোবের ঈশ্বর তোমাদের নিকটে আমাকে পাঠাইয়াছেন; আমার এই নাম অনন্তকালস্থায়ী, এবং এতদ্দ্বারা আমি পুরুষে পুরুষে স্মরণীয়।” অন্যদেরকে ঈশ্বর সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে যিশু নমুনাস্থাপন করেন, কারণ তিনি প্রার্থনায় বলেছিলেন: “জগতের মধ্য হইতে তুমি আমাকে যে লোকদের দিয়াছ, আমি তাহাদের কাছে তোমার নাম প্রকাশ করিয়াছি।” (যোহন ১৭:৬) অনুরূপভাবে, আজকে সত্য উপাসকরা অন্যদেরকে ঈশ্বরের নাম, তাঁর উদ্দেশ্যগুলো এবং তাঁর গুণাবলি সম্বন্ধে শিক্ষা দেয়।
৮ যারা সত্য ধর্ম পালন করে, তারা একমাত্র যিহোবার উপাসনা করে এবং তাঁর নাম জানায়। যিশু ঘোষণা করেছিলেন: “তোমার ঈশ্বর প্রভুকেই [“যিহোবাকেই,” NW] প্রণাম করিবে, কেবল তাঁহারই আরাধনা করিবে।” (৯, ১০. কোন কোন উপায়ে সত্য খ্রিস্টানরা পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা দেখায়?
৯ ঈশ্বরের লোকেরা পরস্পরের প্রতি অকৃত্রিম, নিঃস্বার্থ প্রেম দেখায়। যিশু বলেছিলেন: “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৫) প্রাথমিক খ্রিস্টানদের পরস্পরের প্রতি এই ধরনের ভালোবাসা ছিল। ঈশ্বরীয় প্রেম সাম্প্রদায়িক, সামাজিক এবং জাতিগত প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে এবং লোকেদের প্রকৃত ভ্রাতৃসমাজের এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ করে। (পড়ুন, কলসীয় ৩:১৪.) মিথ্যা ধর্মগুলোর সদস্যদের এই ধরনের প্রেমময় ভ্রাতৃসমাজ নেই। কীভাবে আমরা তা জানি? জাতিগত বা উপজাতিগত পার্থক্যগুলোর কারণে তারা পরস্পরকে হত্যা করে। সত্য খ্রিস্টানরা তাদের খ্রিস্টান ভাই বা অন্য কাউকে হত্যা করার জন্য অস্ত্র হাতে নেয় না। বাইবেল বলে: “ইহাতে ঈশ্বরের সন্তানগণ এবং দিয়াবলের সন্তানগণ প্রকাশ হইয়া পড়ে; যে কেহ ধর্ম্মাচরণ না করে, এবং যে ব্যক্তি আপন ভ্রাতাকে প্রেম না করে, সে ঈশ্বরের লোক নয়। . . . আমাদের পরস্পর প্রেম করা কর্ত্তব্য; কয়িন যেমন সেই পাপাত্মার লোক, এবং আপন ভ্রাতাকে বধ করিয়াছিল, তেমন যেন না হই।”—১ যোহন ৩:১০-১২; ৪:২০, ২১.
১০ অবশ্য, অকৃত্রিম ভালোবাসা বলতে শুধুমাত্র অন্যদের হত্যা না করার চেয়েও আরও বেশি কিছুকে বোঝায়। সত্য খ্রিস্টানরা পরস্পরকে সাহায্য করার ও চেতনা দেওয়ার বা উৎসাহিত করার জন্য নিঃস্বার্থভাবে তাদের সময়, শক্তি ও সম্পদগুলো ব্যবহার করে থাকে। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) তারা দুর্দশার সময়গুলোতে পরস্পরকে সাহায্য করে এবং অন্যদের সঙ্গে সৎভাবে আচরণ করে। বস্তুতপক্ষে, তারা তাদের জীবনে ‘সকলের প্রতি সৎকর্ম্ম করিবার’ বিষয়ে বাইবেলের পরামর্শ কাজে লাগায়।—গালাতীয় ৬:১০.
১১. পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বরের মাধ্যম হিসেবে যিশু খ্রিস্টকে মেনে নেওয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ?
