সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

যিহোবার সাক্ষীরা কী বিশ্বাস করে?

যিহোবার সাক্ষীরা কী বিশ্বাস করে?

যিহোবার সাক্ষীরা কী বিশ্বাস করে?

“আপনার মত কি, তাহা আমরা আপনার মুখে শুনিতে বাসনা করি; কারণ এই দলের বিষয়ে আমরা জানি যে, সর্ব্বত্র লোকে ইহার বিরুদ্ধে কথা বলিয়া থাকে।” (প্রেরিত ২৮:২২) প্রথম শতাব্দীর এই রোমীয় সমাজ নেতারা এক উত্তম আদর্শ স্থাপন করেছিল। তারা শুধু বাইরের সমালোচকদের কথা না শুনে, আসল লোকেদের কথাও শুনতে চেয়েছিল।

অনুরূপে, আজকের দিনেও যিহোবার সাক্ষীদের নামে প্রায়ই বিরূপ মন্তব্য করা হয়ে থাকে, কিন্তু কোন পক্ষপাতযুক্ত উৎসের কাছ থেকে তাদের সম্বন্ধে সত্য জানতে চেষ্টা করা ভুল হবে। সুতরাং আমরা আপনার কাছে আমাদের মূল বিশ্বাসগুলির কিছু ব্যাখ্যা করতে খুশি হব।

বাইবেল, যীশু খ্রীষ্ট এবং ঈশ্বর

আমরা বিশ্বাস করি যে “ঈশ্বর-নিশ্বসিত প্রত্যেক শাস্ত্রলিপি . . . উপকারী।” (২ তীমথিয় ৩:১৬) যদিও অনেকে দাবি জানায় যে আমরা প্রকৃত খ্রীষ্টান নই, কিন্তু তা আসলে সত্য নয়। যীশু খ্রীষ্টের সম্বন্ধে প্রেরিত পিতরের সাক্ষ্যের সাথে আমরা সম্পূর্ণরূপে একমত: “আকাশের নীচে মনুষ্যদের মধ্যে দত্ত এমন আর কোন নাম নাই, যে নামে আমাদিগকে পরিত্রাণ পাইতে হইবে।”—প্রেরিত ৪:১২.

কিন্তু, যেহেতু যীশু বলেছিলেন যে তিনি হলেন “ঈশ্বরের পুত্ত্র” এবং এও বলেন যে “পিতা আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন,” সেহেতু যিহোবার সাক্ষীরা বিশ্বাস করে যে ঈশ্বর হলেন যীশুর থেকেও মহান। (যোহন ১০:৩৬; ৬:৫৭) যীশু নিজেই স্বীকার করেছিলেন: “পিতা আমা অপেক্ষা মহান্‌।” (যোহন ১৪:২৮; ৮:২৮) অতএব আমরা বিশ্বাস করি না যে যীশু হলেন পিতার সমতুল্য যেমন ত্রিত্ব মতবাদ বলে থাকে। বরঞ্চ, আমরা বিশ্বাস করি যে তিনি ঈশ্বরের দ্বারা সৃষ্ট হয়েছিলেন এবং তিনি তাঁর অধীনস্থ।—কলসীয় ১:১৫; ১ করিন্থীয় ১১:৩.

ইংরাজি ভাষায় ঈশ্বরের নাম হল যিহোবা। বাইবেল জানায়: “তুমি যাহার নাম যিহোবা একা তুমিই সমস্ত পৃথিবীর উপরে পরাৎপর।” (গীতসংহিতা ৮৩:১৮, NW) এই ঘোষণার সাথে মিল রেখে, যীশু, ঈশ্বরের নামকে বিশেষ প্রাধান্য দিয়েছিলেন এবং তাঁর অনুগামীদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন: “হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ, তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক।” আর তিনি নিজেই ঈশ্বরকে প্রার্থনা জানিয়ে বলেছিলেন: “তুমি আমাকে যে লোকদের দিয়াছ, আমি তাহাদের কাছে তোমার নাম প্রকাশ করিয়াছি।”—মথি ৬:৯; যোহন ১৭:৬.

যিহোবার সাক্ষীরা বিশ্বাস করে যে তাদেরও উচিত যীশুর মতো, ঈশ্বরের নাম ও তাঁর উদ্দেশ্যগুলি অন্যদের কাছে প্রকাশ করা। তাই আমরা যিহোবার সাক্ষী এই নামকরণটি গ্রহণ করেছি কারণ আমরা “বিশ্বস্ত সাক্ষী” যীশুকে অনুকরণ করি। (প্রকাশিত বাক্য ১:৫; ৩:১৪) সুতরাং, যথার্থভাবেই যিশাইয় ৪৩:১০ পদ ঈশ্বরের মনুষ্য প্রতিনিধিদের বলে: “সদাপ্রভু কহেন, তোমরাই আমার সাক্ষী, এবং আমার মনোনীত দাস।”