১১ সত্য খ্রিস্টানরা পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বরের মাধ্যম হিসেবে যিশু খ্রিস্টকে মেনে নেয়। বাইবেল বলে: “অন্য কাহারও কাছে পরিত্রাণ নাই; কেননা আকাশের নীচে মনুষ্যদের মধ্যে দত্ত এমন আর কোন নাম নাই, যে নামে আমাদিগকে পরিত্রাণ পাইতে হইবে।” (প্রেরিত ৪:১২) ৫ অধ্যায়ে আমরা যেমন দেখেছি যে, যিশু বাধ্য মানুষদের জন্য মুক্তির মূল্য হিসেবে তাঁর জীবন দান করেছিলেন। (মথি ২০:২৮) অধিকন্তু, যিশু হলেন সেই স্বর্গীয় রাজ্যের ঈশ্বরের মনোনীত রাজা, যা পুরো পৃথিবীর উপর শাসন করবে। আর ঈশ্বর চান যে, আমরা যদি অনন্তজীবন পেতে চাই, তা হলে যেন যিশুর বাধ্য থাকি ও তাঁর শিক্ষাগুলো কাজে লাগাই। সেই কারণে বাইবেল বলে: “যে কেহ পুত্ত্রে বিশ্বাস করে সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে; কিন্তু যে কেহ পুত্ত্রকে অমান্য করে, সে জীবন দেখিতে পাইবে না।”—যোহন ৩:৩৬.
১২. জগতের অংশ না হওয়ার সঙ্গে কী জড়িত?
১২ সত্য উপাসকরা জগতের অংশ নয়। রোমীয় শাসক পীলাতের সামনে বিচারের সময় যিশু বলেছিলেন: “আমার রাজ্য এ জগতের নয়।” (যোহন ১৮:৩৬) যে-দেশেই তারা বাস করুক না কেন, যিশুর সত্য অনুসারীরা তাঁর স্বর্গীয় রাজ্যের প্রজা আর তাই জগতের রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে তারা কঠোর নিরপেক্ষতা বজায় রাখে। তারা এর সংঘর্ষগুলোতে কোনোরকম অংশ নেয় না। তবে অন্যেরা কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার, কোনো পদপ্রার্থী হওয়ার কিংবা ভোট দেওয়ার ব্যাপারে যা-কিছুই বেছে নিক না কেন, যিহোবার উপাসকরা তাতে হস্তক্ষেপ করে না। আর রাজনীতির ব্যাপারে ঈশ্বরের সত্য উপাসকরা যদিও নিরপেক্ষ, কিন্তু তারা আইন মেনে চলে। কেন? কারণ ঈশ্বরের বাক্য তাদেরকে সরকারি ‘প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষদের বশীভূত হইতে’ আদেশ দেয়। (রোমীয় ১৩:১) ঈশ্বর যা চান এবং কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থা যা চায়, এই দুইয়ের মধ্যে যখন সংঘর্ষ দেখা দেয়, তখন সত্য উপাসকরা প্রেরিতদের উদাহরণ অনুসরণ করে, যারা বলেছিলেন: “মনুষ্যদের অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করিতে হইবে।”—প্রেরিত ৫:২৯; মার্ক ১২:১৭.
১৩. যিশুর প্রকৃত অনুসারীরা ঈশ্বরের রাজ্যকে কীভাবে দেখে আর তাই তারা কোন পদক্ষেপ নিয়ে থাকে?
মথি ২৪:১৪) তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য মানবশাসকদের উপর নির্ভর করার পরিবর্তে, যিশু খ্রিস্টের প্রকৃত অনুসারীরা মানবজাতির একমাত্র আশা হিসেবে ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যের বিষয় ঘোষণা করে। (গীতসংহিতা ১৪৬:৩) যিশু আমাদেরকে সেই নিখুঁত সরকারের জন্য প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হউক।” (মথি ৬:১০) ঈশ্বরের বাক্য ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে, এই স্বর্গীয় রাজ্য “ঐ সকল রাজ্য [যেগুলো বর্তমানে অস্তিত্বে রয়েছে] চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া আপনি চিরস্থায়ী হইবে।”—দানিয়েল ২:৪৪; প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪; ১৯:১৯-২১.
১৩ যিশুর প্রকৃত অনুসারীরা প্রচার করে যে, ঈশ্বরের রাজ্য হচ্ছে মানবজাতির একমাত্র আশা। যিশু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।” (১৪. কোন ধর্মীয় দল সত্য উপাসনার প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণ করে বলে আপনি মনে করেন?
১৪ সবেমাত্র আমরা যা আলোচনা করেছি, সেগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘কোন ধর্মীয় দল এর সমস্ত শিক্ষার ভিত্তি বাইবেলের উপর স্থাপন করে এবং যিহোবার নাম জানায়? কোন দল ঈশ্বরীয় প্রেম প্রদর্শন করে, যিশুর উপর বিশ্বাস অনুশীলন করে, জগতের কোনো অংশ নয় এবং ঘোষণা করে যে, ঈশ্বরের রাজ্যই হচ্ছে মানবজাতির একমাত্র প্রকৃত আশা? পৃথিবীতে সমস্ত ধর্মীয় দলের মধ্যে, কোন ধর্মীয় দল এই সমস্ত প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণ করে?’ প্রকৃত তথ্যগুলো স্পষ্টভাবে দেখায় যে, এই দল হল যিহোবার সাক্ষিরা।—পড়ুন, যিশাইয় ৪৩:১০-১২.
আপনি কী করবেন?
১৫. তাঁর অস্তিত্বে বিশ্বাস করা ছাড়াও, ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে আর কী চান?
১৫ ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার জন্য শুধুমাত্র তাঁর উপর বিশ্বাস করাই যথেষ্ট নয়। সর্বোপরি, বাইবেল বলে যে এমনকী ভূতেরা বা মন্দদূতেরাও ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। (যাকোব ২:১৯) তবে, এটা স্পষ্ট যে তারা ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে না এবং তাদের প্রতি তাঁর অনুমোদন নেই। ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করতে হলে আমাদের শুধু তাঁর অস্তিত্বে বিশ্বাস করাই নয়, কিন্তু সেইসঙ্গে তাঁর ইচ্ছাও পালন করতে হবে। আমাদের অবশ্যই মিথ্যা ধর্মের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে এবং সত্য উপাসনাকে নিজের করে নিতে হবে।
১৬. মিথ্যা ধর্মে অংশ নেওয়ার বিষয়ে কী করা উচিত?
১৬ প্রেরিত পৌল দেখিয়েছিলেন যে, আমরা কোনোভাবেই মিথ্যা উপাসনায় অংশ নেব না। তিনি লিখেছিলেন: “তোমরা তাহাদের মধ্য হইতে বাহির হইয়া আইস, ও পৃথক্ হও, ইহা প্রভু [“যিহোবা,” NW] কহিতেছেন, এবং অশুচি বস্তু স্পর্শ করিও না; তাহাতে আমিই তোমাদিগকে গ্রহণ করিব।” (২ করিন্থীয় ৬:১৭; যিশাইয় ৫২:১১) তাই, সত্য খ্রিস্টানরা মিথ্যা উপাসনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যেকোনো বিষয়কে এড়িয়ে চলে।
১৭, ১৮. “মহতী বাবিল” কী এবং “উহা হইতে বাহিরে” আসা কেন জরুরি?