ঈশ্বরের রাজ্য

যীশু তাঁর শিষ্যদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন, “তোমার রাজ্য আইসুক” এবং তিনি এই রাজ্যকেই তাঁর শিক্ষার মূল বিষয় বলে গ্রহণ করেছিলেন। (মথি ৬:১০; লূক ৪:৪৩) যিহোবার সাক্ষীরা বিশ্বাস করে যে রাজ্য হল একটি বাস্তব স্বর্গীয় সরকার যা পৃথিবীর ওপর শাসন করবে এবং যীশু খ্রীষ্ট হলেন মনোনীত অদৃশ্য রাজা। “তাঁহারই স্কন্ধের উপরে কর্ত্তৃত্বভার থাকিবে,” বাইবেল বলে। “তাঁহার রাজ্যের উপরে কর্ত্তৃত্ববৃদ্ধির ও শান্তির সীমা থাকিবে না।”—যিশাইয় ৯:৬ ৭, KJ.

কিন্তু যীশু খ্রীষ্টই একমাত্র ঈশ্বরের সরকারের রাজা হবেন না। স্বর্গে তাঁর সাথে অনেক সহশাসকও থাকবে। “যদি সহ্য করি,” প্রেরিত পৌল লেখেন, “তাঁহার সহিত রাজত্বও করিব।” (২ তীমথিয় ২:১২) বাইবেল ইঙ্গিত করে যে, যে সব মানুষেরা খ্রীষ্টের সাথে স্বর্গে রাজত্ব করার জন্য পুনরুত্থিত হবে তাদের সংখ্যা “পৃথিবী হইতে ক্রীত এক লক্ষ চোয়াল্লিশ সহস্রের” মধ্যে সীমিত থাকবে।—প্রকাশিত বাক্য ১৪:১, ৩.

অবশ্যই, যে কোন সরকারেরই প্রজা থাকে এবং যিহোবার সাক্ষীরা বিশ্বাস করে যে এই স্বর্গীয় শাসকবৃন্দ ছাড়াও, কোটি কোটি লোকেরা অনন্ত জীবন পাবে। পরিশেষে এই পৃথিবী, অপূর্ব পরমদেশে পরিণত হয়ে ঈশ্বরের রাজ্যের এই যোগ্য প্রজাদের দ্বারা পরিপূর্ণ হবে, যারা সকলে খ্রীষ্ট ও তাঁর সহশাসকের শাসনের বশীভূত হবে। সুতরাং, যিহোবার সাক্ষীরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে এই পৃথিবী কখনও ধ্বংস হবে না এবং বাইবেলের প্রতিজ্ঞা পূর্ণতা লাভ করবে: “ধার্ম্মিকেরা দেশের [“পৃথিবীর,” NW] অধিকারী হইবে, তাহারা নিয়ত তথায় বাস করিবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:২৯; ১০৪:৫.

কিন্তু ঈশ্বরের রাজ্য কিভাবে আসবে? সব লোকেরা কি স্বেচ্ছায় ঈশ্বরের সরকারের বশীভূত হবে তার মাধ্যমে? বরঞ্চ অন্যদিকে বাইবেল বাস্তবভাবে দেখায় যে রাজ্যের আগমনের অন্তর্ভুক্ত হবে পার্থিব বিষয়ে ঈশ্বরের সরাসরি হস্তক্ষেপ: “স্বর্গের ঈশ্বর এক রাজ্য স্থাপন করিবেন, তাহা কখনও বিনষ্ট হইবে না, এবং সেই রাজত্ব . . . ঐ সকল রাজ্য চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া আপনি চিরস্থায়ী হইবে।”—দানিয়েল ২:৪৪.

কখন ঈশ্বরের রাজ্য আসবে? বাইবেলের যে সব ভবিষ্যদ্বাণী এখন পরিপূর্ণতা লাভ করছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে যিহোবার সাক্ষীরা বিশ্বাস করে যে এটি খুব শীঘ্রই আসবে। আমরা আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি কয়েকটি ভবিষ্যদ্বাণী বিবেচনা করে দেখতে যা দুষ্ট বিধিব্যবস্থার ‘শেষ কালের’ কয়েকটি দিককে আলোকপাত করেছে। এগুলি লিপিবদ্ধ করা আছে মথি ২৪:৩-১৪; লূক ২১:৭-১৩, ২৫-৩১; ও ২ তীমথিয় ৩:১-৫.