১৭ বাইবেল দেখায় যে, বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা ধর্মের সবই ‘মহতী বাবিলের’ অংশ। * (প্রকাশিত বাক্য ১৭:৫) সেই নাম প্রাচীন বাবিল শহরের কথা মনে করিয়ে দেয়, যেখানে নোহের দিনের জলপ্লাবনের পর মিথ্যা ধর্মের সূত্রপাত হয়েছিল। মিথ্যা ধর্মে বিদ্যমান এমন বহু শিক্ষা ও অভ্যাস অনেক আগে বাবিলে শুরু হয়েছিল। উদাহরণ স্বরূপ, বাবিলীয়রা ত্রিত্ব বা ত্রয়ী দেবতাদের উপাসনা করত। আজকে অনেক ধর্মের প্রধান মতবাদই হচ্ছে ত্রিত্ব। কিন্তু, বাইবেল স্পষ্টভাবে শিক্ষা দেয় যে, একমাত্র সত্য ঈশ্বর হলেন যিহোবা আর যিশু খ্রিস্ট হলেন তাঁর পুত্র। (যোহন ১৭:৩) এ ছাড়া, বাবিলীয়রা বিশ্বাস করত যে, মানুষের মধ্যে অমর এক অংশ রয়েছে, যা মৃত্যুর পরও দেহের বাইরে বেঁচে থাকে এবং যাতনাময় স্থানে কষ্টভোগ করতে পারে। আজকে অধিকাংশ ধর্মই এই ধরনের বিশ্বাস সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়ে থাকে।
১৮ যেহেতু প্রাচীন বাবিলীয় উপাসনা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে, তাই আধুনিক মহতী বাবিলকে সঠিকভাবেই মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্য হিসেবে শনাক্ত করা যেতে পারে। আর ঈশ্বর ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, মিথ্যা ধর্মের এই সাম্রাজ্যের আকস্মিক পতন ঘটবে। আপনি কি বুঝতে পারছেন যে, মহতী বাবিলের প্রতিটা অংশ থেকে নিজেকে পৃথক করা কেন আপনার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ? যিহোবা ঈশ্বর চান যেন আপনি সময় থাকতে থাকতেই তাড়াতাড়ি “উহা হইতে বাহিরে” আসেন।—পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ১৮:৪, ৮.
১৯. যিহোবাকে সেবা করার দ্বারা আপনি কী লাভ করতে পারবেন?
মার্ক ১০:২৮-৩০.) আপনার বিশ্বাসের কারণে যারা আপনাকে পরিত্যাগ করেছিল, তারা হয়তো একসময় বাইবেল যা শিক্ষা দেয় তা পরীক্ষা করে দেখবে এবং যিহোবার উপাসক হয়ে উঠবে।
১৯ মিথ্যা ধর্ম ত্যাগ করার ব্যাপারে আপনার সিদ্ধান্তের ফল স্বরূপ, কেউ কেউ হয়তো আপনার সঙ্গে মেলামেশা করা বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু, যিহোবার লোকেদের সঙ্গে তাঁকে সেবা করার দ্বারা আপনি যা-কিছু হারাতে পারেন, তার চেয়েও হাজার গুণ বেশি লাভ করতে পারবেন। যিশুর সেই প্রাথমিক শিষ্যদের মতো আপনিও অনেক আধ্যাত্মিক ভাই ও বোনকে লাভ করতে পারবেন, যারা তাঁকে অনুসরণ করার জন্য অন্যান্য বিষয়গুলো পরিত্যাগ করে এসেছিল। আপনি বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ সত্য খ্রিস্টানদের এক বিশাল পরিবারের অংশ হয়ে উঠবেন, যারা আপনার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা দেখায়। আর আপনি “আগামী যুগে” অনন্তজীবনের চমৎকার আশা লাভ করবেন। (পড়ুন,২০. যারা সত্য ধর্ম পালন করে তাদের জন্য কোন ভবিষ্যৎ রয়েছে?
২০ বাইবেল শিক্ষা দেয় যে, ঈশ্বর শীঘ্রই এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ নিয়ে আসবেন এবং এর স্থলে তাঁর রাজ্যের শাসনাধীনে এক ধার্মিক নতুন জগৎ আনবেন। (২ পিতর ৩:৯, ১৩) সেটা কী এক বিস্ময়কর জগৎই না হবে! আর সেই ধার্মিক নতুন ব্যবস্থায় শুধুমাত্র একটা ধর্ম, উপাসনার একটা সত্য উপায় থাকবে। তাই, এখনই সত্য উপাসকদের সঙ্গে মেলামেশা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নেওয়া কি আপনার জন্য প্রজ্ঞার পথ নয়?
^ অনু. 17 কেন মহতী বাবিল মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্যকে প্রতিনিধিত্ব করে, সেই বিষয়ে আরও তথ্য জানার জন্য পরিশিষ্টে দেওয়া “‘মহতী বাবিলকে’ শনাক্ত করা” শিরোনামের প্রবন্ধ দেখুন।