যেহেতু আমরা ‘আমাদের সমস্ত হৃদয়, আত্মা, মন এবং শক্তি দিয়ে আমাদের ঈশ্বর যিহোবাকে এবং আমাদের প্রতিবেশীকে নিজের মত প্রেম করি,’ তাই আমরা জাতি, বর্ণ ও সামাজিকভাবে বিভক্ত নই। (মার্ক ১২:৩০, ৩১) সমস্ত জাতির মধ্যে ব্যাপৃত আমাদের খ্রীষ্টান ভাইয়েদের প্রতি প্রেম প্রকাশ করার জন্য আমরা বিশেষ পরিচিত। (যোহন ১৩:৩৫; ১ যোহন ৩:১০-১২) সুতরাং, আমরা সেই সব জাতিদের রাজনৈতিক ব্যাপারে নিরপেক্ষতা বজায় রাখি। আমরা যীশুর প্রাথমিক শিষ্যদের মতো হওয়ার চেষ্টা করি, যাদের সম্বন্ধে তিনি বলেছিলেন: “তাহারা জগতের নয়, যেমন আমিও জগতের নই।” (যোহন ১৭:১৬) আমরা বিশ্বাস করি যে জগতের থেকে পৃথক থাকার অর্থ হল, আজকের দিনের খুব সাধারণ অনৈতিক আচরণকে এড়িয়ে চলা যার অন্তর্ভুক্ত হল মিথ্যা কথা বলা, চুরি করা, ব্যভিচার, পারদার্য, সমকামিতা, রক্তের অপব্যবহার, প্রতিমাপূজা এবং অন্যান্য কাজ যা বাইবেলে নিষেধ করা আছে।—১ করিন্থীয় ৬:৯-১১; ইফিষীয় ৫:৩-৫; প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯.

ভবিষ্যতের জন্য আশা

যিহোবার সাক্ষীরা বিশ্বাস করে যে পৃথিবীতে আমাদের বর্তমান জীবনই সব নয়। আমরা বিশ্বাস করি যে যিহোবা, খ্রীষ্টকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন, তাঁর জীবনরক্ত উৎসর্গ করার জন্য মুক্তির মূল্যরূপ হিসাবে, যাতে করে মানবজাতি ঈশ্বরের সম্মুখে ধার্মিক মান পায় এবং নতুন বিধিব্যবস্থায় অনন্ত জীবন লাভ করে। যেরকম যীশুর একজন প্রেরিত বলেছিলেন: “সম্প্রতি আমরা তাঁহার রক্তে . . . ধার্ম্মিক গণিত হইয়াছি।” (রোমীয় ৫:৯; মথি ২০:২৮) যিহোবার সাক্ষীরা গভীরভাবে ঈশ্বর ও তাঁর পুত্রের কাছে কৃতজ্ঞ, এই মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থা করার জন্য যার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ জীবন সম্ভব হয়েছে।

ভবিষ্যৎ জীবনে যিহোবার সাক্ষীদের সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে যে বিশ্বাসের ভিত্তি হল ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনে মৃতদের পুনরুত্থান। বাইবেলের শিক্ষা অনুসারে আমরাও বিশ্বাস করি যে যখন একজন ব্যক্তি মারা যায়, বাস্তবিকই তখন তার অস্তিত্ব লোপ পায়, “সেই দিনেই তাহার সঙ্কল্প সকল নষ্ট হয়।” (গীতসংহিতা ১৪৬:৩, ৪; যিহিষ্কেল ১৮:৪; উপদেশক ৯:৫) হ্যাঁ, মৃতদের ভবিষ্যৎ জীবন নির্ভর করছে, পুনরুত্থানের সময়ে তাদেরকে ঈশ্বরের মনে রাখার ওপর।—যোহন ৫:২৮, ২৯.

যাইহোক, যিহোবার সাক্ষীরা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে যে অনেকে যারা বেঁচে আছে তারা পরিত্রাণ পাবে, যখন ঈশ্বরের রাজ্য সমস্ত বর্তমান সরকারের বিনাশ আনবে এবং ঠিক যেমন নোহ ও তার পরিবার জলপ্লাবন থেকে পরিত্রাণ পেয়েছিল, ঠিক তেমনি তারাও পরিষ্কৃত পৃথিবীতে অনন্ত জীবন উপভোগ করার সুযোগ পাবে। (মথি ২৪:৩৬-৩৯; ২ পিতর ৩:৫-৭, ১৩) কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি যে পরিত্রাণ নির্ভর করছে যিহোবার দাবি অনুসারে কাজ করার ওপর, বাইবেল যেমন বলে: “জগৎ . . . বহিয়া যাইতেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।”—-১ যোহন ২:১৭; গীতসংহিতা ৩৭:১১; প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৩-১৫; ২১:১-৫.

অবশ্য, যিহোবার সাক্ষীদের বিশ্বাস সম্বন্ধে সবকিছু বলা এখানে সম্ভবপর নয়, কিন্তু এ সম্বন্ধে আরও তথ্য সংগ্রহ করার জন্য আমরা আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

উল্লেখ না করা থাকলে ব্যবহৃত বাইবেল অনুবাদ, বাইবেল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার পবিত্র বাইবেল থেকে গৃহীত। যেখানে NW উল্লেখ করা আছে সেখানে অনুবাদ করা হয়েছে ওয়াচটাওয়ার সোসাইটির নিউ ওয়ার্ল্ড ট্রান্সলেশন অফ দ্যা হোলী স্ক্রীপচার্স—উইথ রেফারেন্‌সেস্‌ থেকে।

[৪ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

আমরা যিহোবার সাক্ষী নামকরণটি গ্রহণ করেছি কারণ আমরা যীশুকে অনুকরণ করি